মহিউদ্দিন আহমেদ
স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো পা রাখবেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর আগমনকে ঘিরে লোকে লোকারণ্য তেজগাঁও বিমানবন্দর। পাখির মতো ডানা মেলে আকাশ থেকে মাটিতে নেমে এল বঙ্গবন্ধুকে বহনকারী উড়োজাহাজটি। হাজার হাজার মানুষের তৃষিত চোখ তখন সেই উড়োজাহাজের দিকে। অপেক্ষা যেন আর ফুরোয় না। কখন খুলবে উড়োজাহাজের দরজা, কখন দেখা যাবে বাংলার অবিসংবাদিত নেতাকে। উড়োজাহাজ থেকে নামার সিঁড়ি লাগানো হলো, দরজা খুলে গেল। দরজা খোলার পরে বঙ্গবন্ধুকে দেখা গেল। ফুলের মালা পরিয়ে দিলাম আমি। বঙ্গবন্ধুকে সিঁড়ি দিয়ে নামিয়ে আনলাম। বিমানবন্দরে তখন হুইলচেয়ারে বসে পুত্রের জন্য অপেক্ষা করছিলেন বঙ্গবন্ধুর বাবা শেখ লুৎফুর রহমান। সিঁড়ি থেকে নেমেই বঙ্গবন্ধু তাঁর বাবাকে দেখছেন। তখন আমি তাঁর যে অনুভূতি দেখলাম, মনে হয় যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলেছেন। বাবার সঙ্গে কথা বলতে বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন। জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন, ক্যাপ্টেন মনসুর আলীসহ উপস্থিত নেতারা তাঁকে শান্ত করতে চেষ্টা করলেন।
বিমানবন্দর থেকে ট্রাকে করে সোজা রেসকোর্স ময়দানে চলে এলেন বঙ্গবন্ধু। সেখানে তিনি কী কথা বলবেন? যেন কথা হারিয়ে ফেলেছেন। কথার চেয়ে কাঁদছেন বেশি। উনি দাঁড়িয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অত্যাচার, ৩০ লাখ শহীদ, ২ লাখ মা-বোনের নির্যাতনের কথা বললেন। হয়তো আরও অনেক কিছুই বলার ছিল। কিন্তু আবেগাপ্লুত বঙ্গবন্ধু সেটা আর বলতে পারেননি। সেখানে তাঁর বক্তৃতার চেয়ে কান্নাই বেশি ছিল। বক্তৃতা শেষ করে তিনি এসেছিলেন যে বাসায়, সেখানে বন্দী ছিলেন বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব।
নয় মাস পাকিস্তান কারাগারে থাকার কারণে বঙ্গবন্ধু অনেক শুকিয়ে গিয়েছিলেন। বসলে ঘুমিয়ে পড়তেন। আটকের সময় ওনার গায়ে যেসব জামাকাপড় ছিল, ফেরার পরে সেগুলোই পরেছিলেন। সেগুলো সব ঢিলেঢালা হয়ে পড়েছিল। ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে যখন বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানি হানাদারেরা গ্রেপ্তার করে, তখন আমি ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে ছিলাম। তার আগেই বঙ্গবন্ধু কামালসহ আমাদের বের করে দিয়েছিলেন। কিন্তু আমি যাইনি। জোর করে বাসায় থেকে গিয়েছিলাম। হামলা শুরু হওয়ার পরে অনেক টেলিফোন আসছিল। ওই ফোনগুলো আমি কিংবা হাজি মোরশেদ সাহেব রিসিভ করছিলাম। আমরা বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলাম। সবাই বঙ্গবন্ধুর অবস্থা জিজ্ঞেস করছিলেন। কারণ শহরে নানা গুজব ছিল। কারও জিজ্ঞাসা ছিল বঙ্গবন্ধুকে মেরে ফেলা হয়েছে। কিংবা গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সর্বশেষ ফোন করেছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বাবা কফিল উদ্দিন চৌধুরী। তিনি আওয়ামী লীগের মন্ত্রী ছিলেন। ওনার ফোন আমি রিসিভ করেছিলাম। আমাকে বললেন, মহিউদ্দিন, মুজিবুরের খবর কী? আমি বললাম, ভালোই আছে। উনি কথা বলতে বলতে আর্মিরা বাসায় হামলা করেছে। ওই মুহূর্তে আমি বললাম, আর্মি হামলা করছে, ফোন রাখেন।
তখন আমি দোতলায় গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে বললাম, আর্মি হামলা করছে। এই কথাটা বলে আমি নিচতলায় নামতে নামতেই আর্মি বাসায় ঢুকে গেছে। করিডরে তারা অ্যামবুশ করেছিল। আমি পৌঁছানো মাত্রই চুল ধরেই মারা শুরু করল। রাইফেল দিয়ে মেরেছিল। কিন্তু বেয়নেট চার্জ কেন করেনি আল্লাহ জানেন। ওই সময় আমি মরার ভান ধরে পড়ে গিয়েছিলাম। এক আর্মি বলল, ‘শালা মর গেয়া’। এরপর এক আর্মি আমার চুল ধরে টেনে আমাকে বাসার উত্তর দিকের ড্রেনে ফেলে দিয়েছিল। কিন্তু আমি সব দেখছিলাম।
পরে পাকিস্তানি আর্মি দোতলায় উঠে বঙ্গবন্ধুর রুমে রাইফেল দিয়ে বাড়ি দিচ্ছিল। আর গুলি করছিল জানালা দিয়ে। তখন বঙ্গবন্ধু চিৎকার দিয়ে বললেন, ‘স্টপ ফায়ার, স্টপ ফায়ার। আই অ্যাম কামিং আউট। আই অ্যাম কামিং আউট।’ এই কথাটা শুনলাম। পরে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এল। স্যুটকেসটা একজন সৈন্য নিয়ে এল। তখন বাসায় একটা বাচ্চা কাজের মেয়ে দৌড় দিয়েছিল। তাকেও ধরে ফেলেছিল পাকিস্তান আর্মি। তখন বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘শি ইজ মাই মেড সারভেন্ট। ডোন্ট কিল হার।’ তারপর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গেল। যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল।
অভ্যর্থনা কেন্দ্রে থাকা হাজি মোরশেদকে অনেক মারধর করে পাকিস্তান আর্মি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘মহিউদ্দিন, তুই তো গেলি গা। কিন্তু আমারে লনে ফেলে অনেক মেরেছিল।’
বঙ্গবন্ধু আমাকে বাসায় দেখে রাগারাগি করলেন। বললেন, ‘আমার সঙ্গে থেকে কেন মরবি? বাইরে থাকলে একটা শত্রুরে মেরে হলেও মরতে পারবি। আমার লগে থাইকা লাভ কী?’ কিন্তু আমি আর হাজি মোরশেদ সাহেব যাইনি। সারা রাত আমরা ৩২ নম্বরের বাড়িতেই ছিলাম। রাতভর শহরে ব্যাপক গোলাগুলি। সকালে ৩২ নম্বরের পশ্চিম পাশের বাসার মালিক ডা. সামাদ সাহেব তাঁর ছেলেদের নিয়ে আমাদের ওই বাসায় নিয়ে গেলেন। রাস্তায় আর্মি টহল থাকায় সেই বাসায় গিয়েছি দেয়াল টপকে। বঙ্গমাতাও দেয়াল টপকে সেই বাসায় গিয়েছিলেন। সেটাও এক করুণ কাহিনি। ৩২ নম্বরের বাসার দেয়ালের পাশে চেয়ারের ওপরে মোড়া ছিল। কিন্তু ওই পাশে সেটা ছিল না। আমি নীল ডাউন হয়ে আমার পিঠ বেয়ে বঙ্গমাতাকে নামতে অনুরোধ করলেও সেটা তিনি করেননি। লাফ দিয়ে নামতে গিয়ে তিনি পড়ে গিয়েছিলেন। পরের দিন সকালে কামাল এল।
বঙ্গবন্ধু ৮ জানুয়ারি মুক্তি পাওয়ার পরে লন্ডনে গেলেন। সেখান থেকে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলছিলেন। তখন খবর এল পোস্ট অফিসে কে বা কারা যেন আগুন দিয়েছে। তখন তাজউদ্দীন ভাই ও ক্যাপ্টেন মনসুর আলী আমাকে বললেন, এটা তো পাকিস্তানের নয়, আমাদের সম্পদ। এটাকে জ্বালানো হলে আমাদেরই ক্ষতি। মহিউদ্দিন যাও। গিয়ে তাদের বুঝিয়ে থামাও।
থামিয়ে আমি যখন আবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যাচ্ছিলাম। প্রেসক্লাব পার হয়ে হাইকোর্টের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম। বিপরীত পাশ থেকে আসছিল মোহাম্মদ হানিফ (সাবেক মেয়র)। আমাকে দেখে হানিফ বলল, মহিউদ্দিন তোর জিন্দিগি সার্থক। আমি বললাম, কেন, কী হয়েছে! দেশ স্বাধীন হয়েছে। সব বাঙালির জীবনই সার্থক। বললাম, সার্থক তো তোর জীবনও। সে আমারে বলে, না ব্যাটা। বঙ্গবন্ধু লন্ডন থেকে তাজউদ্দীন ভাইকে জিজ্ঞেস করছে, মহিউদ্দিন কেমন আছে? বঙ্গবন্ধুর আমার কথা জানতে চাওয়া জীবনের পরম পাওয়া।
বঙ্গবন্ধুকে জীবিত ফিরে পেলাম। এটার যে আনন্দ, খুশি তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। তিনি আসছেন, এর চেয়ে বড় খুশি আর কিছু হয় না। এই অনুভূতি তুলনাহীন। সেই সময়ের মনের উৎফুল্লতা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।
মহিউদ্দিন আহমেদ: বঙ্গবন্ধুর প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও সভাপতি, আওয়ামী লীগ, মুন্সিগঞ্জ জেলা শাখা
স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো পা রাখবেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর আগমনকে ঘিরে লোকে লোকারণ্য তেজগাঁও বিমানবন্দর। পাখির মতো ডানা মেলে আকাশ থেকে মাটিতে নেমে এল বঙ্গবন্ধুকে বহনকারী উড়োজাহাজটি। হাজার হাজার মানুষের তৃষিত চোখ তখন সেই উড়োজাহাজের দিকে। অপেক্ষা যেন আর ফুরোয় না। কখন খুলবে উড়োজাহাজের দরজা, কখন দেখা যাবে বাংলার অবিসংবাদিত নেতাকে। উড়োজাহাজ থেকে নামার সিঁড়ি লাগানো হলো, দরজা খুলে গেল। দরজা খোলার পরে বঙ্গবন্ধুকে দেখা গেল। ফুলের মালা পরিয়ে দিলাম আমি। বঙ্গবন্ধুকে সিঁড়ি দিয়ে নামিয়ে আনলাম। বিমানবন্দরে তখন হুইলচেয়ারে বসে পুত্রের জন্য অপেক্ষা করছিলেন বঙ্গবন্ধুর বাবা শেখ লুৎফুর রহমান। সিঁড়ি থেকে নেমেই বঙ্গবন্ধু তাঁর বাবাকে দেখছেন। তখন আমি তাঁর যে অনুভূতি দেখলাম, মনে হয় যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলেছেন। বাবার সঙ্গে কথা বলতে বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন। জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন, ক্যাপ্টেন মনসুর আলীসহ উপস্থিত নেতারা তাঁকে শান্ত করতে চেষ্টা করলেন।
বিমানবন্দর থেকে ট্রাকে করে সোজা রেসকোর্স ময়দানে চলে এলেন বঙ্গবন্ধু। সেখানে তিনি কী কথা বলবেন? যেন কথা হারিয়ে ফেলেছেন। কথার চেয়ে কাঁদছেন বেশি। উনি দাঁড়িয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অত্যাচার, ৩০ লাখ শহীদ, ২ লাখ মা-বোনের নির্যাতনের কথা বললেন। হয়তো আরও অনেক কিছুই বলার ছিল। কিন্তু আবেগাপ্লুত বঙ্গবন্ধু সেটা আর বলতে পারেননি। সেখানে তাঁর বক্তৃতার চেয়ে কান্নাই বেশি ছিল। বক্তৃতা শেষ করে তিনি এসেছিলেন যে বাসায়, সেখানে বন্দী ছিলেন বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব।
নয় মাস পাকিস্তান কারাগারে থাকার কারণে বঙ্গবন্ধু অনেক শুকিয়ে গিয়েছিলেন। বসলে ঘুমিয়ে পড়তেন। আটকের সময় ওনার গায়ে যেসব জামাকাপড় ছিল, ফেরার পরে সেগুলোই পরেছিলেন। সেগুলো সব ঢিলেঢালা হয়ে পড়েছিল। ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে যখন বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানি হানাদারেরা গ্রেপ্তার করে, তখন আমি ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে ছিলাম। তার আগেই বঙ্গবন্ধু কামালসহ আমাদের বের করে দিয়েছিলেন। কিন্তু আমি যাইনি। জোর করে বাসায় থেকে গিয়েছিলাম। হামলা শুরু হওয়ার পরে অনেক টেলিফোন আসছিল। ওই ফোনগুলো আমি কিংবা হাজি মোরশেদ সাহেব রিসিভ করছিলাম। আমরা বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলাম। সবাই বঙ্গবন্ধুর অবস্থা জিজ্ঞেস করছিলেন। কারণ শহরে নানা গুজব ছিল। কারও জিজ্ঞাসা ছিল বঙ্গবন্ধুকে মেরে ফেলা হয়েছে। কিংবা গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সর্বশেষ ফোন করেছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বাবা কফিল উদ্দিন চৌধুরী। তিনি আওয়ামী লীগের মন্ত্রী ছিলেন। ওনার ফোন আমি রিসিভ করেছিলাম। আমাকে বললেন, মহিউদ্দিন, মুজিবুরের খবর কী? আমি বললাম, ভালোই আছে। উনি কথা বলতে বলতে আর্মিরা বাসায় হামলা করেছে। ওই মুহূর্তে আমি বললাম, আর্মি হামলা করছে, ফোন রাখেন।
তখন আমি দোতলায় গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে বললাম, আর্মি হামলা করছে। এই কথাটা বলে আমি নিচতলায় নামতে নামতেই আর্মি বাসায় ঢুকে গেছে। করিডরে তারা অ্যামবুশ করেছিল। আমি পৌঁছানো মাত্রই চুল ধরেই মারা শুরু করল। রাইফেল দিয়ে মেরেছিল। কিন্তু বেয়নেট চার্জ কেন করেনি আল্লাহ জানেন। ওই সময় আমি মরার ভান ধরে পড়ে গিয়েছিলাম। এক আর্মি বলল, ‘শালা মর গেয়া’। এরপর এক আর্মি আমার চুল ধরে টেনে আমাকে বাসার উত্তর দিকের ড্রেনে ফেলে দিয়েছিল। কিন্তু আমি সব দেখছিলাম।
পরে পাকিস্তানি আর্মি দোতলায় উঠে বঙ্গবন্ধুর রুমে রাইফেল দিয়ে বাড়ি দিচ্ছিল। আর গুলি করছিল জানালা দিয়ে। তখন বঙ্গবন্ধু চিৎকার দিয়ে বললেন, ‘স্টপ ফায়ার, স্টপ ফায়ার। আই অ্যাম কামিং আউট। আই অ্যাম কামিং আউট।’ এই কথাটা শুনলাম। পরে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এল। স্যুটকেসটা একজন সৈন্য নিয়ে এল। তখন বাসায় একটা বাচ্চা কাজের মেয়ে দৌড় দিয়েছিল। তাকেও ধরে ফেলেছিল পাকিস্তান আর্মি। তখন বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘শি ইজ মাই মেড সারভেন্ট। ডোন্ট কিল হার।’ তারপর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গেল। যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল।
অভ্যর্থনা কেন্দ্রে থাকা হাজি মোরশেদকে অনেক মারধর করে পাকিস্তান আর্মি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘মহিউদ্দিন, তুই তো গেলি গা। কিন্তু আমারে লনে ফেলে অনেক মেরেছিল।’
বঙ্গবন্ধু আমাকে বাসায় দেখে রাগারাগি করলেন। বললেন, ‘আমার সঙ্গে থেকে কেন মরবি? বাইরে থাকলে একটা শত্রুরে মেরে হলেও মরতে পারবি। আমার লগে থাইকা লাভ কী?’ কিন্তু আমি আর হাজি মোরশেদ সাহেব যাইনি। সারা রাত আমরা ৩২ নম্বরের বাড়িতেই ছিলাম। রাতভর শহরে ব্যাপক গোলাগুলি। সকালে ৩২ নম্বরের পশ্চিম পাশের বাসার মালিক ডা. সামাদ সাহেব তাঁর ছেলেদের নিয়ে আমাদের ওই বাসায় নিয়ে গেলেন। রাস্তায় আর্মি টহল থাকায় সেই বাসায় গিয়েছি দেয়াল টপকে। বঙ্গমাতাও দেয়াল টপকে সেই বাসায় গিয়েছিলেন। সেটাও এক করুণ কাহিনি। ৩২ নম্বরের বাসার দেয়ালের পাশে চেয়ারের ওপরে মোড়া ছিল। কিন্তু ওই পাশে সেটা ছিল না। আমি নীল ডাউন হয়ে আমার পিঠ বেয়ে বঙ্গমাতাকে নামতে অনুরোধ করলেও সেটা তিনি করেননি। লাফ দিয়ে নামতে গিয়ে তিনি পড়ে গিয়েছিলেন। পরের দিন সকালে কামাল এল।
বঙ্গবন্ধু ৮ জানুয়ারি মুক্তি পাওয়ার পরে লন্ডনে গেলেন। সেখান থেকে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলছিলেন। তখন খবর এল পোস্ট অফিসে কে বা কারা যেন আগুন দিয়েছে। তখন তাজউদ্দীন ভাই ও ক্যাপ্টেন মনসুর আলী আমাকে বললেন, এটা তো পাকিস্তানের নয়, আমাদের সম্পদ। এটাকে জ্বালানো হলে আমাদেরই ক্ষতি। মহিউদ্দিন যাও। গিয়ে তাদের বুঝিয়ে থামাও।
থামিয়ে আমি যখন আবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যাচ্ছিলাম। প্রেসক্লাব পার হয়ে হাইকোর্টের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম। বিপরীত পাশ থেকে আসছিল মোহাম্মদ হানিফ (সাবেক মেয়র)। আমাকে দেখে হানিফ বলল, মহিউদ্দিন তোর জিন্দিগি সার্থক। আমি বললাম, কেন, কী হয়েছে! দেশ স্বাধীন হয়েছে। সব বাঙালির জীবনই সার্থক। বললাম, সার্থক তো তোর জীবনও। সে আমারে বলে, না ব্যাটা। বঙ্গবন্ধু লন্ডন থেকে তাজউদ্দীন ভাইকে জিজ্ঞেস করছে, মহিউদ্দিন কেমন আছে? বঙ্গবন্ধুর আমার কথা জানতে চাওয়া জীবনের পরম পাওয়া।
বঙ্গবন্ধুকে জীবিত ফিরে পেলাম। এটার যে আনন্দ, খুশি তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। তিনি আসছেন, এর চেয়ে বড় খুশি আর কিছু হয় না। এই অনুভূতি তুলনাহীন। সেই সময়ের মনের উৎফুল্লতা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।
মহিউদ্দিন আহমেদ: বঙ্গবন্ধুর প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও সভাপতি, আওয়ামী লীগ, মুন্সিগঞ্জ জেলা শাখা
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৬ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৬ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১০ দিন আগে