নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে গতকাল রোববার দেশব্যাপী ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের এসব সংঘর্ষে কমপক্ষে ৯৯ জন নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ ও আহত হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৪ জন পুলিশ সদস্য রয়েছেন বলে জানা গেছে।
সংঘর্ষ, গুলি আর মৃত্যুর এসব ঘটনায় আতঙ্ক বিরাজ করছে পুরো দেশে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হওয়ায় গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে দেশজুড়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়েছে। একই সঙ্গে আজ সোমবার থেকে তিন দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
এক দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সর্বাত্মক অসহযোগের বিপরীতে গতকাল ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে জমায়েত কর্মসূচি দিয়েছিল ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। নির্ধারিত কর্মসূচি পালনে দুই পক্ষই মাঠে নামলে বিভিন্ন স্থানে শুরু হয় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও মারামারি। রাজধানীর মিরপুর, ধানমন্ডি, চট্টগ্রামের নিউমার্কেট ও নন্দনকাননসহ বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি ছুড়তে দেখা যায় অস্ত্রধারী কিছু যুবককে।
আজকের পত্রিকার প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যমতে, গতকাল রাজধানীর বাইরে অন্তত ৩০টি জেলায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ সংঘর্ষের ঘটনাই ছিল আন্দোলনকারী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে। অন্তত ৮টি জেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়েছে।
সংঘর্ষে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়েছে সিরাজগঞ্জে। এই জেলার এনায়েতপুর থানায় হামলার সময় ১৩ পুলিশ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (অপারেশনস) সাইফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এই হামলায় আরও বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত ও অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন বলেও জানান তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল দুপুরের দিকে কয়েক হাজার আন্দোলনকারী এনায়েতপুর থানা ঘেরাও করেন। তাঁরা ভাঙচুর শুরু করলে পুলিশ থানার ছাদ থেকে রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও গুলি ছুড়লে আন্দোলনকারীদের অনেকে আহত হন। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধরা থানার ভেতরে ঢুকে পুলিশ সদসদের পেটাতে শুরু করেন। ওই সময় কিছু পুলিশ সদস্য কোনোমতে পালিয়ে আশপাশের বাড়িতে আশ্রয় নেন।
পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট) বিজয় বসাক জানান, থানায় হামলার খবর জানাজানি হলে সন্ধ্যায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। তাঁরা মসজিদের পাশে এবং পুকুর থেকে লাশগুলো উদ্ধার করেন। এ ছাড়াও এদিন এই জেলায় আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সিরাজগঞ্জ শহর ও রায়গঞ্জ উপজেলায় পৃথক সংঘর্ষে আরও ৯ জনের প্রাণহানি হয়েছে বলে জানা গেছে। তাঁদের মধ্যে সিরাজগঞ্জ শহরে ৩ ও রায়গঞ্জে ৩ জনের মৃত্যু হয়। রায়গঞ্জে নিহতরা হলেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মেহেদী হাসান ইলিয়াস, সাধারণ সম্পাদক আল-আমিন সরকার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম, উপজেলার ব্রহ্মগাছা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান গোলাম ছরওয়ার লিটন এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম হাসনায়েন টিটো। নিহতদের মধ্যে একজন সাংবাদিকও রয়েছেন।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে দিনভর সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন ৭ জন। এ ছাড়া লক্ষ্মীপুরে ১০, ফেনীতে ৮, নরসিংদীতে ৬, কিশোরগঞ্জে ৪, বগুড়া ও সিলেটে ৫ জন করে, মাগুরা ও রংপুরে ৪ জন করে, মুন্সিগঞ্জ, ভোলা, পাবনা, কুমিল্লায় ৩ জন করে, শেরপুর ও জয়পুরহাটে ২ জন করে এবং গাজীপুর, হবিগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, সাভার, বরিশাল ও কক্সবাজারে ১ জন করে নিহত হয়েছেন।
লক্ষ্মীপুরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ-যুবলীগের দফায় দফায় সংঘর্ষে ১০ জন নিহত হয়েছেন। গতকাল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে শহরের চকবাজার এলাকায় এ সংঘর্ষ হয়। এতে শতাধিক গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন ২০০ জন। সংঘর্ষ চলাকালে আগুন দেওয়া হয় সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম সালাউদ্দিন টিপুর বাসভবনে। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি নূরউদ্দিন চৌধুরীর নয়নের বাসায়ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। পিটুনিতে নিহত হন যুবলীগের কর্মী হারুনুর রশিদ মেম্বার। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী শতাধিক গুলিবিদ্ধসহ কমপক্ষে ২০০ জন আহত হন।
