আজকের পত্রিকা: কয়েক বছর পর দেশে এলেন। দেশের পরিবর্তন কেমন দেখছেন?
নিরুপমা রহমান: দেশে আসতে সব সময়ই ভালো লাগে। এবার চার বছর পর দেশে এসে পরিবর্তনটা খুবই চোখে পড়ছে। এটা শুধু ভৌগোলিক দেশ নয়, তার চেয়েও বেশি কিছু আমার কাছে। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, দেশ তো মাটি দিয়ে তৈরি নয়, এটা তো মানুষের তৈরি। আপনজনেরা দেশে আছেন। এ দেশে জন্মেছি, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি। সে জন্য দেশের প্রতি একটা টান তো আছেই। আর আমি আসলে মাটির টান বলতে মায়ের টানকেই বুঝি।এবার দেশের পরিবর্তনটা চোখে পড়ছে। নতুন নতুন অনেক রাস্তা হয়েছে। মেট্রোরেল হয়েছে। আর রাস্তাঘাটগুলো ঝকঝকে। এসব দেখে খুব ভালো লাগছে। কারণ নিজের দেশটাকে তো নিজের মায়ের ঘর মনে হয়।
আজকের পত্রিকা: আপনি যখন দেশে, তখন একটা নতুন বছর আসছে। বিগত বছর নিয়ে ভাবনা এবং নতুন বছরে প্রত্যাশা কী?
নিরুপমা রহমান: প্রত্যেকের ব্যক্তিগত জীবনের চাওয়া-পাওয়া তো ভিন্ন থাকে। কিন্তু সার্বিকভাবে বেশ অস্থিরতার মধ্য দিয়ে বিদায় নিচ্ছে ২০২৩। বৈশ্বিক যুদ্ধ, নানা ধরনের সহিংসতা চলেছে। তবে পৃথিবীতে কে না শান্তি চায়? যে শিশুটা পৃথিবীতে আসবে, সে যেন একটা শান্তিময় ও সুস্থ পরিবেশে আসতে পারে, সেটা তো সব সময়ের চাওয়া। তাই নতুন বছরের চাওয়া—পৃথিবীতে আবার শান্তি ফিরে আসুক।আমাদের সবার মধ্যে শুভবুদ্ধির উদয় হোক। খাদ্য, বাসস্থানের পাশাপাশি যেন সবাই শিক্ষার অধিকার পায়। সেই শিক্ষা যেন আমাদের সমদর্শী হতে শেখায়। সমানভাবে সবাইকে গ্রহণ করতে শেখায়। এ বিষয়টা আমাদের কাছে ভীষণভাবে জরুরি এ কারণে যে মানুষে-মানুষে ভেদাভেদটা না দেখে আমরা যেন সবাইকে সমানভাবে দেখতে পারি। এতে আমাদের অর্জিত শিক্ষা পূর্ণতা পাবে এবং শান্তিও আসবে। তাই সমানভাবে দেখার যে দর্শন ‘সমদর্শিতা’, নতুন বছরে এটাই আমার চাওয়া।
আজকের পত্রিকা: স্বাধীনতার ৫২ বছর পেরিয়ে আমরা কতটুকু সমদর্শিতা দেখাতে পারছি?
নিরুপমা রহমান: আমার জন্ম আসলে পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে। বাংলাদেশের জন্য সেটা কঠিন সময় ছিল। ইতিহাস বিকৃতি ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পাশ কাটিয়ে সামরিক শাসনের কাল চলছিল। সেই সময়ের প্রজন্মটাই এখন অভিভাবক হয়েছেন। মা-বাবা হিসেবে আমাদের একটা বড় দায়িত্ব হচ্ছে, যদি আমরা মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস না জেনে থাকি, তারপরও সেটাকে বুকে ধারণ করে আমাদের সন্তানদের তা জানানো দরকার।
আমি দীর্ঘদিন অভিবাসী। আমরা বাঙালিত্ব, নিজের দেশ এবং বাংলা ভাষাকে নিয়ে একধরনের দীনতায় ভুগে থাকি। যদিও ফেব্রুয়ারি মাস এলে আমাদের মধ্যে ভাষাপ্রেম জেগে ওঠে। মার্চ ও ডিসেম্বর এলে দেশের কথা বলি। কিন্তু এসব তো সারা বছর ধরে চর্চা করার বিষয়, তা নিয়ে আমরা কি ভাবি? আমরা যদি নিজ থেকে দেশের প্রতি ভালোবাসা, ভাষার প্রতি ভালোবাসা দিয়ে এবং সেসব ধারণ ও চর্চা করি, তাহলে আমাদের মধ্যে দেশপ্রেমের প্রকাশ ঘটবে। এটা করা খুব জরুরি বলে মনে করি। আর এসব বিষয় প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মধ্যে বয়ে নিয়ে যাওয়াটা খুব জরুরি। আমরা কি আমাদের সীমার মধ্য থেকে সেটুকু করতে পারছি? একই সঙ্গে জরুরি হলো, দেশেরই অংশ বিভিন্ন জাতিসত্তার ভাষা-সংস্কৃতিকে আমরা কি সম্মান করতে পারছি? খেয়াল রাখতে হবে, নিজের ভাষা ও সংস্কৃতিকে সম্মান করতে পারলে, অন্যের ভাষা-সংস্কৃতিকে সম্মান করা যায়।
আজকের পত্রিকা: আপনি শিক্ষক এবং শিক্ষা নিয়ে কাজ করেন। আমাদের দেশে অবকাঠামো ও শিক্ষার হার বেড়েছে। কিন্তু প্রকৃত শিক্ষিত মানুষ কি বেড়েছে?
নিরুপমা রহমান: এটা খুব গভীর প্রশ্ন। এ নিয়ে গবেষণা হতে পারে। শিক্ষা বলতে বুঝি, শিক্ষা আর জ্ঞান অর্জন এক কথা নয়। শিক্ষাটা যখন সনদ অর্জনের মাধ্যমে চাকরি পাওয়াটাই মূল উদ্দেশ্য হয়ে ওঠে, তখন শিক্ষাটা আর শিক্ষা থাকে না। ছোটবেলায় আমরা পড়েছিলাম, ‘লেখাপড়া করে যে গাড়ি-ঘোড়ায় চড়ে সে’, এ কথাটায় আমার ভীষণ রকম আপত্তি আছে।
শিক্ষা একটা পদ্ধতি, যেটাকে অস্ত্রও বলা যেতে পারে। অথবা শিক্ষা একটা বাহনের মতো। যেটা আমাদের চক্ষু ও মনের জানালা খুলে দেয়। এর মাধ্যমে নিজের চোখ দিয়ে গোটা বিশ্বকে দেখতে পাওয়ার কথা। প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করতে পারলে নিজের ভাবনা, অনুভূতি, চিন্তা-চেতনা, মননে আমরা বিশ্বকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করতে পারব।
এখন ভাবার সময় এসেছে, শিক্ষা আমাদের মননে ও বোধে কতটুকু ছাপ ফেলছে? আমাদের শিক্ষা কোনো দর্শনের নির্দেশনা দিচ্ছে কি না। শিক্ষা আমাদের চিন্তা ও চর্যার সুযোগ করে দিচ্ছে কি না। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় আমরা শুধু পাঠ্যবইয়ের পড়া মুখস্থ করছি। আর এটাকে শুধু পরীক্ষা পাসের উপায় ভেবে নিচ্ছি। এ বিষয়গুলো নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।
আমি দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমা বিশ্বের শিক্ষাপদ্ধতির সঙ্গে যুক্ত আছি। সে জায়গা থেকে আমার কাছে মনে হয়, শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একদল মানুষ গবেষণা, চিন্তা-ভাবনা করে সোশ্যাল ডিসকোর্সের মাধ্যমে বৌদ্ধিক আলাপ-আলোচনার সূত্রপাত করতে পারেন। এ কাজটা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। এ ক্ষেত্রে আমার আপত্তির জায়গা হলো, সেই গবেষণা ও চিন্তা যেন শুধু অভিজাত মানুষের কাছে থেকে না যায়।সেটাকে সাধারণ জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। পাশাপাশি সাধারণ জনগণের ভাবনা-চিন্তাকে এর সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।
সমালোচনা আর বিশেষভাবে পর্যালোচনা দুটি বিষয় তো এক নয়। সেসব জায়গা থেকে আমরা শিক্ষাকে কাজে লাগাচ্ছি কি না এবং গভীরভাবে কতটুকু গবেষণা হচ্ছে, সেগুলো নিয়ে ভাবার দরকার আছে। আরেকটি বিষয়, একটা দেশের জন্য ৫২ বছর তো মধ্য বয়স পেরোনোর মতো। একজন মধ্য বয়সী মানুষের কাছে এ সময়টা পরিণত চিন্তা করার সুযোগ করে দেয়। তেমনি একটি দেশ বা জাতির জন্যও শিক্ষাসহ নানা সেক্টরের, নানা বিষয় নিয়ে সেভাবে চিন্তা করার সময়। কিন্তু আমরা কি জাতি হিসেবে এখনো পরিণত বয়সের মানুষের মতো গভীরতা নিয়ে সেভাবে চিন্তা করতে পারছি? প্রশ্নটা সবার কাছে রাখলাম।
আজকের পত্রিকা: সম্প্রতি আমাদের পাঠ্যক্রম নিয়ে একটা বিতর্ক চলছে। এ বিষয়ে কী বলবেন?
নিরুপমা রহমান: নতুন পাঠ্যক্রমের দুটি বইয়ে আমার কিছুটা সম্পৃক্ত থাকার সুযোগ হয়েছে। আমার কাছে মনে হয়েছে, শিক্ষার্থীদের চিন্তা করার একটা জায়গা সৃষ্টি হয়েছে বর্তমান পাঠ্যক্রমে। সেটাকে আমি সাধুবাদ জানাই। কিন্তু কোনো চেষ্টাই পূর্ণতা পায় না, সেটার মধ্যে যদি সামগ্রিকতা না থাকে। শিক্ষাব্যবস্থা শুধু কারিকুলামের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয় না। আর নতুন বই শিক্ষর্থীদের কাছে পৌঁছালেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। তাই ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবকদের এর সঙ্গে যদি সম্পৃক্ত করা না যায়, তাহলে এটা কোনোভাবেই সফল হবে না। যেমন নতুন পাঠ্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করার জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের দরকার আছে। তাঁরা কীভাবে ছাত্রদের পড়াবেন?
ঢাকা শহরের অভিজাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনেক রিসোর্স ও সাপোর্ট থাকার কারণে সেখানকার শিক্ষকেরা যেভাবে তৈরি হতে পারবেন, একটা গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা সেভাবে কিন্তু তৈরি হতে পারবেন না। তাই আমরা শিক্ষকদের তৈরি করতে পারছি কি না, সেদিকে নজর দিতে হবে। শিক্ষকেরা তৈরি হলে তারপর ছাত্রদের তাঁরা কীভাবে শিক্ষা দিচ্ছেন, সেদিকটা নিয়ে ভাবতে হবে। এরপর অভিভাবকদের নতুন পাঠ্যক্রম বিষয়ে বোঝাতে হবে। এসব যদি করা না হয়, তাহলে শুধু নতুন পাঠ্যক্রম করে তেমন কোনো সফলতা আসবে না।
আজকের পত্রিকা: কয়েক বছর পর দেশে এলেন। দেশের পরিবর্তন কেমন দেখছেন?
নিরুপমা রহমান: দেশে আসতে সব সময়ই ভালো লাগে। এবার চার বছর পর দেশে এসে পরিবর্তনটা খুবই চোখে পড়ছে। এটা শুধু ভৌগোলিক দেশ নয়, তার চেয়েও বেশি কিছু আমার কাছে। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, দেশ তো মাটি দিয়ে তৈরি নয়, এটা তো মানুষের তৈরি। আপনজনেরা দেশে আছেন। এ দেশে জন্মেছি, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি। সে জন্য দেশের প্রতি একটা টান তো আছেই। আর আমি আসলে মাটির টান বলতে মায়ের টানকেই বুঝি।এবার দেশের পরিবর্তনটা চোখে পড়ছে। নতুন নতুন অনেক রাস্তা হয়েছে। মেট্রোরেল হয়েছে। আর রাস্তাঘাটগুলো ঝকঝকে। এসব দেখে খুব ভালো লাগছে। কারণ নিজের দেশটাকে তো নিজের মায়ের ঘর মনে হয়।
আজকের পত্রিকা: আপনি যখন দেশে, তখন একটা নতুন বছর আসছে। বিগত বছর নিয়ে ভাবনা এবং নতুন বছরে প্রত্যাশা কী?
নিরুপমা রহমান: প্রত্যেকের ব্যক্তিগত জীবনের চাওয়া-পাওয়া তো ভিন্ন থাকে। কিন্তু সার্বিকভাবে বেশ অস্থিরতার মধ্য দিয়ে বিদায় নিচ্ছে ২০২৩। বৈশ্বিক যুদ্ধ, নানা ধরনের সহিংসতা চলেছে। তবে পৃথিবীতে কে না শান্তি চায়? যে শিশুটা পৃথিবীতে আসবে, সে যেন একটা শান্তিময় ও সুস্থ পরিবেশে আসতে পারে, সেটা তো সব সময়ের চাওয়া। তাই নতুন বছরের চাওয়া—পৃথিবীতে আবার শান্তি ফিরে আসুক।আমাদের সবার মধ্যে শুভবুদ্ধির উদয় হোক। খাদ্য, বাসস্থানের পাশাপাশি যেন সবাই শিক্ষার অধিকার পায়। সেই শিক্ষা যেন আমাদের সমদর্শী হতে শেখায়। সমানভাবে সবাইকে গ্রহণ করতে শেখায়। এ বিষয়টা আমাদের কাছে ভীষণভাবে জরুরি এ কারণে যে মানুষে-মানুষে ভেদাভেদটা না দেখে আমরা যেন সবাইকে সমানভাবে দেখতে পারি। এতে আমাদের অর্জিত শিক্ষা পূর্ণতা পাবে এবং শান্তিও আসবে। তাই সমানভাবে দেখার যে দর্শন ‘সমদর্শিতা’, নতুন বছরে এটাই আমার চাওয়া।
আজকের পত্রিকা: স্বাধীনতার ৫২ বছর পেরিয়ে আমরা কতটুকু সমদর্শিতা দেখাতে পারছি?
নিরুপমা রহমান: আমার জন্ম আসলে পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে। বাংলাদেশের জন্য সেটা কঠিন সময় ছিল। ইতিহাস বিকৃতি ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পাশ কাটিয়ে সামরিক শাসনের কাল চলছিল। সেই সময়ের প্রজন্মটাই এখন অভিভাবক হয়েছেন। মা-বাবা হিসেবে আমাদের একটা বড় দায়িত্ব হচ্ছে, যদি আমরা মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস না জেনে থাকি, তারপরও সেটাকে বুকে ধারণ করে আমাদের সন্তানদের তা জানানো দরকার।
আমি দীর্ঘদিন অভিবাসী। আমরা বাঙালিত্ব, নিজের দেশ এবং বাংলা ভাষাকে নিয়ে একধরনের দীনতায় ভুগে থাকি। যদিও ফেব্রুয়ারি মাস এলে আমাদের মধ্যে ভাষাপ্রেম জেগে ওঠে। মার্চ ও ডিসেম্বর এলে দেশের কথা বলি। কিন্তু এসব তো সারা বছর ধরে চর্চা করার বিষয়, তা নিয়ে আমরা কি ভাবি? আমরা যদি নিজ থেকে দেশের প্রতি ভালোবাসা, ভাষার প্রতি ভালোবাসা দিয়ে এবং সেসব ধারণ ও চর্চা করি, তাহলে আমাদের মধ্যে দেশপ্রেমের প্রকাশ ঘটবে। এটা করা খুব জরুরি বলে মনে করি। আর এসব বিষয় প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মধ্যে বয়ে নিয়ে যাওয়াটা খুব জরুরি। আমরা কি আমাদের সীমার মধ্য থেকে সেটুকু করতে পারছি? একই সঙ্গে জরুরি হলো, দেশেরই অংশ বিভিন্ন জাতিসত্তার ভাষা-সংস্কৃতিকে আমরা কি সম্মান করতে পারছি? খেয়াল রাখতে হবে, নিজের ভাষা ও সংস্কৃতিকে সম্মান করতে পারলে, অন্যের ভাষা-সংস্কৃতিকে সম্মান করা যায়।
আজকের পত্রিকা: আপনি শিক্ষক এবং শিক্ষা নিয়ে কাজ করেন। আমাদের দেশে অবকাঠামো ও শিক্ষার হার বেড়েছে। কিন্তু প্রকৃত শিক্ষিত মানুষ কি বেড়েছে?
নিরুপমা রহমান: এটা খুব গভীর প্রশ্ন। এ নিয়ে গবেষণা হতে পারে। শিক্ষা বলতে বুঝি, শিক্ষা আর জ্ঞান অর্জন এক কথা নয়। শিক্ষাটা যখন সনদ অর্জনের মাধ্যমে চাকরি পাওয়াটাই মূল উদ্দেশ্য হয়ে ওঠে, তখন শিক্ষাটা আর শিক্ষা থাকে না। ছোটবেলায় আমরা পড়েছিলাম, ‘লেখাপড়া করে যে গাড়ি-ঘোড়ায় চড়ে সে’, এ কথাটায় আমার ভীষণ রকম আপত্তি আছে।
শিক্ষা একটা পদ্ধতি, যেটাকে অস্ত্রও বলা যেতে পারে। অথবা শিক্ষা একটা বাহনের মতো। যেটা আমাদের চক্ষু ও মনের জানালা খুলে দেয়। এর মাধ্যমে নিজের চোখ দিয়ে গোটা বিশ্বকে দেখতে পাওয়ার কথা। প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করতে পারলে নিজের ভাবনা, অনুভূতি, চিন্তা-চেতনা, মননে আমরা বিশ্বকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করতে পারব।
এখন ভাবার সময় এসেছে, শিক্ষা আমাদের মননে ও বোধে কতটুকু ছাপ ফেলছে? আমাদের শিক্ষা কোনো দর্শনের নির্দেশনা দিচ্ছে কি না। শিক্ষা আমাদের চিন্তা ও চর্যার সুযোগ করে দিচ্ছে কি না। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় আমরা শুধু পাঠ্যবইয়ের পড়া মুখস্থ করছি। আর এটাকে শুধু পরীক্ষা পাসের উপায় ভেবে নিচ্ছি। এ বিষয়গুলো নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।
আমি দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমা বিশ্বের শিক্ষাপদ্ধতির সঙ্গে যুক্ত আছি। সে জায়গা থেকে আমার কাছে মনে হয়, শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একদল মানুষ গবেষণা, চিন্তা-ভাবনা করে সোশ্যাল ডিসকোর্সের মাধ্যমে বৌদ্ধিক আলাপ-আলোচনার সূত্রপাত করতে পারেন। এ কাজটা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। এ ক্ষেত্রে আমার আপত্তির জায়গা হলো, সেই গবেষণা ও চিন্তা যেন শুধু অভিজাত মানুষের কাছে থেকে না যায়।সেটাকে সাধারণ জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। পাশাপাশি সাধারণ জনগণের ভাবনা-চিন্তাকে এর সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।
সমালোচনা আর বিশেষভাবে পর্যালোচনা দুটি বিষয় তো এক নয়। সেসব জায়গা থেকে আমরা শিক্ষাকে কাজে লাগাচ্ছি কি না এবং গভীরভাবে কতটুকু গবেষণা হচ্ছে, সেগুলো নিয়ে ভাবার দরকার আছে। আরেকটি বিষয়, একটা দেশের জন্য ৫২ বছর তো মধ্য বয়স পেরোনোর মতো। একজন মধ্য বয়সী মানুষের কাছে এ সময়টা পরিণত চিন্তা করার সুযোগ করে দেয়। তেমনি একটি দেশ বা জাতির জন্যও শিক্ষাসহ নানা সেক্টরের, নানা বিষয় নিয়ে সেভাবে চিন্তা করার সময়। কিন্তু আমরা কি জাতি হিসেবে এখনো পরিণত বয়সের মানুষের মতো গভীরতা নিয়ে সেভাবে চিন্তা করতে পারছি? প্রশ্নটা সবার কাছে রাখলাম।
আজকের পত্রিকা: সম্প্রতি আমাদের পাঠ্যক্রম নিয়ে একটা বিতর্ক চলছে। এ বিষয়ে কী বলবেন?
নিরুপমা রহমান: নতুন পাঠ্যক্রমের দুটি বইয়ে আমার কিছুটা সম্পৃক্ত থাকার সুযোগ হয়েছে। আমার কাছে মনে হয়েছে, শিক্ষার্থীদের চিন্তা করার একটা জায়গা সৃষ্টি হয়েছে বর্তমান পাঠ্যক্রমে। সেটাকে আমি সাধুবাদ জানাই। কিন্তু কোনো চেষ্টাই পূর্ণতা পায় না, সেটার মধ্যে যদি সামগ্রিকতা না থাকে। শিক্ষাব্যবস্থা শুধু কারিকুলামের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয় না। আর নতুন বই শিক্ষর্থীদের কাছে পৌঁছালেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। তাই ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবকদের এর সঙ্গে যদি সম্পৃক্ত করা না যায়, তাহলে এটা কোনোভাবেই সফল হবে না। যেমন নতুন পাঠ্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করার জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের দরকার আছে। তাঁরা কীভাবে ছাত্রদের পড়াবেন?
ঢাকা শহরের অভিজাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনেক রিসোর্স ও সাপোর্ট থাকার কারণে সেখানকার শিক্ষকেরা যেভাবে তৈরি হতে পারবেন, একটা গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা সেভাবে কিন্তু তৈরি হতে পারবেন না। তাই আমরা শিক্ষকদের তৈরি করতে পারছি কি না, সেদিকে নজর দিতে হবে। শিক্ষকেরা তৈরি হলে তারপর ছাত্রদের তাঁরা কীভাবে শিক্ষা দিচ্ছেন, সেদিকটা নিয়ে ভাবতে হবে। এরপর অভিভাবকদের নতুন পাঠ্যক্রম বিষয়ে বোঝাতে হবে। এসব যদি করা না হয়, তাহলে শুধু নতুন পাঠ্যক্রম করে তেমন কোনো সফলতা আসবে না।
প্রবৃদ্ধির শীর্ষে থেকেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের দৌড়ে পিছিয়ে রয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ৫০ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়েছে
২ দিন আগেদুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি, উচ্চ করহারসহ ১৭ ধরনের বাধায় বিপর্যস্ত দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। রয়েছে সামাজিক সমস্যাও।
২ দিন আগেজমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৬ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৯ দিন আগে