সিদ্দিক বেলাল
নতুন শিক্ষাক্রম দেশের প্রচলিত শিক্ষাপদ্ধতির কোনো পরিমার্জন বা সংযোজন নয়, রূপান্তরও নয়—এক প্যারাডাইম শিফট। এমন ধরনের পরিবর্তন নিয়ে বিরূপ সমালোচনা বা গুজব খুবই স্বাভাবিক; বিশেষ করে মা-বাবা নিজ সন্তান নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবেন, তাঁরা প্রচলিত পদ্ধতির শিক্ষাক্রম পরিবর্তনের অনিবার্যতা বোঝার চেষ্টা করে নতুনকে স্বাগত জানাবেন বলে আশা করা যায় না। বিভিন্ন মহলের গঠনমূলক কিছু সমালোচনার উত্তর এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করা হলো।
ক. নতুন কারিকুলাম চালুর আগে প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি
এই সমালোচনা গ্রহণ করে, বিশেষ করে গণসচেতনতার অপর্যাপ্ত উদ্যোগ মেনে নিয়েই শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রসঙ্গে আলোকপাত করা যাক। প্রথমত, ৬২টি স্কুলে পাইলটিং করা হয়েছে ২০২২ সালে, এর জন্য বৈচিত্র্যময় অঞ্চল থেকে স্কুল ঠিক করা হয়েছিল। সে সময় একধাপ প্রশিক্ষণ হয়েছে, তবে সেই সংবাদ গণমাধ্যমে কম এসেছে। এ বছর সাড়ে চার লাখ শিক্ষকের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং প্রায় পঁচিশ হাজার মাস্টার ট্রেইনার তৈরি হয়েছেন, যাঁরা মাঠপর্যায়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। প্রশিক্ষণার্থীদের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার নানা ধরনের সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যেমন বয়স্ক প্রশিক্ষণ দীর্ঘকালের জন্য করা হলে ফলপ্রসূ হয় না এবং এই বয়সে পূর্বধারণা পরিহারে মানসিক প্রস্তুতি থাকে না। এ ধরনের নানা মনস্তাত্ত্বিক দিক ও প্রশাসনিক জটিলতা বিবেচনায় এনে মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ এড়িয়ে স্বল্পকালীন (সাত-আট দিনের), কিন্তু বছরব্যাপী প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হচ্ছে বলে শোনা গেছে। এর জন্য বিশেষজ্ঞজনেরা অত্যন্ত ফলপ্রসূ একটি প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল তৈরি করে প্রশিক্ষণ পরিচালনা করছেন।
আরেক প্রেক্ষাপট আলোচনার বাইরে থেকে গেছে। এই কারিকুলামে শিক্ষক সহায়িকা বা টিজি (টিচারস গাইড) এমনভাবে লেখা হয়েছে যে একজন শিক্ষক মাইন্ডসেট বদলে কেবল টিজি অনুসরণ করেই শ্রেণি পরিচালনার কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন। শিক্ষক ও সমাজের মাইন্ডসেট পরিবর্তন বা সামাজিক সচেতনতার কাজে উদ্যোগ আরও জোর উদ্যমে চালিয়ে যেতে হবে। এসব কাজে রাতারাতি ফল পাওয়া না গেলেও এর কোনো শর্টকাট রাস্তা হয় না।
খ. গ্রেডিং ও সৃজনশীল পদ্ধতি ব্যর্থ হয়েছে, এই পদ্ধতিও ব্যর্থ হতে বাধ্য
ওপরের দুটোই কোনো কারিকুলাম নয়। কারিকুলাম একটি শিক্ষাব্যবস্থার প্রায় সবটুকু। গ্রেডিং পদ্ধতি হলো পরীক্ষার ফল প্রকাশের ভাষা বা উপায়, আর সৃজনশীল পদ্ধতি পরীক্ষার পদ্ধতির জন্য বিশেষ এক কাঠামোবদ্ধ প্রশ্ন। উভয় ক্ষেত্রেই শিক্ষণ-শিখন কৌশল ও মূল্যায়ন-প্রক্রিয়ার কোনো পরিবর্তন না করে কেবল সনদের চেহারা এবং প্রশ্নের কাঠামো পরিবর্তন করা হয়েছিল। সার্বিক শিক্ষাব্যবস্থা ও সার্বিক কাঠামো বা অ্যাপ্রোচ পরিবর্তন না করে শিক্ষাক্রমের যেকোনো দু-একটি উপাদানের পরিবর্তন কার্যকর হওয়ার কথা নয়। অন্যদিকে এই পরিবর্তন শিক্ষার মৌলিক কোনো পরিবর্তন আনতে ব্যর্থ হয়েছে, ক্ষতি হয়েছে বলা যাবে না। অবস্থার উন্নতি হয়নি মানে অবনতি হয়েছিল ধরে নিয়ে শিক্ষার্থীর ক্ষতি হয়েছে বা দেশের ক্ষতি হয়েছে বলা ঠিক নয়।
গ. ফিনল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরের অনুকরণে নতুন শিক্ষাক্রম তৈরি করা হয়েছে
এই শিক্ষাক্রমের নাম যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম (কম্পিটেন্সি বেইজড কারিকুলাম)। উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে তাজিকিস্তান, এস্তোনিয়া, শ্রীলঙ্কা ইত্যাদি এবং ফিলিপাইনের মতো দু-একটি দেশ আংশিকভাবে এই শিক্ষাক্রম অনুসরণ করে। ভুটানও বাংলাদেশের মতো এ বছর এই শিক্ষাক্রম অনুসরণ করেছে। অন্যদিকে এই শিক্ষাক্রমের শিক্ষণ-শিখনকৌশল অভিজ্ঞতাভিত্তিক (এক্সপেরিয়েনসিয়াল লার্নিং)। আমেরিকান মনোবিজ্ঞানী ও তাত্ত্বিক শিক্ষাবিদ ডেভিড কোব বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের এই অ্যাপ্রোচের কথা বলেন এবং আশির দশক থেকে অনেক দেশ এই পদ্ধতির শিখনকৌশল প্রয়োগ করা শুরু করে; অর্থাৎ কারিকুলাম যোগ্যতাভিত্তিক, যেখানে যোগ্যতা নির্ধারিত হয়েছে আমাদের দেশের সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে।
কারিকুলামের আরেক দিক শিক্ষণ-শিখনকৌশল হলো অভিজ্ঞতাভিত্তিক। একটি কারিকুলামের অন্যতম প্রধান আরেক দিক হলো মূল্যায়ন পদ্ধতি, যা সম্পূর্ণই নিজস্ব উদ্ভাবন। সেখানে মূল লক্ষ্য রাখা হয়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যকার অসুস্থ প্রতিযোগিতা কমানো এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া কমিয়ে তকমাওয়ালা ‘খারাপ ছাত্র’র সংখ্যা কমানো। দেশের শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞরা উল্লিখিত লক্ষ্য ঠিক রেখে মূল্যায়ন পদ্ধতি নির্ধারণ করছেন।
উল্লেখ্য, সিঙ্গাপুর স্টেম (STEM: সায়েন্স, টেকনোলজি, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যাথমেটিক) ঘরানার অনুসারী এবং ফিনল্যান্ডের পদ্ধতি সম্পূর্ণ নিজস্ব, যা প্রায় কোনো দেশের জন্যই অনুকরণীয় নয়। ওপরের সমালোচনা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, আমাদের দেশের মানুষ সহজেই বিশ্বাস করবে—এমন গুজব রটানো হচ্ছে। কারণ, আমাদের বিশ্বাস, আমাদের দেশ যা কিছু করে, তা কোনো না কোনো দেশের নকল করেই করে! ঔপনিবেশিক মনোভাব এ দেশে আরও কিছুকাল থাকবে, তা ছাড়া এখন আবার ‘কপি-পেস্ট’-এর যুগ!
