মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই তাদের

সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৭: ২১
আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৩: ০৭

অগ্নিকাণ্ডের ১৫ দিন অতিবাহিত হয়েছে। তবে আগুনে সর্বস্ব হারানো চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের ফকিরহাট পশ্চিম জেলেপাড়ার ২২ জেলে পরিবার তীব্র শীতে খোলা আকাশের নিচে দিনরাত কাটাচ্ছে।

ক্ষতিগ্রস্ত জেলে পরিবারের অভিযোগ, পূর্বশত্রুতার জেরে দুর্বৃত্তরা পেট্রল ঢেলে তাদের বসতঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। এ ঘটনায় ৪ ফেব্রুয়ারি আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত বিশ্বনাথ জলদাস বাদী হয়ে সীতাকুণ্ড থানায় মামলা করেন। অভিযোগে পূর্ববিরোধের কথা উল্লেখের পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।

গত শুক্রবার সরেজমিন জেলেপাড়ায় দেখা গেছে, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত জেলে পরিবারের বাসিন্দারা অনেকেই তাঁবু টানিয়ে বসবাস করছে। আবার কেউ প্রতিবেশীর ঘরে আশ্রয় নিয়েছে, কেউ রয়েছে খোলা আকাশের নিচে। আগুনের ভয়াবহ স্মৃতি তাদের এখনো তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।

সেদিনের দুঃসহ স্মৃতির বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন বয়োবৃদ্ধ রুই জলদাস। তিনি বলেন, ‘সেই রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষে ঘুমিয়ে যাই। রাত পৌনে ৩টার দিকে হঠাৎ ঘরের চালে আগুন দেখতে পাই। পরে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঘর থেকে বের হতে দরজা খোলার চেষ্টা করেন। কিন্তু দরজায় কেউ শিকল লাগিয়ে দিয়েছিল। পরে ঘরের পেছনে দরজা দিয়ে বের হই। বাড়ির চারপাশে পেট্রলের গন্ধ ছিল।’

রুই জলদাস আরও বলেন, ‘এ পর্যন্ত খাদ্যসামগ্রীসহ কিছু সহযোগিতা পেয়েছি। কিন্তু টাকা না থাকায় ঘর নির্মাণ করতে পারছি না। তাই তীব্র শীতে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি।’

মামলার বাদী বিশ্বনাথ জলদাস বলেন, ‘দুই বছর আগে সাগরের জাল পাতা নিয়ে উত্তরপাড়ার দুর্যোধন জলদাস নামের এক জেলের সঙ্গে তাঁর বিরোধ হয়। এরপর তাঁরা স্থানীয় প্রভাবশালী মো. শামীম, তাঁর ভাই মাসুদসহ কয়েকজনকে আমাদের পিছে লেলিয়ে দেন। তাঁরা শামীমের নেতৃত্বে সেই সময় আমাদের সাগরে বসানো সব জাল তুলে নিয়ে যান। আমাদের ঘরের পাশে থাকা ককশিটে আগুন ধরিয়ে দেন। এ ঘটনার পর শামীমসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করি। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসা হয়।’

বিশ্বনাথ জলদাস আরও বলেন, ‘একই চক্র গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর রাতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লোকজনকে এনে তাঁর ঘরে তল্লাশি চালায়। কিছু না পেয়ে পরে তাঁকে সীতাকুণ্ড বাজারে ডেকে নিয়ে মিথ্যা মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়ে জেলহাজতে পাঠায়। জেল থেকে ২৮ জানুয়ারি জামিনে বের হয়ে আসি। পরের দিন রাতে তাঁকে ও তাঁর পরিবারের লোকজনকে মেরে ফেলতে বাইরে থেকে দরজার শিকল লাগিয়ে ঘরে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।’

অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষ্ণমন্দিরের সেবায়েত সুদেবী বালা জলদাস বলেন, আগুন লাগার এক ঘণ্টা আগে তিনি ঘর থেকে বের হন। এ সময় দুর্বৃত্তরা তাঁকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ে মারে। তবে পাথর তাঁর পাশে পড়ে। পরে তিনি ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন। আধঘণ্টা পর আগুনের দাবানল দেখে ঘর থেকে বের হন।

এ বিষয়ে শামীম বলেন, ‘বিশ্বনাথ জলদাসের সঙ্গে তাঁর কোনো বিরোধ নেই। তাঁর অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মনগড়া। জেলেপাড়ায় সমস্যা হলে দুপক্ষই সমাধানের জন্য তাঁর কাছে ছুটে আসে। আমি সাধ্যমতো সমাধানের চেষ্টা করি।’ তিনি আরও বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যদি কেউ জড়িত থাকে, তাকে যেন আইনের আওতায় আনা হয়।

এ বিষয়ে জানতে দুর্যোধন জলদাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

এ বিষয়ে সীতাকুণ্ড থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন বণিক বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত জেলে বিশ্বনাথ জলদাস বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলাটির তদন্ত চলছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত