মৃত্যুঞ্জয় রায়
জলবায়ু পরিবর্তন এখন বিশ্ব খাদ্য উৎপাদনের জন্য এক বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃষি প্রতিবেশের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দিনে দিনে প্রকট হয়ে উঠছে। এ দেশেও শীতকালের দৈর্ঘ্য ও তীব্রতা কমে যাওয়ায় গম উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে, গবেষকদের তাই এখন পরিবর্তিত জলবায়ুতে খাপ খাওয়ানোর জন্য তাপ সহনশীল জাতের গম উদ্ভাবন করতে হচ্ছে। চরম শৈত্যপ্রবাহে ধানের বীজতলা, সরিষা, গম, আমের মুকুল ইত্যাদি নষ্ট হচ্ছে। এমনকি সে কারণে অনেক সময় ধানও চিটা হয়ে যাচ্ছে। তীব্র গরমে বেগুনের ফুল থেকে ফল হচ্ছে না, ধানের ফুল থেকে ধান হচ্ছে না, অনেক ফসলের ফুলের রেণু শুকিয়ে যাচ্ছে, খরায় মাটি ফেটে চৌচির হচ্ছে, শুকিয়ে যাচ্ছে মাঠের ফসল, মাটির নিচ থেকে হাজার চেষ্টায়ও পানি উঠছে না। ফলে সেচ দিয়ে ফসল বাঁচানো যাচ্ছে না। আবার সেচের পানির প্রাপ্যতা কমে যাওয়ায় তার সঙ্গে মাটির নিচ থেকে উঠে আসছে সিসা, আর্সেনিকের মতো ভারী ধাতুগুলো যা আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে, খাদ্যকে অনিরাপদ করছে।
জলবায়ু পরিবর্তনে এখন কৃষির এক মারাত্মক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে অনিয়মিত বৃষ্টিপাত। যে সময়ে বৃষ্টি হওয়ার কথা, সে সময় বৃষ্টি হচ্ছে না, আর যখন বৃষ্টি দরকার নেই, তখন বৃষ্টি হচ্ছে। কখনো কখনো অতিবৃষ্টিতে মাঠঘাট, ফসলের খেত তলিয়ে যাচ্ছে। কয়েক মাস আগে কয়েক দিন ধরে হওয়া বৃষ্টিতে শুধু শহর ও শহরতলি তলায়নি, তলিয়েছে উত্তরবঙ্গসহ অনেক ফসলের খেত। এ বছরের জানুয়ারিতেও তীব্র শৈত্যপ্রবাহের মধ্যে দক্ষিণবঙ্গে হানা দিয়েছে বৃষ্টি। এতে ব্যাহত হয়েছে রবিশস্য উৎপাদন। কৃষকেরা যে সময় খেত থেকে সরিষা ও আলু তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, সে সময় এই বৃষ্টিপাতে তারা ক্ষতির মুখে পড়ছেন।
এবার আমন ধানের সবুজের গালিচায়ও ঢেউ তুলছিল নিম্নচাপের ঝোড়ো হাওয়া। সেই সময়ের অতিবৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ায় সেই সব ফুলের পরাগায়ন বিঘ্নিত হয়ে কিছু ধান চিটা হয়, বৃষ্টি আরও চললে নিচু জমির ধান তলিয়ে যাবে। পাহাড়ি ঢল ও বন্যার শঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। প্রতিবছর নভেম্বর থেকে মে পর্যন্ত উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফসল ও উদ্ভিদ। পূর্বের তুলনায় সাম্প্রতিক সময়ে লবণাক্ত এলাকা বেড়েছে। দেশের মোট জমির ২৫ শতাংশ উপকূলীয় এলাকায় পড়েছে। এসব জমির প্রায় ২০ লাখ হেক্টর জমি লবণাক্ততায় আক্রান্ত। সাগরের পানির উচ্চতা বাড়লে লবণাক্ততা আরও বাড়বে। আগে ১১টি জেলায় এই লবণাক্ততা থাকলেও বর্তমানে তা ১৯টি জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। সে জন্য কৃষিবিজ্ঞানীরা এখন লবণ সহনশীল বিভিন্ন ফসলের জাত উদ্ভাবনে ব্যস্ত রয়েছেন। ভবিষ্যৎ খাদ্য নিরাপত্তাকে সুরক্ষিত রাখার ব্যাপারে গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো নানা প্রযুক্তি উদ্ভাবন করছে। তবে যত দ্রুত আর যেভাবে জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে, তত দ্রুত কোনো অভিযোজনক্ষম ফসলের জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা সম্ভব নয়।
কৃষি আবহাওয়াবিদদের পক্ষেও প্রকৃতি ও আবহাওয়ার এমন খামখেয়ালিপনা বুঝে ওঠা কষ্টকর হয়ে উঠেছে, যে কারণে আগাম সতর্কতা বা পূর্বাভাস প্রদান করা অনেক সময় সঠিকভাবে সম্ভব হচ্ছে না। আবহাওয়ার এরূপ খামখেয়ালি আচরণে প্রতিনিয়ত তাই শঙ্কার মুখে রয়েছে এ দেশের কৃষক ও কৃষি খাত। প্রকৃতিনির্ভর চাষাবাদের এরূপ অনিশ্চয়তা ও দুর্যোগ মোকাবিলা করে দেশের মানুষের জন্য খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখা এখন এক বড় চ্যালেঞ্জ। উন্নত বিশ্বের মতো আমাদের দেশে এখনো সেইরূপ আধুনিক ও যন্ত্রনির্ভর চাষাবাদের ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। আমরা প্রকৃতিগত কারণেই গ্রিনহাউস তথা কাচের ঘরের ভেতরে ফসল চাষ করতে অভ্যস্ত নই। আমাদের পানির জন্য চাতকের মতো চেয়ে থাকতে হয় আকাশের দিকে, অপেক্ষা করতে হয় বৃষ্টির জন্য। এখনো প্রায় শতভাগ আমন ধানের চাষ হয় বৃষ্টিনির্ভর নিয়মে। বৃষ্টি না হলে সেই মৌসুমে ধানের ফলন কমে যায়। চরম পরিস্থিতিতে কৃষকেরা কিছু ক্ষেত্রে সম্পূরক সেচ দিয়ে আমন ধান রক্ষার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেই সুযোগও থাকে সীমিত। কেননা, সেচনির্ভর বোরো ধান চাষের পর অনেক সেচমালিক সেচযন্ত্র গুটিয়ে ফেলেন, সেচ নালাগুলো ভেঙে ফেলেন।
হঠাৎ খুব গরম পড়লে আমরা ঘরে পাখা চালিয়ে গরম থেকে বাঁচার চেষ্টা করি, চরম শীত পড়লে গায়ে চাপাই সোয়েটার। এটাই অভিযোজন বা অ্যাডাপ্টেশন। কিন্তু মাঠে দাঁড়িয়ে থাকা ফসলের গাছগুলো কী করবে? তাদের তো এরূপ বিরূপ ও চরম আবহাওয়া সহ্য করে সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এতে ফসলের ক্ষতি হয়। অসহায় কৃষকের সেই সব দেখে চোখের জল ফেলা ছাড়া আর কিইবা করার থাকে?
দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে যাঁরা ভাবেন, তাঁদের কৃষির প্রতিটি খাদ্যের উৎপাদন নিয়েই ভাবতে হয়। এ দেশের মানুষের যা বাৎসরিক চাহিদা, সে অনুযায়ী উৎপাদন করাটাই কৃষি উৎপাদক ও নীতিনির্ধারকদের মূল লক্ষ্য। কিন্তু একদিকে যেমন চাষের জমি কমছে, অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কৃষির সেই কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন অর্জনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চাইলেই রাতারাতি উৎপাদনকে চাহিদামতো সম্পূর্ণ বাড়িয়ে নেওয়া যায় না। এর জন্য কৌশলগত পরিকল্পনা নিয়ে প্রতিটি ফসলের ফলন বাড়িয়ে মোট উৎপাদন বাড়াতে হয়। অর্থাৎ, যে জমিতে আগের মৌসুমে যে ফসলের ফলন ছিল হেক্টরে পাঁচ টন, এ বছর সেই মৌসুমে তার ফলন হতে হবে তার চেয়ে বেশি। এর জন্য দরকার আরও ফলনশীল জাত ও প্রযুক্তি। উৎপাদনশীলতার পাশাপাশি রোগ-পোকার আক্রমণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সেই বর্ধিত ফলনপ্রাপ্তি নিশ্চিতের জন্য প্রয়োজন হয়ে পড়েছে জলবায়ুর অভিঘাত সহনশীল প্রযুক্তি তথা অভিযোজন কৌশলের। সৌভাগ্য যে, এ দেশের কৃষিক্ষেত্রে এরূপ পরিস্থিতিতে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য যতগুলো অভিযোজন কৌশল উদ্ভাবিত হয়েছে, সেভাবে পৃথিবীর খুব কম দেশেই তা হয়েছে। আমরা এখন জলমগ্ন জমিতেও ফসল উৎপাদন করতে পারছি, লবণাক্ত জমিতেও ফসল ফলছে, খরা পরিস্থিতি মোকাবিলা করার মতো বেশ কিছু ফসলের জাত ও প্রযুক্তি এখন আমাদের দেশের গবেষকেরা উদ্ভাবন করেছেন। তাই কৃষিক্ষেত্রে জলবায়ু-অভিযোজন কলাকৌশল, যা এ পর্যন্ত আমাদের হাতে রয়েছে, সেগুলোর উত্তম চর্চার মাধ্যমে কৃষককে সেবা দেওয়ার সুযোগ আছে।
তবে এতে আত্মতুষ্টির অবকাশ নেই। কেননা, জলবায়ু তার পরিবর্তনের ধরন ও তীব্রতা দিনে দিনে বদলাচ্ছে। তাই ইতিমধ্যে উদ্ভাবিত প্রযুক্তিগুলোকে সেই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে, নতুন নতুন কৌশল উদ্ভাবন করতে হবে। আশার কথা যে, এবারের কপ-২৮ সম্মেলনে এই প্রথম অভিযোজন তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেই তহবিল থেকে কৃষিক্ষেত্রে নানামুখী বাস্তবতা পর্যালোচনা করে আরও আধুনিক ও টেকসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনে গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা ও নির্দেশনা দিতে হবে। উদ্ভাবিত অভিযোজন কৌশলগুলোও যাতে কৃষকদের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছায়, তারা যেন সেগুলো ব্যবহার করে দেশের খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখতে পারে, তার ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে হবে। স্বচ্ছতার সঙ্গে এই তহবিল সদ্ব্যবহারের এটাই সুযোগ।
লেখক: কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক
জলবায়ু পরিবর্তন এখন বিশ্ব খাদ্য উৎপাদনের জন্য এক বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃষি প্রতিবেশের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দিনে দিনে প্রকট হয়ে উঠছে। এ দেশেও শীতকালের দৈর্ঘ্য ও তীব্রতা কমে যাওয়ায় গম উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে, গবেষকদের তাই এখন পরিবর্তিত জলবায়ুতে খাপ খাওয়ানোর জন্য তাপ সহনশীল জাতের গম উদ্ভাবন করতে হচ্ছে। চরম শৈত্যপ্রবাহে ধানের বীজতলা, সরিষা, গম, আমের মুকুল ইত্যাদি নষ্ট হচ্ছে। এমনকি সে কারণে অনেক সময় ধানও চিটা হয়ে যাচ্ছে। তীব্র গরমে বেগুনের ফুল থেকে ফল হচ্ছে না, ধানের ফুল থেকে ধান হচ্ছে না, অনেক ফসলের ফুলের রেণু শুকিয়ে যাচ্ছে, খরায় মাটি ফেটে চৌচির হচ্ছে, শুকিয়ে যাচ্ছে মাঠের ফসল, মাটির নিচ থেকে হাজার চেষ্টায়ও পানি উঠছে না। ফলে সেচ দিয়ে ফসল বাঁচানো যাচ্ছে না। আবার সেচের পানির প্রাপ্যতা কমে যাওয়ায় তার সঙ্গে মাটির নিচ থেকে উঠে আসছে সিসা, আর্সেনিকের মতো ভারী ধাতুগুলো যা আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে, খাদ্যকে অনিরাপদ করছে।
জলবায়ু পরিবর্তনে এখন কৃষির এক মারাত্মক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে অনিয়মিত বৃষ্টিপাত। যে সময়ে বৃষ্টি হওয়ার কথা, সে সময় বৃষ্টি হচ্ছে না, আর যখন বৃষ্টি দরকার নেই, তখন বৃষ্টি হচ্ছে। কখনো কখনো অতিবৃষ্টিতে মাঠঘাট, ফসলের খেত তলিয়ে যাচ্ছে। কয়েক মাস আগে কয়েক দিন ধরে হওয়া বৃষ্টিতে শুধু শহর ও শহরতলি তলায়নি, তলিয়েছে উত্তরবঙ্গসহ অনেক ফসলের খেত। এ বছরের জানুয়ারিতেও তীব্র শৈত্যপ্রবাহের মধ্যে দক্ষিণবঙ্গে হানা দিয়েছে বৃষ্টি। এতে ব্যাহত হয়েছে রবিশস্য উৎপাদন। কৃষকেরা যে সময় খেত থেকে সরিষা ও আলু তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, সে সময় এই বৃষ্টিপাতে তারা ক্ষতির মুখে পড়ছেন।
এবার আমন ধানের সবুজের গালিচায়ও ঢেউ তুলছিল নিম্নচাপের ঝোড়ো হাওয়া। সেই সময়ের অতিবৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ায় সেই সব ফুলের পরাগায়ন বিঘ্নিত হয়ে কিছু ধান চিটা হয়, বৃষ্টি আরও চললে নিচু জমির ধান তলিয়ে যাবে। পাহাড়ি ঢল ও বন্যার শঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। প্রতিবছর নভেম্বর থেকে মে পর্যন্ত উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফসল ও উদ্ভিদ। পূর্বের তুলনায় সাম্প্রতিক সময়ে লবণাক্ত এলাকা বেড়েছে। দেশের মোট জমির ২৫ শতাংশ উপকূলীয় এলাকায় পড়েছে। এসব জমির প্রায় ২০ লাখ হেক্টর জমি লবণাক্ততায় আক্রান্ত। সাগরের পানির উচ্চতা বাড়লে লবণাক্ততা আরও বাড়বে। আগে ১১টি জেলায় এই লবণাক্ততা থাকলেও বর্তমানে তা ১৯টি জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। সে জন্য কৃষিবিজ্ঞানীরা এখন লবণ সহনশীল বিভিন্ন ফসলের জাত উদ্ভাবনে ব্যস্ত রয়েছেন। ভবিষ্যৎ খাদ্য নিরাপত্তাকে সুরক্ষিত রাখার ব্যাপারে গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো নানা প্রযুক্তি উদ্ভাবন করছে। তবে যত দ্রুত আর যেভাবে জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে, তত দ্রুত কোনো অভিযোজনক্ষম ফসলের জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা সম্ভব নয়।
কৃষি আবহাওয়াবিদদের পক্ষেও প্রকৃতি ও আবহাওয়ার এমন খামখেয়ালিপনা বুঝে ওঠা কষ্টকর হয়ে উঠেছে, যে কারণে আগাম সতর্কতা বা পূর্বাভাস প্রদান করা অনেক সময় সঠিকভাবে সম্ভব হচ্ছে না। আবহাওয়ার এরূপ খামখেয়ালি আচরণে প্রতিনিয়ত তাই শঙ্কার মুখে রয়েছে এ দেশের কৃষক ও কৃষি খাত। প্রকৃতিনির্ভর চাষাবাদের এরূপ অনিশ্চয়তা ও দুর্যোগ মোকাবিলা করে দেশের মানুষের জন্য খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখা এখন এক বড় চ্যালেঞ্জ। উন্নত বিশ্বের মতো আমাদের দেশে এখনো সেইরূপ আধুনিক ও যন্ত্রনির্ভর চাষাবাদের ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। আমরা প্রকৃতিগত কারণেই গ্রিনহাউস তথা কাচের ঘরের ভেতরে ফসল চাষ করতে অভ্যস্ত নই। আমাদের পানির জন্য চাতকের মতো চেয়ে থাকতে হয় আকাশের দিকে, অপেক্ষা করতে হয় বৃষ্টির জন্য। এখনো প্রায় শতভাগ আমন ধানের চাষ হয় বৃষ্টিনির্ভর নিয়মে। বৃষ্টি না হলে সেই মৌসুমে ধানের ফলন কমে যায়। চরম পরিস্থিতিতে কৃষকেরা কিছু ক্ষেত্রে সম্পূরক সেচ দিয়ে আমন ধান রক্ষার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেই সুযোগও থাকে সীমিত। কেননা, সেচনির্ভর বোরো ধান চাষের পর অনেক সেচমালিক সেচযন্ত্র গুটিয়ে ফেলেন, সেচ নালাগুলো ভেঙে ফেলেন।
হঠাৎ খুব গরম পড়লে আমরা ঘরে পাখা চালিয়ে গরম থেকে বাঁচার চেষ্টা করি, চরম শীত পড়লে গায়ে চাপাই সোয়েটার। এটাই অভিযোজন বা অ্যাডাপ্টেশন। কিন্তু মাঠে দাঁড়িয়ে থাকা ফসলের গাছগুলো কী করবে? তাদের তো এরূপ বিরূপ ও চরম আবহাওয়া সহ্য করে সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এতে ফসলের ক্ষতি হয়। অসহায় কৃষকের সেই সব দেখে চোখের জল ফেলা ছাড়া আর কিইবা করার থাকে?
দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে যাঁরা ভাবেন, তাঁদের কৃষির প্রতিটি খাদ্যের উৎপাদন নিয়েই ভাবতে হয়। এ দেশের মানুষের যা বাৎসরিক চাহিদা, সে অনুযায়ী উৎপাদন করাটাই কৃষি উৎপাদক ও নীতিনির্ধারকদের মূল লক্ষ্য। কিন্তু একদিকে যেমন চাষের জমি কমছে, অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কৃষির সেই কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন অর্জনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চাইলেই রাতারাতি উৎপাদনকে চাহিদামতো সম্পূর্ণ বাড়িয়ে নেওয়া যায় না। এর জন্য কৌশলগত পরিকল্পনা নিয়ে প্রতিটি ফসলের ফলন বাড়িয়ে মোট উৎপাদন বাড়াতে হয়। অর্থাৎ, যে জমিতে আগের মৌসুমে যে ফসলের ফলন ছিল হেক্টরে পাঁচ টন, এ বছর সেই মৌসুমে তার ফলন হতে হবে তার চেয়ে বেশি। এর জন্য দরকার আরও ফলনশীল জাত ও প্রযুক্তি। উৎপাদনশীলতার পাশাপাশি রোগ-পোকার আক্রমণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সেই বর্ধিত ফলনপ্রাপ্তি নিশ্চিতের জন্য প্রয়োজন হয়ে পড়েছে জলবায়ুর অভিঘাত সহনশীল প্রযুক্তি তথা অভিযোজন কৌশলের। সৌভাগ্য যে, এ দেশের কৃষিক্ষেত্রে এরূপ পরিস্থিতিতে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য যতগুলো অভিযোজন কৌশল উদ্ভাবিত হয়েছে, সেভাবে পৃথিবীর খুব কম দেশেই তা হয়েছে। আমরা এখন জলমগ্ন জমিতেও ফসল উৎপাদন করতে পারছি, লবণাক্ত জমিতেও ফসল ফলছে, খরা পরিস্থিতি মোকাবিলা করার মতো বেশ কিছু ফসলের জাত ও প্রযুক্তি এখন আমাদের দেশের গবেষকেরা উদ্ভাবন করেছেন। তাই কৃষিক্ষেত্রে জলবায়ু-অভিযোজন কলাকৌশল, যা এ পর্যন্ত আমাদের হাতে রয়েছে, সেগুলোর উত্তম চর্চার মাধ্যমে কৃষককে সেবা দেওয়ার সুযোগ আছে।
তবে এতে আত্মতুষ্টির অবকাশ নেই। কেননা, জলবায়ু তার পরিবর্তনের ধরন ও তীব্রতা দিনে দিনে বদলাচ্ছে। তাই ইতিমধ্যে উদ্ভাবিত প্রযুক্তিগুলোকে সেই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে, নতুন নতুন কৌশল উদ্ভাবন করতে হবে। আশার কথা যে, এবারের কপ-২৮ সম্মেলনে এই প্রথম অভিযোজন তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেই তহবিল থেকে কৃষিক্ষেত্রে নানামুখী বাস্তবতা পর্যালোচনা করে আরও আধুনিক ও টেকসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনে গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা ও নির্দেশনা দিতে হবে। উদ্ভাবিত অভিযোজন কৌশলগুলোও যাতে কৃষকদের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছায়, তারা যেন সেগুলো ব্যবহার করে দেশের খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখতে পারে, তার ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে হবে। স্বচ্ছতার সঙ্গে এই তহবিল সদ্ব্যবহারের এটাই সুযোগ।
লেখক: কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক
প্রবৃদ্ধির শীর্ষে থেকেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের দৌড়ে পিছিয়ে রয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ৫০ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়েছে
১ দিন আগেদুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি, উচ্চ করহারসহ ১৭ ধরনের বাধায় বিপর্যস্ত দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। রয়েছে সামাজিক সমস্যাও।
১ দিন আগেজমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৫ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৯ দিন আগে