শাইখ সিরাজ
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার ঠাকুরছড়া নতুন বাজার এলাকার বাসিন্দা নিপু ত্রিপুরা। পার্বত্য এলাকার আর দশজন নারীর মতোই অনেকটা অনিশ্চয়তায় ভরা ছিল তাঁর জীবন। ছোট একটি মুদিদোকান ছিল। করোনাকালে সেটিও বন্ধ হয়ে যায়। এমন সংকটময় সময়েই স্বপ্ন ও বাস্তবের সঠিক সংযোগে একজন উদ্যোক্তা হয়ে ওঠেন নিপু ত্রিপুরা। তাঁর গল্প বলার আগে বলে রাখতে চাই, টেলিভিশন কিংবা গণমাধ্যম আজকের কৃষি বিকাশে, নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে, অসংখ্য বেকারের কর্মসংস্থান তৈরিতে ভূমিকা রেখেছে। আর এই সময়ে এসে যখন হাতের মুঠোয় থাকা ফোনটিই হয়ে উঠেছে পৃথিবীর তাবৎ তথ্যের ভান্ডার, তখন মানুষ খুব দ্রুত জেনে যাচ্ছে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের খবর। নিপু ত্রিপুরা যখন দিশেহারা—কী করবেন, কীভাবে চলবে সংসার, তখন ইউটিউবে দেখেন মাগুরার বাবুল আক্তারের মাশরুম চাষবিষয়ক প্রতিবেদন। এই দেখে মাশরুম চাষ করে নিজের জীবিকা উপার্জনের চিন্তা মাথায় এল।
মাগুরার বাবুল আক্তারের মাশরুম উদ্যোগ যখন আমি চ্যানেল আইয়ের হৃদয়ে মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানে তুলে ধরি, সেটি ছিল দারুণ সাড়াজাগানো এক চিত্র। লেখাপড়ায় খুব একটা অগ্রসর হতে পারেননি বাবুল। দারিদ্র্যের কারণে মাধ্যমিকের গণ্ডিও পার হওয়া হয়নি তাঁর। সঙ্গে রয়েছে শারীরিক প্রতিবন্ধিতাও। মাশরুম নিয়ে বাবুলের স্বপ্নের পথে যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৭ সালে। মাগুরায় এক চিকিৎসকের সাহায্যকারী হিসেবে কাজ করতেন তিনি। তাঁর কাছেই প্রথম মাশরুম সম্পর্কে জানতে পারেন। ওই চিকিৎসকের সহায়তায় যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার সেন্টারে তিন দিনের মাশরুম চাষবিষয়ক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাঁর হাতেখড়ি। প্রশিক্ষণ শেষে বিনা মূল্যে পাওয়া ১০টি মাশরুমের বীজ দিয়ে মাশরুম চাষ শুরু করেন তিনি। প্রথম দিকে দিনে এক থেকে দেড় কেজি মাশরুম উৎপাদিত হতো, যেটা স্থানীয় বাজারে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করতেন বাবুল নিজেই। এরপর ২০০৮ সালে মাগুরা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে সমন্বিত কৃষি প্রশিক্ষণেও মাশরুম চাষ সম্পর্কে ধারণা পান বাবুল। সে বছরেই সাভার মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউটে দুই মাসের ইন্ডাস্ট্রিয়াল মাশরুম চাষে প্রশিক্ষণ নেন। এরপর বাবুল মাশরুমের বীজ উৎপাদন শুরু করেন। বড়খড়ি গ্রামে গড়ে তোলেন বাবুলের ড্রিম মাশরুম সেন্টার। তাঁর গ্রামের নারীদের উদ্বুদ্ধ করে যুক্ত করেন মাশরুম চাষে। জেলাভিত্তিক মাশরুমের বিপণন শুরু করেন বাবুল। আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। বাবুলের সাফল্যে বড়খড়ি গ্রামটি পরিচিতি পেয়েছে ‘মাশরুম ভিলেজ’ হিসেবে। বাবুলের প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক আয় প্রায় অর্ধকোটি টাকা। তাঁর নেতৃত্বে সারা দেশে কাজ করছেন পাঁচ শতাধিক কর্মী। বাবুল হয়ে ওঠেন হাজার হাজার তরুণের অনুপ্রেরণা।
বলছিলাম নিপু ত্রিপুরার কথা। বাবুল আক্তারের সাফল্যের চিত্র দেখে তিনিও সিদ্ধান্ত নেন মাশরুম চাষ করবেন। কিন্তু তাঁর তো কোনো প্রশিক্ষণ নেই। প্রশিক্ষণের জন্য তিনি গেলেন খাগড়াছড়িতে। সেখানে কোথাও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। তিনি থেমে গেলেন না। বাবুল আক্তারের কাছে মাগুরায় ছুটে গেলেন। সেখানে বাবুলের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিরে এসে শুরু করলেন মাশরুম চাষ। স্বামীর কাছ থেকে তিন লাখ টাকা নিয়ে বেশ ভালোভাবেই সূচনা হয় তাঁর মাশরুম চাষের। প্রথম দিকে লাভ হলেও পরবর্তী সময়ে স্পন সংকটে পড়েন নিপু ত্রিপুরা।
নিপু ত্রিপুরার কথা বলতে বলতেই মনে পড়ছে নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানে একসময় তরুণ মাশরুম চাষ উদ্যোক্তা জাহাঙ্গীরের ওপর প্রতিবেদন তুলে ধরেছিলাম। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে অনেক মাশরুম উদ্যোক্তার চিত্র তুলে ধরেছি। দেশের অনেক জায়গায়ই গৃহস্থ নারীরা ঘরোয়া পরিসরে মাশরুম চাষ করেন। অনেক জায়গায় মাশরুম চাষ, মাশরুমজাত খাবার তৈরি ও বাণিজ্য গড়ে উঠেছে। নীলফামারীর সৈয়দপুরে মাশরুম চাষ উদ্যোক্তা আব্দুল আজিজের মাশরুম উৎপাদন ও বাজারজাত বিষয়ে একাধিক প্রতিবেদনও তুলে ধরেছি। এসব প্রতিবেদনের মাধ্যমে অনেক নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে।
তারপরও অনেকেই চাষ ও বাণিজ্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারছেন না। অনেকেই মাশরুম চাষ করে কার্যকর সাফল্যের পথে অগ্রসর হতে পারছেন না। এ ক্ষেত্রে নিপু ত্রিপুরা এক ব্যতিক্রমী উদাহরণ। আশার কথা, প্রথম বছরেই মাশরুমের বীজ বিক্রি করে তিনি ৯ লাখ টাকা লাভ করেন। এখন প্রতি মাসে ১০-১২ হাজার স্পন উৎপাদন করছেন। অল্পদিনেই প্রতি মাসে ২০-২৫ হাজার বীজ উৎপাদনের স্বপ্ন দেখছেন। ইতিমধ্যে নিপুর খামারে নিশ্চিত হয়েছে ৮ জন নারী শ্রমিকের কর্মসংস্থান।
সবচেয়ে আশার কথা, নিপু ত্রিপুরা এই অল্প সময়ের ভেতরই নিজেকে গড়ে তুলেছেন একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে। তাঁর উদ্যোগেই সংগঠিত হচ্ছেন গ্রামের অসহায় নারীরা। ২০ জন সদস্য নিয়ে গড়ে তুলেছেন সমবায় সমিতি। এই সমিতির মাধ্যমে গ্রামের নারীদের বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন তিনি। নিপু ত্রিপুরা এখন স্বপ্ন দেখছেন মাশরুমের মাতৃজাত উৎপাদনের। তিনি বলেন, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মাতৃজাত আনতে হয়। এতে অনেক সময় লোকসানের মুখে পড়তে হয়। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে তিনি ঢাকার সাভারে যোগাযোগ করেছেন। এ ক্ষেত্রে সরকারি সহযোগিতা প্রত্যাশা করছেন তিনি।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মাশরুম অত্যন্ত সম্ভাবনাময় ফসল। মাশরুম যেমন একটি পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও ঔষধিগুণসম্পন্ন খাবার, তেমনি তা চাষ করার জন্য কোনো আবাদি জমির প্রয়োজন হয় না। ঘনবসতিপূর্ণ ও দ্রুত বর্ধনশীল জনসংখ্যার বাংলাদেশে খাবারের চাহিদা বাড়ছে অথচ খাবার জোগান দেওয়ার জমি প্রতিবছর কমছে। এ অবস্থায় অনুৎপাদনশীল ফেলনা জমির স্বল্প পরিমাণ ব্যবহার করেই বিপুল পরিমাণ মাশরুম উৎপাদন করা যায়। তা ছাড়া, বাংলাদেশের আবহাওয়া সারা বছর মাশরুম চাষের জন্য উপযোগী। দেশে মাশরুম চাষের উৎপাদন মাধ্যমের (যেমন খড়) পর্যাপ্ততা রয়েছে। মাশরুম