জাহীদ রেজা নূর
লেখাটা যখন শুরু করেছি, তখনো হাতের কাছে পরিচয় প্রকাশিত হয়, এমন সব ডকুমেন্ট আমার হাতে রাখতে হচ্ছিল। যদিও দেখাতেই হবে কাউকে, এমন নয়, কিন্তু যেকোনো সময় পুলিশ এসে পরিচয়পত্র চাইতে পারে। সাবওয়েতে চলার সময় অহরহই ঘোষণা দেওয়া হয়, যে কারও ব্যাগ যেকোনো মুহূর্তে পুলিশ এসে পরীক্ষা করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে রওনা দিয়ে ঢাকা পর্যন্ত পথেও পাসপোর্ট আর বোর্ডিং পাস খুবই জরুরি। ঢাকায় এসে পড়লে পরিচয়পত্রটা আর ততটা দরকার হয় না। এখনো আমাদের দেশের সব মানুষ তার জাতীয় পরিচয়পত্র পায়নি।
লেখাটা যখন শুরু করেছি, এর একটু পরেই নিউইয়র্কের জেএফকে বিমানবন্দর থেকে দুবাইয়ের উদ্দেশে আমাদের প্লেন উড়বে। ইমিগ্রেশন পার হয়ে একটি ভালো জায়গা বেছে নিয়ে লিখছি। প্লেনে চেক-ইন থেকে শুরু করে পরবর্তী কয়েকটি ধাপ পার হতে কোনো সমস্যা হয়নি আমার। কোনো প্রশ্নেরও সামনে পড়তে হয়নি। লাগেজের ওজন ঠিক ছিল বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সে বিষয়ে কোনো প্রশ্নও তোলেননি।
কথাগুলো তুললাম এই কারণে যে, আমাদের শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে ওড়ার সময় কোনো না কোনো সংকটে পড়তে হয়। এ রকম বেশ কিছু বিরক্তিকর অভিজ্ঞতার কথা আশপাশের পরিচিত মানুষদের কাছ থেকেই শুনেছি। ইমিগ্রেশন পার হওয়ার পরও হঠাৎ করে এমন কোনো কর্মকর্তা এসে হাজির হয়ে এমন সব উদ্ভট প্রশ্ন করেন, যা শুধু বিরক্তিকর নয়, অপমানজনকও বটে।
কাগজপত্র ঠিকঠাক থাকলে এবং কোনো দুরভিসন্ধি না থাকলে যাত্রীর জন্য বিমানবন্দর এলাকা তো হওয়া উচিত সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা। সেখানে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের সবার জন্য যাত্রী হচ্ছেন ‘কাস্টমার’। কাস্টমারের সঙ্গে ব্যবহার কেমন হওয়া উচিত, সে শিক্ষা আমাদের বিমানবন্দরে কর্মরত মানুষদের ঠিকভাবে শেখানো হয় কি না, সে প্রশ্ন আছে।
শাহজালাল বিমানবন্দরে এখন বিভিন্ন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের নির্দিষ্ট লাউঞ্জ ব্যবহারের ব্যবস্থা হয়েছে। খেয়াল করলেই দেখবেন, সেই সব লাউঞ্জে কার্ডধারী যাত্রীদের সঙ্গে যে ব্যবহার করা হয়, তাতে যাত্রী ভাবতেই পারেন যে তাঁকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সেখানে খাবার-দাবারেরও ভালো ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু যিনি সেই সুযোগ পাচ্ছেন না, তাঁর জন্য অর্থের বিনিময়ে যেসব খাবারের ব্যবস্থা আছে, তা কতটা উপাদেয় এবং কতটা ‘ফ্রেশ’, এ নিয়ে প্রশ্ন আছে। বিক্রেতার দেহভাষা কতটা আন্তরিক, সেটাও দেখার ব্যাপার।
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যিনি প্রবেশ করেছেন ভিন্ন কোনো দেশে যাওয়ার জন্য, তাঁর যাত্রা নিরাপদ করার জন্য বিমানবন্দরে অবস্থিত প্রতিটি সংস্থারই যে দায়িত্ব আছে, সে কথা বোঝে কজন?
২. ঢাকায় বিমানবন্দরে নামলেই কিছু মানুষ এগিয়ে আসেন সাহায্য লাগবে কি না, জানতে। নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে তাঁরা লাগেজ ওঠানো-নামানোর কাজ করে থাকেন; অর্থাৎ এই মানুষদের সাহায্যে বিভিন্ন বিমানের চেক-ইনের জায়গা পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়া যায়। এতে করে কিছু সমস্যারও সৃষ্টি হয়। কখনো কখনো সারি বা কিউ ভেঙে তাঁরা ঢুকে পড়েন এবং অন্যের বিরক্তির কারণ হয়।
এটা কতটা আইনি সেবা, সেটা আমার জানা নেই। আর কোনো এয়ারপোর্টে নগদ অর্থের বিনিময়ে এ ধরনের সাহায্যকারীদের আমি দেখিনি; বরং বিমান কর্তৃপক্ষকে আগে থেকে বলা হলে হুইলচেয়ার সার্ভিস রয়েছে দেশের প্রায় সব বিমানবন্দরেই। কিন্তু বাঙালি যাত্রীদের ভেতর একটা অদ্ভুত প্রবণতা দেখছি। হাঁটাচলা করার সামর্থ্য থাকলেও কেউ কেউ বিমান থেকে নামার পর হুইলচেয়ারে করে যাচ্ছেন। এই প্রবণতা মোটেই সুরুচির পরিচায়ক নয়।
এখন বিমানের আইল সিটগুলোর বেশির ভাগই আগে থেকে তাঁদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়। ফলে সাধারণ যাত্রীদের পক্ষে আইল সিট পাওয়া কঠিন ব্যাপার। দিনে দিনে এই সমস্যা বাড়ছে।
৩. ঢাকা থেকে বিমানে ওঠার পর কিংবা বিমানে ঢাকায় যাওয়ার সময় সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দেখা দেয় রেস্টরুম বা টয়লেট ব্যবহার। যেকোনো বিমানযাত্রীকে অবশ্যই রেস্টরুম ব্যবহারের নিয়মকানুন জানতে হবে। কীভাবে তা ব্যবহার করা যায়, তা জানার ব্যবস্থা থাকা চাই। আমাদের বিদেশযাত্রী বাঙালিদের অনেকেই জানেন না কীভাবে টয়লেট ব্যবহার করতে হয়। ফলে তাঁদের অনেকেই টয়লেট ব্যবহার করার পর তা পরিষ্কার করার কথা মাথায় রাখেন না।
বিমানবালাদের অপরিসীম ধৈর্যই কেবল পরবর্তী যাত্রীর টয়লেটে যাওয়াকে বিড়ম্বনাহীন করে তোলে। আমি খেয়াল করে দেখেছি, কোনো যাত্রী যখন টয়লেট ব্যবহার করেছেন অথচ ফ্ল্যাশ করেননি, তখন এই বিমানবালাদের চেহারার অবস্থা। খুবই লজ্জা লাগে তখন। আমার মনে হয়, আকাশপথে ভ্রমণকারীর জন্য টয়লেট ব্যবহারের নিয়মকানুন জানা খুবই জরুরি।
আমরা যে ‘হাইজিন’ মেনে চলার ব্যাপারে উদাসীন, এটা এরও একটা উদাহরণ। আমাদের শহরের রাস্তাঘাটে যেসব শৌচাগার আছে, কিংবা স্টেডিয়ামের মতো জায়গায় যেসব শৌচাগার রয়েছে, সেগুলো ব্যবহারের সময় যে উদাসীনতার দেখা পেয়েছি, তাতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারেও আমাদের উদাসীনতার একটা আভাস পাওয়া যায়। এরই একটা রূপ দেখা যায় বিমানের টয়লেটে।
৪. দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার পর যখন ল্যান্ডিংয়ের সময় হয়, তখন বিমানে এক বিতিকিচ্ছি অবস্থার সৃষ্টি হয়। বিমান ল্যান্ড করার পরপরই যাত্রীরা যেভাবে সিট ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে যান, তাতে মনে হয়, বাস থেমেছে আর তক্ষুনি বাস থেকে না নামলে চালক বাসটা বুঝি আবার ছেড়ে দেবেন। যতক্ষণ পর্যন্ত সিটবেল্ট বেঁধে রাখার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত সিটে বসে থাকাই নিয়ম। কিন্তু তা মানছে কে?
তবে অবশ্যই বলতে হবে, এটা একটা স্বাভাবিক প্রবণতা। বিমান মাটি ছোঁয়ার পরপরই মাথার ওপরে যে ব্যাগটি রয়েছে, সেটা নামানোর প্রবণতা সবারই থাকে। এ পর্যন্ত না হয় মানলাম, সব ঠিক আছে। কিন্তু সামনের যাত্রীকে টপকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য রাস্তাও যখন কেউ খোঁজে, তখন সতর্ক হতে হয় এবং তখনই কেবল মনে হয়, নিয়মভঙ্গের প্রবণতা যাদের রয়েছে, তাদের মধ্যে আমরা বাংলার মানুষেরা অনেক দূর এগিয়ে আছি।
শুধু কি তাই? এয়ারপোর্টের কাস্টমস বা ইমিগ্রেশনে যে অফিসারটি বসে আছেন, তাঁর দেহভাষার মধ্যে এমন কিছু থাকতে হবে, যাতে বোঝা যায়, তিনি ‘স্বাগত’ জানাচ্ছেন। বিভিন্ন দেশের ইমিগ্রেশন পার হওয়ার সময় পাসপোর্টে সিল দেওয়ার কালে তাঁদের অনেকেই বলেন, ‘ওয়েলকাম টু...।’ কিন্তু হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন অফিসারদের চেহারায় ক্লান্তি আর গোমড়া মুখ দেখার অভিজ্ঞতাই বেশি। শনিবার বিকেলে যখন আমাদের প্লেন ল্যান্ড করল ঢাকায়, তখনো ইমিগ্রেশন অফিসারদের মুখগুলো হাস্যরসহীন।
আমার পাসপোর্ট যখন চেক করা হচ্ছে, তখন বেশ জোর দিয়েই বললাম, ‘আপনাদের মুখগুলো এমন গোমড়া কেন? আমরা যারা বাইরে থেকে আসছি, আপনাদের দিকে তাকালে মনে হয়, আমরা যেন কোনো অপরাধ করে এসেছি। অথচ আপনাদের চেহারায় হাসি থাকলে আমাদের মনও প্রফুল্ল হয়ে ওঠে।’
আমার এ কথায় আশপাশের তিন-চারজন ইমিগ্রেশন অফিসারের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। তাঁদের একজন বলেন, ‘আমরাও তো হাসতে চাই। কিন্তু এমন সব ব্যাপার আছে, যেগুলো আমাদের হাসতে দেয় না।’ কী সে সব ব্যাপার, তা জানার সুযোগ আমার হয়নি। তবে তা জানা থাকা দরকার।
বিমানবন্দর হয়ে যাঁরা দেশের বাইরে যাচ্ছেন, তাঁদের ভ্রমণ নিরাপদ ও স্বস্তিকর করে তোলাটাই বিমানবন্দরে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল কাজ হওয়া উচিত। কর্মী বা কর্মকর্তার দেহভাষায় একটা স্বতঃস্ফূর্ত উচ্ছলতা না থাকলে তা কোনো সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠতে পারে না। আমাদের বিমানবন্দরের গোমড়া পরিবেশ থেকে উত্তরণের জন্য প্রতিটি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকেই আন্তরিক হতে হবে।
আর যাত্রীদের কথাও বলা দরকার। সম্প্রতি একজন যাত্রী প্রায় ১৬টি পোশাক পরে তাতে ৪ কোটি টাকার বেশি সোনার গুঁড়া নিয়ে এসেছেন। তিনি ধরা পড়ার পরপরই আমরা এসেছি বলে গ্রিন লাইন দিয়ে বের হওয়ার সময়ও দেখলাম স্যুটকেস চেক করা হচ্ছে। মাইকে ঘোষণা করা হচ্ছে, যদি কারও কাছে ১০০ গ্রামের বেশি স্বর্ণ থাকে, তাহলে তা ডিক্লেয়ার করতে হবে। নইলে প্রচলিত শাস্তি দেওয়া হবে।
হতে পারে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে যে প্লেনগুলো ঢাকায় আসে, তার যাত্রীদের অনেকেই হয়তো নিয়ম ভেঙে অতিরিক্ত স্বর্ণ নিয়ে আসেন। কিন্তু সেটা রোধ করতে হলে সেবাদানকারী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকেও যতটা সৎ ও উদ্ভাবনশক্তির অধিকারী হতে হবে, তা তারা হতে পেরেছে কি?
এখানে এমন কিছু সমস্যার প্রসঙ্গ উঠে এসেছে, যা সহজে নিরাময়যোগ্য নয়। সমস্যাগুলোর সমাধানের জন্য বিমানবন্দরে কাজ করার মাজেজাটা বোঝা দরকার। এ ব্যাপারে আমরা যে খুবই উদাসীন, সেটা প্রতিবার বিমানবন্দরের অভিজ্ঞতা থেকেই বুঝতে পারি।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
লেখাটা যখন শুরু করেছি, তখনো হাতের কাছে পরিচয় প্রকাশিত হয়, এমন সব ডকুমেন্ট আমার হাতে রাখতে হচ্ছিল। যদিও দেখাতেই হবে কাউকে, এমন নয়, কিন্তু যেকোনো সময় পুলিশ এসে পরিচয়পত্র চাইতে পারে। সাবওয়েতে চলার সময় অহরহই ঘোষণা দেওয়া হয়, যে কারও ব্যাগ যেকোনো মুহূর্তে পুলিশ এসে পরীক্ষা করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে রওনা দিয়ে ঢাকা পর্যন্ত পথেও পাসপোর্ট আর বোর্ডিং পাস খুবই জরুরি। ঢাকায় এসে পড়লে পরিচয়পত্রটা আর ততটা দরকার হয় না। এখনো আমাদের দেশের সব মানুষ তার জাতীয় পরিচয়পত্র পায়নি।
লেখাটা যখন শুরু করেছি, এর একটু পরেই নিউইয়র্কের জেএফকে বিমানবন্দর থেকে দুবাইয়ের উদ্দেশে আমাদের প্লেন উড়বে। ইমিগ্রেশন পার হয়ে একটি ভালো জায়গা বেছে নিয়ে লিখছি। প্লেনে চেক-ইন থেকে শুরু করে পরবর্তী কয়েকটি ধাপ পার হতে কোনো সমস্যা হয়নি আমার। কোনো প্রশ্নেরও সামনে পড়তে হয়নি। লাগেজের ওজন ঠিক ছিল বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সে বিষয়ে কোনো প্রশ্নও তোলেননি।
কথাগুলো তুললাম এই কারণে যে, আমাদের শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে ওড়ার সময় কোনো না কোনো সংকটে পড়তে হয়। এ রকম বেশ কিছু বিরক্তিকর অভিজ্ঞতার কথা আশপাশের পরিচিত মানুষদের কাছ থেকেই শুনেছি। ইমিগ্রেশন পার হওয়ার পরও হঠাৎ করে এমন কোনো কর্মকর্তা এসে হাজির হয়ে এমন সব উদ্ভট প্রশ্ন করেন, যা শুধু বিরক্তিকর নয়, অপমানজনকও বটে।
কাগজপত্র ঠিকঠাক থাকলে এবং কোনো দুরভিসন্ধি না থাকলে যাত্রীর জন্য বিমানবন্দর এলাকা তো হওয়া উচিত সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা। সেখানে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের সবার জন্য যাত্রী হচ্ছেন ‘কাস্টমার’। কাস্টমারের সঙ্গে ব্যবহার কেমন হওয়া উচিত, সে শিক্ষা আমাদের বিমানবন্দরে কর্মরত মানুষদের ঠিকভাবে শেখানো হয় কি না, সে প্রশ্ন আছে।
শাহজালাল বিমানবন্দরে এখন বিভিন্ন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের নির্দিষ্ট লাউঞ্জ ব্যবহারের ব্যবস্থা হয়েছে। খেয়াল করলেই দেখবেন, সেই সব লাউঞ্জে কার্ডধারী যাত্রীদের সঙ্গে যে ব্যবহার করা হয়, তাতে যাত্রী ভাবতেই পারেন যে তাঁকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সেখানে খাবার-দাবারেরও ভালো ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু যিনি সেই সুযোগ পাচ্ছেন না, তাঁর জন্য অর্থের বিনিময়ে যেসব খাবারের ব্যবস্থা আছে, তা কতটা উপাদেয় এবং কতটা ‘ফ্রেশ’, এ নিয়ে প্রশ্ন আছে। বিক্রেতার দেহভাষা কতটা আন্তরিক, সেটাও দেখার ব্যাপার।
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যিনি প্রবেশ করেছেন ভিন্ন কোনো দেশে যাওয়ার জন্য, তাঁর যাত্রা নিরাপদ করার জন্য বিমানবন্দরে অবস্থিত প্রতিটি সংস্থারই যে দায়িত্ব আছে, সে কথা বোঝে কজন?
২. ঢাকায় বিমানবন্দরে নামলেই কিছু মানুষ এগিয়ে আসেন সাহায্য লাগবে কি না, জানতে। নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে তাঁরা লাগেজ ওঠানো-নামানোর কাজ করে থাকেন; অর্থাৎ এই মানুষদের সাহায্যে বিভিন্ন বিমানের চেক-ইনের জায়গা পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়া যায়। এতে করে কিছু সমস্যারও সৃষ্টি হয়। কখনো কখনো সারি বা কিউ ভেঙে তাঁরা ঢুকে পড়েন এবং অন্যের বিরক্তির কারণ হয়।
এটা কতটা আইনি সেবা, সেটা আমার জানা নেই। আর কোনো এয়ারপোর্টে নগদ অর্থের বিনিময়ে এ ধরনের সাহায্যকারীদের আমি দেখিনি; বরং বিমান কর্তৃপক্ষকে আগে থেকে বলা হলে হুইলচেয়ার সার্ভিস রয়েছে দেশের প্রায় সব বিমানবন্দরেই। কিন্তু বাঙালি যাত্রীদের ভেতর একটা অদ্ভুত প্রবণতা দেখছি। হাঁটাচলা করার সামর্থ্য থাকলেও কেউ কেউ বিমান থেকে নামার পর হুইলচেয়ারে করে যাচ্ছেন। এই প্রবণতা মোটেই সুরুচির পরিচায়ক নয়।
এখন বিমানের আইল সিটগুলোর বেশির ভাগই আগে থেকে তাঁদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়। ফলে সাধারণ যাত্রীদের পক্ষে আইল সিট পাওয়া কঠিন ব্যাপার। দিনে দিনে এই সমস্যা বাড়ছে।
৩. ঢাকা থেকে বিমানে ওঠার পর কিংবা বিমানে ঢাকায় যাওয়ার সময় সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দেখা দেয় রেস্টরুম বা টয়লেট ব্যবহার। যেকোনো বিমানযাত্রীকে অবশ্যই রেস্টরুম ব্যবহারের নিয়মকানুন জানতে হবে। কীভাবে তা ব্যবহার করা যায়, তা জানার ব্যবস্থা থাকা চাই। আমাদের বিদেশযাত্রী বাঙালিদের অনেকেই জানেন না কীভাবে টয়লেট ব্যবহার করতে হয়। ফলে তাঁদের অনেকেই টয়লেট ব্যবহার করার পর তা পরিষ্কার করার কথা মাথায় রাখেন না।
বিমানবালাদের অপরিসীম ধৈর্যই কেবল পরবর্তী যাত্রীর টয়লেটে যাওয়াকে বিড়ম্বনাহীন করে তোলে। আমি খেয়াল করে দেখেছি, কোনো যাত্রী যখন টয়লেট ব্যবহার করেছেন অথচ ফ্ল্যাশ করেননি, তখন এই বিমানবালাদের চেহারার অবস্থা। খুবই লজ্জা লাগে তখন। আমার মনে হয়, আকাশপথে ভ্রমণকারীর জন্য টয়লেট ব্যবহারের নিয়মকানুন জানা খুবই জরুরি।
আমরা যে ‘হাইজিন’ মেনে চলার ব্যাপারে উদাসীন, এটা এরও একটা উদাহরণ। আমাদের শহরের রাস্তাঘাটে যেসব শৌচাগার আছে, কিংবা স্টেডিয়ামের মতো জায়গায় যেসব শৌচাগার রয়েছে, সেগুলো ব্যবহারের সময় যে উদাসীনতার দেখা পেয়েছি, তাতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারেও আমাদের উদাসীনতার একটা আভাস পাওয়া যায়। এরই একটা রূপ দেখা যায় বিমানের টয়লেটে।
৪. দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার পর যখন ল্যান্ডিংয়ের সময় হয়, তখন বিমানে এক বিতিকিচ্ছি অবস্থার সৃষ্টি হয়। বিমান ল্যান্ড করার পরপরই যাত্রীরা যেভাবে সিট ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে যান, তাতে মনে হয়, বাস থেমেছে আর তক্ষুনি বাস থেকে না নামলে চালক বাসটা বুঝি আবার ছেড়ে দেবেন। যতক্ষণ পর্যন্ত সিটবেল্ট বেঁধে রাখার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত সিটে বসে থাকাই নিয়ম। কিন্তু তা মানছে কে?
তবে অবশ্যই বলতে হবে, এটা একটা স্বাভাবিক প্রবণতা। বিমান মাটি ছোঁয়ার পরপরই মাথার ওপরে যে ব্যাগটি রয়েছে, সেটা নামানোর প্রবণতা সবারই থাকে। এ পর্যন্ত না হয় মানলাম, সব ঠিক আছে। কিন্তু সামনের যাত্রীকে টপকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য রাস্তাও যখন কেউ খোঁজে, তখন সতর্ক হতে হয় এবং তখনই কেবল মনে হয়, নিয়মভঙ্গের প্রবণতা যাদের রয়েছে, তাদের মধ্যে আমরা বাংলার মানুষেরা অনেক দূর এগিয়ে আছি।
শুধু কি তাই? এয়ারপোর্টের কাস্টমস বা ইমিগ্রেশনে যে অফিসারটি বসে আছেন, তাঁর দেহভাষার মধ্যে এমন কিছু থাকতে হবে, যাতে বোঝা যায়, তিনি ‘স্বাগত’ জানাচ্ছেন। বিভিন্ন দেশের ইমিগ্রেশন পার হওয়ার সময় পাসপোর্টে সিল দেওয়ার কালে তাঁদের অনেকেই বলেন, ‘ওয়েলকাম টু...।’ কিন্তু হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন অফিসারদের চেহারায় ক্লান্তি আর গোমড়া মুখ দেখার অভিজ্ঞতাই বেশি। শনিবার বিকেলে যখন আমাদের প্লেন ল্যান্ড করল ঢাকায়, তখনো ইমিগ্রেশন অফিসারদের মুখগুলো হাস্যরসহীন।
আমার পাসপোর্ট যখন চেক করা হচ্ছে, তখন বেশ জোর দিয়েই বললাম, ‘আপনাদের মুখগুলো এমন গোমড়া কেন? আমরা যারা বাইরে থেকে আসছি, আপনাদের দিকে তাকালে মনে হয়, আমরা যেন কোনো অপরাধ করে এসেছি। অথচ আপনাদের চেহারায় হাসি থাকলে আমাদের মনও প্রফুল্ল হয়ে ওঠে।’
আমার এ কথায় আশপাশের তিন-চারজন ইমিগ্রেশন অফিসারের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। তাঁদের একজন বলেন, ‘আমরাও তো হাসতে চাই। কিন্তু এমন সব ব্যাপার আছে, যেগুলো আমাদের হাসতে দেয় না।’ কী সে সব ব্যাপার, তা জানার সুযোগ আমার হয়নি। তবে তা জানা থাকা দরকার।
বিমানবন্দর হয়ে যাঁরা দেশের বাইরে যাচ্ছেন, তাঁদের ভ্রমণ নিরাপদ ও স্বস্তিকর করে তোলাটাই বিমানবন্দরে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল কাজ হওয়া উচিত। কর্মী বা কর্মকর্তার দেহভাষায় একটা স্বতঃস্ফূর্ত উচ্ছলতা না থাকলে তা কোনো সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠতে পারে না। আমাদের বিমানবন্দরের গোমড়া পরিবেশ থেকে উত্তরণের জন্য প্রতিটি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকেই আন্তরিক হতে হবে।
আর যাত্রীদের কথাও বলা দরকার। সম্প্রতি একজন যাত্রী প্রায় ১৬টি পোশাক পরে তাতে ৪ কোটি টাকার বেশি সোনার গুঁড়া নিয়ে এসেছেন। তিনি ধরা পড়ার পরপরই আমরা এসেছি বলে গ্রিন লাইন দিয়ে বের হওয়ার সময়ও দেখলাম স্যুটকেস চেক করা হচ্ছে। মাইকে ঘোষণা করা হচ্ছে, যদি কারও কাছে ১০০ গ্রামের বেশি স্বর্ণ থাকে, তাহলে তা ডিক্লেয়ার করতে হবে। নইলে প্রচলিত শাস্তি দেওয়া হবে।
হতে পারে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে যে প্লেনগুলো ঢাকায় আসে, তার যাত্রীদের অনেকেই হয়তো নিয়ম ভেঙে অতিরিক্ত স্বর্ণ নিয়ে আসেন। কিন্তু সেটা রোধ করতে হলে সেবাদানকারী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকেও যতটা সৎ ও উদ্ভাবনশক্তির অধিকারী হতে হবে, তা তারা হতে পেরেছে কি?
এখানে এমন কিছু সমস্যার প্রসঙ্গ উঠে এসেছে, যা সহজে নিরাময়যোগ্য নয়। সমস্যাগুলোর সমাধানের জন্য বিমানবন্দরে কাজ করার মাজেজাটা বোঝা দরকার। এ ব্যাপারে আমরা যে খুবই উদাসীন, সেটা প্রতিবার বিমানবন্দরের অভিজ্ঞতা থেকেই বুঝতে পারি।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৩ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৭ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৭ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১১ দিন আগে