মিনহাজ তুহিন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও রাহুল শর্মা, ঢাকা
শ্রেণিকক্ষ-সংকটে ব্যাহত হচ্ছে পড়াশোনা। রয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আবাসন ও পরিবহনসংকট। অনেক বিভাগে শিক্ষকদের নেই বসার জায়গা। এসব সমস্যা দূর না করেই একবারে নতুন আরও ৩১টি বিভাগ এবং একটি ইনস্টিটিউট খোলার উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সংশ্লিষ্ট শিক্ষকেরা অভিযোগ করছেন, বর্তমান প্রশাসন শুধু শিক্ষকরাজনীতিতে নিজেদের দল ভারী করার উদ্দেশ্যেই একসঙ্গে এত নতুন বিভাগ খোলার উদ্যোগ নিয়েছে। মুঠোফোনে জানতে চাইলে অকপটেই অভিযোগটি স্বীকার করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একজন শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি। গতকাল শনিবার আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘এই আওয়ামী লীগের আমলে যদি আমাদের আওয়ামী লীগের লোকজন না বাড়াই; পরে বিএনপি আসলে একটা পোস্ট খালি রাখবে?’
দলের লোক নিয়োগ দিতেই কি নতুন বিভাগ খোলা হচ্ছে—এমন প্রশ্ন করা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারকে। গতকাল মুঠোফোনে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দল ভারী করার জন্য এসব ডিপার্টমেন্ট খোলার প্রস্তাবনা হচ্ছে না। বর্তমান যুগের চাহিদা অনুযায়ী...। কাল ইউনিভার্সিটিতে আসেন। তারপর লিখবেন। এখন কিছু লিখবেন না।’
এই বক্তব্য দেওয়ার একটু পরেই উপাচার্য ফোন দিয়ে বলেন, ‘আপনি বলবেন যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনে ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে যে বিভাগগুলো খুবই প্রয়োজনীয়, সেগুলোর জন্যই ইউজিসির কাছে চাইব। এর বেশি কিছু দিয়েন না। উল্টোপাল্টা নিউজ এখন দিয়েন না। সামনে আমাদের জাতীয় নির্বাচন আছে। কোনো রকম উল্টোপাল্টা নিউজ দেওয়ার দরকার নাই। ঠিক আছে?’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাজনীতি তিন ধারায় বিভক্ত। এক ধারায় রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বামপন্থী শিক্ষকদের নেতৃত্বে হলুদ দল, আরেক ধারায় বিরোধী বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সাদা দল। সাদা দল থেকে বের হয়ে বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের একটি অংশ গঠন করেছে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম।
একসঙ্গে ৩১ বিভাগ
১৯৬৬ সালের ১৮ নভেম্বর বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস ও অর্থনীতি—চারটি বিভাগ নিয়ে হাটহাজারী উপজেলায় যাত্রা শুরু করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৯টি অনুষদের অধীনে ৪৮টি বিভাগ ও ৬টি ইনস্টিটিউট রয়েছে। এতে শিক্ষার্থী আছেন ২৭ হাজার ৫৫০ জন; আর শিক্ষক রয়েছেন ৯০৬ জন।
বিশ্ববিদ্যালয়সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক মাসে বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে আটটি, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের অধীনে ছয়টি, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের অধীনে তিনটি, মেরিন সায়েন্স অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদের অধীনে পাঁচটি, প্রকৌশল অনুষদের অধীনে ছয়টি, কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের অধীনে দুটি করে চারটি বিভাগ এবং ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি খোলার জন্য সুপারিশ করে নিজ নিজ অনুষদ কমিটি। পরে একাডেমিক কাউন্সিল ডিনস কমিটির মাধ্যমে প্রতিটি অনুষদ থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দুটি করে বিভাগ খোলার অনুমোদনের সুপারিশ করে। ডিনস কমিটির সভায় অনুমোদিত বিভাগগুলো সিন্ডিকেট হয়ে ইউজিসিতে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। আর বাকি বিভাগগুলোর বিষয়ে কর্তৃপক্ষ পরে উদ্যোগ নেবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের একাধিক সভার নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬টি অনুষদের অধীনে নতুন ৩২টি বিভাগ এবং একটি ইনস্টিটিউট খোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগটি খুলতে সমাজবিজ্ঞান ও বিজ্ঞান—এই দুই অনুষদ থেকেই সুপারিশ করা হয়েছে। সেই হিসেবে বলা যায়, নতুন ৩১টি বিভাগ এবং একটি ইনস্টিটিউট খোলার উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
তাঁরা যা বললেন
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের পরিচালক মো. আলতাফ-উল-আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি অনুষদ কয়েকটি করে নতুন বিভাগ খোলার জন্য সুপারিশ করেছে। একাডেমিক কাউন্সিল অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দুটি করে বিভাগ অনুমোদন দিতে ডিনস কমিটির কাছে সুপারিশ করেছে। ডিনস কমিটির সভায় যেসব বিভাগের সুপারিশ হবে, সেগুলো সিন্ডিকেট সভায় রিপোর্ট সাপেক্ষে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য ইউজিসিতে পাঠানো হবে।
একসঙ্গে এত বিভাগ খোলার উদ্যোগকে অস্বাভাবিক বলছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ বিভাগগুলোর কতটুকু প্রয়োজনীয়তা আছে, তা যাচাই করতে হবে। ইউজিসির অনুমোদন পেলেও সাধারণত কোনো বিশ্ববিদ্যালয় একসঙ্গে এতগুলো বিভাগ খোলে না। বিষয়টিকে অস্বাভাবিকই মনে হচ্ছে।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজ বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, নতুন বিভাগ খোলার জন্য বললেই অনুমোদন দেওয়া হবে না। নতুন বিভাগ খোলার জন্য সাতটা পয়েন্ট নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। সেগুলো পূর্ণ হলে ইউজিসির প্রতিনিধি গিয়ে দেখবেন, সব সুযোগ-সুবিধা আছে কি না। এসব না হলে নতুন বিভাগ খোলা যাবে না।
৩১ বিভাগের নামধাম
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে আটটি—নিউক্লিয়ার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগ, ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন সায়েন্স বিভাগ, ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মাইনিং টেকনোলজি বিভাগ, এনার্জি সায়েন্সেস বিভাগ, বায়োমেডিকেল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগ, অ্যাপ্লাইড ম্যাথমেটিকস বিভাগ, ইকো-ট্যুরিজম অ্যান্ড ওয়াইল্ড লাইফ ম্যানেজমেন্ট বিভাগ। সমাজবিজ্ঞান অনুষদের অধীনে ৬টি—জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগ, ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট, পিস অ্যান্ড কনফ্লিক্ট স্টাডিজ, এশিয়ান স্টাডিজ বিভাগ, সোশ্যাল ওয়ার্ক বিভাগ, পপুলেশন সায়েন্স বিভাগ। ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের অধীনে ৩টি—অন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ অ্যান্ড ইনোভেশন বিভাগ, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, বিজনেস টেকনোলজি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ। মেরিন সায়েন্স অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদের অধীনে ৫টি—অ্যাকুয়াকালচার বিভাগ, ইন্টিগ্রেটেড কোস্টাল ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, পোর্ট অ্যান্ড শিপিং ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, মেরিন জিওলজি অ্যান্ড মাইনিং বিভাগ, মেরিন এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগ। প্রকৌশল অনুষদের অধীনে ৬টি—রোবটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস বিভাগ, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, আর্কিটেকচার বিভাগ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ও ইনফরমেশন টেকনোলজি ইনস্টিটিউট বিভাগ। কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের অধীনে দুটি করে চারটি বিভাগ—মুক্তিযুদ্ধ বিভাগ, ফিল্ম স্টাডিজ বিভাগ, কুরআনিক সায়েন্স অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ।
সুযোগ-সুবিধা কতটুকু আছে
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের অধীন বিভাগগুলোতে রয়েছে শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষকের ব্যাপক সংকট। অনুষদের আওতাধীন অনেক বিভাগ একটি কক্ষে ‘ভাগে যোগে’ ক্লাস করেন শিক্ষার্থীরা। কোনো কোনো বিভাগের নেই শিক্ষকদের অফিসকক্ষও। শিক্ষার্থীদের প্রায় ৮০ শতাংশের জন্য নেই আবাসন ব্যবস্থা।
পুরোনো বিভাগগুলোর সমস্যা নিরসন না করে নতুন বিভাগ খোলার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
কয়েকটি বিভাগের অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয় আজকের পত্রিকার। তাঁরা বলেন, শিক্ষক, শ্রেণিকক্ষসহ নানান সংকটে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অনেক সময় এক ব্যাচের ক্লাস শেষ হওয়ার জন্য অন্যদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়।
উদ্যোগটিকে ‘অপরিণামদর্শী পরিকল্পনা’ হিসেবে উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, পুরোনো বিভাগগুলোর সংকট নিরসন না করে নতুন করে বিভাগ খোলার পেছনে দুইটা উদ্দেশ্য থাকতে পারে—একটা হলো লোকরঞ্জন। আমি এই এই বিভাগগুলো খুলছি, এটা বলা যাবে। আরেকটা হলো, নিজের ইচ্ছামতো নিয়োগ।’
শ্রেণিকক্ষ-সংকটে ব্যাহত হচ্ছে পড়াশোনা। রয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আবাসন ও পরিবহনসংকট। অনেক বিভাগে শিক্ষকদের নেই বসার জায়গা। এসব সমস্যা দূর না করেই একবারে নতুন আরও ৩১টি বিভাগ এবং একটি ইনস্টিটিউট খোলার উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সংশ্লিষ্ট শিক্ষকেরা অভিযোগ করছেন, বর্তমান প্রশাসন শুধু শিক্ষকরাজনীতিতে নিজেদের দল ভারী করার উদ্দেশ্যেই একসঙ্গে এত নতুন বিভাগ খোলার উদ্যোগ নিয়েছে। মুঠোফোনে জানতে চাইলে অকপটেই অভিযোগটি স্বীকার করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একজন শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি। গতকাল শনিবার আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘এই আওয়ামী লীগের আমলে যদি আমাদের আওয়ামী লীগের লোকজন না বাড়াই; পরে বিএনপি আসলে একটা পোস্ট খালি রাখবে?’
দলের লোক নিয়োগ দিতেই কি নতুন বিভাগ খোলা হচ্ছে—এমন প্রশ্ন করা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারকে। গতকাল মুঠোফোনে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দল ভারী করার জন্য এসব ডিপার্টমেন্ট খোলার প্রস্তাবনা হচ্ছে না। বর্তমান যুগের চাহিদা অনুযায়ী...। কাল ইউনিভার্সিটিতে আসেন। তারপর লিখবেন। এখন কিছু লিখবেন না।’
এই বক্তব্য দেওয়ার একটু পরেই উপাচার্য ফোন দিয়ে বলেন, ‘আপনি বলবেন যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনে ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে যে বিভাগগুলো খুবই প্রয়োজনীয়, সেগুলোর জন্যই ইউজিসির কাছে চাইব। এর বেশি কিছু দিয়েন না। উল্টোপাল্টা নিউজ এখন দিয়েন না। সামনে আমাদের জাতীয় নির্বাচন আছে। কোনো রকম উল্টোপাল্টা নিউজ দেওয়ার দরকার নাই। ঠিক আছে?’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাজনীতি তিন ধারায় বিভক্ত। এক ধারায় রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বামপন্থী শিক্ষকদের নেতৃত্বে হলুদ দল, আরেক ধারায় বিরোধী বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সাদা দল। সাদা দল থেকে বের হয়ে বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের একটি অংশ গঠন করেছে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম।
একসঙ্গে ৩১ বিভাগ
১৯৬৬ সালের ১৮ নভেম্বর বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস ও অর্থনীতি—চারটি বিভাগ নিয়ে হাটহাজারী উপজেলায় যাত্রা শুরু করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৯টি অনুষদের অধীনে ৪৮টি বিভাগ ও ৬টি ইনস্টিটিউট রয়েছে। এতে শিক্ষার্থী আছেন ২৭ হাজার ৫৫০ জন; আর শিক্ষক রয়েছেন ৯০৬ জন।
বিশ্ববিদ্যালয়সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক মাসে বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে আটটি, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের অধীনে ছয়টি, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের অধীনে তিনটি, মেরিন সায়েন্স অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদের অধীনে পাঁচটি, প্রকৌশল অনুষদের অধীনে ছয়টি, কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের অধীনে দুটি করে চারটি বিভাগ এবং ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি খোলার জন্য সুপারিশ করে নিজ নিজ অনুষদ কমিটি। পরে একাডেমিক কাউন্সিল ডিনস কমিটির মাধ্যমে প্রতিটি অনুষদ থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দুটি করে বিভাগ খোলার অনুমোদনের সুপারিশ করে। ডিনস কমিটির সভায় অনুমোদিত বিভাগগুলো সিন্ডিকেট হয়ে ইউজিসিতে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। আর বাকি বিভাগগুলোর বিষয়ে কর্তৃপক্ষ পরে উদ্যোগ নেবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের একাধিক সভার নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬টি অনুষদের অধীনে নতুন ৩২টি বিভাগ এবং একটি ইনস্টিটিউট খোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগটি খুলতে সমাজবিজ্ঞান ও বিজ্ঞান—এই দুই অনুষদ থেকেই সুপারিশ করা হয়েছে। সেই হিসেবে বলা যায়, নতুন ৩১টি বিভাগ এবং একটি ইনস্টিটিউট খোলার উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
তাঁরা যা বললেন
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের পরিচালক মো. আলতাফ-উল-আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি অনুষদ কয়েকটি করে নতুন বিভাগ খোলার জন্য সুপারিশ করেছে। একাডেমিক কাউন্সিল অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দুটি করে বিভাগ অনুমোদন দিতে ডিনস কমিটির কাছে সুপারিশ করেছে। ডিনস কমিটির সভায় যেসব বিভাগের সুপারিশ হবে, সেগুলো সিন্ডিকেট সভায় রিপোর্ট সাপেক্ষে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য ইউজিসিতে পাঠানো হবে।
একসঙ্গে এত বিভাগ খোলার উদ্যোগকে অস্বাভাবিক বলছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ বিভাগগুলোর কতটুকু প্রয়োজনীয়তা আছে, তা যাচাই করতে হবে। ইউজিসির অনুমোদন পেলেও সাধারণত কোনো বিশ্ববিদ্যালয় একসঙ্গে এতগুলো বিভাগ খোলে না। বিষয়টিকে অস্বাভাবিকই মনে হচ্ছে।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজ বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, নতুন বিভাগ খোলার জন্য বললেই অনুমোদন দেওয়া হবে না। নতুন বিভাগ খোলার জন্য সাতটা পয়েন্ট নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। সেগুলো পূর্ণ হলে ইউজিসির প্রতিনিধি গিয়ে দেখবেন, সব সুযোগ-সুবিধা আছে কি না। এসব না হলে নতুন বিভাগ খোলা যাবে না।
৩১ বিভাগের নামধাম
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে আটটি—নিউক্লিয়ার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগ, ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন সায়েন্স বিভাগ, ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মাইনিং টেকনোলজি বিভাগ, এনার্জি সায়েন্সেস বিভাগ, বায়োমেডিকেল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগ, অ্যাপ্লাইড ম্যাথমেটিকস বিভাগ, ইকো-ট্যুরিজম অ্যান্ড ওয়াইল্ড লাইফ ম্যানেজমেন্ট বিভাগ। সমাজবিজ্ঞান অনুষদের অধীনে ৬টি—জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগ, ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট, পিস অ্যান্ড কনফ্লিক্ট স্টাডিজ, এশিয়ান স্টাডিজ বিভাগ, সোশ্যাল ওয়ার্ক বিভাগ, পপুলেশন সায়েন্স বিভাগ। ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের অধীনে ৩টি—অন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ অ্যান্ড ইনোভেশন বিভাগ, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, বিজনেস টেকনোলজি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ। মেরিন সায়েন্স অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদের অধীনে ৫টি—অ্যাকুয়াকালচার বিভাগ, ইন্টিগ্রেটেড কোস্টাল ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, পোর্ট অ্যান্ড শিপিং ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, মেরিন জিওলজি অ্যান্ড মাইনিং বিভাগ, মেরিন এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগ। প্রকৌশল অনুষদের অধীনে ৬টি—রোবটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস বিভাগ, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, আর্কিটেকচার বিভাগ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ও ইনফরমেশন টেকনোলজি ইনস্টিটিউট বিভাগ। কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের অধীনে দুটি করে চারটি বিভাগ—মুক্তিযুদ্ধ বিভাগ, ফিল্ম স্টাডিজ বিভাগ, কুরআনিক সায়েন্স অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ।
সুযোগ-সুবিধা কতটুকু আছে
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের অধীন বিভাগগুলোতে রয়েছে শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষকের ব্যাপক সংকট। অনুষদের আওতাধীন অনেক বিভাগ একটি কক্ষে ‘ভাগে যোগে’ ক্লাস করেন শিক্ষার্থীরা। কোনো কোনো বিভাগের নেই শিক্ষকদের অফিসকক্ষও। শিক্ষার্থীদের প্রায় ৮০ শতাংশের জন্য নেই আবাসন ব্যবস্থা।
পুরোনো বিভাগগুলোর সমস্যা নিরসন না করে নতুন বিভাগ খোলার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
কয়েকটি বিভাগের অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয় আজকের পত্রিকার। তাঁরা বলেন, শিক্ষক, শ্রেণিকক্ষসহ নানান সংকটে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অনেক সময় এক ব্যাচের ক্লাস শেষ হওয়ার জন্য অন্যদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়।
উদ্যোগটিকে ‘অপরিণামদর্শী পরিকল্পনা’ হিসেবে উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, পুরোনো বিভাগগুলোর সংকট নিরসন না করে নতুন করে বিভাগ খোলার পেছনে দুইটা উদ্দেশ্য থাকতে পারে—একটা হলো লোকরঞ্জন। আমি এই এই বিভাগগুলো খুলছি, এটা বলা যাবে। আরেকটা হলো, নিজের ইচ্ছামতো নিয়োগ।’
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৩ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৭ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৭ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১০ দিন আগে