মহিউদ্দিন খান মোহন
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘প্রাণ’ কবিতায় মানুষের বেঁচে থাকার আকুতি প্রকাশ করেছেন দুটি লাইনে—‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই।’ একবার জন্ম নিয়ে আলো-বাতাস আর নানা মনোহর উপকরণে পরিপূর্ণ এই পৃথিবী ছেড়ে কেই-বা যেতে চায়। কিন্তু বিধাতার বিধান অনুযায়ী একদিন সবাইকে চলে যেতে হয়।
একবার পৃথিবী থেকে চলে গেলে কারও পক্ষে পুনরায় এখানে ফিরে আসার কোনো উপায় নেই। তাই তো পরকালযাত্রাকে বলা হয় ‘ওয়ান ওয়ে রোড’; যাওয়া যায়, ফেরা যায় না। তাই কেউ সে পথে সহজে পা বাড়াতে চায় না। কিন্তু না চাইলেও সবাইকে সে পথে যেতে হয়। আর প্রকৃতির বিধান ও মানুষের বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষাকে পর্যবেক্ষণ করেই রবীন্দ্রনাথ তাঁর ওই কবিতার চরণ দুটি রচনা করে থাকবেন।
মানুষ যেমন মরতে চায় না, তেমনি হারতে চায় না। সেটা যুদ্ধের ময়দান কিংবা নির্বাচনী লড়াই, এমনকি তর্কের টেবিলেও। এই হারতে না চাওয়াটা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তির অংশ হলেও বিপত্তি ঘটায় তখন, যখন সে বাসনা উদগ্র হয়ে ওঠে। সৃষ্টি হয় নানা অনাসৃষ্টির, বিঘ্নিত হয় শান্তি। ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বর্তমানে যেসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে, তাও মানুষের হারতে না চাওয়ার মনোবৃত্তির কারণেই। হেরে কেউ ক্ষমতার স্বর্গচ্যুতির শিকার হতে চান না, আবার কেউ সেই স্বর্গারোহণের মওকা হারাতে চান না। ফলে এই ভোটযুদ্ধের প্রধান নিয়ামক জনগণের রায়ের ওপর আস্থা না রেখে কেউ কেউ পেশিশক্তির ব্যবহারে প্রতিপক্ষকে মাঠছাড়া করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়ে উঠেছেন। অপর পক্ষও ‘বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচাগ্র মেদিনী’ বলে রণ-হুংকার দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে।
ফলে ভোটের দিন যতই নিকটবর্তী হচ্ছে, জনগণের কপালে পড়ছে চিন্তার ভাঁজ। কারণ তাঁরা তো ঘরপোড়া গরু, পশ্চিম আকাশে সিঁদুরে মেঘ দেখলেই তাঁদের অন্তরাত্মায় কম্পন সৃষ্টি হয়। মজার ব্যাপার হলো, এই ভোটযুদ্ধের ময়দানে অন্যতম পক্ষ বিএনপি নেই। এখন যেসব খণ্ডযুদ্ধ হচ্ছে, তা একেবারেই সেমসাইড; আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ। এক পক্ষ দল মনোনীত, অপর পক্ষ দল অনুমোদিত স্বতন্ত্র। আওয়ামী লীগের নিজেদের মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনী লড়াইটি শান্তিপূর্ণ হবে, এমন আশা করেছিলেন প্রায় সবাই। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, সেই আশার প্রদীপ ততই নিভু নিভু করছে।
সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে কারও জানতে বাকি নেই, ১৯ ডিসেম্বর নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর পর প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। একই দলের, একই আদর্শের কর্মীদের মধ্যে এই ভ্রাতৃঘাতী সংঘর্ষকে অনেকেই অশনিসংকেত হিসেবে দেখছেন।
এখানে পরপর দুদিন আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের কিছুটা তুলে ধরছি। ২৪ ডিসেম্বরের প্রধান শিরোনাম ছিল: ‘পাঁচ দিনে ৩৩ সহিংসতা’। তাতে বলা হয়েছে, নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হওয়ার পর পাঁচ দিনে ৩৩টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে, আর এর ৩১টিতেই আক্রান্ত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এসব ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩ জন, আহত ১৫০ জন। ২৫ ডিসেম্বর ‘সহিংসতায় দুশ্চিন্তা আ.লীগের’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিএনপিবিহীন সংসদ নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করতে দলীয় মনোনীতদের পাশাপাশি দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরও মাঠে নামিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এখন দুশ্চিন্তায় পড়েছে। কেননা, এর ফলে তৃণমূল পর্যায়ে সহিংসতা বেড়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান বলেছেন, ‘নির্বাচনে এ ধরনের ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক।
এবার যেহেতু আমরা নিজেরা, তাই এসব হওয়া উচিত ছিল না। এটাকে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।’ অন্যদিকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেছেন, ‘সহিংসতা নির্বাচনী আচরণবিধির সম্পূর্ণ পরিপন্থী। বিষয়গুলো আমরা কখনো সমর্থন করি না, করার প্রয়োজনও নেই।’
শাজাহান খান এবং বাহাউদ্দিন নাছিম সংঘটিত সহিংসতার বিরোধিতা এবং তা নিয়ন্ত্রণ জরুরি বললেও ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে। এমনকি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বারবার ‘সহিংসতা বরদাশত করা হবে না’ বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেও কর্মীরা তাতে খুব একটা কর্ণপাত করছেন না। রাজনীতিসচেতন ব্যক্তিরা মনে করেন, প্রার্থীদের মধ্যে যে করেই হোক জয় করায়ত্ত করার উদগ্র বাসনা থেকেই এ বিপত্তির সৃষ্টি হয়েছে। তাঁদের মতে, এমন একটি পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে, এটা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের আগেই অনুধাবন করা উচিত ছিল। কেননা, প্রায় প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় আগে থেকেই ক্ষমতাসীন দলটির নেতৃত্বের কোন্দল ছিল প্রায় প্রকাশ্য।
এবার বিএনপির অনুপস্থিতিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতার শূন্যস্থান পূরণ করতে দলের মধ্য থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেওয়ায় সেই কোন্দল এখন সহিংস সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে। অনেকটা ‘একে বুড়ি নাচুনি, আরও পাইছে ঢোলের বাড়ি’র মতো। এত দিন যাঁরা সুযোগ পেলে পরস্পরকে একহাত দেখে নেওয়ার ফিকিরে ছিলেন, তাঁরা এখন দশ হাত দেখানোর চেষ্টা করছেন।
বলার প্রয়োজন পড়ে না, এই নির্বাচনে সরকার পরিবর্তনের কোনো আশঙ্কা নেই। জাতীয় পার্টি ছাড়া সাংগঠনিক শক্তিসম্পন্ন আর কোনো দলও এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। সে জাতীয় পার্টিও ‘২৬ আসনে ছাড়’ পেয়ে কার্যত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনুগামীতে পরিণত হয়েছে। ফলে আওয়ামী লীগের মনোনীত কিংবা স্বতন্ত্র যাঁরাই জিতুন, তাতে ক্ষমতার কোনো হেরফের হবে না।
দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচিত হলেও সরকার গঠনে কিংবা তারপরেও সংসদে আওয়ামী লীগকেই সমর্থন করবে। সুতরাং এটা বলা যায়, নির্বাচনে কারা জিতে এলেন, কারা মাঠে ধরাশায়ী হয়ে পড়ে রইলেন, তা নিয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের কোনো দুশ্চিন্তা থাকার কথা নয়। সুতরাং নির্বাচনী মাঠে যেসব সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে, তার সবই ক্ষমতার স্থানীয় মাঠ দখলের মহড়ার নামান্তর। আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড যদি এই সংঘাত নিরসনে সফল না হন, তাহলে এর ফল বিষময় হতে পারে।
আরেকটি গুরুতর সমস্যা আছে এ ক্ষেত্রে। বিএনপির অনুপস্থিতিতে নির্বাচনকে ‘অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ’ দেখানোর উদ্দেশ্যেই আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়নের বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার দ্বার অবারিত করে দিয়েছিল। এখন নির্বাচনটি হচ্ছে তাদের নিজেদের মধ্যে; যে কথা শজাহান খানও বলেছেন।
ফলে নিজেদের মধ্যে এই সংঘর্ষ সরকারবিরোধীদের সুযোগ করে দেবে আঙুল তুলে কথা বলতে। তারা বলতে পারে, নিজেদের মধ্যেই এ অবস্থা, বিএনপি অংশ নিলে কী হতো তা সহজেই অনুমেয়। তা ছাড়া এসব ঘটনাকে দলীয় সরকারের অধীনে যে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্ভব নয়, তার উদাহরণ হিসেবেও তুলে ধরতে পারে। কী জবাব দেবে আওয়ামী লীগ?
সমস্যাটা অন্য জায়গায়। সেটা হলো পরাজিত না হওয়ার মানসিকতা। প্রতিদ্বন্দ্বীরা ভাবছেন, তাঁরা পরাজিত হওয়ার জন্য প্রার্থী হননি। তাই যে করেই হোক জিততে হবে। তাঁরা ভুলেই গেছেন জয়-পরাজয় দুই ভাই। একের পিঠে অপরের অবস্থান। সে জন্যই ভোটারের ওপর আস্থা রাখার পরিবর্তে প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিকে মাঠছাড়া করার এই অপকৌশল।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতিক বিশ্লেষক
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘প্রাণ’ কবিতায় মানুষের বেঁচে থাকার আকুতি প্রকাশ করেছেন দুটি লাইনে—‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই।’ একবার জন্ম নিয়ে আলো-বাতাস আর নানা মনোহর উপকরণে পরিপূর্ণ এই পৃথিবী ছেড়ে কেই-বা যেতে চায়। কিন্তু বিধাতার বিধান অনুযায়ী একদিন সবাইকে চলে যেতে হয়।
একবার পৃথিবী থেকে চলে গেলে কারও পক্ষে পুনরায় এখানে ফিরে আসার কোনো উপায় নেই। তাই তো পরকালযাত্রাকে বলা হয় ‘ওয়ান ওয়ে রোড’; যাওয়া যায়, ফেরা যায় না। তাই কেউ সে পথে সহজে পা বাড়াতে চায় না। কিন্তু না চাইলেও সবাইকে সে পথে যেতে হয়। আর প্রকৃতির বিধান ও মানুষের বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষাকে পর্যবেক্ষণ করেই রবীন্দ্রনাথ তাঁর ওই কবিতার চরণ দুটি রচনা করে থাকবেন।
মানুষ যেমন মরতে চায় না, তেমনি হারতে চায় না। সেটা যুদ্ধের ময়দান কিংবা নির্বাচনী লড়াই, এমনকি তর্কের টেবিলেও। এই হারতে না চাওয়াটা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তির অংশ হলেও বিপত্তি ঘটায় তখন, যখন সে বাসনা উদগ্র হয়ে ওঠে। সৃষ্টি হয় নানা অনাসৃষ্টির, বিঘ্নিত হয় শান্তি। ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বর্তমানে যেসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে, তাও মানুষের হারতে না চাওয়ার মনোবৃত্তির কারণেই। হেরে কেউ ক্ষমতার স্বর্গচ্যুতির শিকার হতে চান না, আবার কেউ সেই স্বর্গারোহণের মওকা হারাতে চান না। ফলে এই ভোটযুদ্ধের প্রধান নিয়ামক জনগণের রায়ের ওপর আস্থা না রেখে কেউ কেউ পেশিশক্তির ব্যবহারে প্রতিপক্ষকে মাঠছাড়া করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়ে উঠেছেন। অপর পক্ষও ‘বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচাগ্র মেদিনী’ বলে রণ-হুংকার দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে।
ফলে ভোটের দিন যতই নিকটবর্তী হচ্ছে, জনগণের কপালে পড়ছে চিন্তার ভাঁজ। কারণ তাঁরা তো ঘরপোড়া গরু, পশ্চিম আকাশে সিঁদুরে মেঘ দেখলেই তাঁদের অন্তরাত্মায় কম্পন সৃষ্টি হয়। মজার ব্যাপার হলো, এই ভোটযুদ্ধের ময়দানে অন্যতম পক্ষ বিএনপি নেই। এখন যেসব খণ্ডযুদ্ধ হচ্ছে, তা একেবারেই সেমসাইড; আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ। এক পক্ষ দল মনোনীত, অপর পক্ষ দল অনুমোদিত স্বতন্ত্র। আওয়ামী লীগের নিজেদের মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনী লড়াইটি শান্তিপূর্ণ হবে, এমন আশা করেছিলেন প্রায় সবাই। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, সেই আশার প্রদীপ ততই নিভু নিভু করছে।
সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে কারও জানতে বাকি নেই, ১৯ ডিসেম্বর নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর পর প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। একই দলের, একই আদর্শের কর্মীদের মধ্যে এই ভ্রাতৃঘাতী সংঘর্ষকে অনেকেই অশনিসংকেত হিসেবে দেখছেন।
এখানে পরপর দুদিন আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের কিছুটা তুলে ধরছি। ২৪ ডিসেম্বরের প্রধান শিরোনাম ছিল: ‘পাঁচ দিনে ৩৩ সহিংসতা’। তাতে বলা হয়েছে, নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হওয়ার পর পাঁচ দিনে ৩৩টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে, আর এর ৩১টিতেই আক্রান্ত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এসব ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩ জন, আহত ১৫০ জন। ২৫ ডিসেম্বর ‘সহিংসতায় দুশ্চিন্তা আ.লীগের’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিএনপিবিহীন সংসদ নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করতে দলীয় মনোনীতদের পাশাপাশি দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরও মাঠে নামিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এখন দুশ্চিন্তায় পড়েছে। কেননা, এর ফলে তৃণমূল পর্যায়ে সহিংসতা বেড়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান বলেছেন, ‘নির্বাচনে এ ধরনের ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক।
এবার যেহেতু আমরা নিজেরা, তাই এসব হওয়া উচিত ছিল না। এটাকে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।’ অন্যদিকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেছেন, ‘সহিংসতা নির্বাচনী আচরণবিধির সম্পূর্ণ পরিপন্থী। বিষয়গুলো আমরা কখনো সমর্থন করি না, করার প্রয়োজনও নেই।’
শাজাহান খান এবং বাহাউদ্দিন নাছিম সংঘটিত সহিংসতার বিরোধিতা এবং তা নিয়ন্ত্রণ জরুরি বললেও ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে। এমনকি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বারবার ‘সহিংসতা বরদাশত করা হবে না’ বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেও কর্মীরা তাতে খুব একটা কর্ণপাত করছেন না। রাজনীতিসচেতন ব্যক্তিরা মনে করেন, প্রার্থীদের মধ্যে যে করেই হোক জয় করায়ত্ত করার উদগ্র বাসনা থেকেই এ বিপত্তির সৃষ্টি হয়েছে। তাঁদের মতে, এমন একটি পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে, এটা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের আগেই অনুধাবন করা উচিত ছিল। কেননা, প্রায় প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় আগে থেকেই ক্ষমতাসীন দলটির নেতৃত্বের কোন্দল ছিল প্রায় প্রকাশ্য।
এবার বিএনপির অনুপস্থিতিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতার শূন্যস্থান পূরণ করতে দলের মধ্য থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেওয়ায় সেই কোন্দল এখন সহিংস সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে। অনেকটা ‘একে বুড়ি নাচুনি, আরও পাইছে ঢোলের বাড়ি’র মতো। এত দিন যাঁরা সুযোগ পেলে পরস্পরকে একহাত দেখে নেওয়ার ফিকিরে ছিলেন, তাঁরা এখন দশ হাত দেখানোর চেষ্টা করছেন।
বলার প্রয়োজন পড়ে না, এই নির্বাচনে সরকার পরিবর্তনের কোনো আশঙ্কা নেই। জাতীয় পার্টি ছাড়া সাংগঠনিক শক্তিসম্পন্ন আর কোনো দলও এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। সে জাতীয় পার্টিও ‘২৬ আসনে ছাড়’ পেয়ে কার্যত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনুগামীতে পরিণত হয়েছে। ফলে আওয়ামী লীগের মনোনীত কিংবা স্বতন্ত্র যাঁরাই জিতুন, তাতে ক্ষমতার কোনো হেরফের হবে না।
দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচিত হলেও সরকার গঠনে কিংবা তারপরেও সংসদে আওয়ামী লীগকেই সমর্থন করবে। সুতরাং এটা বলা যায়, নির্বাচনে কারা জিতে এলেন, কারা মাঠে ধরাশায়ী হয়ে পড়ে রইলেন, তা নিয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের কোনো দুশ্চিন্তা থাকার কথা নয়। সুতরাং নির্বাচনী মাঠে যেসব সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে, তার সবই ক্ষমতার স্থানীয় মাঠ দখলের মহড়ার নামান্তর। আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড যদি এই সংঘাত নিরসনে সফল না হন, তাহলে এর ফল বিষময় হতে পারে।
আরেকটি গুরুতর সমস্যা আছে এ ক্ষেত্রে। বিএনপির অনুপস্থিতিতে নির্বাচনকে ‘অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ’ দেখানোর উদ্দেশ্যেই আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়নের বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার দ্বার অবারিত করে দিয়েছিল। এখন নির্বাচনটি হচ্ছে তাদের নিজেদের মধ্যে; যে কথা শজাহান খানও বলেছেন।
ফলে নিজেদের মধ্যে এই সংঘর্ষ সরকারবিরোধীদের সুযোগ করে দেবে আঙুল তুলে কথা বলতে। তারা বলতে পারে, নিজেদের মধ্যেই এ অবস্থা, বিএনপি অংশ নিলে কী হতো তা সহজেই অনুমেয়। তা ছাড়া এসব ঘটনাকে দলীয় সরকারের অধীনে যে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্ভব নয়, তার উদাহরণ হিসেবেও তুলে ধরতে পারে। কী জবাব দেবে আওয়ামী লীগ?
সমস্যাটা অন্য জায়গায়। সেটা হলো পরাজিত না হওয়ার মানসিকতা। প্রতিদ্বন্দ্বীরা ভাবছেন, তাঁরা পরাজিত হওয়ার জন্য প্রার্থী হননি। তাই যে করেই হোক জিততে হবে। তাঁরা ভুলেই গেছেন জয়-পরাজয় দুই ভাই। একের পিঠে অপরের অবস্থান। সে জন্যই ভোটারের ওপর আস্থা রাখার পরিবর্তে প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিকে মাঠছাড়া করার এই অপকৌশল।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতিক বিশ্লেষক
প্রবৃদ্ধির শীর্ষে থেকেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের দৌড়ে পিছিয়ে রয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ৫০ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়েছে
২ দিন আগেদুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি, উচ্চ করহারসহ ১৭ ধরনের বাধায় বিপর্যস্ত দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। রয়েছে সামাজিক সমস্যাও।
২ দিন আগেজমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৬ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৯ দিন আগে