আব্দুর রাজ্জাক
আমাদের এই শ্রমঘন সমাজে জুতসই একটি কাজ খুঁজে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। নিজের যোগ্যতা, পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে পছন্দমতো চাকরি করা—মানুষের সারা জীবনের আকাঙ্ক্ষা। শিক্ষাজীবন থেকেই আমাদের সমাজের মানুষ ব্যস্ত থাকে ভবিষ্যতে কী কাজ করবে, কোন ধরনের চাকরি করবে, তা নিয়ে। সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি থাকে সরকারি কোনো উচ্চপদে চাকরির জন্য। সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা অথবা করপোরেশনে চাকরি করার ক্ষেত্রে অধিকতর মেধাবীরা প্রস্তুতি নিতে থাকে শিক্ষাজীবন থেকেই।
এখানে দোষের কিছু নেই, নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তুলে কেউ যদি যথাযোগ্য চাকরি পায়, তখন সে তার মেধার বিকাশ ঘটাতে পারবে কর্মক্ষেত্রে, এ ব্যাপারে কারও কোনো দ্বিমত নেই।
আমাদের দেশে উল্লিখিত সরকার বা রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত কর্মক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে কোটাপ্রথা প্রচলিত আছে। আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় ৫৬ শতাংশ জনবল নিয়োগ হতো কোটার বিপরীতে, ৪৬ শতাংশ নিয়োগ হতো মেধার ভিত্তিতে। এই কোটার মধ্যে ৩০ শতাংশ নিয়োগ হতো মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পোষ্যদের মধ্য থেকে। কিন্তু কোনো দিনই এই ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পূরণ হতো না, পূরণ না হওয়া পদের সংখ্যাকে মেধার মধ্য থেকে নিয়োগ দেওয়া হতো না। এখানে যা ক্ষতি হয়েছে—মেধাবীরা চাকরি পায়নি, সরকারের বিভিন্ন সংস্থায় বছরের পর বছর পদ খালি থেকেছে, কাজের বিঘ্ন ঘটেছে বিভিন্ন সংস্থায়।
২০১৮ সালে কোটা সংস্কারের পক্ষে আন্দোলন হয়। নির্বাহী বিভাগ থেকে কোটাপ্রথা বাতিল করা হয়। সংস্কার না করে বাতিল করে আমাদের দেশে অনগ্রসর মানুষের অধিকারকে ক্ষুণ্ন করা হলো। এই কোটা বাতিলের বিপক্ষে তখন ছাত্ররা কোনো আন্দোলন করল না, কোনো দাবি তুলল না। আন্দোলনকারীরা কি স্বার্থপর ছিল? নিজেদের স্বার্থ হাসিল হওয়ার পরে পিছিয়ে পড়া মানুষদের কথা তারা ভুলে গেল?
এই কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপনের বিপরীতে হাইকোর্টে মামলা করা হলো। মামলার প্রাথমিক আদেশে কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপনকে বাতিল করে আদেশ দেওয়া হলো। ছাত্রদের মাঝে অসন্তোষ তৈরি হলো। সরকারপক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা হলো। আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশের কার্যকারিতা স্থিরকরণ করল, অর্থাৎ আদেশের কোনো কার্যকারিতা থাকল না। হাইকোর্ট থেকে পূর্ণাঙ্গ রায় দেওয়ার পরে আপিল বিভাগ একটি দীর্ঘ সময় নিয়ে শুনানির ব্যবস্থা করল। ছাত্রদের মধ্যে ক্ষোভ চরম আকার ধারণ করল। অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস এ ক্ষেত্রে হাইকোর্টের দুই পর্যায়ের যে আদেশ দেওয়া হলো, সে ব্যাপারে তেমন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারল না। বাস্তব অবস্থা অনুধাবন করতে ব্যর্থ হলো আপিল বিভাগ।
নির্বাহী বিভাগ থেকে ছাত্রদের বোঝাতে ব্যর্থ হলো যে বিচার বিভাগে কোনো ব্যাপারে শুনানি চলমান থাকলে সে ব্যাপারে আইন বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগ তাৎক্ষণিক কোনো আইন পাস করতে পারে না। নির্বাহী বিভাগ বা আইন বিভাগের যেকোনো সিদ্ধান্তের ব্যাপারে বিচার বিভাগে চ্যালেঞ্জ হতে পারে। বিচার বিভাগের চূড়ান্ত রায় চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।
এ বছর ১৪ ও ১৫ জুলাই সাধারণ ছাত্র আন্দোলন যখন দানা বাঁধছে, তখন ছাত্রলীগ ও সাধারণ ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষ হলো। সাধারণ ছাত্রদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ল। যারা কোটা সংস্কারের পক্ষে, তাদের মাঝে বিরোধী রাজনীতি ভর করল। বিরোধী কুচক্রী মহল সুযোগ খুঁজতে থাকল। সরকারের ভাষায়, জামায়াত-শিবির-বিএনপি-ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা সাধারণ ছাত্রদের মাঝে মিশে গিয়ে আন্দোলন বেগবান করার চেষ্টা করল। ১৬, ১৭, ১৮ জুলাইয়ের আন্দোলনে বলতে গেলে সব শ্রেণির ছাত্রই অংশগ্রহণ করল। সেই সুযোগে কুচক্রী মহল অনুপ্রবেশ করল, ভাঙচুর করল রাষ্ট্রীয় সম্পদ, সরকার জনগণের জানমাল রক্ষার্থে বলপ্রয়োগ করল, ঝরে যেতে থাকল সাধারণ ছাত্রসহ সাধারণ মানুষের জীবন। কুচক্রী মহল উৎসাহ ফিরে পেল, ধ্বংসযজ্ঞে মেতে গেল অধিক আগ্রহ নিয়ে।
বৃহস্পতিবার ১৮ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কোটা সংস্কার করে রায় দিল। ছাত্রদের যে দাবি ছিল এই রায় প্রায় তার কাছাকাছি, এককথায় বলতে গেলে ছাত্রদের দাবি পূরণ হলো। শুক্র ও শনিবার ১৯ ও ২০ জুলাই যে আন্দোলন হলো, সেখানে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের কোনো অংশগ্রহণই ছিল না। এখানে ছাত্র আন্দোলনের রাজনীতির মধ্যে ‘পলিটিকস’ ঢুকে গেল। আরও ঝরে যেতে লাগল অগণিত প্রাণ।
সরকার কারফিউ জারি করল, পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এল। তবে মানুষ প্রায় ১০ দিন পরিস্থিতির কাছে জিম্মি হয়ে ঘরে আবদ্ধ হয়ে পড়ল। নষ্ট হলো রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ। রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি নষ্ট হলো বিদেশিদের কাছে, একে অপরের প্রতি আস্থা নষ্ট হলো। দূরত্ব তৈরি হলো ছাত্র-জনতা ও সরকারের মধ্যে। মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গেল সাধারণ ছাত্রসমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা।
নির্বাহী বিভাগ থেকে প্রথমেই ছাত্রদের আশ্বস্ত করা উচিত ছিল—কোটা সংস্কার আন্দোলন যৌক্তিক এবং কোটার পুনর্বিন্যাস কীভাবে করা হবে। ছাত্রলীগ যদি কোটা আন্দোলনের পক্ষে মতামত দিত এই বলে যে, যৌক্তিক সংস্কারের পক্ষে সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে তারা আছে, তাহলে এই বিয়োগান্ত ও ধ্বংসযজ্ঞের মুখোমুখি হতো না দেশ।
নির্বাহী বিভাগের বিলম্ব, বোধোদয়, বিচার বিভাগের দীর্ঘসূত্রতা, ছাত্রলীগের শক্তি প্রয়োগের প্রবণতা, আন্দোলনকারীদের বিরোধী পক্ষ থেকে কু-পরামর্শ নেওয়ার পরিণতি—আজকের বাংলাদেশ। এই দায় থেকে পুরোপুরি কেউই মুক্ত হতে পারবে না। সাধারণ ছাত্ররা যে ব্যানারে আন্দোলন করেছিল, সেই ব্যানারটি যে সাধারণ ছাত্রদের নয়, এই ব্যানারের মধ্যে রাজনীতি আছে এবং রাজনীতির মধ্যে ‘পলিটিকস’ আছে, এটাও সবাই বুঝে গেছে।
এখানে ধ্বংসযজ্ঞ করার জন্য বিরোধী পক্ষ থেকে যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, তারা প্রায় সবাই টোকাই, কিশোর গ্যাং কিংবা ভবঘুরে বখাটে লোকজন। আরশোলা-টিকটিকির মতো ঘুরে বেড়ায় আমাদের সমাজে কিছু সুযোগসন্ধানী মানুষ, তারা অগ্রপশ্চাৎ কোনো কিছু ভাবে না। কোনটা রাষ্ট্রীয় সম্পদ, কোনটা ধ্বংস করলে কী হবে—এই সবের বুঝ তাদের মধ্যে নেই, তারাই নেমে পড়েছিল ধ্বংসযজ্ঞে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনটি ছিল যৌক্তিক। বিভিন্ন কার্যকলাপ, নোংরা রাজনীতি, ক্ষমতাসীনদের সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত না নেওয়া, আইন বিভাগের অদূরদর্শিতা, ছাত্রছাত্রীদের রাষ্ট্রীয় আইনকানুন সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান না থাকার কারণে যৌক্তিক আন্দোলনের করুণ পরিণতি হলো। ছাত্রদের দাবি আদায় হলো ঠিকই, মাঝখান থেকে ঝরে গেল দুই শতাধিক মানুষের প্রাণ, আহত হলো সহস্রাধিক নিরীহ মানুষ। রাষ্ট্র হারাল কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ। ভাবমূর্তি নষ্টসহ আস্থার সংকট তৈরি হলো।
এর থেকে শিক্ষা নিতে হবে সবার—যৌক্তিক দাবির প্রতি সবার সমর্থন থাকতে হবে, আলোচনা ও রাষ্ট্রীয় আইনের মাধ্যমে সবকিছু সমাধান করতে হবে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য।
লেখক: প্রকৌশলী
আমাদের এই শ্রমঘন সমাজে জুতসই একটি কাজ খুঁজে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। নিজের যোগ্যতা, পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে পছন্দমতো চাকরি করা—মানুষের সারা জীবনের আকাঙ্ক্ষা। শিক্ষাজীবন থেকেই আমাদের সমাজের মানুষ ব্যস্ত থাকে ভবিষ্যতে কী কাজ করবে, কোন ধরনের চাকরি করবে, তা নিয়ে। সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি থাকে সরকারি কোনো উচ্চপদে চাকরির জন্য। সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা অথবা করপোরেশনে চাকরি করার ক্ষেত্রে অধিকতর মেধাবীরা প্রস্তুতি নিতে থাকে শিক্ষাজীবন থেকেই।
এখানে দোষের কিছু নেই, নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তুলে কেউ যদি যথাযোগ্য চাকরি পায়, তখন সে তার মেধার বিকাশ ঘটাতে পারবে কর্মক্ষেত্রে, এ ব্যাপারে কারও কোনো দ্বিমত নেই।
আমাদের দেশে উল্লিখিত সরকার বা রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত কর্মক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে কোটাপ্রথা প্রচলিত আছে। আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় ৫৬ শতাংশ জনবল নিয়োগ হতো কোটার বিপরীতে, ৪৬ শতাংশ নিয়োগ হতো মেধার ভিত্তিতে। এই কোটার মধ্যে ৩০ শতাংশ নিয়োগ হতো মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পোষ্যদের মধ্য থেকে। কিন্তু কোনো দিনই এই ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পূরণ হতো না, পূরণ না হওয়া পদের সংখ্যাকে মেধার মধ্য থেকে নিয়োগ দেওয়া হতো না। এখানে যা ক্ষতি হয়েছে—মেধাবীরা চাকরি পায়নি, সরকারের বিভিন্ন সংস্থায় বছরের পর বছর পদ খালি থেকেছে, কাজের বিঘ্ন ঘটেছে বিভিন্ন সংস্থায়।
২০১৮ সালে কোটা সংস্কারের পক্ষে আন্দোলন হয়। নির্বাহী বিভাগ থেকে কোটাপ্রথা বাতিল করা হয়। সংস্কার না করে বাতিল করে আমাদের দেশে অনগ্রসর মানুষের অধিকারকে ক্ষুণ্ন করা হলো। এই কোটা বাতিলের বিপক্ষে তখন ছাত্ররা কোনো আন্দোলন করল না, কোনো দাবি তুলল না। আন্দোলনকারীরা কি স্বার্থপর ছিল? নিজেদের স্বার্থ হাসিল হওয়ার পরে পিছিয়ে পড়া মানুষদের কথা তারা ভুলে গেল?
এই কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপনের বিপরীতে হাইকোর্টে মামলা করা হলো। মামলার প্রাথমিক আদেশে কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপনকে বাতিল করে আদেশ দেওয়া হলো। ছাত্রদের মাঝে অসন্তোষ তৈরি হলো। সরকারপক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা হলো। আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশের কার্যকারিতা স্থিরকরণ করল, অর্থাৎ আদেশের কোনো কার্যকারিতা থাকল না। হাইকোর্ট থেকে পূর্ণাঙ্গ রায় দেওয়ার পরে আপিল বিভাগ একটি দীর্ঘ সময় নিয়ে শুনানির ব্যবস্থা করল। ছাত্রদের মধ্যে ক্ষোভ চরম আকার ধারণ করল। অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস এ ক্ষেত্রে হাইকোর্টের দুই পর্যায়ের যে আদেশ দেওয়া হলো, সে ব্যাপারে তেমন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারল না। বাস্তব অবস্থা অনুধাবন করতে ব্যর্থ হলো আপিল বিভাগ।
নির্বাহী বিভাগ থেকে ছাত্রদের বোঝাতে ব্যর্থ হলো যে বিচার বিভাগে কোনো ব্যাপারে শুনানি চলমান থাকলে সে ব্যাপারে আইন বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগ তাৎক্ষণিক কোনো আইন পাস করতে পারে না। নির্বাহী বিভাগ বা আইন বিভাগের যেকোনো সিদ্ধান্তের ব্যাপারে বিচার বিভাগে চ্যালেঞ্জ হতে পারে। বিচার বিভাগের চূড়ান্ত রায় চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।
এ বছর ১৪ ও ১৫ জুলাই সাধারণ ছাত্র আন্দোলন যখন দানা বাঁধছে, তখন ছাত্রলীগ ও সাধারণ ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষ হলো। সাধারণ ছাত্রদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ল। যারা কোটা সংস্কারের পক্ষে, তাদের মাঝে বিরোধী রাজনীতি ভর করল। বিরোধী কুচক্রী মহল সুযোগ খুঁজতে থাকল। সরকারের ভাষায়, জামায়াত-শিবির-বিএনপি-ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা সাধারণ ছাত্রদের মাঝে মিশে গিয়ে আন্দোলন বেগবান করার চেষ্টা করল। ১৬, ১৭, ১৮ জুলাইয়ের আন্দোলনে বলতে গেলে সব শ্রেণির ছাত্রই অংশগ্রহণ করল। সেই সুযোগে কুচক্রী মহল অনুপ্রবেশ করল, ভাঙচুর করল রাষ্ট্রীয় সম্পদ, সরকার জনগণের জানমাল রক্ষার্থে বলপ্রয়োগ করল, ঝরে যেতে থাকল সাধারণ ছাত্রসহ সাধারণ মানুষের জীবন। কুচক্রী মহল উৎসাহ ফিরে পেল, ধ্বংসযজ্ঞে মেতে গেল অধিক আগ্রহ নিয়ে।
বৃহস্পতিবার ১৮ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কোটা সংস্কার করে রায় দিল। ছাত্রদের যে দাবি ছিল এই রায় প্রায় তার কাছাকাছি, এককথায় বলতে গেলে ছাত্রদের দাবি পূরণ হলো। শুক্র ও শনিবার ১৯ ও ২০ জুলাই যে আন্দোলন হলো, সেখানে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের কোনো অংশগ্রহণই ছিল না। এখানে ছাত্র আন্দোলনের রাজনীতির মধ্যে ‘পলিটিকস’ ঢুকে গেল। আরও ঝরে যেতে লাগল অগণিত প্রাণ।
সরকার কারফিউ জারি করল, পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এল। তবে মানুষ প্রায় ১০ দিন পরিস্থিতির কাছে জিম্মি হয়ে ঘরে আবদ্ধ হয়ে পড়ল। নষ্ট হলো রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ। রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি নষ্ট হলো বিদেশিদের কাছে, একে অপরের প্রতি আস্থা নষ্ট হলো। দূরত্ব তৈরি হলো ছাত্র-জনতা ও সরকারের মধ্যে। মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গেল সাধারণ ছাত্রসমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা।
নির্বাহী বিভাগ থেকে প্রথমেই ছাত্রদের আশ্বস্ত করা উচিত ছিল—কোটা সংস্কার আন্দোলন যৌক্তিক এবং কোটার পুনর্বিন্যাস কীভাবে করা হবে। ছাত্রলীগ যদি কোটা আন্দোলনের পক্ষে মতামত দিত এই বলে যে, যৌক্তিক সংস্কারের পক্ষে সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে তারা আছে, তাহলে এই বিয়োগান্ত ও ধ্বংসযজ্ঞের মুখোমুখি হতো না দেশ।
নির্বাহী বিভাগের বিলম্ব, বোধোদয়, বিচার বিভাগের দীর্ঘসূত্রতা, ছাত্রলীগের শক্তি প্রয়োগের প্রবণতা, আন্দোলনকারীদের বিরোধী পক্ষ থেকে কু-পরামর্শ নেওয়ার পরিণতি—আজকের বাংলাদেশ। এই দায় থেকে পুরোপুরি কেউই মুক্ত হতে পারবে না। সাধারণ ছাত্ররা যে ব্যানারে আন্দোলন করেছিল, সেই ব্যানারটি যে সাধারণ ছাত্রদের নয়, এই ব্যানারের মধ্যে রাজনীতি আছে এবং রাজনীতির মধ্যে ‘পলিটিকস’ আছে, এটাও সবাই বুঝে গেছে।
এখানে ধ্বংসযজ্ঞ করার জন্য বিরোধী পক্ষ থেকে যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, তারা প্রায় সবাই টোকাই, কিশোর গ্যাং কিংবা ভবঘুরে বখাটে লোকজন। আরশোলা-টিকটিকির মতো ঘুরে বেড়ায় আমাদের সমাজে কিছু সুযোগসন্ধানী মানুষ, তারা অগ্রপশ্চাৎ কোনো কিছু ভাবে না। কোনটা রাষ্ট্রীয় সম্পদ, কোনটা ধ্বংস করলে কী হবে—এই সবের বুঝ তাদের মধ্যে নেই, তারাই নেমে পড়েছিল ধ্বংসযজ্ঞে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনটি ছিল যৌক্তিক। বিভিন্ন কার্যকলাপ, নোংরা রাজনীতি, ক্ষমতাসীনদের সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত না নেওয়া, আইন বিভাগের অদূরদর্শিতা, ছাত্রছাত্রীদের রাষ্ট্রীয় আইনকানুন সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান না থাকার কারণে যৌক্তিক আন্দোলনের করুণ পরিণতি হলো। ছাত্রদের দাবি আদায় হলো ঠিকই, মাঝখান থেকে ঝরে গেল দুই শতাধিক মানুষের প্রাণ, আহত হলো সহস্রাধিক নিরীহ মানুষ। রাষ্ট্র হারাল কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ। ভাবমূর্তি নষ্টসহ আস্থার সংকট তৈরি হলো।
এর থেকে শিক্ষা নিতে হবে সবার—যৌক্তিক দাবির প্রতি সবার সমর্থন থাকতে হবে, আলোচনা ও রাষ্ট্রীয় আইনের মাধ্যমে সবকিছু সমাধান করতে হবে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য।
লেখক: প্রকৌশলী
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৬ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৬ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১০ দিন আগে