মাসুদ কামাল
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, মন্ত্রিসভা গঠন, সংসদের প্রথম অধিবেশনের শুরু—সব ঘটনার পর এখন এ-সংক্রান্ত অবশিষ্ট আলোচনাটি হচ্ছে সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচন। যদিও এ বিষয়টি আমাদের জাতীয় জীবনের জন্য তেমন কোনো গুরুত্বই বহন করে না; তবু এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। কারা সেই সৌভাগ্যবান ৫০ জনের মধ্যে থাকছেন, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনাও চলছে। এর মধ্যে দেখলাম কয়েকটি পত্রিকা, মিডিয়া সম্ভাব্য কয়েকজনের নামসহ রিপোর্টও করেছে। টেলিভিশনে রিপোর্টও দেখলাম দু-একটা। একটা রিপোর্টে দুজন নারীর ইন্টারভিউ দেখা গেল। তাঁরা বেশ উৎসাহ নিয়ে জানালেন—কেন তাঁরা যোগ্য, তাঁদের সংরক্ষিত আসনে নির্বাচিত করা হলে কত দুর্দান্ত পারফরম্যান্স তাঁরা দেখাবেন, ইত্যাদি। এসব দেখতে গিয়ে যেন অনেকটা হতাশই হলাম।
এই হতাশার কারণটাই বরং বলি। কোনো সন্দেহ নেই ‘সংসদ সদস্য’ অতি অবশ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ। এই পদে যেতে হলে কিছু যোগ্যতা তো থাকা দরকার। আগে একটা রীতি ছিল, দীর্ঘ দিন রাজনীতি করার পর, দলের নীতি-আদর্শের প্রতি সন্দেহাতীত আনুগত্য প্রকাশের পরই কেবল একজনকে সংসদ সদস্য পদের জন্য যোগ্য বিবেচনা করা হতো। কিন্তু সেই রীতি এখন আর নেই। রাজনীতিতে যখন থেকে শর্টকাট পথের দাপট শুরু হয়েছে। বলা যায়, সামরিকীকরণের পর থেকে, সেই সময় থেকেই সব পাল্টে গেছে। সেনানায়ক হয়ে গেছেন রাষ্ট্রনায়ক। তারপর নিজের সুবিধা অনুযায়ী করেছেন রাজনৈতিক দল। সেই দলে গণতান্ত্রিক রাজনীতি যতটা ছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি ছিল সেনাশাসকের একনায়কতান্ত্রিক ইচ্ছা-অনিচ্ছার প্রতিফলন। পর পর দুটি সেনাশাসনের পর ১৯৯১ সালে যখন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে একটা নির্বাচন হলো, দেখা গেল সেনাশাসকদের আমলের অনেক নেতিবাচক বিষয়ই গণতান্ত্রিক দলগুলোর মধ্যে ঢুকে গেছে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে যৌথ নেতৃত্বের পরিবর্তে একজনের ইচ্ছাই বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। রাজনীতির চেয়ে বিরাজনীতিকরণই যেন প্রবল হয়ে দেখা দিয়েছে। সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনয়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, দলের প্রতি ডেডিকেশন, এসব কোনো কিছুই গুরুত্ব পাচ্ছে না। শীর্ষ নেতৃত্ব যাঁকে পছন্দ করছেন, তিনিই মনোনয়ন পাচ্ছেন, নির্বাচিত হচ্ছেন। এই যে শীর্ষ নেতৃত্বের পছন্দ, এটা ঠিক কোন কারণে হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্নও করার কোনো সুযোগ থাকছে না। এই প্রক্রিয়াকে আর যা-ই বলা যাক, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বলা যাবে না। অথচ দল করতে হলে, দলে থাকতে হলে, এটাকেই ‘প্রকৃত গণতন্ত্র’ হিসেবে মানতে হবে। এই গণতন্ত্রই চলছে এখন। কি সরকারি দলে, কি প্রধান বিরোধী দলে, কি দ্বিতীয় বিরোধী দলে, প্রায় সব দলে।
সামনের সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচনেও যে সেই একই ‘গণতান্ত্রিক’ প্রক্রিয়ার পুনরাবৃত্তি হবে, সেটা নিয়ে কারও মধ্যেই কোনো দ্বিধা নেই। এরই মধ্যে তার কিছু নমুনাও দেখা গেছে। এবার স্বতন্ত্র হিসেবে ৬২ জন নির্বাচিত হয়েছেন। প্রতি ছয়জনে একজন—এই হিসাবে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা কমপক্ষে ১০ জন নারী সদস্য নির্বাচনের ক্ষমতা রাখেন। কিন্তু এবারের নির্বাচনটি এমনই অভূতপূর্ব প্রক্রিয়ায় হয়েছে যে তাঁরা সবাই রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগেরই সদস্য, অথবা আওয়ামী লীগের শরিক দলের লোক। তাই ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা নিজেরা আর কাউকে নির্বাচন করতে দিতে পর্যন্ত আগ্রহী হননি; বরং তাঁদের সেই ক্ষমতা দিয়ে দিয়েছেন সরকারি দল আওয়ামী লীগের কাছে। আসলে আওয়ামী লীগের কাছেও নয়, পুরো ক্ষমতাটিই দেওয়া হয়েছে খোদ প্রধানমন্ত্রীর হাতে। তিনি যাঁদের মনোনীত করবেন, তাঁরাই হবেন মহিলা সংসদ সদস্য; অর্থাৎ যে ৫০ জন নারীর ভাগ্যে এবার সংসদ সদস্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে যাওয়ার সুযোগ ঘটবে, তাঁরা সবাই যে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন—এমনটি বলা যাবে না। নানা যৌক্তিক কারণে, অথবা অযৌক্তিক কারণে, কিংবা কোনো কারণ ছাড়াই কেউ কেউ সংরক্ষিত আসনে গিয়ে বসতে পারেন। এ রকম আগেও হয়েছে। এ দেশে, চলমান এই রাজনৈতিক বাস্তবতায় এটা নতুন কিছু নয়।
এই যে ধারাটা, এর শুরুও কিন্তু হয়েছে সেই সামরিক শাসনের আমলেই। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনের পর ৩০ জন মহিলা সংসদ সদস্যের (তখন সংরক্ষিত আসন ৩০টি ছিল) নির্বাচন নিয়ে সেই সময়ের খুবই জনপ্রিয় সাপ্তাহিক যায়যায়দিন একটা কভার স্টোরি করেছিল। ‘সংসদের শোভা ত্রিশ সেট অলংকার’ শিরোনামের সেই লেখাটি এতটাই আলোড়ন তুলেছিল যে সামরিক শাসক এরশাদ ক্ষিপ্ত হয়ে যায়যায়দিনকে বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এরশাদ তখন কেন খেপেছিলেন, লেখার বিষয়বস্তুকে তিনি তাঁর ব্যক্তি চরিত্রের সঙ্গে মিলিয়ে নিয়েছিলেন কি না—সেসব নিয়ে বিস্তর আলোচনা হতে পারে। কিন্তু সেসব প্রসঙ্গে না গিয়েও এ কথা কিন্তু বলাই যায় যে, নারী সংসদ সদস্যদের নির্বাচনের পেছনে মৌলিক যে উদ্দেশ্য, সেটা কিন্তু শুরু থেকে এখন পর্যন্ত কখনোই অর্জিত হয়নি। জাতীয় সংসদে তাঁদের অবস্থান বা কর্মকাণ্ডকে কখনোই আমার কাছে কার্যকর কিছু মনে হয়নি। এখন সোশ্যাল মিডিয়ার দাপটের যুগ। তাই মাঝেমধ্যে মহিলা সংসদ সদস্যদের কিছু কিছু কাজকর্ম ইউটিউব বা ফেসবুকে দেখতে পেয়েছি। দেখে মনে হয়েছে, না দেখলেই বুঝি ভালো হতো। একা একা দেখতেও লজ্জা পেয়েছি। ভেবেছি, তাঁরাই সংসদ সদস্য!
এবার কি তার ব্যতিক্রম কিছু হবে? আমার তা মনে হয় না। ধারণা করি, এবারও অভিনেত্রী, গায়িকাসহ নানা পেশার কিছু প্রতিনিধিকে দেখতে পাব। এখানে পেশাকে খাটো করে কিছু বলছি না। বলছি যে পদে তাঁকে বসানো হচ্ছে, সেই পদের জন্য তিনি কতটা যোগ্য—তা নিয়ে। এর বাইরে কেউ কেউ হয়তো দলের জন্য ত্যাগ স্বীকারের পুরস্কার পাবেন। কেউ আবার এমনি এমনিই হবেন। আসলে কোনো সূত্র হয়তো বের করা যাবে না। কে কোন যোগ্যতায় নির্বাচিত হবেন, তার কোনো ব্যাখ্যাও দেওয়া যাবে না। অবশ্য একবার নির্বাচিত হওয়ার পর ব্যাখ্যা তৈরি হতে থাকবে, মোসাহেবরা নানা ধরনের যৌক্তিকতা প্রচার করতে থাকবেন।
তবে স্বস্তির জায়গা একটাই, এবার সম্ভবত স্বামী-স্ত্রী দুজনই সংসদ সদস্য এমন জুটি একটির বেশি পাওয়া যাবে না। ‘একটি’ বললাম এ কারণে যে আমার ধারণা, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সম্ভবত রাজধানীর উত্তরায় গো-হারা হারার পরও তাঁর স্ত্রীকে সংরক্ষিত আসনে নির্বাচিত করতে চাইবেন। জাসদ কিংবা ওয়ার্কার্স পার্টির প্রধানেরা একাদশ সংসদে নিজ নিজ স্ত্রীকে লজ্জা-শরমের তোয়াক্কা না করে সংসদে নিতে পেরেছিলেন। কিন্তু এবার সেই সুযোগটি তাঁরা পাচ্ছেন না। ইনু ও মেনন দম্পতিসহ একাদশ সংসদে এমন জুটি কমপক্ষে পাঁচটি ছিল। মজার ব্যাপার হচ্ছে—সরকারি দলে এমন জুটির উপস্থিতি দেখা যায়নি। ছোট দলের বড় নেতারা সুযোগ পাওয়ামাত্র স্ত্রীকে এমপি বানিয়ে নিয়েছিলেন। এবার ছোট দল প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ায় জাতীয় সংসদ সেই লজ্জা থেকে হয়তো বেঁচে যাবে। অনেক হতাশার মধ্যে এটাও বোধকরি একটা ভালো প্রাপ্তি!
মাসুদ কামাল, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, মন্ত্রিসভা গঠন, সংসদের প্রথম অধিবেশনের শুরু—সব ঘটনার পর এখন এ-সংক্রান্ত অবশিষ্ট আলোচনাটি হচ্ছে সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচন। যদিও এ বিষয়টি আমাদের জাতীয় জীবনের জন্য তেমন কোনো গুরুত্বই বহন করে না; তবু এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। কারা সেই সৌভাগ্যবান ৫০ জনের মধ্যে থাকছেন, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনাও চলছে। এর মধ্যে দেখলাম কয়েকটি পত্রিকা, মিডিয়া সম্ভাব্য কয়েকজনের নামসহ রিপোর্টও করেছে। টেলিভিশনে রিপোর্টও দেখলাম দু-একটা। একটা রিপোর্টে দুজন নারীর ইন্টারভিউ দেখা গেল। তাঁরা বেশ উৎসাহ নিয়ে জানালেন—কেন তাঁরা যোগ্য, তাঁদের সংরক্ষিত আসনে নির্বাচিত করা হলে কত দুর্দান্ত পারফরম্যান্স তাঁরা দেখাবেন, ইত্যাদি। এসব দেখতে গিয়ে যেন অনেকটা হতাশই হলাম।
এই হতাশার কারণটাই বরং বলি। কোনো সন্দেহ নেই ‘সংসদ সদস্য’ অতি অবশ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ। এই পদে যেতে হলে কিছু যোগ্যতা তো থাকা দরকার। আগে একটা রীতি ছিল, দীর্ঘ দিন রাজনীতি করার পর, দলের নীতি-আদর্শের প্রতি সন্দেহাতীত আনুগত্য প্রকাশের পরই কেবল একজনকে সংসদ সদস্য পদের জন্য যোগ্য বিবেচনা করা হতো। কিন্তু সেই রীতি এখন আর নেই। রাজনীতিতে যখন থেকে শর্টকাট পথের দাপট শুরু হয়েছে। বলা যায়, সামরিকীকরণের পর থেকে, সেই সময় থেকেই সব পাল্টে গেছে। সেনানায়ক হয়ে গেছেন রাষ্ট্রনায়ক। তারপর নিজের সুবিধা অনুযায়ী করেছেন রাজনৈতিক দল। সেই দলে গণতান্ত্রিক রাজনীতি যতটা ছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি ছিল সেনাশাসকের একনায়কতান্ত্রিক ইচ্ছা-অনিচ্ছার প্রতিফলন। পর পর দুটি সেনাশাসনের পর ১৯৯১ সালে যখন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে একটা নির্বাচন হলো, দেখা গেল সেনাশাসকদের আমলের অনেক নেতিবাচক বিষয়ই গণতান্ত্রিক দলগুলোর মধ্যে ঢুকে গেছে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে যৌথ নেতৃত্বের পরিবর্তে একজনের ইচ্ছাই বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। রাজনীতির চেয়ে বিরাজনীতিকরণই যেন প্রবল হয়ে দেখা দিয়েছে। সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনয়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, দলের প্রতি ডেডিকেশন, এসব কোনো কিছুই গুরুত্ব পাচ্ছে না। শীর্ষ নেতৃত্ব যাঁকে পছন্দ করছেন, তিনিই মনোনয়ন পাচ্ছেন, নির্বাচিত হচ্ছেন। এই যে শীর্ষ নেতৃত্বের পছন্দ, এটা ঠিক কোন কারণে হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্নও করার কোনো সুযোগ থাকছে না। এই প্রক্রিয়াকে আর যা-ই বলা যাক, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বলা যাবে না। অথচ দল করতে হলে, দলে থাকতে হলে, এটাকেই ‘প্রকৃত গণতন্ত্র’ হিসেবে মানতে হবে। এই গণতন্ত্রই চলছে এখন। কি সরকারি দলে, কি প্রধান বিরোধী দলে, কি দ্বিতীয় বিরোধী দলে, প্রায় সব দলে।
সামনের সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচনেও যে সেই একই ‘গণতান্ত্রিক’ প্রক্রিয়ার পুনরাবৃত্তি হবে, সেটা নিয়ে কারও মধ্যেই কোনো দ্বিধা নেই। এরই মধ্যে তার কিছু নমুনাও দেখা গেছে। এবার স্বতন্ত্র হিসেবে ৬২ জন নির্বাচিত হয়েছেন। প্রতি ছয়জনে একজন—এই হিসাবে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা কমপক্ষে ১০ জন নারী সদস্য নির্বাচনের ক্ষমতা রাখেন। কিন্তু এবারের নির্বাচনটি এমনই অভূতপূর্ব প্রক্রিয়ায় হয়েছে যে তাঁরা সবাই রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগেরই সদস্য, অথবা আওয়ামী লীগের শরিক দলের লোক। তাই ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা নিজেরা আর কাউকে নির্বাচন করতে দিতে পর্যন্ত আগ্রহী হননি; বরং তাঁদের সেই ক্ষমতা দিয়ে দিয়েছেন সরকারি দল আওয়ামী লীগের কাছে। আসলে আওয়ামী লীগের কাছেও নয়, পুরো ক্ষমতাটিই দেওয়া হয়েছে খোদ প্রধানমন্ত্রীর হাতে। তিনি যাঁদের মনোনীত করবেন, তাঁরাই হবেন মহিলা সংসদ সদস্য; অর্থাৎ যে ৫০ জন নারীর ভাগ্যে এবার সংসদ সদস্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে যাওয়ার সুযোগ ঘটবে, তাঁরা সবাই যে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন—এমনটি বলা যাবে না। নানা যৌক্তিক কারণে, অথবা অযৌক্তিক কারণে, কিংবা কোনো কারণ ছাড়াই কেউ কেউ সংরক্ষিত আসনে গিয়ে বসতে পারেন। এ রকম আগেও হয়েছে। এ দেশে, চলমান এই রাজনৈতিক বাস্তবতায় এটা নতুন কিছু নয়।
এই যে ধারাটা, এর শুরুও কিন্তু হয়েছে সেই সামরিক শাসনের আমলেই। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনের পর ৩০ জন মহিলা সংসদ সদস্যের (তখন সংরক্ষিত আসন ৩০টি ছিল) নির্বাচন নিয়ে সেই সময়ের খুবই জনপ্রিয় সাপ্তাহিক যায়যায়দিন একটা কভার স্টোরি করেছিল। ‘সংসদের শোভা ত্রিশ সেট অলংকার’ শিরোনামের সেই লেখাটি এতটাই আলোড়ন তুলেছিল যে সামরিক শাসক এরশাদ ক্ষিপ্ত হয়ে যায়যায়দিনকে বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এরশাদ তখন কেন খেপেছিলেন, লেখার বিষয়বস্তুকে তিনি তাঁর ব্যক্তি চরিত্রের সঙ্গে মিলিয়ে নিয়েছিলেন কি না—সেসব নিয়ে বিস্তর আলোচনা হতে পারে। কিন্তু সেসব প্রসঙ্গে না গিয়েও এ কথা কিন্তু বলাই যায় যে, নারী সংসদ সদস্যদের নির্বাচনের পেছনে মৌলিক যে উদ্দেশ্য, সেটা কিন্তু শুরু থেকে এখন পর্যন্ত কখনোই অর্জিত হয়নি। জাতীয় সংসদে তাঁদের অবস্থান বা কর্মকাণ্ডকে কখনোই আমার কাছে কার্যকর কিছু মনে হয়নি। এখন সোশ্যাল মিডিয়ার দাপটের যুগ। তাই মাঝেমধ্যে মহিলা সংসদ সদস্যদের কিছু কিছু কাজকর্ম ইউটিউব বা ফেসবুকে দেখতে পেয়েছি। দেখে মনে হয়েছে, না দেখলেই বুঝি ভালো হতো। একা একা দেখতেও লজ্জা পেয়েছি। ভেবেছি, তাঁরাই সংসদ সদস্য!
এবার কি তার ব্যতিক্রম কিছু হবে? আমার তা মনে হয় না। ধারণা করি, এবারও অভিনেত্রী, গায়িকাসহ নানা পেশার কিছু প্রতিনিধিকে দেখতে পাব। এখানে পেশাকে খাটো করে কিছু বলছি না। বলছি যে পদে তাঁকে বসানো হচ্ছে, সেই পদের জন্য তিনি কতটা যোগ্য—তা নিয়ে। এর বাইরে কেউ কেউ হয়তো দলের জন্য ত্যাগ স্বীকারের পুরস্কার পাবেন। কেউ আবার এমনি এমনিই হবেন। আসলে কোনো সূত্র হয়তো বের করা যাবে না। কে কোন যোগ্যতায় নির্বাচিত হবেন, তার কোনো ব্যাখ্যাও দেওয়া যাবে না। অবশ্য একবার নির্বাচিত হওয়ার পর ব্যাখ্যা তৈরি হতে থাকবে, মোসাহেবরা নানা ধরনের যৌক্তিকতা প্রচার করতে থাকবেন।
তবে স্বস্তির জায়গা একটাই, এবার সম্ভবত স্বামী-স্ত্রী দুজনই সংসদ সদস্য এমন জুটি একটির বেশি পাওয়া যাবে না। ‘একটি’ বললাম এ কারণে যে আমার ধারণা, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সম্ভবত রাজধানীর উত্তরায় গো-হারা হারার পরও তাঁর স্ত্রীকে সংরক্ষিত আসনে নির্বাচিত করতে চাইবেন। জাসদ কিংবা ওয়ার্কার্স পার্টির প্রধানেরা একাদশ সংসদে নিজ নিজ স্ত্রীকে লজ্জা-শরমের তোয়াক্কা না করে সংসদে নিতে পেরেছিলেন। কিন্তু এবার সেই সুযোগটি তাঁরা পাচ্ছেন না। ইনু ও মেনন দম্পতিসহ একাদশ সংসদে এমন জুটি কমপক্ষে পাঁচটি ছিল। মজার ব্যাপার হচ্ছে—সরকারি দলে এমন জুটির উপস্থিতি দেখা যায়নি। ছোট দলের বড় নেতারা সুযোগ পাওয়ামাত্র স্ত্রীকে এমপি বানিয়ে নিয়েছিলেন। এবার ছোট দল প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ায় জাতীয় সংসদ সেই লজ্জা থেকে হয়তো বেঁচে যাবে। অনেক হতাশার মধ্যে এটাও বোধকরি একটা ভালো প্রাপ্তি!
মাসুদ কামাল, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
প্রবৃদ্ধির শীর্ষে থেকেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের দৌড়ে পিছিয়ে রয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ৫০ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়েছে
১ দিন আগেদুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি, উচ্চ করহারসহ ১৭ ধরনের বাধায় বিপর্যস্ত দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। রয়েছে সামাজিক সমস্যাও।
১ দিন আগেজমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৫ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৮ দিন আগে