ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে সহিংসতায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে চারজন নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরও ছয়জন। গত রোববার সন্ধ্যায় উপজেলায় খনগাঁও ইউনিয়নের ৮ নম্বর ঘিডোব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন শাহাবুদ্দিন ওরফে সাহাবুলি (৩২), মো. মুজা (৩৮) ও পরাগ আলী (২২) ও রহিমা বেগম (৩২)। গুলিবিদ্ধরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এদিকে, সহিংসতার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকার অজ্ঞাতনামা ৭০০ জনের নামে থানায় মামলা করেছে পুলিশ। কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা হরিপুর থানার এসআই আবু হানিফ মন্ডল বাদী হয়ে গতকাল সোমবার পীরগঞ্জ থানায় মামলাটি করেন।

ওই কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা সরকারি বনিক বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. জামাল উদ্দিন জানান, ভোটগ্রহণ ও গণনা শেষে কিছু মানুষ ভোটে কারচুপির অভিযোগ তোলেন। বিষয়টি মুহূর্তের মধ্যে চাউর হয়। পরে এলাকার বিক্ষুব্ধ লোকজন ভোটকেন্দ্র ঘেরাও করে স্লোগান দিতে থাকে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতনদের জানানো হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) স্ট্রাইকিং ফোর্সের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সহযোগিতায় ভোটের মালামাল নিয়ে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও ভোটের দায়িত্বে থাকা অন্যরা কেন্দ্র থেকে উপজেলা শহরে চলে যান।

মামলার আরজিতে জানা যায়, স্ট্রাইকিং ফোর্সের মাইক্রোবাস ভাঙচুর করে উত্তেজিত জনতা। পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। নিজেদের জানমাল ও সরকারি সম্পদ রক্ষার স্বার্থে কর্তব্যরত ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে বিজিবি সদস্যরা সেখানে ৪৭ রাউন্ড গুলি বর্ষণ করের। এতে তিনজন ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার মারা যান রহিমা। এ নিয়ে এলাকায় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, নির্বাচনে হেরে গিয়ে বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুজ্জামান ও তাঁর সমর্থকেরা ভোট পুনর্গণনার দাবিতে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রায় দেড় ঘণ্টার মতো অবরুদ্ধ করে রাখেন। খবর পেয়ে পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে পৌঁছামাত্রই তাঁর গাড়ি ভাঙচুর করে। সড়ক কেটে দেয় বিক্ষুব্ধরা। এ সময় সরকারি মালামাল এবং আত্মরক্ষার্থে বিজিবি গুলি চালায়।

ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. রাকিবুল আলম চয়ন বলেন, সহিংসতার ঘটনায় সদর হাসপাতালে ৬ জন ভর্তি হয়েছেন।

ইউএনও মো. রেজাউল করিম জানান, পীরগঞ্জ একটি শান্ত এবং শান্তিপ্রিয় এলাকা। নির্বাচনী সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি।

এ বিষয়ে পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, বিজিবি কর্তৃপক্ষ জানমাল ও সরকারি সম্পদ রক্ষায় গুলিবর্ষণ করেছে। অপরাধীদের শনাক্ত করার জন্য নিরপেক্ষ তদন্ত চলছে।