ইফতেখারুল ইসলাম
জটিল বিষয়ে মননশীল প্রবন্ধ যে সরল ভাষায়, গল্পের ভঙ্গিতে লিখে বেশিসংখ্যক পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়, সেটা করে দেখিয়েছেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি কি এ জন্য বেশি প্রিয়? নাকি প্রিয় তাঁর রচনার আদর্শিক ভিত্তি ও বিষয়বস্তুর জন্য? ভাষা ও ভঙ্গি যখন পাঠককে রচনার বিষয়বস্তুর সঙ্গে সহজে যুক্ত করতে সক্ষম হয়, তখন লেখকের স্বাতন্ত্র্য ও সাফল্য বিষয়ে সংশয় থাকে না। সেই গদ্য আমাদের মোহিত করে। কিন্তু সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর প্রবন্ধ আমার প্রিয় তার সারবস্তুর জন্যই।
সদ্য স্বাধীন দেশে তাকিয়ে দেখি বা এ ধরনের শিরোনামে যখন তিনি পত্রিকায় কলাম লেখেন, তা আমরা আগ্রহের সঙ্গে পড়েছি। সেই সময়ে বিভিন্ন কালপর্বের অন্য মননশীল লেখক ও গবেষকের জটিল গদ্যও পড়েছি আগ্রহ নিয়ে। সুধীন্দ্রনাথ দত্ত ও আবু সয়ীদ আইয়ুব থেকে শুরু করে শিবনারায়ণ রায় বা আবদুল মান্নান সৈয়দ তাঁদের প্রবন্ধের ভাষাকে মুখের কথা বা গল্পের ভাষা থেকে সযত্নে আলাদা রেখেছেন। বলতে দ্বিধা নেই সেই গদ্যকেই আমরা একসময় আদর্শ মেনেছি।
আমরা নিজের করে নিয়েছি পরিচয়, চতুরঙ্গ অথবা কণ্ঠস্বর পত্রিকার ভাষাকেই। পরে যখন ভাষা বিষয়ে আমাদের মোহ কেটে গেছে, তখন বেশি গুরুত্ব পেয়েছে লেখকের রচনার সারবস্তুটুকু। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর বিশ্লেষণ এবং যুক্তি-পারম্পর্য আমাদের কাছে বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। অসাম্য, বৈষম্য ও বিচ্ছিন্নতার বিরুদ্ধে ঐক্যের পথনির্দেশ এবং অগ্রসর সমাজচিন্তা দিয়ে তিনি সম্প্রসারিত করেছেন পাঠকের চেতনার জগৎটিকে। আনন্দের বিষয়, তাঁর প্রবন্ধগুলো বই আকারে সহজলভ্য। আর প্রবন্ধসংগ্রহের ছয় খণ্ড ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে।
এখন থেকে ঠিক ১০ বছর আগে একুশের বইমেলা থেকে তাঁর যে বইটি আমি বেছে নিই, এর নাম ‘বিচ্ছিন্নতার সত্য-মিথ্যা’। ১৮টি প্রবন্ধের সংকলন। এর বাইরে সাড়ে আট পৃষ্ঠার ভূমিকাটিকেও একটি আলাদা প্রবন্ধ বলে গণ্য করা যায়। বইয়ের প্রথম বাক্যটি আমাকে আকর্ষণ করে। বিচ্ছিন্নতা আর একাকিত্বে মিল আছে, কিন্তু তারা এক বস্তু নয়। এ কথা আমরা সবাই জানি কিন্তু সেটা যে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং বিচ্ছিন্নতা যে নানা রূপ ধরে আমাদের ব্যক্তিমানস থেকে শুরু করে সমাজ, সংস্কৃতি ও রাজনীতিকে কীভাবে দুর্বল করে ফেলে, সে কথাটি ঠিক এভাবে আর কেউ লিখে দেখাননি। বইয়ের ভূমিকা এবং বিচ্ছিন্নতার সত্য-মিথ্যা নামের প্রবন্ধটি পড়া পর্যন্ত আমার আগ্রহ ও আকর্ষণ জোরালো হতে থাকে। পরবর্তী প্রবন্ধগুলোর বিষয় ও শিরোনাম এতই বিভিন্ন ও বিচিত্র যে তা পরে কোনো একসময় আলাদাভাবে পড়ব বলে ভেবে রাখি।
কয়েক দিন পর পড়তে গিয়ে লক্ষ করি, বিস্ময়করভাবে এ বইয়ের প্রতিটি প্রবন্ধ আসলে একই সূত্রে গ্রথিত। বিচ্ছিন্নতার নানা রূপকে তিনি উন্মোচিত করেছেন। প্রবন্ধের বিষয় এবং কাল-পটভূমি আলাদা হলেও বিশ্লেষণের দৃষ্টিকোণ এবং লেখকের মতামত ও উপসংহারের আদর্শিক ভিত্তিটি এক। তাই রচনার বিষয় বৈচিত্র্য সত্ত্বেও তাদের মধ্যে একধরনের যোগসূত্র আছে। আমাদের জাতীয় রাজনীতিবিদদের ঐতিহাসিক অবদান এবং বিভিন্ন সময়ের ভূমিকাকে তিনি দেখেছেন জনসম্পৃক্ততা এবং বিচ্ছিন্নতার আলোকে। এই একই আদর্শিক দৃষ্টিকোণ থেকে স্বাধীনতা, সাম্য, উদারনীতি, আন্তর্জাতিকতা এমনকি উত্তর-আধুনিকতাকে তিনি বিশ্লেষণ করেছেন।
এটা এ জন্য করেছেন যে তিনি জানেন, যেমনটা তিনি বিস্তারিতভাবে লিখেছেন, আসল প্রশ্নটা দৃষ্টিভঙ্গিরই। বিচ্ছিন্নতা কেন ঘটে, কেন তা প্রবল হয়, তার ব্যাখ্যা রয়েছে বিভিন্ন প্রবন্ধে। বারবার বলা হয়েছে, এর মূলে আছে, পুঁজিবাদ, বৈষম্য ও অসাম্য। কীভাবে এগুলোকে মোকাবিলা করা উচিত। বিচ্ছিন্নতা দূর করার আন্দোলনটা কেমন হওয়া দরকার, তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে কোনো কোনো প্রবন্ধে। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী মনে করেন, আমাদের মূল দায়িত্ব হলো সমষ্টিগত স্বপ্নটাকে সামনে রেখে মুক্তির অসমাপ্ত লড়াইটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এই লড়াই কঠিন এবং অনিঃশেষ।
তাঁর এই রচনাগুলো শুধু আমাদের জ্ঞানের পরিধি বাড়ায় না। প্রকৃত অর্থেই নিজেকে প্রশ্ন করতে শেখায়। নিজেকে পরিশীলিত ও পরিশুদ্ধ করার প্রেরণা জাগায়। বিচ্ছিন্নতা দূর করে মানুষের সমষ্টিগত স্বপ্নের সঙ্গে যুক্ত ও একতাবদ্ধ হওয়ার আকুতি তৈরি করে।
জীবনের পরিক্রমায় ৮০ বছর অতিক্রম করেছেন—এমন মানুষ অনেকেই আছেন। কিন্তু জীবনব্যাপী নিজের আদর্শকে সমুন্নত ও সজীব রেখেছেন, চিন্তা, সংগ্রাম ও কর্মের ভেতর দিয়ে নিরন্তর সেই আদর্শকে অপরের মধ্যে সঞ্চারিত করে চলছেন—এমন মানুষের সংখ্যা বেশি নয়। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী তেমনই একজন বিরল ধরনের মানুষ। আমরা নিজেদের স্বার্থেই এমন মানুষের দীর্ঘ কর্মক্ষম জীবন কামনা করি। শুভ জন্মদিন, স্যার।
লেখক ও গবেষক
জটিল বিষয়ে মননশীল প্রবন্ধ যে সরল ভাষায়, গল্পের ভঙ্গিতে লিখে বেশিসংখ্যক পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়, সেটা করে দেখিয়েছেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি কি এ জন্য বেশি প্রিয়? নাকি প্রিয় তাঁর রচনার আদর্শিক ভিত্তি ও বিষয়বস্তুর জন্য? ভাষা ও ভঙ্গি যখন পাঠককে রচনার বিষয়বস্তুর সঙ্গে সহজে যুক্ত করতে সক্ষম হয়, তখন লেখকের স্বাতন্ত্র্য ও সাফল্য বিষয়ে সংশয় থাকে না। সেই গদ্য আমাদের মোহিত করে। কিন্তু সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর প্রবন্ধ আমার প্রিয় তার সারবস্তুর জন্যই।
সদ্য স্বাধীন দেশে তাকিয়ে দেখি বা এ ধরনের শিরোনামে যখন তিনি পত্রিকায় কলাম লেখেন, তা আমরা আগ্রহের সঙ্গে পড়েছি। সেই সময়ে বিভিন্ন কালপর্বের অন্য মননশীল লেখক ও গবেষকের জটিল গদ্যও পড়েছি আগ্রহ নিয়ে। সুধীন্দ্রনাথ দত্ত ও আবু সয়ীদ আইয়ুব থেকে শুরু করে শিবনারায়ণ রায় বা আবদুল মান্নান সৈয়দ তাঁদের প্রবন্ধের ভাষাকে মুখের কথা বা গল্পের ভাষা থেকে সযত্নে আলাদা রেখেছেন। বলতে দ্বিধা নেই সেই গদ্যকেই আমরা একসময় আদর্শ মেনেছি।
আমরা নিজের করে নিয়েছি পরিচয়, চতুরঙ্গ অথবা কণ্ঠস্বর পত্রিকার ভাষাকেই। পরে যখন ভাষা বিষয়ে আমাদের মোহ কেটে গেছে, তখন বেশি গুরুত্ব পেয়েছে লেখকের রচনার সারবস্তুটুকু। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর বিশ্লেষণ এবং যুক্তি-পারম্পর্য আমাদের কাছে বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। অসাম্য, বৈষম্য ও বিচ্ছিন্নতার বিরুদ্ধে ঐক্যের পথনির্দেশ এবং অগ্রসর সমাজচিন্তা দিয়ে তিনি সম্প্রসারিত করেছেন পাঠকের চেতনার জগৎটিকে। আনন্দের বিষয়, তাঁর প্রবন্ধগুলো বই আকারে সহজলভ্য। আর প্রবন্ধসংগ্রহের ছয় খণ্ড ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে।
এখন থেকে ঠিক ১০ বছর আগে একুশের বইমেলা থেকে তাঁর যে বইটি আমি বেছে নিই, এর নাম ‘বিচ্ছিন্নতার সত্য-মিথ্যা’। ১৮টি প্রবন্ধের সংকলন। এর বাইরে সাড়ে আট পৃষ্ঠার ভূমিকাটিকেও একটি আলাদা প্রবন্ধ বলে গণ্য করা যায়। বইয়ের প্রথম বাক্যটি আমাকে আকর্ষণ করে। বিচ্ছিন্নতা আর একাকিত্বে মিল আছে, কিন্তু তারা এক বস্তু নয়। এ কথা আমরা সবাই জানি কিন্তু সেটা যে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং বিচ্ছিন্নতা যে নানা রূপ ধরে আমাদের ব্যক্তিমানস থেকে শুরু করে সমাজ, সংস্কৃতি ও রাজনীতিকে কীভাবে দুর্বল করে ফেলে, সে কথাটি ঠিক এভাবে আর কেউ লিখে দেখাননি। বইয়ের ভূমিকা এবং বিচ্ছিন্নতার সত্য-মিথ্যা নামের প্রবন্ধটি পড়া পর্যন্ত আমার আগ্রহ ও আকর্ষণ জোরালো হতে থাকে। পরবর্তী প্রবন্ধগুলোর বিষয় ও শিরোনাম এতই বিভিন্ন ও বিচিত্র যে তা পরে কোনো একসময় আলাদাভাবে পড়ব বলে ভেবে রাখি।
কয়েক দিন পর পড়তে গিয়ে লক্ষ করি, বিস্ময়করভাবে এ বইয়ের প্রতিটি প্রবন্ধ আসলে একই সূত্রে গ্রথিত। বিচ্ছিন্নতার নানা রূপকে তিনি উন্মোচিত করেছেন। প্রবন্ধের বিষয় এবং কাল-পটভূমি আলাদা হলেও বিশ্লেষণের দৃষ্টিকোণ এবং লেখকের মতামত ও উপসংহারের আদর্শিক ভিত্তিটি এক। তাই রচনার বিষয় বৈচিত্র্য সত্ত্বেও তাদের মধ্যে একধরনের যোগসূত্র আছে। আমাদের জাতীয় রাজনীতিবিদদের ঐতিহাসিক অবদান এবং বিভিন্ন সময়ের ভূমিকাকে তিনি দেখেছেন জনসম্পৃক্ততা এবং বিচ্ছিন্নতার আলোকে। এই একই আদর্শিক দৃষ্টিকোণ থেকে স্বাধীনতা, সাম্য, উদারনীতি, আন্তর্জাতিকতা এমনকি উত্তর-আধুনিকতাকে তিনি বিশ্লেষণ করেছেন।
এটা এ জন্য করেছেন যে তিনি জানেন, যেমনটা তিনি বিস্তারিতভাবে লিখেছেন, আসল প্রশ্নটা দৃষ্টিভঙ্গিরই। বিচ্ছিন্নতা কেন ঘটে, কেন তা প্রবল হয়, তার ব্যাখ্যা রয়েছে বিভিন্ন প্রবন্ধে। বারবার বলা হয়েছে, এর মূলে আছে, পুঁজিবাদ, বৈষম্য ও অসাম্য। কীভাবে এগুলোকে মোকাবিলা করা উচিত। বিচ্ছিন্নতা দূর করার আন্দোলনটা কেমন হওয়া দরকার, তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে কোনো কোনো প্রবন্ধে। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী মনে করেন, আমাদের মূল দায়িত্ব হলো সমষ্টিগত স্বপ্নটাকে সামনে রেখে মুক্তির অসমাপ্ত লড়াইটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এই লড়াই কঠিন এবং অনিঃশেষ।
তাঁর এই রচনাগুলো শুধু আমাদের জ্ঞানের পরিধি বাড়ায় না। প্রকৃত অর্থেই নিজেকে প্রশ্ন করতে শেখায়। নিজেকে পরিশীলিত ও পরিশুদ্ধ করার প্রেরণা জাগায়। বিচ্ছিন্নতা দূর করে মানুষের সমষ্টিগত স্বপ্নের সঙ্গে যুক্ত ও একতাবদ্ধ হওয়ার আকুতি তৈরি করে।
জীবনের পরিক্রমায় ৮০ বছর অতিক্রম করেছেন—এমন মানুষ অনেকেই আছেন। কিন্তু জীবনব্যাপী নিজের আদর্শকে সমুন্নত ও সজীব রেখেছেন, চিন্তা, সংগ্রাম ও কর্মের ভেতর দিয়ে নিরন্তর সেই আদর্শকে অপরের মধ্যে সঞ্চারিত করে চলছেন—এমন মানুষের সংখ্যা বেশি নয়। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী তেমনই একজন বিরল ধরনের মানুষ। আমরা নিজেদের স্বার্থেই এমন মানুষের দীর্ঘ কর্মক্ষম জীবন কামনা করি। শুভ জন্মদিন, স্যার।
লেখক ও গবেষক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৩ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৬ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৬ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১০ দিন আগে