ইমতিয়াজ মাহমুদ, সিনিয়র আইনজীবী
কোটা সংস্কার আন্দোলন একটা সংঘাতময় অবস্থায় পৌঁছেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কয়েক দিন ধরে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। সরকারের পক্ষ থেকে শুরুতে নমনীয়তা দেখানো সত্ত্বেও আন্দোলনকারীরা নমনীয়তা দেখানোর প্রয়োজন বোধ করেনি। সরকার কঠোর হয়েছে। ছাত্রলীগও মাঠে নেমেছে। দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে ১৫ জুলাই অনেকে আহত হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো রণক্ষেত্রে পরিণত হোক—এটা কারও কাম্য হতে পারে না। শান্তিকামী সব মানুষ নিশ্চয়ই আশা করে, সব পক্ষই যুক্তিসংগত আচরণ করবে। আন্দোলনকারীরা সীমা লঙ্ঘন করবে না, আবার সরকারপক্ষও দমনপীড়ন চালিয়ে নিজেদের ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করবে না। এর মধ্যে যা ঘটেছে তা দুঃখজনক।
এবার আসা যাক দাবি প্রসঙ্গে। সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল বা হ্রাসের যে দাবি করছে কিছু শিক্ষার্থী, ব্যক্তিগতভাবে আমি তার বিরোধিতা করি। কেন? সে কথাটাই বলছি।
মুক্তিযোদ্ধা এবং পোষ্য কোটায় এ পর্যন্ত বাংলাদেশে কয়জন বিসিএস ক্যাডারে বা অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদে নিয়োগ পেয়েছে, সে তথ্য কি কারও কাছে আছে? আমি জেনেছি, এই সংখ্যাটা অতিনগণ্য। এতই নগণ্য যে সবাইকে যোগ করলে ১ শতাংশও হবে না। মুক্তিযোদ্ধা ও পোষ্য কোটায় লোক পাওয়া যায় না—এ কারণে কোটা খালি থাকে; অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধা ও পোষ্য কোটার কারণে কেউ বঞ্চিত হচ্ছে, সেটা সত্যি নয়। এই কোটাটা কার্যত কারও স্বার্থই বিঘ্নিত করে না। তাহলে এত ক্ষোভ কেন? ব্যঙ্গ করে কেউ কেউ বলছে ‘নাতিপুতি কোটা’! এটা কি চাকরি থেকে বঞ্চিত হওয়ার জন্য বলা, নাকি এর পেছনে অন্য কোনো মতলব আছে? যদি এমন হতো যে মুক্তিযোদ্ধা কোটার কারণে শত শত চাকরি তাদের ছেলেমেয়েরা বা নাতিপুতিরা নিয়ে যাচ্ছে, তাহলে বুঝতাম যে স্বার্থ রক্ষার জন্য বলছে। সেটা তো নয়।
বলা হচ্ছে, অনেক নাকি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আছে। বলি, তার জন্য ‘মুক্তিযোদ্ধা’ কথাটা আমরা ভুলে যাব? কিছু প্রতারক ধরনের লোক জাল-জালিয়াতি করে ব্যক্তিগত সুবিধা নিতে চেষ্টা করে, ওদের ধরে জেলে পাঠানো দরকার, শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার ওদের বিরুদ্ধে। কিন্তু তার জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আমার সম্মান শেষ হয়ে যাবে? ‘চোরের’ জন্য ‘মুক্তিযোদ্ধা’ কথাটা ভুলে যাব? কিছু লোক প্রশ্নপত্র ফাঁস করে, সেই প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে বিসিএস পাস করে, তার জন্য বিসিএস তুলে দিতে হবে? পুলিশের কিছু লোক ঘুষ খায়, অন্যায় করে, সে জন্য পুলিশ বাহিনী তুলে দিতে হবে? আর্মির জেনারেলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে আর্মি তুলে দেওয়ার দাবি তুলতে হবে?
কেউ কেউ বলছে, ‘মুক্তিযোদ্ধারা কি কোটা চেয়েছিলেন?’ মুক্তিযোদ্ধারা ব্যক্তিগত সুবিধা চাইবেন কেন? ১৯৭১ সালে যখন যুদ্ধ শুরু হয়, তখন ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য যারা যুদ্ধে গিয়েছিল, ওরা তো রাজাকারে যোগ দিয়েছে। রাজাকাররা বেতন পেত, ভাতা পেত, লুটের মাল পেত। লোভ করেছে রাজাকাররা। বীর মুক্তিযোদ্ধারা তো জীবন দিতে গেছেন দেশের জন্য। প্রাণ দিতে গেছেন, মরতে গেছেন। জাহানার ইমামের সেই কথাটা জানেন না? তার পুত্র যখন বলছে যুদ্ধে যাবে, তিনি কী বলেছেন? জানেন সে কথা? না জানলে খুঁজে বের করুন, জেনে নিন। সে কথা বলতে আমার বুক ভেঙে যায়।
কল্পনা করুন মুক্তিযুদ্ধকালের পরিস্থিতিটা। একটা অত্যন্ত শক্তিশালী সুসজ্জিত বাহিনী আমাদের ওপর আক্রমণ করেছে। বিশাল সেই বাহিনীর ১৬ ডিসেম্বরে আমাদের হাতে বন্দীই হয়েছিল প্রায় এক লাখ। ওদের হাতে অত্যাধুনিক অস্ত্র—চীনের অস্ত্র, আমেরিকার অস্ত্র, ব্রিটিশ হাতিয়ার, দেশে তৈরি অস্ত্র। ট্যাংক, কামান, বিমান, জাহাজ—কোনো কিছুর কমতি নেই। একঝাঁক জেনারেল পরিচালনা করছে সেই আক্রমণ। একজন সদ্য কৈশোর উত্তীর্ণ যুবক ওর মাকে বলছে যুদ্ধে যাবে এই বিশাল বাহিনীর বিরুদ্ধে। ওদের আপনি কী বলবেন? অ্যাঞ্জেল? পাগল? বেকুব?
আমি এটা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধাই ব্যক্তিগত লাভের জন্য যুদ্ধে যাননি। লোভীরা পাকিস্তানিদের পক্ষে ছিল, আর যুদ্ধে
গেছেন দেশপ্রেমিকেরা। আর দেশপ্রেম কী জিনিস? দেশপ্রেম হচ্ছে এমন একটা পরীক্ষা, যেটায় পাস মার্ক হচ্ছে ১০০-তে ১০০। ৯৯ পেলেও ফেল। এ পরীক্ষায় পাস করেছেন কেবল আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা। আমার সারা জীবনের আফসোস, কেন আমি আরও কয়েক বছর আগে জন্মালাম না, এই পরীক্ষাটায় অংশ নিতে পারলাম না!
এমনকি যে চোরটা জেলের তালা ভেঙে যুদ্ধে গিয়েছিল, সে-ও আমাদের যুদ্ধে না-যাওয়া সবচেয়ে মেধাবী ব্যক্তিটির চেয়ে উত্তম। দেশপ্রেমের পরীক্ষায় সেই চোরটিও পাস করেছে, সেই পরীক্ষায় আমাদের বিপক্ষে থাকা পণ্ডিতেরাও ফেল অথবা সেই সব উচ্চশিক্ষিত মেধাবীরা, যারা একরকম নিরাপদ-নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছিল। আমাদের সেই প্রিয়দের চেয়ে প্রিয়তম মানুষগুলোর ত্যাগের কি প্রতিদান সামান্য কয়েকটা বিসিএস চাকরি হতে পারে?
মুক্তিযোদ্ধা বা পোষ্য কোটা, আপনারা যাকে বলছেন নাতিপুতি কোটা, এটা হচ্ছে আমাদের সেই সব পাগল দিওয়ানাসর্বস্ব ত্যাগী দেশপ্রেমিকের জন্য এই জাতির অতিসামান্য একটি নৈবেদ্য মাত্র। আপনি ব্যক্তিগত স্বার্থে এর বিরোধিতা করবেন? তাও বুঝতাম যদি এই কোটায় কারও ক্ষতি হতো বা কাউকে বঞ্চিত করা হতো। সেটাও তো হচ্ছে না। পিএসসিকে জিজ্ঞাসা করেন, ওরা আপনাকে জানাবে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় এযাবৎ কয়জনের চাকরি হয়েছে। ৩০ শতাংশ শুনতে অনেক বড় শোনায় বটে, কিন্তু কার্যত মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পেয়েছে অল্প কয়েকজন, অনুল্লেখযোগ্য সংখ্যা—১ শতাংশের কম।
মুক্তিযোদ্ধা কোটা খালি থাকলে সেটা অন্যরাই পায়। আর যদি অন্যরা না পায় তাহলে দাবি তুলুন, মুক্তিযোদ্ধা কোটার শূন্য আসনগুলোয় অন্যদের নিয়োগ দেওয়ার। মুক্তিযোদ্ধা কোটা তুলে দেওয়ার দাবি কেন? মতলবটা কী? আন্দোলনের সবার মতলব জানি না, অনেকেই হয়তো স্পষ্ট ধারণা নেই বিধায় আন্দোলনে যোগ দিয়েছে। কেউ কেউ গণতন্ত্রের সংগ্রামের অংশ বিবেচনা করে সরকারবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়েছে। কিন্তু এই আন্দোলনের নেতৃত্বে কিছু ক্যারেক্টারকে আমরা দেখেছি, চিনি ওদের, ওরা মুক্তিযুদ্ধের গরিমাকে ম্লান করার উদ্দেশ্যে আন্দোলনটা টেনে নিচ্ছে।
অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ ‘প্রধানমন্ত্রীর ভুল কথার জবাবে-১১’ শিরোনামে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন। লেখাটা শুরু করেছেন এই বলে, ‘একটু আগে কোটা আন্দোলন নিয়ে আপনার কথা শুনলাম। আপনি বললেন আদালতের রায়ের ক্ষেত্রে আপনার কিছু করার নেই, অথচ আজকেই আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়েছে, সরকার প্রয়োজনমতো নিজেরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। তাহলে?’
আনু মুহাম্মদ পণ্ডিত মানুষ, অধ্যাপক ছিলেন, ভালো মানুষ, কিছু আন্দোলনেও নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁকে অনেকেই পছন্দ করে, তাঁর কিছু ভক্তও আছে, যারা তাঁকে পীরের মতো মানে। এই সব কারণে তিনি এ রকম কিছু বললে সেটা চট করে ছড়িয়ে পড়ে, তিনি ভুল কথা বললে ভুলটাই সত্যি হয়ে ছড়িয়ে পড়ে আর সেটার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে তরুণদের ওপর। সুতরাং তাঁর দায়িত্বও হচ্ছে ফেসবুকের ওই পোস্টটি সংশোধন করে ভ্রান্তিটা দূর করা।
আনু মুহাম্মদের ভুলটা কোথায় সেটাই বলছি। নির্বাহী বিভাগ কোটা সংস্কার করতে পারে। সেই ক্ষমতা অবশ্যই নির্বাহী বিভাগের। ওরা কোনো একটা খাতে কোটা কমাতে পারে, বাড়াতে পারে, নতুন কোটার খাত যোগ করতে পারে, পুরোনো কোনো কোটা বাদ দিতে পারে। ক্ষমতাটা নির্বাহী বিভাগেরই। এটাকে নির্বাহী বিভাগের দায়িত্বও বলা যেতে পারে। কিন্তু আদালতে যখন কোনো একটা মোকদ্দমায় কোনো অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা বা স্থিতাবস্থার আদেশ দেওয়া থাকে, তখন নির্বাহী বিভাগ আর সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে না।
কোটাসংক্রান্ত একটা মোকদ্দমায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ইতিমধ্যে একটা স্থিতাবস্থার আদেশ দিয়েছেন। এই অবস্থায় নির্বাহী বিভাগ কোটা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না, সেটা হবে আদালতের আদেশ উপেক্ষা করা বা আদালতের কর্তৃত্বকে হেয় করা বা আদালত অবমাননা করা। প্রধানমন্ত্রী যেটা বলেছেন, বিষয়টা এখন আদালতের হাতে, আদালতের পর্ব শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওদের এখন কিছু করার নেই—এটা তিনি ঠিকই বলেছেন।
‘মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা কোটা পাবে না তো কি রাজাকারের নাতিপুতিরা পাবে?’ প্রধানমন্ত্রীর এ কথার মধ্যেও অন্যায় কিছু নেই। আপনি এর সঙ্গে একমত না হতে পারেন, কিন্তু এই কথার ভুল ব্যাখ্যা করে কাউকে বিভ্রান্ত করতে পারেন না।
কোটা সংস্কার আন্দোলন একটা সংঘাতময় অবস্থায় পৌঁছেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কয়েক দিন ধরে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। সরকারের পক্ষ থেকে শুরুতে নমনীয়তা দেখানো সত্ত্বেও আন্দোলনকারীরা নমনীয়তা দেখানোর প্রয়োজন বোধ করেনি। সরকার কঠোর হয়েছে। ছাত্রলীগও মাঠে নেমেছে। দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে ১৫ জুলাই অনেকে আহত হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো রণক্ষেত্রে পরিণত হোক—এটা কারও কাম্য হতে পারে না। শান্তিকামী সব মানুষ নিশ্চয়ই আশা করে, সব পক্ষই যুক্তিসংগত আচরণ করবে। আন্দোলনকারীরা সীমা লঙ্ঘন করবে না, আবার সরকারপক্ষও দমনপীড়ন চালিয়ে নিজেদের ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করবে না। এর মধ্যে যা ঘটেছে তা দুঃখজনক।
এবার আসা যাক দাবি প্রসঙ্গে। সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল বা হ্রাসের যে দাবি করছে কিছু শিক্ষার্থী, ব্যক্তিগতভাবে আমি তার বিরোধিতা করি। কেন? সে কথাটাই বলছি।
মুক্তিযোদ্ধা এবং পোষ্য কোটায় এ পর্যন্ত বাংলাদেশে কয়জন বিসিএস ক্যাডারে বা অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদে নিয়োগ পেয়েছে, সে তথ্য কি কারও কাছে আছে? আমি জেনেছি, এই সংখ্যাটা অতিনগণ্য। এতই নগণ্য যে সবাইকে যোগ করলে ১ শতাংশও হবে না। মুক্তিযোদ্ধা ও পোষ্য কোটায় লোক পাওয়া যায় না—এ কারণে কোটা খালি থাকে; অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধা ও পোষ্য কোটার কারণে কেউ বঞ্চিত হচ্ছে, সেটা সত্যি নয়। এই কোটাটা কার্যত কারও স্বার্থই বিঘ্নিত করে না। তাহলে এত ক্ষোভ কেন? ব্যঙ্গ করে কেউ কেউ বলছে ‘নাতিপুতি কোটা’! এটা কি চাকরি থেকে বঞ্চিত হওয়ার জন্য বলা, নাকি এর পেছনে অন্য কোনো মতলব আছে? যদি এমন হতো যে মুক্তিযোদ্ধা কোটার কারণে শত শত চাকরি তাদের ছেলেমেয়েরা বা নাতিপুতিরা নিয়ে যাচ্ছে, তাহলে বুঝতাম যে স্বার্থ রক্ষার জন্য বলছে। সেটা তো নয়।
বলা হচ্ছে, অনেক নাকি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আছে। বলি, তার জন্য ‘মুক্তিযোদ্ধা’ কথাটা আমরা ভুলে যাব? কিছু প্রতারক ধরনের লোক জাল-জালিয়াতি করে ব্যক্তিগত সুবিধা নিতে চেষ্টা করে, ওদের ধরে জেলে পাঠানো দরকার, শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার ওদের বিরুদ্ধে। কিন্তু তার জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আমার সম্মান শেষ হয়ে যাবে? ‘চোরের’ জন্য ‘মুক্তিযোদ্ধা’ কথাটা ভুলে যাব? কিছু লোক প্রশ্নপত্র ফাঁস করে, সেই প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে বিসিএস পাস করে, তার জন্য বিসিএস তুলে দিতে হবে? পুলিশের কিছু লোক ঘুষ খায়, অন্যায় করে, সে জন্য পুলিশ বাহিনী তুলে দিতে হবে? আর্মির জেনারেলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে আর্মি তুলে দেওয়ার দাবি তুলতে হবে?
কেউ কেউ বলছে, ‘মুক্তিযোদ্ধারা কি কোটা চেয়েছিলেন?’ মুক্তিযোদ্ধারা ব্যক্তিগত সুবিধা চাইবেন কেন? ১৯৭১ সালে যখন যুদ্ধ শুরু হয়, তখন ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য যারা যুদ্ধে গিয়েছিল, ওরা তো রাজাকারে যোগ দিয়েছে। রাজাকাররা বেতন পেত, ভাতা পেত, লুটের মাল পেত। লোভ করেছে রাজাকাররা। বীর মুক্তিযোদ্ধারা তো জীবন দিতে গেছেন দেশের জন্য। প্রাণ দিতে গেছেন, মরতে গেছেন। জাহানার ইমামের সেই কথাটা জানেন না? তার পুত্র যখন বলছে যুদ্ধে যাবে, তিনি কী বলেছেন? জানেন সে কথা? না জানলে খুঁজে বের করুন, জেনে নিন। সে কথা বলতে আমার বুক ভেঙে যায়।
কল্পনা করুন মুক্তিযুদ্ধকালের পরিস্থিতিটা। একটা অত্যন্ত শক্তিশালী সুসজ্জিত বাহিনী আমাদের ওপর আক্রমণ করেছে। বিশাল সেই বাহিনীর ১৬ ডিসেম্বরে আমাদের হাতে বন্দীই হয়েছিল প্রায় এক লাখ। ওদের হাতে অত্যাধুনিক অস্ত্র—চীনের অস্ত্র, আমেরিকার অস্ত্র, ব্রিটিশ হাতিয়ার, দেশে তৈরি অস্ত্র। ট্যাংক, কামান, বিমান, জাহাজ—কোনো কিছুর কমতি নেই। একঝাঁক জেনারেল পরিচালনা করছে সেই আক্রমণ। একজন সদ্য কৈশোর উত্তীর্ণ যুবক ওর মাকে বলছে যুদ্ধে যাবে এই বিশাল বাহিনীর বিরুদ্ধে। ওদের আপনি কী বলবেন? অ্যাঞ্জেল? পাগল? বেকুব?
আমি এটা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধাই ব্যক্তিগত লাভের জন্য যুদ্ধে যাননি। লোভীরা পাকিস্তানিদের পক্ষে ছিল, আর যুদ্ধে
গেছেন দেশপ্রেমিকেরা। আর দেশপ্রেম কী জিনিস? দেশপ্রেম হচ্ছে এমন একটা পরীক্ষা, যেটায় পাস মার্ক হচ্ছে ১০০-তে ১০০। ৯৯ পেলেও ফেল। এ পরীক্ষায় পাস করেছেন কেবল আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা। আমার সারা জীবনের আফসোস, কেন আমি আরও কয়েক বছর আগে জন্মালাম না, এই পরীক্ষাটায় অংশ নিতে পারলাম না!
এমনকি যে চোরটা জেলের তালা ভেঙে যুদ্ধে গিয়েছিল, সে-ও আমাদের যুদ্ধে না-যাওয়া সবচেয়ে মেধাবী ব্যক্তিটির চেয়ে উত্তম। দেশপ্রেমের পরীক্ষায় সেই চোরটিও পাস করেছে, সেই পরীক্ষায় আমাদের বিপক্ষে থাকা পণ্ডিতেরাও ফেল অথবা সেই সব উচ্চশিক্ষিত মেধাবীরা, যারা একরকম নিরাপদ-নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছিল। আমাদের সেই প্রিয়দের চেয়ে প্রিয়তম মানুষগুলোর ত্যাগের কি প্রতিদান সামান্য কয়েকটা বিসিএস চাকরি হতে পারে?
মুক্তিযোদ্ধা বা পোষ্য কোটা, আপনারা যাকে বলছেন নাতিপুতি কোটা, এটা হচ্ছে আমাদের সেই সব পাগল দিওয়ানাসর্বস্ব ত্যাগী দেশপ্রেমিকের জন্য এই জাতির অতিসামান্য একটি নৈবেদ্য মাত্র। আপনি ব্যক্তিগত স্বার্থে এর বিরোধিতা করবেন? তাও বুঝতাম যদি এই কোটায় কারও ক্ষতি হতো বা কাউকে বঞ্চিত করা হতো। সেটাও তো হচ্ছে না। পিএসসিকে জিজ্ঞাসা করেন, ওরা আপনাকে জানাবে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় এযাবৎ কয়জনের চাকরি হয়েছে। ৩০ শতাংশ শুনতে অনেক বড় শোনায় বটে, কিন্তু কার্যত মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পেয়েছে অল্প কয়েকজন, অনুল্লেখযোগ্য সংখ্যা—১ শতাংশের কম।
মুক্তিযোদ্ধা কোটা খালি থাকলে সেটা অন্যরাই পায়। আর যদি অন্যরা না পায় তাহলে দাবি তুলুন, মুক্তিযোদ্ধা কোটার শূন্য আসনগুলোয় অন্যদের নিয়োগ দেওয়ার। মুক্তিযোদ্ধা কোটা তুলে দেওয়ার দাবি কেন? মতলবটা কী? আন্দোলনের সবার মতলব জানি না, অনেকেই হয়তো স্পষ্ট ধারণা নেই বিধায় আন্দোলনে যোগ দিয়েছে। কেউ কেউ গণতন্ত্রের সংগ্রামের অংশ বিবেচনা করে সরকারবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়েছে। কিন্তু এই আন্দোলনের নেতৃত্বে কিছু ক্যারেক্টারকে আমরা দেখেছি, চিনি ওদের, ওরা মুক্তিযুদ্ধের গরিমাকে ম্লান করার উদ্দেশ্যে আন্দোলনটা টেনে নিচ্ছে।
অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ ‘প্রধানমন্ত্রীর ভুল কথার জবাবে-১১’ শিরোনামে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন। লেখাটা শুরু করেছেন এই বলে, ‘একটু আগে কোটা আন্দোলন নিয়ে আপনার কথা শুনলাম। আপনি বললেন আদালতের রায়ের ক্ষেত্রে আপনার কিছু করার নেই, অথচ আজকেই আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়েছে, সরকার প্রয়োজনমতো নিজেরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। তাহলে?’
আনু মুহাম্মদ পণ্ডিত মানুষ, অধ্যাপক ছিলেন, ভালো মানুষ, কিছু আন্দোলনেও নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁকে অনেকেই পছন্দ করে, তাঁর কিছু ভক্তও আছে, যারা তাঁকে পীরের মতো মানে। এই সব কারণে তিনি এ রকম কিছু বললে সেটা চট করে ছড়িয়ে পড়ে, তিনি ভুল কথা বললে ভুলটাই সত্যি হয়ে ছড়িয়ে পড়ে আর সেটার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে তরুণদের ওপর। সুতরাং তাঁর দায়িত্বও হচ্ছে ফেসবুকের ওই পোস্টটি সংশোধন করে ভ্রান্তিটা দূর করা।
আনু মুহাম্মদের ভুলটা কোথায় সেটাই বলছি। নির্বাহী বিভাগ কোটা সংস্কার করতে পারে। সেই ক্ষমতা অবশ্যই নির্বাহী বিভাগের। ওরা কোনো একটা খাতে কোটা কমাতে পারে, বাড়াতে পারে, নতুন কোটার খাত যোগ করতে পারে, পুরোনো কোনো কোটা বাদ দিতে পারে। ক্ষমতাটা নির্বাহী বিভাগেরই। এটাকে নির্বাহী বিভাগের দায়িত্বও বলা যেতে পারে। কিন্তু আদালতে যখন কোনো একটা মোকদ্দমায় কোনো অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা বা স্থিতাবস্থার আদেশ দেওয়া থাকে, তখন নির্বাহী বিভাগ আর সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে না।
কোটাসংক্রান্ত একটা মোকদ্দমায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ইতিমধ্যে একটা স্থিতাবস্থার আদেশ দিয়েছেন। এই অবস্থায় নির্বাহী বিভাগ কোটা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না, সেটা হবে আদালতের আদেশ উপেক্ষা করা বা আদালতের কর্তৃত্বকে হেয় করা বা আদালত অবমাননা করা। প্রধানমন্ত্রী যেটা বলেছেন, বিষয়টা এখন আদালতের হাতে, আদালতের পর্ব শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওদের এখন কিছু করার নেই—এটা তিনি ঠিকই বলেছেন।
‘মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা কোটা পাবে না তো কি রাজাকারের নাতিপুতিরা পাবে?’ প্রধানমন্ত্রীর এ কথার মধ্যেও অন্যায় কিছু নেই। আপনি এর সঙ্গে একমত না হতে পারেন, কিন্তু এই কথার ভুল ব্যাখ্যা করে কাউকে বিভ্রান্ত করতে পারেন না।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৩ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৬ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৬ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১০ দিন আগে