স্বাতী চৌধুরী
জন্মের পর ৩৫-৩৬ বছর বয়স পর্যন্ত আমি যে চালের ভাত খেয়ে বেঁচেছি, তা খুব সরু নয়, আবার মোটাও নয়। মাঝারি ধরনের চাল। আমাদের সুনামগঞ্জ শহর ও আশপাশের এলাকার ধনী, গরিব, মধ্যবিত্ত সবাই তখন এক রকম চালের ভাত খেত। টেপি ধানের আতপ চাল। চালগুলো গোল ধরনের হলেও ভাত হতো একটু লম্বা ও চিকন। বেশ সুগন্ধি আর সুস্বাদু এই ভাত চাইলে খালিও খাওয়া যেত।
তবে ভাটির দেশ সুনামগঞ্জের আরও ভাটি এলাকা দিরাই-শাল্লার লোকেরা এখনকার ২৮-২৯ ধানের থেকেও মোটা ইরি ধানের সেদ্ধ চালের ভাত খেত বলে শুনেছি। একবার এ রকম একটা এলাকায় বেড়াতে গিয়ে খেতে বসে বেশ কষ্ট হয়েছিল। কিন্তু ওই এলাকার মানুষ—সচ্ছল বা অসচ্ছল সবাইকে অনায়াসে পরমানন্দে সে ভাতই খেতে দেখেছিলাম। হয়তো অভ্যাস, আর কথায় তো আছেই—মানুষ অভ্যাসের দাস! তা যে সময়ের কথা আমি বলছি, সেই সময় ধনী মানুষেরাও আজকের মতো এত বিলাসী জীবনযাপন করত না। কৃষক যাঁরা, তাঁরা তো নয়ই। তাঁরা মোটা ভাতের সঙ্গে তাজা মাছের ঝোল খেয়েই তৃপ্ত ছিলেন।
তবে সেখানকার অধিকাংশ মানুষ ধনী-গরিবনির্বিশেষে যে মোটা চালের ভাত খেতেন, তার কারণ তাঁরা সবাই ছিলেন কৃষক বা কৃষিমজুর। জমির মালিক, কৃষক ও বর্গাচাষি সবাই বেশি ফলনের আশায় অধিকাংশ জমিতে ইরি ধানের চাষ করতেন। আর সুনামগঞ্জের যে অঞ্চলে আমরা টেপি চালের ভাত খেতাম, এসব অঞ্চলে টেপি ধানেরই চাষ হতো তখনো।
কিন্তু এখন হাইব্রিড যুগের চক্করে পড়ে সেই টেপি ধানের সুদিন আর নেই। এর ফলন কম, দাম বেশি। তাই ফসলের খেতজুড়ে ২৮-২৯ চালের আধিক্য। সংগত কারণে সুনামগঞ্জের গরিব লোকেরা আর টেপি চালের ভাত খেতে পারে না। সেই সুগন্ধ, সেই স্বাদ এখন শুধু স্মৃতি। সারা দেশের গরিবের মতো তারাও ২৯-এর মোটা চাল খায়। যারা সচ্ছল ও বিলাসী, তারাই খায় টেপির আতপ বা নাজিরশাইল। তাহলে দেখা যাচ্ছে, মানুষের অভ্যাস বা বিলাসিতা তৈরি হয় উৎপাদনব্যবস্থা ও সামর্থ্যের ভিত্তিতে।
মুকেশ আম্বানির স্ত্রী নীতা আম্বানী যে দেড় লাখ রুপির কাপে কফি বা চা খান বা প্রতিদিন এক লাখ রুপির জুতা পরেন, এগুলো তো কেউ না কেউ তৈরি করে বিক্রি করবে বলেই! হয়তো নীতা আম্বানীর মতো ব্যক্তির জন্য বিশেষ জিনিস তৈরি হয়, কিন্তু সব উচ্চমূল্যের পণ্যই তো আর এ রকম দু-চারজন ব্যক্তির জন্য তৈরি হয় না। আসলে উৎপাদনকারী উচ্চমূল্যের পণ্য উৎপাদন করেন। কারণ তাঁরা জানেন যাঁদের অনেক টাকা আছে, তাঁদের অনেকেই বিত্তের প্রদর্শনী করে সুখ পাওয়ার জন্য সেই সব বিশেষ জিনিস কিনবেনই।
তাহলে দোষ কার? যিনি কেনেন তাঁর, নাকি যিনি উৎপাদন ও বিক্রি করেন তাঁর, নাকি উভয়ের? গতবারের রমজানে বাংলাদেশে ২০ হাজার টাকা কেজির সোনার জিলাপি তৈরি হয়েছিল। অথচ ক্রেতার অভাব ছিল না। অনেকে দোকানে গিয়ে পায়নি। তার আগে বনানীর একটা হোটেল বানিয়েছিল সোনার আইসক্রিম, যার দাম ছিল ৯৯ হাজার ৯৯৯ টাকা। ও হ্যাঁ, তারও ক্রেতার অভাব হয়নি।
এই যে কিছু মানুষ সোনার জিলাপি, আইসক্রিম ও সোনার পানি খাওয়ার সামর্থ্য রাখে আর কেউ একটু ডাল-ভাতও ঠিকমতো খেতে পারে না, এমনকি যে পানির নাম জীবন, জীবন বাঁচাতে অনেকের কাছে যখন সেই পানিটুকুও দুর্মূল্য হয়, এর জন্য কে দায়ী—সেই সব নিয়ে কি আমরা ভাবি? দেখলাম, এক গোলটেবিল বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বরেন্দ্র অঞ্চলে খাওয়ার পানির সংকট নিয়ে। আর তাতে বিশেষ জাতিসত্তার দরিদ্র প্রান্তিক জনগোষ্ঠী আছে চরম সংকটে। সে জন্য গোলটেবিল বৈঠকে পানিবণ্টনের বৈষম্য কমানোর জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। কিন্তু সুপারিশ কতটা কার্যকর হবে, এর কোনো নিশ্চয়তা নেই।
অবস্থা এমন যে সুপেয় পানির অভাবে আমাদের দেশের বরেন্দ্র ও উপকূলীয় অঞ্চলে প্রান্তিক মানুষের জীবন যেখানে সংকটে, সেখানে শুনেছি আশুগঞ্জ উপজেলার এক হাইওয়ে হোটেল ও রিসোর্টের মালিকের স্ত্রী প্রতিদিন মাম নামের মিনারেল ওয়াটার দিয়ে গোসল করেন। আর কিনা আমাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোরগোল মুকেশ আম্বানীর স্ত্রী নীতা আম্বানী কেন সোনার পানি খান, সেটা নিয়ে!
বিপুলা পৃথিবীর কথা দূরে থাকুক, আমাদের এই ছোট্ট দেশের কোথায় কী হচ্ছে তার কতটুকু আমরা জানি? কেউ ভাবতে পারেন, আমি নীতা আম্বানীর পক্ষে কথা বলছি। কিন্তু না, আমি মানুষের ভোগলিপ্সা, চিত্তহীন বিত্তের ক্ষমতার নির্লজ্জ প্রকাশ ও মানুষের ক্ষুধা-তৃষ্ণা নিবারণের অক্ষমতার তুলনা করছি। একজন অখ্যাত হোটেল মালিকের (হয়তো তার আরও কিছু ব্যবসা আছে, যা আমি জানি না) স্ত্রী যদি প্রতিদিন মাম ওয়াটার দিয়ে গোসল করতে পারেন, সেখানে বিশাল ভারতের অন্যতম ধনী ব্যক্তি, দুনিয়াজোড়া যাঁর খ্যাতি, তাঁর স্ত্রী সোনার পানি খাবেন কিংবা তাঁর হারের দাম কোনো দেশের জিডিপির থেকে বেশি হলে অবাক হওয়ার ও শোরগোল করার কী আছে, সেটাই আমি বুঝতে পারিনি।
প্রতিবছর ঈদে লক্ষাধিক টাকার শাড়ি, লেহেঙ্গা এবং কোরবানির ঈদে কোটি টাকার গরু নিয়ে প্রতিযোগিতার কথা আমরা মিডিয়ার খবরে পড়ি এবং দেখি। বেশ কিছু মানুষের আকাশচুম্বী ক্ষমতার খবর এখন আর নতুন নয় আমাদের কাছে। দুঃখের বিষয় হলো, এসব খবর যে কারও মনে বিশেষ কোনো ক্ষোভের জন্ম দেয়, তার কোনো খবর আমরা কোথাও দেখতে বা পড়তে পাই না; বরং আমাদের সচেতন অংশ এসব খবর আমরা যারা জানি, তাদের প্রায় সবাই সম্ভবত অনুপ্রাণিত হই। তাই তো আমরাও কীভাবে, কোন পথে রাতারাতি বড়লোক হওয়া যায় তার অলিগলির খোঁজে দিনরাত ছুটছি। যে জন্য ঘুষ খাচ্ছি, ঘুষ দিচ্ছি। ক্ষমতাধরদের পা চাটছি ও পায়ে তেল ঢালছি।
চোখের সামনে ভোগের উপকরণের এত ছড়াছড়ি দেখে মহামতি সক্রেটিসের কথা মনে পড়ে যায়। আড়াই হাজার বছর আগে তিনি বলেছিলেন, ‘দোকানে থরে থরে সাজানো বিলাসী পণ্যের হাতছানি তরুণদের বিপথগামী করে।’ গত কয়েক দশকে আমাদের জাতীয় চরিত্র এমন রূপ নিয়েছে যে, বাজারের চাকচিক্য ও কিছু মানুষের জৌলুশপূর্ণ জীবন প্রতিমুহূর্তে হাতছানি দিয়ে আমাদের লোভাতুর করে তুলেছে। লোভের উন্মাদনায় আমরাও কেবল অর্থবিত্তের পেছনে ছুটছি। লোভাতুর আমরা একবারও ভাবি না, আমাদের লোভ কীভাবে বিপুলসংখ্যক মানুষের মুখের গ্রাস, পায়ের তলার মাটি ও মাথার ছাদ কেড়ে নেয়।
আমরা ভাবি না আমাদের ক্ষমতা, আমাদের জৌলুশপূর্ণ চকচকে জীবনও কীভাবে আরও মানুষকে লোভাতুর ভোগবাদী করে তোলে আর লোভী মানুষের লোভের আগুন গ্রাস করে নেয় দেশের সিংহভাগ মানুষের মৌলিক অধিকার। আজ আম্বানীদের চাকচিক্য আমাদের ক্ষুব্ধ করে। কারণ এই চাকচিক্য আমাদের নেই। তাই প্রশ্ন তুলছি, এত কেন? কিন্তু আমরাও কি উৎসবে-পার্বণে কেবল বড়লোকি দেখানোর প্রতিযোগিতায় নামি না? দুই হাজার টাকার জিনিস যখন লাখ টাকায় কিনি, তখন কি প্রশ্ন তুলি এত কেন? আমাদের অনাবশ্যক চাকচিক্য দেখে কিছুই কিনতে না পারাদের কেমন লাগে, সেটা ভেবেছি কি?
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা
জন্মের পর ৩৫-৩৬ বছর বয়স পর্যন্ত আমি যে চালের ভাত খেয়ে বেঁচেছি, তা খুব সরু নয়, আবার মোটাও নয়। মাঝারি ধরনের চাল। আমাদের সুনামগঞ্জ শহর ও আশপাশের এলাকার ধনী, গরিব, মধ্যবিত্ত সবাই তখন এক রকম চালের ভাত খেত। টেপি ধানের আতপ চাল। চালগুলো গোল ধরনের হলেও ভাত হতো একটু লম্বা ও চিকন। বেশ সুগন্ধি আর সুস্বাদু এই ভাত চাইলে খালিও খাওয়া যেত।
তবে ভাটির দেশ সুনামগঞ্জের আরও ভাটি এলাকা দিরাই-শাল্লার লোকেরা এখনকার ২৮-২৯ ধানের থেকেও মোটা ইরি ধানের সেদ্ধ চালের ভাত খেত বলে শুনেছি। একবার এ রকম একটা এলাকায় বেড়াতে গিয়ে খেতে বসে বেশ কষ্ট হয়েছিল। কিন্তু ওই এলাকার মানুষ—সচ্ছল বা অসচ্ছল সবাইকে অনায়াসে পরমানন্দে সে ভাতই খেতে দেখেছিলাম। হয়তো অভ্যাস, আর কথায় তো আছেই—মানুষ অভ্যাসের দাস! তা যে সময়ের কথা আমি বলছি, সেই সময় ধনী মানুষেরাও আজকের মতো এত বিলাসী জীবনযাপন করত না। কৃষক যাঁরা, তাঁরা তো নয়ই। তাঁরা মোটা ভাতের সঙ্গে তাজা মাছের ঝোল খেয়েই তৃপ্ত ছিলেন।
তবে সেখানকার অধিকাংশ মানুষ ধনী-গরিবনির্বিশেষে যে মোটা চালের ভাত খেতেন, তার কারণ তাঁরা সবাই ছিলেন কৃষক বা কৃষিমজুর। জমির মালিক, কৃষক ও বর্গাচাষি সবাই বেশি ফলনের আশায় অধিকাংশ জমিতে ইরি ধানের চাষ করতেন। আর সুনামগঞ্জের যে অঞ্চলে আমরা টেপি চালের ভাত খেতাম, এসব অঞ্চলে টেপি ধানেরই চাষ হতো তখনো।
কিন্তু এখন হাইব্রিড যুগের চক্করে পড়ে সেই টেপি ধানের সুদিন আর নেই। এর ফলন কম, দাম বেশি। তাই ফসলের খেতজুড়ে ২৮-২৯ চালের আধিক্য। সংগত কারণে সুনামগঞ্জের গরিব লোকেরা আর টেপি চালের ভাত খেতে পারে না। সেই সুগন্ধ, সেই স্বাদ এখন শুধু স্মৃতি। সারা দেশের গরিবের মতো তারাও ২৯-এর মোটা চাল খায়। যারা সচ্ছল ও বিলাসী, তারাই খায় টেপির আতপ বা নাজিরশাইল। তাহলে দেখা যাচ্ছে, মানুষের অভ্যাস বা বিলাসিতা তৈরি হয় উৎপাদনব্যবস্থা ও সামর্থ্যের ভিত্তিতে।
মুকেশ আম্বানির স্ত্রী নীতা আম্বানী যে দেড় লাখ রুপির কাপে কফি বা চা খান বা প্রতিদিন এক লাখ রুপির জুতা পরেন, এগুলো তো কেউ না কেউ তৈরি করে বিক্রি করবে বলেই! হয়তো নীতা আম্বানীর মতো ব্যক্তির জন্য বিশেষ জিনিস তৈরি হয়, কিন্তু সব উচ্চমূল্যের পণ্যই তো আর এ রকম দু-চারজন ব্যক্তির জন্য তৈরি হয় না। আসলে উৎপাদনকারী উচ্চমূল্যের পণ্য উৎপাদন করেন। কারণ তাঁরা জানেন যাঁদের অনেক টাকা আছে, তাঁদের অনেকেই বিত্তের প্রদর্শনী করে সুখ পাওয়ার জন্য সেই সব বিশেষ জিনিস কিনবেনই।
তাহলে দোষ কার? যিনি কেনেন তাঁর, নাকি যিনি উৎপাদন ও বিক্রি করেন তাঁর, নাকি উভয়ের? গতবারের রমজানে বাংলাদেশে ২০ হাজার টাকা কেজির সোনার জিলাপি তৈরি হয়েছিল। অথচ ক্রেতার অভাব ছিল না। অনেকে দোকানে গিয়ে পায়নি। তার আগে বনানীর একটা হোটেল বানিয়েছিল সোনার আইসক্রিম, যার দাম ছিল ৯৯ হাজার ৯৯৯ টাকা। ও হ্যাঁ, তারও ক্রেতার অভাব হয়নি।
এই যে কিছু মানুষ সোনার জিলাপি, আইসক্রিম ও সোনার পানি খাওয়ার সামর্থ্য রাখে আর কেউ একটু ডাল-ভাতও ঠিকমতো খেতে পারে না, এমনকি যে পানির নাম জীবন, জীবন বাঁচাতে অনেকের কাছে যখন সেই পানিটুকুও দুর্মূল্য হয়, এর জন্য কে দায়ী—সেই সব নিয়ে কি আমরা ভাবি? দেখলাম, এক গোলটেবিল বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বরেন্দ্র অঞ্চলে খাওয়ার পানির সংকট নিয়ে। আর তাতে বিশেষ জাতিসত্তার দরিদ্র প্রান্তিক জনগোষ্ঠী আছে চরম সংকটে। সে জন্য গোলটেবিল বৈঠকে পানিবণ্টনের বৈষম্য কমানোর জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। কিন্তু সুপারিশ কতটা কার্যকর হবে, এর কোনো নিশ্চয়তা নেই।
অবস্থা এমন যে সুপেয় পানির অভাবে আমাদের দেশের বরেন্দ্র ও উপকূলীয় অঞ্চলে প্রান্তিক মানুষের জীবন যেখানে সংকটে, সেখানে শুনেছি আশুগঞ্জ উপজেলার এক হাইওয়ে হোটেল ও রিসোর্টের মালিকের স্ত্রী প্রতিদিন মাম নামের মিনারেল ওয়াটার দিয়ে গোসল করেন। আর কিনা আমাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোরগোল মুকেশ আম্বানীর স্ত্রী নীতা আম্বানী কেন সোনার পানি খান, সেটা নিয়ে!
বিপুলা পৃথিবীর কথা দূরে থাকুক, আমাদের এই ছোট্ট দেশের কোথায় কী হচ্ছে তার কতটুকু আমরা জানি? কেউ ভাবতে পারেন, আমি নীতা আম্বানীর পক্ষে কথা বলছি। কিন্তু না, আমি মানুষের ভোগলিপ্সা, চিত্তহীন বিত্তের ক্ষমতার নির্লজ্জ প্রকাশ ও মানুষের ক্ষুধা-তৃষ্ণা নিবারণের অক্ষমতার তুলনা করছি। একজন অখ্যাত হোটেল মালিকের (হয়তো তার আরও কিছু ব্যবসা আছে, যা আমি জানি না) স্ত্রী যদি প্রতিদিন মাম ওয়াটার দিয়ে গোসল করতে পারেন, সেখানে বিশাল ভারতের অন্যতম ধনী ব্যক্তি, দুনিয়াজোড়া যাঁর খ্যাতি, তাঁর স্ত্রী সোনার পানি খাবেন কিংবা তাঁর হারের দাম কোনো দেশের জিডিপির থেকে বেশি হলে অবাক হওয়ার ও শোরগোল করার কী আছে, সেটাই আমি বুঝতে পারিনি।
প্রতিবছর ঈদে লক্ষাধিক টাকার শাড়ি, লেহেঙ্গা এবং কোরবানির ঈদে কোটি টাকার গরু নিয়ে প্রতিযোগিতার কথা আমরা মিডিয়ার খবরে পড়ি এবং দেখি। বেশ কিছু মানুষের আকাশচুম্বী ক্ষমতার খবর এখন আর নতুন নয় আমাদের কাছে। দুঃখের বিষয় হলো, এসব খবর যে কারও মনে বিশেষ কোনো ক্ষোভের জন্ম দেয়, তার কোনো খবর আমরা কোথাও দেখতে বা পড়তে পাই না; বরং আমাদের সচেতন অংশ এসব খবর আমরা যারা জানি, তাদের প্রায় সবাই সম্ভবত অনুপ্রাণিত হই। তাই তো আমরাও কীভাবে, কোন পথে রাতারাতি বড়লোক হওয়া যায় তার অলিগলির খোঁজে দিনরাত ছুটছি। যে জন্য ঘুষ খাচ্ছি, ঘুষ দিচ্ছি। ক্ষমতাধরদের পা চাটছি ও পায়ে তেল ঢালছি।
চোখের সামনে ভোগের উপকরণের এত ছড়াছড়ি দেখে মহামতি সক্রেটিসের কথা মনে পড়ে যায়। আড়াই হাজার বছর আগে তিনি বলেছিলেন, ‘দোকানে থরে থরে সাজানো বিলাসী পণ্যের হাতছানি তরুণদের বিপথগামী করে।’ গত কয়েক দশকে আমাদের জাতীয় চরিত্র এমন রূপ নিয়েছে যে, বাজারের চাকচিক্য ও কিছু মানুষের জৌলুশপূর্ণ জীবন প্রতিমুহূর্তে হাতছানি দিয়ে আমাদের লোভাতুর করে তুলেছে। লোভের উন্মাদনায় আমরাও কেবল অর্থবিত্তের পেছনে ছুটছি। লোভাতুর আমরা একবারও ভাবি না, আমাদের লোভ কীভাবে বিপুলসংখ্যক মানুষের মুখের গ্রাস, পায়ের তলার মাটি ও মাথার ছাদ কেড়ে নেয়।
আমরা ভাবি না আমাদের ক্ষমতা, আমাদের জৌলুশপূর্ণ চকচকে জীবনও কীভাবে আরও মানুষকে লোভাতুর ভোগবাদী করে তোলে আর লোভী মানুষের লোভের আগুন গ্রাস করে নেয় দেশের সিংহভাগ মানুষের মৌলিক অধিকার। আজ আম্বানীদের চাকচিক্য আমাদের ক্ষুব্ধ করে। কারণ এই চাকচিক্য আমাদের নেই। তাই প্রশ্ন তুলছি, এত কেন? কিন্তু আমরাও কি উৎসবে-পার্বণে কেবল বড়লোকি দেখানোর প্রতিযোগিতায় নামি না? দুই হাজার টাকার জিনিস যখন লাখ টাকায় কিনি, তখন কি প্রশ্ন তুলি এত কেন? আমাদের অনাবশ্যক চাকচিক্য দেখে কিছুই কিনতে না পারাদের কেমন লাগে, সেটা ভেবেছি কি?
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৪ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৭ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৭ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১১ দিন আগে