দেশের ১৭টি বেসরকারি ডিপোতে (আইসিডি) কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে মাশুল বাড়ানোর চিঠি নিয়ে আমদানি-রপ্তানিকারকদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা দেখা দিয়েছে। দেশে কোভিড মহামারির এই দুঃসময়ে নতুন করে ব্যবসার খরচ বাড়লে তা দেশের পণ্য ক্রেতাদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

৩১ জানুয়ারির মধ্যে পণ্য আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে চার ধরনের মাশুল ২৩ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা বাস্তবায়নের তাগিদ দিচ্ছেন ডিপো মালিকেরা। গতকাল বুধবারও তাঁরা শিপিং লাইনসসহ সংশ্লিষ্টদের তাগাদাপত্র দিয়েছেন। ওই চিঠিতে মাশুল বাড়ানো কার্যকরের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলা হয়, না হলে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে তাদের পক্ষে ডিপোতে সেবা দেওয়া অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে না। অর্থাৎ কনটেইনার ওঠানামা বন্ধ করে দেওয়া হবে বেসরকারি সব ডিপোতে। সেটা হলে শতভাগ রপ্তানি এবং অন্তত ৪০ ভাগ আমদানি বন্ধ হয়ে যাবে। এ কারণে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে ব্যবসায়ী, বিশেষ করে রপ্তানিকারকদের মধ্যে।

• আইসিডিতে মাশুল বৃদ্ধি ২৩ শতাংশ

শিপিং লাইনস সূত্রে জানা গেছে, মাশুল বৃদ্ধির ঘোষণা বাস্তবায়ন হলে কনটেইনারে পণ্য ভরা ও নামানের (স্টাফিং-আনস্টাফিং) খরচ আগের তুলনায় প্রতি কনটেইনারে বাড়বে ছয় হাজার টাকা। আর খালি কনটেইনার নামিয়ে ডিপোতে রাখা কিংবা জাহাজে তুলে দেওয়ার খরচ বাড়বে প্রতি কনটেইনারে এক হাজার টাকা।

জানতে চাইলে ডিপো মালিকদের সংগঠন বিকডা চেয়ারম্যান নুরুল কাইয়ূম খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, আমদানিকারকের প্রতিনিধি হিসেবে এমএসসি, কসকোসহ কিছু এমএলও বাড়তি মাশুল দিতে তাদের সম্মতিপত্র ইতোমধ্যে আমাদের দিয়েছে। মার্কসলাইনসহ আরও কয়েকটি নির্ধারিত ৩১ জানুয়ারির মধ্যে তাদের সম্মতি জানাবে বলে আশাবাদী তিনি। দেশে তেলের দাম বাড়ানোর কারণে আইসিডির চার ধরনের মাশুল বাড়ানোর যৌক্তিকতা তুলে ধরে নুরুল কাইয়ূম খান বলেন, আর্ন্তজাতিক রুটে জাহাজভাড়া ৫০০ শতাংশ বাড়িয়ে আদায় করা হচ্ছে ৬-৭ মাস ধরে, দেশে বাস-ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানের ভাড়া বাড়ায় সবাই চুপ। শুধু আমরা দেশের বাজারে ডিজেলের দাম বৃদ্ধির সমান ২৩ শতাংশ মাশুল বাড়ানোর কথা বলতেই হইচই শুরু হয়েছে। গত ৪ নভেম্বর থেকে বাড়তি মাশুল আদায়ের নোটিশ দেওয়া হলেও দুই মাসের বাড়তি সময় দেওয়া হয় বলে জানান তিনি।

• জাল লাইসেন্সে সীমান্ত পাড়ি দিচ্ছেন চালকেরা

এদিকে এমএলওগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ কনটেইনার শিপিং অ্যাসোসিয়েশন বাড়তি মাশুল কার্যকরের বিষয়টি আরো কিছুদিন পিছিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে গতকাল বুধবার বিকডা চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছে। অ্যাসোসিয়েশন সদস্যরা আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ডিপো মালিকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বাড়তি মাশুলের হার নির্ধারণ করে নেবেন বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। এই সময়ের মধ্যে কনটেইনার ওঠানামায় কোনো বিঘ্ন সৃষ্টি না করার জন্যও বিকডা সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানানো হয় ওই চিঠিতে।

এ প্রসঙ্গে অ্যাসোসিয়েশনের জেনারেল সেক্রেটারি ক্যাপ্টেন এএস চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাড়তি মাশুল আদায়ের নির্ধারিত সময়সীমার আগেই অনেক ডিপোতে কাজকর্মের গতি শ্লথ করে দেওয়া হয়েছে বলে আমরা খবর পেয়েছি। এই অচলাবস্থা নিরসন করে বিষয়টির একটি যৌক্তিক মীমাংসার জন্য আমরা বিকডাকে চিঠি দিয়েছি।

অবশ্য এর আগেই বিজিএমইএর পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়ে ডিপোগুলোতে নিয়মবহির্ভূত মাশুল আদায় বন্ধের ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছিল।’