মহিউদ্দিন খান মোহন
গণতন্ত্র ও সহনশীলতা পরস্পরবিরোধী কোনো বিষয় নয়; বরং একটি আরেকটির পরিপূরক। সহনশীলতা গণতন্ত্রের অন্যতম পূর্বশর্ত। পারস্পরিক সহনশীলতা ব্যতিরেকে গণতন্ত্র পূর্ণতা লাভ করতে পারে না। যে সমাজ বা রাষ্ট্রে রাজনৈতিক দল বা জনগণের মধ্যে সহনশীলতার অভাব থাকে, গণতন্ত্র সেখানে হয়ে পড়ে অর্থহীন। বলা যায় পঙ্গু। একজন পঙ্গু মানুষ যেমন স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারে না, তেমনি সহনশীলতাহীন পরিবেশে গণতন্ত্রও এগোতে পারে না। মুখ থুবড়ে পড়ে যায়। এই তিক্ত অভিজ্ঞতা আমাদের চেয়ে ভালো আর কাদের আছে? গণতন্ত্রের পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য সুধীজনেরা রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি সহনশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে থাকেন সব সময়। কিন্তু সেসব আহ্বান বায়বীয় বস্তুর মতোই ইথারে মিলিয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে যাঁদের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি, তাঁরা থাকেন নির্বিকার; অনেকটা এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে বের করে দেওয়ার মতো।
সেই চরম সত্যটি পুনরায় স্মরণ করিয়ে দিলেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সুপ্রিম কোর্ট আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি বলেছেন, ‘যদি আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, বহু দলে বিশ্বাস করি, তাহলে সহনশীল হতেই হবে। গণতন্ত্রে বিশ্বাস করব আর সহনশীল হব না, এটাকে গণতন্ত্রের চর্চা বলা যাবে না।’ (আজকের পত্রিকা, ১৬ আগস্ট, ২০২৩)
প্রধান বিচারপতির এই বক্তব্যের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। কেননা, গণতন্ত্র ও সহনশীলতা একটি ছাড়া আরেকটি অর্থহীন বা অসার। বিশ্ব বিখ্যাত চিন্তাবিদ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জন স্টুয়ার্ট মিল ১৮৬১ সালে প্রকাশিত তাঁর গ্রন্থ ‘রিপ্রেজেনটেটিভ গভর্নমেন্ট’, অর্থাৎ ‘প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার’-এ বলেছেন, ‘গণতন্ত্র বলতে সাধারণত দুটো ভিন্ন ধারণাকে জড়িয়ে ফেলা হয়। কোনটা সঠিক ধারণা তা আর তখন বোঝা যায় না। সংজ্ঞা অনুসারে গণতন্ত্রের বিশুদ্ধ ধারণা হচ্ছে সমান প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে সমগ্র জনসাধারণ কর্তৃক পরিচালিত সমগ্র জনসাধারণের সরকার।
কিন্তু সাধারণ লোকের ধারণা আর চিরাচরিত নীতি অনুসারে গণতন্ত্র হচ্ছে সীমায়িত প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে কেবল সংখ্যাগুরুদের দ্বারা পরিচালিত সমগ্র জনসাধারণের সরকার। প্রথমটি সব নাগরিকের সম-অধিকারভিত্তিক। কিন্তু শেষেরটি সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের বিশেষ অধিকারভিত্তিক সরকার, কারণ তাতে রাষ্ট্রের মধ্যে একমাত্র সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের যা কিছু সত্যিকার ক্ষমতা থাকে।
এটা বর্তমান নির্বাচন পদ্ধতিরই অনিবার্য কুফল, যাতে সংখ্যালঘুদের অধিকার মোটেই থাকে না।’ একই গ্রন্থে তিনি লিখেছেন, ‘গণতন্ত্রের অপরিহার্য অঙ্গ হচ্ছে সংখ্যালঘুকে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব দান করা। তা না হলে গণতন্ত্র হবে ভুয়া, মিথ্যা, অসার; তা ছাড়া অন্য কিছু হতেই পারে না।’ (মোহাম্মদ দরবেশ আলী খান অনূদিত ও বাংলা একাডেমি প্রকাশিত দ্বিতীয় সংস্করণ, ফেব্রুয়ারি ১৯৮৪; পৃষ্ঠা-১০০ ও ১০৬)
