জাহীদ রেজা নূর
গতকালই আমি লিখেছিলাম, ‘এই বেলা থেকে বাঁধনটাতে দাও মন’ নামে একটি উপসম্পাদকীয়। একটি রাষ্ট্র যখন চলনশক্তি হারিয়ে ফেলে, যখন তাকে টেনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে, তখন তাকে বাঁচাবার উপায় কী—এ-ই ছিল লেখার বিষয়।
ঘুরেফিরে বলেছিলাম, মানুষে মানুষে বাঁধনটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেদিকেই রাখতে হবে চোখ।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটেছে। এক মাসের বেশি সময় ধরে চলা এই আন্দোলনের পর আওয়ামী লীগ সরকার আর টিকে থাকতে পারেনি। সরকার পতনের পর সেনাপ্রধান বলেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কথা। চলমান সংকট থেকে দেশকে রক্ষা করার দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। রাজপথে বেরিয়ে আসা মানুষকে শান্তিপূর্ণভাবে বাড়িতে ফিরে যেতে বলেছেন।
রাজপথে বেরিয়ে আসা জনগণ আনন্দ-উল্লাস করেছে। তবে সেনাপ্রধানের এই আহ্বানে খুব একটা সাড়া দেয়নি। সেনাপ্রধানের ভাষণ শেষ হওয়ার আগে থেকেই ঢাকা শহরে ছিল মানুষের ঢল। তাঁর ভাষণ শেষ হতে না হতেই ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন অঞ্চলে ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা গেল। পাকিয়ে পাকিয়ে উঠল কালো ধোঁয়া। পোড়ানো হলো স্থাপনা। টেলিভিশনের পর্দায় দেখা গেল গণভবনের অবস্থা। সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন ছেড়েছেন। সেই ভবনে ঢুকে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। এবং সে ভবনে যা কিছু ছিল, তা লোপাট হয়ে গেছে মুহূর্তেই। চলতি পথে দেখা গেল কেউ এয়ারকন্ডিশনার, কেউ আলমারি, কেউ ফুলের টব, কেউ পেইন্টিং নিয়ে বাড়ির পথে রওনা হয়েছেন। কেউ শাড়িও নিয়েছেন। এসব নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবিও দিয়েছেন।
জিজ্ঞেস করলে কেউ কেউ বলেছেন, এগুলো জনগণের সম্পত্তি।
আমাদের বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম একটা অসাধারণ পঙ্ক্তি রচনা করেছিলেন, ‘ভেঙে আবার গড়তে জানে, সে চির সুন্দর।’ আমাদের ইতিহাসে ভেঙে আবার গড়ার ব্যাপারে গাফিলতি আছে। আমরা যতটা ভাঙতে পারি, ততটা গড়তে পারি না বলে আমাদের দুর্নাম আছে।
যেকোনো বড় বিক্ষোভের সময় অরাজকতা ছড়িয়ে পড়ে। বিজয়ী শক্তি পরাজিত শক্তির ওপর প্রতিশোধ নেয়। শ্রীলঙ্কায়ও এমন হয়েছিল। কিন্তু সেটা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার চেষ্টা থাকাটা জরুরি। যত কম সময়ে এই অরাজকতা নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তত তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক সময়ে ফিরে আসা যায়।
ঢাকাসহ সারা দেশে জ্বালাও-পোড়াও-এর মতো যে ঘটনাগুলোর খবর আমরা পাচ্ছি, তা প্রতিরোধ করতে না পারলে এই পরিবর্তন কোনো কাজেই লাগবে না। আন্দোলনের সময় যে হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটেছিল, তারই প্রতিবাদে আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল জনগণ। সেই হত্যাকাণ্ডেরই যদি পুনরাবৃত্তি হয়, তাহলে অর্জন কোথায়?
বাংলাদেশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কেউ যেন লুটপাটের সুযোগ না পায়, তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। লুটপাটকারীদের রুখে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু রাস্তাঘাটে লুটপাটের মালসহ অনেককে দেখা গেছে, কিন্তু কেউই তাদের বাধা দেয়নি। কেউই তাদের রুখে দাঁড়ায়নি। নৈরাজ্য কখনোই একটা অর্জনকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়ে দিতে পারে না।
বাংলাদেশকে সত্যিকারের বৈষম্যহীন একটি দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে গণতান্ত্রিক নীতি-নৈতিকতা মেনে চলা দরকার। সেই চর্চাটা আমাদের দেশে প্রায় নেই বললেই চলে। সাধারণ নিয়মেই কোনো দল নির্বাচনে পরাজিত হতে পারে, জয়ী হতে পারে। জয়ী দল ক্ষমতায় এসেই পরাজিত দলের লোকদের বাড়িঘরে আগুন দিলে, লুটপাট করলে গণতন্ত্র বিকশিত হবে কী করে? এই তো কিছুদিন আগে যুক্তরাজ্যে নির্বাচন হয়ে গেল। ক্ষমতাসীন দল কনজারভেটিভ পার্টিকে শোচনীয় পরাজয় মেনে নিতে হয়েছে। ক্ষমতায় এসেছে লেবার পার্টি। কিন্তু এই জয়-পরাজয়ে কোথাও কোনো ভাঙচুর হয়নি। প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ক্ষমতা ছেড়েছেন, তাঁর দলের সদস্যদের কাছে পরাজয়ের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। আমাদের দেশে সেই ঐতিহ্য কবে গড়ে উঠবে? আমাদের দেশে কোনো দল নির্বাচনে পরাজিত হলে জয়ী দলের প্রতি সূক্ষ্ম কারচুপি কিংবা স্থূল কারচুপির অভিযোগ কেন আনবে? কোনোভাবেই নিজের পরাজয় মেনে নিতে চায় না কেন রাজনৈতিক দলগুলো? গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতে হলে এই জায়গাটিতে তো বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে।
যে বাঁধনের কথা শুরুতেই বলেছি, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। একটি সমাজে নানা ধরনের মানুষ থাকবে, তাদের থাকবে নানা মত। কিন্তু সেই নানা মত প্রকাশের কারণে যেন একে অন্যের শত্রু হয়ে না যায়—সেটা নিশ্চিত করা দরকার সবার আগে। পাশের বাড়ির মানুষ তো পড়শি, তাকে শত্রু ভাবলে সমাজ এগোবে কী করে? তখন তো শুধু নিজের দলের বাইরে আর সবাইকেই সন্দেহের চোখে দেখবে মানুষ। শুধু তা-ই নয়, অন্যের সমস্যা-সংকটকে গ্রাহ্যই করবে না জয়ী দলের মানুষেরা। এতে ক্ষমতাসীন দল হয়ে পড়বে জনবিচ্ছিন্ন। সে কথা যেন আগামীতে যাঁরা শাসনক্ষমতায় আসবেন, তাঁরা মনে রাখেন।’
তাঁরা যেন আরও মনে রাখেন, দেশটা কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। মেহনতি জনগণের শ্রম ও ঘামের মাধ্যমেই গড়ে ওঠে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভিত। সেই মানুষকে উপেক্ষা করে বেশি দূর এগিয়ে যাওয়া যায় না। গণতন্ত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি জরুরি। আমাদের নির্বাচিত ও অনির্বাচিত সরকারের কোনোটাই এখন পর্যন্ত স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি। এবারকার আন্দোলনের ফসল যারা ঘরে তুলবে, তারা সেই ফসল জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে পারবে কি না, সেটাই প্রশ্ন। বাংলার মানুষ দেশ পরিচালকদের কাছে এতবার প্রতারিত হয়েছে যে সত্যিকারের গণতন্ত্র আসবে কি না, সে ব্যাপারে তারা সন্দিহান।
দীর্ঘদিন অস্থির সময় কাটানোর পর এখন সেনাপ্রধানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে যদি সবাই ঘরে ফিরে যায়, যদি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দুরদৃষ্টির পরিচয় দিয়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকাঠামো নির্মাণে আন্তরিক হয়, তাহলে সামনের দিনগুলো কিছুটা হলেও স্বস্তিকর হতে পারে। কিন্তু প্রবাদ আছে, ‘ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়।’ সেই পাকিস্তান আমল থেকে গণতন্ত্রের জন্য কত না সংগ্রাম, কত না আত্মাহুতি—কিন্তু গণতন্ত্র নামক বস্তুটি সোনার হরিণ হিসেবেই রয়ে গেল। তার দেখা পাওয়া দুষ্কর হয়ে রইল।
জাতি গঠনে ও গণতন্ত্র বিনির্মাণে সুশাসনের প্রতি আন্তরিকতা থাকা প্রয়োজন।
আরও একটি কথা। শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলনকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন বলছেন। সুতরাং বৈষম্যহীনতা বলতে তারা কী বোঝেন, সেটা পরিষ্কার করে এখন বলতে পারেন। রাষ্ট্রের কোন কোন ক্ষেত্র থেকে তারা বৈষম্য দূর করবেন বলে বদ্ধপরিকর, সেটা তাঁরা বলুন। পরবর্তী প্রজন্মই তো আশা-ভরসার জায়গা। যদি তাই হয়, তাহলে আমাদের স্বাধীনতার প্রতি বিশ্বস্ত থেকে তাঁরা তাঁদের অবস্থান পরিষ্কার করুন। আর লুটতরাজ, ধ্বংসের বিরুদ্ধে তাঁরা দাঁড়িয়ে যান বলিষ্ঠভাবে। যে স্বপ্ন চোখে নিয়ে তাঁরা দেশটাকে পাল্টে দিতে চান, তা যেন বাস্তব রূপ পায়। স্বপ্নভঙ্গ খুবই যন্ত্রণার। বারবার স্বপ্ন ভঙ্গ হোক, সেটা কেউ চায় না।
লেখক: উপসম্পাদক,আজকের পত্রিকা
গতকালই আমি লিখেছিলাম, ‘এই বেলা থেকে বাঁধনটাতে দাও মন’ নামে একটি উপসম্পাদকীয়। একটি রাষ্ট্র যখন চলনশক্তি হারিয়ে ফেলে, যখন তাকে টেনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে, তখন তাকে বাঁচাবার উপায় কী—এ-ই ছিল লেখার বিষয়।
ঘুরেফিরে বলেছিলাম, মানুষে মানুষে বাঁধনটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেদিকেই রাখতে হবে চোখ।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটেছে। এক মাসের বেশি সময় ধরে চলা এই আন্দোলনের পর আওয়ামী লীগ সরকার আর টিকে থাকতে পারেনি। সরকার পতনের পর সেনাপ্রধান বলেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কথা। চলমান সংকট থেকে দেশকে রক্ষা করার দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। রাজপথে বেরিয়ে আসা মানুষকে শান্তিপূর্ণভাবে বাড়িতে ফিরে যেতে বলেছেন।
রাজপথে বেরিয়ে আসা জনগণ আনন্দ-উল্লাস করেছে। তবে সেনাপ্রধানের এই আহ্বানে খুব একটা সাড়া দেয়নি। সেনাপ্রধানের ভাষণ শেষ হওয়ার আগে থেকেই ঢাকা শহরে ছিল মানুষের ঢল। তাঁর ভাষণ শেষ হতে না হতেই ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন অঞ্চলে ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা গেল। পাকিয়ে পাকিয়ে উঠল কালো ধোঁয়া। পোড়ানো হলো স্থাপনা। টেলিভিশনের পর্দায় দেখা গেল গণভবনের অবস্থা। সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন ছেড়েছেন। সেই ভবনে ঢুকে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। এবং সে ভবনে যা কিছু ছিল, তা লোপাট হয়ে গেছে মুহূর্তেই। চলতি পথে দেখা গেল কেউ এয়ারকন্ডিশনার, কেউ আলমারি, কেউ ফুলের টব, কেউ পেইন্টিং নিয়ে বাড়ির পথে রওনা হয়েছেন। কেউ শাড়িও নিয়েছেন। এসব নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবিও দিয়েছেন।
জিজ্ঞেস করলে কেউ কেউ বলেছেন, এগুলো জনগণের সম্পত্তি।
আমাদের বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম একটা অসাধারণ পঙ্ক্তি রচনা করেছিলেন, ‘ভেঙে আবার গড়তে জানে, সে চির সুন্দর।’ আমাদের ইতিহাসে ভেঙে আবার গড়ার ব্যাপারে গাফিলতি আছে। আমরা যতটা ভাঙতে পারি, ততটা গড়তে পারি না বলে আমাদের দুর্নাম আছে।
যেকোনো বড় বিক্ষোভের সময় অরাজকতা ছড়িয়ে পড়ে। বিজয়ী শক্তি পরাজিত শক্তির ওপর প্রতিশোধ নেয়। শ্রীলঙ্কায়ও এমন হয়েছিল। কিন্তু সেটা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার চেষ্টা থাকাটা জরুরি। যত কম সময়ে এই অরাজকতা নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তত তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক সময়ে ফিরে আসা যায়।
ঢাকাসহ সারা দেশে জ্বালাও-পোড়াও-এর মতো যে ঘটনাগুলোর খবর আমরা পাচ্ছি, তা প্রতিরোধ করতে না পারলে এই পরিবর্তন কোনো কাজেই লাগবে না। আন্দোলনের সময় যে হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটেছিল, তারই প্রতিবাদে আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল জনগণ। সেই হত্যাকাণ্ডেরই যদি পুনরাবৃত্তি হয়, তাহলে অর্জন কোথায়?
বাংলাদেশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কেউ যেন লুটপাটের সুযোগ না পায়, তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। লুটপাটকারীদের রুখে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু রাস্তাঘাটে লুটপাটের মালসহ অনেককে দেখা গেছে, কিন্তু কেউই তাদের বাধা দেয়নি। কেউই তাদের রুখে দাঁড়ায়নি। নৈরাজ্য কখনোই একটা অর্জনকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়ে দিতে পারে না।
বাংলাদেশকে সত্যিকারের বৈষম্যহীন একটি দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে গণতান্ত্রিক নীতি-নৈতিকতা মেনে চলা দরকার। সেই চর্চাটা আমাদের দেশে প্রায় নেই বললেই চলে। সাধারণ নিয়মেই কোনো দল নির্বাচনে পরাজিত হতে পারে, জয়ী হতে পারে। জয়ী দল ক্ষমতায় এসেই পরাজিত দলের লোকদের বাড়িঘরে আগুন দিলে, লুটপাট করলে গণতন্ত্র বিকশিত হবে কী করে? এই তো কিছুদিন আগে যুক্তরাজ্যে নির্বাচন হয়ে গেল। ক্ষমতাসীন দল কনজারভেটিভ পার্টিকে শোচনীয় পরাজয় মেনে নিতে হয়েছে। ক্ষমতায় এসেছে লেবার পার্টি। কিন্তু এই জয়-পরাজয়ে কোথাও কোনো ভাঙচুর হয়নি। প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ক্ষমতা ছেড়েছেন, তাঁর দলের সদস্যদের কাছে পরাজয়ের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। আমাদের দেশে সেই ঐতিহ্য কবে গড়ে উঠবে? আমাদের দেশে কোনো দল নির্বাচনে পরাজিত হলে জয়ী দলের প্রতি সূক্ষ্ম কারচুপি কিংবা স্থূল কারচুপির অভিযোগ কেন আনবে? কোনোভাবেই নিজের পরাজয় মেনে নিতে চায় না কেন রাজনৈতিক দলগুলো? গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতে হলে এই জায়গাটিতে তো বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে।
যে বাঁধনের কথা শুরুতেই বলেছি, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। একটি সমাজে নানা ধরনের মানুষ থাকবে, তাদের থাকবে নানা মত। কিন্তু সেই নানা মত প্রকাশের কারণে যেন একে অন্যের শত্রু হয়ে না যায়—সেটা নিশ্চিত করা দরকার সবার আগে। পাশের বাড়ির মানুষ তো পড়শি, তাকে শত্রু ভাবলে সমাজ এগোবে কী করে? তখন তো শুধু নিজের দলের বাইরে আর সবাইকেই সন্দেহের চোখে দেখবে মানুষ। শুধু তা-ই নয়, অন্যের সমস্যা-সংকটকে গ্রাহ্যই করবে না জয়ী দলের মানুষেরা। এতে ক্ষমতাসীন দল হয়ে পড়বে জনবিচ্ছিন্ন। সে কথা যেন আগামীতে যাঁরা শাসনক্ষমতায় আসবেন, তাঁরা মনে রাখেন।’
তাঁরা যেন আরও মনে রাখেন, দেশটা কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। মেহনতি জনগণের শ্রম ও ঘামের মাধ্যমেই গড়ে ওঠে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভিত। সেই মানুষকে উপেক্ষা করে বেশি দূর এগিয়ে যাওয়া যায় না। গণতন্ত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি জরুরি। আমাদের নির্বাচিত ও অনির্বাচিত সরকারের কোনোটাই এখন পর্যন্ত স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি। এবারকার আন্দোলনের ফসল যারা ঘরে তুলবে, তারা সেই ফসল জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে পারবে কি না, সেটাই প্রশ্ন। বাংলার মানুষ দেশ পরিচালকদের কাছে এতবার প্রতারিত হয়েছে যে সত্যিকারের গণতন্ত্র আসবে কি না, সে ব্যাপারে তারা সন্দিহান।
দীর্ঘদিন অস্থির সময় কাটানোর পর এখন সেনাপ্রধানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে যদি সবাই ঘরে ফিরে যায়, যদি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দুরদৃষ্টির পরিচয় দিয়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকাঠামো নির্মাণে আন্তরিক হয়, তাহলে সামনের দিনগুলো কিছুটা হলেও স্বস্তিকর হতে পারে। কিন্তু প্রবাদ আছে, ‘ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়।’ সেই পাকিস্তান আমল থেকে গণতন্ত্রের জন্য কত না সংগ্রাম, কত না আত্মাহুতি—কিন্তু গণতন্ত্র নামক বস্তুটি সোনার হরিণ হিসেবেই রয়ে গেল। তার দেখা পাওয়া দুষ্কর হয়ে রইল।
জাতি গঠনে ও গণতন্ত্র বিনির্মাণে সুশাসনের প্রতি আন্তরিকতা থাকা প্রয়োজন।
আরও একটি কথা। শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলনকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন বলছেন। সুতরাং বৈষম্যহীনতা বলতে তারা কী বোঝেন, সেটা পরিষ্কার করে এখন বলতে পারেন। রাষ্ট্রের কোন কোন ক্ষেত্র থেকে তারা বৈষম্য দূর করবেন বলে বদ্ধপরিকর, সেটা তাঁরা বলুন। পরবর্তী প্রজন্মই তো আশা-ভরসার জায়গা। যদি তাই হয়, তাহলে আমাদের স্বাধীনতার প্রতি বিশ্বস্ত থেকে তাঁরা তাঁদের অবস্থান পরিষ্কার করুন। আর লুটতরাজ, ধ্বংসের বিরুদ্ধে তাঁরা দাঁড়িয়ে যান বলিষ্ঠভাবে। যে স্বপ্ন চোখে নিয়ে তাঁরা দেশটাকে পাল্টে দিতে চান, তা যেন বাস্তব রূপ পায়। স্বপ্নভঙ্গ খুবই যন্ত্রণার। বারবার স্বপ্ন ভঙ্গ হোক, সেটা কেউ চায় না।
লেখক: উপসম্পাদক,আজকের পত্রিকা
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৬ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৬ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১০ দিন আগে