মাহমুদুল মাসুদ, মুক্তিযোদ্ধা
বাংলাদেশের শিক্ষিত জনগণ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ কথাটির সঙ্গে মোটামুটি পরিচিত। সরকারের সদিচ্ছার ওপর প্রশাসনের অনেক পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয় নির্দিষ্ট সময়ের জন্য, যা অনেক ক্ষেত্রে পরে বাড়ানো হয়। পুরোটাই নির্ভর করে উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ এবং তদবিরের ওপর।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একটি টেলিভিশন চ্যানেলে আলোচকেরা জোর দিয়ে বলছিলেন, ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করা হয় জনগণের কাজ করার জন্য, অন্য কিছুর জন্য নয়—এটা ভুলে গেলে চলবে না; অর্থাৎ একরকম চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, যার নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ হচ্ছে জনগণ। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী ৫ বছর পর পর নির্বাচন হয় এবং সর্বোচ্চ ভোটে নিবাচিত জনপ্রতিনিধিরা জাতীয় সংসদের সদস্য হন। গণতন্ত্রের নিয়মানুযায়ী, যাঁর যাঁর এলাকার জনগণের প্ৰতিনিধিত্ব করেন এবং আইন প্রণয়ন থেকে অন্যান্য সমস্যা সংসদে তুলে সমাধানের চেষ্টা করেন তাঁরা।
সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৬ অনুসারে কমপক্ষে ২৫ বছর বয়স্ক যেকোনো নাগরিক অন্যান্য শর্ত পূরণ সাপেক্ষে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য। কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন নেই। তাঁদের সুযোগ-সুবিধা তাঁদেরই প্রণীত আইন ও বিধিমালা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তাঁদের নিয়োগ হয় নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে জনগণের ভোটে। নিয়োগকারী কে? জনগণ। নির্বাচনের সময় জনগণের দ্বারে দ্বারে ঘুরে এই নিয়োগের জন্য ভোট ভিক্ষা করা হয়। অনেক প্রার্থীর মধ্যে একজনকে এক এলাকার আমজনতা নির্বাচন করেন বা ৫ বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেন জাতীয় সংসদে, তাঁদের পক্ষে কাজ করার জন্য।
বাস্তবতা হলো, নিযুক্তির পর দলমত-নির্বিশেষে অনেকেই ভুলে যান যে তাঁরা তাঁদের এলাকার জনগণের নিয়োগপ্রাপ্ত। অনেকে জনগণকে মনে করেন প্রজা। পুরো দৃশ্য তখন পাল্টে যায়। ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও জাতীয় সংসদ পর্যন্ত জনপ্রতিনিধির অনেকেই পরে প্রভু হয়ে যান। ব্যতিক্রম নগণ্য। প্রভু নয়, বন্ধু হওয়ার প্রতিশ্রুতি মনে থাকে না। ভোটের আগে জনসেবক হওয়ার প্রতিশ্রুতি কেতাবেই থাকে, গোয়ালে নয়। আর পদ-পদবি, অর্থাৎ মন্ত্রিত্ব বা এ-জাতীয় কিছু পেলে তো কথাই নেই। উপদেশ বিতরণ আর জ্ঞানদান শুরু হয়। উপদেশ দিয়েই খালাস। জনপ্রতিনিধি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের জ্ঞানচক্ষু খুলে যায়। শুরু হয় জ্ঞান বিতরণ—অবিরাম উপদেশ বা সবক, আহ্বান আর আবেদন। নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ, অর্থাৎ জনগণ হয়ে যায় নির্বোধ ও মূর্খ। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তদের মুখে তখন খই ফুটতে থাকে। কাজের থেকে কথা বেশি। নিয়োগকারীকে সবকের পর সবক দেওয়া চলতে থাকে। যেমন—
১. জনগণকে সচেতন হতে হবে—জনগণ কীভাবে সচেতন হবে? সচেতন বলেই তো তাঁদের কাজ করার জন্য আপনাকে নির্বাচন করেছেন।
২. জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে—জনগণ কীভাবে এগিয়ে আসবে? আপনাকে নেতা নির্বাচিত করেছেন তো এগিয়ে যাওয়ার জন্য। তাঁরা তো আপনাকেই অনুসরণ করবেন। আপনি যেদিকে নিয়ে যাবেন, তাঁরা সেদিকে যাবেন।
৩. জনগণেরও দায়িত্ব আছে—কী দায়িত্ব? তাঁদের দায়িত্ব তাঁদের পক্ষে কাজ করার উপযুক্ত লোক নিযুক্ত করা। সে জন্যই তো আপনাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। এখন উল্টো তাঁদের ওপর দায়িত্ব চাপাচ্ছেন!
৪. জনগণকে সম্পৃক্ত হতে হবে—কীভাবে? নিজে নিজে সম্পৃক্ত হবে? জনগণকে সংগঠিত ও সম্পৃক্ত করবেন নির্বাচিত প্ৰতিনিধি, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে।
৫. শুধু সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না—কোন দিকে তাকাবে? সরকারের সহায়তা ছাড়া কোনো কাজ করা সম্ভব? জনগণ কোথায় কী করবে তা তো নির্বাচিত সরকারকেই ঠিক করতে হবে। তাঁদের সঠিকভাবে পরিচালনা করাই তো সরকারের কাজ। জনগণ ইচ্ছেমতো কিছু করলে তো বিশৃঙ্খলা হতে পারে।
৬. একা সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়—সরকার একা কেন করবে? জনগণকে নিয়ে করবে। জনগণকে সম্পৃক্ত করা তো সরকারেরই কাজ। সে জন্যই তো মাথার ওপর সরকার পৃথিবীর সব দেশে।
নিয়োগকারী থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত জ্ঞানী হতে পারে না। আসলে এসব বলার উদ্দেশ হলো নিজের দায়িত্ব এড়ানো। শুধু সুযোগ-সুবিধা আর ক্ষমতা ভোগ করে নিজের ভাগ্যোন্নয়ন তখন মূল লক্ষ্য হয়। তবে সবাই যে এ রকম তা নয়। ব্যতিক্রমও আছে। অনেকে আন্তরিকভাবে নিজেকে জনগণের কর্মচারী মনে করেন এবং সবক দেওয়ার মধ্যে যান না; তবে তাঁরা সংখ্যালঘু।
টেলিভিশনের বদৌলতে জাতীয় সংসদের কার্যক্রম এখন সরাসরি দেখা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস, যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্স ও ভারতীয় লোকসভার কার্যক্রমও টেলিভিশনে সরাসরি দেখা যায়। সেখানে কেউ হাসিঠাট্টা বা গল্পগুজব করেন না। সরকারি বা বিরোধী দলের কেউ বক্তব্য দিলে ভালো লাগুক আর না লাগুক, সবাই চুপচাপ বসে থাকেন। মোবাইল ফোনের ব্যবহার দেখা যায় না। কিন্তু এখানে ভিন্ন চিত্র। গল্পগুজব-হাসিঠাট্টা, মোবাইলের ব্যবহার যেন সংসদের কার্যক্রমের অংশ। ভাষণ শুরু হয় ‘মহান’ সংসদ বা ‘পবিত্র’ সংসদ বলে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের সময়ও দেখা যায় তাঁর কাছাকাছি বসা মন্ত্রী বা সদস্যদের অনেকে খোশগল্পে মশগুল। এতে ‘মহান’ ও ‘পবিত্র’ সংসদের পবিত্রতা নষ্ট হয় না। ভাবখানা এমন যে ওসব ভাষণ আমজনতার জন্য। বলার জন্য বলা। অনেকের ভাবখানা এ রকম, ‘প্রধানমন্ত্রী ভালো মানুষ, আমাকে খুব ভালো জানেন, এসব ছোটখাটো বিষয় নিয়ে মাথা ঘামান না, আমি তো সাধারণ মানুষ নই, আমার মন্ত্রিত্ব বা ক্ষমতা হারানোর কোনো আশঙ্কা নেই। এতে তো আর সদস্যপদ চলে যাবে না। ৫ বছর নিশ্চিন্ত।’
বিতর্কের অনেকটা সময় চলে যায় স্তুতিবাদে। যাঁরা হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর ‘তৈল’ পড়েছেন, তাঁরা জানেন তেল কত প্রকার ও কী কী, চাটুকারিতা কত রকম হতে পারে। আমাদের সময় দশম শ্রেণিতে পাঠ্য ছিল। তখন অতটা বুঝিনি। বাস্তব জীবনে প্রবেশের পর বুঝতে পারি।
জনগণের টাকার শ্রাদ্ধ করে চলে চাটুকারিতা। সংসদের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ যেনতেন প্রকারে। আসল বিষয়ের ধারেকাছেও থাকা হয় না। গরুর রচনার মতো। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই স্টেজে মেরে দেওয়া! হোমওয়ার্ক করার সময় নেই। এত ব্যস্ত! সংসদকে তখন মনে হয় একটি খেলো এবং হালকা প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশে এখন সরকারি-বেসরকারি অনেক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান আছে। একটা গবেষণা করা যেতে পারে এ দেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের সূচনা (১৯৩৭) থেকে বর্তমান পর্যন্ত সংসদ সদস্যদের ব্যাকগ্রাউন্ড এবং পারফরম্যান্স বা কার্যক্রমের ওপর। এমন সদস্যও ছিলেন, যিনি এক দিনও সংসদে কথা বলেননি। শুধু লাল পাসপোর্ট, শুল্কমুক্ত গাড়ি, ভিআইপি মর্যাদা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার জন্য সদস্য হয়েছেন। আর বছরের পর বছর সংসদে না গিয়ে বেতন-ভাতাসহ সব সুবিধা নেওয়ার নজির তো আছেই। এ-ব্যাপারে সর্বদলীয় ঐক্যমত প্রশংসনীয়। কেউ কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না। টাকা গৌরী সেনের!
সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭। (১) অনুযায়ী জনগণ সকল ক্ষমতার মালিক। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে পাকিস্তানি ধ্যানধারণার বাইরে বেরিয়ে এসে একটি উদার প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য, যেখানে সর্বস্তরের জনপ্রতিনিধিরা আক্ষরিক অর্থে জনকর্মচারী এবং গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন। বিনিময়ে তাঁদের বেতন-ভাতা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়।
‘জীবে দয়া করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর’। সাধারণত সেবা হয় বিনা মূল্যে। সংসদে কেউ অবৈতনিক স্বেচ্ছা শ্রমিক নন। কারও জন্য কিছু করা কোনো মেহেরবানি নয়। অন্য সরকারি নিয়োগপ্রাপ্তদের মতো জনগণের নিয়োগপ্রাপ্তদেরও রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধার বিনিময়ে অর্পিত দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করাই কাজ। সেবা করতে চাইলে যে কেউ অনেকভাবে করতে পারে। কোনো বাধা নেই। যেমন মাদার তেরেসা।
জনগণের নিয়োগপ্রাপ্তরা ঠিকমতো কাজ না করলে ৫ বছর পর অন্য লোক কাজ পাবেন—এটাই সাংবিধানিক নিয়ম। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৬ অনুযায়ী ৫ বছরের এই লোভনীয় নিয়োগটি পেতে হলে নিজেকে জনগণের চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী মনে করতে হবে—প্রভু, মালিক, বস বা অন্য কিছু নয়।
মাহমুদুল মাসুদ, মুক্তিযোদ্ধা
বাংলাদেশের শিক্ষিত জনগণ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ কথাটির সঙ্গে মোটামুটি পরিচিত। সরকারের সদিচ্ছার ওপর প্রশাসনের অনেক পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয় নির্দিষ্ট সময়ের জন্য, যা অনেক ক্ষেত্রে পরে বাড়ানো হয়। পুরোটাই নির্ভর করে উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ এবং তদবিরের ওপর।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একটি টেলিভিশন চ্যানেলে আলোচকেরা জোর দিয়ে বলছিলেন, ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করা হয় জনগণের কাজ করার জন্য, অন্য কিছুর জন্য নয়—এটা ভুলে গেলে চলবে না; অর্থাৎ একরকম চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, যার নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ হচ্ছে জনগণ। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী ৫ বছর পর পর নির্বাচন হয় এবং সর্বোচ্চ ভোটে নিবাচিত জনপ্রতিনিধিরা জাতীয় সংসদের সদস্য হন। গণতন্ত্রের নিয়মানুযায়ী, যাঁর যাঁর এলাকার জনগণের প্ৰতিনিধিত্ব করেন এবং আইন প্রণয়ন থেকে অন্যান্য সমস্যা সংসদে তুলে সমাধানের চেষ্টা করেন তাঁরা।
সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৬ অনুসারে কমপক্ষে ২৫ বছর বয়স্ক যেকোনো নাগরিক অন্যান্য শর্ত পূরণ সাপেক্ষে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য। কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন নেই। তাঁদের সুযোগ-সুবিধা তাঁদেরই প্রণীত আইন ও বিধিমালা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তাঁদের নিয়োগ হয় নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে জনগণের ভোটে। নিয়োগকারী কে? জনগণ। নির্বাচনের সময় জনগণের দ্বারে দ্বারে ঘুরে এই নিয়োগের জন্য ভোট ভিক্ষা করা হয়। অনেক প্রার্থীর মধ্যে একজনকে এক এলাকার আমজনতা নির্বাচন করেন বা ৫ বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেন জাতীয় সংসদে, তাঁদের পক্ষে কাজ করার জন্য।
বাস্তবতা হলো, নিযুক্তির পর দলমত-নির্বিশেষে অনেকেই ভুলে যান যে তাঁরা তাঁদের এলাকার জনগণের নিয়োগপ্রাপ্ত। অনেকে জনগণকে মনে করেন প্রজা। পুরো দৃশ্য তখন পাল্টে যায়। ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও জাতীয় সংসদ পর্যন্ত জনপ্রতিনিধির অনেকেই পরে প্রভু হয়ে যান। ব্যতিক্রম নগণ্য। প্রভু নয়, বন্ধু হওয়ার প্রতিশ্রুতি মনে থাকে না। ভোটের আগে জনসেবক হওয়ার প্রতিশ্রুতি কেতাবেই থাকে, গোয়ালে নয়। আর পদ-পদবি, অর্থাৎ মন্ত্রিত্ব বা এ-জাতীয় কিছু পেলে তো কথাই নেই। উপদেশ বিতরণ আর জ্ঞানদান শুরু হয়। উপদেশ দিয়েই খালাস। জনপ্রতিনিধি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের জ্ঞানচক্ষু খুলে যায়। শুরু হয় জ্ঞান বিতরণ—অবিরাম উপদেশ বা সবক, আহ্বান আর আবেদন। নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ, অর্থাৎ জনগণ হয়ে যায় নির্বোধ ও মূর্খ। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তদের মুখে তখন খই ফুটতে থাকে। কাজের থেকে কথা বেশি। নিয়োগকারীকে সবকের পর সবক দেওয়া চলতে থাকে। যেমন—
১. জনগণকে সচেতন হতে হবে—জনগণ কীভাবে সচেতন হবে? সচেতন বলেই তো তাঁদের কাজ করার জন্য আপনাকে নির্বাচন করেছেন।
২. জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে—জনগণ কীভাবে এগিয়ে আসবে? আপনাকে নেতা নির্বাচিত করেছেন তো এগিয়ে যাওয়ার জন্য। তাঁরা তো আপনাকেই অনুসরণ করবেন। আপনি যেদিকে নিয়ে যাবেন, তাঁরা সেদিকে যাবেন।
৩. জনগণেরও দায়িত্ব আছে—কী দায়িত্ব? তাঁদের দায়িত্ব তাঁদের পক্ষে কাজ করার উপযুক্ত লোক নিযুক্ত করা। সে জন্যই তো আপনাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। এখন উল্টো তাঁদের ওপর দায়িত্ব চাপাচ্ছেন!
৪. জনগণকে সম্পৃক্ত হতে হবে—কীভাবে? নিজে নিজে সম্পৃক্ত হবে? জনগণকে সংগঠিত ও সম্পৃক্ত করবেন নির্বাচিত প্ৰতিনিধি, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে।
৫. শুধু সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না—কোন দিকে তাকাবে? সরকারের সহায়তা ছাড়া কোনো কাজ করা সম্ভব? জনগণ কোথায় কী করবে তা তো নির্বাচিত সরকারকেই ঠিক করতে হবে। তাঁদের সঠিকভাবে পরিচালনা করাই তো সরকারের কাজ। জনগণ ইচ্ছেমতো কিছু করলে তো বিশৃঙ্খলা হতে পারে।
৬. একা সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়—সরকার একা কেন করবে? জনগণকে নিয়ে করবে। জনগণকে সম্পৃক্ত করা তো সরকারেরই কাজ। সে জন্যই তো মাথার ওপর সরকার পৃথিবীর সব দেশে।
নিয়োগকারী থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত জ্ঞানী হতে পারে না। আসলে এসব বলার উদ্দেশ হলো নিজের দায়িত্ব এড়ানো। শুধু সুযোগ-সুবিধা আর ক্ষমতা ভোগ করে নিজের ভাগ্যোন্নয়ন তখন মূল লক্ষ্য হয়। তবে সবাই যে এ রকম তা নয়। ব্যতিক্রমও আছে। অনেকে আন্তরিকভাবে নিজেকে জনগণের কর্মচারী মনে করেন এবং সবক দেওয়ার মধ্যে যান না; তবে তাঁরা সংখ্যালঘু।
টেলিভিশনের বদৌলতে জাতীয় সংসদের কার্যক্রম এখন সরাসরি দেখা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস, যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্স ও ভারতীয় লোকসভার কার্যক্রমও টেলিভিশনে সরাসরি দেখা যায়। সেখানে কেউ হাসিঠাট্টা বা গল্পগুজব করেন না। সরকারি বা বিরোধী দলের কেউ বক্তব্য দিলে ভালো লাগুক আর না লাগুক, সবাই চুপচাপ বসে থাকেন। মোবাইল ফোনের ব্যবহার দেখা যায় না। কিন্তু এখানে ভিন্ন চিত্র। গল্পগুজব-হাসিঠাট্টা, মোবাইলের ব্যবহার যেন সংসদের কার্যক্রমের অংশ। ভাষণ শুরু হয় ‘মহান’ সংসদ বা ‘পবিত্র’ সংসদ বলে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের সময়ও দেখা যায় তাঁর কাছাকাছি বসা মন্ত্রী বা সদস্যদের অনেকে খোশগল্পে মশগুল। এতে ‘মহান’ ও ‘পবিত্র’ সংসদের পবিত্রতা নষ্ট হয় না। ভাবখানা এমন যে ওসব ভাষণ আমজনতার জন্য। বলার জন্য বলা। অনেকের ভাবখানা এ রকম, ‘প্রধানমন্ত্রী ভালো মানুষ, আমাকে খুব ভালো জানেন, এসব ছোটখাটো বিষয় নিয়ে মাথা ঘামান না, আমি তো সাধারণ মানুষ নই, আমার মন্ত্রিত্ব বা ক্ষমতা হারানোর কোনো আশঙ্কা নেই। এতে তো আর সদস্যপদ চলে যাবে না। ৫ বছর নিশ্চিন্ত।’
বিতর্কের অনেকটা সময় চলে যায় স্তুতিবাদে। যাঁরা হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর ‘তৈল’ পড়েছেন, তাঁরা জানেন তেল কত প্রকার ও কী কী, চাটুকারিতা কত রকম হতে পারে। আমাদের সময় দশম শ্রেণিতে পাঠ্য ছিল। তখন অতটা বুঝিনি। বাস্তব জীবনে প্রবেশের পর বুঝতে পারি।
জনগণের টাকার শ্রাদ্ধ করে চলে চাটুকারিতা। সংসদের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ যেনতেন প্রকারে। আসল বিষয়ের ধারেকাছেও থাকা হয় না। গরুর রচনার মতো। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই স্টেজে মেরে দেওয়া! হোমওয়ার্ক করার সময় নেই। এত ব্যস্ত! সংসদকে তখন মনে হয় একটি খেলো এবং হালকা প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশে এখন সরকারি-বেসরকারি অনেক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান আছে। একটা গবেষণা করা যেতে পারে এ দেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের সূচনা (১৯৩৭) থেকে বর্তমান পর্যন্ত সংসদ সদস্যদের ব্যাকগ্রাউন্ড এবং পারফরম্যান্স বা কার্যক্রমের ওপর। এমন সদস্যও ছিলেন, যিনি এক দিনও সংসদে কথা বলেননি। শুধু লাল পাসপোর্ট, শুল্কমুক্ত গাড়ি, ভিআইপি মর্যাদা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার জন্য সদস্য হয়েছেন। আর বছরের পর বছর সংসদে না গিয়ে বেতন-ভাতাসহ সব সুবিধা নেওয়ার নজির তো আছেই। এ-ব্যাপারে সর্বদলীয় ঐক্যমত প্রশংসনীয়। কেউ কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না। টাকা গৌরী সেনের!
সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭। (১) অনুযায়ী জনগণ সকল ক্ষমতার মালিক। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে পাকিস্তানি ধ্যানধারণার বাইরে বেরিয়ে এসে একটি উদার প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য, যেখানে সর্বস্তরের জনপ্রতিনিধিরা আক্ষরিক অর্থে জনকর্মচারী এবং গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন। বিনিময়ে তাঁদের বেতন-ভাতা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়।
‘জীবে দয়া করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর’। সাধারণত সেবা হয় বিনা মূল্যে। সংসদে কেউ অবৈতনিক স্বেচ্ছা শ্রমিক নন। কারও জন্য কিছু করা কোনো মেহেরবানি নয়। অন্য সরকারি নিয়োগপ্রাপ্তদের মতো জনগণের নিয়োগপ্রাপ্তদেরও রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধার বিনিময়ে অর্পিত দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করাই কাজ। সেবা করতে চাইলে যে কেউ অনেকভাবে করতে পারে। কোনো বাধা নেই। যেমন মাদার তেরেসা।
জনগণের নিয়োগপ্রাপ্তরা ঠিকমতো কাজ না করলে ৫ বছর পর অন্য লোক কাজ পাবেন—এটাই সাংবিধানিক নিয়ম। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৬ অনুযায়ী ৫ বছরের এই লোভনীয় নিয়োগটি পেতে হলে নিজেকে জনগণের চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী মনে করতে হবে—প্রভু, মালিক, বস বা অন্য কিছু নয়।
মাহমুদুল মাসুদ, মুক্তিযোদ্ধা
প্রবৃদ্ধির শীর্ষে থেকেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের দৌড়ে পিছিয়ে রয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ৫০ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়েছে
২ দিন আগেদুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি, উচ্চ করহারসহ ১৭ ধরনের বাধায় বিপর্যস্ত দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। রয়েছে সামাজিক সমস্যাও।
২ দিন আগেজমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৬ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৯ দিন আগে