চাকমা সার্কেল প্রধান
গোটা দেশের উন্নয়ন ধারাবাহিকতায় পাহাড়েও নানা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এটি মূলত অবকাঠামোগত উন্নয়ন। উন্নয়ন প্রকল্প জনমুখী করা আর প্রকল্প ব্যয়ের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি জরুরি। পাহাড়ে উন্নয়নের প্রতিষ্ঠান এখন তিনটি- পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, জেলা পরিষদ ও নিরাপত্তা বাহিনী। জেলা পরিষদ ও উন্নয়ন বোর্ডের উন্নয়ন বরাদ্দ জনগণের জানার সুযোগ আছে। নিরাপত্তা বাহিনীর কাজের বরাদ্দ জনগণের জানার সুযোগ নেই। আমার জানামতে তাদের প্রকল্পব্যয় অডিট হয় না। আবার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষগুলোর চরম সমন্বয়হীনতা দেখি। যদি সমন্বয় করা হতো তাহলে পাহাড়ে উন্নয়ন আরও দৃশ্যমান হতো।
আমরা যদি পাহাড়ে উন্নয়ন দেখি তাহলে চোখে পড়ে অবকাঠামো উন্নয়ন, সড়ক উন্নয়ন। অবকাঠামোগত উন্নয়নের বিরোধী আমি নই। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবসম্পদ উন্নয়ন, জেন্ডার, পরিবেশ আর প্রবৃদ্ধির দিকেও নজর দেওয়া জরুরি। এ খাতে বরাদ্দ দিতে হবে। চলমান এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) পূরণের জন্য আমাদের সব দিক গুরুত্ব দিতে হবে। যে উন্নয়নের কথা বলছি, এগুলো বাদ দিলে এসডিজি পূরণ সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে তো অনেক উন্নতি করেছে। এর মাঝে আমরা দেশের দারিদ্র্যমুক্তির কথা বলছি। অথচ পার্বত্য চট্টগ্রামে গুচ্ছগ্রামে রেশন অনির্দিষ্টভাবে চালু রেখেছি। যারা পার্বত্য অঞ্চল থেকে সমতলে যেতে চায়, তাদের নানা রকমের বাধা সৃষ্টির অভিযোগও আছে।
পার্বত্য জেলাগুলোর গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান জেলা পরিষদ। পার্বত্য চুক্তির আলোকে অনেকগুলো দপ্তরের কাজ জেলা পরিষদে হস্তান্তরিত হয়েছে। কিন্তু এগুলো চালানোর জন্য দক্ষ জনবলের অভাব আছে। পরিষদের পদগুলো যদি দেখি তাহলে মুখ্য নির্বাহী প্রকৌশলী, ভূমি অফিসার, চেয়ারম্যানের পিএস- এই। এত এত বড় জেলা পরিষদ তাহলে চলবে কীভাবে? স্বাস্থ্যের বিষয়ে যার ন্যূনতম ধারণাই নেই, তার দায়িত্ব জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ দেখভাল করা। জেলা পরিষদকে শক্তিশালী করাও একটি উন্নয়ন। কিন্তু সেটি করা হচ্ছে না।
জেলা পরিষদের সদস্যরা সবাই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। বিষয়ভিত্তিক দক্ষ ও অভিজ্ঞ লোকবল নিয়োগ না দিলে গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর হস্তান্তরের আসল উদ্দেশ্য পূরণ হবে না।
পার্বত্য এলাকায় স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে। কার্য বিধিমালা অনুসারে এসব প্রতিষ্ঠান পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে আসার কথা। এটা হলে পাহাড়ের উন্নয়ন আরও জনমুখী হবে।
পাহাড়ে মানুষ ভূমি অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দীর্ঘদিন। সাধারণ মানুষের জন্য ভূমি বন্দোবস্ত চালু না থাকায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে ১৯৮৯ থেকে। যেখানে বিরোধ নেই সেখানে ভূমি বন্দোবস্ত চালুতে অসুবিধা কোথায়? এ নিয়ে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে সরকারকে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রথাগত কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। তারা বিচার করেন, মৌজার বন অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করেন, ভূমি বিষয়ে বিশেষ করে ভূমি বন্দোবস্তি ও হস্তান্তরের ক্ষেত্রে ডেপুটি কমিশনার ও ইউএনওদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
মৌজার ভিন্ন ভিন্ন জাতিসত্তা, সম্প্রদায়ের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি লালন-পালন এবং সংরক্ষণ করে থাকেন। অথচ এগুলো শক্তিশালীকরণে সরকারের কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। এগুলো চলছে হাওয়ার ওপরে। এসবের জন্য সরকারি বেসরকারি কোনো বরাদ্দও নেই।
এসব প্রতিষ্ঠান সরকারি এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণ বিষয়ক টাস্কফোর্সকে নিষ্ক্রিয় রাখা হয়েছে। এটি নামে আছে কাজে নেই। এ টাস্কফোর্সকে সক্রিয় করা হলে অনেক সমস্যা হতো। এ টাস্কফোর্সের এক দানা চাল দেওয়ার ক্ষমতা নেই। এটি থেকে আমরা কী উন্নয়ন প্রত্যাশা করতে পারি?
জাতীয় নীতিমালাসমূহের মধ্যে স্বাস্থ্য নীতিমালায় (ট্রাইবেল হেলথ প্ল্যান) পার্বত্য প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দা ও অন্যান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বিশেষ করে নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী ও রোগ আক্রান্তদের কাছে চাহিদামতো রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এ জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ ও জনবল বরাদ্দ ও নির্দেশনা একেবারে অনুপস্থিত।
একইভাবে প্রাথমিক শিক্ষা সংক্রান্ত পিডিপি-৪ এ প্রত্যন্ত এলাকার শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যালয় স্থাপন ও পরিচালনা এবং সংশ্লিষ্ট শিশুদের পুষ্টিনিরাপত্তা বিধানসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু তা নেওয়া হচ্ছে না। এসব খাতে অর্থ বরাদ্দ অপ্রতুল। অন্য মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের কাজের সমন্বয়ে যথেষ্ট ঘাটতি দেখি। পরিকল্পনার সংকটও আছে।
এ সংকট যেন না থাকে, সে জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একটি উপদেষ্টা কমিটি আছে। কিন্তু এ কমিটি একেবারেই নিষ্ক্রিয়। আমি এ কমিটির একজন সদস্য। তিন পার্বত্য জেলার সংসদ সদস্য, তিন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, তিন সার্কেল প্রধান, আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান, তিন জেলার তিনজন বাঙালি প্রতিনিধি এ কমিটির সদস্য। এ কমিটি সর্বশেষ ২০০৮ সালে একবার বৈঠক করে। এরপর কমিটির অবস্থা কী তা আমি নিজেই জানি না।
সরকার এমডিজি (মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বেশ সাফল্য অর্জন করেছে। অবশ্য পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রেক্ষাপটে কিছুটা ঘাটতি ছিল। এক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। নইলে এ অঞ্চলটি পুরো বাংলাদেশকে পেছনে টেনে ধরবে।
পাহাড়ের উন্নয়নের ক্ষেত্রে বন পলিসি মানার বালাই নেই। যেদিকে সড়ক গেছে সেদিকে সব শেষ করা হয়েছে। বান্দরবানে প্রাকৃতিক পরিবেশ ক্ষতি করে পাথর উত্তোলন হচ্ছে। বন উজাড় করা হচ্ছে। অথচ এটি বন্ধে হাইকোর্টের আদেশের পরও পাথর তোলা বন্ধে ব্যবস্থা দেখছি না। এখনো সময় আছে। স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে বন রক্ষার উদ্যোগ নিতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে এমন উদ্যোগ চোখে পড়ে যেখানে স্থানীয় জনগোষ্ঠী বন সংরক্ষণ করে পরিবেশ প্রতিবেশকে টিকিয়ে রেখেছে। ফলে সেখানে প্রাকৃতিক পরিবেশ, প্রতিবেশ, জীববৈচিত্র্য সব ঠিক রয়েছে। কিন্তু সরকারি সংরক্ষিত বনে তা দেখা যায় না। ইকো সিস্টেম সার্ভিস (প্রতিবেশ ব্যবস্থার সেবা) প্রদানের জন্য এ জনগোষ্ঠীগুলোকে বিশেষ উন্নয়ন সহযোগিতা প্রদান করা উচিত।
পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে আমার দৃষ্টিতে মোটা দাগে যেটি দেখি তা হচ্ছে চুক্তির আগে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের যে সংঘাত ছিল তা বন্ধ হয়ে গেছে। অস্ত্রধারীরা অস্ত্র জমা দিয়েছে। সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহারের কথা ছিল। কিন্তু আবার পুনর্বহাল হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে আঞ্চলিক দলগুলোর যুদ্ধ হয়েছে আমি তো শুনিনি। চুক্তির অন্যতম ফসল পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। কিন্তু এ মন্ত্রণালয় এখন চুক্তির পক্ষে কাজ না করে উল্টো বিপক্ষে কাজ করতে দেখি। এ মন্ত্রণালয় এখন পাহাড়িবিদ্বেষী চিঠি লিখছে।
জেলা পরিষদের নির্বাচন না দেওয়ার পক্ষে নানা যুক্তি দেওয়া হচ্ছে। এটি তাদের করার কথা ছিল না। জেলা পরিষদ নির্বাচন দিতে তো বাধা নেই। এখানে কেবল স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়ে পরিষদের নির্বাচন করার ক্ষেত্রে সাংবিধানিক বা অন্য কোনো আইনি বাধা নেই।
সংসদীয় নির্বাচন আর পার্বত্য জেলা পরিষদ নির্বাচন এক নয়। যেখানে এ মন্ত্রণালয় চুক্তি মোতাবেক কাজ করার কথা, সেখানে বিরোধিতা করছে খোদ মন্ত্রণালয়ই। এটি আমাদের জন্য দুঃখজনক।
লেখক: চাকমা সার্কেল প্রধান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা।
গোটা দেশের উন্নয়ন ধারাবাহিকতায় পাহাড়েও নানা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এটি মূলত অবকাঠামোগত উন্নয়ন। উন্নয়ন প্রকল্প জনমুখী করা আর প্রকল্প ব্যয়ের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি জরুরি। পাহাড়ে উন্নয়নের প্রতিষ্ঠান এখন তিনটি- পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, জেলা পরিষদ ও নিরাপত্তা বাহিনী। জেলা পরিষদ ও উন্নয়ন বোর্ডের উন্নয়ন বরাদ্দ জনগণের জানার সুযোগ আছে। নিরাপত্তা বাহিনীর কাজের বরাদ্দ জনগণের জানার সুযোগ নেই। আমার জানামতে তাদের প্রকল্পব্যয় অডিট হয় না। আবার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষগুলোর চরম সমন্বয়হীনতা দেখি। যদি সমন্বয় করা হতো তাহলে পাহাড়ে উন্নয়ন আরও দৃশ্যমান হতো।
আমরা যদি পাহাড়ে উন্নয়ন দেখি তাহলে চোখে পড়ে অবকাঠামো উন্নয়ন, সড়ক উন্নয়ন। অবকাঠামোগত উন্নয়নের বিরোধী আমি নই। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবসম্পদ উন্নয়ন, জেন্ডার, পরিবেশ আর প্রবৃদ্ধির দিকেও নজর দেওয়া জরুরি। এ খাতে বরাদ্দ দিতে হবে। চলমান এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) পূরণের জন্য আমাদের সব দিক গুরুত্ব দিতে হবে। যে উন্নয়নের কথা বলছি, এগুলো বাদ দিলে এসডিজি পূরণ সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে তো অনেক উন্নতি করেছে। এর মাঝে আমরা দেশের দারিদ্র্যমুক্তির কথা বলছি। অথচ পার্বত্য চট্টগ্রামে গুচ্ছগ্রামে রেশন অনির্দিষ্টভাবে চালু রেখেছি। যারা পার্বত্য অঞ্চল থেকে সমতলে যেতে চায়, তাদের নানা রকমের বাধা সৃষ্টির অভিযোগও আছে।
পার্বত্য জেলাগুলোর গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান জেলা পরিষদ। পার্বত্য চুক্তির আলোকে অনেকগুলো দপ্তরের কাজ জেলা পরিষদে হস্তান্তরিত হয়েছে। কিন্তু এগুলো চালানোর জন্য দক্ষ জনবলের অভাব আছে। পরিষদের পদগুলো যদি দেখি তাহলে মুখ্য নির্বাহী প্রকৌশলী, ভূমি অফিসার, চেয়ারম্যানের পিএস- এই। এত এত বড় জেলা পরিষদ তাহলে চলবে কীভাবে? স্বাস্থ্যের বিষয়ে যার ন্যূনতম ধারণাই নেই, তার দায়িত্ব জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ দেখভাল করা। জেলা পরিষদকে শক্তিশালী করাও একটি উন্নয়ন। কিন্তু সেটি করা হচ্ছে না।
জেলা পরিষদের সদস্যরা সবাই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। বিষয়ভিত্তিক দক্ষ ও অভিজ্ঞ লোকবল নিয়োগ না দিলে গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর হস্তান্তরের আসল উদ্দেশ্য পূরণ হবে না।
পার্বত্য এলাকায় স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে। কার্য বিধিমালা অনুসারে এসব প্রতিষ্ঠান পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে আসার কথা। এটা হলে পাহাড়ের উন্নয়ন আরও জনমুখী হবে।
পাহাড়ে মানুষ ভূমি অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দীর্ঘদিন। সাধারণ মানুষের জন্য ভূমি বন্দোবস্ত চালু না থাকায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে ১৯৮৯ থেকে। যেখানে বিরোধ নেই সেখানে ভূমি বন্দোবস্ত চালুতে অসুবিধা কোথায়? এ নিয়ে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে সরকারকে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রথাগত কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। তারা বিচার করেন, মৌজার বন অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করেন, ভূমি বিষয়ে বিশেষ করে ভূমি বন্দোবস্তি ও হস্তান্তরের ক্ষেত্রে ডেপুটি কমিশনার ও ইউএনওদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
মৌজার ভিন্ন ভিন্ন জাতিসত্তা, সম্প্রদায়ের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি লালন-পালন এবং সংরক্ষণ করে থাকেন। অথচ এগুলো শক্তিশালীকরণে সরকারের কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। এগুলো চলছে হাওয়ার ওপরে। এসবের জন্য সরকারি বেসরকারি কোনো বরাদ্দও নেই।
এসব প্রতিষ্ঠান সরকারি এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণ বিষয়ক টাস্কফোর্সকে নিষ্ক্রিয় রাখা হয়েছে। এটি নামে আছে কাজে নেই। এ টাস্কফোর্সকে সক্রিয় করা হলে অনেক সমস্যা হতো। এ টাস্কফোর্সের এক দানা চাল দেওয়ার ক্ষমতা নেই। এটি থেকে আমরা কী উন্নয়ন প্রত্যাশা করতে পারি?
জাতীয় নীতিমালাসমূহের মধ্যে স্বাস্থ্য নীতিমালায় (ট্রাইবেল হেলথ প্ল্যান) পার্বত্য প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দা ও অন্যান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বিশেষ করে নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী ও রোগ আক্রান্তদের কাছে চাহিদামতো রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এ জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ ও জনবল বরাদ্দ ও নির্দেশনা একেবারে অনুপস্থিত।
একইভাবে প্রাথমিক শিক্ষা সংক্রান্ত পিডিপি-৪ এ প্রত্যন্ত এলাকার শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যালয় স্থাপন ও পরিচালনা এবং সংশ্লিষ্ট শিশুদের পুষ্টিনিরাপত্তা বিধানসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু তা নেওয়া হচ্ছে না। এসব খাতে অর্থ বরাদ্দ অপ্রতুল। অন্য মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের কাজের সমন্বয়ে যথেষ্ট ঘাটতি দেখি। পরিকল্পনার সংকটও আছে।
এ সংকট যেন না থাকে, সে জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একটি উপদেষ্টা কমিটি আছে। কিন্তু এ কমিটি একেবারেই নিষ্ক্রিয়। আমি এ কমিটির একজন সদস্য। তিন পার্বত্য জেলার সংসদ সদস্য, তিন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, তিন সার্কেল প্রধান, আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান, তিন জেলার তিনজন বাঙালি প্রতিনিধি এ কমিটির সদস্য। এ কমিটি সর্বশেষ ২০০৮ সালে একবার বৈঠক করে। এরপর কমিটির অবস্থা কী তা আমি নিজেই জানি না।
সরকার এমডিজি (মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বেশ সাফল্য অর্জন করেছে। অবশ্য পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রেক্ষাপটে কিছুটা ঘাটতি ছিল। এক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। নইলে এ অঞ্চলটি পুরো বাংলাদেশকে পেছনে টেনে ধরবে।
পাহাড়ের উন্নয়নের ক্ষেত্রে বন পলিসি মানার বালাই নেই। যেদিকে সড়ক গেছে সেদিকে সব শেষ করা হয়েছে। বান্দরবানে প্রাকৃতিক পরিবেশ ক্ষতি করে পাথর উত্তোলন হচ্ছে। বন উজাড় করা হচ্ছে। অথচ এটি বন্ধে হাইকোর্টের আদেশের পরও পাথর তোলা বন্ধে ব্যবস্থা দেখছি না। এখনো সময় আছে। স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে বন রক্ষার উদ্যোগ নিতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে এমন উদ্যোগ চোখে পড়ে যেখানে স্থানীয় জনগোষ্ঠী বন সংরক্ষণ করে পরিবেশ প্রতিবেশকে টিকিয়ে রেখেছে। ফলে সেখানে প্রাকৃতিক পরিবেশ, প্রতিবেশ, জীববৈচিত্র্য সব ঠিক রয়েছে। কিন্তু সরকারি সংরক্ষিত বনে তা দেখা যায় না। ইকো সিস্টেম সার্ভিস (প্রতিবেশ ব্যবস্থার সেবা) প্রদানের জন্য এ জনগোষ্ঠীগুলোকে বিশেষ উন্নয়ন সহযোগিতা প্রদান করা উচিত।
পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে আমার দৃষ্টিতে মোটা দাগে যেটি দেখি তা হচ্ছে চুক্তির আগে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের যে সংঘাত ছিল তা বন্ধ হয়ে গেছে। অস্ত্রধারীরা অস্ত্র জমা দিয়েছে। সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহারের কথা ছিল। কিন্তু আবার পুনর্বহাল হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে আঞ্চলিক দলগুলোর যুদ্ধ হয়েছে আমি তো শুনিনি। চুক্তির অন্যতম ফসল পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। কিন্তু এ মন্ত্রণালয় এখন চুক্তির পক্ষে কাজ না করে উল্টো বিপক্ষে কাজ করতে দেখি। এ মন্ত্রণালয় এখন পাহাড়িবিদ্বেষী চিঠি লিখছে।
জেলা পরিষদের নির্বাচন না দেওয়ার পক্ষে নানা যুক্তি দেওয়া হচ্ছে। এটি তাদের করার কথা ছিল না। জেলা পরিষদ নির্বাচন দিতে তো বাধা নেই। এখানে কেবল স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়ে পরিষদের নির্বাচন করার ক্ষেত্রে সাংবিধানিক বা অন্য কোনো আইনি বাধা নেই।
সংসদীয় নির্বাচন আর পার্বত্য জেলা পরিষদ নির্বাচন এক নয়। যেখানে এ মন্ত্রণালয় চুক্তি মোতাবেক কাজ করার কথা, সেখানে বিরোধিতা করছে খোদ মন্ত্রণালয়ই। এটি আমাদের জন্য দুঃখজনক।
লেখক: চাকমা সার্কেল প্রধান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা।
প্রবৃদ্ধির শীর্ষে থেকেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের দৌড়ে পিছিয়ে রয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ৫০ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়েছে
৬ ঘণ্টা আগেদুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি, উচ্চ করহারসহ ১৭ ধরনের বাধায় বিপর্যস্ত দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। রয়েছে সামাজিক সমস্যাও।
৮ ঘণ্টা আগেজমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৪ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৮ দিন আগে