আজাদুর রহমান চন্দন
কথায় আছে, ‘সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের দশ ফোঁড়’। যদিও ইংরেজিতে বলা হয়, ‘টাইম অ্যান্ড টাইড ওয়েট ফর নান’; যার অর্থ হলো, সময় ও নদীর স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করে না; অর্থাৎ সময়ের কাজ সময়ে না করলে পরে অনেক চেষ্টা করেও সফল হওয়া যায় না।
কথাগুলো কারোরই অজানা না হলেও সচরাচর আমরা তা মনে রাখি না। মনে যে রাখি না তার নজির অসংখ্য। সবশেষ নজিরটি রাখলেন সম্প্রতি ক্ষমতা ছেড়ে, নিজ দলের অসংখ্য কর্মী-সমর্থককে অরক্ষিত রেখে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালেই জাতীয় সরকারের ধারণাটি প্রথম সামনে এসেছিল। তখন আওয়ামী লীগের বাইরে যেসব রাজনৈতিক দল মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল, তাদের প্রস্তাব ছিল—সব দলকে নিয়ে সরকার গঠন করা হোক। আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব সেই প্রস্তাবে সায় না দিয়ে এককভাবে সরকার গড়েছিল। যদিও একপর্যায়ে বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তার জন্য মুজিবনগরে আওয়ামী লীগসহ পাঁচটি দলের আটজন সদস্য নিয়ে একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছিল।
স্বাধীনতার পরও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া সব দলকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করার দাবি তুলেছিলেন তখনকার ন্যাপ সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ। তখনো দাবিটি আমলে নেয়নি আওয়ামী লীগ। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) এক গোপন দলিলে (১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১) উল্লেখ আছে, ভারতের তখনকার প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীও চাইছিলেন যে স্বাধীন বাংলাদেশে একটি জাতীয় সরকার হোক।
কিন্তু তখন আওয়ামী লীগের নেতাদের মনোভাব এমন ছিল যে তাঁরাই দেশটা স্বাধীন করেছেন, শুধু তাঁরাই শাসন করবেন। কিছুদিনের মধ্যেই দেশের পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকলে জাতীয় সংসদে ২৯৩টি আসন নিয়েও সামাল দিতে পারছিল না বঙ্গবন্ধুর সরকার। সে অবস্থায় স্বাধীনতার তিন বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাকশাল গঠন করেছিলেন। তখন সমমনা কয়েকটি দলকে একীভূত করে কার্যত একদলীয় সরকারকেই জাতীয় বলে চালানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। অসময়ের সে চেষ্টার ফল কী হয়েছিল, সে কথা সবারই জানা।
সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলাকালে সরকার সরাসরি আলোচনার উদ্যোগ নিলে সেটি সহিংসতার দিকে গড়াত না। কিন্তু সরকার সময়মতো তেমন উদ্যোগ তো নেয়ইনি, উল্টো ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছিল শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে। কিন্তু তাতে ফল হলো উল্টো। গত ১৫ জুলাই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের প্রতিরোধের মুখে ছয় ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য হয়। সরকার-সমর্থক ছাত্রসংগঠনের ‘সুরক্ষিত দুর্গ’ পতনের একই রকম চিত্র দেখা গেছে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও।
পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে ক্ষমতাসীনদের দর্প চূর্ণ হয়ে যায় আলপিনের সামান্য খোঁচায় চুপসে যাওয়া ফাঁকা বেলুনের মতো। এরপরও সরকার অনেক হেলাফেলা ও সময়ক্ষেপণ করেছে, এমনকি নানা রকম কূটচাল চালারও চেষ্টা করেছে। শেষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে থাকলে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী খোলামেলা আলোচনার আহ্বান জানান। কিন্তু ততক্ষণে জল অনেক দূর গড়িয়ে যায়। বদলে যায় আন্দোলনকারীদের দাবিও।
অথচ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালেই রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সতর্ক করে বলেছিল, ‘ভোটের ফল যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সন্তোষজনক মনে না হলে “আরব বসন্তের” মতো করে বাংলাদেশকে আরও অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হতে পারে।’ তখনকার সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা কোটা সংস্কার আন্দোলনের পেছনে নানা ষড়যন্ত্র থাকার তত্ত্ব হাজির করলেও তা ঠেকানোর কাজটি সময়মতো সঠিকভাবে না করে উল্টো সাধারণ শিক্ষার্থীদের আবেগকে আঘাত করার মতো কাজ করেছেন বারবার।
বহু বছর আগে থেকেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নানা মহল থেকে জামায়াতের রাজনীতিসহ সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি করা হচ্ছিল। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা গণ-আন্দোলনের সময় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিটি জনপ্রিয়তা পেয়েছিল তরুণ প্রজন্মের কাছে। তারই ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে জন্ম নেওয়া গণজাগরণ মঞ্চ থেকেও জোর দাবি উঠেছিল স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী রাজনৈতিক দলের বিচার করার।
মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘটিত গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধসহ বিভিন্ন অভিযোগে সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচারের লক্ষ্যে ২০১৪ সালের মে মাসেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ফরমাল চার্জ দাখিল হওয়ার সম্ভাবনাও উঁকি দিয়েছিল। সে বছরের মে মাসের শেষ দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ফরমাল চার্জ দাখিল করা হতে পারে বলে সুসংবাদও প্রকাশিত হয়েছিল।
কিন্তু সেই সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর সপ্তাহ না পেরোতেই একটি দুঃসংবাদ জাতিকে হতাশায় ডুবিয়ে দেয়। রাষ্ট্রপক্ষ বা প্রসিকিউশনের যে আইনজীবী দলটি জামায়াতের বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ তৈরির কাজ করছিলেন, তাঁরা সেই কাজ বন্ধ করে দেন প্রসিকিউশনেরই একাংশের হস্তক্ষেপে। এ নিয়ে তখন চলছিল দুই পক্ষের বাদানুবাদও। শুধু তা-ই নয়, যে গণজাগরণ মঞ্চে গর্জে উঠেছিল ‘আরেক একাত্তর’, তাতেও চিড় ধরানো হয়েছিল সুকৌশলে।
সরকারের পক্ষ থেকে তখন জামায়াতের বিচারের ক্ষেত্রে আইনে ফাঁক থাকার বিষয়টি সামনে আনা হয়েছিল। আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন-১৯৭৩ সংশোধন করে ব্যক্তির পাশাপাশি সংগঠনের বিচারের বিধান যুক্ত করা হলেও অপরাধী সংগঠনের শাস্তি কী হবে, তা উল্লেখ না থাকার যুক্তি দেখিয়েছিলেন তখনকার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
যদিও আইনে ট্রাইব্যুনালের বিবেচনামতো যেকোনো শাস্তি দেওয়ার বিধান আছে। তবু আইনের বিধানটিকে আরও পাকাপোক্ত করার সরকারি উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছিলাম সংশয় নিয়েও। আইনের ত্রুটি সারানোর অজুহাতে বিচার-প্রক্রিয়াটিকেই ডিপ ফ্রিজে পাঠিয়ে দেওয়া হয় কি না, সে নিয়েই ছিল সংশয়। বাস্তবেও আইন সংশোধনের সেই উদ্যোগ আর আলোর মুখ দেখেনি।
ক্ষমতা ছাড়ার আগে সরকার ১ আগস্ট এক নির্বাহী আদেশে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮ (১) ধারা অনুযায়ী জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির ও জামায়াতের অন্যান্য অঙ্গসংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এমন একসময়ে এই কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়, যখন সরকারের ভিত পুরোপুরি নড়বড়ে অবস্থায়, জনমত সরকারের বিপক্ষে।
অন্যদিকে সত্তরের নির্বাচন থেকেই দেখা গেছে, বাংলাদেশে জামায়াতের ভোট সাধারণত ৫ থেকে ৮ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করে। কেবল ১৯৯১ সালেই একবার তা ১০ শতাংশ ছাড়িয়েছিল, তবে ভোট শেষে জামায়াতের সাবেক এক সংসদ সদস্য তাঁর বইয়ে বিএনপির সঙ্গে সেবার আসন সমঝোতা হওয়ার তথ্য দিয়েছিলেন।
দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় ফিরলেও সেই মেয়াদে একাত্তরের ঘাতকদের বিচারের উদ্যোগ নেয়নি; বরং ছিয়ানব্বইয়ের নির্বাচনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার দাবিতে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের যুগপৎ আন্দোলন অনেক সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অনেকেও মনে করেন, আওয়ামী লীগ মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বললেও বাস্তবে সেই চেতনা বাস্তবায়নের কাজ না করে বিষয়টিকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে।
মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী সংগঠনের বিচারের দাবি পূরণ না হলেও কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে নজিরবিহীন সহিংসতা ও প্রাণহানির পর সরকার যখন ব্যাপক সমালোচনার মুখে পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছিল, সেই অবস্থায় নির্বাহী আদেশে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করায় নানা প্রশ্ন ওঠে।
আমি নিজেও ওই নির্বাহী আদেশসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির পরদিনই একটি জাতীয় দৈনিকে এক লেখা পাঠিয়েছিলাম ‘অসময়ের পদক্ষেপে না জানি কী হয়’ শিরোনামে। তাতে লিখেছিলাম, নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ না করে ঠিক সময়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনে বিচার করার পথে এগোলেই ভালো হতো। কিন্তু বিদায়ী সরকার সে পথে না গিয়ে অসময়ে রাজনৈতিক কূটচাল হিসেবে যে পদক্ষেপ নিয়েছিল, তার পরিণতি নিয়ে সংশয় থাকলেও তখনো ভাবিনি এত দ্রুত এমন পরিণতি দেখা যাবে।
লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক
কথায় আছে, ‘সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের দশ ফোঁড়’। যদিও ইংরেজিতে বলা হয়, ‘টাইম অ্যান্ড টাইড ওয়েট ফর নান’; যার অর্থ হলো, সময় ও নদীর স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করে না; অর্থাৎ সময়ের কাজ সময়ে না করলে পরে অনেক চেষ্টা করেও সফল হওয়া যায় না।
কথাগুলো কারোরই অজানা না হলেও সচরাচর আমরা তা মনে রাখি না। মনে যে রাখি না তার নজির অসংখ্য। সবশেষ নজিরটি রাখলেন সম্প্রতি ক্ষমতা ছেড়ে, নিজ দলের অসংখ্য কর্মী-সমর্থককে অরক্ষিত রেখে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালেই জাতীয় সরকারের ধারণাটি প্রথম সামনে এসেছিল। তখন আওয়ামী লীগের বাইরে যেসব রাজনৈতিক দল মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল, তাদের প্রস্তাব ছিল—সব দলকে নিয়ে সরকার গঠন করা হোক। আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব সেই প্রস্তাবে সায় না দিয়ে এককভাবে সরকার গড়েছিল। যদিও একপর্যায়ে বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তার জন্য মুজিবনগরে আওয়ামী লীগসহ পাঁচটি দলের আটজন সদস্য নিয়ে একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছিল।
স্বাধীনতার পরও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া সব দলকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করার দাবি তুলেছিলেন তখনকার ন্যাপ সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ। তখনো দাবিটি আমলে নেয়নি আওয়ামী লীগ। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) এক গোপন দলিলে (১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১) উল্লেখ আছে, ভারতের তখনকার প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীও চাইছিলেন যে স্বাধীন বাংলাদেশে একটি জাতীয় সরকার হোক।
কিন্তু তখন আওয়ামী লীগের নেতাদের মনোভাব এমন ছিল যে তাঁরাই দেশটা স্বাধীন করেছেন, শুধু তাঁরাই শাসন করবেন। কিছুদিনের মধ্যেই দেশের পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকলে জাতীয় সংসদে ২৯৩টি আসন নিয়েও সামাল দিতে পারছিল না বঙ্গবন্ধুর সরকার। সে অবস্থায় স্বাধীনতার তিন বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাকশাল গঠন করেছিলেন। তখন সমমনা কয়েকটি দলকে একীভূত করে কার্যত একদলীয় সরকারকেই জাতীয় বলে চালানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। অসময়ের সে চেষ্টার ফল কী হয়েছিল, সে কথা সবারই জানা।
সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলাকালে সরকার সরাসরি আলোচনার উদ্যোগ নিলে সেটি সহিংসতার দিকে গড়াত না। কিন্তু সরকার সময়মতো তেমন উদ্যোগ তো নেয়ইনি, উল্টো ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছিল শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে। কিন্তু তাতে ফল হলো উল্টো। গত ১৫ জুলাই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের প্রতিরোধের মুখে ছয় ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য হয়। সরকার-সমর্থক ছাত্রসংগঠনের ‘সুরক্ষিত দুর্গ’ পতনের একই রকম চিত্র দেখা গেছে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও।
পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে ক্ষমতাসীনদের দর্প চূর্ণ হয়ে যায় আলপিনের সামান্য খোঁচায় চুপসে যাওয়া ফাঁকা বেলুনের মতো। এরপরও সরকার অনেক হেলাফেলা ও সময়ক্ষেপণ করেছে, এমনকি নানা রকম কূটচাল চালারও চেষ্টা করেছে। শেষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে থাকলে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী খোলামেলা আলোচনার আহ্বান জানান। কিন্তু ততক্ষণে জল অনেক দূর গড়িয়ে যায়। বদলে যায় আন্দোলনকারীদের দাবিও।
অথচ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালেই রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সতর্ক করে বলেছিল, ‘ভোটের ফল যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সন্তোষজনক মনে না হলে “আরব বসন্তের” মতো করে বাংলাদেশকে আরও অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হতে পারে।’ তখনকার সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা কোটা সংস্কার আন্দোলনের পেছনে নানা ষড়যন্ত্র থাকার তত্ত্ব হাজির করলেও তা ঠেকানোর কাজটি সময়মতো সঠিকভাবে না করে উল্টো সাধারণ শিক্ষার্থীদের আবেগকে আঘাত করার মতো কাজ করেছেন বারবার।
বহু বছর আগে থেকেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নানা মহল থেকে জামায়াতের রাজনীতিসহ সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি করা হচ্ছিল। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা গণ-আন্দোলনের সময় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিটি জনপ্রিয়তা পেয়েছিল তরুণ প্রজন্মের কাছে। তারই ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে জন্ম নেওয়া গণজাগরণ মঞ্চ থেকেও জোর দাবি উঠেছিল স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী রাজনৈতিক দলের বিচার করার।
মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘটিত গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধসহ বিভিন্ন অভিযোগে সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচারের লক্ষ্যে ২০১৪ সালের মে মাসেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ফরমাল চার্জ দাখিল হওয়ার সম্ভাবনাও উঁকি দিয়েছিল। সে বছরের মে মাসের শেষ দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ফরমাল চার্জ দাখিল করা হতে পারে বলে সুসংবাদও প্রকাশিত হয়েছিল।
কিন্তু সেই সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর সপ্তাহ না পেরোতেই একটি দুঃসংবাদ জাতিকে হতাশায় ডুবিয়ে দেয়। রাষ্ট্রপক্ষ বা প্রসিকিউশনের যে আইনজীবী দলটি জামায়াতের বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ তৈরির কাজ করছিলেন, তাঁরা সেই কাজ বন্ধ করে দেন প্রসিকিউশনেরই একাংশের হস্তক্ষেপে। এ নিয়ে তখন চলছিল দুই পক্ষের বাদানুবাদও। শুধু তা-ই নয়, যে গণজাগরণ মঞ্চে গর্জে উঠেছিল ‘আরেক একাত্তর’, তাতেও চিড় ধরানো হয়েছিল সুকৌশলে।
সরকারের পক্ষ থেকে তখন জামায়াতের বিচারের ক্ষেত্রে আইনে ফাঁক থাকার বিষয়টি সামনে আনা হয়েছিল। আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন-১৯৭৩ সংশোধন করে ব্যক্তির পাশাপাশি সংগঠনের বিচারের বিধান যুক্ত করা হলেও অপরাধী সংগঠনের শাস্তি কী হবে, তা উল্লেখ না থাকার যুক্তি দেখিয়েছিলেন তখনকার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
যদিও আইনে ট্রাইব্যুনালের বিবেচনামতো যেকোনো শাস্তি দেওয়ার বিধান আছে। তবু আইনের বিধানটিকে আরও পাকাপোক্ত করার সরকারি উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছিলাম সংশয় নিয়েও। আইনের ত্রুটি সারানোর অজুহাতে বিচার-প্রক্রিয়াটিকেই ডিপ ফ্রিজে পাঠিয়ে দেওয়া হয় কি না, সে নিয়েই ছিল সংশয়। বাস্তবেও আইন সংশোধনের সেই উদ্যোগ আর আলোর মুখ দেখেনি।
ক্ষমতা ছাড়ার আগে সরকার ১ আগস্ট এক নির্বাহী আদেশে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮ (১) ধারা অনুযায়ী জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির ও জামায়াতের অন্যান্য অঙ্গসংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এমন একসময়ে এই কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়, যখন সরকারের ভিত পুরোপুরি নড়বড়ে অবস্থায়, জনমত সরকারের বিপক্ষে।
অন্যদিকে সত্তরের নির্বাচন থেকেই দেখা গেছে, বাংলাদেশে জামায়াতের ভোট সাধারণত ৫ থেকে ৮ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করে। কেবল ১৯৯১ সালেই একবার তা ১০ শতাংশ ছাড়িয়েছিল, তবে ভোট শেষে জামায়াতের সাবেক এক সংসদ সদস্য তাঁর বইয়ে বিএনপির সঙ্গে সেবার আসন সমঝোতা হওয়ার তথ্য দিয়েছিলেন।
দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় ফিরলেও সেই মেয়াদে একাত্তরের ঘাতকদের বিচারের উদ্যোগ নেয়নি; বরং ছিয়ানব্বইয়ের নির্বাচনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার দাবিতে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের যুগপৎ আন্দোলন অনেক সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অনেকেও মনে করেন, আওয়ামী লীগ মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বললেও বাস্তবে সেই চেতনা বাস্তবায়নের কাজ না করে বিষয়টিকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে।
মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী সংগঠনের বিচারের দাবি পূরণ না হলেও কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে নজিরবিহীন সহিংসতা ও প্রাণহানির পর সরকার যখন ব্যাপক সমালোচনার মুখে পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছিল, সেই অবস্থায় নির্বাহী আদেশে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করায় নানা প্রশ্ন ওঠে।
আমি নিজেও ওই নির্বাহী আদেশসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির পরদিনই একটি জাতীয় দৈনিকে এক লেখা পাঠিয়েছিলাম ‘অসময়ের পদক্ষেপে না জানি কী হয়’ শিরোনামে। তাতে লিখেছিলাম, নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ না করে ঠিক সময়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনে বিচার করার পথে এগোলেই ভালো হতো। কিন্তু বিদায়ী সরকার সে পথে না গিয়ে অসময়ে রাজনৈতিক কূটচাল হিসেবে যে পদক্ষেপ নিয়েছিল, তার পরিণতি নিয়ে সংশয় থাকলেও তখনো ভাবিনি এত দ্রুত এমন পরিণতি দেখা যাবে।
লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৬ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৬ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে