মইনুল হাসান
জনগণকে ধোঁকা দিলে, জনগণ তা অনেক দিন মনে রাখে, প্রবঞ্চককে ক্ষমা করে না। রাজনীতিতে অনৈতিক দর-কষাকষি বা কৌশলের পরিবর্তে অপকৌশলকে অবলম্বন করে জয়লাভ করা সম্ভব হলেও হতে পারে। তাতে জনগণের মন জয় করা যায় না।
নির্বাচনে চুপি চুপি কারচুপির অভিযোগ নয়; বরং বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে ২০২০ সালে ৩ নভেম্বরের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বড় ধরনের কারচুপির অভিযোগ করেছিলেন পরাজিত প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তাঁর উগ্র সমর্থকেরা। শুধু তা-ই নয়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর ‘স্বপ্নের আমেরিকা’ ধরে রাখার সুযোগ না পেয়ে, ভোটে হার অস্বীকার করেন এবং নিরন্তর মিথ্যা উসকানি দিতে থাকেন। ফলে ‘প্রাউড বয়েজ’ এবং ‘ওথ কিপারস’ নামধারী ‘হোয়াইট সুপ্রিমেসি’ চিন্তাচেতনার ধারক উগ্রবাদীরা পরের বছর, ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি সুরক্ষিত ক্যাপিটল ভবনে ভয়ংকর এবং নিন্দনীয় হামলা চালায়। প্রযুক্তির কল্যাণে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বসেই কোটি কোটি মানুষ তা সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছে।
নির্বাচনে কারচুপি বা জালিয়াতির বিশ্বাসযোগ্য কোনো প্রমাণ না থাকলেও এক জরিপ থেকে জানা গেছে যে আমেরিকানদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আজও মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে, ২০২০ সালের নির্বাচনে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পকে পরাজিত করা হয়। অথচ নির্বাচনের ফল পাল্টে দেওয়ার নানা অভিযোগে ট্রাম্পকে ফৌজদারি মামলার মুখোমুখি হতে হয়েছে। সে বছর যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ডেমোক্র্যাট জো বাইডেন।
যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রে এমন কলঙ্কজনক ঘটনা এই প্রথম নয়। দীর্ঘকাল গণতন্ত্রের চর্চাকারী, শীর্ষ পরাশক্তি মার্কিন মুলুকে আজ থেকে প্রায় ২০০ বছর আগে, ১৮২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বড় রকমের কারচুপি হয়েছিল। সময়ের হিসাবে দুই শতাব্দী হলেও, ইতিহাস নিয়ে যাঁরা ঘাঁটাঘাঁটি করেন, তাঁরা আজও সেই ঘটনা ঘটা করে মনে করিয়ে দেন।
১৮২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের দশম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন চারজন। তাঁরা হলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কুইন্সি অ্যাডামস, জনপ্রিয় জেনারেল অ্যান্ড্রু জ্যাকসন, ট্রেজারি সেক্রেটারি উইলিয়াম ক্রফোর্ড ও হাউস স্পিকার হেনরি ক্লে। চারজনই ঝানু রাজনীতিবিদ এবং সবাই ডেমোক্রেটিক-রিপাবলিকান পার্টির, অর্থাৎ একই দলের। কারণ তত দিনে চিরবৈরী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দল ফেডারেলিস্ট পার্টির বিলুপ্তি ঘটেছে, রাজনীতির মঞ্চ থেকে বিদায় নিয়েছে।
প্রেসিডেন্ট পদটি দখলে নেওয়ার জন্য ভোট যুদ্ধ শুরু হলে অ্যান্ড্রু জ্যাকসন পপুলার ভোট, অর্থাৎ সাধারণের ভোটে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী থেকে প্রায় ৩৯ হাজার ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে থাকেন। এ ছাড়া ইলেকটোরাল ভোটেও অন্যদের পেছনে ফেলে জ্যাকসন সর্বোচ্চ ৯৯টি ভোট পান। অন্য প্রার্থীদের মধ্যে জন কুইন্সি অ্যাডামস ৮৪টি, উইলিয়াম ক্রফোর্ড ৪১টি ও হেনরি ক্লে ৩৭টি ইলেকটোরাল ভোট পান। ফলে কোনো প্রার্থীই পর্যাপ্তসংখ্যক ইলেকটোরাল ভোট পেতে সক্ষম হননি।
পরিস্থিতি এমন হলে সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনী অনুসারে মার্কিন ‘হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভস’ বা প্রতিনিধি সভার শরণাপন্ন হতে হবে। সে বছর প্রতিনিধি সভার হাউস স্পিকার ছিলেন হেনরি ক্লে। প্রতিনিধি সভার প্রতিনিধিদের ভোট হাত করার জন্য, ভোটে পিছিয়ে থাকা জন কুইন্সি অ্যাডামস কূটকৌশলের আশ্রয় নেন। তিনি হেনরি ক্লেকে নিজের পক্ষে টানার জন্য টোপ ফেলেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তিনি হেনরি ক্লেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে নিয়োগ দেবেন বলে গোপনে তাঁর সঙ্গে এক অনৈতিক সমঝোতা করেন।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সবার থেকে পিছিয়ে ছিলেন হেনরি ক্লে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদের জন্য প্রলুব্ধ হলেন।
পুরো এক মাস দর-কষাকষির পর ক্লের সমর্থকেরা জন কুইন্সি অ্যাডামসের পক্ষে ভোট দেন। নির্বাচনে কেনটাকিতে সাধারণ মানুষের একটি ভোটও পাননি কুইন্সি। অথচ সবাইকে বিস্মিত করে হেনরি ক্লের প্রত্যক্ষ ভূমিকার কারণে কেনটাকির ইলেকটোরাল ভোট পড়ে কুইন্সির পক্ষে। জন কুইন্সি অ্যাডামস যুক্তরাষ্ট্রের ষষ্ঠ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
প্রেসিডেন্ট পদে অভিষেকের পর কালবিলম্ব না করে কুইন্সি তাঁর প্রতিশ্রুতি রেখেছিলেন। তিনি হেনরি ক্লেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন। তাঁকে পুরস্কৃত করেন। সব প্রতিদ্বন্দ্বীর থেকে অ্যান্ড্রু জ্যাকসন এগিয়ে থেকেও রাজনীতির কূটচালে তিনি পিছিয়ে পড়েন এবং তাঁকে পরাজয় মেনে নিতে হয়। স্বাভাবিক কারণেই ক্রুদ্ধ অ্যান্ড্রু জ্যাকসন সে বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে ‘অনৈতিক দর-কষাকষির নির্বাচন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি সিনেট থেকেও পদত্যাগ করেন।
উল্লেখ্য, ১৮১২ সালের যুদ্ধে মেজর জেনারেল অ্যান্ড্রু জ্যাকসন নিউ অরলিন্সে ব্রিটিশদের পরাজিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। যুদ্ধ জয়ের ফলে তিনি ব্যাপক পরিচিতি পান এবং জাতীয় বীর হিসেবে বিপুল খ্যাতি লাভ করেন।
আইনগত কোনো ত্রুটি না থাকায়, অবশেষে অ্যান্ড্রু জ্যাকসন পরাজয় মেনে নিয়েছিলেন। তবে তিনি পরবর্তী নির্বাচনে এমন কারচুপির উপযুক্ত জবাব দেওয়ার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হন। অনৈতিক দর-কষাকষির নির্বাচনকে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণও ভালোভাবে নেয়নি। যেহেতু গণতন্ত্রের ভাষা হলো ‘ব্যালট’, সেহেতু এর জবাব দেওয়ার জন্য জনগণকে অপেক্ষা করতে হয় আরও চার বছর। ১৮২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী হয়ে অ্যান্ড্রু ন্যাশনাল রিপাবলিকান পার্টি থেকে দাঁড়ানো জন কুইন্সি অ্যাডামসকে পরাজিত করেন এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। শুধু তা-ই নয়, তিনি ১৮৩২ সালে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হেনরি ক্লেকে পরাজিত করে দ্বিতীয় মেয়াদেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
আগামী বছর, ২০২৪ সালের শুরুতে, অর্থাৎ ৭ জানুয়ারি, রবিবার বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ সাধারণ নির্বাচন। এদিকে একই বছর ৫ নভেম্বর, মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৬০তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। একই বছরে বন্ধুপ্রতিম দুটি গণতান্ত্রিক দেশের নির্বাচন পৃথিবীর দুই প্রান্তের বিশাল দুই জনগোষ্ঠীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
দুই শতাব্দী আগের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে একটি বিষয় পরিষ্কার হয়েছে যে আইনের মোড়কে বা সাংবিধানিক কাঠামোর ধুয়া তুলে, যেকোনো উপায়ে জনগণকে ধোঁকা দিলে, জনগণ তা অনেক দিন মনে রাখে, প্রবঞ্চককে ক্ষমা করে না। রাজনীতিতে অনৈতিক দর-কষাকষি বা কৌশলের পরিবর্তে অপকৌশলকে অবলম্বন করে জয়লাভ করা সম্ভব হলেও হতে পারে। তাতে জনগণের মন জয় করা যায় না। ভ্রষ্ট, নীতিহীন রাজনীতি গণতন্ত্রকে কলুষিত করে, যা দেশ এবং জাতির জন্য দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিকর। ‘গণতন্ত্র’ এবং ‘ষড়যন্ত্র’ পাশাপাশি চলতে পারে না। মোটকথা রাজনীতিতে যেমন শঠতার কোনো স্থান নেই, তেমনি সততার বিকল্প নেই, অন্তত ইতিহাস তা-ই বলে।
জনগণকে ধোঁকা দিলে, জনগণ তা অনেক দিন মনে রাখে, প্রবঞ্চককে ক্ষমা করে না। রাজনীতিতে অনৈতিক দর-কষাকষি বা কৌশলের পরিবর্তে অপকৌশলকে অবলম্বন করে জয়লাভ করা সম্ভব হলেও হতে পারে। তাতে জনগণের মন জয় করা যায় না।
নির্বাচনে চুপি চুপি কারচুপির অভিযোগ নয়; বরং বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে ২০২০ সালে ৩ নভেম্বরের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বড় ধরনের কারচুপির অভিযোগ করেছিলেন পরাজিত প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তাঁর উগ্র সমর্থকেরা। শুধু তা-ই নয়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর ‘স্বপ্নের আমেরিকা’ ধরে রাখার সুযোগ না পেয়ে, ভোটে হার অস্বীকার করেন এবং নিরন্তর মিথ্যা উসকানি দিতে থাকেন। ফলে ‘প্রাউড বয়েজ’ এবং ‘ওথ কিপারস’ নামধারী ‘হোয়াইট সুপ্রিমেসি’ চিন্তাচেতনার ধারক উগ্রবাদীরা পরের বছর, ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি সুরক্ষিত ক্যাপিটল ভবনে ভয়ংকর এবং নিন্দনীয় হামলা চালায়। প্রযুক্তির কল্যাণে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বসেই কোটি কোটি মানুষ তা সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছে।
নির্বাচনে কারচুপি বা জালিয়াতির বিশ্বাসযোগ্য কোনো প্রমাণ না থাকলেও এক জরিপ থেকে জানা গেছে যে আমেরিকানদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আজও মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে, ২০২০ সালের নির্বাচনে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পকে পরাজিত করা হয়। অথচ নির্বাচনের ফল পাল্টে দেওয়ার নানা অভিযোগে ট্রাম্পকে ফৌজদারি মামলার মুখোমুখি হতে হয়েছে। সে বছর যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ডেমোক্র্যাট জো বাইডেন।
যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রে এমন কলঙ্কজনক ঘটনা এই প্রথম নয়। দীর্ঘকাল গণতন্ত্রের চর্চাকারী, শীর্ষ পরাশক্তি মার্কিন মুলুকে আজ থেকে প্রায় ২০০ বছর আগে, ১৮২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বড় রকমের কারচুপি হয়েছিল। সময়ের হিসাবে দুই শতাব্দী হলেও, ইতিহাস নিয়ে যাঁরা ঘাঁটাঘাঁটি করেন, তাঁরা আজও সেই ঘটনা ঘটা করে মনে করিয়ে দেন।
১৮২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের দশম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন চারজন। তাঁরা হলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কুইন্সি অ্যাডামস, জনপ্রিয় জেনারেল অ্যান্ড্রু জ্যাকসন, ট্রেজারি সেক্রেটারি উইলিয়াম ক্রফোর্ড ও হাউস স্পিকার হেনরি ক্লে। চারজনই ঝানু রাজনীতিবিদ এবং সবাই ডেমোক্রেটিক-রিপাবলিকান পার্টির, অর্থাৎ একই দলের। কারণ তত দিনে চিরবৈরী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দল ফেডারেলিস্ট পার্টির বিলুপ্তি ঘটেছে, রাজনীতির মঞ্চ থেকে বিদায় নিয়েছে।
প্রেসিডেন্ট পদটি দখলে নেওয়ার জন্য ভোট যুদ্ধ শুরু হলে অ্যান্ড্রু জ্যাকসন পপুলার ভোট, অর্থাৎ সাধারণের ভোটে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী থেকে প্রায় ৩৯ হাজার ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে থাকেন। এ ছাড়া ইলেকটোরাল ভোটেও অন্যদের পেছনে ফেলে জ্যাকসন সর্বোচ্চ ৯৯টি ভোট পান। অন্য প্রার্থীদের মধ্যে জন কুইন্সি অ্যাডামস ৮৪টি, উইলিয়াম ক্রফোর্ড ৪১টি ও হেনরি ক্লে ৩৭টি ইলেকটোরাল ভোট পান। ফলে কোনো প্রার্থীই পর্যাপ্তসংখ্যক ইলেকটোরাল ভোট পেতে সক্ষম হননি।
পরিস্থিতি এমন হলে সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনী অনুসারে মার্কিন ‘হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভস’ বা প্রতিনিধি সভার শরণাপন্ন হতে হবে। সে বছর প্রতিনিধি সভার হাউস স্পিকার ছিলেন হেনরি ক্লে। প্রতিনিধি সভার প্রতিনিধিদের ভোট হাত করার জন্য, ভোটে পিছিয়ে থাকা জন কুইন্সি অ্যাডামস কূটকৌশলের আশ্রয় নেন। তিনি হেনরি ক্লেকে নিজের পক্ষে টানার জন্য টোপ ফেলেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তিনি হেনরি ক্লেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে নিয়োগ দেবেন বলে গোপনে তাঁর সঙ্গে এক অনৈতিক সমঝোতা করেন।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সবার থেকে পিছিয়ে ছিলেন হেনরি ক্লে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদের জন্য প্রলুব্ধ হলেন।
পুরো এক মাস দর-কষাকষির পর ক্লের সমর্থকেরা জন কুইন্সি অ্যাডামসের পক্ষে ভোট দেন। নির্বাচনে কেনটাকিতে সাধারণ মানুষের একটি ভোটও পাননি কুইন্সি। অথচ সবাইকে বিস্মিত করে হেনরি ক্লের প্রত্যক্ষ ভূমিকার কারণে কেনটাকির ইলেকটোরাল ভোট পড়ে কুইন্সির পক্ষে। জন কুইন্সি অ্যাডামস যুক্তরাষ্ট্রের ষষ্ঠ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
প্রেসিডেন্ট পদে অভিষেকের পর কালবিলম্ব না করে কুইন্সি তাঁর প্রতিশ্রুতি রেখেছিলেন। তিনি হেনরি ক্লেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন। তাঁকে পুরস্কৃত করেন। সব প্রতিদ্বন্দ্বীর থেকে অ্যান্ড্রু জ্যাকসন এগিয়ে থেকেও রাজনীতির কূটচালে তিনি পিছিয়ে পড়েন এবং তাঁকে পরাজয় মেনে নিতে হয়। স্বাভাবিক কারণেই ক্রুদ্ধ অ্যান্ড্রু জ্যাকসন সে বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে ‘অনৈতিক দর-কষাকষির নির্বাচন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি সিনেট থেকেও পদত্যাগ করেন।
উল্লেখ্য, ১৮১২ সালের যুদ্ধে মেজর জেনারেল অ্যান্ড্রু জ্যাকসন নিউ অরলিন্সে ব্রিটিশদের পরাজিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। যুদ্ধ জয়ের ফলে তিনি ব্যাপক পরিচিতি পান এবং জাতীয় বীর হিসেবে বিপুল খ্যাতি লাভ করেন।
আইনগত কোনো ত্রুটি না থাকায়, অবশেষে অ্যান্ড্রু জ্যাকসন পরাজয় মেনে নিয়েছিলেন। তবে তিনি পরবর্তী নির্বাচনে এমন কারচুপির উপযুক্ত জবাব দেওয়ার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হন। অনৈতিক দর-কষাকষির নির্বাচনকে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণও ভালোভাবে নেয়নি। যেহেতু গণতন্ত্রের ভাষা হলো ‘ব্যালট’, সেহেতু এর জবাব দেওয়ার জন্য জনগণকে অপেক্ষা করতে হয় আরও চার বছর। ১৮২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী হয়ে অ্যান্ড্রু ন্যাশনাল রিপাবলিকান পার্টি থেকে দাঁড়ানো জন কুইন্সি অ্যাডামসকে পরাজিত করেন এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। শুধু তা-ই নয়, তিনি ১৮৩২ সালে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হেনরি ক্লেকে পরাজিত করে দ্বিতীয় মেয়াদেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
আগামী বছর, ২০২৪ সালের শুরুতে, অর্থাৎ ৭ জানুয়ারি, রবিবার বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ সাধারণ নির্বাচন। এদিকে একই বছর ৫ নভেম্বর, মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৬০তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। একই বছরে বন্ধুপ্রতিম দুটি গণতান্ত্রিক দেশের নির্বাচন পৃথিবীর দুই প্রান্তের বিশাল দুই জনগোষ্ঠীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
দুই শতাব্দী আগের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে একটি বিষয় পরিষ্কার হয়েছে যে আইনের মোড়কে বা সাংবিধানিক কাঠামোর ধুয়া তুলে, যেকোনো উপায়ে জনগণকে ধোঁকা দিলে, জনগণ তা অনেক দিন মনে রাখে, প্রবঞ্চককে ক্ষমা করে না। রাজনীতিতে অনৈতিক দর-কষাকষি বা কৌশলের পরিবর্তে অপকৌশলকে অবলম্বন করে জয়লাভ করা সম্ভব হলেও হতে পারে। তাতে জনগণের মন জয় করা যায় না। ভ্রষ্ট, নীতিহীন রাজনীতি গণতন্ত্রকে কলুষিত করে, যা দেশ এবং জাতির জন্য দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিকর। ‘গণতন্ত্র’ এবং ‘ষড়যন্ত্র’ পাশাপাশি চলতে পারে না। মোটকথা রাজনীতিতে যেমন শঠতার কোনো স্থান নেই, তেমনি সততার বিকল্প নেই, অন্তত ইতিহাস তা-ই বলে।
প্রবৃদ্ধির শীর্ষে থেকেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের দৌড়ে পিছিয়ে রয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ৫০ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়েছে
২ দিন আগেদুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি, উচ্চ করহারসহ ১৭ ধরনের বাধায় বিপর্যস্ত দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। রয়েছে সামাজিক সমস্যাও।
২ দিন আগেজমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৬ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৯ দিন আগে