আজ থেকে ১৬২ বছর আগে জন স্টুয়ার্ট মিল গণতন্ত্রকে যেভাবে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছেন, তার সঙ্গে কি আমাদের গণতন্ত্রের কোনো মিল আছে। স্টুয়ার্ট মিল সংখ্যালঘুদের উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব দান করাকে অপরিহার্য বলেছেন। না হলে গণতন্ত্র ভুয়া, মিথ্যা ও অসার বলে প্রতীয়মান হবে। মিলের এই তত্ত্বের আয়নায় যদি আমাদের গণতন্ত্রকে দেখি তাহলে হতাশ না হয়ে কি পারা যায়? ওই তত্ত্ব অনুসারে বাংলাদেশে কখনোই গণতন্ত্র পরিপূর্ণতা পায়নি—এ কথা স্বীকার করতেই হবে। কারণ, এখানে সংখ্যালঘুদের মর্যাদা দেওয়া তো দূরের কথা, তাদের ধর্তব্যের মধ্যেই আনা হয় না।
ফলে এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠদের একনায়কত্ব কায়েম হয়ে আসছে গোড়া থেকেই। গণতন্ত্রের মূল অভীষ্ট হলো জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করা। আর তা করতে হলে সংখ্যাগুরু এবং সংখ্যালঘু উভয়কেই সমমর্যাদা দিতে হবে। সরকার পরিচালনা করবে সংখ্যাগরিষ্ঠরা, তবে সে ক্ষেত্রে সংখ্যালঘুদের ভূমিকাকেও স্বীকার করে নিতে হবে। সেই সঙ্গে থাকতে হবে বাক্স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের সমান অধিকার। সংখ্যাগুরুরা যেমন তাদের মতামত বিনা বাধায় প্রকাশ করতে পারে, তেমনি সংখ্যালঘুদেরও তাদের মতামত নির্বিঘ্নে প্রকাশ করতে দিতে হবে। এটা সংখ্যালঘুদের জন্য সুযোগ নয়, অধিকার। সেই অধিকার থেকে কাউকে বঞ্চিত করার অধিকার কারও নেই, থাকতে পারে না।
কিন্তু আমাদের দেশে বিরাজ করছে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। এখানে সংখ্যালঘু, মানে সরকারবিরোধীদের বিবেচনা করা হয় শত্রু হিসেবে। ফলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা পর্যবসিত হয় শত্রুতায়। আর এক পক্ষ যখন আরেক পক্ষকে শত্রু বলে মনে করে, তখন তারা একে অপরকে যেকোনো মূল্যে নিশ্চিহ্ন করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়। আর এখানেই নিহিত আমাদের গণতন্ত্রের ব্যর্থতার মূল কারণ। এ কথা স্বীকার না করে উপায় নেই যে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহনশীলতার অভাব প্রায় মন্বন্তরের পর্যায়ে চলে গেছে। এক দল আরেক দলকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা বা পরাস্ত করার পরিবর্তে পেশিশক্তি প্রয়োগে মাঠছাড়া করতে, প্রকারান্তরে নিশ্চিহ্ন করে দিতেই বেশি আগ্রহী। তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা একেবারেই মেনে নিতে পারে না।
আবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা ততটুকু সহ্য করতে রাজি, যতটুকু তার ক্ষমতার মসনদকে স্পর্শ না করে। ক্ষমতার প্রতি এই যে উদগ্রতা, তা একধরনের রোগ। এই রোগে আক্রান্তরা মনে করে ক্ষমতা ‘ওয়ানটাইম বলপয়েন্ট পেনে’র মতো। একবারেই বুঝি শেষ। তাই একবার ক্ষমতায় যেতে পারলে সেখান থেকে নেমে যাওয়ার চিন্তা তাঁরা বাদ দিয়ে বসেন। তখন তাঁদের ভাবনাচিন্তা হয়ে দাঁড়ায় ক্ষমতাকে কীভাবে স্থায়িত্ব দেওয়া যায়। এই ভাবনায় আচ্ছন্ন হওয়ার কারণে তাঁদের সময় ব্যয় হয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকার পরিকল্পনা ও কলাকৌশল উদ্ভাবনে। ফলে তাঁরা জনগণের কল্যাণে মনোনিবেশ করতে পারেন না। আর ক্ষমতা কুক্ষিগত করার এই অসুস্থ চিন্তাই রাজনীতিতে অসহনশীল পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ার মূল কারণ।
প্রশ্নটা অনেকের মনেই খোঁচা দেয়—রাজনৈতিক দলগুলো কেন ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। তাদের ভাবভঙ্গি দেখলে মনে হয় একধরনের ভীতি ঘিরে ধরে। ক্ষমতা ছাড়লে বিপদে পড়তে হবে—এমন ভাবনায় তারা আক্রান্ত যেন। অথচ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় এমনটি হওয়ার কথা নয়। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় যেহেতু জনগণের ইচ্ছাই শেষ কথা, তাহলে তাদের প্রতি আস্থা রাখা অপরিহার্য। কিন্তু অধিকাংশ সময় ক্ষমতাসীনেরা এমন আচরণ করেন, জনগণের প্রতি তাঁদের আস্থা আছে বলে প্রতীয়মান হয় না। সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের রাজনীতিকদের বক্তব্য-বিবৃতিতে ‘পালানো’ শব্দটি বেশ জুতসই জায়গা করে নিয়েছে। বিরোধী দল সরকারি দলকে উদ্দেশ্য করে বলছে, ‘সময় থাকতে বিদায় হোন, না হলে পালাবার পথ পাবেন না।’ আর সরকারি দল বলছে, তাদের ইতিহাসে পালানোর কোনো নজির নেই।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, ক্ষমতায় থাকা বা না থাকার সঙ্গে পালানোর প্রশ্ন আসবে কেন? কেন এক দল আরেক দলকে পালিয়ে যাওয়ার হুমকি দেবে? যাঁরা এ ধরনের হুমকি দেন, তাঁরা কি রাজনৈতিক সহনশীলতায় বিশ্বাসী? পালানোর কথা শুধু বিরোধীরাই বলেন না, কখনো কখনো ক্ষমতাসীনেরাও বলেন। কিছুদিন আগে বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের এক উচ্চপর্যায়ের নেতা ও সরকারের মন্ত্রী নিজ দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় না আসতে পারলে যা টাকা-পয়সা, সম্পদ কামিয়েছেন, তা নিয়ে পালিয়ে যেতে হবে।’ ক্ষমতায় না আসতে পারলে পালিয়ে যেতে হবে, এমন ভয় থাকবে কেন?
এখানেই রাজনৈতিক সহনশীলতার অপরিহর্যতার কথা এসে যায়। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহনশীলতা থাকলে যেকোনো পরিবেশে কোনো পক্ষেরই সহিংসতার মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। রাজনীতিতে সৃষ্টি হতে পারে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ। আর সেটা হলে গণতন্ত্র হয়ে ওঠে কার্যকর। আর তা না হলে জন স্টুয়ার্ট মিলের ভাষায় তা হয়ে ওঠে ভুয়া ও অসার।
গণতন্ত্র ও সহনশীলতা পরস্পরবিরোধী কোনো বিষয় নয়; বরং একটি আরেকটির পরিপূরক। সহনশীলতা গণতন্ত্রের অন্যতম পূর্বশর্ত। পারস্পরিক সহনশীলতা ব্যতিরেকে গণতন্ত্র পূর্ণতা লাভ করতে পারে না। যে সমাজ বা রাষ্ট্রে রাজনৈতিক দল বা জনগণের মধ্যে সহনশীলতার অভাব থাকে, গণতন্ত্র সেখানে হয়ে পড়ে অর্থহীন। বলা যায় পঙ্গু। একজন পঙ্গু মানুষ যেমন স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারে না, তেমনি সহনশীলতাহীন পরিবেশে গণতন্ত্রও এগোতে পারে না। মুখ থুবড়ে পড়ে যায়। এই তিক্ত অভিজ্ঞতা আমাদের চেয়ে ভালো আর কাদের আছে? গণতন্ত্রের পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য সুধীজনেরা রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি সহনশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে থাকেন সব সময়। কিন্তু সেসব আহ্বান বায়বীয় বস্তুর মতোই ইথারে মিলিয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে যাঁদের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি, তাঁরা থাকেন নির্বিকার; অনেকটা এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে বের করে দেওয়ার মতো।
সেই চরম সত্যটি পুনরায় স্মরণ করিয়ে দিলেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সুপ্রিম কোর্ট আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি বলেছেন, ‘যদি আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, বহু দলে বিশ্বাস করি, তাহলে সহনশীল হতেই হবে। গণতন্ত্রে বিশ্বাস করব আর সহনশীল হব না, এটাকে গণতন্ত্রের চর্চা বলা যাবে না।’ (আজকের পত্রিকা, ১৬ আগস্ট, ২০২৩)
প্রধান বিচারপতির এই বক্তব্যের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। কেননা, গণতন্ত্র ও সহনশীলতা একটি ছাড়া আরেকটি অর্থহীন বা অসার। বিশ্ব বিখ্যাত চিন্তাবিদ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জন স্টুয়ার্ট মিল ১৮৬১ সালে প্রকাশিত তাঁর গ্রন্থ ‘রিপ্রেজেনটেটিভ গভর্নমেন্ট’, অর্থাৎ ‘প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার’-এ বলেছেন, ‘গণতন্ত্র বলতে সাধারণত দুটো ভিন্ন ধারণাকে জড়িয়ে ফেলা হয়। কোনটা সঠিক ধারণা তা আর তখন বোঝা যায় না। সংজ্ঞা অনুসারে গণতন্ত্রের বিশুদ্ধ ধারণা হচ্ছে সমান প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে সমগ্র জনসাধারণ কর্তৃক পরিচালিত সমগ্র জনসাধারণের সরকার।
কিন্তু সাধারণ লোকের ধারণা আর চিরাচরিত নীতি অনুসারে গণতন্ত্র হচ্ছে সীমায়িত প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে কেবল সংখ্যাগুরুদের দ্বারা পরিচালিত সমগ্র জনসাধারণের সরকার। প্রথমটি সব নাগরিকের সম-অধিকারভিত্তিক। কিন্তু শেষেরটি সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের বিশেষ অধিকারভিত্তিক সরকার, কারণ তাতে রাষ্ট্রের মধ্যে একমাত্র সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের যা কিছু সত্যিকার ক্ষমতা থাকে।
এটা বর্তমান নির্বাচন পদ্ধতিরই অনিবার্য কুফল, যাতে সংখ্যালঘুদের অধিকার মোটেই থাকে না।’ একই গ্রন্থে তিনি লিখেছেন, ‘গণতন্ত্রের অপরিহার্য অঙ্গ হচ্ছে সংখ্যালঘুকে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব দান করা। তা না হলে গণতন্ত্র হবে ভুয়া, মিথ্যা, অসার; তা ছাড়া অন্য কিছু হতেই পারে না।’ (মোহাম্মদ দরবেশ আলী খান অনূদিত ও বাংলা একাডেমি প্রকাশিত দ্বিতীয় সংস্করণ, ফেব্রুয়ারি ১৯৮৪; পৃষ্ঠা-১০০ ও ১০৬)
আজ থেকে ১৬২ বছর আগে জন স্টুয়ার্ট মিল গণতন্ত্রকে যেভাবে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছেন, তার সঙ্গে কি আমাদের গণতন্ত্রের কোনো মিল আছে। স্টুয়ার্ট মিল সংখ্যালঘুদের উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব দান করাকে অপরিহার্য বলেছেন। না হলে গণতন্ত্র ভুয়া, মিথ্যা ও অসার বলে প্রতীয়মান হবে। মিলের এই তত্ত্বের আয়নায় যদি আমাদের গণতন্ত্রকে দেখি তাহলে হতাশ না হয়ে কি পারা যায়? ওই তত্ত্ব অনুসারে বাংলাদেশে কখনোই গণতন্ত্র পরিপূর্ণতা পায়নি—এ কথা স্বীকার করতেই হবে। কারণ, এখানে সংখ্যালঘুদের মর্যাদা দেওয়া তো দূরের কথা, তাদের ধর্তব্যের মধ্যেই আনা হয় না।
ফলে এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠদের একনায়কত্ব কায়েম হয়ে আসছে গোড়া থেকেই। গণতন্ত্রের মূল অভীষ্ট হলো জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করা। আর তা করতে হলে সংখ্যাগুরু এবং সংখ্যালঘু উভয়কেই সমমর্যাদা দিতে হবে। সরকার পরিচালনা করবে সংখ্যাগরিষ্ঠরা, তবে সে ক্ষেত্রে সংখ্যালঘুদের ভূমিকাকেও স্বীকার করে নিতে হবে। সেই সঙ্গে থাকতে হবে বাক্স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের সমান অধিকার। সংখ্যাগুরুরা যেমন তাদের মতামত বিনা বাধায় প্রকাশ করতে পারে, তেমনি সংখ্যালঘুদেরও তাদের মতামত নির্বিঘ্নে প্রকাশ করতে দিতে হবে। এটা সংখ্যালঘুদের জন্য সুযোগ নয়, অধিকার। সেই অধিকার থেকে কাউকে বঞ্চিত করার অধিকার কারও নেই, থাকতে পারে না।
কিন্তু আমাদের দেশে বিরাজ করছে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। এখানে সংখ্যালঘু, মানে সরকারবিরোধীদের বিবেচনা করা হয় শত্রু হিসেবে। ফলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা পর্যবসিত হয় শত্রুতায়। আর এক পক্ষ যখন আরেক পক্ষকে শত্রু বলে মনে করে, তখন তারা একে অপরকে যেকোনো মূল্যে নিশ্চিহ্ন করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়। আর এখানেই নিহিত আমাদের গণতন্ত্রের ব্যর্থতার মূল কারণ। এ কথা স্বীকার না করে উপায় নেই যে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহনশীলতার অভাব প্রায় মন্বন্তরের পর্যায়ে চলে গেছে। এক দল আরেক দলকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা বা পরাস্ত করার পরিবর্তে পেশিশক্তি প্রয়োগে মাঠছাড়া করতে, প্রকারান্তরে নিশ্চিহ্ন করে দিতেই বেশি আগ্রহী। তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা একেবারেই মেনে নিতে পারে না।
আবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা ততটুকু সহ্য করতে রাজি, যতটুকু তার ক্ষমতার মসনদকে স্পর্শ না করে। ক্ষমতার প্রতি এই যে উদগ্রতা, তা একধরনের রোগ। এই রোগে আক্রান্তরা মনে করে ক্ষমতা ‘ওয়ানটাইম বলপয়েন্ট পেনে’র মতো। একবারেই বুঝি শেষ। তাই একবার ক্ষমতায় যেতে পারলে সেখান থেকে নেমে যাওয়ার চিন্তা তাঁরা বাদ দিয়ে বসেন। তখন তাঁদের ভাবনাচিন্তা হয়ে দাঁড়ায় ক্ষমতাকে কীভাবে স্থায়িত্ব দেওয়া যায়। এই ভাবনায় আচ্ছন্ন হওয়ার কারণে তাঁদের সময় ব্যয় হয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকার পরিকল্পনা ও কলাকৌশল উদ্ভাবনে। ফলে তাঁরা জনগণের কল্যাণে মনোনিবেশ করতে পারেন না। আর ক্ষমতা কুক্ষিগত করার এই অসুস্থ চিন্তাই রাজনীতিতে অসহনশীল পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ার মূল কারণ।
প্রশ্নটা অনেকের মনেই খোঁচা দেয়—রাজনৈতিক দলগুলো কেন ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। তাদের ভাবভঙ্গি দেখলে মনে হয় একধরনের ভীতি ঘিরে ধরে। ক্ষমতা ছাড়লে বিপদে পড়তে হবে—এমন ভাবনায় তারা আক্রান্ত যেন। অথচ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় এমনটি হওয়ার কথা নয়। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় যেহেতু জনগণের ইচ্ছাই শেষ কথা, তাহলে তাদের প্রতি আস্থা রাখা অপরিহার্য। কিন্তু অধিকাংশ সময় ক্ষমতাসীনেরা এমন আচরণ করেন, জনগণের প্রতি তাঁদের আস্থা আছে বলে প্রতীয়মান হয় না। সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের রাজনীতিকদের বক্তব্য-বিবৃতিতে ‘পালানো’ শব্দটি বেশ জুতসই জায়গা করে নিয়েছে। বিরোধী দল সরকারি দলকে উদ্দেশ্য করে বলছে, ‘সময় থাকতে বিদায় হোন, না হলে পালাবার পথ পাবেন না।’ আর সরকারি দল বলছে, তাদের ইতিহাসে পালানোর কোনো নজির নেই।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, ক্ষমতায় থাকা বা না থাকার সঙ্গে পালানোর প্রশ্ন আসবে কেন? কেন এক দল আরেক দলকে পালিয়ে যাওয়ার হুমকি দেবে? যাঁরা এ ধরনের হুমকি দেন, তাঁরা কি রাজনৈতিক সহনশীলতায় বিশ্বাসী? পালানোর কথা শুধু বিরোধীরাই বলেন না, কখনো কখনো ক্ষমতাসীনেরাও বলেন। কিছুদিন আগে বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের এক উচ্চপর্যায়ের নেতা ও সরকারের মন্ত্রী নিজ দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় না আসতে পারলে যা টাকা-পয়সা, সম্পদ কামিয়েছেন, তা নিয়ে পালিয়ে যেতে হবে।’ ক্ষমতায় না আসতে পারলে পালিয়ে যেতে হবে, এমন ভয় থাকবে কেন?
এখানেই রাজনৈতিক সহনশীলতার অপরিহর্যতার কথা এসে যায়। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহনশীলতা থাকলে যেকোনো পরিবেশে কোনো পক্ষেরই সহিংসতার মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। রাজনীতিতে সৃষ্টি হতে পারে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ। আর সেটা হলে গণতন্ত্র হয়ে ওঠে কার্যকর। আর তা না হলে জন স্টুয়ার্ট মিলের ভাষায় তা হয়ে ওঠে ভুয়া ও অসার।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৬ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৬ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে