জাহীদ রেজা নূর
কদিন আগের কথা। পেনড্রাইভ নিতে এসেছিল মাসুদ। বলল, ‘মাঝে মাঝে বাইরে যাবেন, ভাইয়া। ঘরে বসে থাকবেন না। ঐতিহাসিক সময়ের সাক্ষী হতে হবে তো!’
কূপমণ্ডূক হয়ে ঘরে বসে আছি—ব্যাপারটা যে এমন নয়, সে কথা আর বললাম না ওকে। এই কদিন পথে নানা অভিজ্ঞতা হয়েছে মাসুদের, তাই রণক্ষেত্রগুলো এড়িয়ে অফিসে যাওয়া এবং বাড়ি ফেরার রোমাঞ্চের কারণেই কথাগুলো বলেছিল ও।
ইন্টারনেট-ব্যবস্থা চালু না থাকায় আমাদের লেখকেরা লেখা পাঠাতে পারছিলেন না তখন। কাউকে ফোন করে পুরো লেখার ডিকটেশন নেওয়ার অনুমতি চাইলেও কেউ কেউ সেই সময়টায় লেখা থেকে বিরত থেকেছেন। লোকবল ছিল না বলে কারও কারও বাড়ি থেকে পেনড্রাইভে করে লেখা আনা যায়নি।
তখন অফিস থেকেই বলা হলো, অন্তত চারটি জ্বলন্ত স্পট পেরিয়ে অফিসে আসার হাঙ্গামা না করে লেখালেখিটাই বেশি করে করা দরকার। অফিসের গাড়ি এসে নিয়ে যাবে পেনড্রাইভ। তাতে পাতাগুলো সচল থাকবে। সত্যিই অসাড় নেট জগৎ কতভাবে যে কাজ করার পথ তৈরি করেছে, সে কথাগুলো লেখা থাকতে হবে।
এ সময়টায় পর্যাপ্ত লেখালেখি করেছি আমি এবং সুযোগ পেলেই বের হয়েছি বাড়ি থেকে। দেখার চেষ্টা করেছি, কেমন আছে সাধারণ মানুষ। দেখার চেষ্টা করেছি, ধ্বংসযজ্ঞ। যখন আমাদের বাড়ির জানালা দিয়ে কুণ্ডলী পাকানো ধোঁয়া দেখলাম একদিন, দেখলাম, নানা ধরনের মানুষ ভিড় জমাচ্ছে রাস্তায়, আবার পুলিশের গাড়ি এলে তারা সরে যাচ্ছে দূরে, তখন বুঝলাম, এই আন্দোলন এখন শুধু ছাত্রদের নয়।
তাহলে কি রাস্তায় বের হওয়া সব মানুষকে দুষ্কৃতকারী আখ্যা দিতে হবে? না। বাজার থেকে বেরিয়ে যারা ভিড় করেছে রাস্তায়, তারা একেবারেই নিরীহ মানুষ। তারা পাল্টাপাল্টি ধাওয়া দেখার জন্য বেরিয়ে এসেছে রাস্তায়। পরদিন যখন কারফিউ জারি করা হলো, তখনো তারা কারফিউর মধ্যে রাস্তায় নেমেছে কারফিউ দেখার জন্য। এদের মধ্যেই ছিল কিছু মতলববাজ মানুষ। এরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আগুন দিয়েছে। আন্দোলনের ঝোল নিজেদের দিকে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। ভেবেছে, একটু নাড়া দিলেই সরকার পড়ে যাবে।জিয়াউর রহমানের শাসনামলে দিনের পর দিন কারফিউ ছিল রাতে। আমার ভাই পত্রিকা অফিসে কাজ করতেন। ফিরতেন নাইট ডিউটি করে। কারফিউ পাস দিয়েই তাঁকে চলাচল করতে হতো।
এরপরও বহুবার সান্ধ্য আইনের দেখা পেয়েছে মানুষ। কিন্তু বেশ বড় একটা সময় কারফিউর মধ্য দিয়ে যেতে হয়নি। সাধারণ মানুষ কারফিউ ভালোবাসে না। রাস্তাঘাটে মুক্ত হাওয়ায় নিশ্বাস নেওয়া যাবে না—এ কেমন কথা!
দুষ্কৃতকারীরা সুযোগ পেলেই যেকোনো আন্দোলনে ঢুকে আন্দোলনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে চায়। কিন্তু সবই দুষ্কৃতকারীদের কাজ—এ রকম ভাবা বোধ হয় ঠিক না। জনমনে যদি ক্ষোভ জমে ওঠে, তাহলে সাধারণ মানুষও কখনো কখনো আইন ভেঙে থাকে। উসকানিদাতারা এই ফাঁকে ফায়দা লোটে। এবারকার আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা যারা করেছে, তারা অন্যায় করেছে ঠিকই, কিন্তু জনগণ এ ঘটনা বা দুর্ঘটনার সময় শুধু দুষ্কৃতকারীদের নিন্দা করেই নিজের কর্তব্য সেরেছে বলে মনে হয় না।
এই সরকার কতটা জনমুখী, সে প্রশ্নটিও তারা নিজের কাছে করেছে। নির্বাচন যখন প্রহসনে পরিণত হয়, তখন জনগণ সরকারের ওপর আস্থা রাখে কী করে? ক্ষমতাসীন দলের মানুষেরা যখন জনগণের সঙ্গে এক কাতারে দাঁড়িয়ে জনদুর্দশায় কষ্ট না পান, তখন তারা জনদরদি হন কী করে? হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগগুলোর সুরাহা না হলে জনগণ সরকারকে ছাড় দেবে কেন? এই ধরনের অসংখ্য উপাদান এসে যুক্ত হয়েছিল এই আন্দোলনের সময়। শিক্ষার্থীদের সেই ক্ষোভ, সেই ক্রোধকে আমলে না নিলে এই আন্দোলনের স্বরূপ উদ্ঘাটিত হবে না।
যে পানওয়ালা কিংবা চাখানার মালিক মলিন মুখে সময় অতিবাহিত করছেন, তিনি নিশ্চয়ই রাজনীতির এই ঘোরপ্যাঁচ বোঝেন না। ঢাকা শহরের কয়েকটি জায়গায় সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ দেখেছি, দেখেছি শূন্য রিকশা চালিয়ে যাওয়া রিকশাচালককে, যাঁরা দিনের রোজগারটাই শুরু করতে পারেননি তখনো। এই মানুষদের দেখে রাখবে কে?
ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর কোনো বিকল্প পথ বের হলো না, অনলাইন-বাণিজ্য পর্যন্ত পড়ল স্থবির হয়ে—এই বিড়ম্বনার জবাব দেবে কে? ইন্টারনেট বিকল হওয়ার পর ত্রস্ত হয়ে আমার এক বন্ধু বলল, ওদের আমেরিকা-বেইজড অফিস এখনই নেপালে স্থানান্তর করার নির্দেশ এসেছে। নইলে এত বিশাল ব্যবসার ভীষণ ক্ষতি হয়ে যাবে। যত দ্রুত সম্ভব অফিস নেপালে শিফট করতে বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারগুলো ভেবে দেখা উচিত ছিল আগেই। প্রশ্ন যদি করা হয়, কেউ যদি আমাদের দেশকে আক্রমণ করে শুরুতেই এভাবে ইন্টারনেট গুঁড়িয়ে দেয়, তাহলে আমরা কী নিয়ে যুদ্ধ করব? ইন্টারনেট বাঁচানোর মুরোদই যদি না থাকে, তাহলে শুধু দুষ্কৃতকারীদের দোষ দিয়ে কি আমরা বেশি দূর এগোতে পারব? কেন মেট্রো স্টেশনগুলো কিংবা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো এ রকম অরক্ষিত ছিল, তারই বা জবাব কী?
একটা কথা এসেছে পত্রিকায়। এই সংকট কেটে গেলে আওয়ামী লীগের উচিত দল গোছানোর প্রতি মনোযোগ দেওয়া। খুব সত্য। সরকার আর দল যে দুটি আলাদা ব্যাপার, দল সরকারে থাকলেও সাংগঠনিক কার্যাবলির প্রতি বিশ্বস্ত থাকা যে দলীয় কর্তাদের জন্য সবচেয়ে জরুরি, সে কথা না বুঝলে সরকার জনপ্রিয়তা হারাবে, দল অসংগঠিত হয়ে মেরুদণ্ডহীন হয়ে পড়বে। দলকে চাঙা করতে হলে জনমুখী ভাবনাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। জনগণের পাশে এসে দাঁড়াতে হবে। পাড়ায়-মহল্লায় নিজেদের শিকড় থাকতে হবে, নইলে জনবিচ্ছিন্ন হওয়াই তো সরকারের নিয়তি।
আমি নিজেই তো জানি, নানা ধরনের প্রলোভনের মধ্যে ভাবনার এই সততা বজায় রেখে রাজনীতি করা কতটা কঠিন। আমাদের দেশটায় আমলারা যতটা শক্তিশালী, ততটা বিচক্ষণ হয়ে উঠতে পারেননি রাজনীতিবিদেরা। আমলাদের লম্বা হাত খাটো করে দেওয়ার মহৌষধ নেই রাজনীতিবিদদের কাছে। আমলা আর রাজনীতিবিদ যখন একই ছন্দে চলতে চান এবং সেই ছন্দের মধ্যে ছড়িয়ে থাকে অর্থের সুবাস, তখন দেশের সবচেয়ে বড় সর্বনাশটা হয়ে যায়। এ কথাগুলো সবাই জানে, কিন্তু ক্ষমতা এমন একটা ব্যাপার, ক্ষমতায় গেলে এ কথার অর্থ ভুলে যায় ক্ষমতাসীনেরা।
সময়ের একটা দূরত্ব থেকে যখন ঘটনাগুলো দেখছি, তখন মনে হচ্ছে এমন একটি দুর্ঘটনার সাক্ষী হতে হলো আমাদের, যার জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম না। দুই শতাধিক মায়ের কোল খালি হয়েছে, এই ক্ষত কোনো মলমেই শুকাবে না। কেন এত গুলি চলল, তার জবাবদিহি কে করবে? আন্দোলনের মধ্যে দুষ্কৃতকারীদের ঢুকে যাওয়ার পথ কে করে দিল? বিক্ষোভে গুলি চালানোর নির্দেশ কে দিল?
আমাদের দুর্বল হয়ে আসা গণতন্ত্রের দিকে নজর দেওয়া দরকার। নতুন বোধোদয়ের সময় এসেছে। মুক্তিযুদ্ধ শব্দটি বহু ব্যবহারে যারা ক্লিশে করে ফেলেছে, তাদের দিকে না তাকিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি বিশ্বস্ত থেকেই এগিয়ে যেতে হবে। করতে হবে দেশগঠনের কাজ। কিন্তু বিরক্ত হয়ে স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যাওয়া কোনো রুচিকর কাজ নয়। এ কথা মনে রাখা বোধ হয় জরুরি। কিন্তু যুদ্ধটা কোথায়, সেটা মনে আছে তো?
নতুন প্রজন্মের মনে নতুন যে প্রশ্নগুলো এলে ভালো হতো, তার কয়েকটির কথা বলি। সরকারি চাকরির ঘুষ-দুর্নীতি রোধে করণীয় খুঁজে বের করতে হবে, এর বিরুদ্ধেও চালাতে হবে আন্দোলন। সিন্ডিকেট ব্যবসা কিংবা ব্যাংকের টাকা মেরে কোটিপতি হওয়াদের স্বরূপ সন্ধান করতে হবে। ভেঙে যাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো আবার গড়ে তুলতে হবে।
যুদ্ধটা হলো ভালো বিশ্ববিদ্যালয় তথা মগজের কারবারি হওয়া, ভালো চিকিৎসালয়, অর্থাৎ সুঠাম স্বাস্থ্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া, ভালো আর্থিক প্রতিষ্ঠান মানে চুরিচামারি না করে আয়-উন্নতি বাড়ানো, ভালো রাজনীতি, অর্থাৎ দেশ ও দশের প্রতি নিবেদিত রাজনীতির ব্যবস্থা করতে না পারলে মুক্তিযুদ্ধ শব্দটির কোনো মানে থাকে না। সততা নিয়ে কাজ করলে তাতে দেশপ্রেম থাকে। এ কথাটি বোঝার এবং সেই অনুযায়ী কাজ করার সময় আর কবে আসবে?
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
কদিন আগের কথা। পেনড্রাইভ নিতে এসেছিল মাসুদ। বলল, ‘মাঝে মাঝে বাইরে যাবেন, ভাইয়া। ঘরে বসে থাকবেন না। ঐতিহাসিক সময়ের সাক্ষী হতে হবে তো!’
কূপমণ্ডূক হয়ে ঘরে বসে আছি—ব্যাপারটা যে এমন নয়, সে কথা আর বললাম না ওকে। এই কদিন পথে নানা অভিজ্ঞতা হয়েছে মাসুদের, তাই রণক্ষেত্রগুলো এড়িয়ে অফিসে যাওয়া এবং বাড়ি ফেরার রোমাঞ্চের কারণেই কথাগুলো বলেছিল ও।
ইন্টারনেট-ব্যবস্থা চালু না থাকায় আমাদের লেখকেরা লেখা পাঠাতে পারছিলেন না তখন। কাউকে ফোন করে পুরো লেখার ডিকটেশন নেওয়ার অনুমতি চাইলেও কেউ কেউ সেই সময়টায় লেখা থেকে বিরত থেকেছেন। লোকবল ছিল না বলে কারও কারও বাড়ি থেকে পেনড্রাইভে করে লেখা আনা যায়নি।
তখন অফিস থেকেই বলা হলো, অন্তত চারটি জ্বলন্ত স্পট পেরিয়ে অফিসে আসার হাঙ্গামা না করে লেখালেখিটাই বেশি করে করা দরকার। অফিসের গাড়ি এসে নিয়ে যাবে পেনড্রাইভ। তাতে পাতাগুলো সচল থাকবে। সত্যিই অসাড় নেট জগৎ কতভাবে যে কাজ করার পথ তৈরি করেছে, সে কথাগুলো লেখা থাকতে হবে।
এ সময়টায় পর্যাপ্ত লেখালেখি করেছি আমি এবং সুযোগ পেলেই বের হয়েছি বাড়ি থেকে। দেখার চেষ্টা করেছি, কেমন আছে সাধারণ মানুষ। দেখার চেষ্টা করেছি, ধ্বংসযজ্ঞ। যখন আমাদের বাড়ির জানালা দিয়ে কুণ্ডলী পাকানো ধোঁয়া দেখলাম একদিন, দেখলাম, নানা ধরনের মানুষ ভিড় জমাচ্ছে রাস্তায়, আবার পুলিশের গাড়ি এলে তারা সরে যাচ্ছে দূরে, তখন বুঝলাম, এই আন্দোলন এখন শুধু ছাত্রদের নয়।
তাহলে কি রাস্তায় বের হওয়া সব মানুষকে দুষ্কৃতকারী আখ্যা দিতে হবে? না। বাজার থেকে বেরিয়ে যারা ভিড় করেছে রাস্তায়, তারা একেবারেই নিরীহ মানুষ। তারা পাল্টাপাল্টি ধাওয়া দেখার জন্য বেরিয়ে এসেছে রাস্তায়। পরদিন যখন কারফিউ জারি করা হলো, তখনো তারা কারফিউর মধ্যে রাস্তায় নেমেছে কারফিউ দেখার জন্য। এদের মধ্যেই ছিল কিছু মতলববাজ মানুষ। এরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আগুন দিয়েছে। আন্দোলনের ঝোল নিজেদের দিকে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। ভেবেছে, একটু নাড়া দিলেই সরকার পড়ে যাবে।জিয়াউর রহমানের শাসনামলে দিনের পর দিন কারফিউ ছিল রাতে। আমার ভাই পত্রিকা অফিসে কাজ করতেন। ফিরতেন নাইট ডিউটি করে। কারফিউ পাস দিয়েই তাঁকে চলাচল করতে হতো।
এরপরও বহুবার সান্ধ্য আইনের দেখা পেয়েছে মানুষ। কিন্তু বেশ বড় একটা সময় কারফিউর মধ্য দিয়ে যেতে হয়নি। সাধারণ মানুষ কারফিউ ভালোবাসে না। রাস্তাঘাটে মুক্ত হাওয়ায় নিশ্বাস নেওয়া যাবে না—এ কেমন কথা!
দুষ্কৃতকারীরা সুযোগ পেলেই যেকোনো আন্দোলনে ঢুকে আন্দোলনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে চায়। কিন্তু সবই দুষ্কৃতকারীদের কাজ—এ রকম ভাবা বোধ হয় ঠিক না। জনমনে যদি ক্ষোভ জমে ওঠে, তাহলে সাধারণ মানুষও কখনো কখনো আইন ভেঙে থাকে। উসকানিদাতারা এই ফাঁকে ফায়দা লোটে। এবারকার আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা যারা করেছে, তারা অন্যায় করেছে ঠিকই, কিন্তু জনগণ এ ঘটনা বা দুর্ঘটনার সময় শুধু দুষ্কৃতকারীদের নিন্দা করেই নিজের কর্তব্য সেরেছে বলে মনে হয় না।
এই সরকার কতটা জনমুখী, সে প্রশ্নটিও তারা নিজের কাছে করেছে। নির্বাচন যখন প্রহসনে পরিণত হয়, তখন জনগণ সরকারের ওপর আস্থা রাখে কী করে? ক্ষমতাসীন দলের মানুষেরা যখন জনগণের সঙ্গে এক কাতারে দাঁড়িয়ে জনদুর্দশায় কষ্ট না পান, তখন তারা জনদরদি হন কী করে? হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগগুলোর সুরাহা না হলে জনগণ সরকারকে ছাড় দেবে কেন? এই ধরনের অসংখ্য উপাদান এসে যুক্ত হয়েছিল এই আন্দোলনের সময়। শিক্ষার্থীদের সেই ক্ষোভ, সেই ক্রোধকে আমলে না নিলে এই আন্দোলনের স্বরূপ উদ্ঘাটিত হবে না।
যে পানওয়ালা কিংবা চাখানার মালিক মলিন মুখে সময় অতিবাহিত করছেন, তিনি নিশ্চয়ই রাজনীতির এই ঘোরপ্যাঁচ বোঝেন না। ঢাকা শহরের কয়েকটি জায়গায় সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ দেখেছি, দেখেছি শূন্য রিকশা চালিয়ে যাওয়া রিকশাচালককে, যাঁরা দিনের রোজগারটাই শুরু করতে পারেননি তখনো। এই মানুষদের দেখে রাখবে কে?
ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর কোনো বিকল্প পথ বের হলো না, অনলাইন-বাণিজ্য পর্যন্ত পড়ল স্থবির হয়ে—এই বিড়ম্বনার জবাব দেবে কে? ইন্টারনেট বিকল হওয়ার পর ত্রস্ত হয়ে আমার এক বন্ধু বলল, ওদের আমেরিকা-বেইজড অফিস এখনই নেপালে স্থানান্তর করার নির্দেশ এসেছে। নইলে এত বিশাল ব্যবসার ভীষণ ক্ষতি হয়ে যাবে। যত দ্রুত সম্ভব অফিস নেপালে শিফট করতে বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারগুলো ভেবে দেখা উচিত ছিল আগেই। প্রশ্ন যদি করা হয়, কেউ যদি আমাদের দেশকে আক্রমণ করে শুরুতেই এভাবে ইন্টারনেট গুঁড়িয়ে দেয়, তাহলে আমরা কী নিয়ে যুদ্ধ করব? ইন্টারনেট বাঁচানোর মুরোদই যদি না থাকে, তাহলে শুধু দুষ্কৃতকারীদের দোষ দিয়ে কি আমরা বেশি দূর এগোতে পারব? কেন মেট্রো স্টেশনগুলো কিংবা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো এ রকম অরক্ষিত ছিল, তারই বা জবাব কী?
একটা কথা এসেছে পত্রিকায়। এই সংকট কেটে গেলে আওয়ামী লীগের উচিত দল গোছানোর প্রতি মনোযোগ দেওয়া। খুব সত্য। সরকার আর দল যে দুটি আলাদা ব্যাপার, দল সরকারে থাকলেও সাংগঠনিক কার্যাবলির প্রতি বিশ্বস্ত থাকা যে দলীয় কর্তাদের জন্য সবচেয়ে জরুরি, সে কথা না বুঝলে সরকার জনপ্রিয়তা হারাবে, দল অসংগঠিত হয়ে মেরুদণ্ডহীন হয়ে পড়বে। দলকে চাঙা করতে হলে জনমুখী ভাবনাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। জনগণের পাশে এসে দাঁড়াতে হবে। পাড়ায়-মহল্লায় নিজেদের শিকড় থাকতে হবে, নইলে জনবিচ্ছিন্ন হওয়াই তো সরকারের নিয়তি।
আমি নিজেই তো জানি, নানা ধরনের প্রলোভনের মধ্যে ভাবনার এই সততা বজায় রেখে রাজনীতি করা কতটা কঠিন। আমাদের দেশটায় আমলারা যতটা শক্তিশালী, ততটা বিচক্ষণ হয়ে উঠতে পারেননি রাজনীতিবিদেরা। আমলাদের লম্বা হাত খাটো করে দেওয়ার মহৌষধ নেই রাজনীতিবিদদের কাছে। আমলা আর রাজনীতিবিদ যখন একই ছন্দে চলতে চান এবং সেই ছন্দের মধ্যে ছড়িয়ে থাকে অর্থের সুবাস, তখন দেশের সবচেয়ে বড় সর্বনাশটা হয়ে যায়। এ কথাগুলো সবাই জানে, কিন্তু ক্ষমতা এমন একটা ব্যাপার, ক্ষমতায় গেলে এ কথার অর্থ ভুলে যায় ক্ষমতাসীনেরা।
সময়ের একটা দূরত্ব থেকে যখন ঘটনাগুলো দেখছি, তখন মনে হচ্ছে এমন একটি দুর্ঘটনার সাক্ষী হতে হলো আমাদের, যার জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম না। দুই শতাধিক মায়ের কোল খালি হয়েছে, এই ক্ষত কোনো মলমেই শুকাবে না। কেন এত গুলি চলল, তার জবাবদিহি কে করবে? আন্দোলনের মধ্যে দুষ্কৃতকারীদের ঢুকে যাওয়ার পথ কে করে দিল? বিক্ষোভে গুলি চালানোর নির্দেশ কে দিল?
আমাদের দুর্বল হয়ে আসা গণতন্ত্রের দিকে নজর দেওয়া দরকার। নতুন বোধোদয়ের সময় এসেছে। মুক্তিযুদ্ধ শব্দটি বহু ব্যবহারে যারা ক্লিশে করে ফেলেছে, তাদের দিকে না তাকিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি বিশ্বস্ত থেকেই এগিয়ে যেতে হবে। করতে হবে দেশগঠনের কাজ। কিন্তু বিরক্ত হয়ে স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যাওয়া কোনো রুচিকর কাজ নয়। এ কথা মনে রাখা বোধ হয় জরুরি। কিন্তু যুদ্ধটা কোথায়, সেটা মনে আছে তো?
নতুন প্রজন্মের মনে নতুন যে প্রশ্নগুলো এলে ভালো হতো, তার কয়েকটির কথা বলি। সরকারি চাকরির ঘুষ-দুর্নীতি রোধে করণীয় খুঁজে বের করতে হবে, এর বিরুদ্ধেও চালাতে হবে আন্দোলন। সিন্ডিকেট ব্যবসা কিংবা ব্যাংকের টাকা মেরে কোটিপতি হওয়াদের স্বরূপ সন্ধান করতে হবে। ভেঙে যাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো আবার গড়ে তুলতে হবে।
যুদ্ধটা হলো ভালো বিশ্ববিদ্যালয় তথা মগজের কারবারি হওয়া, ভালো চিকিৎসালয়, অর্থাৎ সুঠাম স্বাস্থ্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া, ভালো আর্থিক প্রতিষ্ঠান মানে চুরিচামারি না করে আয়-উন্নতি বাড়ানো, ভালো রাজনীতি, অর্থাৎ দেশ ও দশের প্রতি নিবেদিত রাজনীতির ব্যবস্থা করতে না পারলে মুক্তিযুদ্ধ শব্দটির কোনো মানে থাকে না। সততা নিয়ে কাজ করলে তাতে দেশপ্রেম থাকে। এ কথাটি বোঝার এবং সেই অনুযায়ী কাজ করার সময় আর কবে আসবে?
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৬ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৬ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১০ দিন আগে