রাশেদ নিজাম, যশোর থেকে
যশোরে প্রায় দেড় দশক একক আধিপত্য ছিল যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের সংসদ সদস্য আব্দুস শাহীন চাকলাদারের। ক্ষমতার হিসাব-নিকাশে শাহীনের দীর্ঘদিনের সঙ্গীরা ভিড়ছেন যশোর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের দিকে। হাওয়া বুঝে বিতর্কিত ব্যক্তিসহ সন্ত্রাসীরাও শাহীনকে ছেড়ে ভিড়ছেন নাবিলের কাছে।
যদিও সন্ত্রাসী ও বিতর্কিত লোকজনের বলয়বদলের বিষয়টি মানতে নারাজ দুই পক্ষই। চাকলাদার শিবিরের দাবি, শাহীন নিজ থেকেই তাঁদের সঙ্গ ছেড়েছেন। আর কাজী নাবিল আহমেদ বলছেন, অভিযোগ প্রমাণিত না হলে তাঁদের বিতর্কিত বলার সুযোগ নেই।
যশোর সদরের সন্তান শাহীন চাকলাদার ২০০৪ সাল থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ২০০৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০২০ সালে যশোর-৬ আসনের উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য হন। জেমকন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা লে. কর্নেল (অব.) কাজী শাহেদ আহমেদের ছেলে কাজী নাবিল আহমেদ যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্নাতক এবং যুক্তরাজ্য থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ২০১৪ সাল থেকে তিনি যশোর সদর আসনের এমপি। জেমকন গ্রুপেরও তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট।
যশোরে কয়েক দিন অবস্থানকালে জানা যায়, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরীকে দিয়েই সঙ্গী হারানো শুরু শাহীনের। সবশেষ শাহীন চাকলাদারকে ছেড়েছেন তাঁরই আস্থাভাজন যশোর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাহিদ হোসেন ওরফে টাক মিলন। জাহিদসহ পৌরসভার ৯ ওয়ার্ড কাউন্সিলরের মধ্যে পাঁচজনই এখন নাবিলের পক্ষে। অন্যরা হলেন ১ নম্বর ওয়ার্ডের মো. সাহিদুর রহমান ওরফে ডিম রিপন, ৩ নম্বরের শেখ মোকছিমুল বারী, ৫ নম্বরের রাজিবুল আলম, ৭ নম্বরের শাহেদ হোসেন নয়ন ওরফে হিটার নয়ন এবং ৯ নম্বরের আসাদুজ্জামান। রিপন ও নয়ন দীর্ঘদিন শাহীনের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। ৬ নম্বরের মো. আলমগীর কবির সুমন ওরফে হাজি সুমন এবং ৮ নম্বরের প্রদীপ কুমার নাথ (বাবলু) শুরু থেকেই শাহীনের সঙ্গে আছেন।
‘শাহীন ভাই তো পৌরসভায় কিছু করতে পারবে না’
যশোর পৌরসভার কাউন্সিলর জাহিদের নামে হত্যা, চাঁদাবাজির ডজনখানেক মামলা আছে। পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে যুবলীগ কর্মী শরিফুল ইসলাম সোহাগ খুন হওয়ার পর এক আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে পরিকল্পনাকারী হিসেবে জাহিদের নাম আসে। ২০১৯ সালে কাজী নাবিলের বাড়িতে বোমা হামলাও তাঁর নেতৃত্বেই চালানো হয় বলে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। তাঁর বিরুদ্ধে ইজিবাইক ও ট্রাকে ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে। ২০২০ সালের ১২ জানুয়ারি গ্রেপ্তার হলেও ছয় মাসের মাথায় তিনি জামিন পেয়ে যান।
কাউন্সিলর জাহিদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শাহীন ভাই তো পৌরসভায় কিছু করতে পারবে না। আমার তো উন্নয়ন করতে হবে। কাজ না করলে জনগণ তো আর ভোট দেবে না। এ জন্য আমি সদরের এমপি (নাবিল) সাহেবের সঙ্গে যোগ দিয়েছি।’ নাবিল আহমেদের বাড়িতে বোমা হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এজাহারে কোথাও আমার নাম ছিল না। জবানবন্দিতেও আমার নাম আসেনি। বিভিন্ন মামলায় রাজনৈতিকভাবে আমাকে জড়ানো হয়েছে।’ হত্যা, চাঁদাবাজিসহ অন্তত ৯ মামলার আসামি কাউন্সিলর মো. সাহিদুর রহমান। দল বদল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শাহীন চাকলাদার লোক সুবিধার না। ভূমিদস্যু, টেন্ডারবাজ, ডাকাত-মাস্তান সব পোষে। ওনার স্বার্থের বাইরে চললে সব খারাপ।’
‘নেতা যা বলবে, কর্মীরা সেটাই করবে’
জানা যায়, শাহীনের অনুসারী হিসেবেই আনোয়ার হোসেন বিপুল জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হন। তাঁর বিরুদ্ধে সোনা চোরাচালান, অস্ত্রবাজির নানা তথ্য গোয়েন্দাদের হাতে। সম্প্রতি শাহীনকে ইঙ্গিত করে বিপুল ফেসবুকে ‘পতন ঘণ্টা…’ লিখে স্ট্যাটাস দেন। আনোয়ার হোসেন বিপুল গত শুক্রবার বলেন, ‘আমি ২০ বছর শাহীন চাকলাদারের সঙ্গে রাজনীতি করেছি। মূলত উনি দল আর কর্মীদের বেচে আখের গুছিয়েছেন। কর্মীদের রক্ত চুষে নিজে অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন। এটা বুঝতে পারায় আওয়ামী লীগের কর্মীরা তাঁর সঙ্গ ছাড়তে শুরু করেছে। নাবিল ভাইয়ের সঙ্গে চলে আসার কারণ হলো উনার উদারতা, সততা এবং সদ্ব্যবহার।’ শাহীনের সঙ্গে থাকাকালীন করা অপকর্মের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নেতা যা বলবে, কর্মীরা সেটাই করবে। উনি যখন অনৈতিক কাজের নির্দেশ দিয়েছেন, তখন আমরা কর্মী হিসেবে সেগুলো পালন করেছি। অন্ধ ভালোবাসার কারণে ওনার কথামতো চলেছি।’
দ্বন্দ্বের সুযোগ নিচ্ছে বিএনপি
সন্ত্রাসীদের কাছে টানায় নাবিল আহমেদের ওপর নাখোশ প্রবীণ রাজনীতিক এবং সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথ। তিনি বলেন, ‘আমি নাবিলকে এই শহরে এনেছি। আমি চেয়েছিলাম, সন্ত্রাসীদের তার গ্রুপে জায়গা না দিক। কিন্তু তিনি এসব শোনেননি; আস্তে আস্তে তাঁর বলয়ে জায়গা দিয়েছেন। অনুপ্রবেশকারী নেতারাও সুযোগ পাচ্ছে। সরকারি যত অনুদান, ডিও—সব এরাই ভাগাভাগি করে খাচ্ছে। শাহীন চাকলাদার সদর ছেড়ে কেশবপুরে সংসদ সদস্য হওয়ার পর শহরের রাজনীতি নিয়ে এখন মাথা ঘামায় না। আমি শাহীন বা নাবিলের কোনো গ্রুপে নাই। দলের এই দ্বন্দ্বে সুযোগ নিচ্ছে বিএনপিসহ স্বাধীনতার বিপক্ষে শক্তি। তারা এখন অনেকটাই শক্তিশালী।’
জানা যায়, শাহীন-নাবিল বলয়ের বাইরে যশোরে আরেকটি বলয় গড়ার চেষ্টা চলছে। নেতৃত্বে আছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন, সহসভাপতি আব্দুল মজিদ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মনির, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহারুল ইসলাম প্রমুখ।
শাহারুল ইসলাম বলেন, ‘যারা রাজনীতিতে এসে পয়সাকড়ি বানাতে চায়, তারাই সুবিধামতো দল পাল্টায়। প্রকৃত কর্মীরা রাজনীতি নিয়েই ব্যস্ত থাকে। আমি দীর্ঘদিন শাহীন চাকলাদারের সাথে রাজনীতি করলেও এখন কারও গ্রুপে নাই। পরিচ্ছন্ন থাকতে চাই। আশা করি, স্বচ্ছ রাজনীতি ও মানুষের কল্যাণে আসে এমন নেতৃত্ব তৈরি হবে যশোরে।’
‘বিতর্কিত বলে কিছু নাই’
সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিতর্কিত বলে কিছু নাই। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তারা সবাই জনপ্রতিনিধি। তারা অনেকেই জামিনে আছে বা দোষী প্রমাণিত না হওয়ার সুস্থ রাজনীতি করছে।’ দলে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকলেও কোনো গ্রুপিং নেই বলে দাবি করেন নাবিল। তিনি বলেন, ‘একটু রেষারেষি, দ্বন্দ্ব থাকতেই পারে; তবে দলের বৃহত্তর স্বার্থে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ।’
শাহীন চাকলাদারের মন্তব্য জানতে ফোন করে এবং এসএমএস পাঠিয়েও সাড়া মেলেনি। তবে শহরে শাহীনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা হয় তাঁর চাচাতো ভাই তৌহিদ চাকলাদার ফন্টুর সঙ্গে। দলীয় পদে না থাকলেও শাহীনের রাজনৈতিক অনেক বিষয় নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। তৌহিদ চাকলাদার বলেন, তাঁর ভাই সন্ত্রাসীদের কোনো দিন প্রশ্রয় দেননি, এখনো দিচ্ছেন না। বিভিন্ন সময়ে স্বার্থের কারণে কিছু নেতা-কর্মী শাহীনমুখী হলেও সুবিধা না পেয়ে চলে গেছেন।
অপরাধ করে কেউ ছাড় পাবে না
জানা যায়, তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের পক্ষে তদবির করায় ইদানীং কাজী নাবিলের সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব রেখে চলছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা। শাহীনের গুরুত্বও কমেছে তাঁদের কাছে। যশোরের পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ার্দার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের কাছে সন্ত্রাসী, অস্ত্রধারী, মাদক কারবারিদের পরিচয় তাদের কাজে। দলীয় পদের কাউকে পুলিশ চেনে না। যশোরে অপরাধ করে কেউ ছাড় পাবে না। যে দলেরই হোক না কেন।’
যশোরে প্রায় দেড় দশক একক আধিপত্য ছিল যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের সংসদ সদস্য আব্দুস শাহীন চাকলাদারের। ক্ষমতার হিসাব-নিকাশে শাহীনের দীর্ঘদিনের সঙ্গীরা ভিড়ছেন যশোর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের দিকে। হাওয়া বুঝে বিতর্কিত ব্যক্তিসহ সন্ত্রাসীরাও শাহীনকে ছেড়ে ভিড়ছেন নাবিলের কাছে।
যদিও সন্ত্রাসী ও বিতর্কিত লোকজনের বলয়বদলের বিষয়টি মানতে নারাজ দুই পক্ষই। চাকলাদার শিবিরের দাবি, শাহীন নিজ থেকেই তাঁদের সঙ্গ ছেড়েছেন। আর কাজী নাবিল আহমেদ বলছেন, অভিযোগ প্রমাণিত না হলে তাঁদের বিতর্কিত বলার সুযোগ নেই।
যশোর সদরের সন্তান শাহীন চাকলাদার ২০০৪ সাল থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ২০০৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০২০ সালে যশোর-৬ আসনের উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য হন। জেমকন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা লে. কর্নেল (অব.) কাজী শাহেদ আহমেদের ছেলে কাজী নাবিল আহমেদ যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্নাতক এবং যুক্তরাজ্য থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ২০১৪ সাল থেকে তিনি যশোর সদর আসনের এমপি। জেমকন গ্রুপেরও তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট।
যশোরে কয়েক দিন অবস্থানকালে জানা যায়, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরীকে দিয়েই সঙ্গী হারানো শুরু শাহীনের। সবশেষ শাহীন চাকলাদারকে ছেড়েছেন তাঁরই আস্থাভাজন যশোর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাহিদ হোসেন ওরফে টাক মিলন। জাহিদসহ পৌরসভার ৯ ওয়ার্ড কাউন্সিলরের মধ্যে পাঁচজনই এখন নাবিলের পক্ষে। অন্যরা হলেন ১ নম্বর ওয়ার্ডের মো. সাহিদুর রহমান ওরফে ডিম রিপন, ৩ নম্বরের শেখ মোকছিমুল বারী, ৫ নম্বরের রাজিবুল আলম, ৭ নম্বরের শাহেদ হোসেন নয়ন ওরফে হিটার নয়ন এবং ৯ নম্বরের আসাদুজ্জামান। রিপন ও নয়ন দীর্ঘদিন শাহীনের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। ৬ নম্বরের মো. আলমগীর কবির সুমন ওরফে হাজি সুমন এবং ৮ নম্বরের প্রদীপ কুমার নাথ (বাবলু) শুরু থেকেই শাহীনের সঙ্গে আছেন।
‘শাহীন ভাই তো পৌরসভায় কিছু করতে পারবে না’
যশোর পৌরসভার কাউন্সিলর জাহিদের নামে হত্যা, চাঁদাবাজির ডজনখানেক মামলা আছে। পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে যুবলীগ কর্মী শরিফুল ইসলাম সোহাগ খুন হওয়ার পর এক আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে পরিকল্পনাকারী হিসেবে জাহিদের নাম আসে। ২০১৯ সালে কাজী নাবিলের বাড়িতে বোমা হামলাও তাঁর নেতৃত্বেই চালানো হয় বলে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। তাঁর বিরুদ্ধে ইজিবাইক ও ট্রাকে ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে। ২০২০ সালের ১২ জানুয়ারি গ্রেপ্তার হলেও ছয় মাসের মাথায় তিনি জামিন পেয়ে যান।
কাউন্সিলর জাহিদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শাহীন ভাই তো পৌরসভায় কিছু করতে পারবে না। আমার তো উন্নয়ন করতে হবে। কাজ না করলে জনগণ তো আর ভোট দেবে না। এ জন্য আমি সদরের এমপি (নাবিল) সাহেবের সঙ্গে যোগ দিয়েছি।’ নাবিল আহমেদের বাড়িতে বোমা হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এজাহারে কোথাও আমার নাম ছিল না। জবানবন্দিতেও আমার নাম আসেনি। বিভিন্ন মামলায় রাজনৈতিকভাবে আমাকে জড়ানো হয়েছে।’ হত্যা, চাঁদাবাজিসহ অন্তত ৯ মামলার আসামি কাউন্সিলর মো. সাহিদুর রহমান। দল বদল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শাহীন চাকলাদার লোক সুবিধার না। ভূমিদস্যু, টেন্ডারবাজ, ডাকাত-মাস্তান সব পোষে। ওনার স্বার্থের বাইরে চললে সব খারাপ।’
‘নেতা যা বলবে, কর্মীরা সেটাই করবে’
জানা যায়, শাহীনের অনুসারী হিসেবেই আনোয়ার হোসেন বিপুল জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হন। তাঁর বিরুদ্ধে সোনা চোরাচালান, অস্ত্রবাজির নানা তথ্য গোয়েন্দাদের হাতে। সম্প্রতি শাহীনকে ইঙ্গিত করে বিপুল ফেসবুকে ‘পতন ঘণ্টা…’ লিখে স্ট্যাটাস দেন। আনোয়ার হোসেন বিপুল গত শুক্রবার বলেন, ‘আমি ২০ বছর শাহীন চাকলাদারের সঙ্গে রাজনীতি করেছি। মূলত উনি দল আর কর্মীদের বেচে আখের গুছিয়েছেন। কর্মীদের রক্ত চুষে নিজে অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন। এটা বুঝতে পারায় আওয়ামী লীগের কর্মীরা তাঁর সঙ্গ ছাড়তে শুরু করেছে। নাবিল ভাইয়ের সঙ্গে চলে আসার কারণ হলো উনার উদারতা, সততা এবং সদ্ব্যবহার।’ শাহীনের সঙ্গে থাকাকালীন করা অপকর্মের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নেতা যা বলবে, কর্মীরা সেটাই করবে। উনি যখন অনৈতিক কাজের নির্দেশ দিয়েছেন, তখন আমরা কর্মী হিসেবে সেগুলো পালন করেছি। অন্ধ ভালোবাসার কারণে ওনার কথামতো চলেছি।’
দ্বন্দ্বের সুযোগ নিচ্ছে বিএনপি
সন্ত্রাসীদের কাছে টানায় নাবিল আহমেদের ওপর নাখোশ প্রবীণ রাজনীতিক এবং সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথ। তিনি বলেন, ‘আমি নাবিলকে এই শহরে এনেছি। আমি চেয়েছিলাম, সন্ত্রাসীদের তার গ্রুপে জায়গা না দিক। কিন্তু তিনি এসব শোনেননি; আস্তে আস্তে তাঁর বলয়ে জায়গা দিয়েছেন। অনুপ্রবেশকারী নেতারাও সুযোগ পাচ্ছে। সরকারি যত অনুদান, ডিও—সব এরাই ভাগাভাগি করে খাচ্ছে। শাহীন চাকলাদার সদর ছেড়ে কেশবপুরে সংসদ সদস্য হওয়ার পর শহরের রাজনীতি নিয়ে এখন মাথা ঘামায় না। আমি শাহীন বা নাবিলের কোনো গ্রুপে নাই। দলের এই দ্বন্দ্বে সুযোগ নিচ্ছে বিএনপিসহ স্বাধীনতার বিপক্ষে শক্তি। তারা এখন অনেকটাই শক্তিশালী।’
জানা যায়, শাহীন-নাবিল বলয়ের বাইরে যশোরে আরেকটি বলয় গড়ার চেষ্টা চলছে। নেতৃত্বে আছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন, সহসভাপতি আব্দুল মজিদ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মনির, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহারুল ইসলাম প্রমুখ।
শাহারুল ইসলাম বলেন, ‘যারা রাজনীতিতে এসে পয়সাকড়ি বানাতে চায়, তারাই সুবিধামতো দল পাল্টায়। প্রকৃত কর্মীরা রাজনীতি নিয়েই ব্যস্ত থাকে। আমি দীর্ঘদিন শাহীন চাকলাদারের সাথে রাজনীতি করলেও এখন কারও গ্রুপে নাই। পরিচ্ছন্ন থাকতে চাই। আশা করি, স্বচ্ছ রাজনীতি ও মানুষের কল্যাণে আসে এমন নেতৃত্ব তৈরি হবে যশোরে।’
‘বিতর্কিত বলে কিছু নাই’
সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিতর্কিত বলে কিছু নাই। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তারা সবাই জনপ্রতিনিধি। তারা অনেকেই জামিনে আছে বা দোষী প্রমাণিত না হওয়ার সুস্থ রাজনীতি করছে।’ দলে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকলেও কোনো গ্রুপিং নেই বলে দাবি করেন নাবিল। তিনি বলেন, ‘একটু রেষারেষি, দ্বন্দ্ব থাকতেই পারে; তবে দলের বৃহত্তর স্বার্থে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ।’
শাহীন চাকলাদারের মন্তব্য জানতে ফোন করে এবং এসএমএস পাঠিয়েও সাড়া মেলেনি। তবে শহরে শাহীনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা হয় তাঁর চাচাতো ভাই তৌহিদ চাকলাদার ফন্টুর সঙ্গে। দলীয় পদে না থাকলেও শাহীনের রাজনৈতিক অনেক বিষয় নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। তৌহিদ চাকলাদার বলেন, তাঁর ভাই সন্ত্রাসীদের কোনো দিন প্রশ্রয় দেননি, এখনো দিচ্ছেন না। বিভিন্ন সময়ে স্বার্থের কারণে কিছু নেতা-কর্মী শাহীনমুখী হলেও সুবিধা না পেয়ে চলে গেছেন।
অপরাধ করে কেউ ছাড় পাবে না
জানা যায়, তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের পক্ষে তদবির করায় ইদানীং কাজী নাবিলের সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব রেখে চলছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা। শাহীনের গুরুত্বও কমেছে তাঁদের কাছে। যশোরের পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ার্দার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের কাছে সন্ত্রাসী, অস্ত্রধারী, মাদক কারবারিদের পরিচয় তাদের কাজে। দলীয় পদের কাউকে পুলিশ চেনে না। যশোরে অপরাধ করে কেউ ছাড় পাবে না। যে দলেরই হোক না কেন।’
প্রবৃদ্ধির শীর্ষে থেকেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের দৌড়ে পিছিয়ে রয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ৫০ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়েছে
১ দিন আগেদুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি, উচ্চ করহারসহ ১৭ ধরনের বাধায় বিপর্যস্ত দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। রয়েছে সামাজিক সমস্যাও।
১ দিন আগেজমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৫ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৯ দিন আগে