রাজীব কুমার সাহা
বাংলা ভাষায় অতি পরিচিত একটি শব্দ হলো ‘বাজখাঁই’। পরিস্থিতির প্রসঙ্গ অনুসারে কমবেশি আমরা সবাই শব্দটির প্রয়োগ করে থাকি। সাধারণত কণ্ঠস্বরের তারতম্যের প্রসঙ্গেই আমরা শব্দটি ব্যবহার করি। কিন্তু এই ‘বাজখাঁই’ মানে কী? অনেকে মনে করেন, শব্দটি গঠনের সঙ্গে বজ্র বা বাজের কোনো সম্পর্ক রয়েছে। আসলে কি তাই? যদি না হয়, তাহলে ‘বাজখাঁই’ শব্দটি বাংলা ভাষায় এল কেমন করে? তবে চলুন আজ জানব ‘বাজখাঁই’ শব্দের আদ্যোপান্ত।
‘বাজখাঁই’ বাংলা শব্দ। এটি বিশেষণ পদ। আভিধানিকভাবে শব্দটির অর্থ হলো অতিশয় কর্কশ বা গম্ভীর ও অনভিপ্রেত। সাধারণত কোনো ব্যক্তির গলার স্বর প্রসঙ্গে শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে যেমন: বাজখাঁই গলা বা বাজখাঁই স্বর। ‘বাজ’ শব্দটির শুরুতে থাকলেও ‘বজ্র’ বা ‘বাজ’-এর সঙ্গে এর গঠনের কোনো সম্পর্ক নেই। মূলত শব্দটি তৈরি হয়েছে ষোড়শ শতকের বাজবাহাদুর খান বা সংক্ষেপে ‘বাজ খাঁ’ নামীয় একজন শাসনকর্তার নামানুসারে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, বায়েজিদ বাজবাহাদুর খান ছিলেন মালব সালতানাতের শেষ সুলতান। এই রাজ্যের রাজধানী ছিল মান্ডু (বর্তমান মধ্যপ্রদেশ), যা তৎকালীন মুঘল সাম্রাজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর হিসেবে পরিচিত। তিনি ১৫৫৫ থেকে ১৫৬২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেছিলেন। কবি রূপমতীর সঙ্গে রোম্যান্টিক প্রণয়ের জন্য তিনি ইতিহাসে বিশেষভাবে পরিচিত হয়ে আছেন।
বাজ খাঁ রাজকার্যের অবহেলা করে সংগীতচর্চা, নৃত্যে গভীরভাবে নিমগ্ন থাকতেন। অবশ্য ১৫৬১ ও ১৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে মোট দুবার তিনি সম্রাট আকবরের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলেন, যদিও দুবারই পরাজিত হয়েছিলেন। পরবর্তীকালে মুঘলদের দ্বারা মালব শোষিত হয়েছিল এবং বাজবাহাদুর বহু বছর পর্যন্ত পলাতক ছিলেন। অবশেষে ১৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরে আগ্রায় সম্রাট আকবরের কাছে আত্মসমর্পণ করেন বাজবাহাদুর।
বাজবাহাদুর খান জীবনব্যাপী তাঁর গীতবাদ্যে অসাধারণ পারদর্শিতা প্রদর্শন করেন। মূলত এর অংশ হিসেবেই তিনি শেষ জীবনে সম্রাট আকবরের রাজদরবারে সংগীতজ্ঞ হিসেবে যোগদান করেন। বাজবাহাদুরের কণ্ঠ যেমন ছিল কর্কশ, তেমন গম্ভীর। এ জন্য অনেক দূর থেকে তাঁর কণ্ঠস্বর শোনা যেত। তিনি চাপা গলায় অস্বাভাবিক উঁচু স্বর তৈরি করতে পারতেন, যা তাঁর একটি বিশেষ পারদর্শিতা হিসেবে পরিগণিত হতো। কিন্তু কখনো কখনো এমন কণ্ঠ বিরক্তিরও উদ্রেক করে, যা সচরাচর অভিপ্রেত নয়। এই সূত্রে শব্দটি নেতিবাচক অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। মূলত বাজবাহাদুর খান বা বাজ খাঁর গম্ভীর ও চড়া গলা থেকেই বাংলা ভাষায় ‘বাজখাঁই’ শব্দের উৎপত্তি।
বাংলা সাহিত্যে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে অপরাপর অনেক সাহিত্যিকের রচনায় আমরা ‘বাজখাঁই’ শব্দের প্রয়োগ লক্ষ করি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্প ‘হৈমন্তী’তে আমরা এর প্রয়োগ দেখতে পাই। আমাদের যাপিত জীবনে নেতিবাচক অর্থেই ‘বাজখাঁই’ শব্দ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সুতরাং ‘বাজখাঁই’ শব্দের সঙ্গে সঙ্গে সংগীতজ্ঞ বাজবাহাদুর খান বা বাজ খাঁর কথাও আমাদের সমানভাবে স্মরণ রাখতে হবে। তবেই ‘বাজখাঁই’ শব্দের ব্যুৎপত্তি সর্বত্র সঠিকরূপে বর্ণিত হবে।
লেখক: আভিধানিক ও প্রাবন্ধিক
বাংলা ভাষায় অতি পরিচিত একটি শব্দ হলো ‘বাজখাঁই’। পরিস্থিতির প্রসঙ্গ অনুসারে কমবেশি আমরা সবাই শব্দটির প্রয়োগ করে থাকি। সাধারণত কণ্ঠস্বরের তারতম্যের প্রসঙ্গেই আমরা শব্দটি ব্যবহার করি। কিন্তু এই ‘বাজখাঁই’ মানে কী? অনেকে মনে করেন, শব্দটি গঠনের সঙ্গে বজ্র বা বাজের কোনো সম্পর্ক রয়েছে। আসলে কি তাই? যদি না হয়, তাহলে ‘বাজখাঁই’ শব্দটি বাংলা ভাষায় এল কেমন করে? তবে চলুন আজ জানব ‘বাজখাঁই’ শব্দের আদ্যোপান্ত।
‘বাজখাঁই’ বাংলা শব্দ। এটি বিশেষণ পদ। আভিধানিকভাবে শব্দটির অর্থ হলো অতিশয় কর্কশ বা গম্ভীর ও অনভিপ্রেত। সাধারণত কোনো ব্যক্তির গলার স্বর প্রসঙ্গে শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে যেমন: বাজখাঁই গলা বা বাজখাঁই স্বর। ‘বাজ’ শব্দটির শুরুতে থাকলেও ‘বজ্র’ বা ‘বাজ’-এর সঙ্গে এর গঠনের কোনো সম্পর্ক নেই। মূলত শব্দটি তৈরি হয়েছে ষোড়শ শতকের বাজবাহাদুর খান বা সংক্ষেপে ‘বাজ খাঁ’ নামীয় একজন শাসনকর্তার নামানুসারে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, বায়েজিদ বাজবাহাদুর খান ছিলেন মালব সালতানাতের শেষ সুলতান। এই রাজ্যের রাজধানী ছিল মান্ডু (বর্তমান মধ্যপ্রদেশ), যা তৎকালীন মুঘল সাম্রাজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর হিসেবে পরিচিত। তিনি ১৫৫৫ থেকে ১৫৬২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেছিলেন। কবি রূপমতীর সঙ্গে রোম্যান্টিক প্রণয়ের জন্য তিনি ইতিহাসে বিশেষভাবে পরিচিত হয়ে আছেন।
বাজ খাঁ রাজকার্যের অবহেলা করে সংগীতচর্চা, নৃত্যে গভীরভাবে নিমগ্ন থাকতেন। অবশ্য ১৫৬১ ও ১৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে মোট দুবার তিনি সম্রাট আকবরের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলেন, যদিও দুবারই পরাজিত হয়েছিলেন। পরবর্তীকালে মুঘলদের দ্বারা মালব শোষিত হয়েছিল এবং বাজবাহাদুর বহু বছর পর্যন্ত পলাতক ছিলেন। অবশেষে ১৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরে আগ্রায় সম্রাট আকবরের কাছে আত্মসমর্পণ করেন বাজবাহাদুর।
বাজবাহাদুর খান জীবনব্যাপী তাঁর গীতবাদ্যে অসাধারণ পারদর্শিতা প্রদর্শন করেন। মূলত এর অংশ হিসেবেই তিনি শেষ জীবনে সম্রাট আকবরের রাজদরবারে সংগীতজ্ঞ হিসেবে যোগদান করেন। বাজবাহাদুরের কণ্ঠ যেমন ছিল কর্কশ, তেমন গম্ভীর। এ জন্য অনেক দূর থেকে তাঁর কণ্ঠস্বর শোনা যেত। তিনি চাপা গলায় অস্বাভাবিক উঁচু স্বর তৈরি করতে পারতেন, যা তাঁর একটি বিশেষ পারদর্শিতা হিসেবে পরিগণিত হতো। কিন্তু কখনো কখনো এমন কণ্ঠ বিরক্তিরও উদ্রেক করে, যা সচরাচর অভিপ্রেত নয়। এই সূত্রে শব্দটি নেতিবাচক অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। মূলত বাজবাহাদুর খান বা বাজ খাঁর গম্ভীর ও চড়া গলা থেকেই বাংলা ভাষায় ‘বাজখাঁই’ শব্দের উৎপত্তি।
বাংলা সাহিত্যে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে অপরাপর অনেক সাহিত্যিকের রচনায় আমরা ‘বাজখাঁই’ শব্দের প্রয়োগ লক্ষ করি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্প ‘হৈমন্তী’তে আমরা এর প্রয়োগ দেখতে পাই। আমাদের যাপিত জীবনে নেতিবাচক অর্থেই ‘বাজখাঁই’ শব্দ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সুতরাং ‘বাজখাঁই’ শব্দের সঙ্গে সঙ্গে সংগীতজ্ঞ বাজবাহাদুর খান বা বাজ খাঁর কথাও আমাদের সমানভাবে স্মরণ রাখতে হবে। তবেই ‘বাজখাঁই’ শব্দের ব্যুৎপত্তি সর্বত্র সঠিকরূপে বর্ণিত হবে।
লেখক: আভিধানিক ও প্রাবন্ধিক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৩ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৭ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৭ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১০ দিন আগে