ঢাকা
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, ধানমন্ডি, মিরপুর, রামপুরা, জিগাতলা, উত্তরাসহ বিভিন্ন জায়গায় গতকাল সকাল থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের থেমে থেমে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় অন্তত ৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিহতদের মধ্য তিনজনেরই মৃত্যু হয় উত্তরায়। বেলা ১টার দিকে উত্তরার আজমপুর এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় আহত হন অন্তত অর্ধশত।
নিহতদের মধ্যে উত্তরা ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ারুল ইসলাম ছাড়াও দক্ষিণখানের ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের নেতা আব্দুস সাত্তার এবং অজ্ঞাতনামা এক যুবক রয়েছেন।
এদিকে দুপুরে রাজধানীর জিগাতলা এলাকায় সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। তাঁর নাম আবদুল্লাহ সিদ্দিকী (২৩)। তিনি রাজধানীর হাবিবুল্লাহ বাহার ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী। কারওয়ান বাজার এলাকায় সংঘর্ষে রমিজউদ্দিন রূপ (২৪) নামের বেসরকারি ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া সন্ধ্যায় আনুমানিক ২৫ বছরের এক যুবকের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন কয়েকজন। নিহত ওই ব্যক্তির নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তাঁর মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ ছাড়াও কেরানীগঞ্জ ও সাভারে পৃথক সংঘর্ষে আরও দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
দিনভর সংঘর্ষ চলাকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পুলিশ বক্স, দোলাইরপাড়ে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের টোল প্লাজা, জুরাইনে ট্রাফিক পুলিশ বক্সে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়। ধানমন্ডিতে পোশাকের পরিচিত ব্র্যান্ড ইয়েলোর বিক্রয়কেন্দ্র বা শোরুমে আগুন দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়েও ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। রাত সোয়া ৮টা পর্যন্ত ২৩৪ জন আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে আসেন বলে জানা গেছে।
নরসিংদীতে সংঘর্ষ চলাকালে জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ ৬ জনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে মাধবদী পৌরসভাসংলগ্ন বড় মসজিদের সামনে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে মাধবদী থানার চরদীঘলদি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন শাহিন ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের ছোট ভাই দেলোয়ার হোসেন দেলু এবং জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মনিরুজ্জামান ভূইয়া রয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ১টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মাধবদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় জড়ো হন আন্দোলনকারীরা। অন্যদিকে পৌরসভার সামনে এসপি ইনস্টিটিউট মাঠে অবস্থান করছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় আন্দোলনকারীরা মহাসড়ক থেকে মাধবদী পৌর শহরে ঢোকার চেষ্টা করলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। পরে আন্দোলনকারীরা মাধবদী পৌরসভায় আগুন দেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। এ সময় আন্দোলনকারীরা মাধবদী বড় মসজিদের সামনে ৬ জনকে বাঁশ, লাঠি, রড দিয়ে দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন। নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) এ কে এম শহিদুল ইসলাম সোহাগ বলেন, ‘হামলায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ ৬ জন নিহতের খবর পেয়েছি। পরে বিস্তারিত বলা যাবে।’
এদিকে আন্দোলন করতে এসে প্রাণ হারানো ৩ জনের লাশ নিয়ে রাজধানীতে বিক্ষোভ করেছেন আন্দোলনকারীরা। গতকাল সন্ধ্যা ৬টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, টিএসসি, রাজু ভাস্কর্য হয়ে শাহবাগ এলাকায় মিছিল করেন তাঁরা। লাশগুলো কিছু সময় শহীদ মিনারে রাখা হয়। লাশ নিয়ে আন্দোলনকারীরা শাহবাগ থানার ফটক ভাঙার চেষ্টা করলে পুলিশ তাঁদের ওপর গুলি ছোড়ে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন অন্তত ৩ জন।
চলমান পরিস্থিতিতে কারফিউ চলাকালে বাইরে বের না হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, নাশকতাকারীদের বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না। ক্ষমতার সর্বোচ্চ প্রয়োগ করা হবে।
সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে গতকাল রোববার দেশব্যাপী ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের এসব সংঘর্ষে কমপক্ষে ৯৯ জন নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ ও আহত হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৪ জন পুলিশ সদস্য রয়েছেন বলে জানা গেছে।
সংঘর্ষ, গুলি আর মৃত্যুর এসব ঘটনায় আতঙ্ক বিরাজ করছে পুরো দেশে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হওয়ায় গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে দেশজুড়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়েছে। একই সঙ্গে আজ সোমবার থেকে তিন দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
এক দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সর্বাত্মক অসহযোগের বিপরীতে গতকাল ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে জমায়েত কর্মসূচি দিয়েছিল ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। নির্ধারিত কর্মসূচি পালনে দুই পক্ষই মাঠে নামলে বিভিন্ন স্থানে শুরু হয় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও মারামারি। রাজধানীর মিরপুর, ধানমন্ডি, চট্টগ্রামের নিউমার্কেট ও নন্দনকাননসহ বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি ছুড়তে দেখা যায় অস্ত্রধারী কিছু যুবককে।
আজকের পত্রিকার প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যমতে, গতকাল রাজধানীর বাইরে অন্তত ৩০টি জেলায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ সংঘর্ষের ঘটনাই ছিল আন্দোলনকারী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে। অন্তত ৮টি জেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়েছে।
সংঘর্ষে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়েছে সিরাজগঞ্জে। এই জেলার এনায়েতপুর থানায় হামলার সময় ১৩ পুলিশ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (অপারেশনস) সাইফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এই হামলায় আরও বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত ও অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন বলেও জানান তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল দুপুরের দিকে কয়েক হাজার আন্দোলনকারী এনায়েতপুর থানা ঘেরাও করেন। তাঁরা ভাঙচুর শুরু করলে পুলিশ থানার ছাদ থেকে রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও গুলি ছুড়লে আন্দোলনকারীদের অনেকে আহত হন। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধরা থানার ভেতরে ঢুকে পুলিশ সদসদের পেটাতে শুরু করেন। ওই সময় কিছু পুলিশ সদস্য কোনোমতে পালিয়ে আশপাশের বাড়িতে আশ্রয় নেন।
পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট) বিজয় বসাক জানান, থানায় হামলার খবর জানাজানি হলে সন্ধ্যায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। তাঁরা মসজিদের পাশে এবং পুকুর থেকে লাশগুলো উদ্ধার করেন। এ ছাড়াও এদিন এই জেলায় আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সিরাজগঞ্জ শহর ও রায়গঞ্জ উপজেলায় পৃথক সংঘর্ষে আরও ৯ জনের প্রাণহানি হয়েছে বলে জানা গেছে। তাঁদের মধ্যে সিরাজগঞ্জ শহরে ৩ ও রায়গঞ্জে ৩ জনের মৃত্যু হয়। রায়গঞ্জে নিহতরা হলেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মেহেদী হাসান ইলিয়াস, সাধারণ সম্পাদক আল-আমিন সরকার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম, উপজেলার ব্রহ্মগাছা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান গোলাম ছরওয়ার লিটন এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম হাসনায়েন টিটো। নিহতদের মধ্যে একজন সাংবাদিকও রয়েছেন।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে দিনভর সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন ৭ জন। এ ছাড়া লক্ষ্মীপুরে ১০, ফেনীতে ৮, নরসিংদীতে ৬, কিশোরগঞ্জে ৪, বগুড়া ও সিলেটে ৫ জন করে, মাগুরা ও রংপুরে ৪ জন করে, মুন্সিগঞ্জ, ভোলা, পাবনা, কুমিল্লায় ৩ জন করে, শেরপুর ও জয়পুরহাটে ২ জন করে এবং গাজীপুর, হবিগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, সাভার, বরিশাল ও কক্সবাজারে ১ জন করে নিহত হয়েছেন।
লক্ষ্মীপুরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ-যুবলীগের দফায় দফায় সংঘর্ষে ১০ জন নিহত হয়েছেন। গতকাল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে শহরের চকবাজার এলাকায় এ সংঘর্ষ হয়। এতে শতাধিক গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন ২০০ জন। সংঘর্ষ চলাকালে আগুন দেওয়া হয় সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম সালাউদ্দিন টিপুর বাসভবনে। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি নূরউদ্দিন চৌধুরীর নয়নের বাসায়ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। পিটুনিতে নিহত হন যুবলীগের কর্মী হারুনুর রশিদ মেম্বার। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী শতাধিক গুলিবিদ্ধসহ কমপক্ষে ২০০ জন আহত হন।
ঢাকা
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, ধানমন্ডি, মিরপুর, রামপুরা, জিগাতলা, উত্তরাসহ বিভিন্ন জায়গায় গতকাল সকাল থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের থেমে থেমে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় অন্তত ৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিহতদের মধ্য তিনজনেরই মৃত্যু হয় উত্তরায়। বেলা ১টার দিকে উত্তরার আজমপুর এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় আহত হন অন্তত অর্ধশত।
নিহতদের মধ্যে উত্তরা ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ারুল ইসলাম ছাড়াও দক্ষিণখানের ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের নেতা আব্দুস সাত্তার এবং অজ্ঞাতনামা এক যুবক রয়েছেন।
এদিকে দুপুরে রাজধানীর জিগাতলা এলাকায় সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। তাঁর নাম আবদুল্লাহ সিদ্দিকী (২৩)। তিনি রাজধানীর হাবিবুল্লাহ বাহার ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী। কারওয়ান বাজার এলাকায় সংঘর্ষে রমিজউদ্দিন রূপ (২৪) নামের বেসরকারি ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া সন্ধ্যায় আনুমানিক ২৫ বছরের এক যুবকের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন কয়েকজন। নিহত ওই ব্যক্তির নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তাঁর মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ ছাড়াও কেরানীগঞ্জ ও সাভারে পৃথক সংঘর্ষে আরও দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
দিনভর সংঘর্ষ চলাকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পুলিশ বক্স, দোলাইরপাড়ে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের টোল প্লাজা, জুরাইনে ট্রাফিক পুলিশ বক্সে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়। ধানমন্ডিতে পোশাকের পরিচিত ব্র্যান্ড ইয়েলোর বিক্রয়কেন্দ্র বা শোরুমে আগুন দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়েও ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। রাত সোয়া ৮টা পর্যন্ত ২৩৪ জন আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে আসেন বলে জানা গেছে।
নরসিংদীতে সংঘর্ষ চলাকালে জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ ৬ জনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে মাধবদী পৌরসভাসংলগ্ন বড় মসজিদের সামনে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে মাধবদী থানার চরদীঘলদি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন শাহিন ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের ছোট ভাই দেলোয়ার হোসেন দেলু এবং জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মনিরুজ্জামান ভূইয়া রয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ১টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মাধবদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় জড়ো হন আন্দোলনকারীরা। অন্যদিকে পৌরসভার সামনে এসপি ইনস্টিটিউট মাঠে অবস্থান করছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় আন্দোলনকারীরা মহাসড়ক থেকে মাধবদী পৌর শহরে ঢোকার চেষ্টা করলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। পরে আন্দোলনকারীরা মাধবদী পৌরসভায় আগুন দেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। এ সময় আন্দোলনকারীরা মাধবদী বড় মসজিদের সামনে ৬ জনকে বাঁশ, লাঠি, রড দিয়ে দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন। নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) এ কে এম শহিদুল ইসলাম সোহাগ বলেন, ‘হামলায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ ৬ জন নিহতের খবর পেয়েছি। পরে বিস্তারিত বলা যাবে।’
এদিকে আন্দোলন করতে এসে প্রাণ হারানো ৩ জনের লাশ নিয়ে রাজধানীতে বিক্ষোভ করেছেন আন্দোলনকারীরা। গতকাল সন্ধ্যা ৬টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, টিএসসি, রাজু ভাস্কর্য হয়ে শাহবাগ এলাকায় মিছিল করেন তাঁরা। লাশগুলো কিছু সময় শহীদ মিনারে রাখা হয়। লাশ নিয়ে আন্দোলনকারীরা শাহবাগ থানার ফটক ভাঙার চেষ্টা করলে পুলিশ তাঁদের ওপর গুলি ছোড়ে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন অন্তত ৩ জন।
চলমান পরিস্থিতিতে কারফিউ চলাকালে বাইরে বের না হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, নাশকতাকারীদের বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না। ক্ষমতার সর্বোচ্চ প্রয়োগ করা হবে।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৪ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৭ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৭ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১১ দিন আগে