রুমিন ফারহানা (ব্যারিস্টার, রাজনীতিবিদ)
বাংলাদেশে গত এক মাসে আমরা যা দেখলাম, তাতে সাধারণ চোখে মনে হতে পারে এটি একটি শিক্ষার্থী-জনতার বিক্ষোভ। কিন্তু সেটাকে সাদা চোখে শুধু একটি আন্দোলন হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। কয়েক বছর আগে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন হয়েছিল। এই আন্দোলনে স্কুল-কলেজের ছোট বাচ্চারা সড়কে নেমে এসেছিল। তাদের কিছু চমৎকার স্লোগান আমরা দেখেছিলাম, যা আমাদের মর্মমূলে স্পর্শ করেছিল। তারা বলেছিল, ‘একটু দাঁড়ান, রাষ্ট্র মেরামতের কাজ চলছে’। যে শিশুরা এ রকম স্লোগান দিয়েছিল, ‘রাষ্ট্র মেরামতের কাজ চলছে, সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখিত’, তারাই কিন্তু এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, তারাই কিন্তু ২০২৪ সালের জুলাইয়ের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে।
সুতরাং শৈশবে যে শিশুদের মাথায় আসে ‘রাষ্ট্র মেরামত হচ্ছে, সাময়িক সমস্যার জন্য দুঃখিত’, সেই শিক্ষার্থীদের ক্ষমতা ও গভীর চিন্তাকে শুধু যদি রাজনীতির পথ পরিবর্তন হিসেবে দেখি, তাহলে আমার মনে হয় জাতি হিসেবে আমরা ভুল করব। তাদের মনের ভেতরে যে চিন্তাটি কাজ করেছে, সেটা শুধু অতি সীমিত বিষয় নয়। তাদের চিন্তা আসলে ছিল রাষ্ট্রকে সংস্কার করা। দেশটাকে আবার ঢেলে সাজানো। এর মধ্যে গণতন্ত্র, বাক্স্বাধীনতা, মানুষের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার, সর্বোপরি আছে বৈষম্যের বিরুদ্ধে তীব্র আওয়াজ।
আমরা যদি এই আন্দোলনকে ওপর থেকে পাখির চোখে দেখি, এই আন্দোলন সফল করার জন্য লাখ লাখ শিক্ষার্থী পথে নেমে এসেছিল এবং তারা তাদের জীবন বাজি রাখতে কোনো দ্বিধা করেনি। ১৯৭১ সালে আমরা দেখেছিলাম, মায়েরা ছেলেদের এগিয়ে দিচ্ছে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য, দেশকে স্বাধীন করার অভিপ্রায়ে। একই চিত্র স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর আবারও আমরা দেখলাম। এই ৫৪ বছরের মাথায় এসে দেখলাম, মা-বাবা, অভিভাবকেরাও সন্তানদের সঙ্গে পথে নেমে এসেছিলেন। আমরা দেখলাম, একটা ছেলের হাতে হাতকড়া পরা। মা তার পিঠ চাপড়ে সাহস দিচ্ছে এবং হাসছে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। মা ও ছেলে দুজনেই হাসছে। এই ছবি আমার মনে গভীরভাবে রেখাপাত করেছে। সেটা যেন বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। প্রায় ১৬ বছর ধরে যে নির্যাতন-নিপীড়ন চলেছে, তার প্রতিচ্ছবি।
এগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয়, নতুন প্রজন্ম বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ার প্রত্যয় ও পরিকল্পনা ব্যক্ত করেছে। সেই প্রত্যয় ও পরিকল্পনার মধ্যে দেখলাম আমরা বয়স্করা রাজনীতিকে তো ভালো করতে পারিনি বরং রাজনীতিকে অনেক বেশি পেছনে নিয়ে গেছি। আর বড়রা এই নতুন প্রজন্মের প্রতি বেশি ভরসা করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের ব্যর্থতা, সীমাবদ্ধতা ও ক্ষুদ্রতা এবং দলীয় দৃষ্টিতে সবকিছু দেখার প্রবণতাকে, যা আমরা স্বাধীনতার পর থেকে লক্ষ করেছি। এসব থেকে উত্তরণের একটা আশার আলো আমরা দেখতে পেলাম এই নতুন প্রজন্মের কাছে।
আমি যখন এই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে রাস্তায় ও শহীদ মিনারে দাঁড়িয়েছি, সেই সময় তাদের চোখে-মুখে যে আলো ও দৃঢ়তা দেখেছি, তারা কিন্তু শুধু বাংলাদেশের কথা বলেছে। রাজনৈতিক দল ও মতের কথা তাদের মুখ থেকে শুনিনি। আমি তাদের জিজ্ঞাসা করেছি, তোমরা কি কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত? কেউ কেউ বিশেষ রাজনৈতিক মতাদর্শের কথা বললেও অধিকাংশ বলেছে, তারা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নয়।
তারা আরও বলেছে, দিনের পর দিন তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। সাহস করে কথা বলতে পারেনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো কিছু লিখলে নির্যাতনের খড়্গ নেমে এসেছে। তারা দেখেছে, তাদের ভাইকে তুলে নেওয়া হয়েছে। তারা গণরুমের টর্চারের কথা বলেছে। বুয়েটের ছাত্র আবরার হত্যাকাণ্ডের কথা তুলেছে। তারা দেখেছে, সরকারের অতিদলীয় দৃষ্টিভঙ্গি। ভিন্নমত নির্মূল করার প্রবণতা। এসব দেখে দেখে তারা বড় হয়েছে। একধরনের ক্ষোভ, রাগ এবং দেশটাকে একেবারে নতুন করে নির্মাণের চিন্তা আমি তাদের মধ্যে দেখেছি।
আমাদের আগের প্রজন্ম থেকে এই প্রজন্মের বড় পার্থক্য হচ্ছে, তারা কিন্তু গ্লোবাল ভিলেজের মধ্যেই বাস করে। তারা তো বিশ্বনাগরিক। সুতরাং অন্য দেশের মানুষ কী অধিকার পাচ্ছে, অধিকার আদায়ের জন্য কীভাবে আন্দোলন করছে, কীভাবে স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে, আরব বসন্তের মতো ঘটনা ঘটছে—এসব ব্যাপার কিন্তু তারা কাছ থেকে দেখেছে। তারই একটা প্রতিফলন তাদের চিন্তা, মনন ও রাজনৈতিক ভাবনার মধ্যে গভীর প্রভাব ফেলেছে।
ঘরের পাশে বিশাল গণতান্ত্রিক দেশ ভারতে যে নির্বাচন কিছুদিন আগে হয়েছে, সেখানে আমরা দেখলাম বিজেপি নেতৃত্ব ৪০০ আসন পাওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু সেখানে তারা এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। সেখানে মানুষের ভোটের যে শক্তি, সেটা দেখেছি। ভোটার হিসেবে দাবি করা নরেন্দ্র মোদিকে কীভাবে মুখে কালি মেখে হজম করতে হয়েছে, এসব কিন্তু ছাত্ররা দেখেছে। রাহুল গান্ধী কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত ‘ভারত জোড়ো’ আন্দোলন করেছেন। গণমানুষকে তাঁর সঙ্গে যুক্ত করেছেন। এভাবে ছাত্ররা ঘরের কাছে মানুষের শক্তির জায়গাটা দেখেছে।
সরকার মনে করেছিল বলপ্রয়োগ, পুলিশ দিয়ে হামলা করে, ইন্টারনেট বন্ধ করে আন্দোলন থামানো যাবে। সেটা বড় ভুল ছিল। এই ভুলটাই সরকার করেছে। সরকারের মধ্যে ভীষণ রকম অহংকার, জনগণকে তাচ্ছিল্য করা, অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস আমরা লক্ষ করেছি। সেটা সরকারের জন্য বুমেরাং হয়েছে। সরকার ১৬ বছর ধরে বিরোধী দলগুলোকেও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছে। সেই তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের ভাষা কিন্তু শিক্ষার্থীদের ওপর প্রয়োগ করেছে। এটা যখন শিক্ষার্থীদের করা হয়েছে, তারা কিন্তু ফুঁসে উঠেছে। শিক্ষার্থীদের পুলিশ, গুলি, মামলা, কারাগার—কোনো কিছু দিয়েই কিন্তু দমন করা যায়নি।
এই সরকারের পতনের পরে ভয়াবহ ‘আয়নাঘরের’ ব্যাপারটি সামনে এসেছে। এটা যে কত বড় মানবাধিকারের লঙ্ঘন, সেটা আমি জানি না। যে সরকারপ্রধান দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হলেন, তাঁকে আমি স্বৈরাচারী, ফ্যাসিস্ট বললেও কম বলা হয়। এটা ছিল একটা মাফিয়া ও ডাকাত সরকার, যারা মধ্যযুগীয় কায়দায় মানুষকে নির্যাতন করেছে। এ ক্ষেত্রে একটা বার্তা খুব স্পষ্টভাবে এসেছে—এই প্রজন্ম কোনো কিছুই মেনে নেবে না। নতুনভাবেই যারা সরকার গঠন করবে, তাদের প্রতিও একই বার্তা যে, আগের সরকারের মতো একই রকমভাবে দেশ চালালে তারাও অনুরূপ ‘নো’-এর সম্মুখীন হবে। আমাদের ভালো লাগুক আর না লাগুক, প্রকৃতির নিয়মে তাদের হাতে রাজনীতি চলে যাবে। প্রকৃতির নিয়মেই নতুন প্রজন্ম রাজনীতির দায়িত্ব তাদের হাতে নিয়ে নেবে। আমাদের পূর্ববর্তী সব আন্দোলনের স্ফুরণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে দেখেছি। সুতরাং, এটা আমাদের ভীষণভাবে আশাবাদী করতে শেখায়। এই আন্দোলন আসলে নতুন আলোকবর্তিকা।
শ্রুতলেখন: মাসুদ রানা
বাংলাদেশে গত এক মাসে আমরা যা দেখলাম, তাতে সাধারণ চোখে মনে হতে পারে এটি একটি শিক্ষার্থী-জনতার বিক্ষোভ। কিন্তু সেটাকে সাদা চোখে শুধু একটি আন্দোলন হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। কয়েক বছর আগে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন হয়েছিল। এই আন্দোলনে স্কুল-কলেজের ছোট বাচ্চারা সড়কে নেমে এসেছিল। তাদের কিছু চমৎকার স্লোগান আমরা দেখেছিলাম, যা আমাদের মর্মমূলে স্পর্শ করেছিল। তারা বলেছিল, ‘একটু দাঁড়ান, রাষ্ট্র মেরামতের কাজ চলছে’। যে শিশুরা এ রকম স্লোগান দিয়েছিল, ‘রাষ্ট্র মেরামতের কাজ চলছে, সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখিত’, তারাই কিন্তু এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, তারাই কিন্তু ২০২৪ সালের জুলাইয়ের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে।
সুতরাং শৈশবে যে শিশুদের মাথায় আসে ‘রাষ্ট্র মেরামত হচ্ছে, সাময়িক সমস্যার জন্য দুঃখিত’, সেই শিক্ষার্থীদের ক্ষমতা ও গভীর চিন্তাকে শুধু যদি রাজনীতির পথ পরিবর্তন হিসেবে দেখি, তাহলে আমার মনে হয় জাতি হিসেবে আমরা ভুল করব। তাদের মনের ভেতরে যে চিন্তাটি কাজ করেছে, সেটা শুধু অতি সীমিত বিষয় নয়। তাদের চিন্তা আসলে ছিল রাষ্ট্রকে সংস্কার করা। দেশটাকে আবার ঢেলে সাজানো। এর মধ্যে গণতন্ত্র, বাক্স্বাধীনতা, মানুষের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার, সর্বোপরি আছে বৈষম্যের বিরুদ্ধে তীব্র আওয়াজ।
আমরা যদি এই আন্দোলনকে ওপর থেকে পাখির চোখে দেখি, এই আন্দোলন সফল করার জন্য লাখ লাখ শিক্ষার্থী পথে নেমে এসেছিল এবং তারা তাদের জীবন বাজি রাখতে কোনো দ্বিধা করেনি। ১৯৭১ সালে আমরা দেখেছিলাম, মায়েরা ছেলেদের এগিয়ে দিচ্ছে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য, দেশকে স্বাধীন করার অভিপ্রায়ে। একই চিত্র স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর আবারও আমরা দেখলাম। এই ৫৪ বছরের মাথায় এসে দেখলাম, মা-বাবা, অভিভাবকেরাও সন্তানদের সঙ্গে পথে নেমে এসেছিলেন। আমরা দেখলাম, একটা ছেলের হাতে হাতকড়া পরা। মা তার পিঠ চাপড়ে সাহস দিচ্ছে এবং হাসছে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। মা ও ছেলে দুজনেই হাসছে। এই ছবি আমার মনে গভীরভাবে রেখাপাত করেছে। সেটা যেন বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। প্রায় ১৬ বছর ধরে যে নির্যাতন-নিপীড়ন চলেছে, তার প্রতিচ্ছবি।
এগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয়, নতুন প্রজন্ম বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ার প্রত্যয় ও পরিকল্পনা ব্যক্ত করেছে। সেই প্রত্যয় ও পরিকল্পনার মধ্যে দেখলাম আমরা বয়স্করা রাজনীতিকে তো ভালো করতে পারিনি বরং রাজনীতিকে অনেক বেশি পেছনে নিয়ে গেছি। আর বড়রা এই নতুন প্রজন্মের প্রতি বেশি ভরসা করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের ব্যর্থতা, সীমাবদ্ধতা ও ক্ষুদ্রতা এবং দলীয় দৃষ্টিতে সবকিছু দেখার প্রবণতাকে, যা আমরা স্বাধীনতার পর থেকে লক্ষ করেছি। এসব থেকে উত্তরণের একটা আশার আলো আমরা দেখতে পেলাম এই নতুন প্রজন্মের কাছে।
আমি যখন এই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে রাস্তায় ও শহীদ মিনারে দাঁড়িয়েছি, সেই সময় তাদের চোখে-মুখে যে আলো ও দৃঢ়তা দেখেছি, তারা কিন্তু শুধু বাংলাদেশের কথা বলেছে। রাজনৈতিক দল ও মতের কথা তাদের মুখ থেকে শুনিনি। আমি তাদের জিজ্ঞাসা করেছি, তোমরা কি কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত? কেউ কেউ বিশেষ রাজনৈতিক মতাদর্শের কথা বললেও অধিকাংশ বলেছে, তারা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নয়।
তারা আরও বলেছে, দিনের পর দিন তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। সাহস করে কথা বলতে পারেনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো কিছু লিখলে নির্যাতনের খড়্গ নেমে এসেছে। তারা দেখেছে, তাদের ভাইকে তুলে নেওয়া হয়েছে। তারা গণরুমের টর্চারের কথা বলেছে। বুয়েটের ছাত্র আবরার হত্যাকাণ্ডের কথা তুলেছে। তারা দেখেছে, সরকারের অতিদলীয় দৃষ্টিভঙ্গি। ভিন্নমত নির্মূল করার প্রবণতা। এসব দেখে দেখে তারা বড় হয়েছে। একধরনের ক্ষোভ, রাগ এবং দেশটাকে একেবারে নতুন করে নির্মাণের চিন্তা আমি তাদের মধ্যে দেখেছি।
আমাদের আগের প্রজন্ম থেকে এই প্রজন্মের বড় পার্থক্য হচ্ছে, তারা কিন্তু গ্লোবাল ভিলেজের মধ্যেই বাস করে। তারা তো বিশ্বনাগরিক। সুতরাং অন্য দেশের মানুষ কী অধিকার পাচ্ছে, অধিকার আদায়ের জন্য কীভাবে আন্দোলন করছে, কীভাবে স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে, আরব বসন্তের মতো ঘটনা ঘটছে—এসব ব্যাপার কিন্তু তারা কাছ থেকে দেখেছে। তারই একটা প্রতিফলন তাদের চিন্তা, মনন ও রাজনৈতিক ভাবনার মধ্যে গভীর প্রভাব ফেলেছে।
ঘরের পাশে বিশাল গণতান্ত্রিক দেশ ভারতে যে নির্বাচন কিছুদিন আগে হয়েছে, সেখানে আমরা দেখলাম বিজেপি নেতৃত্ব ৪০০ আসন পাওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু সেখানে তারা এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। সেখানে মানুষের ভোটের যে শক্তি, সেটা দেখেছি। ভোটার হিসেবে দাবি করা নরেন্দ্র মোদিকে কীভাবে মুখে কালি মেখে হজম করতে হয়েছে, এসব কিন্তু ছাত্ররা দেখেছে। রাহুল গান্ধী কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত ‘ভারত জোড়ো’ আন্দোলন করেছেন। গণমানুষকে তাঁর সঙ্গে যুক্ত করেছেন। এভাবে ছাত্ররা ঘরের কাছে মানুষের শক্তির জায়গাটা দেখেছে।
সরকার মনে করেছিল বলপ্রয়োগ, পুলিশ দিয়ে হামলা করে, ইন্টারনেট বন্ধ করে আন্দোলন থামানো যাবে। সেটা বড় ভুল ছিল। এই ভুলটাই সরকার করেছে। সরকারের মধ্যে ভীষণ রকম অহংকার, জনগণকে তাচ্ছিল্য করা, অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস আমরা লক্ষ করেছি। সেটা সরকারের জন্য বুমেরাং হয়েছে। সরকার ১৬ বছর ধরে বিরোধী দলগুলোকেও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছে। সেই তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের ভাষা কিন্তু শিক্ষার্থীদের ওপর প্রয়োগ করেছে। এটা যখন শিক্ষার্থীদের করা হয়েছে, তারা কিন্তু ফুঁসে উঠেছে। শিক্ষার্থীদের পুলিশ, গুলি, মামলা, কারাগার—কোনো কিছু দিয়েই কিন্তু দমন করা যায়নি।
এই সরকারের পতনের পরে ভয়াবহ ‘আয়নাঘরের’ ব্যাপারটি সামনে এসেছে। এটা যে কত বড় মানবাধিকারের লঙ্ঘন, সেটা আমি জানি না। যে সরকারপ্রধান দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হলেন, তাঁকে আমি স্বৈরাচারী, ফ্যাসিস্ট বললেও কম বলা হয়। এটা ছিল একটা মাফিয়া ও ডাকাত সরকার, যারা মধ্যযুগীয় কায়দায় মানুষকে নির্যাতন করেছে। এ ক্ষেত্রে একটা বার্তা খুব স্পষ্টভাবে এসেছে—এই প্রজন্ম কোনো কিছুই মেনে নেবে না। নতুনভাবেই যারা সরকার গঠন করবে, তাদের প্রতিও একই বার্তা যে, আগের সরকারের মতো একই রকমভাবে দেশ চালালে তারাও অনুরূপ ‘নো’-এর সম্মুখীন হবে। আমাদের ভালো লাগুক আর না লাগুক, প্রকৃতির নিয়মে তাদের হাতে রাজনীতি চলে যাবে। প্রকৃতির নিয়মেই নতুন প্রজন্ম রাজনীতির দায়িত্ব তাদের হাতে নিয়ে নেবে। আমাদের পূর্ববর্তী সব আন্দোলনের স্ফুরণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে দেখেছি। সুতরাং, এটা আমাদের ভীষণভাবে আশাবাদী করতে শেখায়। এই আন্দোলন আসলে নতুন আলোকবর্তিকা।
শ্রুতলেখন: মাসুদ রানা
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৬ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৬ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে