সন্ন্যাসী রাজার বাড়ি

রাতুল মণ্ডল, শ্রীপুর (গাজীপুর) 
প্রকাশ : ০৭ জুন ২০২২, ০৬: ৪২
আপডেট : ০৭ জুন ২০২২, ০৯: ৫৮

উত্তমকুমার ও সুপ্রিয়া চৌধুরী অভিনীত ‘সন্ন্যাসী রাজা’ সিনেমা মুক্তি পায় ১৯৭৫ সালে। তার প্রায় ৪৩ বছর পর ২০১৮ সালে যিশু সেনগুপ্ত ও জয়া আহসান অভিনীত আরেকটি সিনেমা মুক্তি পায় ‘এক যে ছিল রাজা’ নামে। দুটি সিনেমাই তৈরি হয়েছিল বাংলাদেশের একটি রাজবাড়ির বাস্তব ঘটনাকে কেন্দ্র করে। সম্পদ, ক্ষমতা ও প্রতিপত্তির মতোই ছিল সে রাজবাড়ির ঘটনাবহুল ইতিহাস। ঐতিহাসিক সে গল্পেই তৈরি হয়েছিল সিনেমা। তাতে অভিনয় করেছিলেন উত্তমকুমার।

অবিভক্ত ভারতবর্ষের বাংলা প্রদেশের ভাওয়াল রাজ্যের রাজাদের প্রাসাদই হলো ভাওয়াল রাজবাড়ি। গাজীপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক এ বাড়িটি। প্রাসাদটি বর্তমানে গাজীপুর জেলা প্রশাসনের প্রধান কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

প্রায় ৫৭৯ বর্গমাইল বা ১ হাজার ৫০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ভাওয়াল এস্টেটের প্রজা ছিল প্রায় ৫ লাখ। ভাওয়ালের জমিদার বংশের রাজকুমার রমেন্দ্র নারায়ণ রায় এবং আরও দুই ভাই মিলে এই জমিদারির দেখাশোনা করতেন।

সতেরো শতকের শেষ দিকে দৌলত গাজী ভাওয়ালের গাজী এস্টেটের জমিদার ছিলেন। বলরাম রায় ছিলেন দৌলত গাজীর দেওয়ান। রাজস্ব আদায়নীতি পরিবর্তনের ফলে ১৭০৪ সালে বলরামের পুত্র শ্রীকৃষ্ণ মুর্শিদ কুলি খানের মাধ্যমে ভাওয়ালের জমিদারি পান।

ভাওয়াল এস্টেটে পর্যায়ক্রমে বলরাম রায়, কৃষ্ণদেব রায়চৌধুরী, রামচন্দ্র রায়চৌধুরী, নৃপতিসিংহ রায়চৌধুরী, দেবনারায়ণ রায়চৌধুরী, নারায়ণচন্দ্র রায় চৌধুরী, অমরেন্দ্র কুমার চৌধুরী, যশোবন্ত কুমার চৌধুরী, সত্যেন্দ্র কুমার চৌধুরী, রাজা রাজেন্দ্র কুমার চৌধুরী, রাজা বাহাদুর রণেন্দ্র কুমার চৌধুরী, রাজা দেবেন্দ্র কুমার চৌধুরী, রাজা মহেন্দ্র কুমার চৌধুরী, রাজা রামেন্দ্র নারায়ণ রায় জমিদারি পরিচালনা করেন। আয়তনের দিক থেকে তৎকালীন ঢাকার নওয়াব এস্টেটের পরেই ছিল এই জমিদারবাড়ির অবস্থান। এই রাজবাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভাওয়াল রাজা সন্ন্যাসী রমেন্দ্র নারায়ণ রায়চৌধুরীর মৃত্যু এবং ১২ বছর পরে ফিরে আসার কাহিনি।

রমেন্দ্র নারায়ণ ছিলেন ভাওয়াল রাজবাড়ির প্রতিষ্ঠাতা রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণের দ্বিতীয় সন্তান। ১৯০১ সালে রাজেন্দ্র নারায়ণ, পরে তাঁর দুই ভাই এবং ১৯০৭ সালে মা রানি বিলাসমনীর মৃত্যুর পর রাজা হন রমেন্দ্র নারায়ণ। একই বছর বিভাবতীকে বিয়ে করেন তিনি।

১৯০৯ সালে অসুস্থ হয়ে দার্জিলিংয়ে মারা যান রাজা রমেন্দ্র। তাঁকে শ্মশানে নেওয়ার পর হঠাৎ ঝড় উঠলে রানি বিভাবতীসহ সবাই মৃতদেহ সৎকার না করে চলে যান। এ ঘটনার ১২ বছর পর রাজা রমেন্দ্র আবার ফিরে আসেন রাজবাড়িতে।

বর্তমানে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত প্রাসাদটিতে রয়েছে বিশাল বারান্দা, নাটমন্দির, পদ্মমন্দির ও তাল কাঠের সিঁড়ি। ভাওয়াল রাজার পুকুর।

রাজবাড়ির বেশির ভাগ কক্ষ এখনো ব্যবহার হচ্ছে। কোনো কাঠের দরজা-জানালায় ঘুণ ধরেনি। সিঁড়িগুলো এখনো চকচকে।

গাজীপুরের স্থানীয় বাসিন্দা মো. আলতাফ হোসেন বলেন, ‘ভাওয়াল রাজবাড়ি আমাদের গাজীপুর জেলার জন্য একটি ঐতিহাসিক বাড়ি। এ রাজবাড়ি রক্ষা করা সবার দায়িত্ব। এই রাজবাড়ির মতো এত বড় রাজবাড়ি দেশের আর কোথাও আছে বলে আমার জানা নেই।’

গাজীপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান বলেন, ‘ঐতিহাসিক ভাওয়াল রাজবাড়ি বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক জায়গা। এটির রক্ষণাবেক্ষণ করা সবার দায়িত্ব।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রংপুরে সাবেক দুই এমপিসহ আ.লীগ-জাতীয় পার্টির ৩৯ নেতা-কর্মীর নামে মামলা

‘এই দিন দিন না, আরও দিন আছে’, আদালতে বললেন কামরুল

ট্রেনে ঢিল ছোড়ার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করল তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা

প্রথমবার ব্যর্থ, পরদিন ভোরে হাসপাতালের ১৬ তলা থেকে লাফিয়ে যুবকের আত্মহত্যা

রাজনৈতিক দলকে শাস্তির আওতায় আনতে আইন সংশোধন হচ্ছে: আসিফ নজরুল

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত