মোনায়েম সরকার
দেশে এক অচলাবস্থা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক আন্দোলনের কারণে নয়, শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলনের কারণে এই অচলাবস্থা। আন্দোলন এখনো শান্তিপূর্ণ আছে। তবে রাস্তা অবরোধের কারণে অসহনীয় কষ্ট হচ্ছে পথে চলাচলকারী মানুষের। যানবাহন চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে। ২০১৮ সালে কোটাবিরোধী আন্দোলন নুরুল হক নুরসহ কয়েকজন নেতা তৈরি করেছিল। কিন্তু নুরের উত্থান ও পরবর্তী ঘটনাবলি মানুষের মনে খুব আশা জাগিয়েছে বলে মনে হয়নি। অথচ অনেকেই আশা করেছিলেন রাজনীতিতে যে সংকট, তা নিরসনে নুরের মতো তরুণ নেতৃত্ব বড় ভূমিকা পালন করবেন। উচ্চাভিলাষ নুরকে সঠিক পথে চলতে দেয়নি। তাই অপরাজনীতির ধারায়ই নুর যুক্ত হয়েছেন এবং মানুষকে হতাশ করেছেন।
কোটাবিরোধী নতুন যে আন্দোলন, তা কোন পরিণতির দিকে যাবে—এই আন্দোলনও নুরের মতো কোনো নেতা তৈরি করবে কি না, সেটা এখন বলা ঠিক হবে না। আমরা আশা করব, সরকার কোটাবিরোধী আন্দোলন সহিংস রূপ নেওয়ার আগেই আলোচনার মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছানোর আন্তরিক উদ্যোগ নেবে।
মনে করা হচ্ছে, সরকার আদালতের মাধ্যমে কোটা সমস্যার সমাধান করতে চাইছে। আর আন্দোলনকারীরা চাইছেন আদালত নয়, সরকারের নির্বাহী আদেশে এর স্থায়ী সুরাহা করা হোক। তবে এটা ঠিক, কোটাব্যবস্থা বাতিল না করলেও এর যৌক্তিক ও বিজ্ঞানসম্মত সংস্কার জরুরি। যেমন আছে সেটাই ঠিক—এমন মনোভাব পরিহার করতে হবে।
এটা মনে রাখতে হবে, নানা কারণে সমাজের বঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে চাকরি, শিক্ষা বা রাষ্ট্রের নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার জন্য দেশে দেশে কোটাপ্রথা চালু ছিল এবং এখনো আছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের কালো মানুষদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কোটাব্যবস্থা রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে ওই দেশে একাধিক মামলা হয়েছে এবং তা আদালতের মাধ্যমে সুরাহা হয়েছে, কোনো আন্দোলনের মাধ্যমে নয়। ভারতের কোটা পদ্ধতি ব্যাপক। সেখানে ৬০ শতাংশ সরকারি চাকরি কোটার মাধ্যমে পূরণ হয়। সেনাবাহিনীতেও এই কোটার মাধ্যমে সেনাসদস্য নিয়োগপ্রাপ্ত হন। একই ব্যবস্থা পাকিস্তানেও। দক্ষিণ আফ্রিকা, মেক্সিকো, ফ্রান্স, ব্রিটেনসহ ইউরোপের অনেক দেশে নানা রকমের কোটাব্যবস্থা ছিল এবং আছে। কোনোটা জেন্ডারবৈষম্য কমাতে, কোনোটা হয়তো বয়স্ক মানুষকে চাকরির সুযোগ করে দিতে। এই কোটাব্যবস্থা সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চালু আছে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট কোটাব্যবস্থা পুনর্বহাল করেছেন। আপিল বিভাগও হাইকোর্টের আদেশ বহাল রেখেছেন। কিন্তু ছাত্ররা কোটাব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে আবার আন্দোলনে নেমেছেন। সেই আন্দোলন ঢাকার বাইরেও ছড়িয়ে পড়ছে। প্রতিদিনই শিক্ষার্থীরা রাস্তা আটকে আন্দোলন করছেন। তাতে সাধারণ মানুষকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
বাংলাদেশে যত বেশি মানুষকে জিম্মি করা যায়, দাবি আদায়ের সম্ভাবনা তত উজ্জ্বল হয় বলে মনে করা হয়। কোটার বিরুদ্ধে যাঁরা আন্দোলন করছেন, তাঁদের আন্দোলন করার পূর্ণ অধিকার আছে। কিন্তু দিনের পর দিন রাস্তা আটকে মানুষকে জিম্মি করার অধিকার কারও নেই। কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে সরকার সম্ভবত কিছুটা নাজুক অবস্থায় আছে। এটা রাজনৈতিক আন্দোলন হলে সরকার যেভাবে বল প্রয়োগ করতে পারত, সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সেটা সম্ভব হচ্ছে না। সরকার বল প্রয়োগ করছে না, শিক্ষার্থীদেরও তাই উচিত হবে রাস্তায় আন্দোলন না করে আদালতে গিয়ে তাঁদের যুক্তি তুলে ধরা। আপিল বিভাগও বলেছেন, রাজপথের আন্দোলন দিয়ে আদালতের রায় বদলানো যাবে না। তাহলে আর দিনের পর দিন রাস্তা আটকে মানুষকে জিম্মি করা কেন?
কোটা থাকলে মেধাবীরা বঞ্চিত হয়—এই অতি সরলীকরণ প্রচারণার মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নামানো হয়েছে। কোটা বনাম মেধা—এমন একটা সমীকরণে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে গোটা জাতিকে। মনে হতে পারে, কোটায় যাঁরা চাকরি পান, তাঁরা সবাই বুঝি অযোগ্য, অদক্ষ, অমেধাবী। বাস্তবতা মোটেই তা নয়। কোটার প্রয়োগ হয় নিয়োগের শেষ ধাপে। তার আগে আবেদন থেকে শুরু করে প্রিলিমিনারি, লিখিত পরীক্ষায় সবাইকে একসঙ্গেই এগোতে হয়। আবেদন করার যোগ্যতা সবারই সমান। এখানে কোনো কোটা নেই।
আবার এটাও লক্ষ করা যাচ্ছে যে, কোটাবিরোধী আন্দোলনের মূল লক্ষ্যই যেন মুক্তিযুদ্ধ। কোটার কাঁটা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিদ্ধ করাটা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। বিশ্বের আরও অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও কোটা আছে। সেটা শুরু হয়েছে স্বাধীনতার পরপরই। বঙ্গবন্ধুর আমলে কোটা ছিল, জিয়ার আমলে ছিল, এরশাদের আমলে ছিল, খালেদা জিয়ার আমলে ছিল। আগে কিন্তু কোনো আন্দোলন হয়নি। কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়েছে ২০১৩ সালে। ২০১৩ সালে শাহবাগে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছিল। সেই গণজাগরণের একটা পাল্টা ব্যবস্থা দরকার ছিল স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির। স্বাধীন বাংলাদেশে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতার বিপক্ষে বলা কিছুটা কঠিন। তাই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ভিন্ন কৌশল নেয়। তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে বঞ্চনার ক্ষোভ ছড়িয়ে দেয়। মুক্তিযোদ্ধারা তাঁদের চাকরি নিয়ে নিচ্ছেন—এ বলে খেপিয়ে তোলা। তাই মনে করা অসংগত নয় যে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের গণজাগরণের পাল্টা হিসেবে কোটাবিরোধী মনোভাব সৃষ্টি করা হয়েছে।
বিষয়টি হালকাভাবে না দেখে গভীরভাবেই ভাবতে হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এত বছর পর আর কোটা রাখা প্রয়োজন কি না, সেটা নিয়ে তর্ক হতে পারে, আলোচনা হতে পারে, কিন্তু এটাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি বিষোদ্গার করা, কুৎসা রটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। কারণ, মুক্তিযুদ্ধ জাতির জীবনে সবচেয়ে বড় ঘটনা।
১৯৭৫ সালের পর সব সামরিক-বেসামরিক সরকার অলিখিতভাবে এই কোটাব্যবস্থা স্থগিত করেছিল। স্রেফ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার ‘অপরাধে’ অনেককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করার পর দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর পর এই পরিস্থিতির পরিবর্তন শুরু হয়। তিনি ২১ বছরের ক্ষতিটা পুষিয়ে দেওয়ার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা তাদের পরবর্তী প্রজন্ম পর্যন্ত সম্প্রসারণ করেন। তবে তাদের এই সুযোগ গ্রহণ করতে হলে মেধার স্বাক্ষর রাখতে হয়। এটি এমন নয় যে, কেউ এসে দাবি করল সে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বা মুক্তিযোদ্ধা, অমনি তাকে চাকরি দিয়ে দেওয়া হয়। আগে মেধা যাচাইয়ের সব প্রক্রিয়া শেষ করেই নিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করা হয়।
লেখাটি শেষ করছি প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের একটি বক্তব্য উদ্ধৃত করে। তিনি বলেছেন, টক শোতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উসকানি দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা বুঝে বা না বুঝে আন্দোলন করতেই পারেন। তাঁদের মনে ক্ষোভ থাকতেই পারে। তবে শিক্ষার্থীরা যেভাবে আন্দোলন করছেন, সেটা অ্যাপ্রিশিয়েট করা যায় না। হাইকোর্ট একটা রায় দিয়েছেন। সেই রায় সঠিক হয়েছে কি না, সেটা দেখার জন্য আপিল বিভাগ রয়েছে। আপিল বিভাগ তো হাইকোর্টের রায় বাতিল বা সংশোধন করতে পারেন। আবার বহালও রাখতে পারেন। শিক্ষার্থীরা তাঁদের বক্তব্য আদালতে তুলে ধরতে পারেন। এটাই তো যথাযথ ফোরাম। আমরা আগেও বলেছি, আন্দোলন করে রায় পরিবর্তন হয় না। রায় পরিবর্তন আদালতই করতে পারেন।
মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল চেয়ে করা আবেদনের শুনানিতে ১০ জুলাই প্রধান বিচারপতি আরও বলেছেন, ‘টক শোতে যাঁরা কথা বলছেন, তাঁদের কথা শুনে মনে হয়, তাঁদের চেয়ে জ্ঞানী-গুণী আর কেউ নেই। আমরা যাঁরা বিচারকের আসনে আছি, তাঁরা কিছুই জানি না। মনে হয় তাঁরাই সব জানেন, আমরা কিছু জানি না।’
এ সময় যে দুই শিক্ষার্থী আপিল বিভাগে আবেদন নিয়ে এসেছেন, তাঁদের এবং আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হককে ধন্যবাদ জানান প্রধান বিচারপতি।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কোনো বক্তব্য থাকলে তা লিখিত আকারে আদালতে জমা দিতে বলেছেন আদালত।
লেখক: রাজনীতিবিদ, লেখক
দেশে এক অচলাবস্থা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক আন্দোলনের কারণে নয়, শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলনের কারণে এই অচলাবস্থা। আন্দোলন এখনো শান্তিপূর্ণ আছে। তবে রাস্তা অবরোধের কারণে অসহনীয় কষ্ট হচ্ছে পথে চলাচলকারী মানুষের। যানবাহন চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে। ২০১৮ সালে কোটাবিরোধী আন্দোলন নুরুল হক নুরসহ কয়েকজন নেতা তৈরি করেছিল। কিন্তু নুরের উত্থান ও পরবর্তী ঘটনাবলি মানুষের মনে খুব আশা জাগিয়েছে বলে মনে হয়নি। অথচ অনেকেই আশা করেছিলেন রাজনীতিতে যে সংকট, তা নিরসনে নুরের মতো তরুণ নেতৃত্ব বড় ভূমিকা পালন করবেন। উচ্চাভিলাষ নুরকে সঠিক পথে চলতে দেয়নি। তাই অপরাজনীতির ধারায়ই নুর যুক্ত হয়েছেন এবং মানুষকে হতাশ করেছেন।
কোটাবিরোধী নতুন যে আন্দোলন, তা কোন পরিণতির দিকে যাবে—এই আন্দোলনও নুরের মতো কোনো নেতা তৈরি করবে কি না, সেটা এখন বলা ঠিক হবে না। আমরা আশা করব, সরকার কোটাবিরোধী আন্দোলন সহিংস রূপ নেওয়ার আগেই আলোচনার মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছানোর আন্তরিক উদ্যোগ নেবে।
মনে করা হচ্ছে, সরকার আদালতের মাধ্যমে কোটা সমস্যার সমাধান করতে চাইছে। আর আন্দোলনকারীরা চাইছেন আদালত নয়, সরকারের নির্বাহী আদেশে এর স্থায়ী সুরাহা করা হোক। তবে এটা ঠিক, কোটাব্যবস্থা বাতিল না করলেও এর যৌক্তিক ও বিজ্ঞানসম্মত সংস্কার জরুরি। যেমন আছে সেটাই ঠিক—এমন মনোভাব পরিহার করতে হবে।
এটা মনে রাখতে হবে, নানা কারণে সমাজের বঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে চাকরি, শিক্ষা বা রাষ্ট্রের নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার জন্য দেশে দেশে কোটাপ্রথা চালু ছিল এবং এখনো আছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের কালো মানুষদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কোটাব্যবস্থা রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে ওই দেশে একাধিক মামলা হয়েছে এবং তা আদালতের মাধ্যমে সুরাহা হয়েছে, কোনো আন্দোলনের মাধ্যমে নয়। ভারতের কোটা পদ্ধতি ব্যাপক। সেখানে ৬০ শতাংশ সরকারি চাকরি কোটার মাধ্যমে পূরণ হয়। সেনাবাহিনীতেও এই কোটার মাধ্যমে সেনাসদস্য নিয়োগপ্রাপ্ত হন। একই ব্যবস্থা পাকিস্তানেও। দক্ষিণ আফ্রিকা, মেক্সিকো, ফ্রান্স, ব্রিটেনসহ ইউরোপের অনেক দেশে নানা রকমের কোটাব্যবস্থা ছিল এবং আছে। কোনোটা জেন্ডারবৈষম্য কমাতে, কোনোটা হয়তো বয়স্ক মানুষকে চাকরির সুযোগ করে দিতে। এই কোটাব্যবস্থা সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চালু আছে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট কোটাব্যবস্থা পুনর্বহাল করেছেন। আপিল বিভাগও হাইকোর্টের আদেশ বহাল রেখেছেন। কিন্তু ছাত্ররা কোটাব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে আবার আন্দোলনে নেমেছেন। সেই আন্দোলন ঢাকার বাইরেও ছড়িয়ে পড়ছে। প্রতিদিনই শিক্ষার্থীরা রাস্তা আটকে আন্দোলন করছেন। তাতে সাধারণ মানুষকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
বাংলাদেশে যত বেশি মানুষকে জিম্মি করা যায়, দাবি আদায়ের সম্ভাবনা তত উজ্জ্বল হয় বলে মনে করা হয়। কোটার বিরুদ্ধে যাঁরা আন্দোলন করছেন, তাঁদের আন্দোলন করার পূর্ণ অধিকার আছে। কিন্তু দিনের পর দিন রাস্তা আটকে মানুষকে জিম্মি করার অধিকার কারও নেই। কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে সরকার সম্ভবত কিছুটা নাজুক অবস্থায় আছে। এটা রাজনৈতিক আন্দোলন হলে সরকার যেভাবে বল প্রয়োগ করতে পারত, সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সেটা সম্ভব হচ্ছে না। সরকার বল প্রয়োগ করছে না, শিক্ষার্থীদেরও তাই উচিত হবে রাস্তায় আন্দোলন না করে আদালতে গিয়ে তাঁদের যুক্তি তুলে ধরা। আপিল বিভাগও বলেছেন, রাজপথের আন্দোলন দিয়ে আদালতের রায় বদলানো যাবে না। তাহলে আর দিনের পর দিন রাস্তা আটকে মানুষকে জিম্মি করা কেন?
কোটা থাকলে মেধাবীরা বঞ্চিত হয়—এই অতি সরলীকরণ প্রচারণার মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নামানো হয়েছে। কোটা বনাম মেধা—এমন একটা সমীকরণে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে গোটা জাতিকে। মনে হতে পারে, কোটায় যাঁরা চাকরি পান, তাঁরা সবাই বুঝি অযোগ্য, অদক্ষ, অমেধাবী। বাস্তবতা মোটেই তা নয়। কোটার প্রয়োগ হয় নিয়োগের শেষ ধাপে। তার আগে আবেদন থেকে শুরু করে প্রিলিমিনারি, লিখিত পরীক্ষায় সবাইকে একসঙ্গেই এগোতে হয়। আবেদন করার যোগ্যতা সবারই সমান। এখানে কোনো কোটা নেই।
আবার এটাও লক্ষ করা যাচ্ছে যে, কোটাবিরোধী আন্দোলনের মূল লক্ষ্যই যেন মুক্তিযুদ্ধ। কোটার কাঁটা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিদ্ধ করাটা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। বিশ্বের আরও অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও কোটা আছে। সেটা শুরু হয়েছে স্বাধীনতার পরপরই। বঙ্গবন্ধুর আমলে কোটা ছিল, জিয়ার আমলে ছিল, এরশাদের আমলে ছিল, খালেদা জিয়ার আমলে ছিল। আগে কিন্তু কোনো আন্দোলন হয়নি। কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়েছে ২০১৩ সালে। ২০১৩ সালে শাহবাগে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছিল। সেই গণজাগরণের একটা পাল্টা ব্যবস্থা দরকার ছিল স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির। স্বাধীন বাংলাদেশে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতার বিপক্ষে বলা কিছুটা কঠিন। তাই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ভিন্ন কৌশল নেয়। তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে বঞ্চনার ক্ষোভ ছড়িয়ে দেয়। মুক্তিযোদ্ধারা তাঁদের চাকরি নিয়ে নিচ্ছেন—এ বলে খেপিয়ে তোলা। তাই মনে করা অসংগত নয় যে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের গণজাগরণের পাল্টা হিসেবে কোটাবিরোধী মনোভাব সৃষ্টি করা হয়েছে।
বিষয়টি হালকাভাবে না দেখে গভীরভাবেই ভাবতে হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এত বছর পর আর কোটা রাখা প্রয়োজন কি না, সেটা নিয়ে তর্ক হতে পারে, আলোচনা হতে পারে, কিন্তু এটাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি বিষোদ্গার করা, কুৎসা রটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। কারণ, মুক্তিযুদ্ধ জাতির জীবনে সবচেয়ে বড় ঘটনা।
১৯৭৫ সালের পর সব সামরিক-বেসামরিক সরকার অলিখিতভাবে এই কোটাব্যবস্থা স্থগিত করেছিল। স্রেফ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার ‘অপরাধে’ অনেককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করার পর দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর পর এই পরিস্থিতির পরিবর্তন শুরু হয়। তিনি ২১ বছরের ক্ষতিটা পুষিয়ে দেওয়ার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা তাদের পরবর্তী প্রজন্ম পর্যন্ত সম্প্রসারণ করেন। তবে তাদের এই সুযোগ গ্রহণ করতে হলে মেধার স্বাক্ষর রাখতে হয়। এটি এমন নয় যে, কেউ এসে দাবি করল সে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বা মুক্তিযোদ্ধা, অমনি তাকে চাকরি দিয়ে দেওয়া হয়। আগে মেধা যাচাইয়ের সব প্রক্রিয়া শেষ করেই নিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করা হয়।
লেখাটি শেষ করছি প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের একটি বক্তব্য উদ্ধৃত করে। তিনি বলেছেন, টক শোতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উসকানি দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা বুঝে বা না বুঝে আন্দোলন করতেই পারেন। তাঁদের মনে ক্ষোভ থাকতেই পারে। তবে শিক্ষার্থীরা যেভাবে আন্দোলন করছেন, সেটা অ্যাপ্রিশিয়েট করা যায় না। হাইকোর্ট একটা রায় দিয়েছেন। সেই রায় সঠিক হয়েছে কি না, সেটা দেখার জন্য আপিল বিভাগ রয়েছে। আপিল বিভাগ তো হাইকোর্টের রায় বাতিল বা সংশোধন করতে পারেন। আবার বহালও রাখতে পারেন। শিক্ষার্থীরা তাঁদের বক্তব্য আদালতে তুলে ধরতে পারেন। এটাই তো যথাযথ ফোরাম। আমরা আগেও বলেছি, আন্দোলন করে রায় পরিবর্তন হয় না। রায় পরিবর্তন আদালতই করতে পারেন।
মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল চেয়ে করা আবেদনের শুনানিতে ১০ জুলাই প্রধান বিচারপতি আরও বলেছেন, ‘টক শোতে যাঁরা কথা বলছেন, তাঁদের কথা শুনে মনে হয়, তাঁদের চেয়ে জ্ঞানী-গুণী আর কেউ নেই। আমরা যাঁরা বিচারকের আসনে আছি, তাঁরা কিছুই জানি না। মনে হয় তাঁরাই সব জানেন, আমরা কিছু জানি না।’
এ সময় যে দুই শিক্ষার্থী আপিল বিভাগে আবেদন নিয়ে এসেছেন, তাঁদের এবং আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হককে ধন্যবাদ জানান প্রধান বিচারপতি।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কোনো বক্তব্য থাকলে তা লিখিত আকারে আদালতে জমা দিতে বলেছেন আদালত।
লেখক: রাজনীতিবিদ, লেখক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৩ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৬ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৬ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১০ দিন আগে