ঘ. ব্যয়বহুল উপকরণ ও ইন্টারনেটের ব্যবহার
পাঠ্যবই ও শিক্ষক সহায়িকায় পুরোনো ক্যালেন্ডার বা কাগজের বাক্সজাতীয় ফেলে দেওয়া জিনিসপত্র দিয়ে পোস্টার বা সমধর্মী উপস্থাপনা তৈরির কথা বারবার উল্লেখ করা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে মা-বাবা, পরিবারের সদস্য বা প্রতিবেশীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে, সুযোগ থাকলে প্রাসঙ্গিক বই ঘাঁটতে। কোনো বিষয়ের কোথাও ফোন-ইন্টারনেট বা দামি উপকরণের ব্যবহার বাধ্য করা হয়নি। কিছু ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, সুযোগ থাকলে ইন্টারনেটের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। সচেতন অভিভাবক সহজেই পাঠ্যবইয়ের নির্দেশনা দেখে নিয়ে শিক্ষককে কেবল একটি ফোনের মাধ্যমেই যাচাই করতে পারেন, শিক্ষক কেন ফোন ব্যবহার করতে বলছেন বা এই সব উপকরণ কিনতে বলছেন। তাহলে শিক্ষকও দায়িত্বসচেতন হয়ে উঠবেন। কিশোর শিক্ষার্থী নিজে ভেবে সম্ভাব্য উত্তর খুঁজতে কিংবা ফেলে দেওয়া জিনিসপত্র ব্যবহারে অলসতা করতেই পারে। এখানে অভিভাবকের যুক্তিনির্ভর মনিটরিংয়ের অভাব সুস্পষ্ট। অবশ্য অভিভাবক এমন উদ্যোগ নিলে তাঁর টিভি ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর সুযোগ কমে আসবে, বিরোধিতা না করলে সাংবাদিক সাক্ষাৎকার নেবেন না!
ঙ. শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত
এই অবস্থার সমাধানের কোনো বিকল্প নেই। কথা হলো, এ কথা এত দিন কেন বলা হলো না। কোনো শিক্ষাব্যবস্থাই চল্লিশজন শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষকের অনুপাতের বেশি কিছু সমর্থন করে না। নতুন শিক্ষাক্রমের জন্য এই অনুপাত গ্রহণযোগ্য মাত্রায় নামিয়ে আনা এই শিক্ষাক্রমের সাফল্যের পূর্বশর্ত হিসেবেই বিবেচিত হতে হবে। সরকার আইন করে ছাত্র ভর্তি নিয়ন্ত্রণ না করলে এই অনুপাত সম্ভব নয়। উল্লেখ্য, সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে দেশের সব স্কুলের আসনসংখ্যা সমভাবে বণ্টিত হলে নতুন স্কুল নির্মাণ না করেও শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত গ্রহণযোগ্য মাত্রায় কমিয়ে আনা সম্ভব। তবে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও কঠোর নজরদারির কোনো বিকল্প নেই।
সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতাও এ ক্ষেত্রে জরুরি। আমরা এ দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী ‘ভালো স্কুল’-এর পেছনে ছুটছি সন্তানের প্রকৃত কল্যাণের কথা ভেবে। কিন্তু শিক্ষার সব দায়দায়িত্ব স্কুল ও কোচিং সেন্টারের ওপর চাপিয়ে নিজে নিশ্চিন্ত হতে চাই। কেননা শিশুর শৈশব ও মর্যাদার চেয়ে পরীক্ষায় ভালো ফল আমাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এর সুযোগে স্কুল-কুলের মধ্যে ব্রাহ্মণজাত তৈরি হয়েছে, নামীদামি স্কুলের একটা ক্যাটাগরি তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষক ও স্কুল প্রশাসনে অন্যায়, দুর্নীতি বেড়েছে।
চ. বিজ্ঞান ও গণিতের গুরুত্ব কমেছে
কোন বিষয়ের গুরুত্ব কতটুকু তার পরিমাপ করতে হবে মোট কর্মঘণ্টার শতকরা কতটুকু বরাদ্দ রাখা হয়েছে, তার ভিত্তিতে। নম্বরভিত্তিক মূল্যায়ন না থাকায় কোনো বিষয়ের গুরুত্ব পরিমাপে বরাদ্দ করা নম্বর বা বইয়ের সংখ্যা থেকে হিসাব করা যাবে না। শ্রেণিসংখ্যার শতকরা থেকে হিসাব করা হলে বিজ্ঞান ও গণিতের অবস্থান আগের চেয়ে ভালো। বিষয় দুটির শিক্ষণ-শিখন অ্যাপ্রোচে মৌলিক পরিবর্তন হয়েছে। সচেতন পাঠক সহজেই বইগুলো ভালো করে নিরীক্ষা করলে পরিবর্তনকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখবেন বলে নিশ্চয়তা দেওয়া যায়।
ছ. উচ্চশিক্ষার মান কমে যাবে
আমাদের দেশের উচ্চশিক্ষার মান কমার আর কোনো জায়গা আছে বলে মনে হয় না। সমগ্র বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়ের রেটিংয়ে আমাদের অবস্থান জানার পরে আমাদের উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মান নিয়ে গর্ব করার কিছু নেই। নতুন কারিকুলামের লেখকদের অনেকে জানেন, গণিত-বিজ্ঞান-সামাজিক বিজ্ঞানের অনেক কিছুই নতুন এই কারিকুলামে অষ্টম-নবম শ্রেণির পাঠ্যে যুক্ত হয়েছে। এই কারিকুলামের শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলে বিশ্ববিদ্যালয়কেই উন্নত হতে হবে, কোর্সের বিষয়বস্তুকে উচ্চতর ধাপে উন্নীত করতে হবে। সমালোচনা বিষয় তো ভর্তি-প্রক্রিয়া, যার পরিবর্তনের কথা শোনা যাচ্ছে। চলমান পদ্ধতির তথ্যমূলক এমসিকিউ প্রশ্নের উত্তর থেকে মেধাবী ছাত্র নির্বাচন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। নতুন এই শিক্ষা কার্যক্রমের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি-প্রক্রিয়া পরিবর্তন করতেই হবে। আইইএলটিএস, স্যাটের মতো বিভিন্ন ধরনের অ্যাপটিচুড টেস্টের জন্য নিজস্ব পদ্ধতি উদ্ভাবন করে নিতে হবে।
হাঁসের ডাকের প্রশিক্ষণ বা রান্না শেখানোর কারিকুলাম-জাতীয় গুজবের প্রসঙ্গে কথা বলার কিছু নেই। সামাজিক মাধ্যম বা গণমাধ্যম নেতিবাচক গুজব প্রচার করবেই, তা সে যে মানেরই হোক। এ সবের প্রভাবও ক্ষণস্থায়ী।
শেষ কথা
অবকাঠামোর মতো দৃশ্যমান উন্নয়ন সহজেই আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে। এর বাইরের সরকারি ভালো উদ্যোগকে আমরা সন্দেহের চোখে দেখি; বিশেষ করে যেকোনো কারিকুলামের পরিবর্তনের ফল পেতে কমপক্ষে এক দশকের প্রয়োজন। সাধারণ মানুষের নতুন কারিকুলাম নিয়ে বিরূপ মত খুবই স্বাভাবিক। অন্যদিকে দেশের কতিপয় বিশেষজ্ঞ বড় ধরনের কোনো পরিকল্পনায় তাঁদের ডাকা না হলেই বিরোধিতা করেন। শিক্ষার ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এ দেশে বঙ্গবন্ধু ছাড়া কেউ দেখাতে সাহস করেননি। তিনি ড. কুদরাত-এ-খুদাকে সদ্য স্বাধীন দেশের জন্য শিক্ষাপদ্ধতির সার্বিক পরিকল্পনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আমরা জানি, সেই প্রস্তাব বঙ্গবন্ধু বাস্তবায়নের সুযোগ পাননি। আজ পর্যন্ত কোনো সরকার সেই কমিশনের প্রস্তাব বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। আমাদের দেশের সব রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের সাধারণ সমস্যা হলো, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হয়, কিন্তু বাস্তবায়ন করে মন্ত্রণালয়। সেখানে রাজনীতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত সরকারি কর্মকর্তা আমলা-সংস্কৃতির মধ্য থেকে নিজ নিজ মনস্তাত্ত্বিক সংকট কাটিয়ে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ বাস্তবায়নের কাজ করতে পারেন না। সম্ভবত এই প্রথম একজন শিক্ষামন্ত্রী দিনরাত এক করে বিশেষজ্ঞ দলের সঙ্গে এক টেবিলে বসে কাজ করছেন—রূপরেখা তৈরি, বই লেখা, বইয়ের রিভিউ করা এবং বাস্তবায়ন কার্যক্রমের খুঁটিনাটি ইত্যাদি বিষয়ের সঙ্গে সরাসরি ব্যক্তিগতভাবে জড়িত হয়ে কাজ করছেন।
সিদ্দিক বেলাল, সদস্য, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের লেখক দল
নতুন শিক্ষাক্রম দেশের প্রচলিত শিক্ষাপদ্ধতির কোনো পরিমার্জন বা সংযোজন নয়, রূপান্তরও নয়—এক প্যারাডাইম শিফট। এমন ধরনের পরিবর্তন নিয়ে বিরূপ সমালোচনা বা গুজব খুবই স্বাভাবিক; বিশেষ করে মা-বাবা নিজ সন্তান নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবেন, তাঁরা প্রচলিত পদ্ধতির শিক্ষাক্রম পরিবর্তনের অনিবার্যতা বোঝার চেষ্টা করে নতুনকে স্বাগত জানাবেন বলে আশা করা যায় না। বিভিন্ন মহলের গঠনমূলক কিছু সমালোচনার উত্তর এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করা হলো।
ক. নতুন কারিকুলাম চালুর আগে প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি
এই সমালোচনা গ্রহণ করে, বিশেষ করে গণসচেতনতার অপর্যাপ্ত উদ্যোগ মেনে নিয়েই শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রসঙ্গে আলোকপাত করা যাক। প্রথমত, ৬২টি স্কুলে পাইলটিং করা হয়েছে ২০২২ সালে, এর জন্য বৈচিত্র্যময় অঞ্চল থেকে স্কুল ঠিক করা হয়েছিল। সে সময় একধাপ প্রশিক্ষণ হয়েছে, তবে সেই সংবাদ গণমাধ্যমে কম এসেছে। এ বছর সাড়ে চার লাখ শিক্ষকের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং প্রায় পঁচিশ হাজার মাস্টার ট্রেইনার তৈরি হয়েছেন, যাঁরা মাঠপর্যায়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। প্রশিক্ষণার্থীদের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার নানা ধরনের সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যেমন বয়স্ক প্রশিক্ষণ দীর্ঘকালের জন্য করা হলে ফলপ্রসূ হয় না এবং এই বয়সে পূর্বধারণা পরিহারে মানসিক প্রস্তুতি থাকে না। এ ধরনের নানা মনস্তাত্ত্বিক দিক ও প্রশাসনিক জটিলতা বিবেচনায় এনে মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ এড়িয়ে স্বল্পকালীন (সাত-আট দিনের), কিন্তু বছরব্যাপী প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হচ্ছে বলে শোনা গেছে। এর জন্য বিশেষজ্ঞজনেরা অত্যন্ত ফলপ্রসূ একটি প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল তৈরি করে প্রশিক্ষণ পরিচালনা করছেন।
আরেক প্রেক্ষাপট আলোচনার বাইরে থেকে গেছে। এই কারিকুলামে শিক্ষক সহায়িকা বা টিজি (টিচারস গাইড) এমনভাবে লেখা হয়েছে যে একজন শিক্ষক মাইন্ডসেট বদলে কেবল টিজি অনুসরণ করেই শ্রেণি পরিচালনার কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন। শিক্ষক ও সমাজের মাইন্ডসেট পরিবর্তন বা সামাজিক সচেতনতার কাজে উদ্যোগ আরও জোর উদ্যমে চালিয়ে যেতে হবে। এসব কাজে রাতারাতি ফল পাওয়া না গেলেও এর কোনো শর্টকাট রাস্তা হয় না।
খ. গ্রেডিং ও সৃজনশীল পদ্ধতি ব্যর্থ হয়েছে, এই পদ্ধতিও ব্যর্থ হতে বাধ্য
ওপরের দুটোই কোনো কারিকুলাম নয়। কারিকুলাম একটি শিক্ষাব্যবস্থার প্রায় সবটুকু। গ্রেডিং পদ্ধতি হলো পরীক্ষার ফল প্রকাশের ভাষা বা উপায়, আর সৃজনশীল পদ্ধতি পরীক্ষার পদ্ধতির জন্য বিশেষ এক কাঠামোবদ্ধ প্রশ্ন। উভয় ক্ষেত্রেই শিক্ষণ-শিখন কৌশল ও মূল্যায়ন-প্রক্রিয়ার কোনো পরিবর্তন না করে কেবল সনদের চেহারা এবং প্রশ্নের কাঠামো পরিবর্তন করা হয়েছিল। সার্বিক শিক্ষাব্যবস্থা ও সার্বিক কাঠামো বা অ্যাপ্রোচ পরিবর্তন না করে শিক্ষাক্রমের যেকোনো দু-একটি উপাদানের পরিবর্তন কার্যকর হওয়ার কথা নয়। অন্যদিকে এই পরিবর্তন শিক্ষার মৌলিক কোনো পরিবর্তন আনতে ব্যর্থ হয়েছে, ক্ষতি হয়েছে বলা যাবে না। অবস্থার উন্নতি হয়নি মানে অবনতি হয়েছিল ধরে নিয়ে শিক্ষার্থীর ক্ষতি হয়েছে বা দেশের ক্ষতি হয়েছে বলা ঠিক নয়।
গ. ফিনল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরের অনুকরণে নতুন শিক্ষাক্রম তৈরি করা হয়েছে
এই শিক্ষাক্রমের নাম যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম (কম্পিটেন্সি বেইজড কারিকুলাম)। উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে তাজিকিস্তান, এস্তোনিয়া, শ্রীলঙ্কা ইত্যাদি এবং ফিলিপাইনের মতো দু-একটি দেশ আংশিকভাবে এই শিক্ষাক্রম অনুসরণ করে। ভুটানও বাংলাদেশের মতো এ বছর এই শিক্ষাক্রম অনুসরণ করেছে। অন্যদিকে এই শিক্ষাক্রমের শিক্ষণ-শিখনকৌশল অভিজ্ঞতাভিত্তিক (এক্সপেরিয়েনসিয়াল লার্নিং)। আমেরিকান মনোবিজ্ঞানী ও তাত্ত্বিক শিক্ষাবিদ ডেভিড কোব বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের এই অ্যাপ্রোচের কথা বলেন এবং আশির দশক থেকে অনেক দেশ এই পদ্ধতির শিখনকৌশল প্রয়োগ করা শুরু করে; অর্থাৎ কারিকুলাম যোগ্যতাভিত্তিক, যেখানে যোগ্যতা নির্ধারিত হয়েছে আমাদের দেশের সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে।
কারিকুলামের আরেক দিক শিক্ষণ-শিখনকৌশল হলো অভিজ্ঞতাভিত্তিক। একটি কারিকুলামের অন্যতম প্রধান আরেক দিক হলো মূল্যায়ন পদ্ধতি, যা সম্পূর্ণই নিজস্ব উদ্ভাবন। সেখানে মূল লক্ষ্য রাখা হয়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যকার অসুস্থ প্রতিযোগিতা কমানো এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া কমিয়ে তকমাওয়ালা ‘খারাপ ছাত্র’র সংখ্যা কমানো। দেশের শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞরা উল্লিখিত লক্ষ্য ঠিক রেখে মূল্যায়ন পদ্ধতি নির্ধারণ করছেন।
উল্লেখ্য, সিঙ্গাপুর স্টেম (STEM: সায়েন্স, টেকনোলজি, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যাথমেটিক) ঘরানার অনুসারী এবং ফিনল্যান্ডের পদ্ধতি সম্পূর্ণ নিজস্ব, যা প্রায় কোনো দেশের জন্যই অনুকরণীয় নয়। ওপরের সমালোচনা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, আমাদের দেশের মানুষ সহজেই বিশ্বাস করবে—এমন গুজব রটানো হচ্ছে। কারণ, আমাদের বিশ্বাস, আমাদের দেশ যা কিছু করে, তা কোনো না কোনো দেশের নকল করেই করে! ঔপনিবেশিক মনোভাব এ দেশে আরও কিছুকাল থাকবে, তা ছাড়া এখন আবার ‘কপি-পেস্ট’-এর যুগ!
ঘ. ব্যয়বহুল উপকরণ ও ইন্টারনেটের ব্যবহার
পাঠ্যবই ও শিক্ষক সহায়িকায় পুরোনো ক্যালেন্ডার বা কাগজের বাক্সজাতীয় ফেলে দেওয়া জিনিসপত্র দিয়ে পোস্টার বা সমধর্মী উপস্থাপনা তৈরির কথা বারবার উল্লেখ করা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে মা-বাবা, পরিবারের সদস্য বা প্রতিবেশীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে, সুযোগ থাকলে প্রাসঙ্গিক বই ঘাঁটতে। কোনো বিষয়ের কোথাও ফোন-ইন্টারনেট বা দামি উপকরণের ব্যবহার বাধ্য করা হয়নি। কিছু ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, সুযোগ থাকলে ইন্টারনেটের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। সচেতন অভিভাবক সহজেই পাঠ্যবইয়ের নির্দেশনা দেখে নিয়ে শিক্ষককে কেবল একটি ফোনের মাধ্যমেই যাচাই করতে পারেন, শিক্ষক কেন ফোন ব্যবহার করতে বলছেন বা এই সব উপকরণ কিনতে বলছেন। তাহলে শিক্ষকও দায়িত্বসচেতন হয়ে উঠবেন। কিশোর শিক্ষার্থী নিজে ভেবে সম্ভাব্য উত্তর খুঁজতে কিংবা ফেলে দেওয়া জিনিসপত্র ব্যবহারে অলসতা করতেই পারে। এখানে অভিভাবকের যুক্তিনির্ভর মনিটরিংয়ের অভাব সুস্পষ্ট। অবশ্য অভিভাবক এমন উদ্যোগ নিলে তাঁর টিভি ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর সুযোগ কমে আসবে, বিরোধিতা না করলে সাংবাদিক সাক্ষাৎকার নেবেন না!
ঙ. শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত
এই অবস্থার সমাধানের কোনো বিকল্প নেই। কথা হলো, এ কথা এত দিন কেন বলা হলো না। কোনো শিক্ষাব্যবস্থাই চল্লিশজন শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষকের অনুপাতের বেশি কিছু সমর্থন করে না। নতুন শিক্ষাক্রমের জন্য এই অনুপাত গ্রহণযোগ্য মাত্রায় নামিয়ে আনা এই শিক্ষাক্রমের সাফল্যের পূর্বশর্ত হিসেবেই বিবেচিত হতে হবে। সরকার আইন করে ছাত্র ভর্তি নিয়ন্ত্রণ না করলে এই অনুপাত সম্ভব নয়। উল্লেখ্য, সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে দেশের সব স্কুলের আসনসংখ্যা সমভাবে বণ্টিত হলে নতুন স্কুল নির্মাণ না করেও শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত গ্রহণযোগ্য মাত্রায় কমিয়ে আনা সম্ভব। তবে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও কঠোর নজরদারির কোনো বিকল্প নেই।
সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতাও এ ক্ষেত্রে জরুরি। আমরা এ দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী ‘ভালো স্কুল’-এর পেছনে ছুটছি সন্তানের প্রকৃত কল্যাণের কথা ভেবে। কিন্তু শিক্ষার সব দায়দায়িত্ব স্কুল ও কোচিং সেন্টারের ওপর চাপিয়ে নিজে নিশ্চিন্ত হতে চাই। কেননা শিশুর শৈশব ও মর্যাদার চেয়ে পরীক্ষায় ভালো ফল আমাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এর সুযোগে স্কুল-কুলের মধ্যে ব্রাহ্মণজাত তৈরি হয়েছে, নামীদামি স্কুলের একটা ক্যাটাগরি তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষক ও স্কুল প্রশাসনে অন্যায়, দুর্নীতি বেড়েছে।
চ. বিজ্ঞান ও গণিতের গুরুত্ব কমেছে
কোন বিষয়ের গুরুত্ব কতটুকু তার পরিমাপ করতে হবে মোট কর্মঘণ্টার শতকরা কতটুকু বরাদ্দ রাখা হয়েছে, তার ভিত্তিতে। নম্বরভিত্তিক মূল্যায়ন না থাকায় কোনো বিষয়ের গুরুত্ব পরিমাপে বরাদ্দ করা নম্বর বা বইয়ের সংখ্যা থেকে হিসাব করা যাবে না। শ্রেণিসংখ্যার শতকরা থেকে হিসাব করা হলে বিজ্ঞান ও গণিতের অবস্থান আগের চেয়ে ভালো। বিষয় দুটির শিক্ষণ-শিখন অ্যাপ্রোচে মৌলিক পরিবর্তন হয়েছে। সচেতন পাঠক সহজেই বইগুলো ভালো করে নিরীক্ষা করলে পরিবর্তনকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখবেন বলে নিশ্চয়তা দেওয়া যায়।
ছ. উচ্চশিক্ষার মান কমে যাবে
আমাদের দেশের উচ্চশিক্ষার মান কমার আর কোনো জায়গা আছে বলে মনে হয় না। সমগ্র বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়ের রেটিংয়ে আমাদের অবস্থান জানার পরে আমাদের উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মান নিয়ে গর্ব করার কিছু নেই। নতুন কারিকুলামের লেখকদের অনেকে জানেন, গণিত-বিজ্ঞান-সামাজিক বিজ্ঞানের অনেক কিছুই নতুন এই কারিকুলামে অষ্টম-নবম শ্রেণির পাঠ্যে যুক্ত হয়েছে। এই কারিকুলামের শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলে বিশ্ববিদ্যালয়কেই উন্নত হতে হবে, কোর্সের বিষয়বস্তুকে উচ্চতর ধাপে উন্নীত করতে হবে। সমালোচনা বিষয় তো ভর্তি-প্রক্রিয়া, যার পরিবর্তনের কথা শোনা যাচ্ছে। চলমান পদ্ধতির তথ্যমূলক এমসিকিউ প্রশ্নের উত্তর থেকে মেধাবী ছাত্র নির্বাচন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। নতুন এই শিক্ষা কার্যক্রমের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি-প্রক্রিয়া পরিবর্তন করতেই হবে। আইইএলটিএস, স্যাটের মতো বিভিন্ন ধরনের অ্যাপটিচুড টেস্টের জন্য নিজস্ব পদ্ধতি উদ্ভাবন করে নিতে হবে।
হাঁসের ডাকের প্রশিক্ষণ বা রান্না শেখানোর কারিকুলাম-জাতীয় গুজবের প্রসঙ্গে কথা বলার কিছু নেই। সামাজিক মাধ্যম বা গণমাধ্যম নেতিবাচক গুজব প্রচার করবেই, তা সে যে মানেরই হোক। এ সবের প্রভাবও ক্ষণস্থায়ী।
শেষ কথা
অবকাঠামোর মতো দৃশ্যমান উন্নয়ন সহজেই আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে। এর বাইরের সরকারি ভালো উদ্যোগকে আমরা সন্দেহের চোখে দেখি; বিশেষ করে যেকোনো কারিকুলামের পরিবর্তনের ফল পেতে কমপক্ষে এক দশকের প্রয়োজন। সাধারণ মানুষের নতুন কারিকুলাম নিয়ে বিরূপ মত খুবই স্বাভাবিক। অন্যদিকে দেশের কতিপয় বিশেষজ্ঞ বড় ধরনের কোনো পরিকল্পনায় তাঁদের ডাকা না হলেই বিরোধিতা করেন। শিক্ষার ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এ দেশে বঙ্গবন্ধু ছাড়া কেউ দেখাতে সাহস করেননি। তিনি ড. কুদরাত-এ-খুদাকে সদ্য স্বাধীন দেশের জন্য শিক্ষাপদ্ধতির সার্বিক পরিকল্পনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আমরা জানি, সেই প্রস্তাব বঙ্গবন্ধু বাস্তবায়নের সুযোগ পাননি। আজ পর্যন্ত কোনো সরকার সেই কমিশনের প্রস্তাব বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। আমাদের দেশের সব রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের সাধারণ সমস্যা হলো, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হয়, কিন্তু বাস্তবায়ন করে মন্ত্রণালয়। সেখানে রাজনীতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত সরকারি কর্মকর্তা আমলা-সংস্কৃতির মধ্য থেকে নিজ নিজ মনস্তাত্ত্বিক সংকট কাটিয়ে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ বাস্তবায়নের কাজ করতে পারেন না। সম্ভবত এই প্রথম একজন শিক্ষামন্ত্রী দিনরাত এক করে বিশেষজ্ঞ দলের সঙ্গে এক টেবিলে বসে কাজ করছেন—রূপরেখা তৈরি, বই লেখা, বইয়ের রিভিউ করা এবং বাস্তবায়ন কার্যক্রমের খুঁটিনাটি ইত্যাদি বিষয়ের সঙ্গে সরাসরি ব্যক্তিগতভাবে জড়িত হয়ে কাজ করছেন।
সিদ্দিক বেলাল, সদস্য, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের লেখক দল
প্রবৃদ্ধির শীর্ষে থেকেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের দৌড়ে পিছিয়ে রয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ৫০ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়েছে
২ দিন আগেদুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি, উচ্চ করহারসহ ১৭ ধরনের বাধায় বিপর্যস্ত দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। রয়েছে সামাজিক সমস্যাও।
২ দিন আগেজমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৬ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৯ দিন আগে