জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাককানইবি) ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রাকিবুল হাসান রাকিবের হুমকি-ধমকি ও অপমানের পর দোলনচাপা ছাত্রী হলের প্রভোস্টসহ পাঁচজন পদত্যাগ করেছেন। গত বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো. হুমায়ুন কবীরের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন তাঁরা। এ ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য।

কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আহম্মেদুল বারীকে তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে। কমিটিকে দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে জানান ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, ছাত্রীদের জন্য উন্নত খাবার পরিবেশনের আয়োজন করে দোলনচাপা হল। এ জন্য পোলাও চাল ও খাসি কেনা হয়। খবর পেয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রাকিবুল হাসান রাকিব সমস্ত টাকা তাঁর হাতে তুলে দেওয়ার জন্য হুমকি-ধমকি দেন। এমন অপমানজনক অভিযোগ ও নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কায় প্রভোস্ট সিরাজুম মুনিরাসহ চারজন হাউস টিউটর পদত্যাগ করেছেন।

রেজিস্ট্রার আরও বলেন, বিষয়টি তদন্তে করা হচ্ছে। কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পদত্যাগ করা প্রভোস্ট সিরাজুম মুনিরা বলেন, আমরা খাবারের জন্য ৬১ হাজার টাকা ও অন্যান্য সামগ্রী সংগ্রহ করি। ছাত্রীদের টোকেনও দেওয়া হয়েছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপন উপলক্ষে ছাত্রীদের সারপ্রাইজ দিয়ে উপহার দেওয়ার জন্য ঢাকা থেকে উপহারসামগ্রীও কেনা হয়েছে।

এতে ছাত্রলীগ নেতারা উত্তেজিত হয়ে সব সামগ্রী বিক্রি করে তাঁদের হাতে পুরো টাকা তুলে দিতে বলে জানিয়ে সিরাজুম মুনিরা বলেন, ছেলেদের হলের সঙ্গে আয়োজন করবে বলে জানায়। শুধু ছাত্রলীগ যারা করে তারা সবাই মাঠে বসে একসঙ্গে খাবে। আর সাধারণ শিক্ষার্থীদের খাসির মাংস খেতে দেবে না বলে জানায়। দোলন চাপা হলের সিট সব পলিটিক্যাল হবে। ছাত্রলীগ না করলে হলে থাকতে পারবে না। তাঁদের এমন কথায় আমরা যতটা সহনশীলভাবে বলা দরকার বলেছি। কিন্তু তারা হুমকি-ধমকি দিতে থাকে। ১০ বছর ধরে ক্যাম্পাসের সব সিস্টেম রাকিব তৈরি করছে বলেও দম্ভ করে বলে জানান তিনি।

প্রভোস্ট আরও বলেন, গত ১৪ ডিসেম্বর বিকেলে ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টরের সামনে এমন হুমকি দিয়ে কথা বলে রাকিব। এ নিয়ে বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ে দফায় দফায় মিটিং হয়েছে। আমিসহ চারজন হাউস টিউটর একসঙ্গে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এই অরাজক পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পালন করতে পারব না। তাই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান বলেন, প্রভোস্টসহ পাঁচজন পদত্যাগ করেছেন। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পুরো বিষয়টি আমি অবগত রয়েছি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মো. রাকিবুল হাসান রাকিব জানান, চাঁদা চাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। শিক্ষার্থীদের অনুরোধে আমরা দুটি হলের খাবারের আয়োজন একসঙ্গে করতে চেয়েছিলাম। এই আলাপটি ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা ও প্রক্টরের সামনেই হয়েছে। দোলনচাপা হলের প্রভোস্ট ছাত্রী প্রতিনিধিদের না জানিয়ে একতরফাভাবে খাবারের আয়োজন করেছে। এতে ছাত্রীরা ক্ষুব্ধ হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক মো. জালাল উদ্দিন বলেন, বিষয়টি আমরা গুরুত্বসহকারে নিয়েছি। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।