শহীদুল ইসলাম ও রবিউল আলম, ঢাকা
পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠিত অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য করে পাঠাচ্ছে সরকার। কিন্তু ওই সব বিশ্ববিদ্যালয়েই উপাচার্য হওয়ার মতো শিক্ষকেরা আছেন। ফলে অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গিয়ে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করতে অনেক ক্ষেত্রে বাধায় পড়ছেন কেউ কেউ। অনেকে পাল্লা দিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে মেয়াদ শেষ করার আগেই পূর্বের পদে ফিরছেন।
শিক্ষাবিদেরা বলছেন, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপাচার্য নিয়োগের প্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ। মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাইরে থেকে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া উচিত নয়। কোনো উপাচার্য অনিয়ম-দুর্নীতি বা নৈতিকতাবিরোধী কাজে জড়ালে আইন অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আর অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষক এনে উপাচার্য করার পরেও তা খুব একটা কার্যকর হচ্ছে না, এটি সরকারকে মাথায় রাখতে হবে।
ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ তিনটি পদেই রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। ইউজিসির তথ্যানুযায়ী, দেশে এখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫০। এ ছাড়া ১০৮ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকারি অনুমোদন আছে, আর আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৩টি।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে আছেন ঢাবির ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক এ এফ এম আবদুল মঈন। ঢাবির ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বিশ্ববিদ্যালয়টির উপ-উপাচার্য এবং ঢাবির ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামান কোষাধ্যক্ষের দায়িত্বে আছেন।
ঢাবির উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. ইমদাদুল হক এখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্বে আছেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরেফিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাই উপাচার্যের দায়িত্ব পেয়েছেন। ঢাবির ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক মো. হাসিবুর রশীদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্বে আছেন। এই পদে নিয়োগ পাওয়ার আগে তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলেন। ঢাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. মশিউর রহমান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মো. আনোয়ারুল আজিম আরিফ আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্বে আছেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ফায়েকউজ্জামান দুই মেয়াদে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন শেষে কয়েক মাস আসে নিজের বিভাগে ফিরেছেন। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ঢাবির শিক্ষক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বুয়েটের অধ্যাপক আল-নকীব চৌধুরীর বিরুদ্ধেও শিক্ষক নিয়োগে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ছিল। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে উপাচার্যের দায়িত্বে আছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এম রোস্তম আলী, তাঁর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগের তদন্ত করছে ইউজিসি। ঢাবির অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ দ্বিতীয় মেয়াদে শাবিপ্রবির উপাচার্যের দায়িত্বে আছেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ‘বহিরাগত’ এই উপাচার্যকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে গুঞ্জন রয়েছে।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিগত ১২ বছরে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচজন উপাচার্য পদত্যাগ করেছেন। ২০০৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এস এম এ ফায়েজ, ২০১২ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শরীফ এনামুল কবির, ২০১৪ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আনোয়ার হোসেন এবং ২০১৯ সালে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এস এম ইমামুল হক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য খোন্দকার নাসির উদ্দিন আহমেদ পদত্যাগ করেন।
উপাচার্য নিয়োগ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, একেবারে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের নিজেদের শিক্ষকদের মধ্য থেকে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া উচিত। অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষক এনে উপাচার্য করা হলেও তা খুব একটা কার্যকর হচ্ছে না। অনেকেই যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারছেন না। প্রশাসনিক অভিজ্ঞতার ঘাটতি থাকতেই পারে কিন্তু অনিয়ম-দুর্নীতি আর নৈতিকতার সমস্যা থাকলে সেটা গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, ‘উপাচার্যের দায়িত্ব পালনের সময় অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। কিন্তু এসব অভিযোগে তাঁদের শাস্তি হতে পারত। শাস্তি তো হয়ই না, আগের জায়গায় ফেরত আসতেও কোনো অসুবিধা হয় না।’
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নেওয়া হয় না, এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। পাস করার পরেই শিক্ষক হয়ে যাচ্ছেন। পাঁচ বছর অন্য কোথাও চাকরি করে এরপর শিক্ষক হিসেবে যোগ দিতে পারেন, এটা হচ্ছে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষক সমিতির নেতৃত্বে থাকা শিক্ষকেরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, উপ-উপাচার্যসহ প্রশাসনিক বিভিন্ন পদে নিয়োগ পেয়েছেন ও পাচ্ছেন। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোরও শিক্ষক সমিতির নেতাদের পাশাপাশি সরকারি দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পদে বসানো হয়েছে।
ঢাবির বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মীজানুর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক হারুন অর রশিদ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এস এম ইমামুল হক, ঢাবির সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সহিদ আখতার হুসাইন ও অধ্যাপক নাসরিন আহমাদ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এম ওহিদুজ্জামান ঢাবি শিক্ষক সমিতির বিভিন্ন পদে ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগপ্রক্রিয়াকে ত্রুটিপূর্ণ বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন। তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র না হলে সেখানে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় না। অথচ বাইরের দেশে বৈচিত্র্য আনার জন্য নিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়োগ দেওয়া হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকনেতা হলেই অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে উপাচার্য করা লাগবে, এগুলোই আমাদের মূল সমস্যা।’
উপাচার্যদের অসীম ক্ষমতা দিয়ে তাঁদের স্বৈরাচারী বানিয়ে দেওয়া হয় জানিয়ে অধ্যাপক কামরুল হাসান বলেন, ভালো শিক্ষাবিদ ও সজ্জন ব্যক্তি যদি অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসত, সমস্যা ছিল না। প্রধান সমস্যা হলো উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে তাঁর যোগ্যতা না দেখে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। সৎভাবে উপাচার্য নিয়োগ দিলে অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এনে উপাচার্য করলেও সমস্যা হতো না। দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশ এখনো জানেই না কীভাবে ভালো লোককে উপাচার্য করতে হয়।
এবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগে আলোচনায় ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী সাইফুদ্দিন। অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়ার তাঁদের ক্যাম্পাসে সমস্যা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন তিনি। অধ্যাপক সাইফুদ্দিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র আন্দোলনের প্রধান কারণ হলো, যোগ্য শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া। অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসে উপাচার্যরা নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনই বোঝেন না। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন তো হয়ই না, তাঁরা পরিস্থিতি জটিল করে ফেলেন।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগের আলোচনায় ছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইদুর রহমান। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘উপাচার্য নিয়োগে ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই তাঁদের অ্যাকাডেমিক দক্ষতা, প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাকে বিবেচনায় রাখতে হবে। আমি এখানে বিভিন্ন মেয়াদে চেয়ারম্যান, ডিন এবং প্রক্টরের দায়িত্ব পালন করেছি। ফলে বাইরের যে কারও থেকে আমি এই বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে বেশি জানব, এটিই স্বাভাবিক।’
পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠিত অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য করে পাঠাচ্ছে সরকার। কিন্তু ওই সব বিশ্ববিদ্যালয়েই উপাচার্য হওয়ার মতো শিক্ষকেরা আছেন। ফলে অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গিয়ে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করতে অনেক ক্ষেত্রে বাধায় পড়ছেন কেউ কেউ। অনেকে পাল্লা দিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে মেয়াদ শেষ করার আগেই পূর্বের পদে ফিরছেন।
শিক্ষাবিদেরা বলছেন, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপাচার্য নিয়োগের প্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ। মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাইরে থেকে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া উচিত নয়। কোনো উপাচার্য অনিয়ম-দুর্নীতি বা নৈতিকতাবিরোধী কাজে জড়ালে আইন অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আর অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষক এনে উপাচার্য করার পরেও তা খুব একটা কার্যকর হচ্ছে না, এটি সরকারকে মাথায় রাখতে হবে।
ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ তিনটি পদেই রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। ইউজিসির তথ্যানুযায়ী, দেশে এখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫০। এ ছাড়া ১০৮ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকারি অনুমোদন আছে, আর আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৩টি।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে আছেন ঢাবির ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক এ এফ এম আবদুল মঈন। ঢাবির ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বিশ্ববিদ্যালয়টির উপ-উপাচার্য এবং ঢাবির ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামান কোষাধ্যক্ষের দায়িত্বে আছেন।
ঢাবির উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. ইমদাদুল হক এখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্বে আছেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরেফিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাই উপাচার্যের দায়িত্ব পেয়েছেন। ঢাবির ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক মো. হাসিবুর রশীদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্বে আছেন। এই পদে নিয়োগ পাওয়ার আগে তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলেন। ঢাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. মশিউর রহমান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মো. আনোয়ারুল আজিম আরিফ আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্বে আছেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ফায়েকউজ্জামান দুই মেয়াদে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন শেষে কয়েক মাস আসে নিজের বিভাগে ফিরেছেন। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ঢাবির শিক্ষক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বুয়েটের অধ্যাপক আল-নকীব চৌধুরীর বিরুদ্ধেও শিক্ষক নিয়োগে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ছিল। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে উপাচার্যের দায়িত্বে আছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এম রোস্তম আলী, তাঁর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগের তদন্ত করছে ইউজিসি। ঢাবির অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ দ্বিতীয় মেয়াদে শাবিপ্রবির উপাচার্যের দায়িত্বে আছেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ‘বহিরাগত’ এই উপাচার্যকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে গুঞ্জন রয়েছে।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিগত ১২ বছরে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচজন উপাচার্য পদত্যাগ করেছেন। ২০০৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এস এম এ ফায়েজ, ২০১২ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শরীফ এনামুল কবির, ২০১৪ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আনোয়ার হোসেন এবং ২০১৯ সালে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এস এম ইমামুল হক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য খোন্দকার নাসির উদ্দিন আহমেদ পদত্যাগ করেন।
উপাচার্য নিয়োগ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, একেবারে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের নিজেদের শিক্ষকদের মধ্য থেকে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া উচিত। অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষক এনে উপাচার্য করা হলেও তা খুব একটা কার্যকর হচ্ছে না। অনেকেই যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারছেন না। প্রশাসনিক অভিজ্ঞতার ঘাটতি থাকতেই পারে কিন্তু অনিয়ম-দুর্নীতি আর নৈতিকতার সমস্যা থাকলে সেটা গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, ‘উপাচার্যের দায়িত্ব পালনের সময় অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। কিন্তু এসব অভিযোগে তাঁদের শাস্তি হতে পারত। শাস্তি তো হয়ই না, আগের জায়গায় ফেরত আসতেও কোনো অসুবিধা হয় না।’
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নেওয়া হয় না, এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। পাস করার পরেই শিক্ষক হয়ে যাচ্ছেন। পাঁচ বছর অন্য কোথাও চাকরি করে এরপর শিক্ষক হিসেবে যোগ দিতে পারেন, এটা হচ্ছে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষক সমিতির নেতৃত্বে থাকা শিক্ষকেরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, উপ-উপাচার্যসহ প্রশাসনিক বিভিন্ন পদে নিয়োগ পেয়েছেন ও পাচ্ছেন। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোরও শিক্ষক সমিতির নেতাদের পাশাপাশি সরকারি দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পদে বসানো হয়েছে।
ঢাবির বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মীজানুর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক হারুন অর রশিদ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এস এম ইমামুল হক, ঢাবির সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সহিদ আখতার হুসাইন ও অধ্যাপক নাসরিন আহমাদ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এম ওহিদুজ্জামান ঢাবি শিক্ষক সমিতির বিভিন্ন পদে ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগপ্রক্রিয়াকে ত্রুটিপূর্ণ বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন। তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র না হলে সেখানে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় না। অথচ বাইরের দেশে বৈচিত্র্য আনার জন্য নিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়োগ দেওয়া হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকনেতা হলেই অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে উপাচার্য করা লাগবে, এগুলোই আমাদের মূল সমস্যা।’
উপাচার্যদের অসীম ক্ষমতা দিয়ে তাঁদের স্বৈরাচারী বানিয়ে দেওয়া হয় জানিয়ে অধ্যাপক কামরুল হাসান বলেন, ভালো শিক্ষাবিদ ও সজ্জন ব্যক্তি যদি অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসত, সমস্যা ছিল না। প্রধান সমস্যা হলো উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে তাঁর যোগ্যতা না দেখে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। সৎভাবে উপাচার্য নিয়োগ দিলে অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এনে উপাচার্য করলেও সমস্যা হতো না। দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশ এখনো জানেই না কীভাবে ভালো লোককে উপাচার্য করতে হয়।
এবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগে আলোচনায় ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী সাইফুদ্দিন। অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়ার তাঁদের ক্যাম্পাসে সমস্যা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন তিনি। অধ্যাপক সাইফুদ্দিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র আন্দোলনের প্রধান কারণ হলো, যোগ্য শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া। অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসে উপাচার্যরা নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনই বোঝেন না। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন তো হয়ই না, তাঁরা পরিস্থিতি জটিল করে ফেলেন।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগের আলোচনায় ছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইদুর রহমান। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘উপাচার্য নিয়োগে ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই তাঁদের অ্যাকাডেমিক দক্ষতা, প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাকে বিবেচনায় রাখতে হবে। আমি এখানে বিভিন্ন মেয়াদে চেয়ারম্যান, ডিন এবং প্রক্টরের দায়িত্ব পালন করেছি। ফলে বাইরের যে কারও থেকে আমি এই বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে বেশি জানব, এটিই স্বাভাবিক।’
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৪ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৭ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৭ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১১ দিন আগে