স্বপ্না রেজা
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও খাদ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন। অতিমারি করোনার আঘাত কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই খাদ্যদ্রব্যের অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে কোনোভাবেই যখন জনগণ পেরে উঠছে না, ঠিক এমন এক মুহূর্তে বিদ্যুতের দাম ৫৮ শতাংশ বৃদ্ধির সুপারিশ উঠেছে। করোনাকালে কতজন ব্যক্তি কর্মসংস্থান হারিয়েছেন, কতজনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে, করোনা কয়টা পরিবারের প্রধান আয়ক্ষম ব্যক্তির প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, কতজন শিশুর দায়ভার মুক্তির জন্য পরিবার তার বাল্যবিবাহের কাজটি সম্পন্ন করেছে, কয়টা পরিবার মধ্যবিত্ত থেকে নিম্নবিত্তে অবস্থান নিতে কিংবা নিম্নবিত্ত পরিবার দরিদ্রতায় জায়গা নিতে বাধ্য হয়েছে—সরকারের কাছে এমন কোনো সমীক্ষা বা গবেষণা আছে কি? সম্ভবত তেমন একটা সুস্পষ্ট সমীক্ষা বা গবেষণা নেই। যা আছে তা হয়তো অনুমান। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার দেখে অনুমান। যদি দুই বছর করোনাকালে জনগণের জীবনযাপনের অবস্থা সরেজমিনে গবেষণা করা হতো তাতে যে উপাত্ত বা তথ্য পাওয়া যেত, তাতে জনকল্যাণমুখী পরিকল্পনা নেওয়া সহজ হতো সরকারের জন্য এবং সত্যিকার অর্থে জনগণ সুস্থিরভাবে বেঁচে থাকার কথা ভাবতে পারত। প্রকৃত অবস্থা না বুঝে, না জেনে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়াটা যে কারও কারও জীবনের ওপর মারাত্মক বোঝা হতে পারে, ভয়ংকররূপে আঘাত আনতে পারে, অস্তিত্ব বিনাশের কারণ হতে পারে, বিত্ত আর ক্ষমতায় বসে হয়তো আমরা তা অনেকেই বুঝি না কিংবা বুঝতে চাই না।
অত্যধিক গরমের বড় বড় ঘামের ফোঁটা মুছে রিকশাচালক দলিল মিঞা জানতে চাইলেন, ‘কন তো, তেল, পেঁয়াজ, চাল, ডালের দাম বাড়নের ধাক্কা সামলাইতে না সামলাইতে বিদ্যুতের দাম বাড়তাসে ক্যান? একটা রুম ভাড়া কইরা মাইয়াটারে লইয়া স্বামী-স্ত্রী থাকি। মাইয়া আমার লেখাপড়ায় অনেক ভালো। ভার্সিটিতে পড়ে। রুমের ভাড়া, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি সব বিল দেই। মাইয়ারে পড়ালেখা করাই। কয়দিন পর মাইয়া পাস কইরা একটা চাকরি পাইলে আমি রিকশা চালাইতাম না। ওর মা-ও অন্যের বাসায় ছুটা কাম করত না। এখন তো সব আন্ধার লাগে। কই যাইতাম কন তো?’
দলিল মিঞা একটা সময়ের দলিল হয়ে পড়বে হয়তো। তাঁকে বলতে হলো, বোঝাতে হলো কেন বিদ্যুতের দাম ৫৮ শতাংশ বৃদ্ধির কথা ভাবছে সরকার। রিকশাচালক দলিল মিঞা ৫৮ শতাংশের মানে বেশ বোঝেন। এটা যে মোট মূল্যের অর্ধেকের বেশি, তা তাঁকে নতুন করে বোঝাতে হলো না। আর এখানেই তাঁর বিস্ময় যে এক লাফে এত কেন দাম বাড়ানোর কথা ভাবা হচ্ছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কারিগরি কমিটি কয়েক দিন আগে রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে আয়োজিত গণশুনানিতে বিদ্যুতের দাম পাইকারি পর্যায়ে গড়ে প্রায় ৫৮ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। সাধারণত বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়ানো হয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) জন্য। দাম বাড়ানোর যুক্তি হিসেবে পিডিবি যা উল্লেখ করেছে এবং পত্রিকায় যা প্রকাশিত হয়েছে, তা বোঝাতে হলো দলিল মিঞাকে। বললাম, গত অর্থবছরে, মানে ২০২০-২১ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে যে পরিমাণ খরচ হয়েছে তার চেয়ে কম দামে বিদ্যুৎ বিক্রি করা হয়েছে। ফলে পিডিবির লোকসান হয়েছে ১১ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে বিক্রি করায় চলতি বছরে লোকসান হতে পারে ৪০ হাজার কোটি টাকা। দলিল মিঞার রিকশা আর সামনে এগোয় না। আসমান থেকে পড়েন, ‘কন কী! আমরা তো জানি তারা লোকসান কইরা কামে হাত দেয় না। লাভ দেইখা তো ব্যাবাক চিন্তা। অন্য কোনো ঝামেলা নাই তো? লাভ ছাইড়া কেউ লোকসানে কাম করে নাকি? করসে কখনো?’
দলিল মিঞাদের সহজ-সরল জীবনের মতোই সহজ-সরল প্রশ্ন। বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ বেশি করে কম দামে তা বিক্রি করার পেছনে যৌক্তিকতা কী ছিল, তা হয়তো কর্তৃপক্ষই ভালো বলতে পারবে। তবে এই কারণ এখন জনগণের জানার প্রয়োজন, তাঁদের অধিকার রয়েছে। শুধু জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি নয়, জানা গেছে অনেক বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রকে অলস রেখে ভাড়া দেওয়া হতো। কী সাংঘাতিক বেহিসাবি পরিকল্পনা! অনেক বেসরকারি উৎপাদনকেন্দ্রকে বসিয়ে রেখে ভাড়া দেওয়া হয়েছে বলে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়। উৎপাদন খরচের অজুহাতে বিরাট লোকসানের ভারটা জনগণের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া তো ব্রিটিশ বা পাকিস্তানি শাসনামলের ইতিহাসকেই মনে করিয়ে দেয়। এখন উৎপাদন খরচের হিসাব কষে দেখার সময় হয়েছে। সেই সঙ্গে কতটা বিদ্যুৎ কম দামে বিক্রি করা হয়েছে, নাকি পরিকল্পনা এমনই ছিল—উৎপাদন ব্যয় বেশি করে কম দামে বিক্রি করা? এটা বিশ্বাসযোগ্য?
একজন অবসরপ্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি বলছিলেন, এখন তো শহরে খুব একটা লোডশেডিং হয় না। তবে গ্রামে হয়। বিদ্যুৎ সরবরাহকে স্বাভাবিক রাখার জন্য হয়তো বেশি খরচের উৎপাদিত বিদ্যুৎকে কম দামে সরবরাহ করা হয়েছে। আর সেটা করা হয়েছে ক্ষমতাসীন সরকারের রাজনৈতিক জনপ্রিয়তাকে টিকিয়ে রাখার জন্য। তিনি আরও বললেন, এটা তো জনপ্রিয়তার ভুল কৌশল। প্রকৃত অবস্থাকে আড়াল করে কৃত্রিম অবস্থা দিয়ে কি জনপ্রিয়তা ধরে রাখা যায়, নাকি জনপ্রিয় হওয়া যায়? এটা তো বুমেরাং হওয়ার মতো অবস্থা। আর দলিল মিঞা জানতে চান, বালিশ, বিছানার চাদর হাজার হাজার টাকা দিয়ে কেনার মতো কোনো গল্প নাই তো এখানে?
জানা নেই যে বিপুল পরিমাণ লোকসান পরিকল্পনার খাতায় রেখে কোনো প্রকল্প বা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয় কি না। আবার সরকার যে ভর্তুকি দেয়, সেটাও কিন্তু জনগণের প্রদত্ত রাজস্ব। ফলে টাকা খরচ করে সেবাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে জনগণের লোকসানটাই বেশি হয়, বড় হয়। দেশের বড় আমদানি ও রপ্তানিকারক ব্যবসায়ী ও তাদের সংগঠন বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে। কারণ, তাদের সেক্টরেও উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। যার প্রভাব পড়বে ভোক্তাদের ওপর। সাধারণ জনগণের ওপর। আয় না বাড়া অবস্থায় ব্যয় সীমাহীন বেড়ে যাওয়ার পরিণতি সামাজিক বিশৃঙ্খলার পথ উন্মোচন করতে পারে, সহজ করতে পারে। দুর্নীতি বাড়বে। বাড়বে সামাজিক অবক্ষয়। চুরি, ছিনতাই, ভেজাল পণ্য সরবরাহের মতো ঘটনা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে।
জনজীবনকে সহজ ও সহনশীল রাখার জন্য সমাজে তার চাহিদাগুলোকে তাদের আয় ও ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হবে। এতে ব্যক্তিজীবনের সুস্থতার সঙ্গে সামাজিক সুস্থতা বজায় থাকবে। আমরা কিছুদিন আগেই দেখলাম, অবৈধ বিদ্যুৎ ও গ্যাস-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। যেসব গ্রাহকের এসব সংযোগ উচ্ছেদ করা হচ্ছে, তাঁরা কিন্তু ওই বিভাগের কারও না কারও কাছ থেকে লাইন-সংযোগ পেয়েছেন এবং তা অর্থের বিনিময়ে। তাঁদের কিন্তু কখনোই প্রকাশ্যে আনা হয় না, হয়নি। এমন অবৈধ সংযোগে বিদ্যুৎ কিংবা গ্যাস সেক্টরে কত টাকা লোকসান হয়েছে বা হচ্ছে, তার কোনো হিসাব পিডিবির কাছে আছে? একটা কথা তো প্রায়ই শোনা গেছে যে গ্যাস ও বিদ্যুৎকে দুর্নীতিমুক্ত করা সম্ভব হলে অনেক টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব হতো।
পরিশেষে বলব, জনদুর্ভোগ না বাড়ে, জনজীবন বিপন্ন না হয়—এমন পরিকল্পনা নেওয়া দরকার। জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস এবং জনগণের টাকায় রাষ্ট্র পরিচালিত হয়, এই সত্য দুটি মাথায় রেখে জনগণকে সব সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে একটি সুষ্ঠু ভারসাম্য রাখা দরকার। জনগণ কিন্তু বিনা মূল্যে নাগরিক সুবিধা গ্রহণ করে না। সুতরাং তাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে, বিনয়ের সঙ্গে তার প্রাপ্য সেবা পৌঁছে দিতে হবে। এমন কোনো নিয়ম বা আইন যেন প্রণয়ন না হয়, যাতে কিনা রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতার উৎস ও রাষ্ট্রকে অর্থ প্রদানকারী বড় সেক্টর ‘জনগণ’ বিপন্ন না হয়। রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার দুষ্টচক্র কিন্তু রাষ্ট্রের ভেতরই ঘাপটি মেরে থাকে। তাদের চিহ্নিত করা দরকার। একজন সচেতন নাগরিক বলছিলেন যে সরকারকে বিব্রত করার ব্যক্তিটি সরকারের ভেতরে রয়ে গেছে কি না!
লেখক: স্বপ্না রেজা, কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও খাদ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন। অতিমারি করোনার আঘাত কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই খাদ্যদ্রব্যের অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে কোনোভাবেই যখন জনগণ পেরে উঠছে না, ঠিক এমন এক মুহূর্তে বিদ্যুতের দাম ৫৮ শতাংশ বৃদ্ধির সুপারিশ উঠেছে। করোনাকালে কতজন ব্যক্তি কর্মসংস্থান হারিয়েছেন, কতজনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে, করোনা কয়টা পরিবারের প্রধান আয়ক্ষম ব্যক্তির প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, কতজন শিশুর দায়ভার মুক্তির জন্য পরিবার তার বাল্যবিবাহের কাজটি সম্পন্ন করেছে, কয়টা পরিবার মধ্যবিত্ত থেকে নিম্নবিত্তে অবস্থান নিতে কিংবা নিম্নবিত্ত পরিবার দরিদ্রতায় জায়গা নিতে বাধ্য হয়েছে—সরকারের কাছে এমন কোনো সমীক্ষা বা গবেষণা আছে কি? সম্ভবত তেমন একটা সুস্পষ্ট সমীক্ষা বা গবেষণা নেই। যা আছে তা হয়তো অনুমান। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার দেখে অনুমান। যদি দুই বছর করোনাকালে জনগণের জীবনযাপনের অবস্থা সরেজমিনে গবেষণা করা হতো তাতে যে উপাত্ত বা তথ্য পাওয়া যেত, তাতে জনকল্যাণমুখী পরিকল্পনা নেওয়া সহজ হতো সরকারের জন্য এবং সত্যিকার অর্থে জনগণ সুস্থিরভাবে বেঁচে থাকার কথা ভাবতে পারত। প্রকৃত অবস্থা না বুঝে, না জেনে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়াটা যে কারও কারও জীবনের ওপর মারাত্মক বোঝা হতে পারে, ভয়ংকররূপে আঘাত আনতে পারে, অস্তিত্ব বিনাশের কারণ হতে পারে, বিত্ত আর ক্ষমতায় বসে হয়তো আমরা তা অনেকেই বুঝি না কিংবা বুঝতে চাই না।
অত্যধিক গরমের বড় বড় ঘামের ফোঁটা মুছে রিকশাচালক দলিল মিঞা জানতে চাইলেন, ‘কন তো, তেল, পেঁয়াজ, চাল, ডালের দাম বাড়নের ধাক্কা সামলাইতে না সামলাইতে বিদ্যুতের দাম বাড়তাসে ক্যান? একটা রুম ভাড়া কইরা মাইয়াটারে লইয়া স্বামী-স্ত্রী থাকি। মাইয়া আমার লেখাপড়ায় অনেক ভালো। ভার্সিটিতে পড়ে। রুমের ভাড়া, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি সব বিল দেই। মাইয়ারে পড়ালেখা করাই। কয়দিন পর মাইয়া পাস কইরা একটা চাকরি পাইলে আমি রিকশা চালাইতাম না। ওর মা-ও অন্যের বাসায় ছুটা কাম করত না। এখন তো সব আন্ধার লাগে। কই যাইতাম কন তো?’
দলিল মিঞা একটা সময়ের দলিল হয়ে পড়বে হয়তো। তাঁকে বলতে হলো, বোঝাতে হলো কেন বিদ্যুতের দাম ৫৮ শতাংশ বৃদ্ধির কথা ভাবছে সরকার। রিকশাচালক দলিল মিঞা ৫৮ শতাংশের মানে বেশ বোঝেন। এটা যে মোট মূল্যের অর্ধেকের বেশি, তা তাঁকে নতুন করে বোঝাতে হলো না। আর এখানেই তাঁর বিস্ময় যে এক লাফে এত কেন দাম বাড়ানোর কথা ভাবা হচ্ছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কারিগরি কমিটি কয়েক দিন আগে রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে আয়োজিত গণশুনানিতে বিদ্যুতের দাম পাইকারি পর্যায়ে গড়ে প্রায় ৫৮ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। সাধারণত বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়ানো হয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) জন্য। দাম বাড়ানোর যুক্তি হিসেবে পিডিবি যা উল্লেখ করেছে এবং পত্রিকায় যা প্রকাশিত হয়েছে, তা বোঝাতে হলো দলিল মিঞাকে। বললাম, গত অর্থবছরে, মানে ২০২০-২১ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে যে পরিমাণ খরচ হয়েছে তার চেয়ে কম দামে বিদ্যুৎ বিক্রি করা হয়েছে। ফলে পিডিবির লোকসান হয়েছে ১১ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে বিক্রি করায় চলতি বছরে লোকসান হতে পারে ৪০ হাজার কোটি টাকা। দলিল মিঞার রিকশা আর সামনে এগোয় না। আসমান থেকে পড়েন, ‘কন কী! আমরা তো জানি তারা লোকসান কইরা কামে হাত দেয় না। লাভ দেইখা তো ব্যাবাক চিন্তা। অন্য কোনো ঝামেলা নাই তো? লাভ ছাইড়া কেউ লোকসানে কাম করে নাকি? করসে কখনো?’
দলিল মিঞাদের সহজ-সরল জীবনের মতোই সহজ-সরল প্রশ্ন। বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ বেশি করে কম দামে তা বিক্রি করার পেছনে যৌক্তিকতা কী ছিল, তা হয়তো কর্তৃপক্ষই ভালো বলতে পারবে। তবে এই কারণ এখন জনগণের জানার প্রয়োজন, তাঁদের অধিকার রয়েছে। শুধু জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি নয়, জানা গেছে অনেক বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রকে অলস রেখে ভাড়া দেওয়া হতো। কী সাংঘাতিক বেহিসাবি পরিকল্পনা! অনেক বেসরকারি উৎপাদনকেন্দ্রকে বসিয়ে রেখে ভাড়া দেওয়া হয়েছে বলে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়। উৎপাদন খরচের অজুহাতে বিরাট লোকসানের ভারটা জনগণের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া তো ব্রিটিশ বা পাকিস্তানি শাসনামলের ইতিহাসকেই মনে করিয়ে দেয়। এখন উৎপাদন খরচের হিসাব কষে দেখার সময় হয়েছে। সেই সঙ্গে কতটা বিদ্যুৎ কম দামে বিক্রি করা হয়েছে, নাকি পরিকল্পনা এমনই ছিল—উৎপাদন ব্যয় বেশি করে কম দামে বিক্রি করা? এটা বিশ্বাসযোগ্য?
একজন অবসরপ্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি বলছিলেন, এখন তো শহরে খুব একটা লোডশেডিং হয় না। তবে গ্রামে হয়। বিদ্যুৎ সরবরাহকে স্বাভাবিক রাখার জন্য হয়তো বেশি খরচের উৎপাদিত বিদ্যুৎকে কম দামে সরবরাহ করা হয়েছে। আর সেটা করা হয়েছে ক্ষমতাসীন সরকারের রাজনৈতিক জনপ্রিয়তাকে টিকিয়ে রাখার জন্য। তিনি আরও বললেন, এটা তো জনপ্রিয়তার ভুল কৌশল। প্রকৃত অবস্থাকে আড়াল করে কৃত্রিম অবস্থা দিয়ে কি জনপ্রিয়তা ধরে রাখা যায়, নাকি জনপ্রিয় হওয়া যায়? এটা তো বুমেরাং হওয়ার মতো অবস্থা। আর দলিল মিঞা জানতে চান, বালিশ, বিছানার চাদর হাজার হাজার টাকা দিয়ে কেনার মতো কোনো গল্প নাই তো এখানে?
জানা নেই যে বিপুল পরিমাণ লোকসান পরিকল্পনার খাতায় রেখে কোনো প্রকল্প বা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয় কি না। আবার সরকার যে ভর্তুকি দেয়, সেটাও কিন্তু জনগণের প্রদত্ত রাজস্ব। ফলে টাকা খরচ করে সেবাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে জনগণের লোকসানটাই বেশি হয়, বড় হয়। দেশের বড় আমদানি ও রপ্তানিকারক ব্যবসায়ী ও তাদের সংগঠন বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে। কারণ, তাদের সেক্টরেও উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। যার প্রভাব পড়বে ভোক্তাদের ওপর। সাধারণ জনগণের ওপর। আয় না বাড়া অবস্থায় ব্যয় সীমাহীন বেড়ে যাওয়ার পরিণতি সামাজিক বিশৃঙ্খলার পথ উন্মোচন করতে পারে, সহজ করতে পারে। দুর্নীতি বাড়বে। বাড়বে সামাজিক অবক্ষয়। চুরি, ছিনতাই, ভেজাল পণ্য সরবরাহের মতো ঘটনা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে।
জনজীবনকে সহজ ও সহনশীল রাখার জন্য সমাজে তার চাহিদাগুলোকে তাদের আয় ও ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হবে। এতে ব্যক্তিজীবনের সুস্থতার সঙ্গে সামাজিক সুস্থতা বজায় থাকবে। আমরা কিছুদিন আগেই দেখলাম, অবৈধ বিদ্যুৎ ও গ্যাস-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। যেসব গ্রাহকের এসব সংযোগ উচ্ছেদ করা হচ্ছে, তাঁরা কিন্তু ওই বিভাগের কারও না কারও কাছ থেকে লাইন-সংযোগ পেয়েছেন এবং তা অর্থের বিনিময়ে। তাঁদের কিন্তু কখনোই প্রকাশ্যে আনা হয় না, হয়নি। এমন অবৈধ সংযোগে বিদ্যুৎ কিংবা গ্যাস সেক্টরে কত টাকা লোকসান হয়েছে বা হচ্ছে, তার কোনো হিসাব পিডিবির কাছে আছে? একটা কথা তো প্রায়ই শোনা গেছে যে গ্যাস ও বিদ্যুৎকে দুর্নীতিমুক্ত করা সম্ভব হলে অনেক টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব হতো।
পরিশেষে বলব, জনদুর্ভোগ না বাড়ে, জনজীবন বিপন্ন না হয়—এমন পরিকল্পনা নেওয়া দরকার। জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস এবং জনগণের টাকায় রাষ্ট্র পরিচালিত হয়, এই সত্য দুটি মাথায় রেখে জনগণকে সব সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে একটি সুষ্ঠু ভারসাম্য রাখা দরকার। জনগণ কিন্তু বিনা মূল্যে নাগরিক সুবিধা গ্রহণ করে না। সুতরাং তাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে, বিনয়ের সঙ্গে তার প্রাপ্য সেবা পৌঁছে দিতে হবে। এমন কোনো নিয়ম বা আইন যেন প্রণয়ন না হয়, যাতে কিনা রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতার উৎস ও রাষ্ট্রকে অর্থ প্রদানকারী বড় সেক্টর ‘জনগণ’ বিপন্ন না হয়। রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার দুষ্টচক্র কিন্তু রাষ্ট্রের ভেতরই ঘাপটি মেরে থাকে। তাদের চিহ্নিত করা দরকার। একজন সচেতন নাগরিক বলছিলেন যে সরকারকে বিব্রত করার ব্যক্তিটি সরকারের ভেতরে রয়ে গেছে কি না!
লেখক: স্বপ্না রেজা, কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৬ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৬ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১০ দিন আগে