মোনায়েম সরকার
জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া মানেই প্রাণশূন্য হয়ে পড়া বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। আর এ কারণে তিনি স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যেন তাঁরা সেদিকে খেয়াল রাখেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হলে কিন্তু আমার আর গুলি-বোমা লাগবে না, এমনিতেই শেষ হয়ে যাব। কাজেই এরাই আমার প্রাণশক্তি। এটুকু মনে রাখতে হবে।’ এসএসএফের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেছেন, ‘একটি বিষয় আমি নিশ্চয়ই বলব, আমরা রাজনীতি করি। আমার আর কোনো শক্তি নেই। শক্তি একমাত্র জনগণ। সেই জনগণের শক্তি নিয়েই আমি চলি।’
প্রধানমন্ত্রীর এসব কথায় কোনো অসত্য নেই। তাঁর জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি এটাও ঠিক, নিরাপত্তার নামে যদি শেখ হাসিনাকে জনবিচ্ছিন্ন করা হয়, তাহলে তাঁর যে রাজনীতি, সেটা আর থাকে না। জনগণই শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগের শক্তি। জনগণের জন্য, জনগণকে নিয়েই তিনি রাজনীতি করেন। তবে দেশে এখন জনগণের রাজনীতি কতটুকু অবশিষ্ট আছে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।
এখন দেশে প্রধান আলোচনার বিষয় দুর্নীতি। পুলিশের সাবেক প্রধান বেনজীর আহমেদ ও রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমানের দুর্নীতির যেসব খবর গণমাধ্যমে সম্প্রতি ছাপা হচ্ছে, তা এককথায় অবিশ্বাস্য। সরকারি চাকরি মানেই কি তাহলে আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ হাতে পাওয়া? দেশে ঘুষ-দুর্নীতি আছে, এটা নতুন কোনো তথ্য নয়। নতুন হলো, নির্দিষ্ট বেতনের চাকরিজীবীরা কীভাবে এত বিপুল সম্পদের মালিক হলেন, কারা তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে, আর কতজন এ রকম সম্পদের অধিকারী হয়েছেন, এখন তাদের ভূমিকা কী—এসব প্রশ্ন মুখে মুখে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার একদিকে যেমন দেশের অনেক দৃশ্যমান উন্নতি করেছে, অন্যদিকে বেনজীর-মতিউরের মতো কিছু দুর্বৃত্তেরও যে সৃষ্টি এই সময়কালে হয়েছে, তা-ও অস্বীকার করা যাচ্ছে না। প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার কি এসবের লাগাম টেনে ধরবে, না লুটপাটের ধারাই অব্যাহত থাকবে? যদি এভাবেই চলতে থাকে, তাহলেও কিন্তু সরকারের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা বাড়বে। সরকার জনপ্রিয়তা হারালে সরকারপ্রধানেরও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দেবে। জনবিচ্ছিন্নতা এড়াতে হলে শেখ হাসিনাকেই এগিয়ে আসতে হবে, উদ্যোগ নিতে হবে।
বিরোধী দলের আন্দোলন নয়, সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ বেপরোয়া দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে চড়াও না হয়ে অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে হবে আন্তরিকতার সঙ্গে। সব দোষ সরকারের বিরুদ্ধপক্ষের ওপর না চাপিয়ে সত্য অনুসন্ধান করতে হবে, জানতে হবে প্রকৃত ঘটনা।
রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি ভুল রাজনৈতিক নীতি-কৌশলের কারণে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে, সরকারের ওপর কোনো ধরনের চাপ তৈরি করতে পারছে না। আবার টানা চার মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গে ক্রমাগত আপস করে চলতে গিয়ে আওয়ামী লীগও কিন্তু ঔজ্জ্বল্য হারাচ্ছে। রাজনৈতিক বিরোধীরা সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে না পারলেও সরকার ভেতর থেকেই ক্ষয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় আছে বলে মনে হচ্ছে। দেশে আসলে কী হচ্ছে, তা নিয়ে চলছে নানা ধরনের গসিপ।
আমার মতো যাঁরা সরকারের হিতাকাঙ্ক্ষী, তাঁরা এক বিব্রতকর অবস্থায় আছেন বলে আমার মনে হয়। যাঁরা সরকারের সমালোচক, তাঁরা আমাদেরও সমালোচনা করে বলেন, আমাদের নিঃশর্ত সমর্থনের কারণেই নাকি সরকার ভালো হওয়ার চেষ্টা না করে খারাপের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে। সরকার এটি নিশ্চিত ধরে নিয়েছে যে আমাদের মতো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অসাম্প্রদায়িক মানসিকতার মানুষ কোনোভাবেই বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক ধারার পক্ষে যাবে না। সে জন্য সরকারের মধ্যে একধরনের সবকিছু উপেক্ষা করার মনোভাব আছে। কিন্তু যাঁরা সরকার চালাচ্ছেন, তাঁদের মনে রাখতে হবে, আজকের দিনই শেষ দিন নয়। সামনে আরও দিন আছে।
আমাদের দেশের রাজনীতি নীতিহীনতার পথে চলছে। মানুষ নয়, দল ও দলবাজি এখন প্রধান। এই অবস্থায় কেউ কেউ রাজনীতিতে ‘সমঝোতা’র পথ অনুসরণ করে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। কিন্তু সমঝোতা হবে কার সঙ্গে? সমঝোতার ভিত্তিই-বা কী? যারা ঘুরেফিরে মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করার প্রয়াস পায়, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডকে বিভিন্নভাবে জাস্টিফাই করে এখনো এবং এর দীর্ঘদিন পরে শেখ হাসিনাকেও যারা হত্যার চেষ্টা চালিয়েছিল, তাদের সঙ্গে সমঝোতা হবে কীভাবে? যারা প্রতিশোধের রাজনীতিতে বিশ্বাসী, দেশে যারা প্রতিক্রিয়াশীলতার বিষবাষ্প ছড়াতে চায়, তাদের সঙ্গে সমঝোতা হয় কীভাবে? যারা দেশের সংবিধানে বিশ্বাস করে না এবং অসাংবিধানিক শক্তির উত্থানে সহায়তা করতে চায়, তাদের সঙ্গে সমঝোতা করে দেশ গড়া যায় কি?
কেউ কেউ মনে করেন, শেখ হাসিনা মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও গণতান্ত্রিক রীতিনীতি সেভাবে অনুসরণ করেন না। যাঁরা এমন মনে করেন, তাঁরা কিছু বাস্তবতা ভুলে যান। রাষ্ট্রক্ষমতা হাতে পেয়ে শেখ হাসিনা চাইলে অনেক বেশি প্রতিশোধপরায়ণ হতে পারতেন পিতৃহত্যা এবং নিজেকেও হত্যার চেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে। কিন্তু তিনি সেই পথে না গিয়ে বরাবরই আস্থা রেখেছেন আইন ও আদালতের ওপর। যা কিছু হয়েছে, সেটা হয়েছে আদালতের মাধ্যমে। তিনি দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার সম্পন্ন করেছেন। ২১ আগস্ট তাঁর ওপর পরিচালিত গ্রেনেড হামলার বিচারের রায়ও হয়ে আছে। যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রমও চলমান। এসবের মধ্য দিয়ে জাতি বিভক্ত হচ্ছে বলে যাঁরা বক্তৃতা করেন, তাঁরা ভুল পথে আছেন। এর মধ্য দিয়ে জাতি আসলে একতাবদ্ধ হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও লক্ষ্যের ভিত্তিতে।
এর বিপরীতে যারা বিভিন্ন কৌশল কাজে লাগিয়ে ক্ষমতায় ফিরে আসার চেষ্টা করে যাচ্ছে, তাদের মধ্যে রয়েছে নেতৃত্বহীনতা। এ ক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে যাদের তুলে ধরা হয়, তারা হয় দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত কিংবা সাজা ভোগ না করে পলাতক। একশ্রেণির লোক আবার বিকল্প হিসেবে ‘তৃতীয় শক্তি’র ওপর নির্ভর করতে চায়। তারা কথিত সুশীল সমাজের মধ্যে নেতৃত্ব খোঁজে, যারা আসলে বিরাজনীতিকরণের ধ্বজাধারী। একের পর এক সেনাশাসনের মাধ্যমে রাজনীতিকে নষ্ট করার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর বছর ১৫ আগে বিরাজনীতিকরণের চেষ্টাও হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে চলা নীতিনিষ্ঠ নেতৃত্বের দৃঢ় অবস্থানের কারণেই তা বানচাল হয়ে যায়। এর মধ্য দিয়ে দেশ আবার চলে আসে গণমানুষের প্রত্যাশিত ধারায়।
টানা চার মেয়াদে শেখ হাসিনার সরকার দেশ পরিচালনা করছে, তার লক্ষ্য রাজনীতিকে নিয়মতান্ত্রিকতার মধ্যে এনে দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা, এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। সেই লক্ষ্য অর্জনে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, যা অনেক সময় আবার হয়ে উঠছে চ্যালেঞ্জের বিষয়।
পিতা শেখ মুজিব যে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে গেছেন, কন্যা শেখ হাসিনা সেই বাংলাদেশকে নতুন উচ্চতায় বিশ্বসভায় তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। শেখ হাসিনার এই দীর্ঘ চলার পথ কখনো মসৃণ ছিল না। নানামুখী বৈরিতা, প্রতিকূলতা, মৃত্যুভয়—সব উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা এগিয়ে যাচ্ছেন, এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে পশ্চাৎমুখী প্রবণতাও আছে।
শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতার রাজনীতির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে কৌশল ও আদর্শের ক্ষেত্রে নমনীয় হতে হয়েছে। মিত্র বাছাইয়েও শেখ হাসিনাকে অনেক হিসাব-নিকাশ করতে হয়েছে। কখনোবা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য বিপরীত মত-পথের সঙ্গে কৌশলগত সমঝোতা করতে হয়েছে। এক পা এগোনোর জন্য দুই পা পেছানোর রাজনৈতিক কৌশল চর্চা করে শেখ হাসিনা সুফল পেয়েছেন। মোট চার মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার অবস্থা তৈরি করতে পেরেছে শেখ হাসিনার বিচক্ষণ ও দূরদর্শী সিদ্ধান্তের কারণেই।
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার সাহস ও সক্ষমতা শেখ হাসিনা বারবার দেখিয়েছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর কাছ থেকে বড় কোনো ভূমিকা দেখার আশায় আছে দেশের মানুষ। জনগণকে দূরে ঠেলে নয়, সঙ্গে নিয়েই গণবিরোধীদের রোখার লড়াইয়ে নামতে হবে।
লেখক: রাজনীতিবিদ, লেখক ও চেয়ারম্যান, চেয়ারম্যান, বিএফডিআর
জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া মানেই প্রাণশূন্য হয়ে পড়া বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। আর এ কারণে তিনি স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যেন তাঁরা সেদিকে খেয়াল রাখেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হলে কিন্তু আমার আর গুলি-বোমা লাগবে না, এমনিতেই শেষ হয়ে যাব। কাজেই এরাই আমার প্রাণশক্তি। এটুকু মনে রাখতে হবে।’ এসএসএফের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেছেন, ‘একটি বিষয় আমি নিশ্চয়ই বলব, আমরা রাজনীতি করি। আমার আর কোনো শক্তি নেই। শক্তি একমাত্র জনগণ। সেই জনগণের শক্তি নিয়েই আমি চলি।’
প্রধানমন্ত্রীর এসব কথায় কোনো অসত্য নেই। তাঁর জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি এটাও ঠিক, নিরাপত্তার নামে যদি শেখ হাসিনাকে জনবিচ্ছিন্ন করা হয়, তাহলে তাঁর যে রাজনীতি, সেটা আর থাকে না। জনগণই শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগের শক্তি। জনগণের জন্য, জনগণকে নিয়েই তিনি রাজনীতি করেন। তবে দেশে এখন জনগণের রাজনীতি কতটুকু অবশিষ্ট আছে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।
এখন দেশে প্রধান আলোচনার বিষয় দুর্নীতি। পুলিশের সাবেক প্রধান বেনজীর আহমেদ ও রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমানের দুর্নীতির যেসব খবর গণমাধ্যমে সম্প্রতি ছাপা হচ্ছে, তা এককথায় অবিশ্বাস্য। সরকারি চাকরি মানেই কি তাহলে আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ হাতে পাওয়া? দেশে ঘুষ-দুর্নীতি আছে, এটা নতুন কোনো তথ্য নয়। নতুন হলো, নির্দিষ্ট বেতনের চাকরিজীবীরা কীভাবে এত বিপুল সম্পদের মালিক হলেন, কারা তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে, আর কতজন এ রকম সম্পদের অধিকারী হয়েছেন, এখন তাদের ভূমিকা কী—এসব প্রশ্ন মুখে মুখে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার একদিকে যেমন দেশের অনেক দৃশ্যমান উন্নতি করেছে, অন্যদিকে বেনজীর-মতিউরের মতো কিছু দুর্বৃত্তেরও যে সৃষ্টি এই সময়কালে হয়েছে, তা-ও অস্বীকার করা যাচ্ছে না। প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার কি এসবের লাগাম টেনে ধরবে, না লুটপাটের ধারাই অব্যাহত থাকবে? যদি এভাবেই চলতে থাকে, তাহলেও কিন্তু সরকারের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা বাড়বে। সরকার জনপ্রিয়তা হারালে সরকারপ্রধানেরও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দেবে। জনবিচ্ছিন্নতা এড়াতে হলে শেখ হাসিনাকেই এগিয়ে আসতে হবে, উদ্যোগ নিতে হবে।
বিরোধী দলের আন্দোলন নয়, সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ বেপরোয়া দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে চড়াও না হয়ে অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে হবে আন্তরিকতার সঙ্গে। সব দোষ সরকারের বিরুদ্ধপক্ষের ওপর না চাপিয়ে সত্য অনুসন্ধান করতে হবে, জানতে হবে প্রকৃত ঘটনা।
রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি ভুল রাজনৈতিক নীতি-কৌশলের কারণে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে, সরকারের ওপর কোনো ধরনের চাপ তৈরি করতে পারছে না। আবার টানা চার মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গে ক্রমাগত আপস করে চলতে গিয়ে আওয়ামী লীগও কিন্তু ঔজ্জ্বল্য হারাচ্ছে। রাজনৈতিক বিরোধীরা সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে না পারলেও সরকার ভেতর থেকেই ক্ষয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় আছে বলে মনে হচ্ছে। দেশে আসলে কী হচ্ছে, তা নিয়ে চলছে নানা ধরনের গসিপ।
আমার মতো যাঁরা সরকারের হিতাকাঙ্ক্ষী, তাঁরা এক বিব্রতকর অবস্থায় আছেন বলে আমার মনে হয়। যাঁরা সরকারের সমালোচক, তাঁরা আমাদেরও সমালোচনা করে বলেন, আমাদের নিঃশর্ত সমর্থনের কারণেই নাকি সরকার ভালো হওয়ার চেষ্টা না করে খারাপের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে। সরকার এটি নিশ্চিত ধরে নিয়েছে যে আমাদের মতো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অসাম্প্রদায়িক মানসিকতার মানুষ কোনোভাবেই বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক ধারার পক্ষে যাবে না। সে জন্য সরকারের মধ্যে একধরনের সবকিছু উপেক্ষা করার মনোভাব আছে। কিন্তু যাঁরা সরকার চালাচ্ছেন, তাঁদের মনে রাখতে হবে, আজকের দিনই শেষ দিন নয়। সামনে আরও দিন আছে।
আমাদের দেশের রাজনীতি নীতিহীনতার পথে চলছে। মানুষ নয়, দল ও দলবাজি এখন প্রধান। এই অবস্থায় কেউ কেউ রাজনীতিতে ‘সমঝোতা’র পথ অনুসরণ করে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। কিন্তু সমঝোতা হবে কার সঙ্গে? সমঝোতার ভিত্তিই-বা কী? যারা ঘুরেফিরে মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করার প্রয়াস পায়, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডকে বিভিন্নভাবে জাস্টিফাই করে এখনো এবং এর দীর্ঘদিন পরে শেখ হাসিনাকেও যারা হত্যার চেষ্টা চালিয়েছিল, তাদের সঙ্গে সমঝোতা হবে কীভাবে? যারা প্রতিশোধের রাজনীতিতে বিশ্বাসী, দেশে যারা প্রতিক্রিয়াশীলতার বিষবাষ্প ছড়াতে চায়, তাদের সঙ্গে সমঝোতা হয় কীভাবে? যারা দেশের সংবিধানে বিশ্বাস করে না এবং অসাংবিধানিক শক্তির উত্থানে সহায়তা করতে চায়, তাদের সঙ্গে সমঝোতা করে দেশ গড়া যায় কি?
কেউ কেউ মনে করেন, শেখ হাসিনা মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও গণতান্ত্রিক রীতিনীতি সেভাবে অনুসরণ করেন না। যাঁরা এমন মনে করেন, তাঁরা কিছু বাস্তবতা ভুলে যান। রাষ্ট্রক্ষমতা হাতে পেয়ে শেখ হাসিনা চাইলে অনেক বেশি প্রতিশোধপরায়ণ হতে পারতেন পিতৃহত্যা এবং নিজেকেও হত্যার চেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে। কিন্তু তিনি সেই পথে না গিয়ে বরাবরই আস্থা রেখেছেন আইন ও আদালতের ওপর। যা কিছু হয়েছে, সেটা হয়েছে আদালতের মাধ্যমে। তিনি দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার সম্পন্ন করেছেন। ২১ আগস্ট তাঁর ওপর পরিচালিত গ্রেনেড হামলার বিচারের রায়ও হয়ে আছে। যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রমও চলমান। এসবের মধ্য দিয়ে জাতি বিভক্ত হচ্ছে বলে যাঁরা বক্তৃতা করেন, তাঁরা ভুল পথে আছেন। এর মধ্য দিয়ে জাতি আসলে একতাবদ্ধ হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও লক্ষ্যের ভিত্তিতে।
এর বিপরীতে যারা বিভিন্ন কৌশল কাজে লাগিয়ে ক্ষমতায় ফিরে আসার চেষ্টা করে যাচ্ছে, তাদের মধ্যে রয়েছে নেতৃত্বহীনতা। এ ক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে যাদের তুলে ধরা হয়, তারা হয় দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত কিংবা সাজা ভোগ না করে পলাতক। একশ্রেণির লোক আবার বিকল্প হিসেবে ‘তৃতীয় শক্তি’র ওপর নির্ভর করতে চায়। তারা কথিত সুশীল সমাজের মধ্যে নেতৃত্ব খোঁজে, যারা আসলে বিরাজনীতিকরণের ধ্বজাধারী। একের পর এক সেনাশাসনের মাধ্যমে রাজনীতিকে নষ্ট করার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর বছর ১৫ আগে বিরাজনীতিকরণের চেষ্টাও হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে চলা নীতিনিষ্ঠ নেতৃত্বের দৃঢ় অবস্থানের কারণেই তা বানচাল হয়ে যায়। এর মধ্য দিয়ে দেশ আবার চলে আসে গণমানুষের প্রত্যাশিত ধারায়।
টানা চার মেয়াদে শেখ হাসিনার সরকার দেশ পরিচালনা করছে, তার লক্ষ্য রাজনীতিকে নিয়মতান্ত্রিকতার মধ্যে এনে দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা, এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। সেই লক্ষ্য অর্জনে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, যা অনেক সময় আবার হয়ে উঠছে চ্যালেঞ্জের বিষয়।
পিতা শেখ মুজিব যে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে গেছেন, কন্যা শেখ হাসিনা সেই বাংলাদেশকে নতুন উচ্চতায় বিশ্বসভায় তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। শেখ হাসিনার এই দীর্ঘ চলার পথ কখনো মসৃণ ছিল না। নানামুখী বৈরিতা, প্রতিকূলতা, মৃত্যুভয়—সব উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা এগিয়ে যাচ্ছেন, এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে পশ্চাৎমুখী প্রবণতাও আছে।
শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতার রাজনীতির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে কৌশল ও আদর্শের ক্ষেত্রে নমনীয় হতে হয়েছে। মিত্র বাছাইয়েও শেখ হাসিনাকে অনেক হিসাব-নিকাশ করতে হয়েছে। কখনোবা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য বিপরীত মত-পথের সঙ্গে কৌশলগত সমঝোতা করতে হয়েছে। এক পা এগোনোর জন্য দুই পা পেছানোর রাজনৈতিক কৌশল চর্চা করে শেখ হাসিনা সুফল পেয়েছেন। মোট চার মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার অবস্থা তৈরি করতে পেরেছে শেখ হাসিনার বিচক্ষণ ও দূরদর্শী সিদ্ধান্তের কারণেই।
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার সাহস ও সক্ষমতা শেখ হাসিনা বারবার দেখিয়েছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর কাছ থেকে বড় কোনো ভূমিকা দেখার আশায় আছে দেশের মানুষ। জনগণকে দূরে ঠেলে নয়, সঙ্গে নিয়েই গণবিরোধীদের রোখার লড়াইয়ে নামতে হবে।
লেখক: রাজনীতিবিদ, লেখক ও চেয়ারম্যান, চেয়ারম্যান, বিএফডিআর
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৩ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৬ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৬ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১০ দিন আগে