অজয় দাশগুপ্ত
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি কিসের ওপর নির্ভরশীল? এই প্রশ্ন এখন সময়োপযোগী। একসময় আমরা ভাবতাম টাকা-পয়সা বা অর্থবিত্ত থাকলেই ভাবমূর্তি বাড়ে। এটা মিথ্যা নয়। কিন্তু সর্বতোভাবে সত্যও নয়। টাকা-পয়সায় উপচেপড়া মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর ইমেজ আর ইউরোপের ধুঁকতে থাকা অনেক দেশের ইমেজ কি এক? আমরা এটা জানি, উত্তর কোরিয়া বা এমন দেশগুলোর ইমেজ কেমন?
এ দেশগুলো অর্থনৈতিকভাবে শক্ত অবস্থানে থাকলেও, দেশের বাইরে তাদের ইমেজ সাংঘাতিক সংকটপূর্ণ। বলতে গেলে, সামগ্রিকভাবে এদের ইমেজ ভয়ের। অর্থবিত্ত কোনো দেশকে সচ্ছল করলেও, এর সামগ্রিক অবস্থার অবনতি ঘটাতে পারে। সেই প্রমাণ আমরা দেখেছি।
আমার এ লেখাটি যখন প্রকাশিত হবে, তখন দেশে নতুন একটি সরকার গঠিত হবে। এটাই বাস্তব সত্য কথা। নির্বাচন নিয়ে জল্পনা-কল্পনা ও বিরোধিতা ডিঙিয়ে আওয়ামী লীগের সরকার তা করতে পেরেছে। শেখ হাসিনা যে অদম্য এবং গতিশীল নেতা, সেটাই প্রমাণিত হবে আরেকবার। সেদিক থেকে তাঁরা সফল। কিন্তু যে কথা বলছিলাম, আমরা কি সত্যি অর্থনৈতিকভাবে ভালো চলছি? দূরদেশ থেকে সেটা পরিষ্কার দেখা না গেলেও, তা বোঝা যায়।
অবকাঠামোর সাফল্য আর দ্রুত বদলে যাওয়া দেশের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে ব্যাখ্যায় কী বলছে আন্তর্জাতিক সংস্থা? বাংলাদেশের অর্থনীতির সামষ্টিক স্থিতিশীলতায় চাপ তৈরি হওয়ার ব্যাখ্যায় আইএমএফ বলছে, কোভিড-১৯-পরবর্তী বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ। এতে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা।
সেই সময়ে মূল্যস্ফীতি ঠেকাতে দেশে দেশে অর্থনৈতিক নীতিতে সুদহার বাড়ানোর রেশ এসে পড়ে বাংলাদেশের ওপরও। আর স্বল্পমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা পড়ে চ্যালেঞ্জের মুখে। এ কারণে প্রকৃত জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধি আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরেও লক্ষ্যমাত্রা থেকে ছিল পিছিয়ে।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও তা সাড়ে ৭ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক আগেই থেমে যাবে বলে আইএমএফসহ অন্য উন্নয়ন সহযোগীরা পূর্বাভাস দিয়েছে। আইএমএফের সবশেষ রিভিউ মিশনের ডিসেম্বরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামষ্টিক অর্থনীতি চাপে থাকার আরেকটি কারণ হচ্ছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক নীতির দুর্বলতা। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সংগতি রেখে এবং নিজস্ব সক্ষমতা অনুযায়ী নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তগুলো সময়োপযোগী ছিল না।
এসব সত্য মেনে নিয়েও বলতে হয়, তার পরও থমকে দাঁড়ায়নি দেশ; বরং সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। এই অগ্রগতির প্রধান প্রতিবন্ধক মূলত দুর্নীতি। যে কথা শুরুতে বলেছিলাম, সেই ভাবমূর্তির প্রধান বাধাও এই দুর্নীতি। কিছুদিন পর পর ব্যাংকের টাকা লুটপাট করে পাচারের খবরে ক্লান্ত সমগ্র সমাজ ও দেশবাসী। এই সেক্টরগুলোতে বিশেষভাবে নজর দিলে দেশের ভাবমূর্তির আরও উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।
কারণ শেখ হাসিনার সরকারের অন্যান্য কাজ বিদেশিদের চোখে চমৎকারভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। যে কারণে নির্বাচনের আগমুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন ধুয়ে দিয়েছে তাদের সরকারকে। যুক্তরাষ্ট্রের সরকার, মানে জো বাইডেনের সরকার অসময়ে বাংলাদেশের ওপর যে চাপ প্রয়োগের নীতি নিয়েছে, এর সমালোচনা করে পত্রিকাটি বলেছে, বর্তমান বাংলাদেশের ওপর এমন চাপ প্রয়োগ করে কোনো লাভ নেই। কারণ যুক্তরাষ্ট্র দুনিয়ার কোনো দেশেই ঠিকভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কাজ করতে পারেনি। তা ছাড়া জার্নালটি এ-ও লিখেছে, বাংলাদেশ তার জন্মলগ্নেই কিসিঞ্জারের যুক্তরাষ্ট্রকে দেখিয়ে দিয়েছিল, তাদের জনগণের শক্তি কী? সে শক্তিই এখন বাংলাদেশের বড় সহায়।
জার্নালটির প্রতিবেদন মতে, শেখ হাসিনার সরকার জঙ্গিবাদ দমন করেছে। তাঁর আমলে বাংলাদেশ অনুন্নত দেশের তালিকা থেকে ওপরে উঠে এখন উন্নয়নশীল দেশের তকমা লাভ করেছে। শেখ হাসিনা এখন লড়াই করছেন স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য। আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীর ইমেজ এতটাই প্রবল যে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের মতে, বাংলাদেশের বেলায় এবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি পরাজিত হয়েছে। এত বড় শুভবার্তা ইমেজের জন্য বড় বিষয়।
আমরা ভাবি তৈরি পোশাকশিল্পসহ রপ্তানি বাণিজ্যই ভাবমূর্তির প্রধান বিষয়। আসলে কি তা-ই? পাঠকেরা নিশ্চয়ই অবগত, আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী বা বাকি দু-চারজন নেতা ব্যতীত আর কাউকেই চেনে না বিদেশিরা। তারা চেনে সাকিব আল হাসানকে। তারা জানত মাশরাফির নাম। এসব আন্তর্জাতিক হিরোরা যখন ভোটে দাঁড়ান, তখন উপমহাদেশসহ সব দেশেই একটা উত্তেজনা তৈরি হয়। খবরগুলো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে দেশে-বিদেশে। বাংলাদেশ আজ এভাবেই তার ভাবমূর্তি বিস্তার করে চলেছে। এটা শেখ হাসিনার আরেক বিজয়। একই জার্নাল পরিষ্কারভাবে লিখেছে:
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবারের মতো ১৭ কোটি জনসংখ্যার মুসলিমপ্রধান জাতিটির নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত। শেখ হাসিনার বিজয় হবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জন্য একটি পরাজয়। কারণ তিনি মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁর সব মনোযোগ দিয়েছিলেন।
আরও বলা হয়, ৭৬ বছর বয়সী শেখ হাসিনা বর্তমানে বিশ্বের ক্ষমতাসীন নারী নেতৃত্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দিন ধরে ক্ষমতায় রয়েছেন, তিনি কূটকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছেন। তিনি ইসলামি মৌলবাদ কমিয়ে এনেছেন, সামরিক বাহিনীর ওপর সিভিল প্রশাসনের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং চরম দারিদ্র্য থেকে দেশকে বের করে এনেছেন। অনেক উন্নয়নশীল দেশের নেতারা এমন সাফল্যের দাবিদার হতে পারেননি। শেখ হাসিনার ভ্রুক্ষেপহীন মনোভাব সংসদীয় গণতন্ত্রের চেয়ে সিংহাসনের লড়াইয়ের সঙ্গেই সামঞ্জস্যপূর্ণ। যাঁরা তাঁর কর্তৃত্ব মানতে অস্বীকার করবেন, তাঁরা আইনি হয়রানি, এমনকি সন্ত্রাসেরও শিকার হতে পারেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির বিরোধিতার অংশ হিসেবে হোয়াইট হাউস শেখ হাসিনার সরকারকে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বিরোধী দলকে গণগ্রেপ্তারের মাধ্যমে ভয় দেখানোর অভিযোগে শাস্তি দিতে চায়। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার এসবকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বিরোধী দল বা সিভিল সোসাইটিকে কোনো সুযোগ দিতেই অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
সোজা কথায় বাংলাদেশ এই নির্বাচনের মাধ্যমে আবার তার ভাবমূর্তি ঝালিয়ে নেওয়ার বিরাট এক সুযোগ লাভ করেছে। সরকারের সদিচ্ছা আর কাজের মাধ্যমেই তা নতুন করে ঝলসে উঠতে পারে। শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে তাঁর দায়িত্ব পালন করেছেন। একসময় পাত্তা না পাওয়া বাংলাদেশকে কেউ আর চোখ রাঙাতে পারে না।
আর কিছু বছর এভাবে এগোতে পারলে বাংলাদেশকে চোখ রাঙানো দূরে থাক, সমীহ ছাড়া কথা বলতে পারবে না পৃথিবীর কোনো দেশ। যে কথা বলছিলাম ইমেজ বা ভাবমূর্তি অর্থবিত্তের চেয়েও গণতন্ত্র আর সুশাসনের ওপর বেশি নির্ভরশীল। আওয়ামী লীগের সামনে এখন সুবর্ণ সুযোগ। প্রধানমন্ত্রী যদি তাঁর সরকার ও নেতাদের অনেককে সরিয়ে সিস্টেম পরিশুদ্ধ করে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ দেন, তাহলে বাংলাদেশের নতুন এক অধ্যায় ‘নয়া ভাবমূর্তি’ প্রতিষ্ঠা পাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।
লেখক: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী কলামিস্ট
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি কিসের ওপর নির্ভরশীল? এই প্রশ্ন এখন সময়োপযোগী। একসময় আমরা ভাবতাম টাকা-পয়সা বা অর্থবিত্ত থাকলেই ভাবমূর্তি বাড়ে। এটা মিথ্যা নয়। কিন্তু সর্বতোভাবে সত্যও নয়। টাকা-পয়সায় উপচেপড়া মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর ইমেজ আর ইউরোপের ধুঁকতে থাকা অনেক দেশের ইমেজ কি এক? আমরা এটা জানি, উত্তর কোরিয়া বা এমন দেশগুলোর ইমেজ কেমন?
এ দেশগুলো অর্থনৈতিকভাবে শক্ত অবস্থানে থাকলেও, দেশের বাইরে তাদের ইমেজ সাংঘাতিক সংকটপূর্ণ। বলতে গেলে, সামগ্রিকভাবে এদের ইমেজ ভয়ের। অর্থবিত্ত কোনো দেশকে সচ্ছল করলেও, এর সামগ্রিক অবস্থার অবনতি ঘটাতে পারে। সেই প্রমাণ আমরা দেখেছি।
আমার এ লেখাটি যখন প্রকাশিত হবে, তখন দেশে নতুন একটি সরকার গঠিত হবে। এটাই বাস্তব সত্য কথা। নির্বাচন নিয়ে জল্পনা-কল্পনা ও বিরোধিতা ডিঙিয়ে আওয়ামী লীগের সরকার তা করতে পেরেছে। শেখ হাসিনা যে অদম্য এবং গতিশীল নেতা, সেটাই প্রমাণিত হবে আরেকবার। সেদিক থেকে তাঁরা সফল। কিন্তু যে কথা বলছিলাম, আমরা কি সত্যি অর্থনৈতিকভাবে ভালো চলছি? দূরদেশ থেকে সেটা পরিষ্কার দেখা না গেলেও, তা বোঝা যায়।
অবকাঠামোর সাফল্য আর দ্রুত বদলে যাওয়া দেশের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে ব্যাখ্যায় কী বলছে আন্তর্জাতিক সংস্থা? বাংলাদেশের অর্থনীতির সামষ্টিক স্থিতিশীলতায় চাপ তৈরি হওয়ার ব্যাখ্যায় আইএমএফ বলছে, কোভিড-১৯-পরবর্তী বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ। এতে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা।
সেই সময়ে মূল্যস্ফীতি ঠেকাতে দেশে দেশে অর্থনৈতিক নীতিতে সুদহার বাড়ানোর রেশ এসে পড়ে বাংলাদেশের ওপরও। আর স্বল্পমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা পড়ে চ্যালেঞ্জের মুখে। এ কারণে প্রকৃত জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধি আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরেও লক্ষ্যমাত্রা থেকে ছিল পিছিয়ে।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও তা সাড়ে ৭ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক আগেই থেমে যাবে বলে আইএমএফসহ অন্য উন্নয়ন সহযোগীরা পূর্বাভাস দিয়েছে। আইএমএফের সবশেষ রিভিউ মিশনের ডিসেম্বরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামষ্টিক অর্থনীতি চাপে থাকার আরেকটি কারণ হচ্ছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক নীতির দুর্বলতা। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সংগতি রেখে এবং নিজস্ব সক্ষমতা অনুযায়ী নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তগুলো সময়োপযোগী ছিল না।
এসব সত্য মেনে নিয়েও বলতে হয়, তার পরও থমকে দাঁড়ায়নি দেশ; বরং সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। এই অগ্রগতির প্রধান প্রতিবন্ধক মূলত দুর্নীতি। যে কথা শুরুতে বলেছিলাম, সেই ভাবমূর্তির প্রধান বাধাও এই দুর্নীতি। কিছুদিন পর পর ব্যাংকের টাকা লুটপাট করে পাচারের খবরে ক্লান্ত সমগ্র সমাজ ও দেশবাসী। এই সেক্টরগুলোতে বিশেষভাবে নজর দিলে দেশের ভাবমূর্তির আরও উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।
কারণ শেখ হাসিনার সরকারের অন্যান্য কাজ বিদেশিদের চোখে চমৎকারভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। যে কারণে নির্বাচনের আগমুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন ধুয়ে দিয়েছে তাদের সরকারকে। যুক্তরাষ্ট্রের সরকার, মানে জো বাইডেনের সরকার অসময়ে বাংলাদেশের ওপর যে চাপ প্রয়োগের নীতি নিয়েছে, এর সমালোচনা করে পত্রিকাটি বলেছে, বর্তমান বাংলাদেশের ওপর এমন চাপ প্রয়োগ করে কোনো লাভ নেই। কারণ যুক্তরাষ্ট্র দুনিয়ার কোনো দেশেই ঠিকভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কাজ করতে পারেনি। তা ছাড়া জার্নালটি এ-ও লিখেছে, বাংলাদেশ তার জন্মলগ্নেই কিসিঞ্জারের যুক্তরাষ্ট্রকে দেখিয়ে দিয়েছিল, তাদের জনগণের শক্তি কী? সে শক্তিই এখন বাংলাদেশের বড় সহায়।
জার্নালটির প্রতিবেদন মতে, শেখ হাসিনার সরকার জঙ্গিবাদ দমন করেছে। তাঁর আমলে বাংলাদেশ অনুন্নত দেশের তালিকা থেকে ওপরে উঠে এখন উন্নয়নশীল দেশের তকমা লাভ করেছে। শেখ হাসিনা এখন লড়াই করছেন স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য। আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীর ইমেজ এতটাই প্রবল যে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের মতে, বাংলাদেশের বেলায় এবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি পরাজিত হয়েছে। এত বড় শুভবার্তা ইমেজের জন্য বড় বিষয়।
আমরা ভাবি তৈরি পোশাকশিল্পসহ রপ্তানি বাণিজ্যই ভাবমূর্তির প্রধান বিষয়। আসলে কি তা-ই? পাঠকেরা নিশ্চয়ই অবগত, আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী বা বাকি দু-চারজন নেতা ব্যতীত আর কাউকেই চেনে না বিদেশিরা। তারা চেনে সাকিব আল হাসানকে। তারা জানত মাশরাফির নাম। এসব আন্তর্জাতিক হিরোরা যখন ভোটে দাঁড়ান, তখন উপমহাদেশসহ সব দেশেই একটা উত্তেজনা তৈরি হয়। খবরগুলো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে দেশে-বিদেশে। বাংলাদেশ আজ এভাবেই তার ভাবমূর্তি বিস্তার করে চলেছে। এটা শেখ হাসিনার আরেক বিজয়। একই জার্নাল পরিষ্কারভাবে লিখেছে:
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবারের মতো ১৭ কোটি জনসংখ্যার মুসলিমপ্রধান জাতিটির নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত। শেখ হাসিনার বিজয় হবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জন্য একটি পরাজয়। কারণ তিনি মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁর সব মনোযোগ দিয়েছিলেন।
আরও বলা হয়, ৭৬ বছর বয়সী শেখ হাসিনা বর্তমানে বিশ্বের ক্ষমতাসীন নারী নেতৃত্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দিন ধরে ক্ষমতায় রয়েছেন, তিনি কূটকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছেন। তিনি ইসলামি মৌলবাদ কমিয়ে এনেছেন, সামরিক বাহিনীর ওপর সিভিল প্রশাসনের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং চরম দারিদ্র্য থেকে দেশকে বের করে এনেছেন। অনেক উন্নয়নশীল দেশের নেতারা এমন সাফল্যের দাবিদার হতে পারেননি। শেখ হাসিনার ভ্রুক্ষেপহীন মনোভাব সংসদীয় গণতন্ত্রের চেয়ে সিংহাসনের লড়াইয়ের সঙ্গেই সামঞ্জস্যপূর্ণ। যাঁরা তাঁর কর্তৃত্ব মানতে অস্বীকার করবেন, তাঁরা আইনি হয়রানি, এমনকি সন্ত্রাসেরও শিকার হতে পারেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির বিরোধিতার অংশ হিসেবে হোয়াইট হাউস শেখ হাসিনার সরকারকে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বিরোধী দলকে গণগ্রেপ্তারের মাধ্যমে ভয় দেখানোর অভিযোগে শাস্তি দিতে চায়। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার এসবকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বিরোধী দল বা সিভিল সোসাইটিকে কোনো সুযোগ দিতেই অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
সোজা কথায় বাংলাদেশ এই নির্বাচনের মাধ্যমে আবার তার ভাবমূর্তি ঝালিয়ে নেওয়ার বিরাট এক সুযোগ লাভ করেছে। সরকারের সদিচ্ছা আর কাজের মাধ্যমেই তা নতুন করে ঝলসে উঠতে পারে। শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে তাঁর দায়িত্ব পালন করেছেন। একসময় পাত্তা না পাওয়া বাংলাদেশকে কেউ আর চোখ রাঙাতে পারে না।
আর কিছু বছর এভাবে এগোতে পারলে বাংলাদেশকে চোখ রাঙানো দূরে থাক, সমীহ ছাড়া কথা বলতে পারবে না পৃথিবীর কোনো দেশ। যে কথা বলছিলাম ইমেজ বা ভাবমূর্তি অর্থবিত্তের চেয়েও গণতন্ত্র আর সুশাসনের ওপর বেশি নির্ভরশীল। আওয়ামী লীগের সামনে এখন সুবর্ণ সুযোগ। প্রধানমন্ত্রী যদি তাঁর সরকার ও নেতাদের অনেককে সরিয়ে সিস্টেম পরিশুদ্ধ করে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ দেন, তাহলে বাংলাদেশের নতুন এক অধ্যায় ‘নয়া ভাবমূর্তি’ প্রতিষ্ঠা পাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।
লেখক: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী কলামিস্ট
প্রবৃদ্ধির শীর্ষে থেকেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের দৌড়ে পিছিয়ে রয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ৫০ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়েছে
১ দিন আগেদুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি, উচ্চ করহারসহ ১৭ ধরনের বাধায় বিপর্যস্ত দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। রয়েছে সামাজিক সমস্যাও।
২ দিন আগেজমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৫ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৯ দিন আগে