নির্মাণকাজের মাত্র চার মাস পরেই বেহাল হয়ে পড়েছে কুয়াকাটায় পৌঁছানোর বিকল্প সড়ক। তৈরি হয়েছে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা। উপজেলার বালিয়াতলী খেয়াঘাট থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত ২১ দশমিক ৯ কিলোমিটার সড়ক ইতিমধ্যেই বিভিন্ন পয়েন্টে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

সড়কের গর্তে পড়ে প্রায় প্রতিদিনই গুরুতর আহত হচ্ছে স্কুল, কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ পর্যটকেরা। পথচারী এবং স্থানীয়দের অভিযোগ, চলমান আমন মৌসুমে ধান সংগ্রহ করে ট্রাকে অতিরিক্ত ভারবহন করায় সড়কটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া কুয়াকাটার বিকল্প সড়ক আন্ধারমানিক নদীর ওপর নির্মিত সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতুতে টোল ফ্রি বালিয়াতলী সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। ফলে একদিকে সড়ক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, অপরদিকে সরকার লাখ লাখ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে বরাদ্দকৃত এই সড়কটির নির্মাণকাজ এ বছরের জুনে সম্পন্ন হয়েছে। আর নির্মাণকাজ পরিচালনা করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ। তবে শুরু থেকেই নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নির্মাণকাজ করা হচ্ছে বলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে আসছিলেন স্থানীয়রা।

সরেজমিনে দেখা যায়, বালিয়াতলীর বৈদ্যপাড়া চৌরাস্তা, তুলাতলী, বড় বালিয়াতলীসহ একাধিক পয়েন্টে সড়কটির বাজে অবস্থা। স্থানীয় বাসিন্দা মো. ইব্রাহীম আজকের পত্রিকাকে জানান, শনিবার স্কুলে যাওয়ার পথে ধুলাসার স্কুলের এক শিশু শিক্ষার্থী বৈদ্যপাড়া চৌরাস্তায় সড়কের ভাঙা অংশে পড়ে গিয়ে আহত হয়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য হাসপাতালে পড়ে পটুয়াখালী হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠান। এলাকাবাসী ইউসুফ ডাকুয়া এবং তাওহীদুল ইসলাম বলেন, এ সড়কে রোববার বিকেলে ধুলাসার কলেজের এক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। সে এখন উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে আছে।

এ ছাড়া ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালক মাসুদুর রহমান এবং অটোচালক আবুবকর জানান, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে সড়ক তৈরি করায় অল্প সময়ের মধ্যে তা ভেঙে পড়েছে। নির্মাণকাজে তদারকিতে অনিয়মের অভিযোগ করেছেন তারা।

বালিয়াতলী ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ূন কবির আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘৭ টনের বেশি ভারী ট্রাক চলাচলে আমি নিষেধ করেছি। কিন্তু একটি মহল তা মানছে না।’

কলাপাড়া উপজেলা প্রকৌশলী মহর আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সড়কটি ভাঙার খবর পেয়ে আমি গিয়ে দেখে এসেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই সড়কটির ভারবহন ক্ষমতা ১০ টন। কিন্তু এলাকায় মাসুদ নামের এক ধান ব্যবসায়ী ২৫–৩০ টন ট্রাক দিয়ে পণ্য পরিবহনের ফলে সড়কটির এই দশা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। তাঁদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম রাকিবুল আহসান আজকের পত্রিকাকে জানান, মূলত সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতুতে টোল না থাকায় ওই সড়ক দিয়ে একটি মহল ভারী যানবাহন প্রবেশ করাচ্ছে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে কথা বলবেন বলে জানান তিনি।