‘ভাইজান, কন দেহি মোগো ইউনিয়নে কি সুষ্ঠু ভোট অইবে। মোরা কি মোগো ভোটটা দিতে পারমু? না কাইট্টা বেবাক লইয়া যাইবে।’ বরগুনা সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউপি নির্বাচন সামনে রেখে মনসাতলি এলাকার বাসিন্দা আবদুল মতিন ও সত্তার মিয়ার এমনই প্রশ্ন।

১৯৬৯ সালে বরগুনা সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়ন গঠন করা হয়। ২৭ দশমিক ৪ বর্গ মাইল আয়তনের এ ইউনিয়নে মোট জনসংখ্যা ৩২ হাজার ৯৫৪ জন। নির্বাচন কমিশনের সবশেষ হালনাগাদ তথ্যে মোট ভোটার সংখ্যা ২২ হাজার ৮৭১ জন। যার মধ্যে পুরুষ ৯ হাজার ৮৭৮ জন, মহিলা ১০ হাজার ১১৩ জন। এই ইউনিয়নটি আয়তনে বরগুনা সদরের ১০টি ইউনিয়নের চেয়ে বড় এবং স্বভাবতই এখানের ভোটার সংখ্যাও বেশি। এসব কারণে এই ইউপির নির্বাচন আলাদা গুরুত্ব বহন করে।

সদরের অন্য ৯টি ইউপিতে নির্বাচন প্রথম ধাপে শেষ হয়েছে। ২য় ধাপে জেলার একমাত্র এই একটি ইউনিয়নে আগামীকাল ১১ নভেম্বর ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। যার ফলে সবার নজর এই ইউনিয়নের নির্বাচনের দিকে। ভোটের সময় যত কাছে আসছে ততই শঙ্কা বাড়ছে ভোটারদের। উদ্বেগ উৎকণ্ঠা তৈরি করেছেন অবশ্য প্রার্থীরাই।

গত ৪ নভেম্বর সন্ধ্যার পর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত স্বতন্ত্র ও নৌকার সমর্থকদের মধ্যে একাধিকবার হামলা পাল্টা হামলা ও সংঘর্ষেও ঘটনায় তিন প্রার্থীর অন্তত ৮০ জন সমর্থক আহত হন। মামলাও হয় ৬৪ জনের নামোল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও ৪০০–৫০০ জনকে আসামি করে। গ্রেপ্তারও হয়েছেন ৭ জন। অবশ্য একদিন পরেই একজন বাদে বাকি যাদের নামে মামলা হয়েছে তাঁদের ৬৩ জনের জামিন মঞ্জুর করে আদালত। শেষ মুহূর্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনায় ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরেছে।

এই সব কারণেই মনসাতলির চা দোকানে কৃষক আবদুল মতি মিয়ার মনে সংশয়, আর অন্যদেরও প্রশ্ন ‘ভোটটা দিতে পারব তো’। ভোটারদের ধারণা, ক্ষমতাসীন দল প্রভাব খাঁটিয়ে ভোট আদায় করে নিয়ে তাঁদের প্রার্থীকে বিজয়ী করবে। বিশেষ করে প্রচারের শুরু থেকেই জেলা ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা নৌকার পক্ষে যেভাবে আটঘাট বেঁধে নেমেছেন তাতে ভোটাররা একপ্রকার ধরেই নিয়েছেন নৌকার বিজয়ে যা যা করা দরকার তা সবই করা হবে।

তবে এই ইউনিয়নে দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থীও প্রচারণায় বেশ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। যে কারণে শঙ্কার পাশাপাশি আস্থার জায়গাও তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ বারী বাদল এর আগে এই ইউনিয়ন থেকে তিন তিনবারের জন্য চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম সরওয়ার শাহীনও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান।

নৌকার প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তরুণ নেতা নাজমুল ইসলাম নাসির তাঁর লক্ষ্যে পৌঁছাতে গত ১০ বছর ইউনিয়ন পর্যায়ে খেটেছেন। ভোটারদের সুখ–দুঃখে ছুটেছেন সাধ্যমতো। যার ফলশ্রুতিতে দল তাঁকে মূল্যায়ন করে মনোনয়ন দিয়েছে। শুরুতে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও শেষের দিকে এসে মাঠ দখলে রেখে দাপটের সঙ্গে প্রচার চালাচ্ছেন নৌকার প্রার্থী নাজমুল ইসলাম নাসির।

স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ বারী বাদল শুরু থেকে মাঠ গুছিয়ে নিজের মতো করে প্রচার চালিয়ে আসছেন। নাজমুল ইসলাম নাসির লাকুতলা ও ও এম এ বারি বাদল পরীরখাল এলাকার বাসিন্দা। এই দুজনের নিজ এলাকা কাছাকাছি। অপরদিকে স্বতন্ত্র (ঘোড়া) প্রার্থী সরওয়ার শাহীনের বাড়ি চালিতালী এলাকার বাসুগি এলাকায়। একা ইউনিয়নের এক প্রান্ত আগলে শাহীনও নিরিবিলি ভোট কবজা করবেন এমনটাই মনে করছেন ইউনিয়নের ভোটাররা।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা দিলীপ কুমার হাওলাদার বলেন, ‘নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত করতে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আইন–শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ ও আনসার বাহিনীর পাশাপাশি কোস্টগার্ড ও র‍্যাব নিয়োজিত থাকবে। ৯টি ওয়ার্ডেই ভ্রাম্যমাণ আদালত দায়িত্ব পালন করবে।’