মোনায়েম সরকার
আর মাত্র দুই দিন পর আমরা একটি নতুন বছরে পদার্পণ করব। ২০২৩ সালকে বিদায় দিয়ে স্বাগত জানাব ২০২৪ সালকে। পেছনে তাকিয়ে বলতে পারি, দ্বিধাদ্বন্দ্ব-দোলাচল, বিভেদ-বিভ্রান্তি সত্ত্বেও আমরা সংকট মোকাবিলা করে সম্ভাবনার দিকেই এগিয়ে চলেছি। বিদায়ী বছরে করোনা মহামারি আমাদের সেভাবে ভোগায়নি, তবে ডেঙ্গু অনেকের জীবন কেড়েছে। মশা নিধনে কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার খোরাক জুগিয়েছে।
বন্যা বা অন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলহানি হলে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে, সেই শঙ্কা ছিল। কিন্তু পরিস্থিতির তেমন অবনতি হয়নি। আগের বছরই বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু চালু করে দেওয়ার কাজটি সরকার করতে পেরেছে। এটি আমাদের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন প্রকল্প। এটি শুধু একটি প্রকল্প নয়, স্বপ্নের বাস্তবায়ন। আমরা সবাই জানি, কত প্রতিকূলতার মধ্যে সরকার পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে এগিয়েছে এবং অবশেষে তা বাস্তবায়ন করতে পেরেছে।
বিদায়ী বছরে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে রেললাইন চালু হয়েছে। পদ্মা সেতু চালুর পর রেল চলাচল শুরু হওয়ায় রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার নিরবচ্ছিন্ন, সাশ্রয়ী ও দ্রুত যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়া বিদায়ী বছরে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে চালু হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। এটা বাংলাদেশের প্রথম সুড়ঙ্গপথ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় নদীর তলদেশের প্রথম ও দীর্ঘতম সড়ক সুড়ঙ্গপথ। বিদায়ী বছরেই চালু হয়েছে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল।
বছরজুড়েই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি ছিল বিপুলসংখ্যক মানুষের জন্য উদ্বেগ ও অস্বস্তির। ডিম, আলু, পেঁয়াজ নিয়ে কত কাণ্ডই না হলো! ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কাছে সরকারের অসহায় আত্মসমর্পণ মানুষকে পীড়া দিয়েছে।
বিদায়ী বছরে সরকারের অর্থসংকটে পড়ার খবর দফায় দফায় শোনা গেছে। আমাদের মতো দেশের পক্ষে উচ্চাভিলাষী উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অনেক সময় অর্থসংকট দেখা দেওয়া অস্বাভাবিক নয়। রাজস্ব আদায়ে সব সরকারের আমলেই ব্যর্থতা লক্ষ করা গেলেও কোনো সময়েই বিদেশি অর্থসহায়তা পেতে আমাদের বেগ পেতে হয়নি। কারণ, এ ধরনের ঋণ পরিশোধে আমাদের সুনাম আছে।
বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমতে থাকার বিষয়টি অনেকবারই খবর হয়েছে। এই সংকটের মূল কারণ সম্ভবত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যায় অস্বাভাবিকভাবে, বিশ্ববাজারে খাদ্যের দামও বেড়ে যায় আকস্মিকভাবে শুরু হওয়া এই যুদ্ধ দ্রুত বন্ধ না হওয়ায়। ইউক্রেন ঘিরে রাশিয়ার আগ্রাসী মনোভাবের পাশাপাশি আমেরিকার নেতৃত্বে ন্যাটো জোটের উসকানিও এই পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য দায়ী।
এর মূল্য দিতে হচ্ছে বাংলাদেশের মতো উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোকে। বিদায়ী বছরে আমাদের অর্থনীতি ও জনজীবনে সংকট দেখা দিলেও সরকার চেষ্টা করছে আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক রেখে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে। কিছু সময়ের জন্য যে বিদ্যুৎসংকট দেখা দিয়েছিল, সেটাও নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছে সরকার। বিদ্যুতের বেড়ে চলা চাহিদা পূরণে সরকার কিছু সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছিল।
তবে বিদ্যুৎ খাতে অপচয়-দুর্নীতির কথা অনেকে বলে থাকেন এবং বিদ্যুৎসংকটের সময় সমালোচনা বেড়েছিল স্বভাবতই। বেসরকারি খাতের চুক্তিগুলো নিয়েও অনেক কথা শুনতে হয়েছে সরকারকে। নতুন বছরে এ ক্ষেত্রে নতুন কী হয়, সেটা এখন দেখার অপেক্ষা।
নতুন বছরেই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ শেষে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সড়ক যোগাযোগ উন্নত করার কাজ শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার করে যাচ্ছে দায়িত্ব গ্রহণের শুরু থেকেই। বিদায়ী বছরে অর্জনগুলো দৃশ্যমান হয়েছে অনেক ক্ষেত্রেই।
নতুন যে বছর আসছে, তার শুরুতেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপিসহ কিছু দল আন্দোলন করছে। নিজেদের পছন্দমতো সরকারের অধীনে নির্বাচন না হওয়ায় বিএনপিসহ কিছু দলের এই নির্বাচনবিরোধিতা।
আগের বছরের মধ্যভাগ থেকে বিএনপির নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলো রাজনীতির মাঠ গরম করতে তৎপর হয়ে উঠলেও এ পর্যন্ত তাদের কোনো সফলতা নেই। বিএনপির সঙ্গে তার সব সময়ের মিত্র জামায়াতে ইসলামীসহ মৌলবাদী দলগুলো প্রকাশ্যে ততটা না হলেও কৌশলে অবশ্যই রয়েছে। দলটির সঙ্গে নতুন করে যোগ দিয়েছে সাবেক বাম, মধ্য বাম কিছু গ্রুপ। অনলাইনে দেশে-বিদেশে সক্রিয় একটি গোষ্ঠীও সরকারের সমালোচনা অব্যাহত রেখেছে। সমালোচনায় কারও আপত্তি হওয়ার কথা নয়, তবে অপপ্রচারে আপত্তি করতেই হবে। বিদায়ী বছরে আমরা লক্ষ করেছি, জনজীবনে সৃষ্টি হওয়া কিছু সমস্যা নিয়ে দেশে যেমন বিরোধী দলগুলো সক্রিয় হয়ে উঠতে চেয়েছে, তেমনি অনলাইনে সক্রিয় একটি গোষ্ঠী মেতে উঠেছে অপপ্রচারে। রিজার্ভ পরিস্থিতি ও ব্যাংক খাতের কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনা নিয়ে তারা এত অপপ্রচার চালায়, যা মোকাবিলা করা সরকারের পক্ষে সহজ ছিল না। দেশ অচিরেই শ্রীলঙ্কা হয়ে যাবে বলে প্রচারণা চালিয়ে অবশ্য কোনো সুফল তারা পায়নি। দেশ শ্রীলঙ্কা হয়নি।
তবে এ কথা ঠিক, ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী কোনো কোনো ব্যাংকে সংকট তৈরি করছে এবং তারা দেশ থেকে অর্থ পাচারেও জড়িত। এদের দমনে সরকারের আন্তরিক উদ্যোগে ঘাটতির অভিযোগও আছে। নতুন বছরে নতুন সরকার যত দ্রুত পাচার, লুটপাট রোধে পদক্ষেপ নেবে, ততই আস্থা ফিরে আসবে মানুষের মনে। এর প্রভাব বিরোধী দলের আন্দোলনেও গিয়ে পড়বে।
তাদের আন্দোলনের সুযোগ আসে প্রধানত সরকারের কিছু সীমাবদ্ধতা ও ব্যর্থতা থেকে। বিদায়ী বছরে আমরা ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের অতি তৎপরতা দেখে বিস্মিত হয়েছি। এর প্রতিক্রিয়ায় আবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রগুলোর তৎপরতাও প্রকাশ্যেই দেখা গেছে। সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হয়েছে, গণতন্ত্র, নির্বাচন ও মানবাধিকারের মতো বিষয়ে বাইরের কোনো দেশের রীতিবিরুদ্ধ কথাবার্তা ও কার্যকলাপ বাংলাদেশ পছন্দ করে না। তাদের কূটনৈতিক রীতিনীতি মান্য করে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র দপ্তরকে এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় আরও সতর্ক থাকতে হবে। অনেকে মনে করেন, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক শক্তিগুলো পরস্পরের দ্বন্দ্ব-সংঘাতের একটি ক্ষেত্র করে তুলতে চায় বাংলাদেশকে। বলা বাহুল্য, দীর্ঘদিন ধরে সচেষ্ট থেকেও কার্যকর আন্দোলন রচনায় ব্যর্থ বিরোধী দল এর সুযোগ নিতে চাইছে। নতুন বছরে এ বিষয়ে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে সরকারকে। এটা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের জন্যও একটি পরীক্ষা।
আন্দোলনে অসফল বলেই এটা মনে করা ঠিক হবে না যে বিএনপির কোনো জনসমর্থন নেই। বিএনপির পেছনে জনগণের একটি বড় অংশের সমর্থন আছে। আওয়ামী লীগ নজিরবিহীনভাবে টানা তিন মেয়াদ ক্ষমতায় থাকায় দলটির জন্য কিছু জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষমতাসীনদের প্রতি মানুষের রাগ-ক্ষোভ থাকা স্বাভাবিক। অন্যায় কাজে ক্ষমতার প্রয়োগ মানুষ পছন্দ করে না। মানুষ অন্যায়ের বিরুদ্ধে ক্ষমতার প্রয়োগ দেখতে চায়।
আগের দুটি নির্বাচন ত্রুটিমুক্ত না হওয়া এবং দেশে-বিদেশে সমালোচনার কারণে এবার সরকারও চেয়েছে সবার অংশগ্রহণে একটি অর্থবহ নির্বাচন। নির্বাচন একেবারে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন হচ্ছে না। নির্বাচনে জয়ী হয়ে উন্নয়নের চলমান ধারা অব্যাহত রাখতে চাইছে ক্ষমতাসীন দল। ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ করার উচ্চাভিলাষের কথা সামনে এনেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেটি অর্জনের জন্য স্মার্ট সরকার ও প্রশাসন প্রয়োজন হবে এবং দলকেও সেভাবে প্রস্তুত করতে হবে। শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়নে নিয়োজিত থাকলে চলবে না; জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ এবং তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করতে হবে সরকার ও ক্ষমতাসীন দলকে। সংগঠনকে সচল ও রাজনৈতিক কর্মসূচিভিত্তিক কাজ বাড়াতে হবে তৃণমূল পর্যন্ত। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগকে জনগণ ভোট দিয়ে দফায় দফায় ক্ষমতায় আনলেও মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সরকারের মনোভাব বৈষম্যমূলক। বিরোধী দল তাদের মনমতো নির্বাচনের দাবিতে অরাজকতা সৃষ্টি করতে চাইলে সেটা যেমন হতে দেওয়া যাবে না, তেমনি তাদের সমালোচনা ও অপপ্রচারের যুক্তিপূর্ণ জবাবও তো দিতে হবে।
পাশাপাশি দুর্নীতি দমন ও সুশাসন নিশ্চিত করে জনগণকে আশ্বস্ত করতে হবে জনকল্যাণের বিষয়ে। অর্থনীতিতে যেসব সংকট রয়েছে, সেগুলো মোকাবিলায় পদক্ষেপও আরও জোরালো করা চাই। বেকারত্ব হ্রাস ও আয়বৈষম্য কমিয়ে আনা গেলে জনমনে স্বস্তি ফিরে আসতে সময় লাগবে না। তাতে সরকারের ওপর আস্থাও বাড়বে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত আরও শক্তিশালী হবে এতে। সবচেয়ে বড় কথা, নতুন বছরে নতুন সরকারের কাছে মানুষ নতুন ধারার রাজনীতি প্রত্যাশা করে।
মোনায়েম সরকার, রাজনীতিবিদ, লেখক ও চেয়ারম্যান, বিএফডিআর
আর মাত্র দুই দিন পর আমরা একটি নতুন বছরে পদার্পণ করব। ২০২৩ সালকে বিদায় দিয়ে স্বাগত জানাব ২০২৪ সালকে। পেছনে তাকিয়ে বলতে পারি, দ্বিধাদ্বন্দ্ব-দোলাচল, বিভেদ-বিভ্রান্তি সত্ত্বেও আমরা সংকট মোকাবিলা করে সম্ভাবনার দিকেই এগিয়ে চলেছি। বিদায়ী বছরে করোনা মহামারি আমাদের সেভাবে ভোগায়নি, তবে ডেঙ্গু অনেকের জীবন কেড়েছে। মশা নিধনে কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার খোরাক জুগিয়েছে।
বন্যা বা অন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলহানি হলে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে, সেই শঙ্কা ছিল। কিন্তু পরিস্থিতির তেমন অবনতি হয়নি। আগের বছরই বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু চালু করে দেওয়ার কাজটি সরকার করতে পেরেছে। এটি আমাদের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন প্রকল্প। এটি শুধু একটি প্রকল্প নয়, স্বপ্নের বাস্তবায়ন। আমরা সবাই জানি, কত প্রতিকূলতার মধ্যে সরকার পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে এগিয়েছে এবং অবশেষে তা বাস্তবায়ন করতে পেরেছে।
বিদায়ী বছরে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে রেললাইন চালু হয়েছে। পদ্মা সেতু চালুর পর রেল চলাচল শুরু হওয়ায় রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার নিরবচ্ছিন্ন, সাশ্রয়ী ও দ্রুত যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়া বিদায়ী বছরে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে চালু হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। এটা বাংলাদেশের প্রথম সুড়ঙ্গপথ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় নদীর তলদেশের প্রথম ও দীর্ঘতম সড়ক সুড়ঙ্গপথ। বিদায়ী বছরেই চালু হয়েছে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল।
বছরজুড়েই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি ছিল বিপুলসংখ্যক মানুষের জন্য উদ্বেগ ও অস্বস্তির। ডিম, আলু, পেঁয়াজ নিয়ে কত কাণ্ডই না হলো! ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কাছে সরকারের অসহায় আত্মসমর্পণ মানুষকে পীড়া দিয়েছে।
বিদায়ী বছরে সরকারের অর্থসংকটে পড়ার খবর দফায় দফায় শোনা গেছে। আমাদের মতো দেশের পক্ষে উচ্চাভিলাষী উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অনেক সময় অর্থসংকট দেখা দেওয়া অস্বাভাবিক নয়। রাজস্ব আদায়ে সব সরকারের আমলেই ব্যর্থতা লক্ষ করা গেলেও কোনো সময়েই বিদেশি অর্থসহায়তা পেতে আমাদের বেগ পেতে হয়নি। কারণ, এ ধরনের ঋণ পরিশোধে আমাদের সুনাম আছে।
বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমতে থাকার বিষয়টি অনেকবারই খবর হয়েছে। এই সংকটের মূল কারণ সম্ভবত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যায় অস্বাভাবিকভাবে, বিশ্ববাজারে খাদ্যের দামও বেড়ে যায় আকস্মিকভাবে শুরু হওয়া এই যুদ্ধ দ্রুত বন্ধ না হওয়ায়। ইউক্রেন ঘিরে রাশিয়ার আগ্রাসী মনোভাবের পাশাপাশি আমেরিকার নেতৃত্বে ন্যাটো জোটের উসকানিও এই পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য দায়ী।
এর মূল্য দিতে হচ্ছে বাংলাদেশের মতো উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোকে। বিদায়ী বছরে আমাদের অর্থনীতি ও জনজীবনে সংকট দেখা দিলেও সরকার চেষ্টা করছে আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক রেখে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে। কিছু সময়ের জন্য যে বিদ্যুৎসংকট দেখা দিয়েছিল, সেটাও নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছে সরকার। বিদ্যুতের বেড়ে চলা চাহিদা পূরণে সরকার কিছু সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছিল।
তবে বিদ্যুৎ খাতে অপচয়-দুর্নীতির কথা অনেকে বলে থাকেন এবং বিদ্যুৎসংকটের সময় সমালোচনা বেড়েছিল স্বভাবতই। বেসরকারি খাতের চুক্তিগুলো নিয়েও অনেক কথা শুনতে হয়েছে সরকারকে। নতুন বছরে এ ক্ষেত্রে নতুন কী হয়, সেটা এখন দেখার অপেক্ষা।
নতুন বছরেই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ শেষে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সড়ক যোগাযোগ উন্নত করার কাজ শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার করে যাচ্ছে দায়িত্ব গ্রহণের শুরু থেকেই। বিদায়ী বছরে অর্জনগুলো দৃশ্যমান হয়েছে অনেক ক্ষেত্রেই।
নতুন যে বছর আসছে, তার শুরুতেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপিসহ কিছু দল আন্দোলন করছে। নিজেদের পছন্দমতো সরকারের অধীনে নির্বাচন না হওয়ায় বিএনপিসহ কিছু দলের এই নির্বাচনবিরোধিতা।
আগের বছরের মধ্যভাগ থেকে বিএনপির নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলো রাজনীতির মাঠ গরম করতে তৎপর হয়ে উঠলেও এ পর্যন্ত তাদের কোনো সফলতা নেই। বিএনপির সঙ্গে তার সব সময়ের মিত্র জামায়াতে ইসলামীসহ মৌলবাদী দলগুলো প্রকাশ্যে ততটা না হলেও কৌশলে অবশ্যই রয়েছে। দলটির সঙ্গে নতুন করে যোগ দিয়েছে সাবেক বাম, মধ্য বাম কিছু গ্রুপ। অনলাইনে দেশে-বিদেশে সক্রিয় একটি গোষ্ঠীও সরকারের সমালোচনা অব্যাহত রেখেছে। সমালোচনায় কারও আপত্তি হওয়ার কথা নয়, তবে অপপ্রচারে আপত্তি করতেই হবে। বিদায়ী বছরে আমরা লক্ষ করেছি, জনজীবনে সৃষ্টি হওয়া কিছু সমস্যা নিয়ে দেশে যেমন বিরোধী দলগুলো সক্রিয় হয়ে উঠতে চেয়েছে, তেমনি অনলাইনে সক্রিয় একটি গোষ্ঠী মেতে উঠেছে অপপ্রচারে। রিজার্ভ পরিস্থিতি ও ব্যাংক খাতের কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনা নিয়ে তারা এত অপপ্রচার চালায়, যা মোকাবিলা করা সরকারের পক্ষে সহজ ছিল না। দেশ অচিরেই শ্রীলঙ্কা হয়ে যাবে বলে প্রচারণা চালিয়ে অবশ্য কোনো সুফল তারা পায়নি। দেশ শ্রীলঙ্কা হয়নি।
তবে এ কথা ঠিক, ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী কোনো কোনো ব্যাংকে সংকট তৈরি করছে এবং তারা দেশ থেকে অর্থ পাচারেও জড়িত। এদের দমনে সরকারের আন্তরিক উদ্যোগে ঘাটতির অভিযোগও আছে। নতুন বছরে নতুন সরকার যত দ্রুত পাচার, লুটপাট রোধে পদক্ষেপ নেবে, ততই আস্থা ফিরে আসবে মানুষের মনে। এর প্রভাব বিরোধী দলের আন্দোলনেও গিয়ে পড়বে।
তাদের আন্দোলনের সুযোগ আসে প্রধানত সরকারের কিছু সীমাবদ্ধতা ও ব্যর্থতা থেকে। বিদায়ী বছরে আমরা ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের অতি তৎপরতা দেখে বিস্মিত হয়েছি। এর প্রতিক্রিয়ায় আবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রগুলোর তৎপরতাও প্রকাশ্যেই দেখা গেছে। সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হয়েছে, গণতন্ত্র, নির্বাচন ও মানবাধিকারের মতো বিষয়ে বাইরের কোনো দেশের রীতিবিরুদ্ধ কথাবার্তা ও কার্যকলাপ বাংলাদেশ পছন্দ করে না। তাদের কূটনৈতিক রীতিনীতি মান্য করে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র দপ্তরকে এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় আরও সতর্ক থাকতে হবে। অনেকে মনে করেন, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক শক্তিগুলো পরস্পরের দ্বন্দ্ব-সংঘাতের একটি ক্ষেত্র করে তুলতে চায় বাংলাদেশকে। বলা বাহুল্য, দীর্ঘদিন ধরে সচেষ্ট থেকেও কার্যকর আন্দোলন রচনায় ব্যর্থ বিরোধী দল এর সুযোগ নিতে চাইছে। নতুন বছরে এ বিষয়ে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে সরকারকে। এটা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের জন্যও একটি পরীক্ষা।
আন্দোলনে অসফল বলেই এটা মনে করা ঠিক হবে না যে বিএনপির কোনো জনসমর্থন নেই। বিএনপির পেছনে জনগণের একটি বড় অংশের সমর্থন আছে। আওয়ামী লীগ নজিরবিহীনভাবে টানা তিন মেয়াদ ক্ষমতায় থাকায় দলটির জন্য কিছু জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষমতাসীনদের প্রতি মানুষের রাগ-ক্ষোভ থাকা স্বাভাবিক। অন্যায় কাজে ক্ষমতার প্রয়োগ মানুষ পছন্দ করে না। মানুষ অন্যায়ের বিরুদ্ধে ক্ষমতার প্রয়োগ দেখতে চায়।
আগের দুটি নির্বাচন ত্রুটিমুক্ত না হওয়া এবং দেশে-বিদেশে সমালোচনার কারণে এবার সরকারও চেয়েছে সবার অংশগ্রহণে একটি অর্থবহ নির্বাচন। নির্বাচন একেবারে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন হচ্ছে না। নির্বাচনে জয়ী হয়ে উন্নয়নের চলমান ধারা অব্যাহত রাখতে চাইছে ক্ষমতাসীন দল। ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ করার উচ্চাভিলাষের কথা সামনে এনেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেটি অর্জনের জন্য স্মার্ট সরকার ও প্রশাসন প্রয়োজন হবে এবং দলকেও সেভাবে প্রস্তুত করতে হবে। শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়নে নিয়োজিত থাকলে চলবে না; জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ এবং তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করতে হবে সরকার ও ক্ষমতাসীন দলকে। সংগঠনকে সচল ও রাজনৈতিক কর্মসূচিভিত্তিক কাজ বাড়াতে হবে তৃণমূল পর্যন্ত। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগকে জনগণ ভোট দিয়ে দফায় দফায় ক্ষমতায় আনলেও মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সরকারের মনোভাব বৈষম্যমূলক। বিরোধী দল তাদের মনমতো নির্বাচনের দাবিতে অরাজকতা সৃষ্টি করতে চাইলে সেটা যেমন হতে দেওয়া যাবে না, তেমনি তাদের সমালোচনা ও অপপ্রচারের যুক্তিপূর্ণ জবাবও তো দিতে হবে।
পাশাপাশি দুর্নীতি দমন ও সুশাসন নিশ্চিত করে জনগণকে আশ্বস্ত করতে হবে জনকল্যাণের বিষয়ে। অর্থনীতিতে যেসব সংকট রয়েছে, সেগুলো মোকাবিলায় পদক্ষেপও আরও জোরালো করা চাই। বেকারত্ব হ্রাস ও আয়বৈষম্য কমিয়ে আনা গেলে জনমনে স্বস্তি ফিরে আসতে সময় লাগবে না। তাতে সরকারের ওপর আস্থাও বাড়বে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত আরও শক্তিশালী হবে এতে। সবচেয়ে বড় কথা, নতুন বছরে নতুন সরকারের কাছে মানুষ নতুন ধারার রাজনীতি প্রত্যাশা করে।
মোনায়েম সরকার, রাজনীতিবিদ, লেখক ও চেয়ারম্যান, বিএফডিআর
প্রবৃদ্ধির শীর্ষে থেকেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের দৌড়ে পিছিয়ে রয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ৫০ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়েছে
২ দিন আগেদুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি, উচ্চ করহারসহ ১৭ ধরনের বাধায় বিপর্যস্ত দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। রয়েছে সামাজিক সমস্যাও।
২ দিন আগেজমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৬ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৯ দিন আগে