চাষ পরিবেশবান্ধব ও প্রাকৃতিক দুর্যোগসহনশীল। মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের তথ্যানুসারে, মাশরুম উৎপাদনের পরিধি দ্রুত বড় হচ্ছে। দেশে বর্তমানে প্রতিবছর প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন মাশরুম উৎপাদন হচ্ছে, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। প্রায় দেড় লাখ মানুষ মাশরুম ও মাশরুমজাত পণ্য উৎপাদন ও বিপণনসংশ্লিষ্ট কাজে যুক্ত হয়েছেন। বিশ্বের অর্থনৈতিকভাবে উন্নত প্রায় সব দেশই মাশরুম আমদানি করে থাকে। বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাশরুম রপ্তানির অনেক সুযোগ রয়েছে।
আমাদের দেশের কৃষিতে মাশরুম রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। এর মধ্য দিয়ে নিশ্চিত হতে পারে বহু বেকারের কর্মসংস্থান। সেই শুরু থেকেই মাশরুম নিয়ে স্বপ্নের জায়গাটি ছিল অনেক বড়। এর কিছু অংশ বাস্তবে সম্ভব হচ্ছে। ভেতরে-ভেতরে অনেকেই শ্রম, নিষ্ঠা নিয়ে এগিয়ে সাফল্যের নজির গড়ছেন। কিন্তু খাদ্য ও পুষ্টিতে মাশরুম এখনো অপরিহার্য একটি উপাদান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারিনি আমরা। এখনো যাঁরা আমাদের সামনে আশার আলো জ্বালাচ্ছেন, তাঁদেরই একজন নিপু ত্রিপুরা। আমি আশা করি, যে স্বপ্ন নিয়ে মাশরুমের পথ চলা শুরু হয়েছিল, তাঁর মতো উদ্যোক্তার হাত ধরেই সেই স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যাবে দেশ।
শাইখ সিরাজ, কৃষি ও গণমাধ্যমব্যক্তিত্ব; পরিচালক ও বার্তাপ্রধান, চ্যানেল আই
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার ঠাকুরছড়া নতুন বাজার এলাকার বাসিন্দা নিপু ত্রিপুরা। পার্বত্য এলাকার আর দশজন নারীর মতোই অনেকটা অনিশ্চয়তায় ভরা ছিল তাঁর জীবন। ছোট একটি মুদিদোকান ছিল। করোনাকালে সেটিও বন্ধ হয়ে যায়। এমন সংকটময় সময়েই স্বপ্ন ও বাস্তবের সঠিক সংযোগে একজন উদ্যোক্তা হয়ে ওঠেন নিপু ত্রিপুরা। তাঁর গল্প বলার আগে বলে রাখতে চাই, টেলিভিশন কিংবা গণমাধ্যম আজকের কৃষি বিকাশে, নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে, অসংখ্য বেকারের কর্মসংস্থান তৈরিতে ভূমিকা রেখেছে। আর এই সময়ে এসে যখন হাতের মুঠোয় থাকা ফোনটিই হয়ে উঠেছে পৃথিবীর তাবৎ তথ্যের ভান্ডার, তখন মানুষ খুব দ্রুত জেনে যাচ্ছে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের খবর। নিপু ত্রিপুরা যখন দিশেহারা—কী করবেন, কীভাবে চলবে সংসার, তখন ইউটিউবে দেখেন মাগুরার বাবুল আক্তারের মাশরুম চাষবিষয়ক প্রতিবেদন। এই দেখে মাশরুম চাষ করে নিজের জীবিকা উপার্জনের চিন্তা মাথায় এল।
মাগুরার বাবুল আক্তারের মাশরুম উদ্যোগ যখন আমি চ্যানেল আইয়ের হৃদয়ে মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানে তুলে ধরি, সেটি ছিল দারুণ সাড়াজাগানো এক চিত্র। লেখাপড়ায় খুব একটা অগ্রসর হতে পারেননি বাবুল। দারিদ্র্যের কারণে মাধ্যমিকের গণ্ডিও পার হওয়া হয়নি তাঁর। সঙ্গে রয়েছে শারীরিক প্রতিবন্ধিতাও। মাশরুম নিয়ে বাবুলের স্বপ্নের পথে যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৭ সালে। মাগুরায় এক চিকিৎসকের সাহায্যকারী হিসেবে কাজ করতেন তিনি। তাঁর কাছেই প্রথম মাশরুম সম্পর্কে জানতে পারেন। ওই চিকিৎসকের সহায়তায় যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার সেন্টারে তিন দিনের মাশরুম চাষবিষয়ক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাঁর হাতেখড়ি। প্রশিক্ষণ শেষে বিনা মূল্যে পাওয়া ১০টি মাশরুমের বীজ দিয়ে মাশরুম চাষ শুরু করেন তিনি। প্রথম দিকে দিনে এক থেকে দেড় কেজি মাশরুম উৎপাদিত হতো, যেটা স্থানীয় বাজারে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করতেন বাবুল নিজেই। এরপর ২০০৮ সালে মাগুরা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে সমন্বিত কৃষি প্রশিক্ষণেও মাশরুম চাষ সম্পর্কে ধারণা পান বাবুল। সে বছরেই সাভার মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউটে দুই মাসের ইন্ডাস্ট্রিয়াল মাশরুম চাষে প্রশিক্ষণ নেন। এরপর বাবুল মাশরুমের বীজ উৎপাদন শুরু করেন। বড়খড়ি গ্রামে গড়ে তোলেন বাবুলের ড্রিম মাশরুম সেন্টার। তাঁর গ্রামের নারীদের উদ্বুদ্ধ করে যুক্ত করেন মাশরুম চাষে। জেলাভিত্তিক মাশরুমের বিপণন শুরু করেন বাবুল। আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। বাবুলের সাফল্যে বড়খড়ি গ্রামটি পরিচিতি পেয়েছে ‘মাশরুম ভিলেজ’ হিসেবে। বাবুলের প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক আয় প্রায় অর্ধকোটি টাকা। তাঁর নেতৃত্বে সারা দেশে কাজ করছেন পাঁচ শতাধিক কর্মী। বাবুল হয়ে ওঠেন হাজার হাজার তরুণের অনুপ্রেরণা।
বলছিলাম নিপু ত্রিপুরার কথা। বাবুল আক্তারের সাফল্যের চিত্র দেখে তিনিও সিদ্ধান্ত নেন মাশরুম চাষ করবেন। কিন্তু তাঁর তো কোনো প্রশিক্ষণ নেই। প্রশিক্ষণের জন্য তিনি গেলেন খাগড়াছড়িতে। সেখানে কোথাও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। তিনি থেমে গেলেন না। বাবুল আক্তারের কাছে মাগুরায় ছুটে গেলেন। সেখানে বাবুলের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিরে এসে শুরু করলেন মাশরুম চাষ। স্বামীর কাছ থেকে তিন লাখ টাকা নিয়ে বেশ ভালোভাবেই সূচনা হয় তাঁর মাশরুম চাষের। প্রথম দিকে লাভ হলেও পরবর্তী সময়ে স্পন সংকটে পড়েন নিপু ত্রিপুরা।
নিপু ত্রিপুরার কথা বলতে বলতেই মনে পড়ছে নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানে একসময় তরুণ মাশরুম চাষ উদ্যোক্তা জাহাঙ্গীরের ওপর প্রতিবেদন তুলে ধরেছিলাম। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে অনেক মাশরুম উদ্যোক্তার চিত্র তুলে ধরেছি। দেশের অনেক জায়গায়ই গৃহস্থ নারীরা ঘরোয়া পরিসরে মাশরুম চাষ করেন। অনেক জায়গায় মাশরুম চাষ, মাশরুমজাত খাবার তৈরি ও বাণিজ্য গড়ে উঠেছে। নীলফামারীর সৈয়দপুরে মাশরুম চাষ উদ্যোক্তা আব্দুল আজিজের মাশরুম উৎপাদন ও বাজারজাত বিষয়ে একাধিক প্রতিবেদনও তুলে ধরেছি। এসব প্রতিবেদনের মাধ্যমে অনেক নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে।
তারপরও অনেকেই চাষ ও বাণিজ্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারছেন না। অনেকেই মাশরুম চাষ করে কার্যকর সাফল্যের পথে অগ্রসর হতে পারছেন না। এ ক্ষেত্রে নিপু ত্রিপুরা এক ব্যতিক্রমী উদাহরণ। আশার কথা, প্রথম বছরেই মাশরুমের বীজ বিক্রি করে তিনি ৯ লাখ টাকা লাভ করেন। এখন প্রতি মাসে ১০-১২ হাজার স্পন উৎপাদন করছেন। অল্পদিনেই প্রতি মাসে ২০-২৫ হাজার বীজ উৎপাদনের স্বপ্ন দেখছেন। ইতিমধ্যে নিপুর খামারে নিশ্চিত হয়েছে ৮ জন নারী শ্রমিকের কর্মসংস্থান।
সবচেয়ে আশার কথা, নিপু ত্রিপুরা এই অল্প সময়ের ভেতরই নিজেকে গড়ে তুলেছেন একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে। তাঁর উদ্যোগেই সংগঠিত হচ্ছেন গ্রামের অসহায় নারীরা। ২০ জন সদস্য নিয়ে গড়ে তুলেছেন সমবায় সমিতি। এই সমিতির মাধ্যমে গ্রামের নারীদের বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন তিনি। নিপু ত্রিপুরা এখন স্বপ্ন দেখছেন মাশরুমের মাতৃজাত উৎপাদনের। তিনি বলেন, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মাতৃজাত আনতে হয়। এতে অনেক সময় লোকসানের মুখে পড়তে হয়। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে তিনি ঢাকার সাভারে যোগাযোগ করেছেন। এ ক্ষেত্রে সরকারি সহযোগিতা প্রত্যাশা করছেন তিনি।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মাশরুম অত্যন্ত সম্ভাবনাময় ফসল। মাশরুম যেমন একটি পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও ঔষধিগুণসম্পন্ন খাবার, তেমনি তা চাষ করার জন্য কোনো আবাদি জমির প্রয়োজন হয় না। ঘনবসতিপূর্ণ ও দ্রুত বর্ধনশীল জনসংখ্যার বাংলাদেশে খাবারের চাহিদা বাড়ছে অথচ খাবার জোগান দেওয়ার জমি প্রতিবছর কমছে। এ অবস্থায় অনুৎপাদনশীল ফেলনা জমির স্বল্প পরিমাণ ব্যবহার করেই বিপুল পরিমাণ মাশরুম উৎপাদন করা যায়। তা ছাড়া, বাংলাদেশের আবহাওয়া সারা বছর মাশরুম চাষের জন্য উপযোগী। দেশে মাশরুম চাষের উৎপাদন মাধ্যমের (যেমন খড়) পর্যাপ্ততা রয়েছে। মাশরুম চাষ পরিবেশবান্ধব ও প্রাকৃতিক দুর্যোগসহনশীল। মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের তথ্যানুসারে, মাশরুম উৎপাদনের পরিধি দ্রুত বড় হচ্ছে। দেশে বর্তমানে প্রতিবছর প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন মাশরুম উৎপাদন হচ্ছে, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। প্রায় দেড় লাখ মানুষ মাশরুম ও মাশরুমজাত পণ্য উৎপাদন ও বিপণনসংশ্লিষ্ট কাজে যুক্ত হয়েছেন। বিশ্বের অর্থনৈতিকভাবে উন্নত প্রায় সব দেশই মাশরুম আমদানি করে থাকে। বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাশরুম রপ্তানির অনেক সুযোগ রয়েছে।
আমাদের দেশের কৃষিতে মাশরুম রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। এর মধ্য দিয়ে নিশ্চিত হতে পারে বহু বেকারের কর্মসংস্থান। সেই শুরু থেকেই মাশরুম নিয়ে স্বপ্নের জায়গাটি ছিল অনেক বড়। এর কিছু অংশ বাস্তবে সম্ভব হচ্ছে। ভেতরে-ভেতরে অনেকেই শ্রম, নিষ্ঠা নিয়ে এগিয়ে সাফল্যের নজির গড়ছেন। কিন্তু খাদ্য ও পুষ্টিতে মাশরুম এখনো অপরিহার্য একটি উপাদান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারিনি আমরা। এখনো যাঁরা আমাদের সামনে আশার আলো জ্বালাচ্ছেন, তাঁদেরই একজন নিপু ত্রিপুরা। আমি আশা করি, যে স্বপ্ন নিয়ে মাশরুমের পথ চলা শুরু হয়েছিল, তাঁর মতো উদ্যোক্তার হাত ধরেই সেই স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যাবে দেশ।
শাইখ সিরাজ, কৃষি ও গণমাধ্যমব্যক্তিত্ব; পরিচালক ও বার্তাপ্রধান, চ্যানেল আই
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৬ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৬ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে