রানা আব্বাস, ঢাকা
শুরুতে শুধুই বিনোদনের খোরাক জোগাতে আবির্ভূত টি-টোয়েন্টি এখন কী ‘সিরিয়াস গেম’ হয়ে দাঁড়িয়েছে! আধুনিক ক্রিকেটের সংজ্ঞাই বদলে দিয়েছে ২০ ওভারের এই সংস্করণ। আর গত এক দশকে ক্রিকেটের রূপ-রং কিংবা ধরন বদলে দিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টুর্নামেন্টগুলো।
এখন প্রায় সব ক্রিকেট বোর্ডের একটি ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টুর্নামেন্ট থাকাটাই অলিখিত নিয়ম। এটি যে সোনার ডিম পাড়া হাঁস। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি) ব্যতিক্রম নয়। গত এক দশকে বিশৃঙ্খলা আর বিতর্কমুক্ত হতে না পারলেও বিসিবির ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টুর্নামেন্ট বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে (বিপিএল) ‘লস প্রজেক্ট’ বলার সুযোগ নেই। গত ১০ বছরে বিপিএলের সাত সংস্করণ থেকে বিসিবির লাভ হয়েছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা। টুর্নামেন্ট লাভের মুখ দেখলেও আসল যে উদ্দেশ্য, প্রত্যাশা অনুযায়ী খেলোয়াড় উঠে আসেনি এই টুর্নামেন্ট থেকে। এমনকি আইসিসির টি-২০ র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান আফগানিস্তানের নিচে (৯-এ)। এমনই এক অবস্থার মধ্যে আগামীকাল শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে বিপিএলের অষ্টম আয়োজন।
বিপিএলের যাত্রা শুরু ২০১২ থেকে। এ টুর্নামেন্টে বিসিবি আয়ের বড় উৎস ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি আর টিভি স্বত্ব। বিসিবির নিরীক্ষা প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, প্রথম বছরে বিপিএল থেকে বিসিবির আয় ছিল ৩৩ কোটি টাকা। পরের বছর ৩৮ কোটি। গত সাতটি আসরে বিপিএল থেকে বিসিবির আয় ৩৫১ কোটি টাকা। আর ব্যয় ছিল প্রায় ১৫০ কোটি টাকা। ফলে লাভের অঙ্ক ২০০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে।
লাভের অঙ্ক দেখে বিপিএলকে অত্যন্ত একটা সফল আয়োজন মনে হলেও ক্রিকেটার গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সাফল্য শূন্যের কোঠায়। প্রতি বিপিএলে দেশের অন্তত ১০০ জন ক্রিকেটার অংশ নিয়ে থাকেন। প্রশ্ন হচ্ছে, গত সাতটি বিপিএল থেকে আসলে কজন প্রতিভাবান ক্রিকেটার পেয়েছে বাংলাদেশ দল? এ ক্ষেত্রে পাঁচজন ক্রিকেটারের নামও বলার উপায় নেই, যাঁদের ‘বিপিএল প্রোডাক্ট’ বলা যায়। তাসকিন আহমেদ, আবু হায়দার রনির কথা হয়তো আসবে। কিন্তু তাঁদের গড়ে ওঠায় বিপিএলের চেয়ে বিসিবির বয়সভিত্তিক ক্রিকেট কিংবা অন্যান্য দলে খেলা ভূমিকা রেখেছিল।
অথচ আইপিএলের মঞ্চ কাজে লাগিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটে আলো ছড়িয়েছেন জসপ্রীত বুমরা, হার্দিক পান্ডিয়া, ক্রুনাল পান্ডিয়া, যুজবেন্দ্র চাহাল, দীপক চাহার, টি নাটারজন, রাহুল চাহারের মতো ক্রিকেটাররা। অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ দিয়ে নিজেদের অন্যভাবে চিনিয়েছেন মার্কাস স্টয়নিস, জেমস ফকনার, নাথান কুল্টার-নাইল, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, ট্রাভিস হেড, ক্রিস লিন, অ্যালেক্স ক্যারি, কেন রিচার্ডসন, অ্যান্ড্রু টাই, অ্যাডাম জাম্পারা। ক্যারিবীয় প্রিমিয়ার লিগ (সিপিএল) থেকে উঠে আসা ক্রিকেটারদের মধ্যে আছেন হেইডেন ওয়ালশ জুনিয়র, আকিল হোসেন, কাইল মেয়ার্স, শিমরন হেটমায়ার, ফাবিয়ান অ্যালেনরা। পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) পেয়েছে মোহাম্মদ হাসনাইন, মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র, শাহনওয়াজ দাহানি, হায়দার আলী, শাদাব খান, আসিফ আলী, ফাহিম আশরাফের মতো খেলোয়াড়দের।
বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী স্বীকার করেছেন, গত এক দশকে বিপিএল থেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী খেলোয়াড় পাওয়া যায়নি। ‘বিপিএল থেকে সেভাবে খেলোয়াড় বেরিয়ে না এলেও আমাদের মূল লক্ষ্যই ছিল, যারা জাতীয় দলের বাইরে আছে, তারা বিপিএলে এসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের সঙ্গে একই ড্রেসিংরুম ভাগাভাগি করবে। অনেক কিছু শিখবে, নিজেদের উন্নতি করবে।’ কিন্তু বাস্তবে অধিকাংশেরই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেশের খেলোয়াড়দের সঙ্গে ড্রেসিংরুম ভাগাভাগি সম্ভব হয়নি।
দেশের তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান অবশ্য আশাবাদী, এবার অন্তত দুই-তিনজন ক্রিকেটার পাবে বিপিএল। গত পরশু ফরচুন বরিশালের জার্সি উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, এখান থেকে আমরা দুই-তিনজন নতুন খেলোয়াড় পাব, যারা বাংলাদেশকে অন্তত টি-টোয়েন্টি দলে প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে।’
বিপিএল থেকে ক্রিকেটার না ওঠার বড় কারণ বেশির ভাগ ফ্র্যাঞ্চাইজিরই নেই নিজস্ব একাডেমি, নেই প্রতিভা খোঁজার কর্মসূচি। নেই নিজস্ব কোচিং স্টাফ কিংবা কোনো ক্রিকেট কাঠামো। ফলে তাদের ঘাড়ে দায় চাপানোর সুযোগ নেই। আর ঘন ঘন টুর্নামেন্টের ধরন বদলানোর কারণে কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট নিয়ে গভীর চিন্তা, পরিকল্পনা করবে? এবার স্বয়ং ক্রিকেট বোর্ডই বিপিএলের একটি দলের স্বত্বাধিকারী সেজে বিষয়টি আরও প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।
প্রত্যাশা অনুযায়ী খেলোয়াড় উঠে না আসার সঙ্গে বিপিএল ঘিরে আর্থিক বিতর্কও কম নয়। যাত্রার শুরুতেই বিপিএল যে কটি কারণে বিতর্কিত হয়েছে, এর মধ্যে একটি খেলোয়াড়, কোচ ও অফিশিয়ালদের পারিশ্রমিক নির্দিষ্ট সময়ে পরিশোধ না করা। ২০১২ ও ২০১৩ সালে প্রথম দুই সংস্করণে পারিশ্রমিক অপরিশোধিত ছিল ১৭ কোটি টাকা।
বিপিএলে পারিশ্রমিক নিয়ে অসন্তুষ্টি নিয়মিতই শোনা যায় ক্রিকেটারদের কাছ থেকে। স্থানীয় খেলোয়াড়দের বেশির ভাগেরই অভিযোগ, সময়ের সঙ্গে অন্য দেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টগুলোতে যে হারে পারিশ্রমিক বেড়েছে, বিপিএলে সেটি হয়নি। সর্বোচ্চ শ্রেণিতে সাধারণত দেশের তারকা ক্রিকেটার যেমন—সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, মোস্তাফিজুর রহমানরাই থাকেন। এই শ্রেণিতে পারিশ্রমিক কিছুটা বাড়লেও পরের শ্রেণিগুলোতে ৩৫ লাখ থেকে সর্বনিম্ন ৫ লাখের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। বিদেশি ক্রিকেটারদের সঙ্গে স্থানীয় ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক বৈষম্য নিয়েও আছে বিস্তর অভিযোগ।
বিপিএলে যেভাবে খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক বেঁধে দেয় বিসিবি, এটি নিয়েও দ্বিমত আছে অনেকের। গত মাসে আজকের পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাকিব আল হাসান যেমন বলছিলেন, ‘বোর্ড যেটা করতে পারে, ক্যাটাগরি অনুযায়ী পারিশ্রমিক নির্ধারণ করে দিতে পারে। এখন কে কোন ক্যাটাগরিতে নাম দিতে চায়, সেটা খেলোয়াড় জানাবে। এখন যদি কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি স্বত্বাধিকারী মনে করেন, এই খেলোয়াড়ের দাম বেশি, তাহলে তিনি নেবেন না। যদি মনে করেন, ঠিক আছে, তাহলে নেবেন। এতে একজন খেলোয়াড় নিজেকে বিচার করতে পারল, সে কোন অবস্থানে আছে। আইপিএল, সিপিএল, পিএসএলে তো এটাই দেখি।’
ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের আরেকটি আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে প্রাইজমানি। আইপিএলের সর্বশেষ মৌসুমে বিজয়ী দলের প্রাইজমানি ছিল ২৩ কোটি, সিপিএলে ৮ কোটি টাকা, পিএসএলে সেটি ৪ কোটি টাকা। আর বিপিএলে এবার বিজয়ী দল পাবে ১ কোটি টাকা। ২০১৯ বিপিএলে অঙ্কটা ছিল ২ কোটি টাকা। ২০২০ বিপিএলে অবশ্য কোনো প্রাইজমানিই দেয়নি বিসিবি। এ নিয়ে তখন কম সমালোচনা হয়নি। শিরোপাজয়ী রাজশাহী রয়্যালসের অধিনায়ক আন্দ্রে রাসেলকে পর্যন্ত এ নিয়ে কথা বলতে হয়েছিল। রাসেল বলেছিলেন, ‘ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে প্রাইজমানি এমন একটি বিষয়, যা খেলোয়াড়েরা পেতে চায়, সঙ্গে বোনাসও। আমি চাই যে যেসব স্থানীয়রা (ক্রিকেটার) আমাদের সহায়তা করেছে, তাদের যেন বোনাস দেওয়া হয়।’
বিপিএল থেকে বিসিবি প্রতিবছর লাভ করলেও ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর লাভের মুখ খুব কমই দেখে। ২০১৯ সালে কুমিল্লা ফ্র্যাঞ্চাইজির স্বত্বাধিকারী নাফিসা কামাল সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘এটা আমাদের সবার জন্য লস প্রজেক্ট। এ অবস্থায় শুধু লাভবান হচ্ছে বিসিবি।’ কদিন আগে আজকের পত্রিকাকে নাফিসা বলেছেন, এবার তাঁরা লাভে যাওয়ার লক্ষ্যে এসেছেন। তাঁরা কতটা লক্ষ্য পূরণ করতে পারবেন, সেটি নিয়ে অবশ্য সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
এ ছাড়া বিপিএলে ঘন ঘন ফ্র্যাঞ্চাইজি পরিবর্তনের কারণে মৌসুমভিত্তিক বেশির ভাগ দলেরই নিজস্ব আর্থিক কাঠামো নেই। নেই নিজস্ব ব্র্যান্ডিং ও বিপণননীতি। তাদের তৈরি হয় না নিজস্ব সমর্থকগোষ্ঠীও। আর আইপিএলে যেভাবে লাভের ভাগ দেওয়া হয় ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোকে, সেভাবে বিপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর সঙ্গে লভ্যাংশ ভাগাভাগি করে না বিসিবি। এ বিষয়ে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বছর দুয়েক আগে বলেছিলেন, ‘লাভের ভাগ দেওয়া সম্ভব নয়। আমরা চাই, বিপিএলে যারা আসবে দেশের খেলার উন্নয়নে, খেলোয়াড় উন্নয়নে আসবে। ব্যবসা করার জন্য নয়। এখানে মুনাফা হওয়ার সুযোগ নেই।’
অবশ্য বিশ্বের প্রায় সব ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টুর্নামেন্টের মডেলটাই এমন, মুনাফার উদ্দেশ্যেই দল গড়ে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো। যদি ‘ব্যবসা’ করার সুযোগই না থাকে তাহলে তারা কেন বিনিয়োগ করবে—সরল এ প্রশ্নটা আসতে বাধ্য।
বিপিএল সম্পর্কিত আরও পড়ুন:
শুরুতে শুধুই বিনোদনের খোরাক জোগাতে আবির্ভূত টি-টোয়েন্টি এখন কী ‘সিরিয়াস গেম’ হয়ে দাঁড়িয়েছে! আধুনিক ক্রিকেটের সংজ্ঞাই বদলে দিয়েছে ২০ ওভারের এই সংস্করণ। আর গত এক দশকে ক্রিকেটের রূপ-রং কিংবা ধরন বদলে দিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টুর্নামেন্টগুলো।
এখন প্রায় সব ক্রিকেট বোর্ডের একটি ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টুর্নামেন্ট থাকাটাই অলিখিত নিয়ম। এটি যে সোনার ডিম পাড়া হাঁস। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি) ব্যতিক্রম নয়। গত এক দশকে বিশৃঙ্খলা আর বিতর্কমুক্ত হতে না পারলেও বিসিবির ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টুর্নামেন্ট বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে (বিপিএল) ‘লস প্রজেক্ট’ বলার সুযোগ নেই। গত ১০ বছরে বিপিএলের সাত সংস্করণ থেকে বিসিবির লাভ হয়েছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা। টুর্নামেন্ট লাভের মুখ দেখলেও আসল যে উদ্দেশ্য, প্রত্যাশা অনুযায়ী খেলোয়াড় উঠে আসেনি এই টুর্নামেন্ট থেকে। এমনকি আইসিসির টি-২০ র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান আফগানিস্তানের নিচে (৯-এ)। এমনই এক অবস্থার মধ্যে আগামীকাল শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে বিপিএলের অষ্টম আয়োজন।
বিপিএলের যাত্রা শুরু ২০১২ থেকে। এ টুর্নামেন্টে বিসিবি আয়ের বড় উৎস ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি আর টিভি স্বত্ব। বিসিবির নিরীক্ষা প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, প্রথম বছরে বিপিএল থেকে বিসিবির আয় ছিল ৩৩ কোটি টাকা। পরের বছর ৩৮ কোটি। গত সাতটি আসরে বিপিএল থেকে বিসিবির আয় ৩৫১ কোটি টাকা। আর ব্যয় ছিল প্রায় ১৫০ কোটি টাকা। ফলে লাভের অঙ্ক ২০০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে।
লাভের অঙ্ক দেখে বিপিএলকে অত্যন্ত একটা সফল আয়োজন মনে হলেও ক্রিকেটার গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সাফল্য শূন্যের কোঠায়। প্রতি বিপিএলে দেশের অন্তত ১০০ জন ক্রিকেটার অংশ নিয়ে থাকেন। প্রশ্ন হচ্ছে, গত সাতটি বিপিএল থেকে আসলে কজন প্রতিভাবান ক্রিকেটার পেয়েছে বাংলাদেশ দল? এ ক্ষেত্রে পাঁচজন ক্রিকেটারের নামও বলার উপায় নেই, যাঁদের ‘বিপিএল প্রোডাক্ট’ বলা যায়। তাসকিন আহমেদ, আবু হায়দার রনির কথা হয়তো আসবে। কিন্তু তাঁদের গড়ে ওঠায় বিপিএলের চেয়ে বিসিবির বয়সভিত্তিক ক্রিকেট কিংবা অন্যান্য দলে খেলা ভূমিকা রেখেছিল।
অথচ আইপিএলের মঞ্চ কাজে লাগিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটে আলো ছড়িয়েছেন জসপ্রীত বুমরা, হার্দিক পান্ডিয়া, ক্রুনাল পান্ডিয়া, যুজবেন্দ্র চাহাল, দীপক চাহার, টি নাটারজন, রাহুল চাহারের মতো ক্রিকেটাররা। অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ দিয়ে নিজেদের অন্যভাবে চিনিয়েছেন মার্কাস স্টয়নিস, জেমস ফকনার, নাথান কুল্টার-নাইল, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, ট্রাভিস হেড, ক্রিস লিন, অ্যালেক্স ক্যারি, কেন রিচার্ডসন, অ্যান্ড্রু টাই, অ্যাডাম জাম্পারা। ক্যারিবীয় প্রিমিয়ার লিগ (সিপিএল) থেকে উঠে আসা ক্রিকেটারদের মধ্যে আছেন হেইডেন ওয়ালশ জুনিয়র, আকিল হোসেন, কাইল মেয়ার্স, শিমরন হেটমায়ার, ফাবিয়ান অ্যালেনরা। পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) পেয়েছে মোহাম্মদ হাসনাইন, মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র, শাহনওয়াজ দাহানি, হায়দার আলী, শাদাব খান, আসিফ আলী, ফাহিম আশরাফের মতো খেলোয়াড়দের।
বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী স্বীকার করেছেন, গত এক দশকে বিপিএল থেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী খেলোয়াড় পাওয়া যায়নি। ‘বিপিএল থেকে সেভাবে খেলোয়াড় বেরিয়ে না এলেও আমাদের মূল লক্ষ্যই ছিল, যারা জাতীয় দলের বাইরে আছে, তারা বিপিএলে এসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের সঙ্গে একই ড্রেসিংরুম ভাগাভাগি করবে। অনেক কিছু শিখবে, নিজেদের উন্নতি করবে।’ কিন্তু বাস্তবে অধিকাংশেরই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেশের খেলোয়াড়দের সঙ্গে ড্রেসিংরুম ভাগাভাগি সম্ভব হয়নি।
দেশের তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান অবশ্য আশাবাদী, এবার অন্তত দুই-তিনজন ক্রিকেটার পাবে বিপিএল। গত পরশু ফরচুন বরিশালের জার্সি উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, এখান থেকে আমরা দুই-তিনজন নতুন খেলোয়াড় পাব, যারা বাংলাদেশকে অন্তত টি-টোয়েন্টি দলে প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে।’
বিপিএল থেকে ক্রিকেটার না ওঠার বড় কারণ বেশির ভাগ ফ্র্যাঞ্চাইজিরই নেই নিজস্ব একাডেমি, নেই প্রতিভা খোঁজার কর্মসূচি। নেই নিজস্ব কোচিং স্টাফ কিংবা কোনো ক্রিকেট কাঠামো। ফলে তাদের ঘাড়ে দায় চাপানোর সুযোগ নেই। আর ঘন ঘন টুর্নামেন্টের ধরন বদলানোর কারণে কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট নিয়ে গভীর চিন্তা, পরিকল্পনা করবে? এবার স্বয়ং ক্রিকেট বোর্ডই বিপিএলের একটি দলের স্বত্বাধিকারী সেজে বিষয়টি আরও প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।
প্রত্যাশা অনুযায়ী খেলোয়াড় উঠে না আসার সঙ্গে বিপিএল ঘিরে আর্থিক বিতর্কও কম নয়। যাত্রার শুরুতেই বিপিএল যে কটি কারণে বিতর্কিত হয়েছে, এর মধ্যে একটি খেলোয়াড়, কোচ ও অফিশিয়ালদের পারিশ্রমিক নির্দিষ্ট সময়ে পরিশোধ না করা। ২০১২ ও ২০১৩ সালে প্রথম দুই সংস্করণে পারিশ্রমিক অপরিশোধিত ছিল ১৭ কোটি টাকা।
বিপিএলে পারিশ্রমিক নিয়ে অসন্তুষ্টি নিয়মিতই শোনা যায় ক্রিকেটারদের কাছ থেকে। স্থানীয় খেলোয়াড়দের বেশির ভাগেরই অভিযোগ, সময়ের সঙ্গে অন্য দেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টগুলোতে যে হারে পারিশ্রমিক বেড়েছে, বিপিএলে সেটি হয়নি। সর্বোচ্চ শ্রেণিতে সাধারণত দেশের তারকা ক্রিকেটার যেমন—সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, মোস্তাফিজুর রহমানরাই থাকেন। এই শ্রেণিতে পারিশ্রমিক কিছুটা বাড়লেও পরের শ্রেণিগুলোতে ৩৫ লাখ থেকে সর্বনিম্ন ৫ লাখের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। বিদেশি ক্রিকেটারদের সঙ্গে স্থানীয় ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক বৈষম্য নিয়েও আছে বিস্তর অভিযোগ।
বিপিএলে যেভাবে খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক বেঁধে দেয় বিসিবি, এটি নিয়েও দ্বিমত আছে অনেকের। গত মাসে আজকের পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাকিব আল হাসান যেমন বলছিলেন, ‘বোর্ড যেটা করতে পারে, ক্যাটাগরি অনুযায়ী পারিশ্রমিক নির্ধারণ করে দিতে পারে। এখন কে কোন ক্যাটাগরিতে নাম দিতে চায়, সেটা খেলোয়াড় জানাবে। এখন যদি কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি স্বত্বাধিকারী মনে করেন, এই খেলোয়াড়ের দাম বেশি, তাহলে তিনি নেবেন না। যদি মনে করেন, ঠিক আছে, তাহলে নেবেন। এতে একজন খেলোয়াড় নিজেকে বিচার করতে পারল, সে কোন অবস্থানে আছে। আইপিএল, সিপিএল, পিএসএলে তো এটাই দেখি।’
ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের আরেকটি আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে প্রাইজমানি। আইপিএলের সর্বশেষ মৌসুমে বিজয়ী দলের প্রাইজমানি ছিল ২৩ কোটি, সিপিএলে ৮ কোটি টাকা, পিএসএলে সেটি ৪ কোটি টাকা। আর বিপিএলে এবার বিজয়ী দল পাবে ১ কোটি টাকা। ২০১৯ বিপিএলে অঙ্কটা ছিল ২ কোটি টাকা। ২০২০ বিপিএলে অবশ্য কোনো প্রাইজমানিই দেয়নি বিসিবি। এ নিয়ে তখন কম সমালোচনা হয়নি। শিরোপাজয়ী রাজশাহী রয়্যালসের অধিনায়ক আন্দ্রে রাসেলকে পর্যন্ত এ নিয়ে কথা বলতে হয়েছিল। রাসেল বলেছিলেন, ‘ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে প্রাইজমানি এমন একটি বিষয়, যা খেলোয়াড়েরা পেতে চায়, সঙ্গে বোনাসও। আমি চাই যে যেসব স্থানীয়রা (ক্রিকেটার) আমাদের সহায়তা করেছে, তাদের যেন বোনাস দেওয়া হয়।’
বিপিএল থেকে বিসিবি প্রতিবছর লাভ করলেও ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর লাভের মুখ খুব কমই দেখে। ২০১৯ সালে কুমিল্লা ফ্র্যাঞ্চাইজির স্বত্বাধিকারী নাফিসা কামাল সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘এটা আমাদের সবার জন্য লস প্রজেক্ট। এ অবস্থায় শুধু লাভবান হচ্ছে বিসিবি।’ কদিন আগে আজকের পত্রিকাকে নাফিসা বলেছেন, এবার তাঁরা লাভে যাওয়ার লক্ষ্যে এসেছেন। তাঁরা কতটা লক্ষ্য পূরণ করতে পারবেন, সেটি নিয়ে অবশ্য সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
এ ছাড়া বিপিএলে ঘন ঘন ফ্র্যাঞ্চাইজি পরিবর্তনের কারণে মৌসুমভিত্তিক বেশির ভাগ দলেরই নিজস্ব আর্থিক কাঠামো নেই। নেই নিজস্ব ব্র্যান্ডিং ও বিপণননীতি। তাদের তৈরি হয় না নিজস্ব সমর্থকগোষ্ঠীও। আর আইপিএলে যেভাবে লাভের ভাগ দেওয়া হয় ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোকে, সেভাবে বিপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর সঙ্গে লভ্যাংশ ভাগাভাগি করে না বিসিবি। এ বিষয়ে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বছর দুয়েক আগে বলেছিলেন, ‘লাভের ভাগ দেওয়া সম্ভব নয়। আমরা চাই, বিপিএলে যারা আসবে দেশের খেলার উন্নয়নে, খেলোয়াড় উন্নয়নে আসবে। ব্যবসা করার জন্য নয়। এখানে মুনাফা হওয়ার সুযোগ নেই।’
অবশ্য বিশ্বের প্রায় সব ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টুর্নামেন্টের মডেলটাই এমন, মুনাফার উদ্দেশ্যেই দল গড়ে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো। যদি ‘ব্যবসা’ করার সুযোগই না থাকে তাহলে তারা কেন বিনিয়োগ করবে—সরল এ প্রশ্নটা আসতে বাধ্য।
বিপিএল সম্পর্কিত আরও পড়ুন:
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৩ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৭ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৭ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১১ দিন আগে