বিভুরঞ্জন সরকার
ঈদের ছুটির মধ্যে রাজনীতি নিয়ে লেখা হয়তো পাঠকদের বিরক্তির কারণ হতে পারে। অসংখ্য মানুষ ঈদ উদ্যাপনের জন্য ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছে। মানুষের এই যাওয়া ও আসা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন হোক, সেটাই কামনা করি। রাজনীতির প্রতি যতই বিরূপতা তৈরি হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত তো রাজনীতির কাছেই আমাদের ফিরে যেতে হয়। দেশ ভালো চলবে না খারাপ চলবে, তা-ও তো নির্ভর করে রাজনীতিরই ওপর। এবারের কোরবানির ঈদ উদ্যাপন করা হবে ‘ঈদের পর কঠিন আন্দোলন’ এই আশা কিংবা আশঙ্কা মাথায় নিয়েই।
দেশের অন্যতম বড় একটি রাজনৈতিক দল বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এক দফা দাবিতে ঈদের পর কঠিন আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। অবশ্য এটা বিএনপি বহু বছর ধরেই বলে আসছে।
দলটি ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ক্ষমতা ছেড়েছে। তারপর প্রায় ১৭ বছর চলে গেছে। এর মধ্যে দুই বছরের মতো ছিল বিশেষ ধরনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার। শেখ হাসিনা ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে টানা ১৪ বছরের বেশি সময় ক্ষমতায়। ২০১০ সালের ঈদের সময় থেকেই বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া বলে আসছেন, ‘ইনশা আল্লাহ, ঈদের পর আন্দোলন শুরু করব। দুর্নীতিবাজ সরকারকে বিদায় করব। আন্দোলনের জন্য আপনারা প্রস্তুত হন।’
তারপর বহু ঈদ গেছে, কিন্তু না হয়েছে আন্দোলন, না সরকার বিদায় নিয়েছে। এবার বিএনপি ও তার মিত্ররা বলছে, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবে না। তারা দুটি লক্ষ্য ঘোষণা করেছে: বর্তমান সরকারের পতন এবং পছন্দের সরকার ও নির্বাচন কমিশন গঠন করে তাদের অধীনে নির্বাচন। এই লক্ষ্য অর্জনে তারা সফল হবে, তা কি দেশের মানুষ বিশ্বাস করে? লম্বা সময় ক্ষমতার বাইরে থাকায় বিএনপির মধ্যে নানা রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক সমস্যা তৈরি হয়েছে। দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে প্রকাশ্য রাজনীতি থেকে দূরে আছেন। শারীরিকভাবেও তিনি ফিট নন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে বসে দল চালান। ফলে দলটি এখন ঐক্যবদ্ধ ও সুসংগঠিত নয়। এই অবস্থায় দলের সিনিয়র নেতাদের আন্দোলনসংক্রান্ত বক্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক মহলে একধরনের হাস্য-কৌতুক চলছে।
এবারও ঈদের পর জনগণ বিএনপি ও তার মিত্রদের ডাকে মাঠে নামবে–এমন লক্ষণ এখনো স্পষ্ট নয়।
দুই. ফেসবুকে কারও কারও বিভিন্ন বিষয়ে বিপ্লবী পোস্ট দেখে অনেক আগে শোনা একটি কৌতুক মনে পড়ছে। একদিন এক লোক একটি উঁচু পাহাড়ের সামনে দাঁড়িয়ে গম্ভীরভাবে কিছু ভাবছিলেন। আরেক লোক অনেকক্ষণ এটা দেখে কৌতূহল দমন করতে পারলেন না। অন্যের ব্যাপারে মানুষের কৌতূহল একটু বেশিই থাকে। তিনি ভাবুক ব্যক্তির কাছে গিয়ে বললেন, কিছু মনে না করলে আপনাকে একটি প্রশ্ন করতে পারি?
ভাবতে ভাবতেই তিনি জবাব দিলেন। করুন।
-আপনি কি কিছু নিয়ে বিশেষ চিন্তিত?
-হুম।
-কী নিয়ে?
-আমার মন চায়, এই পাহাড়টা তুইলা আছাড় মারি।
-ভালো তো। মারুন না। এখানে কেউ বাধা দেওয়ার নেই।
-ভাই রে, শক্তিতে যে কুলায় না!
কিছু করতে হলে শুধু ইচ্ছা থাকলেই হবে না। সামর্থ্যও থাকতে হবে। ফেসবুকে যাঁরা ঝড় তোলেন, তাঁরা খারাপ কিছু সহ্য করতে পারেন না। তাঁরা শুধু ভালোর প্রত্যাশা করেন। কিন্তু পৃথিবীতে ভালো-খারাপের দ্বন্দ্ব তো নতুন কিছু নয়। ভালো চাই, খারাপ করি।
পৃথিবীতে হয়তো ভালো মানুষের সংখ্যাই বেশি। খারাপ মানুষ কম। কিন্তু সংখ্যাগুরু ভালো মানুষেরা হলেন নির্বিরোধ ও নিষ্ক্রিয়।
সংখ্যালঘু খারাপ মানুষ আবার সক্রিয় এবং যা খুশি তা-ই করে ফেলতে পারে। তাই পৃথিবী নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা ভালো মানুষের চেয়ে খারাপ মানুষের হাতেই বেশি থাকে বা চলে যায়।
ভালো মানুষ যদি ক্ষমতাবান হয়ে একটি খারাপ কাজ করে, তাহলে ক্ষমতার বাইরে থাকা ভালো মানুষেরা একযোগে তার বিরোধিতা করে, হইচই করে। খারাপ মানুষেরা খারাপ করলে হয়তো মৃদু সমালোচনা করে এবং তাড়াতাড়ি তা ভুলেও যায়।
আমরা ভালো মানুষের শাসন চাই, সুশাসন চাই–এটা যদি সত্য হয়, আন্তরিক হয়, তাহলে খারাপ শাসন চলে কীভাবে? আমাদের চাওয়ায় কি কোনো ভেজাল আছে, গলদ আছে?
আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায়। অনেক বছর ধরেই আছে। আমাদের দেশে শুধু নয়, অন্য অনেক দেশেও শেখ হাসিনার চেয়ে আর কেউ এত দীর্ঘ সময় সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। তিনি তাঁর শাসনকালে ভালো কাজ বেশি করেছেন, না খারাপ কাজ বেশি, সেটা একটা দীর্ঘ আলোচনা ও বিতর্কের বিষয়। কোনো দেশের কোনো সরকার শুধুই ভালো কাজ করে, তেমন নজির আছে কি?
একজন যদি বলেন, শেখ হাসিনা ভালো কাজ বেশি করেছেন, আবার কিছু মন্দ কাজও করেছেন। সঙ্গে সঙ্গে আরেকজন তেড়ে উঠবেন—বলেন কী, শেখ হাসিনার মতো খারাপ শাসক আর হয় না।
যদি বলা হয়, তিনি তাহলে ক্ষমতায় টিকে আছেন কীভাবে?
জবাব পাওয়া যাবে: আরে, ক্ষমতায় তো আছেন জোর করে। সামরিক-বেসামরিক আমলাদের ওপর নির্ভর করে। বিরোধী দলকে ফ্যাসিস্ট কায়দায় দমন করে।
যদি প্রশ্ন করা হয়, হাসিনার আগে জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়াও তো জোর করে ক্ষমতায় থাকার নানা রকম চেষ্টা করেছেন। পারেননি কেন? শেখ হাসিনা কী কেবল জবরদস্তি করেই ক্ষমতায় আছেন, নাকি তার পেছনে জনসমর্থনও আছে?
অমনি জবাব পাওয়া যাবে, রাখেন আপনার দালালি। মানুষের ভোটের অধিকার একবার ফিরিয়ে দিতে বলেন, দেখেন জনসমর্থন কোন দিকে!
যদি বলা হয়, ঠিক আছে, লুটপাট, দুর্নীতি শেখ হাসিনার আমলেও হচ্ছে। কিন্তু শুধু কি আওয়ামী লীগের চাটার দলেরই পেট ভরছে? মানুষ কি কোনো উপকার পায়নি, পাচ্ছে না? বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতি আছে। কিন্তু বিদ্যুতের সংকট দূর হয়েছে। খালেদা শুধু খাম্বা দিয়েই দায়িত্ব পালন করেছেন। খালেদার আমলে কৃষক সার পায়নি, পানি পায়নি, গুলি পেয়েছে। হাসিনার সময় কি সার বা কৃষি উপকরণের সংকট হয়েছে?
উত্তরে বলা হবে, কথায় কথায় খালেদা জিয়ার সময়ের উদাহরণ টানা কেন? খালেদা খারাপ বলেই তো মানুষ হাসিনার ওপর আস্থা রেখেছিল। হাসিনা মানুষের আস্থার মর্যাদা রাখতে পারেননি।
যদি প্রশ্ন করা হয়, আচ্ছা, শেখ হাসিনাকে ভোটের মাধ্যমে পরাজিত করে কাকে ক্ষমতায় আনা হবে?
জবাব দেওয়া হবে: মানুষ যাকে পছন্দ করবে, সে-ই ক্ষমতায় আসবে।
আচ্ছা, আমাদের ভোটের অভিজ্ঞতা কী বলে? মানুষ কি ভালো মানুষকে ভোট দেয়, নাকি দল এবং মার্কা দেখে ভোট দেয়? রাজনীতিতে ভালো মানুষ যাঁরা ছিলেন, তাঁরা বিলুপ্তপ্রায় হয়ে গেলেন কেন? ভালো রাজনীতিকের প্রতি মানুষের সমর্থন থাকলে রাজনৈতিক দলগুলো খারাপ মানুষকে কাছে টানার সাহস পায় কী করে?
রাজনৈতিক দলের প্রধান লক্ষ্য ক্ষমতা। রাজনৈতিক দলের নীতি, কৌশল, কর্মসূচি প্রণীত হয় ক্ষমতায় যাওয়ার পথ তৈরির জন্যই। আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলাম বা রামকৃষ্ণ মিশনের মতো শুধু সেবাদান কোনো রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য নয়। জনসেবার ব্রতের কথা একসময় রাজনীতিকদের মুখে শোনা গেলেও এখন সময় পাল্টেছে। চিন্তার জগতেও এসেছে পরিবর্তন। এখন প্রতিযোগিতার সময়।
তার পরও এখনো কারও কারও নিজেকে ‘বিপ্লব স্পন্দিত বুকে মনে হয় আমিই লেনিন’। কিন্তু ওটা মুখে, কাজে নয়!
যেকোনো ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য হুজুগ নয়, দরকার হয় সচেতন ও সংগঠিত জনশক্তির। এখন আমরা অনেকেই ভাবুক হয়ে ভাবসাগরে হাবুডুবু খেতে ভালোবাসি। কিন্তু গায়ে-গতরে রোদ-মেঘ একটু মাখামাখি করুক তা চাই না। পাহাড় তুলে আছাড় মারার অবাস্তব কল্পনা নয়, এখন দরকার ভালোর পক্ষে জনমত বা শক্তি গড়ে তোলা। ‘এ’র বিকল্প ‘বি’—এই সনাতন চিন্তায় আটকে না থেকে ‘সি’ কিংবা ‘ডি’র পক্ষে সমবেত হওয়ার বাস্তব কাজে হাত দেওয়াই এখন জরুরি। সৎ ও সাহসী মানুষদের খোলস থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। জড়তা নয়, দরকার তীব্র একটি ঝাঁকি। সেই ঝাঁকি কে দেবে, তারই এখন অপেক্ষা।
তিন. আন্দোলন-সংগ্রাম নিয়ে দেশের মানুষের অভিজ্ঞতা ভালো নয়। সফল গণ-আন্দোলনের কারণে সরকার বদল হয়, কিন্তু তাতে সাধারণ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না। রাজনৈতিক নেতৃত্বে সৎ, মানবিক ও দায়িত্ববান মানুষের অভাব রয়েছে। দেশের ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতাপ্রত্যাশী বড় দুটি দলই চায় না দেশে মানুষের স্বার্থে লড়াই-সংগ্রাম করার মতো একটি বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে উঠুক। মানুষ রাজনৈতিক নেতৃত্বের ধান্দা বুঝতে পারছে বলেই জীবনের ঝুঁকি আন্দোলন-সংগ্রামে যুক্ত হতে চায় না। এখন আন্দোলন-সংগ্রামে দলের বাইরের একেবারে সাধারণ মানুষকে খুঁজে পাওয়া যায় না। আওয়ামী লীগে তবু একজন শেখ হাসিনা আছেন, যাঁর প্রতি মানুষের আস্থা-বিশ্বাস আছে। মানুষের আস্থাভাজন না হওয়ার কারণেই বিএনপি এখনো আওয়ামী লীগের বিকল্প হয়ে উঠতে পারছে না। সে জন্য ঈদের পরের আন্দোলন নিয়ে আওয়ামী লীগের বড় দুশ্চিন্তা হয়তো নেই। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের চারটিতেই আওয়ামী লীগের নৌকা জিতেছে। এতে দলটির আস্থা বেড়েছে। অন্যদিকে বিএনপির ভরসা ‘বাইরের চাপ’। আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ভূরাজনীতির যে নিত্যনতুন মেরুকরণ, তা আওয়ামী লীগকে বড় চাপে ফেলতে পারবে বলে মনে হয় না।
বিভুরঞ্জন সরকার, জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
ঈদের ছুটির মধ্যে রাজনীতি নিয়ে লেখা হয়তো পাঠকদের বিরক্তির কারণ হতে পারে। অসংখ্য মানুষ ঈদ উদ্যাপনের জন্য ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছে। মানুষের এই যাওয়া ও আসা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন হোক, সেটাই কামনা করি। রাজনীতির প্রতি যতই বিরূপতা তৈরি হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত তো রাজনীতির কাছেই আমাদের ফিরে যেতে হয়। দেশ ভালো চলবে না খারাপ চলবে, তা-ও তো নির্ভর করে রাজনীতিরই ওপর। এবারের কোরবানির ঈদ উদ্যাপন করা হবে ‘ঈদের পর কঠিন আন্দোলন’ এই আশা কিংবা আশঙ্কা মাথায় নিয়েই।
দেশের অন্যতম বড় একটি রাজনৈতিক দল বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এক দফা দাবিতে ঈদের পর কঠিন আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। অবশ্য এটা বিএনপি বহু বছর ধরেই বলে আসছে।
দলটি ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ক্ষমতা ছেড়েছে। তারপর প্রায় ১৭ বছর চলে গেছে। এর মধ্যে দুই বছরের মতো ছিল বিশেষ ধরনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার। শেখ হাসিনা ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে টানা ১৪ বছরের বেশি সময় ক্ষমতায়। ২০১০ সালের ঈদের সময় থেকেই বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া বলে আসছেন, ‘ইনশা আল্লাহ, ঈদের পর আন্দোলন শুরু করব। দুর্নীতিবাজ সরকারকে বিদায় করব। আন্দোলনের জন্য আপনারা প্রস্তুত হন।’
তারপর বহু ঈদ গেছে, কিন্তু না হয়েছে আন্দোলন, না সরকার বিদায় নিয়েছে। এবার বিএনপি ও তার মিত্ররা বলছে, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবে না। তারা দুটি লক্ষ্য ঘোষণা করেছে: বর্তমান সরকারের পতন এবং পছন্দের সরকার ও নির্বাচন কমিশন গঠন করে তাদের অধীনে নির্বাচন। এই লক্ষ্য অর্জনে তারা সফল হবে, তা কি দেশের মানুষ বিশ্বাস করে? লম্বা সময় ক্ষমতার বাইরে থাকায় বিএনপির মধ্যে নানা রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক সমস্যা তৈরি হয়েছে। দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে প্রকাশ্য রাজনীতি থেকে দূরে আছেন। শারীরিকভাবেও তিনি ফিট নন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে বসে দল চালান। ফলে দলটি এখন ঐক্যবদ্ধ ও সুসংগঠিত নয়। এই অবস্থায় দলের সিনিয়র নেতাদের আন্দোলনসংক্রান্ত বক্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক মহলে একধরনের হাস্য-কৌতুক চলছে।
এবারও ঈদের পর জনগণ বিএনপি ও তার মিত্রদের ডাকে মাঠে নামবে–এমন লক্ষণ এখনো স্পষ্ট নয়।
দুই. ফেসবুকে কারও কারও বিভিন্ন বিষয়ে বিপ্লবী পোস্ট দেখে অনেক আগে শোনা একটি কৌতুক মনে পড়ছে। একদিন এক লোক একটি উঁচু পাহাড়ের সামনে দাঁড়িয়ে গম্ভীরভাবে কিছু ভাবছিলেন। আরেক লোক অনেকক্ষণ এটা দেখে কৌতূহল দমন করতে পারলেন না। অন্যের ব্যাপারে মানুষের কৌতূহল একটু বেশিই থাকে। তিনি ভাবুক ব্যক্তির কাছে গিয়ে বললেন, কিছু মনে না করলে আপনাকে একটি প্রশ্ন করতে পারি?
ভাবতে ভাবতেই তিনি জবাব দিলেন। করুন।
-আপনি কি কিছু নিয়ে বিশেষ চিন্তিত?
-হুম।
-কী নিয়ে?
-আমার মন চায়, এই পাহাড়টা তুইলা আছাড় মারি।
-ভালো তো। মারুন না। এখানে কেউ বাধা দেওয়ার নেই।
-ভাই রে, শক্তিতে যে কুলায় না!
কিছু করতে হলে শুধু ইচ্ছা থাকলেই হবে না। সামর্থ্যও থাকতে হবে। ফেসবুকে যাঁরা ঝড় তোলেন, তাঁরা খারাপ কিছু সহ্য করতে পারেন না। তাঁরা শুধু ভালোর প্রত্যাশা করেন। কিন্তু পৃথিবীতে ভালো-খারাপের দ্বন্দ্ব তো নতুন কিছু নয়। ভালো চাই, খারাপ করি।
পৃথিবীতে হয়তো ভালো মানুষের সংখ্যাই বেশি। খারাপ মানুষ কম। কিন্তু সংখ্যাগুরু ভালো মানুষেরা হলেন নির্বিরোধ ও নিষ্ক্রিয়।
সংখ্যালঘু খারাপ মানুষ আবার সক্রিয় এবং যা খুশি তা-ই করে ফেলতে পারে। তাই পৃথিবী নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা ভালো মানুষের চেয়ে খারাপ মানুষের হাতেই বেশি থাকে বা চলে যায়।
ভালো মানুষ যদি ক্ষমতাবান হয়ে একটি খারাপ কাজ করে, তাহলে ক্ষমতার বাইরে থাকা ভালো মানুষেরা একযোগে তার বিরোধিতা করে, হইচই করে। খারাপ মানুষেরা খারাপ করলে হয়তো মৃদু সমালোচনা করে এবং তাড়াতাড়ি তা ভুলেও যায়।
আমরা ভালো মানুষের শাসন চাই, সুশাসন চাই–এটা যদি সত্য হয়, আন্তরিক হয়, তাহলে খারাপ শাসন চলে কীভাবে? আমাদের চাওয়ায় কি কোনো ভেজাল আছে, গলদ আছে?
আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায়। অনেক বছর ধরেই আছে। আমাদের দেশে শুধু নয়, অন্য অনেক দেশেও শেখ হাসিনার চেয়ে আর কেউ এত দীর্ঘ সময় সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। তিনি তাঁর শাসনকালে ভালো কাজ বেশি করেছেন, না খারাপ কাজ বেশি, সেটা একটা দীর্ঘ আলোচনা ও বিতর্কের বিষয়। কোনো দেশের কোনো সরকার শুধুই ভালো কাজ করে, তেমন নজির আছে কি?
একজন যদি বলেন, শেখ হাসিনা ভালো কাজ বেশি করেছেন, আবার কিছু মন্দ কাজও করেছেন। সঙ্গে সঙ্গে আরেকজন তেড়ে উঠবেন—বলেন কী, শেখ হাসিনার মতো খারাপ শাসক আর হয় না।
যদি বলা হয়, তিনি তাহলে ক্ষমতায় টিকে আছেন কীভাবে?
জবাব পাওয়া যাবে: আরে, ক্ষমতায় তো আছেন জোর করে। সামরিক-বেসামরিক আমলাদের ওপর নির্ভর করে। বিরোধী দলকে ফ্যাসিস্ট কায়দায় দমন করে।
যদি প্রশ্ন করা হয়, হাসিনার আগে জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়াও তো জোর করে ক্ষমতায় থাকার নানা রকম চেষ্টা করেছেন। পারেননি কেন? শেখ হাসিনা কী কেবল জবরদস্তি করেই ক্ষমতায় আছেন, নাকি তার পেছনে জনসমর্থনও আছে?
অমনি জবাব পাওয়া যাবে, রাখেন আপনার দালালি। মানুষের ভোটের অধিকার একবার ফিরিয়ে দিতে বলেন, দেখেন জনসমর্থন কোন দিকে!
যদি বলা হয়, ঠিক আছে, লুটপাট, দুর্নীতি শেখ হাসিনার আমলেও হচ্ছে। কিন্তু শুধু কি আওয়ামী লীগের চাটার দলেরই পেট ভরছে? মানুষ কি কোনো উপকার পায়নি, পাচ্ছে না? বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতি আছে। কিন্তু বিদ্যুতের সংকট দূর হয়েছে। খালেদা শুধু খাম্বা দিয়েই দায়িত্ব পালন করেছেন। খালেদার আমলে কৃষক সার পায়নি, পানি পায়নি, গুলি পেয়েছে। হাসিনার সময় কি সার বা কৃষি উপকরণের সংকট হয়েছে?
উত্তরে বলা হবে, কথায় কথায় খালেদা জিয়ার সময়ের উদাহরণ টানা কেন? খালেদা খারাপ বলেই তো মানুষ হাসিনার ওপর আস্থা রেখেছিল। হাসিনা মানুষের আস্থার মর্যাদা রাখতে পারেননি।
যদি প্রশ্ন করা হয়, আচ্ছা, শেখ হাসিনাকে ভোটের মাধ্যমে পরাজিত করে কাকে ক্ষমতায় আনা হবে?
জবাব দেওয়া হবে: মানুষ যাকে পছন্দ করবে, সে-ই ক্ষমতায় আসবে।
আচ্ছা, আমাদের ভোটের অভিজ্ঞতা কী বলে? মানুষ কি ভালো মানুষকে ভোট দেয়, নাকি দল এবং মার্কা দেখে ভোট দেয়? রাজনীতিতে ভালো মানুষ যাঁরা ছিলেন, তাঁরা বিলুপ্তপ্রায় হয়ে গেলেন কেন? ভালো রাজনীতিকের প্রতি মানুষের সমর্থন থাকলে রাজনৈতিক দলগুলো খারাপ মানুষকে কাছে টানার সাহস পায় কী করে?
রাজনৈতিক দলের প্রধান লক্ষ্য ক্ষমতা। রাজনৈতিক দলের নীতি, কৌশল, কর্মসূচি প্রণীত হয় ক্ষমতায় যাওয়ার পথ তৈরির জন্যই। আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলাম বা রামকৃষ্ণ মিশনের মতো শুধু সেবাদান কোনো রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য নয়। জনসেবার ব্রতের কথা একসময় রাজনীতিকদের মুখে শোনা গেলেও এখন সময় পাল্টেছে। চিন্তার জগতেও এসেছে পরিবর্তন। এখন প্রতিযোগিতার সময়।
তার পরও এখনো কারও কারও নিজেকে ‘বিপ্লব স্পন্দিত বুকে মনে হয় আমিই লেনিন’। কিন্তু ওটা মুখে, কাজে নয়!
যেকোনো ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য হুজুগ নয়, দরকার হয় সচেতন ও সংগঠিত জনশক্তির। এখন আমরা অনেকেই ভাবুক হয়ে ভাবসাগরে হাবুডুবু খেতে ভালোবাসি। কিন্তু গায়ে-গতরে রোদ-মেঘ একটু মাখামাখি করুক তা চাই না। পাহাড় তুলে আছাড় মারার অবাস্তব কল্পনা নয়, এখন দরকার ভালোর পক্ষে জনমত বা শক্তি গড়ে তোলা। ‘এ’র বিকল্প ‘বি’—এই সনাতন চিন্তায় আটকে না থেকে ‘সি’ কিংবা ‘ডি’র পক্ষে সমবেত হওয়ার বাস্তব কাজে হাত দেওয়াই এখন জরুরি। সৎ ও সাহসী মানুষদের খোলস থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। জড়তা নয়, দরকার তীব্র একটি ঝাঁকি। সেই ঝাঁকি কে দেবে, তারই এখন অপেক্ষা।
তিন. আন্দোলন-সংগ্রাম নিয়ে দেশের মানুষের অভিজ্ঞতা ভালো নয়। সফল গণ-আন্দোলনের কারণে সরকার বদল হয়, কিন্তু তাতে সাধারণ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না। রাজনৈতিক নেতৃত্বে সৎ, মানবিক ও দায়িত্ববান মানুষের অভাব রয়েছে। দেশের ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতাপ্রত্যাশী বড় দুটি দলই চায় না দেশে মানুষের স্বার্থে লড়াই-সংগ্রাম করার মতো একটি বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে উঠুক। মানুষ রাজনৈতিক নেতৃত্বের ধান্দা বুঝতে পারছে বলেই জীবনের ঝুঁকি আন্দোলন-সংগ্রামে যুক্ত হতে চায় না। এখন আন্দোলন-সংগ্রামে দলের বাইরের একেবারে সাধারণ মানুষকে খুঁজে পাওয়া যায় না। আওয়ামী লীগে তবু একজন শেখ হাসিনা আছেন, যাঁর প্রতি মানুষের আস্থা-বিশ্বাস আছে। মানুষের আস্থাভাজন না হওয়ার কারণেই বিএনপি এখনো আওয়ামী লীগের বিকল্প হয়ে উঠতে পারছে না। সে জন্য ঈদের পরের আন্দোলন নিয়ে আওয়ামী লীগের বড় দুশ্চিন্তা হয়তো নেই। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের চারটিতেই আওয়ামী লীগের নৌকা জিতেছে। এতে দলটির আস্থা বেড়েছে। অন্যদিকে বিএনপির ভরসা ‘বাইরের চাপ’। আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ভূরাজনীতির যে নিত্যনতুন মেরুকরণ, তা আওয়ামী লীগকে বড় চাপে ফেলতে পারবে বলে মনে হয় না।
বিভুরঞ্জন সরকার, জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৬ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৬ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১০ দিন আগে