চৈত্রের গরমে বরিশাল নগরে বাড়ছে পানিসংকট। চাহিদার তুলনায় সিটি করপোরেশনে (বিসিসি) অর্ধেকেরও কম পানি সরবরাহ করছে। বিশেষ করে বর্ধিত অনেক এলাকায় এখনো পানির সংযোগই দেওয়া হয়নি। অপরদিকে নগরীর প্রধান এলাকাগুলোতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ৩০-৪০ ফুট নিচে নেমে যাওয়ায় টিউবওয়েলেও পানি উঠছে না।

বিসিসির তথ্যমতে, নগরের ৬ লাখ জনগণের জন্য প্রায় সাড়ে ৫ কোটি লিটার পানির চাহিদা। তবে সরবরাহ রয়েছে মাত্র ৪৫ ভাগ। যদিও এই নগরে স্থাপন করা দুটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট অচল থাকায় কাজে আসছে না। এদিকে বিশ্ব পানি দিবসে মঙ্গলবার এক সভায় নগরের প্রায় ৩৫ হাজার গভীর নলকূপে অতিমাত্রায় পানি উত্তোলনে ভূগর্ভস্থ পানির সংকট সৃষ্টি করছে বলে জানানো হয়। যদিও বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) পানিসংকটের কোনো সমাধান দিতে পারেনি।

বিসিসির পানি শাখা জানিয়েছে, নগরে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি লিটার পানির চাহিদা রয়েছে। এর সধ্যে সরবরাহ রয়েছে মাত্র ৪৫ শতাংশ। অথচ দৈনিক ৩ কোটি ২০ লাখ লিটার পানি সরবরাহের প্ল্যান্ট দুটো পড়ে আছে অচল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল নগরীর প্রাণকেন্দ্র সদর রোড, নিউ সার্কুলার রোড, চাঁদমারী, নথুল্লাবাদ, নাজিরমহল্লা, কাউনিয়া, আমানতগঞ্জসহ অনেক স্থানেই পানির স্তর পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে ওইসব এলাকায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। নগরের পশ্চিম কাউনিয়া সোবাহান মিয়ার পুলসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা শাম্মি জাহান বলেন, চাপকলে পানি উঠেই না। টিউবওয়েলের পানি ওঠাতে মোটর দীর্ঘসময় ছেড়ে রাখতে হয়। সাপ্লাই পানিও পাওয়া যায় না। অথচ বিসিসিকে প্রতি মাসে পানির বিল দিতে হয়।

সার্কুলার রোডের বাসিন্দা টুটুল হোসেন জানান, তাঁর এলাকায় চাপ কলে পানি ওঠে না। অনেকে দূর-দূরান্ত থেকে পানি সংগ্রহ করেন।

কীর্তনখোলা নদীর পানি শোধন করে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বেলতলায় এবং ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে রূপাতলীতে দুটি সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণ করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। অথচ সেই দুটি প্ল্যান্ট এখন অচল।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মইনুল হাসান জানান, কেন প্ল্যান্ট দুটি চলছে না তা বিসিসিই ভালো বলতে পারবে। তবে হস্তান্তরকালীন তিনি জেনেছেন যে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট দুটি সংস্কারের জন্য দক্ষ জনবল ও কিছু যন্ত্রাংশ দরকার। তাঁর মতে, ভূগর্ভস্থ পানি নিচে নেমে যাওয়ায় সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের মাধ্যমে পানি সরবরাহ এখন সবচেয়ে ভালো উপায়।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের পানি শাখার প্রধান সোহরাব হোসেন পান্না সাংবাদিকদের বলেন, নগরীর দুটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে অচল রয়েছে। নগরীর ৬ লাখ জনগণের জন্য সাড়ে ৫ কোটি গ্যালনের মতো পানির চাহিদা রয়েছে। তবে সরবরাহ রয়েছে ৪৫ ভাগের মতো। আসন্ন গরম মৌসুমে সংকট মোকাবিলায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, সে বিষয়ে তিনি কোনো জবাব দেননি।

এদিকে মঙ্গলবার বরিশাল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে বিশ্ব পানি দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগ উপপরিচালক মো. শহীদুল ইসলাম (উপসচিব)। সভায় নগরের ভূগর্ভস্থ পানির তথ্যগত চিত্র তুলে ধরেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সমন্বয়কারী মো. রফিকুল আলম। তিনি সভায় জানান, নগরীতে মার্চ থেকে মে মাসে ৪৫ ফুট নিচে পানি নেমে যায়। বিসিসি তাঁদের অবহিত করেছে যে নগরে ৫ হাজার টিউবওয়েল আছে। তবে তাঁদের পর্যবেক্ষণমতে, নগরে ৩৫ হাজারের বেশি গভীর নলকূপ রয়েছে। যার ৯০ ভাগই সাবমার্সিবল। এই গভীর নলকূপে অতিমাত্রায় পানি উত্তোলনে ভূগর্ভস্থ পানির সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। সভায় নগরের এই তীব্র পানিসংকটের সমাধান দিতে পারেননি বিসিসির উপসহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম মুরাদ। তবে তিনি সভায় জানিয়েছেন, অচল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট দুটি চালু করতে সংশোধিত প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে।