চলতি মাসের মাঝামাঝি সারা বিশ্ব আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস পালন করেছে। প্রতিবছর ১৫ সেপ্টেম্বর দিবসটি পালিত হয়। তবে এই দিবস পালনের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পিছু হটার বিষয়টিকে খুব একটা আড়াল করা যাচ্ছে না। এটা এখন সারা বিশ্বে প্রকট আকার ধারণ করেছে। পাকিস্তানেও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অবনমন ঘটছে।
বিশ্বের অনেক গণতন্ত্রই মেরুকরণ, অসহিষ্ণুতা ও বিষাক্ত রাজনীতির চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। সেই সব স্থানে নাগরিক অধিকার ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে এবং ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন করা হচ্ছে। আবার এসব যখন ঘটছে, তার পটভূমিতে থাকছে অর্থনৈতিক চাপ এবং ক্রমেই তা বাড়ছে; কিন্তু জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে না।
আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং প্রকাশনার বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অবনমনের বৈশ্বিক প্রবণতার প্রমাণ তুলে ধরা হয়েছে। সুইডেনভিত্তিক ভি-ডেম ইনস্টিটিউটের বার্ষিক ডেমোক্রেসি রিপোর্ট ২০২৩ দেখিয়েছে, অনেক অঞ্চলে গণতন্ত্রের অবনতি হয়েছে, বিশ্ববাসী যে গণতন্ত্র উপভোগ করত তা ১৯৮৬ সালের স্তরে নেমে এসেছে।
৩৫ বছরের বেশি সময় ধরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার যে অগ্রগতি হয়েছিল, এক দশকে তা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ভি-ডেম ইনস্টিটিউট তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে, দুই দশকের বেশি সময়ের মধ্যে প্রথমবারের মতো উদার গণতন্ত্রের চেয়ে ‘রুদ্ধ স্বৈরাচার’ বেশি আছে, বর্তমান ‘স্বৈরাচারীকরণের ঢেউ’ সব অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিষ্ঠানটি আরও লিখেছে যে বিশ্বের জনসংখ্যার ৭২ শতাংশ (৫৭০ কোটি মানুষ) স্বৈরশাসনব্যবস্থায় বসবাস করে, যা এক দশক আগে ছিল ৪৬ শতাংশ। ফলে প্রবৃদ্ধিটা অনেক।
দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) ১৬৭টি দেশে গণতান্ত্রিক অবস্থার (হেলথ অব ডেমোক্রেসি) ওপর একটি বার্ষিক জরিপ পরিচালনা করে। পাঁচটি মানদণ্ডে এ মূল্যায়ন করা হয়। এগুলো হলো নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও বহুত্ববাদ, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ, জনস্বার্থে কাজ করে এমন একটি কার্যকর সরকার, নাগরিক স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি। প্রতিষ্ঠানটির ২০২২ সালের প্রতিবেদনের উপসংহারে বলা হয়েছে যে বিশ্বের মাত্র ৮ শতাংশ মানুষ একটি ‘পূর্ণ গণতান্ত্রিক’ ব্যবস্থায় বাস করে, এক-তৃতীয়াংশের বেশি কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থায়, ৩৭ শতাংশ ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্রে এবং ১৮ শতাংশ একটি হাইব্রিড গণতন্ত্রে বাস করে, যে গণতন্ত্র বিরাজ করছে পাকিস্তানে।
স্টকহোমভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ইলেকটোরাল অ্যাসিস্ট্যান্স (আইডিইএ) তার গ্লোবাল স্টেট অব ডেমোক্রেসি ২০২২ শীর্ষক সর্বশেষ প্রতিবেদনে লিখেছে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রেকর্ড পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে।
প্রতিবেদনে গণতন্ত্রের দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়া দেশগুলোর তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রও রয়েছে। দেশটিতে ‘রাজনৈতিক মেরুকরণ, প্রাতিষ্ঠানিক অকার্যকারিতার সমস্যা এবং নাগরিক স্বাধীনতা হুমকির’ সম্মুখীন। তালিকার বাকি দেশগুলোর মধ্যে ভারত ও ব্রাজিল রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলো দমন-পীড়ন জোরদার করেছে এবং আগের বছরের রেকর্ড সবচেয়ে খারাপ ছিল।
ওয়াশিংটনভিত্তিক ফ্রিডম হাউসের একটি সাম্প্রতিক মূল্যায়ন একই ধরনের উপসংহার টেনেছে। এতে বলা হয়েছে, টানা ১৭ বছর ধরে বিশ্বব্যাপী স্বাধীনতা হ্রাস পেয়েছে। বেশ কয়েকটি দেশে নাগরিক স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক অধিকার ক্ষুণ্ন হয়েছে। এতে সুশীল সমাজের সংগঠনগুলোর ওপর দমন-পীড়ন এবং নির্বাচনের মান খারাপের বিষয়টিও জড়িত। গত বছর ৩৫টি দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অবনতি ঘটেছে এবং ৪৭টি দেশের গণমাধ্যম কঠোর সরকারি সেন্সরশিপের সম্মুখীন হয়েছে।
এসব থেকে এটা স্পষ্ট, গণতন্ত্রের মুখোশ পরা অনেক দেশেই এখন নির্বাচন কারচুপির দোষে দুষ্ট, নীতি অতি সংকীর্ণ, নাগরিক অধিকারগুলো দমন করা হয়, সংবাদমাধ্যমের মুখ বন্ধ রাখে, আইনের শাসনকে দুর্বল করে, সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোকে নিপীড়ন করে এবং সরকারকে জবাবদিহির মধ্যে রাখে এমন যেকোনো চেক অ্যান্ড ব্যালান্সের সিস্টেমকে অগ্রাহ্য করে।
এসব অনুদার গণতন্ত্রের বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হয়, এ ধরনের শাসন সাম্প্রতিককালে ডানপন্থীবাদের উত্থানের সঙ্গে অনেক বেশি সম্পর্কযুক্ত। ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড ও অস্ট্রিয়ার মতো বিভিন্ন দেশে লোকরঞ্জনবাদী নেতারা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং রীতিনীতির প্রতি অবজ্ঞা দেখিয়েছেন, স্বৈরাচারী আচরণে যুক্ত রয়েছেন এবং জনসমাবেশে উগ্র জাতীয়তাবাদী কথাবার্তা ব্যবহার করেছেন। এগুলো তাঁদের সমাজকে গভীরভাবে বিভক্ত ও মেরুকরণ করেছে।
সম্প্রতি দ্য ইকোনমিস্টের ‘ভ্রান্ত জাতীয়তাবাদ’ নামে এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, এই লোকরঞ্জনবাদী নেতারা ক্ষমতায় থাকার জন্য ‘জনগণের ভীতি’কে চাগিয়ে রাখার জন্য প্রার্থনা করেন। আর এই ভীতি ছড়াতে ও বাঁচিয়ে রাখতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারকে জবাবদিহির আওতায় আনে এমন সব প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করা হয়—মুক্ত গণমাধ্যম, স্বাধীন বিচারব্যবস্থা, এনজিও এবং তাঁবেদার বিরোধী দল।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পশ্চাৎপদতার বৈশ্বিক প্রবণতা এই প্রশ্ন তোলে যে বহুত্ববাদবিরোধী লোকরঞ্জনবাদী নেতাদের উত্থানের জন্য দায়ী অন্তর্নিহিত কারণগুলো কী হতে পারে। প্রতিটি দেশের বিষয় আলাদা, তাই সেখানে কোনো অভিন্ন বিষয় নেই। তবে কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য আলাদা করা যেতে পারে, যদিও এটি একটি সম্পূর্ণ তালিকা নয়।
গণতন্ত্র বা এর অভাব নিয়ে পাকিস্তানের অভিজ্ঞতা কী? দেশটির অস্থির রাজনৈতিক অতীতে দীর্ঘ সামরিক শাসন এবং ভঙ্গুর বেসামরিক গণতান্ত্রিক সরকারের সময়ের মধ্যে ঘুরপাক খেতে দেখা গেছে।
এমনকি ১৯৮৮ সাল-পরবর্তী গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধার এবং পরবর্তী ‘গণতান্ত্রিক দশকে’ সামরিক বাহিনীর সমর্থনে প্রেসিডেন্ট দ্বারা নির্বাচিত সরকারগুলোকে ক্ষমতাচ্যুত করতে দেখা যায়, যাদের কেউ তাদের মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে তিক্ত দ্বন্দ্ব, বিরোধীদের প্রতি সহনশীলতার অভাব, রাজনীতির সর্বস্তরে কারসাজি এবং গণতান্ত্রিক শাসনকে দুর্বল করতে সক্ষম হয়।
২০০৮ সালে আরেকটি গণতান্ত্রিক পর্যায় শুরু হয়, যেখানে রাজনৈতিক নেতাদের পারস্পরিক সহনশীলতা ও নাগরিক স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন এবং গণমাধ্যমগুলোর তুলনামূলকভাবে মুক্ত পরিবেশে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারার অনেক ভালো রেকর্ড গড়ে।
কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচন হাইব্রিড শাসনের একটি সময়ের সূচনা করেছিল, যা আজও অব্যাহত রয়েছে। ২০১৮-এর পরের সময়টি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পিছু হটা এবং বিপরীতমুখীতা দেখেছে। কারণ হাইব্রিড বিন্যাস সামরিক প্রতিষ্ঠানকে রাজনীতি, শাসন ও এমনকি অর্থনীতিতে একটি বিস্তৃত ভূমিকা অর্জন করতে বাধ্য করেছে। এর সঙ্গে বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দুর্নীতির মামলা, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও কর্মীদের জেল, গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ, আইনের শাসনের অবমাননা এবং সংসদকে গুরুত্বহীন করা হয়েছে।
দ্য পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অব লেজিসলেটিভ ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ট্রান্সপারেন্সি সঠিকভাবে গত মাসে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার বিষয়টি বর্ণনা করেছে। বলেছে, এটা গণতন্ত্রকে সংহত করার পরিবর্তে অবনমন ঘটাবে। পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ এর চেয়ে কি আলাদা কিছু হবে? আসলেই এ প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই।
(পাকিস্তানের ডন পত্রিকায় প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে ভাষান্তর করা হয়েছে)
মালিহা লোধি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাতিসংঘে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত
চলতি মাসের মাঝামাঝি সারা বিশ্ব আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস পালন করেছে। প্রতিবছর ১৫ সেপ্টেম্বর দিবসটি পালিত হয়। তবে এই দিবস পালনের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পিছু হটার বিষয়টিকে খুব একটা আড়াল করা যাচ্ছে না। এটা এখন সারা বিশ্বে প্রকট আকার ধারণ করেছে। পাকিস্তানেও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অবনমন ঘটছে।
বিশ্বের অনেক গণতন্ত্রই মেরুকরণ, অসহিষ্ণুতা ও বিষাক্ত রাজনীতির চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। সেই সব স্থানে নাগরিক অধিকার ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে এবং ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন করা হচ্ছে। আবার এসব যখন ঘটছে, তার পটভূমিতে থাকছে অর্থনৈতিক চাপ এবং ক্রমেই তা বাড়ছে; কিন্তু জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে না।
আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং প্রকাশনার বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অবনমনের বৈশ্বিক প্রবণতার প্রমাণ তুলে ধরা হয়েছে। সুইডেনভিত্তিক ভি-ডেম ইনস্টিটিউটের বার্ষিক ডেমোক্রেসি রিপোর্ট ২০২৩ দেখিয়েছে, অনেক অঞ্চলে গণতন্ত্রের অবনতি হয়েছে, বিশ্ববাসী যে গণতন্ত্র উপভোগ করত তা ১৯৮৬ সালের স্তরে নেমে এসেছে।
৩৫ বছরের বেশি সময় ধরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার যে অগ্রগতি হয়েছিল, এক দশকে তা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ভি-ডেম ইনস্টিটিউট তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে, দুই দশকের বেশি সময়ের মধ্যে প্রথমবারের মতো উদার গণতন্ত্রের চেয়ে ‘রুদ্ধ স্বৈরাচার’ বেশি আছে, বর্তমান ‘স্বৈরাচারীকরণের ঢেউ’ সব অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিষ্ঠানটি আরও লিখেছে যে বিশ্বের জনসংখ্যার ৭২ শতাংশ (৫৭০ কোটি মানুষ) স্বৈরশাসনব্যবস্থায় বসবাস করে, যা এক দশক আগে ছিল ৪৬ শতাংশ। ফলে প্রবৃদ্ধিটা অনেক।
দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) ১৬৭টি দেশে গণতান্ত্রিক অবস্থার (হেলথ অব ডেমোক্রেসি) ওপর একটি বার্ষিক জরিপ পরিচালনা করে। পাঁচটি মানদণ্ডে এ মূল্যায়ন করা হয়। এগুলো হলো নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও বহুত্ববাদ, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ, জনস্বার্থে কাজ করে এমন একটি কার্যকর সরকার, নাগরিক স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি। প্রতিষ্ঠানটির ২০২২ সালের প্রতিবেদনের উপসংহারে বলা হয়েছে যে বিশ্বের মাত্র ৮ শতাংশ মানুষ একটি ‘পূর্ণ গণতান্ত্রিক’ ব্যবস্থায় বাস করে, এক-তৃতীয়াংশের বেশি কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থায়, ৩৭ শতাংশ ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্রে এবং ১৮ শতাংশ একটি হাইব্রিড গণতন্ত্রে বাস করে, যে গণতন্ত্র বিরাজ করছে পাকিস্তানে।
স্টকহোমভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ইলেকটোরাল অ্যাসিস্ট্যান্স (আইডিইএ) তার গ্লোবাল স্টেট অব ডেমোক্রেসি ২০২২ শীর্ষক সর্বশেষ প্রতিবেদনে লিখেছে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রেকর্ড পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে।
প্রতিবেদনে গণতন্ত্রের দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়া দেশগুলোর তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রও রয়েছে। দেশটিতে ‘রাজনৈতিক মেরুকরণ, প্রাতিষ্ঠানিক অকার্যকারিতার সমস্যা এবং নাগরিক স্বাধীনতা হুমকির’ সম্মুখীন। তালিকার বাকি দেশগুলোর মধ্যে ভারত ও ব্রাজিল রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলো দমন-পীড়ন জোরদার করেছে এবং আগের বছরের রেকর্ড সবচেয়ে খারাপ ছিল।
ওয়াশিংটনভিত্তিক ফ্রিডম হাউসের একটি সাম্প্রতিক মূল্যায়ন একই ধরনের উপসংহার টেনেছে। এতে বলা হয়েছে, টানা ১৭ বছর ধরে বিশ্বব্যাপী স্বাধীনতা হ্রাস পেয়েছে। বেশ কয়েকটি দেশে নাগরিক স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক অধিকার ক্ষুণ্ন হয়েছে। এতে সুশীল সমাজের সংগঠনগুলোর ওপর দমন-পীড়ন এবং নির্বাচনের মান খারাপের বিষয়টিও জড়িত। গত বছর ৩৫টি দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অবনতি ঘটেছে এবং ৪৭টি দেশের গণমাধ্যম কঠোর সরকারি সেন্সরশিপের সম্মুখীন হয়েছে।
এসব থেকে এটা স্পষ্ট, গণতন্ত্রের মুখোশ পরা অনেক দেশেই এখন নির্বাচন কারচুপির দোষে দুষ্ট, নীতি অতি সংকীর্ণ, নাগরিক অধিকারগুলো দমন করা হয়, সংবাদমাধ্যমের মুখ বন্ধ রাখে, আইনের শাসনকে দুর্বল করে, সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোকে নিপীড়ন করে এবং সরকারকে জবাবদিহির মধ্যে রাখে এমন যেকোনো চেক অ্যান্ড ব্যালান্সের সিস্টেমকে অগ্রাহ্য করে।
এসব অনুদার গণতন্ত্রের বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হয়, এ ধরনের শাসন সাম্প্রতিককালে ডানপন্থীবাদের উত্থানের সঙ্গে অনেক বেশি সম্পর্কযুক্ত। ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড ও অস্ট্রিয়ার মতো বিভিন্ন দেশে লোকরঞ্জনবাদী নেতারা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং রীতিনীতির প্রতি অবজ্ঞা দেখিয়েছেন, স্বৈরাচারী আচরণে যুক্ত রয়েছেন এবং জনসমাবেশে উগ্র জাতীয়তাবাদী কথাবার্তা ব্যবহার করেছেন। এগুলো তাঁদের সমাজকে গভীরভাবে বিভক্ত ও মেরুকরণ করেছে।
সম্প্রতি দ্য ইকোনমিস্টের ‘ভ্রান্ত জাতীয়তাবাদ’ নামে এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, এই লোকরঞ্জনবাদী নেতারা ক্ষমতায় থাকার জন্য ‘জনগণের ভীতি’কে চাগিয়ে রাখার জন্য প্রার্থনা করেন। আর এই ভীতি ছড়াতে ও বাঁচিয়ে রাখতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারকে জবাবদিহির আওতায় আনে এমন সব প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করা হয়—মুক্ত গণমাধ্যম, স্বাধীন বিচারব্যবস্থা, এনজিও এবং তাঁবেদার বিরোধী দল।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পশ্চাৎপদতার বৈশ্বিক প্রবণতা এই প্রশ্ন তোলে যে বহুত্ববাদবিরোধী লোকরঞ্জনবাদী নেতাদের উত্থানের জন্য দায়ী অন্তর্নিহিত কারণগুলো কী হতে পারে। প্রতিটি দেশের বিষয় আলাদা, তাই সেখানে কোনো অভিন্ন বিষয় নেই। তবে কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য আলাদা করা যেতে পারে, যদিও এটি একটি সম্পূর্ণ তালিকা নয়।
গণতন্ত্র বা এর অভাব নিয়ে পাকিস্তানের অভিজ্ঞতা কী? দেশটির অস্থির রাজনৈতিক অতীতে দীর্ঘ সামরিক শাসন এবং ভঙ্গুর বেসামরিক গণতান্ত্রিক সরকারের সময়ের মধ্যে ঘুরপাক খেতে দেখা গেছে।
এমনকি ১৯৮৮ সাল-পরবর্তী গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধার এবং পরবর্তী ‘গণতান্ত্রিক দশকে’ সামরিক বাহিনীর সমর্থনে প্রেসিডেন্ট দ্বারা নির্বাচিত সরকারগুলোকে ক্ষমতাচ্যুত করতে দেখা যায়, যাদের কেউ তাদের মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে তিক্ত দ্বন্দ্ব, বিরোধীদের প্রতি সহনশীলতার অভাব, রাজনীতির সর্বস্তরে কারসাজি এবং গণতান্ত্রিক শাসনকে দুর্বল করতে সক্ষম হয়।
২০০৮ সালে আরেকটি গণতান্ত্রিক পর্যায় শুরু হয়, যেখানে রাজনৈতিক নেতাদের পারস্পরিক সহনশীলতা ও নাগরিক স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন এবং গণমাধ্যমগুলোর তুলনামূলকভাবে মুক্ত পরিবেশে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারার অনেক ভালো রেকর্ড গড়ে।
কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচন হাইব্রিড শাসনের একটি সময়ের সূচনা করেছিল, যা আজও অব্যাহত রয়েছে। ২০১৮-এর পরের সময়টি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পিছু হটা এবং বিপরীতমুখীতা দেখেছে। কারণ হাইব্রিড বিন্যাস সামরিক প্রতিষ্ঠানকে রাজনীতি, শাসন ও এমনকি অর্থনীতিতে একটি বিস্তৃত ভূমিকা অর্জন করতে বাধ্য করেছে। এর সঙ্গে বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দুর্নীতির মামলা, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও কর্মীদের জেল, গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ, আইনের শাসনের অবমাননা এবং সংসদকে গুরুত্বহীন করা হয়েছে।
দ্য পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অব লেজিসলেটিভ ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ট্রান্সপারেন্সি সঠিকভাবে গত মাসে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার বিষয়টি বর্ণনা করেছে। বলেছে, এটা গণতন্ত্রকে সংহত করার পরিবর্তে অবনমন ঘটাবে। পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ এর চেয়ে কি আলাদা কিছু হবে? আসলেই এ প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই।
(পাকিস্তানের ডন পত্রিকায় প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে ভাষান্তর করা হয়েছে)
মালিহা লোধি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাতিসংঘে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে