হাফিজ আদনান রিয়াদ
সম্প্রতি ছাত্র আন্দোলনে সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণে কালক্ষেপণ আর অনিয়ন্ত্রিত শক্তি প্রয়োগের ফলে নাজুক হয়ে ওঠা পরিস্থিতিতে, হঠাৎ চারদিকে ব্যাপক নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নৈতিক বিজয় হয়েছে। অস্বাভাবিক চড়া মূল্যে আন্দোলনে সফলতা এলেও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ছাত্রদের নতুন দাবিগুলোর সুরাহা এখনো হয়নি। এদিকে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত নাশকতার স্রোতে রাষ্ট্রের নিরাপত্তাব্যবস্থার বেহালদশা প্রকাশ পেয়েছে।
সরকার প্রথম দিকে আন্দোলনের তীব্রতা বুঝে উঠতে পারেনি বলে মনে হয়েছে। এবারের ছাত্র আন্দোলনে প্রথম থেকেই নানামুখী শক্তির সমাবেশ ছিল। বিভিন্ন মাত্রায় প্রায় সব ছাত্রসংগঠন এখানে যুক্ত হয়েছে। তবে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মীদের চেয়ে অনেক বেশি। একটি আন্দোলনে যেখানে নানা প্রবণতা সক্রিয়ভাবে কাজ করেছে, সেখানে সরকারের ত্বরিত সিদ্ধান্তে দ্রুত সমাধানের চেষ্টা ছিল বাঞ্ছনীয়। সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কী করেছে বা তাদের কাছে কী তথ্য ছিল, কেন তারা সরকারকে পরিস্থিতির গুরুত্ব বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছে, তা প্রশ্নসাপেক্ষ। ১৬ জুলাই সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের বাঁকা প্রশ্নের বাঁকা উত্তরে যে বিস্ফোরণ হলো, তা-ও সরকার যথাযথ অনুধাবনে ব্যর্থ হয়েছে। আন্দোলনের ভেতরে থাকা সাম্প্রদায়িক শক্তির উসকানিতে আন্দোলনকারীদের একাংশ যে বীভৎস স্লোগান শুরু করেছিল, তাতে অধিকাংশের কোনো অংশগ্রহণ ছিল না; বরং ঘণ্টাখানেকের ভেতর সেই স্লোগান উড়ে গেছে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের নতুন স্লোগানে। কিন্তু সরকারপক্ষ এবং কিছু বিজ্ঞজন ঢালাওভাবে পুরো প্রজন্মকে যেভাবে স্বাধীনতার চেতনাহীন হিসেবে আক্রমণ করেছে, তাতে ছাত্রদের ক্ষোভ আরও তীব্রতর হয়েছে। ১৭ জুলাই যখন আন্দোলন সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ে, তখন নিরাপত্তা বাহিনীর নির্বিচার গুলিবর্ষণ এবং রংপুরে আন্দোলনকারী ছাত্র সাঈদকে গুলি করার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সারা দেশে ছয়জন ছাত্র নিহতের খবর জানা গেল। এরপর ১৮ জুলাই আন্দোলন সহিংস হয়ে ওঠায় সরকার আরও কঠোরতায় ছাত্রদের দমন করতে চাইল।
নিরাপত্তা বাহিনীর নির্বিচার টিয়ার শেল (মেয়াদোত্তীর্ণসহ), চেতনানাশক নিউট্রালাজিং ৩৮ এমএম বুলেট (যা বন্য প্রাণী নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়), রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড, হেলিকপ্টার স্নাইপার, যথেচ্ছ গুলিবর্ষণ পরিস্থিতিকে নাজুক করে তোলে। সারা দেশে ৪২ জন বা তারও বেশি ছাত্র নিহত হয়। কয়েক শ ছাত্র রাবার বুলেটে বিদ্ধ হয়েছে। এই সুযোগে নাশকতাকারীরা বিটিভি থেকে শুরু করে নানা সরকারি স্থাপনায় হামলা, জ্বালাও-পোড়াও করেছে। ১৯ জুলাই ছাত্ররা রাজপথে না থাকলেও নাশকতাকারীদের হামলা অব্যাহত ছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাতে কারফিউ জারি করতে সরকার বাধ্য হলো। ইতিমধ্যে সারা দেশে প্রায় ১৪০ জন নিহত হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। প্রথমে আন্দোলন দমনে নিরাপত্তা বাহিনীর যে তৎপরতা ছিল, নাশকতায় একের পর এক রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসের সময় তাদের কোনো কোনো ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক সময় নিতে দেখা গেছে। সাধারণ জনগণ এমনটাও বলছে, প্রথম দুই দিনের ছাত্রহত্যা ও গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা, আপাত চাপা পড়ে গেল তৃতীয় দিনের নাশকতার ব্যাপকতায়। এ দফায় সরকার নিজেকে রক্ষার পথ পেল বলেও রাজনৈতিক মহল মনে করছে। কিন্তু এত এত ছাত্রের রক্তের দাগ মুছে দেওয়া সহজ নয়। হত্যাযজ্ঞের দায় সরকার এড়াতে পারে না।
আবার নাশকতাকারীদের ধ্বংসযজ্ঞও আকস্মিকভাবে ঘটেছে বলে মনে করার কারণ নেই। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে ‘তৃতীয় পক্ষ’ পরিকল্পিতভাবে শক্তির সমাবেশ ঘটিয়েছে এবং চরম নাশকতা চালিয়েছে। তাদের এই শক্তি সমাবেশ করতে পারাটাও সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যর্থতাই স্পষ্ট করে তুলেছে। এ ক্ষেত্রে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কেন আগাম তথ্য পেল না, এটা তাদের ব্যর্থতা, নাকি শৈথিল্য—সে প্রশ্নও সামনে আসছে।
একই সঙ্গে রাষ্ট্রের স্পর্শকাতর বা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তাব্যবস্থা কতটা বেহাল, সেটাও সামনে এসেছে। দেশের কেন্দ্রীয় ইন্টারনেট ডেটা সেন্টার কেন এতটা অরক্ষিত থাকে, কেন সেখানে সার্বক্ষণিক বিশেষ নিরাপত্তাবলয় থাকবে না, সেটাও একটা প্রশ্ন। নাকি ভবনের প্রবেশদ্বারে শনাক্তকারী ডিভাইস ও কয়েকটি সিসি ক্যামেরা বসালেই নিরাপত্তা যথেষ্ট হয় বলে কর্তৃপক্ষ ভেবেছিল! হামলাকারীরা কোথাও ন্যূনতম প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছে বলে শোনা যায়নি। সেতু ভবনে দুই দফা হামলা হলো, ৫ ঘণ্টা ধরে সেখানে বিভিন্ন কক্ষ ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, ৫৫টি গাড়ি ভস্মীভূত করা হলো কোনো বাধা ছাড়াই! পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, এক্সপ্রেসওয়েসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নথি পুড়ে গেছে বলে সেতুসচিব জানিয়েছেন। এসব গুরুত্বপূর্ণ নথি আর দশটা সরকারি নথির মতো সরকারি দপ্তরে অসাবধানে অরক্ষিত থাকে কীভাবে বলুন তো? বিটিভি ভবনে আগুন দেওয়ার অনেক পরে সেখানে বিজিবি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে কেন বাড়তি নিরাপত্তা থাকে না? কিংবা ধরুন, নরসিংদী কারাগারের দেয়াল ভাঙা থেকে শুরু করে সব সেলের তালা ভেঙে ৯ শীর্ষ জঙ্গিসহ ৮২৬ আসামি পালিয়ে যাওয়া, অস্ত্রাগার লুট হওয়া—সব মিলিয়ে ৩ ঘণ্টার তাণ্ডব কেন শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়নি? কেন এসব ক্ষেত্রে পুলিশ ব্যর্থ হলো? আবার ঘটনার পরেও কেন তিন দিন ধরে জেলখানা অরক্ষিত রাখা হলো? ক্রাইম সিন কর্ডন না করে কেন সেখানে স্থানীয়দের বিপুল উৎসাহ নিয়ে মোবাইলে ছবি তোলা ও সেলের ভেতর ভিডিও করতে দেওয়া হলো? এর আগেও বিভিন্ন দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলকে সংরক্ষণে ব্যাপক শিথিলতা দেখা গেছে।
প্রতি ক্ষেত্রেই সেসব স্থানে উৎসুক জনতাকে অবাধে বিচরণ করতে দেওয়া হয়েছে। জাতীয় বাজেটের বড় অঙ্কের বরাদ্দ পাওয়া জননিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা খাতের এই বেহালদশা কীভাবে সম্ভব? একটা বিষয় পরিষ্কার, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর হর্তাকর্তাদের দপ্তরের চিত্তাকর্ষক প্রবেশদ্বার, দামি আসবাব সজ্জা এবং আধুনিকায়নের নামে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হলেও, তাদের দক্ষতা, সক্ষমতা বৃদ্ধিতে পর্যাপ্ত কাজ হয়নি। তাদের নিরাপত্তা ধারণায় এখনো শুধু ঊর্ধ্বতন কয়েকজন ব্যক্তির নিরাপত্তায় সীমিত, জনগণের জানমাল এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের সার্বিক নিরাপত্তাও যে অন্তর্ভুক্ত, সেটা সম্ভবত অযত্নেই থেকে যায়। সার্বিক প্রেক্ষাপটে এমন সন্দেহও জনমনে রয়েছে যে রাষ্ট্রীয় স্থাপনা রক্ষায় নিরাপত্তা বাহিনীর পূর্বপ্রস্তুতি তো ছিলই না, এমনকি হামলার পরেও তা রক্ষায় তাদের প্রচেষ্টায় ঘাটতি ছিল। সামনে নিরাপত্তা পরিস্থিতির আরও বড় বিপদ ঘটার আগেই রাষ্ট্রীয় স্পর্শকাতর সম্পদের নিরাপত্তাব্যবস্থা ঢেলে সাজানো এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে জনকল্যাণমুখী করে গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।
লেখক: হাফিজ আদনান রিয়াদ,
সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন
সম্প্রতি ছাত্র আন্দোলনে সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণে কালক্ষেপণ আর অনিয়ন্ত্রিত শক্তি প্রয়োগের ফলে নাজুক হয়ে ওঠা পরিস্থিতিতে, হঠাৎ চারদিকে ব্যাপক নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নৈতিক বিজয় হয়েছে। অস্বাভাবিক চড়া মূল্যে আন্দোলনে সফলতা এলেও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ছাত্রদের নতুন দাবিগুলোর সুরাহা এখনো হয়নি। এদিকে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত নাশকতার স্রোতে রাষ্ট্রের নিরাপত্তাব্যবস্থার বেহালদশা প্রকাশ পেয়েছে।
সরকার প্রথম দিকে আন্দোলনের তীব্রতা বুঝে উঠতে পারেনি বলে মনে হয়েছে। এবারের ছাত্র আন্দোলনে প্রথম থেকেই নানামুখী শক্তির সমাবেশ ছিল। বিভিন্ন মাত্রায় প্রায় সব ছাত্রসংগঠন এখানে যুক্ত হয়েছে। তবে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মীদের চেয়ে অনেক বেশি। একটি আন্দোলনে যেখানে নানা প্রবণতা সক্রিয়ভাবে কাজ করেছে, সেখানে সরকারের ত্বরিত সিদ্ধান্তে দ্রুত সমাধানের চেষ্টা ছিল বাঞ্ছনীয়। সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কী করেছে বা তাদের কাছে কী তথ্য ছিল, কেন তারা সরকারকে পরিস্থিতির গুরুত্ব বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছে, তা প্রশ্নসাপেক্ষ। ১৬ জুলাই সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের বাঁকা প্রশ্নের বাঁকা উত্তরে যে বিস্ফোরণ হলো, তা-ও সরকার যথাযথ অনুধাবনে ব্যর্থ হয়েছে। আন্দোলনের ভেতরে থাকা সাম্প্রদায়িক শক্তির উসকানিতে আন্দোলনকারীদের একাংশ যে বীভৎস স্লোগান শুরু করেছিল, তাতে অধিকাংশের কোনো অংশগ্রহণ ছিল না; বরং ঘণ্টাখানেকের ভেতর সেই স্লোগান উড়ে গেছে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের নতুন স্লোগানে। কিন্তু সরকারপক্ষ এবং কিছু বিজ্ঞজন ঢালাওভাবে পুরো প্রজন্মকে যেভাবে স্বাধীনতার চেতনাহীন হিসেবে আক্রমণ করেছে, তাতে ছাত্রদের ক্ষোভ আরও তীব্রতর হয়েছে। ১৭ জুলাই যখন আন্দোলন সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ে, তখন নিরাপত্তা বাহিনীর নির্বিচার গুলিবর্ষণ এবং রংপুরে আন্দোলনকারী ছাত্র সাঈদকে গুলি করার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সারা দেশে ছয়জন ছাত্র নিহতের খবর জানা গেল। এরপর ১৮ জুলাই আন্দোলন সহিংস হয়ে ওঠায় সরকার আরও কঠোরতায় ছাত্রদের দমন করতে চাইল।
নিরাপত্তা বাহিনীর নির্বিচার টিয়ার শেল (মেয়াদোত্তীর্ণসহ), চেতনানাশক নিউট্রালাজিং ৩৮ এমএম বুলেট (যা বন্য প্রাণী নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়), রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড, হেলিকপ্টার স্নাইপার, যথেচ্ছ গুলিবর্ষণ পরিস্থিতিকে নাজুক করে তোলে। সারা দেশে ৪২ জন বা তারও বেশি ছাত্র নিহত হয়। কয়েক শ ছাত্র রাবার বুলেটে বিদ্ধ হয়েছে। এই সুযোগে নাশকতাকারীরা বিটিভি থেকে শুরু করে নানা সরকারি স্থাপনায় হামলা, জ্বালাও-পোড়াও করেছে। ১৯ জুলাই ছাত্ররা রাজপথে না থাকলেও নাশকতাকারীদের হামলা অব্যাহত ছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাতে কারফিউ জারি করতে সরকার বাধ্য হলো। ইতিমধ্যে সারা দেশে প্রায় ১৪০ জন নিহত হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। প্রথমে আন্দোলন দমনে নিরাপত্তা বাহিনীর যে তৎপরতা ছিল, নাশকতায় একের পর এক রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসের সময় তাদের কোনো কোনো ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক সময় নিতে দেখা গেছে। সাধারণ জনগণ এমনটাও বলছে, প্রথম দুই দিনের ছাত্রহত্যা ও গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা, আপাত চাপা পড়ে গেল তৃতীয় দিনের নাশকতার ব্যাপকতায়। এ দফায় সরকার নিজেকে রক্ষার পথ পেল বলেও রাজনৈতিক মহল মনে করছে। কিন্তু এত এত ছাত্রের রক্তের দাগ মুছে দেওয়া সহজ নয়। হত্যাযজ্ঞের দায় সরকার এড়াতে পারে না।
আবার নাশকতাকারীদের ধ্বংসযজ্ঞও আকস্মিকভাবে ঘটেছে বলে মনে করার কারণ নেই। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে ‘তৃতীয় পক্ষ’ পরিকল্পিতভাবে শক্তির সমাবেশ ঘটিয়েছে এবং চরম নাশকতা চালিয়েছে। তাদের এই শক্তি সমাবেশ করতে পারাটাও সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যর্থতাই স্পষ্ট করে তুলেছে। এ ক্ষেত্রে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কেন আগাম তথ্য পেল না, এটা তাদের ব্যর্থতা, নাকি শৈথিল্য—সে প্রশ্নও সামনে আসছে।
একই সঙ্গে রাষ্ট্রের স্পর্শকাতর বা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তাব্যবস্থা কতটা বেহাল, সেটাও সামনে এসেছে। দেশের কেন্দ্রীয় ইন্টারনেট ডেটা সেন্টার কেন এতটা অরক্ষিত থাকে, কেন সেখানে সার্বক্ষণিক বিশেষ নিরাপত্তাবলয় থাকবে না, সেটাও একটা প্রশ্ন। নাকি ভবনের প্রবেশদ্বারে শনাক্তকারী ডিভাইস ও কয়েকটি সিসি ক্যামেরা বসালেই নিরাপত্তা যথেষ্ট হয় বলে কর্তৃপক্ষ ভেবেছিল! হামলাকারীরা কোথাও ন্যূনতম প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছে বলে শোনা যায়নি। সেতু ভবনে দুই দফা হামলা হলো, ৫ ঘণ্টা ধরে সেখানে বিভিন্ন কক্ষ ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, ৫৫টি গাড়ি ভস্মীভূত করা হলো কোনো বাধা ছাড়াই! পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, এক্সপ্রেসওয়েসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নথি পুড়ে গেছে বলে সেতুসচিব জানিয়েছেন। এসব গুরুত্বপূর্ণ নথি আর দশটা সরকারি নথির মতো সরকারি দপ্তরে অসাবধানে অরক্ষিত থাকে কীভাবে বলুন তো? বিটিভি ভবনে আগুন দেওয়ার অনেক পরে সেখানে বিজিবি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে কেন বাড়তি নিরাপত্তা থাকে না? কিংবা ধরুন, নরসিংদী কারাগারের দেয়াল ভাঙা থেকে শুরু করে সব সেলের তালা ভেঙে ৯ শীর্ষ জঙ্গিসহ ৮২৬ আসামি পালিয়ে যাওয়া, অস্ত্রাগার লুট হওয়া—সব মিলিয়ে ৩ ঘণ্টার তাণ্ডব কেন শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়নি? কেন এসব ক্ষেত্রে পুলিশ ব্যর্থ হলো? আবার ঘটনার পরেও কেন তিন দিন ধরে জেলখানা অরক্ষিত রাখা হলো? ক্রাইম সিন কর্ডন না করে কেন সেখানে স্থানীয়দের বিপুল উৎসাহ নিয়ে মোবাইলে ছবি তোলা ও সেলের ভেতর ভিডিও করতে দেওয়া হলো? এর আগেও বিভিন্ন দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলকে সংরক্ষণে ব্যাপক শিথিলতা দেখা গেছে।
প্রতি ক্ষেত্রেই সেসব স্থানে উৎসুক জনতাকে অবাধে বিচরণ করতে দেওয়া হয়েছে। জাতীয় বাজেটের বড় অঙ্কের বরাদ্দ পাওয়া জননিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা খাতের এই বেহালদশা কীভাবে সম্ভব? একটা বিষয় পরিষ্কার, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর হর্তাকর্তাদের দপ্তরের চিত্তাকর্ষক প্রবেশদ্বার, দামি আসবাব সজ্জা এবং আধুনিকায়নের নামে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হলেও, তাদের দক্ষতা, সক্ষমতা বৃদ্ধিতে পর্যাপ্ত কাজ হয়নি। তাদের নিরাপত্তা ধারণায় এখনো শুধু ঊর্ধ্বতন কয়েকজন ব্যক্তির নিরাপত্তায় সীমিত, জনগণের জানমাল এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের সার্বিক নিরাপত্তাও যে অন্তর্ভুক্ত, সেটা সম্ভবত অযত্নেই থেকে যায়। সার্বিক প্রেক্ষাপটে এমন সন্দেহও জনমনে রয়েছে যে রাষ্ট্রীয় স্থাপনা রক্ষায় নিরাপত্তা বাহিনীর পূর্বপ্রস্তুতি তো ছিলই না, এমনকি হামলার পরেও তা রক্ষায় তাদের প্রচেষ্টায় ঘাটতি ছিল। সামনে নিরাপত্তা পরিস্থিতির আরও বড় বিপদ ঘটার আগেই রাষ্ট্রীয় স্পর্শকাতর সম্পদের নিরাপত্তাব্যবস্থা ঢেলে সাজানো এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে জনকল্যাণমুখী করে গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।
লেখক: হাফিজ আদনান রিয়াদ,
সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৩ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৬ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৬ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১০ দিন আগে