ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা পর্যাপ্ত সময় অফিস করেন না—এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এতে সাধারণ মানুষ সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন, সেবা নিতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়ছেন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করা জরুরি। তাই ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের হাজিরার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।

গতকাল বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘স্থানীয় সরকারে নীতি প্রণয়ন ও সংস্কার: সম্পদ আহরণ, কার্যকর সমন্বয় এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ড’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ তথ্য জানান। স্থানীয় সরকারের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও কার্যকর করতে স্থানীয় সরকার দিবস পালনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

উন্নয়নের জন্য জবাবদিহি নিশ্চিতের বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করে এলজিআরডি মন্ত্রী বলেন, ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদে অনেকগুলো সাব কমিটি রয়েছে, যারা কোনো মিটিং করে না। জনপ্রতিনিধিরা কে কতোগুলো মিটিং করেছেন তা দৃশ্যমান বোর্ডে তুলে দিতে হবে। মন্ত্রী আরও বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদে অডিট হলে অনেক জনপ্রতিনিধি হীনমন্যতায় ভোগেন। জবাবদিহি নিশ্চিত করতে এ ধরনের মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।’

রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে তাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘মানুষ তখনই কর দেবে যখন সে বুঝবে এতে তার লাভ হবে। মানুষের আয় বাড়ানো গেলে কেউ রাজস্ব দিতে সমস্যা করবে না।’

কার্যকর ও জবাবদিহিমূলক স্থানীয় সরকার (ইএএলজি) প্রকল্প আয়োজিত এ সেমিনারে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাটালি শুয়ার্ড, ইউএনডিপি বাংলাদেশের সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি ভ্যান এনগুয়েন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফেরদৌস আরফিনা ওসমান। সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইএএলজি প্রকল্পের পরিচালক মুস্তাকিম বিল্লাহ ফারুকী। প্রবন্ধটিতে ১৯৭১-২০১৮ সাল পর্যন্ত সম্পাদিত স্থানীয় সরকারবিষয়ক বিভিন্ন গবেষণার আলোকে কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। প্রবন্ধের মূল্যায়ন করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নাসিরুদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোবাশ্বের মোমেন এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রণব কুমার পাণ্ডে। মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন দেশের বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা।

সভাপতির বক্তব্যে হেলালুদ্দিন আহমদ কেন্দ্রীয় সরকারের মুখাপেক্ষী না হয়ে নিজস্ব আয়ের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজেদের ব্যয় নির্বাহের পরামর্শ দেন।