শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি
‘পুরুষ শ্রমিকের মজুরি বেশি, তাই তাগো (তাঁদের) ছেড়ে দিয়ে আমাগো কাজে লাগিয়েছে। ধান ঝাড়ার (মাড়াই) কাজ পুরুষদের চেয়ে আমরা বরং বেশি করতি পারি। তা সত্ত্বেও পুরুষদের ৩০০ টাকা দেওয়া হলেও আমাগো দেয় মাত্র ২০০ টাকা।
কথাগুলো বলছিলেন, শ্যামনগর উপজেলার আবাদচণ্ডীপুর গ্রামের সুমিত্রা মুন্ডা। মেশিনে ধান মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত ত্রিশোর্ধ্ব ওই গৃহবধূ আরও বলেন, ‘ধান কাটা, ঝাড়া ও তোলার কাজ শেষ হলি আমাগো এক বেলার মজুরি দেবে ১৫০-২০০ টাকা’। সকাল ছয়টা থেকে তাদের কাজে যোগ দিতে হয়- উল্লেখ করে তিনি জানান, তুলনামূলক বেশি খাঁটিয়ে নেওয়া হলেও মজুরির ক্ষেত্রে তাঁরা বৈষম্যের শিকার।
উপজেলার জেলেখালী গ্রামের দুই সন্তানের জননী মানো লস্কর বলেন, ‘পুরুষ লোক একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আট কাবি (ধানের গোছ) রুতি (রোপণ করতে) পারে, আমরাও সেটা করি। অথচ তাগো ৩০০-৩৫০ টাকা দিলিও আমাগো মজুরি দেয় ২০০ টাকা। কখনো কখনো মালিক মহাজন তার চেয়েও কম দিতে চায়।’
মানো লস্কর আরও বলেন, ‘সমানতালে কাজ করা সত্ত্বেও শুধুমাত্র নারী হওয়ার অজুহাতে আমাদের ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। মজুরি বৃদ্ধির জন্য প্রতিনিয়ত মহাজনের কাছে আরজি জানিয়ে কোনো লাভ হয় না বলে তাঁর অভিযোগ।’
তবে শুধু আবাদচণ্ডীপুরের সুমিত্রা মুন্ডা আর জেলেখালী গ্রামের মানো লস্কর না। বরং মজুরির ক্ষেত্রে বঞ্চনার শিকার হওয়া নিয়ে এমন আক্ষেপ হরিপুর গ্রামের সুফিয়া খাতুন, মুন্সিগঞ্জের প্রমীলা রানিসহ উপকূলবর্তী শ্যামনগর উপজেলার বিভিন্ন অংশের হাজারো শ্রমজীবী নারীর।
ধুমঘাট গ্রামের কোনি মণ্ডল জানান, মাটি কাটা ছাড়া সব কাজে তাঁরা পুরুষের সঙ্গে রীতিমতো পাল্লা দিয়ে চলেন। অথচ মজুরির ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় তাঁদের ১০০-১৫০ টাকা কম দেওয়া হয়। অনেক সময় কম মজুরিতে পুরুষেরা কাজ করতে সম্মত না হওয়ায় অর্ধেক মজুরিতে নারী শ্রমিকদের কাজে লাগানো হয় জানান তিনি।
উপকূলবর্তী শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ, নুরনগর, বুড়িগোয়ালীনিসহ পাশের এলাকা সরেজমিন পরিদর্শনকালে স্থানীয় নারী শ্রমিকেরা জানায় শুরু থেকে তাঁরা এমন মজুরি বৈষম্যের শিকার। দীর্ঘদিনেও অবস্থার উন্নতি হয়নি। তাঁরা বলেন, ৪ জন নারী শ্রমিক এক বেলায় এক বিঘা জমির ধান মাড়াই করছে। ৪ জন পুরুষও একই পরিমাণ কাজ করে। অথচ তাঁদের জনপ্রতি ১০০ টাকা কম দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তোলা হলে কাজ থেকে বাদ দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।
নারী শ্রমিকদের জন্য স্থানীয়ভাবে নির্দিষ্ট কোনো সংগঠন গড়ে না ওঠায় তাদের মজুরি বৈষম্য দুর হচ্ছে না বলে অভিমত অনেকের। তারা অভিযোগ করেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ উপকূলীয় জনপদজুড়ে কর্মতৎপর এনজিওগুলো উদ্যোগী না হওয়াতে এসব এলাকার নারী শ্রমিকেরা তীব্র মজুরি বৈষম্যের শিকার। মারাত্মক কর্মসংস্থান সংকটের এ জনপদের নারী শ্রমিকদের ন্যায্য প্রাপ্যতা নিশ্চিতে পুরুষ শ্রমিকসহ নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতার দাবিও জানান তারা।
ছফুরা বেগম ও সন্ধ্যা রানিসহ কয়েকজন নারী জানান, গৃহস্থলীর কাজের পাশাপাশি খেতে-খামারে বিলে-খালে দিনমজুরের কাজ করেন তাঁরা। অধিকাংশ সময় স্বামীসহ নির্ভরশীল ছেলেরা কাজের জন্য এলাকার বাইরে যাওয়ায় পরিবার সামলানোর অতিরিক্ত দায়িত্বও ঘাড়ে চাপে। তদুপরি স্থানীয়ভাবে কর্মরত পুরুষদের সঙ্গে সমানভাবে কাজ করা সত্ত্বেও মজুরির ক্ষেত্রে বিস্তর বৈষম্য তাঁদের ওপর রীতিমতো অবিচার।
শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম জানান, এলাকায় কর্মসংস্থান সংকটের কারণে সবাই কাজের জন্য ঘুরছে। এ সুযোগ নিয়ে স্থানীয়রা নারীদের দিয়ে পুরুষ শ্রমিকের কাজ করিয়ে তুলনামূলক কম মজুরি পরিশোধ করছে। নারী শ্রমিকের প্রতি এমন মজুরি বৈষম্যের অবসানে সবার এগিয়ে আসার দাবি জানান তিনি।
উন্নয়ন সংগঠন প্রেরণার নির্বাহী পরিচালক শম্পা গোস্মামী বলেন, এসব এলাকার নারীরা অনেক আগে থেকে মজুরি বৈষম্যের শিকার। তাঁদের সচেতন করার পাশাপাশি শ্রমজীবী নারীদের স্বার্থে একটি সংগঠন গড়ে তোলা জরুরি বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
খুলনা বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের সহকারী পরিচালক মাহবুব আলম বলেন, ‘আমাদের নির্দেশনা রয়েছে সমকাজে সমান মজুরি। একই কাজ করলে নারী-পুরুষ সবাই সমান মজুরির বিষয়টি আইনে স্পষ্ট রয়েছে। তবে এ ধরনের মজুরি বৈষম্য নিয়ে শ্রম দপ্তরে অভিযোগ আসে না। অভিযোগ পেলে বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।’
ইউএনও মো. আক্তার হোসেন বলেন, স্থানীয়ভাবে কর্মরত শ্রমিকেরা মূলত মালিক মহাজনের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে তাঁদের মজুরি নির্ধারণ করে আসছে। মজুরি কম পাওয়া নিয়ে নারী শ্রমিকদের পক্ষ থেকে অদ্যাবধি কোনো অভিযোগ আসেনি।
‘পুরুষ শ্রমিকের মজুরি বেশি, তাই তাগো (তাঁদের) ছেড়ে দিয়ে আমাগো কাজে লাগিয়েছে। ধান ঝাড়ার (মাড়াই) কাজ পুরুষদের চেয়ে আমরা বরং বেশি করতি পারি। তা সত্ত্বেও পুরুষদের ৩০০ টাকা দেওয়া হলেও আমাগো দেয় মাত্র ২০০ টাকা।
কথাগুলো বলছিলেন, শ্যামনগর উপজেলার আবাদচণ্ডীপুর গ্রামের সুমিত্রা মুন্ডা। মেশিনে ধান মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত ত্রিশোর্ধ্ব ওই গৃহবধূ আরও বলেন, ‘ধান কাটা, ঝাড়া ও তোলার কাজ শেষ হলি আমাগো এক বেলার মজুরি দেবে ১৫০-২০০ টাকা’। সকাল ছয়টা থেকে তাদের কাজে যোগ দিতে হয়- উল্লেখ করে তিনি জানান, তুলনামূলক বেশি খাঁটিয়ে নেওয়া হলেও মজুরির ক্ষেত্রে তাঁরা বৈষম্যের শিকার।
উপজেলার জেলেখালী গ্রামের দুই সন্তানের জননী মানো লস্কর বলেন, ‘পুরুষ লোক একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আট কাবি (ধানের গোছ) রুতি (রোপণ করতে) পারে, আমরাও সেটা করি। অথচ তাগো ৩০০-৩৫০ টাকা দিলিও আমাগো মজুরি দেয় ২০০ টাকা। কখনো কখনো মালিক মহাজন তার চেয়েও কম দিতে চায়।’
মানো লস্কর আরও বলেন, ‘সমানতালে কাজ করা সত্ত্বেও শুধুমাত্র নারী হওয়ার অজুহাতে আমাদের ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। মজুরি বৃদ্ধির জন্য প্রতিনিয়ত মহাজনের কাছে আরজি জানিয়ে কোনো লাভ হয় না বলে তাঁর অভিযোগ।’
তবে শুধু আবাদচণ্ডীপুরের সুমিত্রা মুন্ডা আর জেলেখালী গ্রামের মানো লস্কর না। বরং মজুরির ক্ষেত্রে বঞ্চনার শিকার হওয়া নিয়ে এমন আক্ষেপ হরিপুর গ্রামের সুফিয়া খাতুন, মুন্সিগঞ্জের প্রমীলা রানিসহ উপকূলবর্তী শ্যামনগর উপজেলার বিভিন্ন অংশের হাজারো শ্রমজীবী নারীর।
ধুমঘাট গ্রামের কোনি মণ্ডল জানান, মাটি কাটা ছাড়া সব কাজে তাঁরা পুরুষের সঙ্গে রীতিমতো পাল্লা দিয়ে চলেন। অথচ মজুরির ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় তাঁদের ১০০-১৫০ টাকা কম দেওয়া হয়। অনেক সময় কম মজুরিতে পুরুষেরা কাজ করতে সম্মত না হওয়ায় অর্ধেক মজুরিতে নারী শ্রমিকদের কাজে লাগানো হয় জানান তিনি।
উপকূলবর্তী শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ, নুরনগর, বুড়িগোয়ালীনিসহ পাশের এলাকা সরেজমিন পরিদর্শনকালে স্থানীয় নারী শ্রমিকেরা জানায় শুরু থেকে তাঁরা এমন মজুরি বৈষম্যের শিকার। দীর্ঘদিনেও অবস্থার উন্নতি হয়নি। তাঁরা বলেন, ৪ জন নারী শ্রমিক এক বেলায় এক বিঘা জমির ধান মাড়াই করছে। ৪ জন পুরুষও একই পরিমাণ কাজ করে। অথচ তাঁদের জনপ্রতি ১০০ টাকা কম দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তোলা হলে কাজ থেকে বাদ দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।
নারী শ্রমিকদের জন্য স্থানীয়ভাবে নির্দিষ্ট কোনো সংগঠন গড়ে না ওঠায় তাদের মজুরি বৈষম্য দুর হচ্ছে না বলে অভিমত অনেকের। তারা অভিযোগ করেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ উপকূলীয় জনপদজুড়ে কর্মতৎপর এনজিওগুলো উদ্যোগী না হওয়াতে এসব এলাকার নারী শ্রমিকেরা তীব্র মজুরি বৈষম্যের শিকার। মারাত্মক কর্মসংস্থান সংকটের এ জনপদের নারী শ্রমিকদের ন্যায্য প্রাপ্যতা নিশ্চিতে পুরুষ শ্রমিকসহ নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতার দাবিও জানান তারা।
ছফুরা বেগম ও সন্ধ্যা রানিসহ কয়েকজন নারী জানান, গৃহস্থলীর কাজের পাশাপাশি খেতে-খামারে বিলে-খালে দিনমজুরের কাজ করেন তাঁরা। অধিকাংশ সময় স্বামীসহ নির্ভরশীল ছেলেরা কাজের জন্য এলাকার বাইরে যাওয়ায় পরিবার সামলানোর অতিরিক্ত দায়িত্বও ঘাড়ে চাপে। তদুপরি স্থানীয়ভাবে কর্মরত পুরুষদের সঙ্গে সমানভাবে কাজ করা সত্ত্বেও মজুরির ক্ষেত্রে বিস্তর বৈষম্য তাঁদের ওপর রীতিমতো অবিচার।
শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম জানান, এলাকায় কর্মসংস্থান সংকটের কারণে সবাই কাজের জন্য ঘুরছে। এ সুযোগ নিয়ে স্থানীয়রা নারীদের দিয়ে পুরুষ শ্রমিকের কাজ করিয়ে তুলনামূলক কম মজুরি পরিশোধ করছে। নারী শ্রমিকের প্রতি এমন মজুরি বৈষম্যের অবসানে সবার এগিয়ে আসার দাবি জানান তিনি।
উন্নয়ন সংগঠন প্রেরণার নির্বাহী পরিচালক শম্পা গোস্মামী বলেন, এসব এলাকার নারীরা অনেক আগে থেকে মজুরি বৈষম্যের শিকার। তাঁদের সচেতন করার পাশাপাশি শ্রমজীবী নারীদের স্বার্থে একটি সংগঠন গড়ে তোলা জরুরি বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
খুলনা বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের সহকারী পরিচালক মাহবুব আলম বলেন, ‘আমাদের নির্দেশনা রয়েছে সমকাজে সমান মজুরি। একই কাজ করলে নারী-পুরুষ সবাই সমান মজুরির বিষয়টি আইনে স্পষ্ট রয়েছে। তবে এ ধরনের মজুরি বৈষম্য নিয়ে শ্রম দপ্তরে অভিযোগ আসে না। অভিযোগ পেলে বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।’
ইউএনও মো. আক্তার হোসেন বলেন, স্থানীয়ভাবে কর্মরত শ্রমিকেরা মূলত মালিক মহাজনের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে তাঁদের মজুরি নির্ধারণ করে আসছে। মজুরি কম পাওয়া নিয়ে নারী শ্রমিকদের পক্ষ থেকে অদ্যাবধি কোনো অভিযোগ আসেনি।
প্রবৃদ্ধির শীর্ষে থেকেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের দৌড়ে পিছিয়ে রয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ৫০ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়েছে
১৬ ঘণ্টা আগেদুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি, উচ্চ করহারসহ ১৭ ধরনের বাধায় বিপর্যস্ত দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। রয়েছে সামাজিক সমস্যাও।
১৮ ঘণ্টা আগেজমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৫ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৮ দিন আগে