মোনায়েম সরকার
বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটছে। অসংখ্য ছোট ছোট রাজনৈতিক দলের অনেক বড় বড় নেতা। এই নেতারা প্রায়ই বড় বড় অনেক কথা বলেন, কিন্তু তাঁদের জনসমর্থন প্রায় নেই বললেই চলে। এই নেতাদের প্রায় কারও কোনো নির্বাচনী এলাকা নেই। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়ে আসার সম্ভাবনাও যাঁদের নেই, তাঁরা সামান্য কিছু সমর্থকের উপস্থিতিতে আয়োজিত সভা-সমাবেশে সরকারের বিরুদ্ধে হুংকার ছাড়েন, গণ-আন্দোলনের ভয় দেখান। কিছু গণমাধ্যমে এই নেতাদের বক্তব্য ছাপাও হয়। পত্রিকার পাতায় খবর ছাপা হয় বলেই সম্ভবত এই দলগুলো টিকে আছে, নেতারাও গলাবাজি করে যেতে পারছেন। কিন্তু এই দলগুলো কি কোনোভাবে কোনো ঘটনাকে প্রভাবিত করতে পারে?
কথাগুলো মনে হলো বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি ও বর্তমান উপদেষ্টা মনজুরুল আহসান খানের কিছু মন্তব্য পড়ে। একটি দৈনিকের সঙ্গে প্রবীণ এই কমিউনিস্ট নেতা অবশ্য সরকারের সমালোচনার পাশাপাশি নিজের দলেরও সমালোচনা করেছেন।
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ‘গাঁয়ে মানে না, আপনি মোড়ল’ এই বাম রাজনীতিক বলেছেন, কিছুদিন আগে দেশে যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে, তাতে খুব কম মানুষ ভোট দিয়েছে। গড়ে ২৭ ভাগ (নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ) ভোটার ভোট দিয়েছেন। এভাবে একটা স্থিতিশীল সরকার হতে পারে না।
আমরা যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নিই যে খুব কমসংখ্যক মানুষ গত নির্বাচনে ভোট দিয়েছে, তাহলেও তাতে সিপিবির কি উল্লসিত হওয়ার কিছু আছে? কম ভোট পাওয়ায় সরকার স্থিতিশীল যদি না হয়, তাতে সিপিবির লাভ কী? আওয়ামী লীগ সরকার যদি কোনো কারণে পড়েও যায়, তাহলে বামেরা কি ক্ষমতায় বসতে পারবে? বাংলাদেশে বামপন্থীদের সরকার গঠনের সম্ভাবনা একেবারেই শূন্য। একসময় সিপিবি একটি সম্ভাবনাময় রাজনৈতিক দল হয়ে উঠেছিল। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে এই দল ও দলের নেতা কমরেড মোহাম্মদ ফরহাদকে নিয়ে মানুষের মধ্যে আশাবাদ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু মোহাম্মদ ফরহাদের অকাল মৃত্যু এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর সিপিবি যেন অনেকটা রাজনৈতিক এতিমে পরিণত হয়েছে। এখন সিপিবির নেতারা অতীত গৌরবের স্মৃতি রোমন্থন করে সুখ অনুভব করলেও রাজনীতির ময়দানে দলটির কোনো বসার জায়গা নেই।
সিপিবি নামে একটা দল এখনো আছে। পুরানা পল্টনে তাদের একটি বহুতল অফিসও আছে। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব বলতে যা বোঝায় তা আর নেই। আবার দল ছোট হলেও দলের মধ্যে বিভেদ-বিভাজন আছে। তত্ত্বচর্চায় সিদ্ধহস্ত সিপিবিতে আছে অন্তঃকোন্দল।
মনজুরুল আহসান খান বলেছেন, বর্তমান সিপিবির নেতৃত্বে রয়েছে একটা সুবিধাবাদী গোষ্ঠী। এরা অতীতেও কোনো আন্দোলন করেনি, বর্তমানেও করে না। এমনকি আমরা শ্রমিকদের নিয়ে যে সংগ্রাম পরিষদ করেছি, তাদের আন্দোলনেরও বিরোধিতা করে। আমাকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। পাঁচ দফা অভিযোগ তুলে আমাকে শোকজ করেছে। যদিও শোকজ তিন মাস ধরে করেছে, কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার সাহস পায়নি, কেননা পার্টির অধিকাংশ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এর বিরোধিতা করবে। আমাকে মোট পাঁচবার পার্টি থেকে বহিষ্কার করেছে। এখন আরেকবার করতে চাইছে কিন্তু সাহস পাচ্ছে না। আমরা সম্মেলন করে বর্তমান নেতৃত্বকে সরিয়ে দেব।
সময়ের সঙ্গে সিপিবি তাল মিলিয়ে চলতে পারছে কি না—এমন প্রশ্নে মনজুর বলেছেন, তাল মিলিয়ে চলতে তো পারছেই না, উল্টো আরও পিছিয়ে এসেছে। সিপিবির বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটিকে সরিয়ে দেওয়ার কথা বলে মনজুরুল বলেছেন, ‘কেন্দ্রীয় কমিটিতে তাদের মাত্র একজনের মেজরিটি। সারা দেশের সদস্যদের মধ্যে আমাদের মেজরিটি বেশি। বেশির ভাগ জেলা আমাদের সমর্থন করবে। আমরা একটা রিকুইজিশন সম্মেলন ডেকে তাদের সরিয়ে দেব।’
মনজুরুল আহসান খানের বক্তব্য থেকেই এটা স্পষ্ট যে সিপিবির নেতৃত্বে সুবিধাবাদী গোষ্ঠীও আছে। এখন আবার নেতৃত্ব বদল হলে ওই সুবিধাবাদীরা কোথায় যাবে? তাহলে কি ক্ষুদ্র দলে পরিণত সিপিবি নিজেদের ঐক্য সংহত করার পরিবর্তে উল্টো আরেক দফা ভাঙনের দিকেই যাচ্ছে?
আমরা এটা জানি যে মনজুরুল আহসান খান নিজেই একসময় সিপিবির সভাপতি ছিলেন। বর্তমান নেতৃত্ব যদি সুবিধাবাদী হয়ে থাকে এবং তারা যদি আন্দোলনবিমুখ হয়ে থাকে, তাহলে মনজুরুল আহসান খান যখন নেতৃত্বে ছিলেন, তখন সিপিবি কোন বিপ্লবী আন্দোলন সংঘটিত করেছিল? আওয়ামী লীগের সঙ্গে দূরত্বের নীতি নিয়ে সিপিবি এখন বিএনপির কাছাকাছি গিয়ে গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির যে ক্ষতি করেছে, তা নিয়ে মনজুরুল আহসান খান অনুতপ্ত হলে বরং এটা মনে হতো যে ভুল-শুদ্ধ নিয়ে তাঁর কিছু নতুন উপলব্ধি তৈরি হয়েছে।
মনজুরুল আহসান খান বলেছেন, ‘এই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলে জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধও অনুভব করে না। সরকার সম্পূর্ণ সামরিক-বেসামরিক আমলার ওপর নির্ভরশীল। ফলে দেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিনষ্ট হয়ে গেছে।’
দেশে গণতন্ত্র অবশ্যই ত্রুটিমুক্ত নয়। নির্বাচনব্যবস্থার প্রতি মানুষ আস্থাশীল নয়। নানা ধরনের প্রভাব-প্রতিপত্তি নির্বাচনব্যবস্থাকে কলুষিত করে রেখেছে। মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়েও বিতর্ক করা চলে। তাই বলে দেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিনষ্ট হয়ে গেছে বলে ঢালাও মন্তব্য করে মনজুরুল আহসান প্রকৃতপক্ষে কাকে খুশি করতে চেয়েছেন? কমিউনিস্ট পার্টি কোন ধরনের গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে? সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো কি গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য আদর্শস্থানীয় ছিল?
দুই. আমাদের দেশে বাক্যবাগীশ নেতাদের মধ্যে আরও আছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। জাসদ, বাসদ, আওয়ামী লীগ হয়ে এখন তিনি নাগরিক ঐক্য নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আছেন। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে দুইবার নির্বাচন করে জিততে পারেননি মান্না। এতই জনপ্রিয় নেতা তিনি। সম্প্রতি রাজধানীর পল্টন মোড়ে গণতন্ত্র মঞ্চের এক অনুষ্ঠানে মান্না বলেছেন, ‘এ সরকার এবং সরকারি দল অন্যায়ের সব সীমা অতিক্রম করেছে। আমরা যুগপৎ আন্দোলনে আছি। আরও জনগণকে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার মাধ্যমে এ সরকারের পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘সরকার যতই গলাবাজি করুক না কেন, এতে কোনো লাভ হবে না। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব কারাবন্দী মুক্তি পেয়ে জেল থেকে বেরিয়ে আসবে। আবার আন্দোলন জোরদার হবে। সরকারের পতন হবে। ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পাবে। জনগণের সরকার আসবে।’ চলমান আন্দোলনে সর্বস্তরের জনগণকে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
প্রশ্ন হলো সেদিন আসবে কবে, যেদিন সরকারের পতন হবে?
ডাকসুর সাবেক ভিপি মান্না গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেছেন, গ্রামীণ ব্যাংক সারা বিশ্বে পরিচিত একটি ব্যাংক। দেশের একমাত্র নোবেল লরিয়েট ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ ব্যাংকটি গড়ে তুলেছেন। কিন্তু ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে তাঁর তিল তিল করে গড়ে তোলা এ প্রতিষ্ঠান থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। সরকারপন্থী শকুনের থাবা পড়েছে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠানগুলোতে।
মান্না বলেন, ‘বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীতে দারিদ্র্য বিমোচনে ড. ইউনূসের যে অবদান তা বিশ্বের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। অথচ নিজের দেশে তিনি অবৈধ কর্তৃত্ববাদী সরকার দ্বারা চরম নিগৃহীত হচ্ছেন। তাঁর গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার অনেক দিন থেকেই। আগেই গ্রামীণ ব্যাংক দখল করেছে, এখন বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দখল করে সেগুলোও ধ্বংস করার পাঁয়তারা করছে। এতে সারা দেশে সেবা পাওয়া এক কোটি দরিদ্র মানুষও অসহায় হয়ে পড়বে। ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো সম্মানিত, সারা বিশ্বে সমাদৃত, বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিকে অসম্মান করে স্বৈরাচার হাসিনা সরকার তাদের আসল চেহারা আরেকবার উন্মোচন করল।’
সরকার যদি আসল চেহারা উন্মোচন করে থাকে, তাহলে মান্নাও কি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষ নিয়ে নিজের চেহারা উন্মোচন করলেন না? পৃথিবীতে কোনো মানুষই নিজ দেশের আইনকানুনের ঊর্ধ্বে নয়। ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক করেছেন সরকারের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে। গ্রামীণ ব্যাংক তাঁর ব্যক্তিগত বা পৈতৃক প্রতিষ্ঠান নয়। খ্যাতিমান হলেই কেউ আইনের ঊর্ধ্বে উঠতে পারেন না। মান্না বলেছেন, সরকার সব সীমা লঙ্ঘন করেছে। তিনি তাঁর সীমার মধ্যে আছেন তো?
লেখক: রাজনীতিবিদ, লেখক এবং চেয়ারম্যান, বিএফডিআর
বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটছে। অসংখ্য ছোট ছোট রাজনৈতিক দলের অনেক বড় বড় নেতা। এই নেতারা প্রায়ই বড় বড় অনেক কথা বলেন, কিন্তু তাঁদের জনসমর্থন প্রায় নেই বললেই চলে। এই নেতাদের প্রায় কারও কোনো নির্বাচনী এলাকা নেই। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়ে আসার সম্ভাবনাও যাঁদের নেই, তাঁরা সামান্য কিছু সমর্থকের উপস্থিতিতে আয়োজিত সভা-সমাবেশে সরকারের বিরুদ্ধে হুংকার ছাড়েন, গণ-আন্দোলনের ভয় দেখান। কিছু গণমাধ্যমে এই নেতাদের বক্তব্য ছাপাও হয়। পত্রিকার পাতায় খবর ছাপা হয় বলেই সম্ভবত এই দলগুলো টিকে আছে, নেতারাও গলাবাজি করে যেতে পারছেন। কিন্তু এই দলগুলো কি কোনোভাবে কোনো ঘটনাকে প্রভাবিত করতে পারে?
কথাগুলো মনে হলো বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি ও বর্তমান উপদেষ্টা মনজুরুল আহসান খানের কিছু মন্তব্য পড়ে। একটি দৈনিকের সঙ্গে প্রবীণ এই কমিউনিস্ট নেতা অবশ্য সরকারের সমালোচনার পাশাপাশি নিজের দলেরও সমালোচনা করেছেন।
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ‘গাঁয়ে মানে না, আপনি মোড়ল’ এই বাম রাজনীতিক বলেছেন, কিছুদিন আগে দেশে যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে, তাতে খুব কম মানুষ ভোট দিয়েছে। গড়ে ২৭ ভাগ (নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ) ভোটার ভোট দিয়েছেন। এভাবে একটা স্থিতিশীল সরকার হতে পারে না।
আমরা যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নিই যে খুব কমসংখ্যক মানুষ গত নির্বাচনে ভোট দিয়েছে, তাহলেও তাতে সিপিবির কি উল্লসিত হওয়ার কিছু আছে? কম ভোট পাওয়ায় সরকার স্থিতিশীল যদি না হয়, তাতে সিপিবির লাভ কী? আওয়ামী লীগ সরকার যদি কোনো কারণে পড়েও যায়, তাহলে বামেরা কি ক্ষমতায় বসতে পারবে? বাংলাদেশে বামপন্থীদের সরকার গঠনের সম্ভাবনা একেবারেই শূন্য। একসময় সিপিবি একটি সম্ভাবনাময় রাজনৈতিক দল হয়ে উঠেছিল। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে এই দল ও দলের নেতা কমরেড মোহাম্মদ ফরহাদকে নিয়ে মানুষের মধ্যে আশাবাদ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু মোহাম্মদ ফরহাদের অকাল মৃত্যু এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর সিপিবি যেন অনেকটা রাজনৈতিক এতিমে পরিণত হয়েছে। এখন সিপিবির নেতারা অতীত গৌরবের স্মৃতি রোমন্থন করে সুখ অনুভব করলেও রাজনীতির ময়দানে দলটির কোনো বসার জায়গা নেই।
সিপিবি নামে একটা দল এখনো আছে। পুরানা পল্টনে তাদের একটি বহুতল অফিসও আছে। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব বলতে যা বোঝায় তা আর নেই। আবার দল ছোট হলেও দলের মধ্যে বিভেদ-বিভাজন আছে। তত্ত্বচর্চায় সিদ্ধহস্ত সিপিবিতে আছে অন্তঃকোন্দল।
মনজুরুল আহসান খান বলেছেন, বর্তমান সিপিবির নেতৃত্বে রয়েছে একটা সুবিধাবাদী গোষ্ঠী। এরা অতীতেও কোনো আন্দোলন করেনি, বর্তমানেও করে না। এমনকি আমরা শ্রমিকদের নিয়ে যে সংগ্রাম পরিষদ করেছি, তাদের আন্দোলনেরও বিরোধিতা করে। আমাকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। পাঁচ দফা অভিযোগ তুলে আমাকে শোকজ করেছে। যদিও শোকজ তিন মাস ধরে করেছে, কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার সাহস পায়নি, কেননা পার্টির অধিকাংশ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এর বিরোধিতা করবে। আমাকে মোট পাঁচবার পার্টি থেকে বহিষ্কার করেছে। এখন আরেকবার করতে চাইছে কিন্তু সাহস পাচ্ছে না। আমরা সম্মেলন করে বর্তমান নেতৃত্বকে সরিয়ে দেব।
সময়ের সঙ্গে সিপিবি তাল মিলিয়ে চলতে পারছে কি না—এমন প্রশ্নে মনজুর বলেছেন, তাল মিলিয়ে চলতে তো পারছেই না, উল্টো আরও পিছিয়ে এসেছে। সিপিবির বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটিকে সরিয়ে দেওয়ার কথা বলে মনজুরুল বলেছেন, ‘কেন্দ্রীয় কমিটিতে তাদের মাত্র একজনের মেজরিটি। সারা দেশের সদস্যদের মধ্যে আমাদের মেজরিটি বেশি। বেশির ভাগ জেলা আমাদের সমর্থন করবে। আমরা একটা রিকুইজিশন সম্মেলন ডেকে তাদের সরিয়ে দেব।’
মনজুরুল আহসান খানের বক্তব্য থেকেই এটা স্পষ্ট যে সিপিবির নেতৃত্বে সুবিধাবাদী গোষ্ঠীও আছে। এখন আবার নেতৃত্ব বদল হলে ওই সুবিধাবাদীরা কোথায় যাবে? তাহলে কি ক্ষুদ্র দলে পরিণত সিপিবি নিজেদের ঐক্য সংহত করার পরিবর্তে উল্টো আরেক দফা ভাঙনের দিকেই যাচ্ছে?
আমরা এটা জানি যে মনজুরুল আহসান খান নিজেই একসময় সিপিবির সভাপতি ছিলেন। বর্তমান নেতৃত্ব যদি সুবিধাবাদী হয়ে থাকে এবং তারা যদি আন্দোলনবিমুখ হয়ে থাকে, তাহলে মনজুরুল আহসান খান যখন নেতৃত্বে ছিলেন, তখন সিপিবি কোন বিপ্লবী আন্দোলন সংঘটিত করেছিল? আওয়ামী লীগের সঙ্গে দূরত্বের নীতি নিয়ে সিপিবি এখন বিএনপির কাছাকাছি গিয়ে গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির যে ক্ষতি করেছে, তা নিয়ে মনজুরুল আহসান খান অনুতপ্ত হলে বরং এটা মনে হতো যে ভুল-শুদ্ধ নিয়ে তাঁর কিছু নতুন উপলব্ধি তৈরি হয়েছে।
মনজুরুল আহসান খান বলেছেন, ‘এই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলে জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধও অনুভব করে না। সরকার সম্পূর্ণ সামরিক-বেসামরিক আমলার ওপর নির্ভরশীল। ফলে দেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিনষ্ট হয়ে গেছে।’
দেশে গণতন্ত্র অবশ্যই ত্রুটিমুক্ত নয়। নির্বাচনব্যবস্থার প্রতি মানুষ আস্থাশীল নয়। নানা ধরনের প্রভাব-প্রতিপত্তি নির্বাচনব্যবস্থাকে কলুষিত করে রেখেছে। মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়েও বিতর্ক করা চলে। তাই বলে দেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিনষ্ট হয়ে গেছে বলে ঢালাও মন্তব্য করে মনজুরুল আহসান প্রকৃতপক্ষে কাকে খুশি করতে চেয়েছেন? কমিউনিস্ট পার্টি কোন ধরনের গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে? সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো কি গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য আদর্শস্থানীয় ছিল?
দুই. আমাদের দেশে বাক্যবাগীশ নেতাদের মধ্যে আরও আছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। জাসদ, বাসদ, আওয়ামী লীগ হয়ে এখন তিনি নাগরিক ঐক্য নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আছেন। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে দুইবার নির্বাচন করে জিততে পারেননি মান্না। এতই জনপ্রিয় নেতা তিনি। সম্প্রতি রাজধানীর পল্টন মোড়ে গণতন্ত্র মঞ্চের এক অনুষ্ঠানে মান্না বলেছেন, ‘এ সরকার এবং সরকারি দল অন্যায়ের সব সীমা অতিক্রম করেছে। আমরা যুগপৎ আন্দোলনে আছি। আরও জনগণকে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার মাধ্যমে এ সরকারের পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘সরকার যতই গলাবাজি করুক না কেন, এতে কোনো লাভ হবে না। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব কারাবন্দী মুক্তি পেয়ে জেল থেকে বেরিয়ে আসবে। আবার আন্দোলন জোরদার হবে। সরকারের পতন হবে। ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পাবে। জনগণের সরকার আসবে।’ চলমান আন্দোলনে সর্বস্তরের জনগণকে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
প্রশ্ন হলো সেদিন আসবে কবে, যেদিন সরকারের পতন হবে?
ডাকসুর সাবেক ভিপি মান্না গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেছেন, গ্রামীণ ব্যাংক সারা বিশ্বে পরিচিত একটি ব্যাংক। দেশের একমাত্র নোবেল লরিয়েট ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ ব্যাংকটি গড়ে তুলেছেন। কিন্তু ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে তাঁর তিল তিল করে গড়ে তোলা এ প্রতিষ্ঠান থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। সরকারপন্থী শকুনের থাবা পড়েছে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠানগুলোতে।
মান্না বলেন, ‘বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীতে দারিদ্র্য বিমোচনে ড. ইউনূসের যে অবদান তা বিশ্বের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। অথচ নিজের দেশে তিনি অবৈধ কর্তৃত্ববাদী সরকার দ্বারা চরম নিগৃহীত হচ্ছেন। তাঁর গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার অনেক দিন থেকেই। আগেই গ্রামীণ ব্যাংক দখল করেছে, এখন বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দখল করে সেগুলোও ধ্বংস করার পাঁয়তারা করছে। এতে সারা দেশে সেবা পাওয়া এক কোটি দরিদ্র মানুষও অসহায় হয়ে পড়বে। ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো সম্মানিত, সারা বিশ্বে সমাদৃত, বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিকে অসম্মান করে স্বৈরাচার হাসিনা সরকার তাদের আসল চেহারা আরেকবার উন্মোচন করল।’
সরকার যদি আসল চেহারা উন্মোচন করে থাকে, তাহলে মান্নাও কি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষ নিয়ে নিজের চেহারা উন্মোচন করলেন না? পৃথিবীতে কোনো মানুষই নিজ দেশের আইনকানুনের ঊর্ধ্বে নয়। ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক করেছেন সরকারের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে। গ্রামীণ ব্যাংক তাঁর ব্যক্তিগত বা পৈতৃক প্রতিষ্ঠান নয়। খ্যাতিমান হলেই কেউ আইনের ঊর্ধ্বে উঠতে পারেন না। মান্না বলেছেন, সরকার সব সীমা লঙ্ঘন করেছে। তিনি তাঁর সীমার মধ্যে আছেন তো?
লেখক: রাজনীতিবিদ, লেখক এবং চেয়ারম্যান, বিএফডিআর
প্রবৃদ্ধির শীর্ষে থেকেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের দৌড়ে পিছিয়ে রয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ৫০ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়েছে
১৮ ঘণ্টা আগেদুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি, উচ্চ করহারসহ ১৭ ধরনের বাধায় বিপর্যস্ত দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। রয়েছে সামাজিক সমস্যাও।
২০ ঘণ্টা আগেজমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৫ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৮ দিন আগে