বিধান রিবেরু
হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বঙ্গীয় শব্দকোষে বিপ্লবের অর্থ দেওয়া রয়েছে প্লবন, ভাসা, নাশ, উপদ্রব, অরাজকতা, উচ্ছেদ প্রভৃতি।বাংলাদেশে জুলাই-আগস্টে যা ঘটে গেল তা এই সব অর্থেই বিপ্লব। চাকরির ক্ষেত্রে বৈষম্যকে প্লাবিত করার প্রত্যয়ে তরুণেরা সব অন্যায় ও দুর্নীতির নাশ করতে চাইলেন। সেখানে বিপ্লব দমনের নামে হত্যাযজ্ঞ হলো। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে বারুদ জমা ছিল, তাতে গিয়ে পড়ল অগ্নিস্ফুলিঙ্গ। বিস্ফোরিত হলো গোটা সমাজ। শেষ পর্যন্ত টিকতে না পেরে উচ্ছেদ হলো স্বৈরশাসক।
কিন্তু এখানেই বিপ্লবের কাজ শেষ হয় না। মূল প্রতিপক্ষ নতি স্বীকারের পর আবির্ভূত হয় তৃতীয় পক্ষের, তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করে, সাম্প্রদায়িক হামলা চালায়, ভাস্কর্য ও ঐতিহাসিক ভবন বিনষ্ট করে, অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। আগস্টের ৫ তারিখ শেখ হাসিনার বিদায়ের পর থেকেই আমরা দেখলাম আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটল দেশে। রাতে ডাকাত-ডাকাত রব, সাধারণ মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে পারছে না।
জনগণের বন্ধু দাবি করা পুলিশ, যারা কখনোই বৃহত্তর অর্থে জনগণের বন্ধু হয়ে ওঠেনি; বরং দিনে দিনে ক্ষমতার দ্বারা ব্যবহৃত হতে হতে নিজেরাই রক্তখেকোদের মতো হয়ে উঠেছিল, তারাও বিপ্লবের ভয়ে পলাতক, সেই সুযোগে সমাজের যারা ‘লুম্পেন প্রলেতারিয়েত’, তারা নেমে পড়ে ছিনতাই-রাহাজানি-চুরিতে। এসব রুখতেও তরুণসমাজের এগিয়ে আসতে হলো। রাতে মন্দির ও পাড়া-মহল্লা পাহারা, আর দিনে রাস্তায় ট্রাফিকের কাজ।
লুট হয়ে যাওয়া সংসদ ভবন ও আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সাফাই করার কাজ। অতএব, বিপ্লবকে তাই দীর্ঘজীবী হতেই হয়। নয়তো এক মন্দকে বিদায় করার পর হাজারো মন্দ অপেক্ষা করে সেই শূন্যস্থান পূরণের। বিপ্লবের দায়িত্ব—যতটুকু পারা যায়, সেই স্থানটিকে সুরক্ষিত করে, সুনীতি, সুশৃঙ্খলা ও সুকুমারবৃত্তি দিয়ে তাকে পূরণ করা। কাজটি সহজ নয়, একে মাঝপথে ছেড়ে দিলে এত আত্মোৎসর্গ বিফলে যাবে। কাজেই হালটা একটা সময় পর্যন্ত ধরে রাখতেই হয়।
কিন্তু তরুণ এই শিক্ষার্থীরা কত দিন ট্রাফিক সামলাবে, কত দিন বুড়োদের নিয়মকানুন শেখাবে, দুর্নীতিকে দূরে ঠেলে রাখবে? এটা তো তাদের কাজ নয়। যেহেতু আমাদের বড়রা দেশটাকে যাচ্ছেতাই করে নরকে পরিণত করেছে, তাই তারা বাধ্য হয়ে বিপ্লবটা করেছে।
ওদিকে তো লেখাপড়াটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একদিকে বিপ্লব সফল করার তাগিদ, অন্যদিকে লেখাপড়া সম্পন্ন করার তাড়া। এই দুটো বিষয়কে সমন্বয় করা যায় শিক্ষার্থীদের যদি রাষ্ট্র পরিচালনার কাজে সম্পৃক্ত করা যায়। এতে করে বিপ্লবের পথ থেকে তারা সরে গেল না। আবার দেশ গঠনের কাজটাও হলো।
কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বয়স অনুপাতে তিন মাস মেয়াদে শিক্ষার্থীদের রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করার জন্য পাঠানো যেতে পারে। সেমিস্টারপদ্ধতিতে এটি করলে তারা শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ জারি রাখতে পারবে।
পুরো প্রক্রিয়া সমন্বয় করে ট্রাফিক, সচিবালয়, মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন, সংসদসহ বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষার্থীরা নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন এবং তিন মাস কাজের পর মতামতসহ সুপারিশপত্র জমা দিয়ে আসবেন। সেটা যদি যৌক্তিক হয়, তবে তা সর্বসম্মতিক্রমে প্রয়োগ করতে হবে। কাজের ক্ষেত্রে অসংগতি পেলে সেটা তাঁরা সর্বোচ্চ পর্যায়ে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে জানাতে পারবেন এবং অভিযোগের ভিত্তিতে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ ও প্রতিকার নিশ্চিত করতে হবে। এতে করে জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে এবং স্বচ্ছ উপায়ে রাষ্ট্র পরিচালনা সম্ভব হবে। দুর্নীতি কমে যাবে। নাগরিকেরা হয়রানির শিকার কম হবেন। সর্বোপরি গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে আসবে।
অনেকেই বলতে পারেন, এই কর্মসূচিকে খণ্ডকালীন কাজ হিসেবে ঘোষণা করলেই তো হয়। আমি মনে করি সেটি আত্মঘাতী হবে।বিপ্লবোত্তর দেশ গড়ার কাজ কোনো বেতনভুক্ত কর্মচারীর হাতে ছেড়ে দেওয়া যায় না। সেটি বিপ্লবীদেরই করতে হয়। তারা কাজটি করবে নিজেদের আত্মার ও নৈতিকতার তাগিদে, বিপ্লবকে সফল করার লক্ষ্যে—সবচেয়ে বড় কথা, আগামীর প্রজন্মকে একটি সত্যিকারের সোনার বাংলা উপহার দেওয়ার অঙ্গীকার থেকে।
এত দিন যে ‘সোনার বাংলা’র গল্প বলা হতো, সেটি পুরাকল্পীয়, মিথিক। দেশে ভোটাধিকার বলি, আর কথা বলার অধিকার, কোনোটাই ছিল না। মানুষ সামান্য কার্টুনও আঁকতে পারত না। তুলে নিয়ে গিয়ে অত্যাচার, এমনকি মেরেও ফেলা হয়েছে। আমরা কার্টুনিস্ট কিশোর ও লেখক মুশতাকের কথা ভুলে যাইনি। এমন আরও বহু উদাহরণ দেওয়া সম্ভব। বাংলাদেশের আবু গারিব হিসেবে পরিচিতি পাওয়া, কুখ্যাত ‘আয়নাঘরে’র কাহিনি তো কেবল প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। সারা দেশে কতশত ‘আয়নাঘর’ যে আছে!
পুরোনো রাজনৈতিক ধ্যানধারণা ও দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্রব্যবস্থাকে পাল্টে দিতে আমূল সংস্কারে হাত দিয়েছে তরুণ সমাজ। তাদের হাতে রয়েছে আধুনিক প্রযুক্তি। রয়েছে সারা বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ। এই যোগাযোগ ও প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে সত্যিকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ তারাই গড়ে তুলতে পারবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো পীড়নমূলক কালাকানুন চালু করা হয়েছিল, নির্দোষ মানুষকে গ্রেপ্তার ও বিরুদ্ধমতকে দমন করার অভিপ্রায়ে, সেটির অবসান ঘটবে। আশা করি, বাংলাদেশে এত দিন যে উদার গণতান্ত্রিক আবহের অভাব ছিল, মানুষ মুক্তভাবে নিশ্বাস নিতে পারছিল না, নিজের মত ফেসবুকে লিখতেও ভয় ও আতঙ্কে থাকত, সেটি কেটে যাবে।
মানুষ নিঃসংকোচে যেন নিজের মত প্রকাশ করতে পারে। বিরুদ্ধমতের পাল্টা জবাব যেন প্রাণনাশ, হামলা ও মামলার দিকে না যায়।বিরোধীকেও বলতে দিতে হবে। যুক্তি দিয়ে তাকে মোকাবিলা করতে হবে। ‘যুক্তিকে বাঁচতে দাও, যুক্তিকে বাঁচতে দাও যুক্তির স্বচ্ছ আলোয় শাণিয়ে নিচ্ছি আমার চোখ বিরোধীর যুক্তিটাও বন্ধুরা আমল দাও,বিরোধীর স্বাধীনতাটাই স্বাধীনতা সাব্যস্ত হোক।’
হিংসা ও বিদ্বেষ দিয়ে দেশ গড়া যাবে না। এ কথা অস্বীকারের উপায় নেই, দেড় দশকে শেখ হাসিনা সরকার গোটা দেশকে যে জায়গায় নিয়ে গিয়েছিল: প্রতিটি প্রতিষ্ঠান স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছিল, সব ক্ষমতা হয়ে গিয়েছিল এককেন্দ্রিক, ব্যাংক থেকে শুরু করে সরকারি সব প্রকল্প হয়ে উঠেছিল লুটেরাদের উর্বরভূমি, বিদেশে অর্থ পাচারের উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছিল, আর সব ক্ষেত্রে পেশাদারির পরোয়া না করে দলীয়করণ করা হয়েছিল। এসব ছাড়াও যেভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের ঘটনা হয়েছে, তা নজিরবিহীন।
তো এই দেড় দশকের ক্ষোভ থাকবে। স্বাভাবিক। কিন্তু আন্দোলনকারী সব শিক্ষার্থী ও পরিবর্তনকামী সব নাগরিককে এটাও বুঝতে হবে, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ ও শেখ মুজিবুর রহমানের আওয়ামী লীগ এক নয়। স্বাধীনতা-উত্তর বাকশাল আর এই একবিংশ শতাব্দীর একনায়কতন্ত্র এক নয়। সম্পর্ক থাকলেও দুটির প্রেক্ষাপট একেবারেই ভিন্ন। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধ ও এর চেতনার সঙ্গেও শেখ হাসিনার সরকারের কোনো সম্পর্ক নেই। তাই ক্ষোভের আগুন যেন ভুল দিকে না ছড়ায়।
ফ্যাসিবাদী সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে যেভাবে পিতৃতন্ত্রকে ব্যবহার করে, ঠিক সেভাবেই এ দেশে জাতির পিতার ধারণা ব্যবহৃত হয়েছে। আর এর অতিরঞ্জনের কারণে শেখ হাসিনা নিজেই নিজের পিতার অসম্মান করেছেন সবচেয়ে বেশি। আওয়ামী লীগের ওপর সাধারণ মানুষের যে আস্থা ছিল, সেটাও একার হাতেই গুঁড়িয়ে দিয়েছেন শেখ হাসিনা।
ফ্যাসিবাদী সরকার যেভাবে পুরাকল্পীয় বয়ান নির্মাণ করে, হাসিনা সরকারও সেভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিনির্মাণের চেষ্টা করেছে।মুক্তিযুদ্ধ মানে আওয়ামী লীগ নয়, আর শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ তো আরও নয়। এসব বিষয় তরুণসমাজকে বুঝতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধের নাম ভাঙিয়ে ফ্যাসিস্ট কায়দায় আর কেউ যেন ক্ষমতার অপব্যবহার করতে না পারে, সেদিকে তরুণদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। আরও একটি বিষয়ে তরুণ তুর্কিদের অটল থাকতে হবে, সেটি হলো দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে। যে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ রাষ্ট্র জন্মের বিরোধিতা করেছিল, সেই দল ও মতের কেউ যেন এ দেশে চক্রান্ত ও ফায়দা লোটার সুযোগ না পায়, সেদিকে সদাসতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। প্রত্যয়ে থাকতে হবে দেশে যেন সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠা পায়। বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও চলচ্চিত্রশিক্ষক
হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বঙ্গীয় শব্দকোষে বিপ্লবের অর্থ দেওয়া রয়েছে প্লবন, ভাসা, নাশ, উপদ্রব, অরাজকতা, উচ্ছেদ প্রভৃতি।বাংলাদেশে জুলাই-আগস্টে যা ঘটে গেল তা এই সব অর্থেই বিপ্লব। চাকরির ক্ষেত্রে বৈষম্যকে প্লাবিত করার প্রত্যয়ে তরুণেরা সব অন্যায় ও দুর্নীতির নাশ করতে চাইলেন। সেখানে বিপ্লব দমনের নামে হত্যাযজ্ঞ হলো। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে বারুদ জমা ছিল, তাতে গিয়ে পড়ল অগ্নিস্ফুলিঙ্গ। বিস্ফোরিত হলো গোটা সমাজ। শেষ পর্যন্ত টিকতে না পেরে উচ্ছেদ হলো স্বৈরশাসক।
কিন্তু এখানেই বিপ্লবের কাজ শেষ হয় না। মূল প্রতিপক্ষ নতি স্বীকারের পর আবির্ভূত হয় তৃতীয় পক্ষের, তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করে, সাম্প্রদায়িক হামলা চালায়, ভাস্কর্য ও ঐতিহাসিক ভবন বিনষ্ট করে, অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। আগস্টের ৫ তারিখ শেখ হাসিনার বিদায়ের পর থেকেই আমরা দেখলাম আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটল দেশে। রাতে ডাকাত-ডাকাত রব, সাধারণ মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে পারছে না।
জনগণের বন্ধু দাবি করা পুলিশ, যারা কখনোই বৃহত্তর অর্থে জনগণের বন্ধু হয়ে ওঠেনি; বরং দিনে দিনে ক্ষমতার দ্বারা ব্যবহৃত হতে হতে নিজেরাই রক্তখেকোদের মতো হয়ে উঠেছিল, তারাও বিপ্লবের ভয়ে পলাতক, সেই সুযোগে সমাজের যারা ‘লুম্পেন প্রলেতারিয়েত’, তারা নেমে পড়ে ছিনতাই-রাহাজানি-চুরিতে। এসব রুখতেও তরুণসমাজের এগিয়ে আসতে হলো। রাতে মন্দির ও পাড়া-মহল্লা পাহারা, আর দিনে রাস্তায় ট্রাফিকের কাজ।
লুট হয়ে যাওয়া সংসদ ভবন ও আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সাফাই করার কাজ। অতএব, বিপ্লবকে তাই দীর্ঘজীবী হতেই হয়। নয়তো এক মন্দকে বিদায় করার পর হাজারো মন্দ অপেক্ষা করে সেই শূন্যস্থান পূরণের। বিপ্লবের দায়িত্ব—যতটুকু পারা যায়, সেই স্থানটিকে সুরক্ষিত করে, সুনীতি, সুশৃঙ্খলা ও সুকুমারবৃত্তি দিয়ে তাকে পূরণ করা। কাজটি সহজ নয়, একে মাঝপথে ছেড়ে দিলে এত আত্মোৎসর্গ বিফলে যাবে। কাজেই হালটা একটা সময় পর্যন্ত ধরে রাখতেই হয়।
কিন্তু তরুণ এই শিক্ষার্থীরা কত দিন ট্রাফিক সামলাবে, কত দিন বুড়োদের নিয়মকানুন শেখাবে, দুর্নীতিকে দূরে ঠেলে রাখবে? এটা তো তাদের কাজ নয়। যেহেতু আমাদের বড়রা দেশটাকে যাচ্ছেতাই করে নরকে পরিণত করেছে, তাই তারা বাধ্য হয়ে বিপ্লবটা করেছে।
ওদিকে তো লেখাপড়াটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একদিকে বিপ্লব সফল করার তাগিদ, অন্যদিকে লেখাপড়া সম্পন্ন করার তাড়া। এই দুটো বিষয়কে সমন্বয় করা যায় শিক্ষার্থীদের যদি রাষ্ট্র পরিচালনার কাজে সম্পৃক্ত করা যায়। এতে করে বিপ্লবের পথ থেকে তারা সরে গেল না। আবার দেশ গঠনের কাজটাও হলো।
কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বয়স অনুপাতে তিন মাস মেয়াদে শিক্ষার্থীদের রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করার জন্য পাঠানো যেতে পারে। সেমিস্টারপদ্ধতিতে এটি করলে তারা শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ জারি রাখতে পারবে।
পুরো প্রক্রিয়া সমন্বয় করে ট্রাফিক, সচিবালয়, মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন, সংসদসহ বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষার্থীরা নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন এবং তিন মাস কাজের পর মতামতসহ সুপারিশপত্র জমা দিয়ে আসবেন। সেটা যদি যৌক্তিক হয়, তবে তা সর্বসম্মতিক্রমে প্রয়োগ করতে হবে। কাজের ক্ষেত্রে অসংগতি পেলে সেটা তাঁরা সর্বোচ্চ পর্যায়ে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে জানাতে পারবেন এবং অভিযোগের ভিত্তিতে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ ও প্রতিকার নিশ্চিত করতে হবে। এতে করে জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে এবং স্বচ্ছ উপায়ে রাষ্ট্র পরিচালনা সম্ভব হবে। দুর্নীতি কমে যাবে। নাগরিকেরা হয়রানির শিকার কম হবেন। সর্বোপরি গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে আসবে।
অনেকেই বলতে পারেন, এই কর্মসূচিকে খণ্ডকালীন কাজ হিসেবে ঘোষণা করলেই তো হয়। আমি মনে করি সেটি আত্মঘাতী হবে।বিপ্লবোত্তর দেশ গড়ার কাজ কোনো বেতনভুক্ত কর্মচারীর হাতে ছেড়ে দেওয়া যায় না। সেটি বিপ্লবীদেরই করতে হয়। তারা কাজটি করবে নিজেদের আত্মার ও নৈতিকতার তাগিদে, বিপ্লবকে সফল করার লক্ষ্যে—সবচেয়ে বড় কথা, আগামীর প্রজন্মকে একটি সত্যিকারের সোনার বাংলা উপহার দেওয়ার অঙ্গীকার থেকে।
এত দিন যে ‘সোনার বাংলা’র গল্প বলা হতো, সেটি পুরাকল্পীয়, মিথিক। দেশে ভোটাধিকার বলি, আর কথা বলার অধিকার, কোনোটাই ছিল না। মানুষ সামান্য কার্টুনও আঁকতে পারত না। তুলে নিয়ে গিয়ে অত্যাচার, এমনকি মেরেও ফেলা হয়েছে। আমরা কার্টুনিস্ট কিশোর ও লেখক মুশতাকের কথা ভুলে যাইনি। এমন আরও বহু উদাহরণ দেওয়া সম্ভব। বাংলাদেশের আবু গারিব হিসেবে পরিচিতি পাওয়া, কুখ্যাত ‘আয়নাঘরে’র কাহিনি তো কেবল প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। সারা দেশে কতশত ‘আয়নাঘর’ যে আছে!
পুরোনো রাজনৈতিক ধ্যানধারণা ও দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্রব্যবস্থাকে পাল্টে দিতে আমূল সংস্কারে হাত দিয়েছে তরুণ সমাজ। তাদের হাতে রয়েছে আধুনিক প্রযুক্তি। রয়েছে সারা বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ। এই যোগাযোগ ও প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে সত্যিকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ তারাই গড়ে তুলতে পারবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো পীড়নমূলক কালাকানুন চালু করা হয়েছিল, নির্দোষ মানুষকে গ্রেপ্তার ও বিরুদ্ধমতকে দমন করার অভিপ্রায়ে, সেটির অবসান ঘটবে। আশা করি, বাংলাদেশে এত দিন যে উদার গণতান্ত্রিক আবহের অভাব ছিল, মানুষ মুক্তভাবে নিশ্বাস নিতে পারছিল না, নিজের মত ফেসবুকে লিখতেও ভয় ও আতঙ্কে থাকত, সেটি কেটে যাবে।
মানুষ নিঃসংকোচে যেন নিজের মত প্রকাশ করতে পারে। বিরুদ্ধমতের পাল্টা জবাব যেন প্রাণনাশ, হামলা ও মামলার দিকে না যায়।বিরোধীকেও বলতে দিতে হবে। যুক্তি দিয়ে তাকে মোকাবিলা করতে হবে। ‘যুক্তিকে বাঁচতে দাও, যুক্তিকে বাঁচতে দাও যুক্তির স্বচ্ছ আলোয় শাণিয়ে নিচ্ছি আমার চোখ বিরোধীর যুক্তিটাও বন্ধুরা আমল দাও,বিরোধীর স্বাধীনতাটাই স্বাধীনতা সাব্যস্ত হোক।’
হিংসা ও বিদ্বেষ দিয়ে দেশ গড়া যাবে না। এ কথা অস্বীকারের উপায় নেই, দেড় দশকে শেখ হাসিনা সরকার গোটা দেশকে যে জায়গায় নিয়ে গিয়েছিল: প্রতিটি প্রতিষ্ঠান স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছিল, সব ক্ষমতা হয়ে গিয়েছিল এককেন্দ্রিক, ব্যাংক থেকে শুরু করে সরকারি সব প্রকল্প হয়ে উঠেছিল লুটেরাদের উর্বরভূমি, বিদেশে অর্থ পাচারের উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছিল, আর সব ক্ষেত্রে পেশাদারির পরোয়া না করে দলীয়করণ করা হয়েছিল। এসব ছাড়াও যেভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের ঘটনা হয়েছে, তা নজিরবিহীন।
তো এই দেড় দশকের ক্ষোভ থাকবে। স্বাভাবিক। কিন্তু আন্দোলনকারী সব শিক্ষার্থী ও পরিবর্তনকামী সব নাগরিককে এটাও বুঝতে হবে, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ ও শেখ মুজিবুর রহমানের আওয়ামী লীগ এক নয়। স্বাধীনতা-উত্তর বাকশাল আর এই একবিংশ শতাব্দীর একনায়কতন্ত্র এক নয়। সম্পর্ক থাকলেও দুটির প্রেক্ষাপট একেবারেই ভিন্ন। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধ ও এর চেতনার সঙ্গেও শেখ হাসিনার সরকারের কোনো সম্পর্ক নেই। তাই ক্ষোভের আগুন যেন ভুল দিকে না ছড়ায়।
ফ্যাসিবাদী সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে যেভাবে পিতৃতন্ত্রকে ব্যবহার করে, ঠিক সেভাবেই এ দেশে জাতির পিতার ধারণা ব্যবহৃত হয়েছে। আর এর অতিরঞ্জনের কারণে শেখ হাসিনা নিজেই নিজের পিতার অসম্মান করেছেন সবচেয়ে বেশি। আওয়ামী লীগের ওপর সাধারণ মানুষের যে আস্থা ছিল, সেটাও একার হাতেই গুঁড়িয়ে দিয়েছেন শেখ হাসিনা।
ফ্যাসিবাদী সরকার যেভাবে পুরাকল্পীয় বয়ান নির্মাণ করে, হাসিনা সরকারও সেভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিনির্মাণের চেষ্টা করেছে।মুক্তিযুদ্ধ মানে আওয়ামী লীগ নয়, আর শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ তো আরও নয়। এসব বিষয় তরুণসমাজকে বুঝতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধের নাম ভাঙিয়ে ফ্যাসিস্ট কায়দায় আর কেউ যেন ক্ষমতার অপব্যবহার করতে না পারে, সেদিকে তরুণদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। আরও একটি বিষয়ে তরুণ তুর্কিদের অটল থাকতে হবে, সেটি হলো দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে। যে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ রাষ্ট্র জন্মের বিরোধিতা করেছিল, সেই দল ও মতের কেউ যেন এ দেশে চক্রান্ত ও ফায়দা লোটার সুযোগ না পায়, সেদিকে সদাসতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। প্রত্যয়ে থাকতে হবে দেশে যেন সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠা পায়। বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও চলচ্চিত্রশিক্ষক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৬ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৬ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে