মহিউদ্দিন খান মোহন
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ সম্প্রতি একটি মোক্ষম মন্তব্য করেছেন। জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তীর অধিবেশনে বক্তব্য দিতে গিয়ে ৯ এপ্রিল তিনি বলেছেন, ‘পাকিস্তান আমলে দেখা যেত, পাত্র যদি রাজনীতি করে, তাহলে বিয়ে দিত না। কারণ, সে কোনো চাকরি পাবে না। তাহলে সে খাওয়াবে কী?
খাওয়াতে হলে তাকে পত্রিকায় চাকরি করতে হবে, না হয় বটতলার উকিল হতে হবে, না হয় মুদিদোকানদার হতে হবে অথবা এজিবির কেরানিগিরি। কিন্তু এখন যদি শোনে, পাত্র সরকারি দল করে, তাহলে কয় আলহামদুলিল্লাহ। এর চেয়ে ভালো পাত্র আর হয় না। কারণ, সে কিছু করতে পারবে। তিনি আরও মন্তব্য করেছেন, ‘জীবনকে রাতারাতি বদলে দেওয়ার একমাত্র পন্থা হচ্ছে রাজনীতি। এখন এটা পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগে রাজনীতি নেশা ছিল, জীবনকে বাজি রেখে রাজনীতি করত। এখন সেই নেশা নেই। এটা এখন সবচেয়ে বড় পেশা।’ (আজকের পত্রিকা, ১০ এপ্রিল, ২০২৩)।
কাজী ফিরোজ রশীদ ভুল কিছু বলেননি। বাস্তবিক রাজনীতি ছিল একসময় অনেকের নেশা। তবে তা অবশ্যই বদ কোনো নেশা নয়। নেশাটি ছিল সমাজ ও মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করার। রাজনীতিকে তাই বলা হয় ব্রত। এটা কোনো পেশা নয়। যদিও কেউ কেউ ‘পেশাদার রাজনীতিক’ তকমা পেতে অনেক সময় আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তাঁরা অবশ্য এর দ্বারা বোঝাতে চান যে তিনি শয়নে-স্বপনে, ধ্যানে-জাগরণে সব সময় রাজনীতি নিয়ে ভাবেন, রাজনীতিই করেন। অতীতে যাঁরা আমাদের প্রাতঃস্মরণীয় রাজনীতিবিদ ছিলেন, তাঁরা সবাই কোনো না কোনো পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকতেন। কেউ শিক্ষকতা করতেন, কেউ হতেন আইনজীবী, কেউবা সাংবাদিক কিংবা অন্য কোনো পেশা। যাঁরা এসব পেশায় আসতেন না, তাঁরা তাঁদের পিতা বা পিতামহ থেকে প্রাপ্ত ধনসম্পদ ব্যয় করে রাজনীতি করতেন। আমাদের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও পাকিস্তান আমলে একটি পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আলফা ইনস্যুরেন্স কোম্পানির একজন কর্মকর্তা ছিলেন তিনি। কেন তিনি ওই পেশার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন? কারণ, তাঁর সংসার চালানোর জন্য অর্থের প্রয়োজন ছিল। সেই অর্থ তিনি বেতন হিসেবে ওই কোম্পানি থেকে আয় করতেন। তিনি কিন্তু ইচ্ছে করলেই ভিন্ন পন্থায় (যেটা এখন অনেক রাজনীতিকই আকছার করে থাকেন) সংসারের ব্যয় নির্বাহ করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। এটা একটা দৃষ্টান্ত।
একটি কথা আজকাল অনেকে বলে থাকেন, আগে জমিদারের ছেলেরা রাজনীতিতে এসে নিঃস্ব হতো, আর এখন কপর্দকহীন ভবঘুরেরা রাজনীতিতে এসে বিত্তশালী বনে যায়। কথাটি তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়ার অবকাশ নেই। আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন কোষাধ্যক্ষ ছিলেন ইয়ার মোহাম্মদ খান। ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান ইয়ার মোহাম্মদ খানের ঢাকায় বেশ কয়েকটি বাড়ি ছিল। কোর্ট-কাচারি এলাকার উল্টো দিকে কারকুন বাড়ি লেনের তাঁর বাড়িতেই আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রথম অফিস স্থাপিত হয়েছিল। দলের সভাপতি মওলানা ভাসানী সন্তোষ থেকে ঢাকায় এলে সে সময় ওই বাড়িতেই উঠতেন। তো সেই ইয়ার মোহাম্মদ খানের স্ত্রী জাহানারা খান বেশ কয়েক বছর আগে একজন গবেষককে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বলেছিলেন, ঢাকায় ইয়ার মোহাম্মদ খানের সাতটি বাড়ি ছিল। তিনি রাজনীতি করতে গিয়ে কয়েকটি বাড়ি বিক্রি করে দিয়েছিলেন। আর এখন শুনি, অনেকে রাজনীতিতে এসে বাড়ি বানায়। মিসেস ইয়ার মোহাম্মদ খান যে একবর্ণও অসত্য বলেননি, বর্তমানে রাজনীতির মাঠ ও সমাজের দিকে তাকালেই তা দৃষ্টিগোচর হয়।
অনেকে আক্ষেপ করে বলেন, আমাদের দেশের রাজনীতি নষ্ট হয়ে গেছে। কেউ কেউ বলেন, প্রাণঘাতী ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছে। এর আর আরোগ্যলাভের সম্ভাবনা নেই। কেউ কেউ আবার রাজনীতিকে বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা বলেও কটাক্ষ করে থাকেন। বলা হয়, রাজনীতি হচ্ছে পুঁজিহীন ব্যবসা। একসময়ের জনসেবার মহান ব্রত রাজনীতিকে ‘ব্যবসা’ হিসেবে মানুষের এই কটাক্ষ অনভিপ্রেত হলেও অমূলক নয়। মানুষ তো হরদম দেখছে, কীভাবে একশ্রেণির মানুষ রাজনীতিকে পুঁজি করে বিত্তবৈভবের পর্বত গড়ছে। খালি পকেটে ঘুরে বেড়ানো ছেলেটি রাজনীতি নামের আলাদিনের চেরাগের ছোঁয়ায় আলিশান বাড়ি আর লেটেস্ট মডেলের গাড়ির মালিক বনে যায়। আর বিয়ের বাজারে এমন পাত্রের কদরই তো বেশি।
সততার যুগের কথা বাদ দিলেও একটা সময় ছিল, সরকারি চাকরিজীবী পাত্রদের চাহিদা ছিল তুঙ্গে। সেখানেও ঝামেলা ছিল। দেখা হতো, পাত্র কোন ধরনের সরকারি চাকরি করে। ঘটক এসে পাত্রীপক্ষকে জানাত, পাত্র বেতন যা-ই পাক, ‘উপরি’ ভালো আয় করে। এই ‘উপরি’ ছিল আকর্ষণের আরেকটি বিষয়। সে সময় সব সরকারি চাকরিতে উপরি বা ঘুষের প্রচলন ছিল না। এখন তো তা কয়েক দশক আগের ‘কলেরা’ মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছে। আগে শুধু ঘুষের জন্য পুলিশকেই অভিযুক্ত করা হতো। আর এখন এমন কোনো সরকারি দপ্তর নেই, যেখানে ঘুষ তার রাজত্ব কায়েম করেনি। বিয়ের বাজারে পুলিশ পাত্রের কদর ছিল বেশ। সে কনস্টেবল হোক কিংবা এএসআই-ইন্সপেক্টর। আর সে জন্যই আশির দশকে ফিলিপস বাতির বিজ্ঞাপন—‘মাছের রাজা ইলিশ, বাত্তির রাজা ফিলিপস’-এর অনুকরণে তৈরি করা প্যারোডি লোকমুখে শোনা যেত—‘মাছের রাজা ইলিশ, আর জামাইর রাজা পুলিশ’। এখন অবশ্য পুলিশরা জোর গলায়ই বলতে পারে, আমরা একলা না, সবাই আমরা একই কাফেলার যাত্রী।
যাক, বিয়ের বাজারে রাজনৈতিক কর্মীদের প্রসঙ্গে ফিরে যাই। এখনো অনেকে রাজনৈতিক কর্মীদের কাছে কন্যার বিয়ে দিতে আগ্রহী হন না; বিশেষ করে বাংলাদেশের বর্তমান সময়ে যারা বিরোধী দলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাদের বাজারদর সর্বনিম্ন। তারা সংসার করবে কি, নিজেদের জীবন বাঁচানোই তো দুঃসাধ্য। এমনও ঘটনা দেখেছি, বউভাতের অনুষ্ঠানে বর উপস্থিত থাকতে পারেনি গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে। অতি গোপনে তাকে বাসররাত পালন করতে হয়েছে। অন্যদিকে সরকারি দলের কর্মী-ক্যাডারদের বিষয়টি ভিন্ন। একাধিক মামলার আসামি, সমাজের চিহ্নিত অপরাধী সরকারি দলের ওই ক্যাডারের বিয়ের অনুষ্ঠানে মন্ত্রী-এমপি, ওসি-ডিসিরা সহাস্যবদনে উপস্থিত হয়ে কৃতার্থ বোধ করেন। আর সে জন্যই এখন সবাই সরকারি দলের কর্মী হতে চায়। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, সে দলের সদস্য হওয়ার জন্য রীতিমতো লাইন পড়ে যায়। কেননা, সরকারি দলের কর্মী হতে পারলে অনেক সুবিধা। সমাজে সবাই মান্যি-গণ্যি করবে, পুলিশ-প্রশাসন খাতির করবে, নেতাদের স্নেহছায়া পাওয়া যাবে ইত্যাদি। আর সে জন্যই সবাই সরকারি দলের ছাতার নিচে থাকতে চায়।
বিষয়টি উপমহাদেশের প্রখ্যাত কৌতুক অভিনেতা ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর একটি কৌতুক নকশায় তুলে ধরেছেন চমৎকারভাবে। ঘটক গেছে এক মায়ের কাছে তাঁর মেয়ের জন্য পাত্রের সন্ধান নিয়ে। মেয়ের মা জিজ্ঞেস করলেন, ছেলে কী করে? ঘটক বলল, অনেক কিছুর সঙ্গে ছেলে রাজনীতিও করে। পদমর্যাদায় সে নেতার হাতা। বিস্মিত কনের মা বললেন, নেতার হাতা মানে? ঘটক বলল, ‘নেতাগো অনেক চামচা থাকে তো। ইনি চামচা গো থিকা একটু বড়, হাতা।’ তা ছেলে কোন দল করে? কনের মায়ের প্রশ্ন। দাঁত কেলিয়ে হেসে ঘটক বলছে, হেঁ হেঁ রানি মা, এদিক দিয়া ছেলে চালাক আছে। সে সব সময় সরকারি দল করে। যখন যে দল সরকারে থাকে, সেই দলে ভিড়ে যায়। খেলোয়াড়েরা যেমন সিজনে সিজনে ক্লাব পাল্টায়, ছেলেও তেমনি সুযোগ বুঝে জার্সি বদল কইরে ফেলে।
মহিউদ্দিন খান মোহন, সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ সম্প্রতি একটি মোক্ষম মন্তব্য করেছেন। জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তীর অধিবেশনে বক্তব্য দিতে গিয়ে ৯ এপ্রিল তিনি বলেছেন, ‘পাকিস্তান আমলে দেখা যেত, পাত্র যদি রাজনীতি করে, তাহলে বিয়ে দিত না। কারণ, সে কোনো চাকরি পাবে না। তাহলে সে খাওয়াবে কী?
খাওয়াতে হলে তাকে পত্রিকায় চাকরি করতে হবে, না হয় বটতলার উকিল হতে হবে, না হয় মুদিদোকানদার হতে হবে অথবা এজিবির কেরানিগিরি। কিন্তু এখন যদি শোনে, পাত্র সরকারি দল করে, তাহলে কয় আলহামদুলিল্লাহ। এর চেয়ে ভালো পাত্র আর হয় না। কারণ, সে কিছু করতে পারবে। তিনি আরও মন্তব্য করেছেন, ‘জীবনকে রাতারাতি বদলে দেওয়ার একমাত্র পন্থা হচ্ছে রাজনীতি। এখন এটা পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগে রাজনীতি নেশা ছিল, জীবনকে বাজি রেখে রাজনীতি করত। এখন সেই নেশা নেই। এটা এখন সবচেয়ে বড় পেশা।’ (আজকের পত্রিকা, ১০ এপ্রিল, ২০২৩)।
কাজী ফিরোজ রশীদ ভুল কিছু বলেননি। বাস্তবিক রাজনীতি ছিল একসময় অনেকের নেশা। তবে তা অবশ্যই বদ কোনো নেশা নয়। নেশাটি ছিল সমাজ ও মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করার। রাজনীতিকে তাই বলা হয় ব্রত। এটা কোনো পেশা নয়। যদিও কেউ কেউ ‘পেশাদার রাজনীতিক’ তকমা পেতে অনেক সময় আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তাঁরা অবশ্য এর দ্বারা বোঝাতে চান যে তিনি শয়নে-স্বপনে, ধ্যানে-জাগরণে সব সময় রাজনীতি নিয়ে ভাবেন, রাজনীতিই করেন। অতীতে যাঁরা আমাদের প্রাতঃস্মরণীয় রাজনীতিবিদ ছিলেন, তাঁরা সবাই কোনো না কোনো পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকতেন। কেউ শিক্ষকতা করতেন, কেউ হতেন আইনজীবী, কেউবা সাংবাদিক কিংবা অন্য কোনো পেশা। যাঁরা এসব পেশায় আসতেন না, তাঁরা তাঁদের পিতা বা পিতামহ থেকে প্রাপ্ত ধনসম্পদ ব্যয় করে রাজনীতি করতেন। আমাদের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও পাকিস্তান আমলে একটি পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আলফা ইনস্যুরেন্স কোম্পানির একজন কর্মকর্তা ছিলেন তিনি। কেন তিনি ওই পেশার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন? কারণ, তাঁর সংসার চালানোর জন্য অর্থের প্রয়োজন ছিল। সেই অর্থ তিনি বেতন হিসেবে ওই কোম্পানি থেকে আয় করতেন। তিনি কিন্তু ইচ্ছে করলেই ভিন্ন পন্থায় (যেটা এখন অনেক রাজনীতিকই আকছার করে থাকেন) সংসারের ব্যয় নির্বাহ করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। এটা একটা দৃষ্টান্ত।
একটি কথা আজকাল অনেকে বলে থাকেন, আগে জমিদারের ছেলেরা রাজনীতিতে এসে নিঃস্ব হতো, আর এখন কপর্দকহীন ভবঘুরেরা রাজনীতিতে এসে বিত্তশালী বনে যায়। কথাটি তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়ার অবকাশ নেই। আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন কোষাধ্যক্ষ ছিলেন ইয়ার মোহাম্মদ খান। ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান ইয়ার মোহাম্মদ খানের ঢাকায় বেশ কয়েকটি বাড়ি ছিল। কোর্ট-কাচারি এলাকার উল্টো দিকে কারকুন বাড়ি লেনের তাঁর বাড়িতেই আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রথম অফিস স্থাপিত হয়েছিল। দলের সভাপতি মওলানা ভাসানী সন্তোষ থেকে ঢাকায় এলে সে সময় ওই বাড়িতেই উঠতেন। তো সেই ইয়ার মোহাম্মদ খানের স্ত্রী জাহানারা খান বেশ কয়েক বছর আগে একজন গবেষককে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বলেছিলেন, ঢাকায় ইয়ার মোহাম্মদ খানের সাতটি বাড়ি ছিল। তিনি রাজনীতি করতে গিয়ে কয়েকটি বাড়ি বিক্রি করে দিয়েছিলেন। আর এখন শুনি, অনেকে রাজনীতিতে এসে বাড়ি বানায়। মিসেস ইয়ার মোহাম্মদ খান যে একবর্ণও অসত্য বলেননি, বর্তমানে রাজনীতির মাঠ ও সমাজের দিকে তাকালেই তা দৃষ্টিগোচর হয়।
অনেকে আক্ষেপ করে বলেন, আমাদের দেশের রাজনীতি নষ্ট হয়ে গেছে। কেউ কেউ বলেন, প্রাণঘাতী ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছে। এর আর আরোগ্যলাভের সম্ভাবনা নেই। কেউ কেউ আবার রাজনীতিকে বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা বলেও কটাক্ষ করে থাকেন। বলা হয়, রাজনীতি হচ্ছে পুঁজিহীন ব্যবসা। একসময়ের জনসেবার মহান ব্রত রাজনীতিকে ‘ব্যবসা’ হিসেবে মানুষের এই কটাক্ষ অনভিপ্রেত হলেও অমূলক নয়। মানুষ তো হরদম দেখছে, কীভাবে একশ্রেণির মানুষ রাজনীতিকে পুঁজি করে বিত্তবৈভবের পর্বত গড়ছে। খালি পকেটে ঘুরে বেড়ানো ছেলেটি রাজনীতি নামের আলাদিনের চেরাগের ছোঁয়ায় আলিশান বাড়ি আর লেটেস্ট মডেলের গাড়ির মালিক বনে যায়। আর বিয়ের বাজারে এমন পাত্রের কদরই তো বেশি।
সততার যুগের কথা বাদ দিলেও একটা সময় ছিল, সরকারি চাকরিজীবী পাত্রদের চাহিদা ছিল তুঙ্গে। সেখানেও ঝামেলা ছিল। দেখা হতো, পাত্র কোন ধরনের সরকারি চাকরি করে। ঘটক এসে পাত্রীপক্ষকে জানাত, পাত্র বেতন যা-ই পাক, ‘উপরি’ ভালো আয় করে। এই ‘উপরি’ ছিল আকর্ষণের আরেকটি বিষয়। সে সময় সব সরকারি চাকরিতে উপরি বা ঘুষের প্রচলন ছিল না। এখন তো তা কয়েক দশক আগের ‘কলেরা’ মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছে। আগে শুধু ঘুষের জন্য পুলিশকেই অভিযুক্ত করা হতো। আর এখন এমন কোনো সরকারি দপ্তর নেই, যেখানে ঘুষ তার রাজত্ব কায়েম করেনি। বিয়ের বাজারে পুলিশ পাত্রের কদর ছিল বেশ। সে কনস্টেবল হোক কিংবা এএসআই-ইন্সপেক্টর। আর সে জন্যই আশির দশকে ফিলিপস বাতির বিজ্ঞাপন—‘মাছের রাজা ইলিশ, বাত্তির রাজা ফিলিপস’-এর অনুকরণে তৈরি করা প্যারোডি লোকমুখে শোনা যেত—‘মাছের রাজা ইলিশ, আর জামাইর রাজা পুলিশ’। এখন অবশ্য পুলিশরা জোর গলায়ই বলতে পারে, আমরা একলা না, সবাই আমরা একই কাফেলার যাত্রী।
যাক, বিয়ের বাজারে রাজনৈতিক কর্মীদের প্রসঙ্গে ফিরে যাই। এখনো অনেকে রাজনৈতিক কর্মীদের কাছে কন্যার বিয়ে দিতে আগ্রহী হন না; বিশেষ করে বাংলাদেশের বর্তমান সময়ে যারা বিরোধী দলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাদের বাজারদর সর্বনিম্ন। তারা সংসার করবে কি, নিজেদের জীবন বাঁচানোই তো দুঃসাধ্য। এমনও ঘটনা দেখেছি, বউভাতের অনুষ্ঠানে বর উপস্থিত থাকতে পারেনি গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে। অতি গোপনে তাকে বাসররাত পালন করতে হয়েছে। অন্যদিকে সরকারি দলের কর্মী-ক্যাডারদের বিষয়টি ভিন্ন। একাধিক মামলার আসামি, সমাজের চিহ্নিত অপরাধী সরকারি দলের ওই ক্যাডারের বিয়ের অনুষ্ঠানে মন্ত্রী-এমপি, ওসি-ডিসিরা সহাস্যবদনে উপস্থিত হয়ে কৃতার্থ বোধ করেন। আর সে জন্যই এখন সবাই সরকারি দলের কর্মী হতে চায়। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, সে দলের সদস্য হওয়ার জন্য রীতিমতো লাইন পড়ে যায়। কেননা, সরকারি দলের কর্মী হতে পারলে অনেক সুবিধা। সমাজে সবাই মান্যি-গণ্যি করবে, পুলিশ-প্রশাসন খাতির করবে, নেতাদের স্নেহছায়া পাওয়া যাবে ইত্যাদি। আর সে জন্যই সবাই সরকারি দলের ছাতার নিচে থাকতে চায়।
বিষয়টি উপমহাদেশের প্রখ্যাত কৌতুক অভিনেতা ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর একটি কৌতুক নকশায় তুলে ধরেছেন চমৎকারভাবে। ঘটক গেছে এক মায়ের কাছে তাঁর মেয়ের জন্য পাত্রের সন্ধান নিয়ে। মেয়ের মা জিজ্ঞেস করলেন, ছেলে কী করে? ঘটক বলল, অনেক কিছুর সঙ্গে ছেলে রাজনীতিও করে। পদমর্যাদায় সে নেতার হাতা। বিস্মিত কনের মা বললেন, নেতার হাতা মানে? ঘটক বলল, ‘নেতাগো অনেক চামচা থাকে তো। ইনি চামচা গো থিকা একটু বড়, হাতা।’ তা ছেলে কোন দল করে? কনের মায়ের প্রশ্ন। দাঁত কেলিয়ে হেসে ঘটক বলছে, হেঁ হেঁ রানি মা, এদিক দিয়া ছেলে চালাক আছে। সে সব সময় সরকারি দল করে। যখন যে দল সরকারে থাকে, সেই দলে ভিড়ে যায়। খেলোয়াড়েরা যেমন সিজনে সিজনে ক্লাব পাল্টায়, ছেলেও তেমনি সুযোগ বুঝে জার্সি বদল কইরে ফেলে।
মহিউদ্দিন খান মোহন, সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
প্রবৃদ্ধির শীর্ষে থেকেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের দৌড়ে পিছিয়ে রয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ৫০ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়েছে
২০ ঘণ্টা আগেদুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি, উচ্চ করহারসহ ১৭ ধরনের বাধায় বিপর্যস্ত দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। রয়েছে সামাজিক সমস্যাও।
১ দিন আগেজমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৫ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৮ দিন আগে