রুশা চৌধুরী
মাঝে মাঝে মানুষের কিছু অকালবোধন হয়, হতেই হয়। এ বছর কেন যেন বসন্তকালটাকে বারবার ‘বুড়ো ঋতু’ বলতে ইচ্ছে করছে। আসলে ঋতুটার এতে কোনো হাত নেই। ঋতুদের প্রাণ-মন সবটা থাকলেও ওরা তো আর মানুষ নয়, তাই নিষ্ঠুরতা করার, কাউকে কষ্ট দেওয়ার ক্ষমতা ওদের তেমন নেই। এসব কাজে সিদ্ধহস্ত শুধু আমরা মানুষেরা।
সেদিন এক প্রতিবেশীর বাড়িতে গিয়েছিলাম। ব্যারিস্টার আর শিক্ষক দম্পতি। তাঁদের বাড়িতে বৃদ্ধ মা-বাবাও থাকেন। তাঁরা পালা করে তাঁদের দুই নাতি অমল আর কমলকে স্কুলে নিয়ে যান, শিক্ষকের বাসায় যান, বন্ধুদের বাড়িতে সঙ্গে যান, রাতে নাতিরা ভয় পেতে পারে বলে দুজন দুই নাতির ঘরে থাকেন। ওদের বাবা-মা নিজেদের কাজের ফাঁকে ‘গুড মর্নিং’, ‘গুড নাইট’, ‘নাম্বার কম পেলে কেন’, ‘আজ পার্টি’, ‘কাল আউটিং’ নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত থাকেন। তবে হ্যাঁ, তাঁদের বাচ্চাদের স্কুলের ‘প্যারেন্ট-টিচার মিটিং’ অথবা বাচ্চাদের বন্ধুদের মা-বাবাদের সঙ্গে ‘ভাই-ভাবি খেলা’য় তাঁরা সময় নষ্ট করে হলেও নিজেরা উপস্থিত থেকে সময়ের সদ্ব্যবহার করেন কিন্তু।
বসন্তকাল শুরু হয়েছে, সঙ্গে ছিল ‘ভালোবাসা দিবস’। এসব কথা আজকাল রাস্তার ইট-কাঠও জানে, এটা অমল-কমলের দাদা-দাদুও জেনে গিয়েছিলেন। দুজন মিলে খুব পরিকল্পনাও করে ফেলেছিলেন তাঁরা এবার ভালোবাসা দিবসে বেড়াতে যাবেন। দুই নাতিও খুব খুশি। ওদের মাকে বলাতে তিনিও খুশি হয়েছিলেন। বাদ সাধলেন অমল-কমলের বাবা। বন্ধুদের সঙ্গে পার্টি, সেখানে সস্ত্রীক যেতে হবে। বাচ্চাদের বাবা-মায়ের নিরাপদ আশ্রয়ে রেখে যাবেন, তাই বাবা-মাকে বললেন, ‘এই বুড়ো বয়সে আবার বসন্ত উৎসব কেন? তোমরা নাতি-নাতনিদের সঙ্গেই তোমাদের বসন্ত আর ভালোবাসা পালন করো, বাইরে যাবার দরকার নেই।’
কথাটা শোনার পর থেকে পুরো বসন্তটাই আমার কাছে ‘বুড়ো’ হয়ে গেল। চোখে ভাসছে সেই প্রবীণ দম্পতির মলিন মুখজোড়া। আহা জীবন! সময়ের দাগ শুধু কেন মানুষের মনেই লাগে? এই যে এত বিশাল প্রকৃতি, কই তাদের কাছে তো বয়স কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায় না! সবার পরে যে ঋতু, তাকে সবচেয়ে রঙিন করে রেখেছে প্রকৃতি আর আমাদের বয়সের শেষ ভাগে পৌঁছে যাওয়া মানুষগুলোকে আমরা কেমন দূর দূর করে রংহীন করে রাখতে চাই।
‘লাল রং পোরো না’, ‘টিপ দিও না’, ‘এ মা! এই বয়সে চুলে ফুল দিয়েছ’, ‘স্বামী নেই তার আবার নাকে ফুল কেন!’ ...
এহেন হাজারো বেড়াজালে আমরা তাদের জীবনটাকে রংহীন করে আটকাতে চাই। এই বসন্তে বারবার মনে হচ্ছে জীবনটাকে ঠিকমতো ভালোবাসতেই শিখলাম না আমরা। যে অমৃতের সন্ধানে সময় মন্থন করে গেলাম, তার গায়ে নিজেরাই ধুলো মাখালাম। সেই ধুলোর আড়ালে অমৃতের পুত্র-কন্যারা হারিয়ে গেল শুধু। বসন্তে তাই মনের ভেতরে সেই তাকে একটু খুঁজে দেখি না, যে আমাদের মনটা রাঙাতে চায়। বোকা মানুষ আমরা, অকারণে নিষেধের বেড়াজাল দিয়ে দিয়ে ফুল-পাখি-আলো-হাওয়া সবকিছু দূরে সরিয়ে রাখছি।
নবীন-প্রবীণ প্রত্যেকের জন্যই জীবনের রংগুলো ঠিকঠাক থাকলে ক্ষতি কি খুব বেশি? যেই জাদুকর আমাদের নিয়ে খেলছেন, তাঁর হাতে রঙের ফোয়ারাটা অকৃপণ...এই বসন্তে আমরা তাই নবীন হই সবাইকে নিয়ে...বুড়ো হয়ে থাকুক শুধু চিরযৌবনা বসন্তকাল।
লেখক: আবৃত্তিশিল্পী
মাঝে মাঝে মানুষের কিছু অকালবোধন হয়, হতেই হয়। এ বছর কেন যেন বসন্তকালটাকে বারবার ‘বুড়ো ঋতু’ বলতে ইচ্ছে করছে। আসলে ঋতুটার এতে কোনো হাত নেই। ঋতুদের প্রাণ-মন সবটা থাকলেও ওরা তো আর মানুষ নয়, তাই নিষ্ঠুরতা করার, কাউকে কষ্ট দেওয়ার ক্ষমতা ওদের তেমন নেই। এসব কাজে সিদ্ধহস্ত শুধু আমরা মানুষেরা।
সেদিন এক প্রতিবেশীর বাড়িতে গিয়েছিলাম। ব্যারিস্টার আর শিক্ষক দম্পতি। তাঁদের বাড়িতে বৃদ্ধ মা-বাবাও থাকেন। তাঁরা পালা করে তাঁদের দুই নাতি অমল আর কমলকে স্কুলে নিয়ে যান, শিক্ষকের বাসায় যান, বন্ধুদের বাড়িতে সঙ্গে যান, রাতে নাতিরা ভয় পেতে পারে বলে দুজন দুই নাতির ঘরে থাকেন। ওদের বাবা-মা নিজেদের কাজের ফাঁকে ‘গুড মর্নিং’, ‘গুড নাইট’, ‘নাম্বার কম পেলে কেন’, ‘আজ পার্টি’, ‘কাল আউটিং’ নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত থাকেন। তবে হ্যাঁ, তাঁদের বাচ্চাদের স্কুলের ‘প্যারেন্ট-টিচার মিটিং’ অথবা বাচ্চাদের বন্ধুদের মা-বাবাদের সঙ্গে ‘ভাই-ভাবি খেলা’য় তাঁরা সময় নষ্ট করে হলেও নিজেরা উপস্থিত থেকে সময়ের সদ্ব্যবহার করেন কিন্তু।
বসন্তকাল শুরু হয়েছে, সঙ্গে ছিল ‘ভালোবাসা দিবস’। এসব কথা আজকাল রাস্তার ইট-কাঠও জানে, এটা অমল-কমলের দাদা-দাদুও জেনে গিয়েছিলেন। দুজন মিলে খুব পরিকল্পনাও করে ফেলেছিলেন তাঁরা এবার ভালোবাসা দিবসে বেড়াতে যাবেন। দুই নাতিও খুব খুশি। ওদের মাকে বলাতে তিনিও খুশি হয়েছিলেন। বাদ সাধলেন অমল-কমলের বাবা। বন্ধুদের সঙ্গে পার্টি, সেখানে সস্ত্রীক যেতে হবে। বাচ্চাদের বাবা-মায়ের নিরাপদ আশ্রয়ে রেখে যাবেন, তাই বাবা-মাকে বললেন, ‘এই বুড়ো বয়সে আবার বসন্ত উৎসব কেন? তোমরা নাতি-নাতনিদের সঙ্গেই তোমাদের বসন্ত আর ভালোবাসা পালন করো, বাইরে যাবার দরকার নেই।’
কথাটা শোনার পর থেকে পুরো বসন্তটাই আমার কাছে ‘বুড়ো’ হয়ে গেল। চোখে ভাসছে সেই প্রবীণ দম্পতির মলিন মুখজোড়া। আহা জীবন! সময়ের দাগ শুধু কেন মানুষের মনেই লাগে? এই যে এত বিশাল প্রকৃতি, কই তাদের কাছে তো বয়স কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায় না! সবার পরে যে ঋতু, তাকে সবচেয়ে রঙিন করে রেখেছে প্রকৃতি আর আমাদের বয়সের শেষ ভাগে পৌঁছে যাওয়া মানুষগুলোকে আমরা কেমন দূর দূর করে রংহীন করে রাখতে চাই।
‘লাল রং পোরো না’, ‘টিপ দিও না’, ‘এ মা! এই বয়সে চুলে ফুল দিয়েছ’, ‘স্বামী নেই তার আবার নাকে ফুল কেন!’ ...
এহেন হাজারো বেড়াজালে আমরা তাদের জীবনটাকে রংহীন করে আটকাতে চাই। এই বসন্তে বারবার মনে হচ্ছে জীবনটাকে ঠিকমতো ভালোবাসতেই শিখলাম না আমরা। যে অমৃতের সন্ধানে সময় মন্থন করে গেলাম, তার গায়ে নিজেরাই ধুলো মাখালাম। সেই ধুলোর আড়ালে অমৃতের পুত্র-কন্যারা হারিয়ে গেল শুধু। বসন্তে তাই মনের ভেতরে সেই তাকে একটু খুঁজে দেখি না, যে আমাদের মনটা রাঙাতে চায়। বোকা মানুষ আমরা, অকারণে নিষেধের বেড়াজাল দিয়ে দিয়ে ফুল-পাখি-আলো-হাওয়া সবকিছু দূরে সরিয়ে রাখছি।
নবীন-প্রবীণ প্রত্যেকের জন্যই জীবনের রংগুলো ঠিকঠাক থাকলে ক্ষতি কি খুব বেশি? যেই জাদুকর আমাদের নিয়ে খেলছেন, তাঁর হাতে রঙের ফোয়ারাটা অকৃপণ...এই বসন্তে আমরা তাই নবীন হই সবাইকে নিয়ে...বুড়ো হয়ে থাকুক শুধু চিরযৌবনা বসন্তকাল।
লেখক: আবৃত্তিশিল্পী
প্রবৃদ্ধির শীর্ষে থেকেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের দৌড়ে পিছিয়ে রয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ৫০ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়েছে
১ দিন আগেদুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি, উচ্চ করহারসহ ১৭ ধরনের বাধায় বিপর্যস্ত দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। রয়েছে সামাজিক সমস্যাও।
১ দিন আগেজমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৫ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৮ দিন আগে