অরুণ কর্মকার
আজকের রাতটা পোহালেই আগামীকাল ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় পাঁচ বছর পর পর এ ধরনের জাতীয় নির্বাচন জাতির সামনে খুলে দেয় নতুন কিছু সম্ভাবনার দুয়ার। নতুন সরকার গঠিত হয়। নতুন উদ্যমে শুরু হয় একটি দেশের অগ্রযাত্রা। এগুলো আদর্শ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার অন্তর্নিহিত কথা। কিন্তু তেমন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অবশ্য বর্তমান পৃথিবীতে বিরল বিষয় হয়ে উঠছে। তবে এখনো তা একেবারে বিলুপ্ত কিংবা বিস্মৃতির বিষয় হয়ে যায়নি। আমাদের দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা খুব একটা উন্নত স্তরে পৌঁছাতে পারেনি। আমরা এখনো সীমিত গণতন্ত্রের ধারণার মধ্যে আছি। তাই এবারও যে স্বাভাবিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এবং যথার্থ গণতান্ত্রিক পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, তা জোর দিয়ে বলা যায় না।
এরপরও ত্রুটিপূর্ণ হলেও দেশে এখনো নির্বাচন হয়। একসময়কার গাজোয়ারি রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আজকের এই পর্যায়ে পৌঁছাতেও কম কাঠ-খড় পোড়াতে হয়নি আমাদের। এবারও অনেক অনিশ্চয়তা অতিক্রম করে, বহুবিধ সমস্যা মোকাবিলা করে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাতীয় নির্বাচন। দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি অংশ না নেওয়ায় নিঃসন্দেহে এই নির্বাচনে একটি বড় ঘাটতি থেকে যাবে। আর বিএনপি যে শুধু নির্বাচনে অংশ নেয়নি তা তো নয়, জামায়াতে ইসলামী এবং অন্যান্য সমমনা রাজনৈতিক মিত্রসহ তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে এবং বর্তমান সরকারের অধীনে অনুষ্ঠেয় নির্বাচন প্রতিহত করতে আন্দোলনও চালিয়ে যাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে সরকারকে সার্বিকভাবে অসহযোগিতা করা এবং নির্বাচন বর্জন করার জন্য জনগণের প্রতি তারা আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছে। আগামীকাল নির্বাচনের দিনও একইভাবে আহ্বান জানিয়ে যাবে। এমনকি নির্বাচনের পরও আন্দোলনের এই ধারা অব্যাহত রাখতে তারা বদ্ধপরিকর।
অন্যদিকে সরকার বিএনপি এবং তার মিত্রদের এসব দাবি এক রকম উপেক্ষা করেই সংবিধান অনুযায়ী, নির্বাচন অনুষ্ঠানের সার্বিক আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে ফেলেছে। নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে এখন আর কোনো অনিশ্চয়তা নেই বলেই মনে হয়। আগামীকাল দ্বাদশ সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েই যাচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, নির্বাচনের পর পরিস্থিতি কী হবে? অনেকের ধারণা, সরকার সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রেখে যেভাবে নির্বাচন করছে, তেমনি নির্বাচনের পরও সবকিছু সরকারের নিয়ন্ত্রণেই থাকবে। নতুন সরকার উত্তরোত্তর পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে সক্ষম হবে। তবে কথা হলো, বছর দুয়েক ধরে আমাদের দেশের অর্থনীতিতে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এই সংকটে বিএনপি ও সমমনাদের আন্দোলনের চাপে সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে সেই সংকট নিরসনে কোনো বিঘ্ন সৃষ্টি করবে কি না? দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক ধারার মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা বৈরিতা যদি অব্যাহতই থাকে, তাহলে এর পরিণামই বা কী হতে পারে।
সাধারণভাবে ধারণা করা যায়, এই রাজনৈতিক বৈরিতা দেশে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে, যা নির্বাচনের পর আমাদের অগ্রযাত্রা ও নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলতে নিঃসন্দেহে বিঘ্ন সৃষ্টি করবে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা অতীতে আমাদের দেশের সার্বিক অগ্রগতি কতটা বাধাগ্রস্ত করেছে, বিশ্ব পরিসরে দেশের অবস্থানের কতটা অবনমন ঘটিয়েছে, সেখান থেকে দেশকে তুলে আনতে আমাদের কতটা বন্ধুর পথ অতিক্রম করতে হয়েছে, সেই অভিজ্ঞতা কারোরই ভুলে যাওয়ার কথা নয়। আমরা নিশ্চয়ই চাইব না আবার সেই পথে যেতে। আমরা চাইব না উন্নয়নের মহাসড়ক থেকে বাংলাদেশ আবারও ছিটকে পড়ুক। যদি সেটা নিশ্চিত করতে হয়, তাহলে রাজনৈতিক বৈরিতার অবসান ঘটাতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। নির্বাচনের পরই প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে সেই উদ্যোগ নিতে হবে।
আমরা সবাই জানি এবং বুঝি, এ কথাগুলো বলে দেওয়া যত সহজ এর বাস্তবায়ন বা তা করে দেখানো তার চেয়ে শত গুণ বেশি কঠিন। বলা যায়, বাংলাদেশের বাস্তবতায় এর চেয়ে কঠিন কাজ আর কিছু নেই। কারণ আমাদের দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল বা ধারার মধ্যে বৈরিতার শেকড় অনেক গভীরে প্রোথিত। এর পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। রয়েছে রাষ্ট্রীয় প্রণোদনার প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক নেতাদের হত্যার সক্রিয় চেষ্টা। রয়েছে প্রতারণার নির্বাচন। ভুয়া ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে নির্বাচনে জয়ী হয়ে আসার অপচেষ্টা। রয়েছে রাতের ভোট। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দেড় শতাধিক সংসদ সদস্য নির্বাচিত করা। এসব ঘটনা একটির প্রতিক্রিয়া হিসেবে আরেকটি, একটির পিঠে আরেকটি ঘটে এসেছে। ফলে ক্রমান্বয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে বৈরিতা, আস্থাহীনতা সীমাহীন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
এরপরও এ কথাই সত্য মানতে হবে, বৈরিতার অবসান ঘটিয়ে দেশে একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করা রাজনৈতিক নেতৃত্বের সামনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। যদি তাঁরা এ কাজটি করতে অসমর্থ হন, তাহলে দেশ ঘোরতর আর্থসামাজিক সংকটের মধ্যে পড়তে পারে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে যদি আমাদের উৎপাদন-প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, আমাদের উন্নয়ন সহযোগীরা মুখ ফিরিয়ে নেয়, আমাদের শ্রমবাজার সংকুচিত হয়, আমাদের রপ্তানির বাজার আরও সীমিত হয়ে পড়ে, তাহলে আমরা এগিয়ে যাওয়ার পথ পাব না। ওপরের প্রতিটি কথা কিন্তু কোনো আপ্তবাক্য নয়। এগুলোর জন্য সম্ভাবনা কিংবা আশঙ্কা দুটিই বিবেচনা করা যেতে পারে। আরও বলা যায়, এর মধ্যে যে কোনোটি দুটি কিংবা একটিই ঘটতে পারে।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য রাজনৈতিক বৈরিতার অবসান কীভাবে সমাধান করা যেতে পারে? এর সর্বজনস্বীকৃত জবাব হচ্ছে, আলোচনা বা সংলাপ। অনেকের ধারণা, প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা বা সংলাপ হয় কেবল নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। আসলে এই আলোচনা হতে হবে যেকোনো প্রয়োজনের সময়, যেকোনো জাতীয় স্বার্থের বিষয়ে। জাতীয় সংকটের বিষয়ে তো বটেই। আর্থসামাজিক উন্নয়নের বিষয়েও আলোচনা দরকার। উন্নয়ন কৌশলের বিষয়ে আলোচনা দরকার। এক দিনের আলোচনায়ই বৈরী সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব হবে না। তাই যেকোনো সময় যেকোনো বিষয়ে আলোচনায় বসতে হবে। ধারাবাহিক আলোচনার মাধ্যমে ধীরে ধীরে বৈরিতার অবসান হওয়া সম্ভব। সম্ভব পারস্পরিক আস্থার সম্পর্ক স্থাপন কিংবা পুনঃস্থাপন। আলোচনার মাধ্যমে সম্ভব রাজনৈতিক-সামাজিক বিভক্তির ক্ষেত্র সংকুচিত করে আনা। আমরা যে উন্নত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে চাই বিদ্যমান রাজনৈতিক বৈরিতা ও বিভক্তি জিইয়ে রেখে তা সম্ভব হবে না। আমাদের উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে এই বৈরিতা ও বিভক্তিই সবচেয়ে বড় বাধা। অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে হলে এই বাধা অপসারণ করতে হবে।
দেশবাসীর প্রত্যাশা, দ্বাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার ক্ষেত্রে নিয়ে আসবে একটি উজ্জ্বলতর নতুন সকাল। জাতির এই প্রত্যাশা পূরণে আমাদের প্রাজ্ঞ রাজনৈতিক নেতারা যথেষ্ট সক্ষম। আমরা তাই আশা করতে পারি, জাতিকে তাঁরা হতাশ কিংবা নিরাশ করবেন না।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
আজকের রাতটা পোহালেই আগামীকাল ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় পাঁচ বছর পর পর এ ধরনের জাতীয় নির্বাচন জাতির সামনে খুলে দেয় নতুন কিছু সম্ভাবনার দুয়ার। নতুন সরকার গঠিত হয়। নতুন উদ্যমে শুরু হয় একটি দেশের অগ্রযাত্রা। এগুলো আদর্শ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার অন্তর্নিহিত কথা। কিন্তু তেমন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অবশ্য বর্তমান পৃথিবীতে বিরল বিষয় হয়ে উঠছে। তবে এখনো তা একেবারে বিলুপ্ত কিংবা বিস্মৃতির বিষয় হয়ে যায়নি। আমাদের দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা খুব একটা উন্নত স্তরে পৌঁছাতে পারেনি। আমরা এখনো সীমিত গণতন্ত্রের ধারণার মধ্যে আছি। তাই এবারও যে স্বাভাবিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এবং যথার্থ গণতান্ত্রিক পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, তা জোর দিয়ে বলা যায় না।
এরপরও ত্রুটিপূর্ণ হলেও দেশে এখনো নির্বাচন হয়। একসময়কার গাজোয়ারি রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আজকের এই পর্যায়ে পৌঁছাতেও কম কাঠ-খড় পোড়াতে হয়নি আমাদের। এবারও অনেক অনিশ্চয়তা অতিক্রম করে, বহুবিধ সমস্যা মোকাবিলা করে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাতীয় নির্বাচন। দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি অংশ না নেওয়ায় নিঃসন্দেহে এই নির্বাচনে একটি বড় ঘাটতি থেকে যাবে। আর বিএনপি যে শুধু নির্বাচনে অংশ নেয়নি তা তো নয়, জামায়াতে ইসলামী এবং অন্যান্য সমমনা রাজনৈতিক মিত্রসহ তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে এবং বর্তমান সরকারের অধীনে অনুষ্ঠেয় নির্বাচন প্রতিহত করতে আন্দোলনও চালিয়ে যাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে সরকারকে সার্বিকভাবে অসহযোগিতা করা এবং নির্বাচন বর্জন করার জন্য জনগণের প্রতি তারা আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছে। আগামীকাল নির্বাচনের দিনও একইভাবে আহ্বান জানিয়ে যাবে। এমনকি নির্বাচনের পরও আন্দোলনের এই ধারা অব্যাহত রাখতে তারা বদ্ধপরিকর।
অন্যদিকে সরকার বিএনপি এবং তার মিত্রদের এসব দাবি এক রকম উপেক্ষা করেই সংবিধান অনুযায়ী, নির্বাচন অনুষ্ঠানের সার্বিক আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে ফেলেছে। নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে এখন আর কোনো অনিশ্চয়তা নেই বলেই মনে হয়। আগামীকাল দ্বাদশ সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েই যাচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, নির্বাচনের পর পরিস্থিতি কী হবে? অনেকের ধারণা, সরকার সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রেখে যেভাবে নির্বাচন করছে, তেমনি নির্বাচনের পরও সবকিছু সরকারের নিয়ন্ত্রণেই থাকবে। নতুন সরকার উত্তরোত্তর পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে সক্ষম হবে। তবে কথা হলো, বছর দুয়েক ধরে আমাদের দেশের অর্থনীতিতে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এই সংকটে বিএনপি ও সমমনাদের আন্দোলনের চাপে সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে সেই সংকট নিরসনে কোনো বিঘ্ন সৃষ্টি করবে কি না? দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক ধারার মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা বৈরিতা যদি অব্যাহতই থাকে, তাহলে এর পরিণামই বা কী হতে পারে।
সাধারণভাবে ধারণা করা যায়, এই রাজনৈতিক বৈরিতা দেশে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে, যা নির্বাচনের পর আমাদের অগ্রযাত্রা ও নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলতে নিঃসন্দেহে বিঘ্ন সৃষ্টি করবে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা অতীতে আমাদের দেশের সার্বিক অগ্রগতি কতটা বাধাগ্রস্ত করেছে, বিশ্ব পরিসরে দেশের অবস্থানের কতটা অবনমন ঘটিয়েছে, সেখান থেকে দেশকে তুলে আনতে আমাদের কতটা বন্ধুর পথ অতিক্রম করতে হয়েছে, সেই অভিজ্ঞতা কারোরই ভুলে যাওয়ার কথা নয়। আমরা নিশ্চয়ই চাইব না আবার সেই পথে যেতে। আমরা চাইব না উন্নয়নের মহাসড়ক থেকে বাংলাদেশ আবারও ছিটকে পড়ুক। যদি সেটা নিশ্চিত করতে হয়, তাহলে রাজনৈতিক বৈরিতার অবসান ঘটাতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। নির্বাচনের পরই প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে সেই উদ্যোগ নিতে হবে।
আমরা সবাই জানি এবং বুঝি, এ কথাগুলো বলে দেওয়া যত সহজ এর বাস্তবায়ন বা তা করে দেখানো তার চেয়ে শত গুণ বেশি কঠিন। বলা যায়, বাংলাদেশের বাস্তবতায় এর চেয়ে কঠিন কাজ আর কিছু নেই। কারণ আমাদের দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল বা ধারার মধ্যে বৈরিতার শেকড় অনেক গভীরে প্রোথিত। এর পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। রয়েছে রাষ্ট্রীয় প্রণোদনার প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক নেতাদের হত্যার সক্রিয় চেষ্টা। রয়েছে প্রতারণার নির্বাচন। ভুয়া ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে নির্বাচনে জয়ী হয়ে আসার অপচেষ্টা। রয়েছে রাতের ভোট। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দেড় শতাধিক সংসদ সদস্য নির্বাচিত করা। এসব ঘটনা একটির প্রতিক্রিয়া হিসেবে আরেকটি, একটির পিঠে আরেকটি ঘটে এসেছে। ফলে ক্রমান্বয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে বৈরিতা, আস্থাহীনতা সীমাহীন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
এরপরও এ কথাই সত্য মানতে হবে, বৈরিতার অবসান ঘটিয়ে দেশে একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করা রাজনৈতিক নেতৃত্বের সামনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। যদি তাঁরা এ কাজটি করতে অসমর্থ হন, তাহলে দেশ ঘোরতর আর্থসামাজিক সংকটের মধ্যে পড়তে পারে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে যদি আমাদের উৎপাদন-প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, আমাদের উন্নয়ন সহযোগীরা মুখ ফিরিয়ে নেয়, আমাদের শ্রমবাজার সংকুচিত হয়, আমাদের রপ্তানির বাজার আরও সীমিত হয়ে পড়ে, তাহলে আমরা এগিয়ে যাওয়ার পথ পাব না। ওপরের প্রতিটি কথা কিন্তু কোনো আপ্তবাক্য নয়। এগুলোর জন্য সম্ভাবনা কিংবা আশঙ্কা দুটিই বিবেচনা করা যেতে পারে। আরও বলা যায়, এর মধ্যে যে কোনোটি দুটি কিংবা একটিই ঘটতে পারে।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য রাজনৈতিক বৈরিতার অবসান কীভাবে সমাধান করা যেতে পারে? এর সর্বজনস্বীকৃত জবাব হচ্ছে, আলোচনা বা সংলাপ। অনেকের ধারণা, প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা বা সংলাপ হয় কেবল নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। আসলে এই আলোচনা হতে হবে যেকোনো প্রয়োজনের সময়, যেকোনো জাতীয় স্বার্থের বিষয়ে। জাতীয় সংকটের বিষয়ে তো বটেই। আর্থসামাজিক উন্নয়নের বিষয়েও আলোচনা দরকার। উন্নয়ন কৌশলের বিষয়ে আলোচনা দরকার। এক দিনের আলোচনায়ই বৈরী সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব হবে না। তাই যেকোনো সময় যেকোনো বিষয়ে আলোচনায় বসতে হবে। ধারাবাহিক আলোচনার মাধ্যমে ধীরে ধীরে বৈরিতার অবসান হওয়া সম্ভব। সম্ভব পারস্পরিক আস্থার সম্পর্ক স্থাপন কিংবা পুনঃস্থাপন। আলোচনার মাধ্যমে সম্ভব রাজনৈতিক-সামাজিক বিভক্তির ক্ষেত্র সংকুচিত করে আনা। আমরা যে উন্নত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে চাই বিদ্যমান রাজনৈতিক বৈরিতা ও বিভক্তি জিইয়ে রেখে তা সম্ভব হবে না। আমাদের উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে এই বৈরিতা ও বিভক্তিই সবচেয়ে বড় বাধা। অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে হলে এই বাধা অপসারণ করতে হবে।
দেশবাসীর প্রত্যাশা, দ্বাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার ক্ষেত্রে নিয়ে আসবে একটি উজ্জ্বলতর নতুন সকাল। জাতির এই প্রত্যাশা পূরণে আমাদের প্রাজ্ঞ রাজনৈতিক নেতারা যথেষ্ট সক্ষম। আমরা তাই আশা করতে পারি, জাতিকে তাঁরা হতাশ কিংবা নিরাশ করবেন না।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
প্রবৃদ্ধির শীর্ষে থেকেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের দৌড়ে পিছিয়ে রয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ৫০ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়েছে
১ দিন আগেদুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি, উচ্চ করহারসহ ১৭ ধরনের বাধায় বিপর্যস্ত দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। রয়েছে সামাজিক সমস্যাও।
২ দিন আগেজমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৫ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৯ দিন আগে