চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসেই ৩ হাজার ৩১৯ কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে। আদায়ের প্রবৃদ্ধি হলেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না কোনোমতেই। এনবিআরের তৈরি চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট মাসের রাজস্ব আদায়সংক্রান্ত প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সামনে আদায় বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করলেও বিদ্যমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে শঙ্কাও প্রকাশ করছেন অনেকে।

এনবিআর সূত্র জানায়, গত আগস্ট মাসে ২১ দশমিক ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। গত দুই মাসে রাজস্বের তিনটি খাত আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক খাতে মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ৪০ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। এ সময়ে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৩ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে এনবিআর আদায় করেছিল ৩৩ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। শুধু আগস্ট মাসেই আদায় হয়েছে ২২ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি ১৯ দশমিক ১২ শতাংশ।

এনবিআরের পরিসংখ্যান বিভাগ সূত্র জানায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে শুল্ক খাতের আমদানি ও রপ্তানি পর্যায়ে মোট রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু জুলাই-আগস্টের লক্ষ্যমাত্রা ১৫ হাজার ১৭২ কোটি টাকা। আর এ সময়ে আদায় হয়েছে ১৪ হাজার ৮৬৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। প্রবৃদ্ধি ২৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ঘাটতি ৩০৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

চলতি অর্থবছরের ভ্যাট আদায়ের মোট লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৩৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জুলাই-আগস্টের লক্ষ্যমাত্রা ১৬ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ১৫ হাজার ৩৩ কোটি ৭ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আদায় কম ১ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা।

এনবিআর সূত্র আরও জানায়, জুলাই-আগস্টে আয়কর ও ভ্রমণ কর খাতে ১১ হাজার ৯৯০ কোটি টাকার বিপরীতে আদায় হয়েছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। ঘাটতি ১ হাজার ১১৬ কোটি ১১ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের দুই মাসে তিন বিভাগে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার ৯২ দশমিক ৩৮ শতাংশ আদায় হয়েছে।

এনবিআরের কর্মকর্তারা জানান, অর্থবছরের শুরুর দিকে রাজস্ব আদায়ের হার একটু কম থাকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়তে থাকে। সামনের দিনগুলোতে এ হার বাড়বে। এ ব্যাপারে আয়কর বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সামনে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় আসছে। নভেম্বর মাসের মধ্যেই ব্যক্তি করদাতারা তাঁদের রিটার্ন জমা দেবেন। তখন আয়কর খাতে রাজস্বের একটি বড় অংশ জমা হবে। ভ্যাট শাখার একজন সদস্য জানান, ভ্যাট আদায়ের হার আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এবার বেশি হবে। নতুন নতুন অনেক প্রতিষ্ঠান ভ্যাটের নিবন্ধন নিচ্ছে। তারা ভ্যাটের আওতায় আসছে। ফলে এ খাতে সামনে রাজস্ব আয় বাড়বে।

এনবিআর সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় পৌনে ৪ লাখ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরে তা ছিল প্রায় ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। সেটিরও একটি বড় অংশ আদায় হয়নি। কয়েক বছর ধরেই রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে না, বরং ঘাটতি পড়ছে। রাজস্ব খাতের বিশ্লেষকেরা জানান, এবারের বড় লক্ষ্যমাত্রা হলেও আদায়ে রাতারাতি বড় পরিবর্তন হবে এমনটাও আশা করার সুযোগ নেই। কারণ বিশ্ব অর্থনীতি টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে।